#মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ১০,১১,১২
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
‘
‘
জাহিন অনেকটা বুঝেও না বোঝার ভঙ্গিতে বলে,
” কোন ফুলওয়ালী?
“আরে দুইটা মেয়ে এসেছিল না?আলেয়া আন্টির বিয়েতে?মনে করে দেখো।
জাহিন পুনরায় বই’য়ে চোখ নিবদ্ধ করে।ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে,
” হ্যাঁ মনে পড়েছে।তা কেন এসেছিল?বাড়িতে কারও বিয়ে নাকি?
ঠোঁট উল্টে অবুঝের মতো জবাব দিলো রিশান,
“তা তো বলতে পারবো না।আচ্ছা আমি এখন আসি ভাইয়া।
‘
রিশান কে পিছু ডাকতে গিয়েও থেমে গেল জাহিন।কোথাও একটা আড়ষ্টতা ভর করে।তবে একটা ভয়ানক রহস্য চেপে বসে যেন মাথায়!মেয়েটা তার বাড়ি কেন এসেছিল?অন্য কোনো কারণে,নাকি মেয়েটা ফলো করছে জাহিনকে?সাতপাঁচ ভাবনা ঘুরতে থাকে মাথায়।হুট করে কাউকে এ বিষয়ে জানানো উচিৎ হবে না।জাহিন সিদ্ধান্ত নেয় কালকে সে পূর্বের জায়গায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকবে।পাছে মেয়েটার দেখা পেয়ে যায়?
~~~
সকাল থেকে মিনা খালার কোমড়টা ধরেছে বেশ।বিছানা ছেড়ে উঠতেও যেন কষ্ট হচ্ছে ভিষণ।মুহতাসনিম তৈরি হচ্ছে তার কাজে যাওয়ার জন্য।ইতিমধ্যে খালাকে গরম পানির সেক দিয়ে গেছে তবুও ব্যাথা নামছে না।
” খালা তোমার বয়স হচ্ছে।এত কাজের ভার নিও না।দেখলে শরীরের কি অবস্থা করেছো?
“কিছু করার নাই রে মুহু আজকে আমারে কাজে যাইতেই হইবো।
মুহূর্তেই রাগে কপাল কুঁচকে আসে মুহতাসনিমের।একে তো খালা উঠতে পারছে না তার উপর আবার কাজের কথা বলছে।সত্যি ও বাড়ির মানুষ গুলোকে মানুষ মনে হয় না মুহুর।মানুষের কষ্ট এরা বুঝতে চায় না।
” দরকার নেই খালা কাজ করার।শরীরের অবস্থা দেখেছো তোমার?
“এটা বললে হইবো না।জাহিন স্যার আইছে নিশ্চয়ই উনার কত কাপড় জমছে সেগুলা গিয়া আজকে ধুইতে হইবো।প্রতিবার উনি আসার পর এত কাপড় জমে সেগুলান ধুইতে হয়।বলা তো যায় না আবার কবে চইলা যায়।
” খালা তুমি কি পাগল হয়ে গেছো?তোমার শরীরের অবস্থা দেখেছো?আর তুমি কাপড় ধোঁয়ার কথা বলতাছো?
“অন্য সময় হলে আজকে মিস দিতাম।
মুহতাসনিম খানিক্ষন ভাবে কেন জানি বার বার ইচ্ছে করছে খালার বলা সেই ডাক্তার জাহিন কে দেখতে!উনি আবার সে ডাক্তার টা নয়তো!সুযোগ টা হাতছাড়া করতে চায়নি মুহতাসনিম তৎক্ষনাৎ বলল,
” সমস্যা নেই খালা আমি গিয়ে তোমার কাজ করে দিয়ে আসবো।তবে আমার একটু দেরি হবে।শেষের টিউশনি টা করবো না আজকে।ঠিক দুপুরেই চলে যাবো আমি তখন কাপড় ধুঁয়ে মেলে দিলে ঠিক শুকিয়ে যাবে।
“তুই যাবি?টিউশনি মিস দিলে কিছু বলবো না?
” আজকে এমনিতেও শেষের টিউশনি টা ছুটি চেয়েছে।তুমি তাদের কল করে জানিয়ে দিও।আমি গেলাম আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
বলেই কাঁধে ব্যাগ জড়িয়ে বেরিয়ে পরে মুহতাসনিম।
~~~
দুপুরে সবার সাথে খেতে বসেছে জাহিন।জাফর সাহেব খাওয়ার মাঝে বললেন,
“তুই কিন্তু আমার ব্যবসা টাও দেখতে পারিস জাহিন।তুই আর আনান মিলে দিব্যি সামলে নিতে পারবি।
মুখে সবে এক লোকমা পুরেছে জাহিন।কোনোরকম চিবিয়ে উত্তর দেয়,
” আমি ভেবে দেখবো মামা।তোমার প্রস্তাব টা আমার কাছে উত্তম লেগেছে।
রেহানা বেগম পাশ থেকে বলেন,
“এতই যহন উত্তম লাগছে তাইলে ব্যবসা টাই দেখ না।এসব ডাক্তারগিরি কইরা কি হইবো?
