#মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ০৭,০৮,০৯
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
০৭
মাথাটা ধরেছে জাহিনের।এই মুহূর্তে এক কাপ কফির ভীষণ প্রয়োজন।মস্তিষ্ক ফাঁকা লাগছে!
‘
যে মেয়েটার জন্য রাতে বাড়ি ফিরলো না জাহিন, ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারতো।মেয়েটা এমন অকৃতজ্ঞের মতো কাজ করবে ভাবতেও পারেনি জাহিন।খুব তো বড় মুখ করে বলেছিল জাহিনের সব টাকা শোধ করে দিবে!সে হিসেবেই একবার জাহিনের সাথে দেখা করা যেত নিশ্চই!
‘
হসপিটালে নানা জামেলায় পরতো মেয়েটি।সব দিক বিবেচনা করে জাহিন বলেছিল মেয়েটি তার কাছের আত্নীয় হয়।তার প্রতিদান কি দিলো মেয়েটি?সবার সামনে লজ্জা আর নাককাটা পরিস্থিতি!মুহুকে অকৃতজ্ঞ,অপদার্থ ছাড়া কিছুই মনে হচ্ছে না জাহিনের।যে মেয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে বাবা,মার সম্মান খুইয়ে আসতে পারে সে মেয়ে আর জাহিনের চিন্তা কতটুকই বা করবে?বরং জাহিন একটু বেশীই ভেবে ফেলেছিল মেয়েটিকে নিয়ে!
‘
সম্মুখে নার্স দাড়িয়ে আছে এখনও।থ মেরে ঝিমুনি ভাব নিয়ে বসে আছে জাহিন।দেবার মতো জবাব নেই।উঠে হরহর করে বেড়িয়ে মুহতাসনিমের কেবিনে চলে আসে জাহিন।শূন্য বিছানা পরে আছে!বুকের ভিতর টা কেমন হাহাকার করে উঠে জাহিনের!অদ্ভুত সে এক তিক্ত অনুভূতি!পাশেই চোখ আটকায়,মেডিসিন গুলো পরে আছে।অদ্ভুত তো!মেয়েটি সাথে করে ঔষধ পত্র কেন নিয়ে যায়নি?
‘
দ্রুত এগিয়ে গিয়ে মেডিসিন গুলো হাতে নেয় জাহিন।প্যাকেট থেকে হরহর করে দুটো বালা মেঝেতে পরে!ঝনঝন তার শব্দ!বেশ অবাক হয়েই বালা জোড়া কুড়িয়ে হাতে নেয় জাহিন।দেখে বোঝা যাচ্ছে সোনার চুড়ি!রাগ প্রচন্ড আকার ধারণ করে জাহিনের।মেয়েটি যে জাহিনের পারিশ্রমিক হিসেবে বালা জোড়া রেখে গেছে এতে কোনো সন্দেহ নেই!মেয়েটি সামনে থাকলে নির্ঘাত ঠাস করে চড় বসিয়ে দিত গালে।কি ভাবে কি নিজেকে?ডাক্তারদের সময়ের মূল্য টাকা দিয়ে শোধ করা যায়?ততক্ষণে নার্স এসে পেছনে দাড়ায়।
“স্যার কোনো খোঁজ পাওয়া গেল?
মৃদু শব্দে বলল জাহিন,
” সকালে যাওয়ার সময় আমাকে বলে গেছে।
মেয়েটির জন্য মিথ্যেও বলতো হলো জাহিনকে।
‘
‘
পরমুহূর্তে বেরিয়ে নিজের কেবিনে আসে জাহিন।হাতে থাকা ওষুধের প্যাকেট টা ছুড়ে মারে টেবিলে।আলগোছে বেরিয়ে আসে একটা ভাজ করা কাগজ।দৃষ্টি এড়ায় না জাহিনের।তৎক্ষনাৎ কাগজ খানা হাতে নেয়।যা ভেবেছিল ঠিক তাই!মেয়েটি কিছু একটা নোট করে গেছে,
‘ডাক্তার সাহেব’
আমি প্রথমেই ক্ষমা চাচ্ছি না বলে চলে আসার জন্য।আমাকে আমার কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায় পৌছুতে হবে।আমি এখন পুরোপুরি সুস্থ।আসার সময় আমার মায়ের চুড়ি জোড়া দিয়ে এসেছি সেগুলো আমানত থাকলো আপনার কাছে।কাকতালীয় ভাবে বারংবার আপনার সাথে দেখা হয় আমার।অন্য কোনোদিন দেখা হবে সে আশা আমি রাখি।তখন না হয় টাকা টা শোধ করে দিবো।খালি হাতে আসতে পারছিলাম না।দয়া করে ভুল বুঝবেন না।
ইতি~
মুহতাসনিম।
‘
‘
রাগ কিছুটা সংবরণ হয় জাহিনের।ডাক্তার সাহেব বলে সম্মোধন করায় বেশ অদ্ভুত লাগলো জাহিনের।পরক্ষনে মনে হয় মুহতাসনিম তো আর তার নাম জানে না।তবে বালা জোড়া সযত্নে পকেটে পুরে বেরিয়ে যায় জাহিন।
~~~
চিকন সরু গলি।দেখে মনে হচ্ছে কোনো কলোনি।আচঁলে গুজা ঠিকানা টা হাতে নেয় মুহতাসনিম,তাতে চোখ বুলিয়ে দেখে নেয় তার গন্তব্যে স্থান টা সঠিক কিনা?নাহ সব তো ঠিকঠাকই মনে হচ্ছে!গলি দিয়ে প্রবেশ করে পনের নম্বর রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করে।মিনিট দুই পরে কেউ দরজা খুলে দেয়।
মুহূর্তে প্রশস্ত হাসি ফুটে উঠে মুহতাসনিমের ওষ্ঠ জুড়ে!চোখ জোড়া খুশীর ঝলকানি দিয়ে উঠে!অপরপাশের ব্যক্তিটির মুখ থমথমে!মুহতাসনিম কে যেন মোটেও এখানে আশা করেনি!মুখ জুড়ে ঘন আধার নেমে এসেছে যেন!তার উপর মুহতাসনিমের এমন সাজসজ্জায় ভুত দেখার মতো অনুভূতি!
“মিনা খালা কেমন আছো?
মুহতাসনিমের কথায় ঘোর কাটে মিনার।কৃত্রিম হেসে জবাব দেয়,
” ভাল।কিন্তু মুহু তুই এখানে?সাথে কে আসছে?ভাইগা আসছোস?মতিগতি তো ভাল লাগতাছে না।তোর মতো মাইয়া এমন হবে তা তো অকল্পনীয়!মাথায় আবার ব্যান্ডেজও দেখি!
নিজের গায়ে একবার চোখ বুলিয়ে জবাব দেয় মুহু,
“এসব কিছুই না খালা।আগে রুমে চলো আমি সবটা বলছি।
মিনা ইতস্তত আর একরাশ লজ্জা নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে দেয় মুহতাসনিম কে।ঘরটায় একবার চোখ বুলায় মুহতাসনিম।কোনায় একটা আধপুরান সিঙ্গেল খাট,পাশে একটা আলনা তার সাথে ছোট্ট একটা টেবিল তার উপর ছোট একটা টিভি আর তেমন বিশেষ কিছুই নেই!
‘
‘
মিনা খালার লজ্জা মিশ্রিত চেহারার কারণ এখন বুঝতে পারে মুহতাসনিম।বাড়িতে গেলে সবাই কে বলে বেড়ায় মিনা খালা সে পাঁচতলা বিল্ডিংয়ে ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে!কোনো আসবাবপত্রের অভাব নেই!আর কি সুন্দর সেজেগুজে যায়!এই তাহলে তার নমুনা!
কোনোরকম বলে উঠে মিনা খালা,
” আসলে বাড়িতে গেলে সবাইরে মিছামিছি বলি কারণ ঢাকায় থেকেও যদি বলি আমি এই কলোনিতে থাকি তাইলে আমার মানসম্মান কই যাইবো বলতো?
“আমি কিন্তু কিছু মনে করিনি খালা।
মুহতাসনিম দের পাশের বাসা টা মিনা খালাদের।দুই বোনকে বিয়ে দিয়েছে এই ঢাকায় এসে কাজ করে।ছোট্ট একটা ভাই আছে স্কুলে পড়ে।তার খরচ মিনা খালা’ই দেয়।মিনা খালার সংসার বলতে তার ভাই,বোনই।বিয়ের এক বছর পর খালাকে রেখে তার স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করেন।সেই থেকে খালা সংসারের সব মায়া ত্যাগ করে চলে আসেন।নতুন করে হয়ত পারেনি স্বপ্ন সাজাতে।থাক না জীবন যার যার মতো!দিনশেষে খুশী আর একটুখানি সুখ টাই যে আসল!
” এখন তোর ঘটনা বল তো?
বিয়ে থেকে শুরু অব্ধি শেষ সব ঘটনা মিনা খালাকে বলে মুহতাসনিম।কথা বলার সময় চোখ বেয়ে জল পরছিল মুহতাসনিমের।গলাও ভেঙ্গে আসছিল।
“তোর মতো মাইয়ারে পালবার ক্ষমতা আমার আছে।ওই পারুল রে আমি কখনই সহ্য করতে পারতাম না।তবে কথায় আছে না জালেমের ঘরেও আলেম হয়?তেমন পারুলের মাইয়াটা কিন্তু ভালই হইছে।মায়ের স্বভাব পায় নাই একদম।তাহলে মাইয়া তোর জীবন টা শেষ হইয়া যাইতো!
মিনা খালাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে মুহতাসনিম।মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয় মিনা খালা।
” অনেক সহ্য করতে পারস তুই।তোরে আমি আগেই কত বলতাম আমার সাথে ঢাকায় চলে আয়।
“তোমার ভরসাতেই আমি এসেছি খালা।তুমি যেখনে চাকরি করো আমাকেও একটা চাকরি নিয়ে দাও।
আচমকা মুহতাসনিম কে ছেড়ে বসে মিনা বেগম।মিনমিনে গলায় বলে,
” আমি তো মানুষের বাসায় কাজ করি।তবে তারা মানুষ অনেক ভাল।তুই কি এসব কাজ করবি?
মাথা নিচু করে বসে আছে মুহতাসনিম।যার অর্থ সে এ কাজ করবে না।আশ্বাস দিয়ে বলে মিনা বেগম,
“টিউশানি পড়াইতে পারবি বাচ্চাদের?আমি ব্যবস্থা কইরা দিতে পারবো।
খুশি মুখ নিয়ে বলে মুহতাসনিম
” পারবো খালা।
~~~
বাসায় ফেরার পর খাওয়া শেষে লম্বা ঘুম দেয় জাহিন।একদম বিকেলে ঘুম ভাঙ্গে।
কফি হাতে এগিয়ে আসে মিসেস নবনী।ছেলে যতক্ষণ চোখের সামনে থাকে ততক্ষণ যেন মায়ের মন শান্ত।হাস্যেজ্জল মুখ নিয়ে কফি হাতে নেয় জাহিন।
“নিজের একটু যত্ন নে না বাবা।দিনদিন চেহারার কি অবস্থা হচ্ছে!
” আমি ঠিক আছি মা মনি।তুমি শুধু শুধু টেনশন করো।আজকেও চলে যাবো সামনের শনিবার আসবো।এই সপ্তাহ পুরো টা ডিউটি আছে।
এবার যেন বেশ বিরক্ত মিসেস নবনী।ছেলের এমন কাজ সত্যিই ভাল লাগে না তার কিছু বলাও যায় না।
“মা মনি তুমি একটুও মন খারাপ করবে না।
হাসি হাসি মুখ নিয়ে বলে নবনী,
” না।তুই কাজে মন দে।তোর চাওয়া’ই আমার চাওয়া।
সন্ধ্যার দিকে বেরিয়ে যায় জাহিন।ছেলের যাওয়ার পথে তাকিয়ে নীরবে চোখের জল ফেলেন নবনী।
রেহানা বেগম পাশ থেকে বলেন,
“ছেলেটারে এমনি এমনি ঘরে রাখা যাইবো না।বিয়া করায়ে দে তখন দেখবি বছরেও বাড়ির বাইরে যাওয়ার নাম নিবো না।
চোখ মুছে জবাব দেয় নবনী,
” জাহিন যতদিন না নিজে থেকে বিয়েতে রাজী হবে আমি কখনই তাকে বিয়ে করতে জোড় করবো না।যদি জাহিন চিরকুমার থাকতে চায় তাতেও আমার আপত্তি নেই মা।
চলবে
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য]
#মেঘবতীর_শহরে
পর্বঃ০৮
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
‘
‘
মৃদু মন্দ বাতাস বইছে।ড্রাইভিং করছে জাহিন।শহরে পেরিয়ে কিছুটা গ্রামের দিকের হসপিটালে ডিউটি পরেছে।মুহু নাম টা আর আজকাল হুট করে মাথায় আসে না।স্থায়ী ভাবে মাথায় গেছে যেন নাম টা।জাহিন বুঝতে পারে না এই মেয়েটার প্রতি তার এত সহানুভূতি কেন?!!
~~~
মিনা খালার ফোনটা চেয়ে নেয় মুহতাসনিম।বাড়িতে অন্তত মুহতানিম কে একবার খবর দিতে হবে।মেয়েটা নিশ্চয়ই অনেক টেনশন করছে।
‘
বিছানার উপর পরে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই হুরমুড়ি খেয়ে উঠে গিয়ে রিসিভ করে মুহতানিম।ওপাশ থেকে কন্ঠস্বর শুনে চিনতে একটুও ভুল হলো না।
“আ….আপু কই তুই? ঠিক আছিস?
উত্তেজিত মুহতানিম কন্ঠস্বর কাঁপিয়ে বারংবার জিগ্যেস করে যাচ্ছে।এপাশ থেকে একটুখানি হেসে জবাব দেয় মুহতাসনিম,
” হ্যাঁ অনেক ভাল।মিনা খালার কাছে যখন আছি তখন তো ভালই থাকবো বল।বাসার অবস্থা কি?সব ঠিক আছে?
“ছেলেপক্ষ ভিষণ ক্ষেপেছিল!ওই বুড়া তো আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছিল!
মুনার কথায় কলিজা ধ্বক করে উঠে মুহতাসনিমের।
” তারপর?
“তারপর আর কি মা কান্নাকাটি করে এই বিয়ে আটকায়।পায়ে পর্যন্ত পরে তাদের।সাতদিন এর সময়
দিয়ে যায় তারা।এর মধ্যে তোকে খুঁজে আনতে বলে।
‘
ফুস করে দম ছাড়ে মুহতাসনিম।এ জীবনে আর সে ফিরছে না বাড়িতে।জীবন তাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে।বাকি জীবন টা না হয় তার একারই লড়াই হোক!
” আচ্ছা রাখি রে মুনা।
~~~
দু’ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়ে কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে আসে জাহিন।মাকে ফোন করে জানিয়ে দেয় ঠিকঠাক ভাবে পৌছেছে।
~~~
আকাশে টিপটিপ তারা রা জ্বলজ্বল করছে!পুরো আকাশ যেন আজ সচ্ছ নীল কাচের ন্যায়!মস্ত বড় এক চাঁদ জুলে আছে তার বুকে!প্রকৃতির কি অদ্ভুত সৌন্দর্য!সবটাই খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছে মুহতাসনিম।
পাশে মিনা খালা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।নানা চিন্তায় তখন কল্পনার রাজ্যে বিচরণ করছে মুহতাসনিম।ভোর সকালে ফিরে আসার সময় একটিবার জাহিনের কেবিনে উঁকি দিয়েছিল।কি অদ্ভুত মায়াবী মুখ!ঘুমন্ত লোকটাকে অনেকটা বেশীই সুন্দর লাগছিল!কয় মিনিট ওভাবে দাড়িয়ে ছিল মুহতাসনিম মনে নেই।
পরক্ষণেই তো ফিরে এসে এই চিঠি খানা আর মায়ের শেষ স্মৃতি বালা জোড়া রেখে আসে!দ্বিতীয় বার যে এই লোকটার সাথে দেখা করতেই হবে!কোথাও একটু ক্ষীণ আশা নিয়েও বালা জোড়া রেখে আসে মুহতাসনিম।তবে কেন দেখা করতে হবে লোকটার সাথে?পাওনা শোধ করতে?কি জানি বাকি টা আর ভেবে পায় না মুহতাসনিম।পরক্ষণে মিনা খালার পাশে এসে শুয়ে পরে।
~~~
ঘড়ির কাটা রাত দুটোতে।মাত্রই ইমারজেন্সি পেসেন্ট দেখে এসেছে জাহিন।গা থেকে শার্ট খোলার সময় পকেটে চুড়ি জোড়া রিনঝিন করে ভেজে উঠে!পরক্ষণেই বের করে হাতে নেয় জাহিন।বেশ পুরানো বালা জোড়া!মেয়েটি কেন এই বালা জোড়া রেখে গেল ভেবে পায় না জাহিন।অন্য উপায়ও তো অবলম্বন করতে পারতো!তবে মেয়েটির আত্মসম্মান বোধ ভালই আছে।খালি হাতে অন্তত যায়নি।কিন্তু বালা জোড়া কিভাবে ফেরত নিবে?এতটা সিউর কি করে হলো যে আমার সাথে তার পুনরায় আবার দেখা হবেই?!!
~~~
সকাল সকাল আলতাফ মিয়ার বাড়িতে নানা লোকের ভিড়! তাদের বেশির ভাগ ফুলের গহনার অর্ডার করতে এসেছে।সবাইকেই খালি হাতে ফেরাতে হচ্ছে।মুহতাসনিম কে ছাড়া কে এত গহনা বানাবে?মুহতানিম তো আর সবটা কাজ এখনও রপ্ত করতে পারেনি।কপালে হাত ছাড়া আর কোনো উপায় নেই আলতাফ মিয়ার।সোনার ডিম পারা হাঁস টা যেন হাত ছাড়া হয়ে গেল!পাশে পারুল বেগম নীরব চুপচাপ সবটা দেখছেন।তার জন্যই আজ এসব হয়েছে।সংসারের হাল এখন কে ধরবে?মুহতাসনিম কে ছাড়া তো একদম অসহায়!পুরো সংসারের দায়িত্ব যে মুহতাসনিমের কাধে ছিল!
~~~
সকাল সকাল মিনা খালা গেছে টিউশনির খোঁজে। যাবার আগে তার কাজের গন্তব্যে স্থানের ঠিকানা দিয়ে গেছে মুহতাসনিম কে।সে মোতাবেক পৌছে গিয়ে তাদের জানাতে হবে মিনা খালা আজ কাজে যাবে না এবং কালকেও মিস যেতে পারে।আজকে মাসের শেষ দিন,বেতনের আশায়ই মুহতাসনিম কে পাঠায় মিনা বেগম।
‘
মুহতাসনিম তার খালার কথা অনুযায়ী চলে আসলো কাঙ্ক্ষিত ঠিকানায়।ঠিকানাটা হাতে নিয়ে একবার চোখ বুলায়,হ্যাঁ ঠিক জায়গাতেই এসেছে।সামনে পাঁচ তলা বিল্ডিং!বিশাল গেইটের বাড়ি।অচেনা কেউ প্রবেশ করতেও যেন দুবার ভাববে!
এগিয়ে গিয়ে দারোয়ান কে পরিচয় দেয় মুহতাসনিম।দারোয়ান বাসার ভেতরে কল করে প্রবেশ করতে দেয় মুহতাসনিম কে।
মুহতাসনিম সিঁড়ির কাছে আসতেই দেখে কম বয়সী এক যুবক বেরিয়ে যাচ্ছে।ছেলেটা হুট করে থেমে যায় মুহতাসনিম কে দেখে!চোখ জোড়া কেমন কুঞ্চিত করে তাকায় পরক্ষণে আবার বেরিয়ে চলে যায়।ব্যাপার টা অদ্ভুত লাগে মুহতাসনিমের।
‘
তিনতলায় উঠে কলিং বেল বাজিয়ে দাড়িয়ে আছে মুহতাসনিম। মিনিট পাঁচ পর এক মধ্যে বয়স্ক মহিলা দরজা খুলে দেন।মুহতাসনিম কে দেখেই প্রশ্ন ছোড়েন,
“এই সাতসকালে কি চাই?
খানিকটা ইতস্তত ভঙ্গিতে বলে মুহতাসনিম,
” মিনা খালা পাঠিয়েছে আমাকে।আসলে খালা আজকে কাজে আসতে পারবে না। কালকেও না আসতে পারে।
মহিলাটি কপট রাগ দেখিয়ে বললেন,
“এই হচ্ছে আজকাল কার কাজের লোক দের অবস্থা!বেতন নেওয়ার সময় তো এক পয়সাও ছাড় চাই না!
মুহতাসনিমের কাছে মহিলাটিকে ভিষণ কর্কশ প্রকৃতির লাগলো।মনে মনে ভেবে নিলো সে টিউশনি পেলে এখানে আর খালাকে কাজ করতে দিবে না।খালা তো খুব বড় মুখ করে বলেছিল তারা মানুষ খুব ভালো!এই হচ্ছে ভাল মানুষের নমুনা।ততক্ষণে পাশে আরো একজন মহিলা এসে দাড়ায় মুহতাসনিমের উদ্দেশ্যে বলে,
” তা তুমি যখন এসেছো তাহলে কাজটা তুমিও তো করে দিয়ে যেতে পারো।
চোখ জোড়া এবার জলে চিকচিক করছে মুহতাসনিমের।তার চেনা জগতের বাহিরেও যে খারাপ মানুষ বাস করে!চুপচাপ ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।আগের মহিলা টা বলল,
“চিনি না জানি না হুট করে বাড়িতে ঢুকতে দিবো নাকি?
বলেই ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিলো।বিষয় টা ভিষণ লজ্জাজনক লাগলো মুহতাসনিমের।নিঃশব্দে হেটে চলে আসছিল পরক্ষণে কেউ একজন দরজা খুলে ডাকলো মুহতাসনিম কে,
” এই মেয়ে শুনো?
মুহু ঘুরে তাকাতেই দেখলো বেশ সুন্দরী এক মধ্যে বয়স্কা মহিলা দাড়িয়ে।বয়সের ভার যেন তার রূপের আড়ালে চাপা পরে গেছে!যুবতী থাকতে ইনি যে কতটা রূপবতী ছিলেন তা বেশ ভাল ভাবেই আন্দাজ করা যাচ্ছে।তবে মহিলা টিকে খুব চেনা লাগছে মুহুর কাছে!কোথাও যেন দেখেছে!চোখ দুটো ভিষণ চেনা ভিষণ!
“মিনা খালার বেতন টা নিয়ে যাও।
” না থাক।আমি বাহিরের মানুষ আমার হাতে দেওয়ার দরকার নেই।যার টাকা তার হাতেই দিবেন।
“তুমি কি আমার কোনো কথায় রাগ করলে মেয়ে?
মহিলাটি ভিষণ আবেগ নিয়ে বলছিল যেন!মুখে কি সুন্দর মায়াবী হাসি লেগে আছে!পরক্ষণে মুহুর মনে হলো আগের দুই বজ্জাত মহিলার শাস্তি স্বরুপ কটু কথা এনাকে শোনানো উচিত হয়নি।ভেতরে ভেতরে ভিষন লজ্জিত হলো মুহু।
” কি হলো নাও টাকা টা।
হাত বাড়িয়ে টাকা টা হাতে নেয় মুহু।মহিলা পরক্ষণেই বলে,
“ঘরে এসো।বাহিরে দাড়িয়ে থাকবে?
” অন্যদিন আন্টি।
“আচ্ছা মিনার সাথে আবার এসো কোনো একদিন।
~~~
মিনা খালা ফেরার আগেই রান্না বান্না সেরে রেখেছে মুহতাসনিম।দুপুর নাগাদ ফিরেছে মিনা বেগম।ক্লান্ত মুখেও হাসি ফুটে আছে।তার মানে কোনো ভাল খবর হবে বেশ বুঝতে পারছে মুহতাসনিম।
” খালা তুমি কি টিউশনি পেয়েছো?
“হ তিনটা পাইছি।একটা ক্লাস থ্রি আরেকটা ফাইব আর একটা টু ক্লাস এর।পারবি না পড়াইতে?
” পারবো খালা।
“কালকে থেকেই যাইতে কইছে।
মুহুর খুশি যেন দ্বিগুণ হলে গেল!আসতে না আসতেই কেমন কাজের জোগাড় হয়ে গেল!
” ওই বাসায় গেছিলি?
মুহূর্তেই মুখ খানা ভার হয়ে যায় মুহতাসনিমের।
“এমন বাসায় কাজ করো কেন খালা?যাদের ব্যবহার হিংস্র পশুর মতো।আমি কাজে পুরোপুরি মনোযোগ দেই তখন আর তোমাকে কাজ করতে হবে না।
” কি বলিস?ওই বাড়িতে একজনই একটু কটু কথা বলে সেটা হলো ছোট ম্যাডাম মানে ওই বাড়ির ছোট বউ।তবে বড় টা একটু ভাল সবসময় রাগ দেখায় না।কিন্তু ওই বাড়ির মাইয়াটা অনেক ভাল!কি যে অমায়িক ব্যবহার!মাঝে মাঝে আমার কত কাজেও তো সাহায্য
করে!আমি তারে নবনী আপা ডাকি।
“ওহ!উনিই তবে ডেকে তোমার বেতন দিয়েছিল।দেখতে খুব সুন্দর!বিয়ে হয়নি বোধহয় এখনও তাই না খালা?
” হইছে।নবনী আপার একটা ছেলে আছে নাম হইলো জাহিন।সে আবার ডাক্তার।মাসের দুই দিনও মনে হয় বাড়িতে থাকে না।
চলবে
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য]
#মেঘবতীর_শহরে
পর্বঃ০৯
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
‘
‘
হুট করে স্তব্ধ হয়ে যায় মুহতাসনিম!ডাক্তার শব্দ টা কেমন ঝংকার দিয়ে উঠে কানে!তার চেনা সেই ডাক্তার টা নয়তো আবার?মনে মনে আবেগে কেমন আপ্লূত হয়ে উঠে মুহতাসনিম!
পরক্ষণে মনে হয় দূর ডাক্তার কি ওই লোকটা একা নাকি?কতশত ডাক্তার আছে!আর সে কিনা অন্য চিন্তায় মগ্ন!কি সব আবল তাবল ভাবনা সবসময়।
‘
মুহতাসনিম কে চুপ থাকতে দেখে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায় মিনা বেগম।ততক্ষণে ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এসে কাজে মন দেয় মুহতাসনিম।খাবার বেড়ে নেয় দুজনের জন্যই।
মিনা বেগম আয়েশী ভঙ্গিতে বসেন।খবারে একবার চোখ বুলান।ডিম আলুর ঝোল,আর ডাল রান্না হয়েছে।
“দেখে মনে হচ্ছে খুব মজা হইবো রে মুহু।
হাসিমুখে খাবার বেড়ে দেয় মুহতাসনিম।
” ছোট থেকে হাত পুড়ে পুড়ে রান্না শিখেছি খালা।রান্নার পাকা হাত’ও বলতে পারো।
“আমি তো নিজেই দেখছি কতকিছু।নতুন কইরা আর বলতে হইবো না।
খাওয়ায় মনোযোগী হয় মিনা বেগম।মুহতাসনিম এক লোকমা খাবার মুখে পুরে নেয়।মাথায় কেমন উদ্ভট চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।প্রশ্ন করে বসলো মিনা খালাকে,
” আচ্ছা খালা তুমি যার কথা বললে মানে তোমার নবনী আপা উনি কি সবসময় ওই বাসাতেই থাকেন?
“হুম আমি অনেক বছর ধইরাই কাজ করতাছি তখন থেকেই এখানে দেখতাছি।
” উনার স্বামী নেই?বাবার বাড়িতে কেন থাকেন?
“মারা গেছে মনে হয়।জিগ্যেস করলে কিছু বলে না।বাদ দে তো এসব।এখন খা।
~~~
রাতে বাবার সাথে কাজ সেরে বাড়ি ফিরেছে আনান।শায়লা বেগম খাবার নিয়ে বসে আছেন।সবার খাওয়া হয়ে গেলেও তিনি স্বামী আর ছেলের জন্য অপেক্ষা করছেন।দুজনকে খাবার বেড়ে দিয়ে নিজেও খাবার নিয়ে বসেন।খোশ গল্পে মজেছে তিনজন।কি অপরূপ সে দৃশ্য!
আড়াল থেকে দেখছেন মিসেস নবনী!কোথাও একটা ফাঁকা শূন্যতা অনুভব করে!জগতে সবাই এক ভাবে বাঁচতে পারে না কেন?জীবন কারও কাছে তিক্ত বিষাক্ত অনুভূতি তো কারো কাছে সাজানো ফুলের বাগান!দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে নবনীর।আবারও ছেলের চিন্তায় বুকটা খা খা করে উঠে।
পরক্ষনে নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরেন।মিনিট দুই পর বাইরে থেকে রিশান ডাকে,
” ফুপিমণি তুমি কি রুমে?
“হ্যাঁ,ভেতরে আয়।
রুমে প্রবেশ করে রিশান।দ্রুতই প্রশ্ন করে,
” ভাইয়া কোথায়?হসপিটালে নাকি?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে উত্তর দেয় নবনী,
“আগামী সাতদিন তোর ভাই আসবে না।তার ডিউটি পরেছে কিনা।পরিবারের কথা ভাববার সময় কই তার?
” বাব্বাহ লম্বা সময়!আচ্ছা আমি আসছি।
~~~
আলতাফ মিয়ার চিন্তা দিন দিন বাড়ছে।এভাবে সংসার চললে তো না খেয়ে মরতে হবে!মেয়েটির উপর ভিষণ অন্যায় করেছেন তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন।দ্বিতীয় স্ত্রী পারুল বেগমের উপর কথা বলার সাধ্য তার নেই!তখন যদি একটু প্রতিবাদ করতেন তাহলে আজকে এ দিন তাকে দেখতে হতো না।
পারুল বেগম এখন অতটা গলা উঁচিয়ে কথা বলেন না, পাছে আলতাফ মিয়ার ভয় না ভেঙ্গে যায়।
~~~
সপ্তাহ জুড়ে ফুলের অর্ডার থেকে শুরু করে ফুল সংগ্রহ পর্যন্ত সব কাজেই বাবাকে সাহায্য করেছে মুহতানিম।তবে গয়না বানাতে সে পারদর্শী নয় বিধায় সেই অর্ডার গুলো ক্যান্সেল করতে হয়েছে।কিন্তু আয়ের মূল অংশই আসতো ফুলের গহনা থেকে।
‘
সন্ধ্যায় ফোনকলে ঘুম ভাঙ্গে মুহতানিম এর।সারাদিন এর কাজ শেষে শরীর একদম ক্লান্তিতে ভর করে যেন।আগে কাজের বোঝা একদম ছিল না বললেই চলে।ফোনের অপর পাশ থেকে বোনের কন্ঠস্বর পেয়ে মন ভাল হয়ে যায় মুহতানিম এর।
“আপু তুই ভালো আছিস তো?
” হ্যাঁ।টিউশনি করছি সপ্তাহ হবে।ভালোই চলছে।আমি যখন টাকা পাবো তখন কিছুটা তোকে পাঠাবো কেমন।
“এ টাকা আমি নিতে পারবো না।তুই অচেনা জায়গায় থাকিস তোর কত কাজে লাগতে পারে বল?
” এভাবে বলছিস কেন?তোর পড়াশোনার অনেক খরচ মুনা।এই খরচ টা আমি দিবো।
“আর তোর পড়াশোনা?
” বাদ দে।এখন বল বাড়িতে সবাই ভাল আছে?বাবার ব্যবসা কেমন চলছে?
“হ্যাঁ খুব ভাল।তুই চিন্তা করিস না।
~~~
সাতদিন পর আজ ছেলে বাড়িতে ফিরবে সেই খুশিতে নানাপদ রান্না করেছেন মিসেস নবনী।জাহিন কল করে জানিয়ে দিয়েছে সে ইতিমধ্যে রওনা দিয়ে দিয়েছে!মিনা খালার উপর কাজের চাপ বেড়েছে আজকে।মিসেস নবনীর সব কাজই হাসিমুখে করে দেন মিনা খালা।কোনো অভিযোগ রাখেন না।
‘
দুপুর নাগাদ বাড়ি ফেরে জাহিন।কলিং বেল বাজতেই মিনা খালা এসে দরজা খুলে দেয়।পেছন পেছন মিসেস নবনীও আসেন।রুমে প্রবেশ করেই মাকে জড়িয়ে ধরে জাহিন।কান্না কন্ঠে বলে নবনী,
” তোর শরীর ঠিক আছে তো বাবা?
“তোমাকে কতদিন বলবো তোমার ডক্টর ছেলে থাকতে কিসের চিন্তা বলো তো?তবে মায়ের চেয়ে বড় ডক্টর,টিচার কেউ হতে পারে না।এবার মায়ের ট্রিটমেন্ট পেয়ে পুরোপুরি সুস্থ,সবল হয়ে যাবো।
আতংকিত কন্ঠে বলেন মিসেস নবনী,
“তারমানে তুই অসুস্থ?
“একদমই না!এটা তো কথার কথা বললাম তোমায়।
রেহানা বেগম এগিয়ে আসতে আসতে বললেন,
” ছেলেটা এত দূর থাইকা জার্নি কইরা আসছে ফেরেশ হইতে দে আগে।
“এই তো নানুমণি আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসছি।
~~~
তপ্ত রোদ চারিপাশে।রোদ্দুরে খা খা করছে যেন!কপাল চুইয়ে ঘাম এসে ঠাঁই নিয়েছে থুতনিতে।দাড়িয়ে এক গ্লাস লেবুর সরবত খেয়ে নিচ্ছে মুহতাসনিম।এর পর আরও একটা টিউশনি আছে।ক্ষুধায় পেট চোঁ-চাঁ করছে।হাতে সময় নেই বেশি এক্ষুণি না গেলে লেইট হয়ে যাবে যে।পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনিয়ম একদম পছন্দ নয় মুহতাসনিম এর।হোক সেটা নিজের বা অন্যের।
~~~
দুপুর গড়িয়ে বিকেল।খাওয়া শেষে বিশ্রাম নেয় জাহিন। পরক্ষণে মনে পরে তাকে টুকিটাকি কিছু শপিং করতে হবে।সময়ের অভাবে একদম কেনা হয় না।পরশু আবারও ডিউটি আছে দু দিনের।আজকে না কিনতে পারলে আর সময়’ই হবে না তাহলে।তৎক্ষনাৎ তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরে জাহিন।
‘
দুপুরের রোদ নেমে বিকেল হয়েছে সবে।জ্যামে বসে আছে জাহিন।বেশ অসহ্যও লাগছে কেমন।মুহূর্তেই চোখের সামনে কাউকে দেখতে পায় জাহিন!হ্যাঁ এটা তো মুহু!মেয়েটা রাস্তা পারাপার হচ্ছে!তড়িঘড়ি করে গাড়ির গ্লাস নামিয়ে বেশ জোড়েই ডেকে বসে,
” মুহু?
ততক্ষণে ভিড়ের কোথাও হারিয়ে যায় মুহতাসনিম।জাহিনের এমন কান্ডকারখানায় আশেপাশের অনেকেই তাকিয়ে ছিল তাতে তার কোনো পরোয়া নেই।মেয়েটিকে এত কাছ থেকেও হারিয়ে ফেলল?কেন জানি ভিষণ রকম রাগ হচ্ছে জাহিনের।ততক্ষনে পেছন থেকে হর্ণ বাজছে।ঘোর কাটতেই গাড়ি স্টার্ট দেয় জাহিন।
~~~
সারাদিন এর কাজ শেষে বাড়ি ফেরে মুহতাসনিম।সূর্য অস্ত নিয়েছে সেই কখন।বেলা গড়িয়ে এখন সন্ধ্যা।গামছা নিয়ে গোসল খানায় চলে যায় মুহতাসনিম।এই সময় তাকে লাইন ধরে গোসল করতে হয় না।অবশ্য দুপুরে লম্বা লাইন থাকে।বিশটা রুমের জন্য মাত্র একটা গোসলখানা আর দুইটা টয়লেট।
~~~
বেলকনিতে দোলনায় বসে হাতে বই নিয়ে বসে আছে জাহিন।পড়ায় মন বসছে না কিছুতেই!মন খারাপ হয়ে আছে ভিষণ।আজকের ঘটনা টা ভুলতে পারছে না।অফসোস হচ্ছে চরম।সে গাড়ি থেকে কেন নেমে গেল না তখন?আরেকটু জোড়ে কি ডাকা যেত না?
“ভাইয়া কি করো?
রিশানের ডাকে ঘোর কাটে জাহিনের।
“হ্যাঁ বল?
” আমি সামনের মাসেই জাপান চলে যাচ্ছি ভাইয়া।বাবা সব ব্যবস্থা করে ফেলেছে।
“হ্যাঁ শুনেছি।খাওয়ার সময় মামি বলেছে।
” গ্রাজুয়েশন টা কমপ্লিট করে আসবো একবারে।
“সেটাই ভাল হবে।
” ভাইয়া তোমাকে কেমন আপসেট লাগছে!
“না তেমন কিছুই নয়।কাজের চাপে হয়তো এমন লাগছে।
” বুঝলে ভাইয়া ভাবছি জাপান গিয়ে একটা জাপানিজ মেয়ে বিয়ে করে নিবো তারপর ইম্মিসির মতো মিক্সিং কোয়ালিটির বাচ্চার জন্ম দিবো!
রিশানের কথায় শব্দ করে হাসে জাহিন।রিশান পারেও বটে।কি উদ্ভট চিন্তাধারা!
হুট করে রিশান বলে,
“জানো ভাইয়া আনানের আন্টির বিয়েতে যে ফুলওয়ালী কে দেখেছি সে মেয়েটা আমাদের বাসায় এসেছিল!
চলবে
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য]