রিতা বেগম বলেন,
” আমার রিশান তো জাপান তার বাবার কাছে চলে যাচ্ছে তুমি চাইলে বিদেশেও যেতে পারো জাহিন।
জাহিনের ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি।পরক্ষণে বলে,
“আমি সামান্য পাঁচ,সাতদিনের ডিউটিতে গেলেই আমার মায়ের অবস্থা কি হয় দেখই তো মামি।সেখানে আমি যদি দূর প্রবাসে চলে যাই তাহলে আমার মাকে বাঁচানো যাবে বলে তোমার মনে হয়?
রেহানা বেগম আবারও বলেন,
” তোর মারে সাথে কইরা নিয়াই যা।তোর ছোট মামা সব ব্যবস্থা করবো।
জাহিন খাওয়ার মাঝে ঘড়ি দেখে নেয়।তাকে এক্ষুণি বের হতে হবে নয়ত মুহু কে আজকেও দেখতে পাবে না!
মিসেস নবনী চুপচাপ সবার কথা শোনেন।ছেলের মর্জি তিনি ভালো করেই জানেন।জাহিন এক কথার ছেলে।সে যখন বলেছে সে তার ডাক্তারি নিয়েই থাকবে তখন সে এটা নিয়েই থাকবে।পুরো বাবার স্বভাব পেয়েছে ছেলেটা!কথা,কাজ তেমন’ই যেন!মিসেস নবনীর ভয় হয় পাছে যদি সত্যি’ই বাবার মতো হয় ছেলেটা!পরমুহূর্তে বাকি খাবার আর গলা দিয়ে নামে না!
হঠাৎ জাহিন বলে,
“আমার কাজ আছে মা মণি।আমি একটু বের হবো।ঘন্টা খানেকের মধ্যেই এসে যাবো।
” হুম।
বাকি আর দেরি না করে বেরিয়ে যায় জাহিন।
~~~
দুপুরের ভ্যাপ্সা গরম,আজকে একটু তাড়াতাড়ি’ই বেরিয়ে পরেছে মুহতাসনিম।গন্তব্য স্থান মিনা খালার কাজের সেখানে।রিক্সায় জ্যামে বসে আছে মিনিট দশ।বিরক্তিকর পরিস্থিতি।
‘
অবশেষে কাঙ্খিত ঠিকানায় চলে আসে মুহতাসনিম।দরজা খুলে দেয় নবনী।হাসি মুখ নিয়ে বলে,
“মিনা নাকি অসুস্থ তাই তোমাকে পাঠাবে বলল।এসো ঘরে এসো।
চুপচাপ হাসি বিনিময় করে ঘরে প্রবেশ করে মুহতাসনিম।কি বিশাল বাড়ি!বাইরে থেকে ভেতরটা আরও জাঁকজমকপূর্ণ যেন!একেক টা রুম বিশাল আকারের।দামী সব আসবাবপত্র পূর্ন রুম।খানিকটা ভীতস্ত মুহতাসনিম।নবনী পাশে সোফায় বসতে বলে মুহুকে।পাল্টা মৃদু হেসে বলে মুহু,
“কাজ টা সেরে নেই আগে।এমনিতে অনেক দেরি হয়ে গেছে।
” তুমি অতিথির মতোই আমাদের কাছে।তোমাকে দিয়ে কাজ করানোটা আমার কাছে বড্ড বেমানান লাগছে।তুমি বসো আমি চা নিয়ে আসছি।
“চা লাগবে না আন্টি।আপনি শুধু বলুন কি করতে হবে।খালা বলেছিল কাপড় কাচার কথা।
মুহতাসনিম বারংবার চারিদিকে তাকাচ্ছে।কোথায় সেই ডাক্তার জাহিন?আদৌ তার দেখা পাবে তো আজ?বুকের ভেতর এক অজানা ভয় কাজ করছে!
লজ্জকর মুখে উত্তর দেয় নবনী,
” আসলে ছেলে আমার একদম সময় পায় না।ডিউটি শেষে বাসায় আসার পর এত এত কাপড় জমে যায়।সমস্যা নেই আমি সেগুলো লন্ড্রি তে দিয়ে দিবো।তোমায় কাচতে হবে না।
মুহু যেন ছাড়বার পাত্রী নয়।আজকে সে ডাক্তার জাহিন কে একবার স্বচক্ষে দেখেই যাবে।খুব কষ্টে সুযোগ বের করে এসেছে।এখন চলে গেলে তো তীরে এসে তরী ডোবার মতো হয়ে যাবে!নিশ্চয়ই লোকটা তার রুমে হবে!
“আন্টি আমি যখন এসেছি তাহলে আমি কাপড় কেচে দিয়েই যাবো।আপনি লজ্জা পাচ্ছেন কেন?মানুষ কি ঘরের কাজ করে না?তা ছাড়া এসব কাজ আমি খুব ভালই জানি।চলুন তো।শেষে রোদ না পরে যায়।
” তুমি খুব মিষ্টি মেয়ে।তোমাকে দিয়ে সত্যিই কাজ করাতে ইচ্ছে করছে মেয়ে।চলো আমার ছেলের রুম টা দেখিয়ে দেই তোমায়।
‘
উত্তর দিকে হাটা দিলেন নবনী।আশ্চর্য জনক ভাবে এক পা’ও নাড়াতে পারছে না মুহু!বুকের ভেতর কেমন ঢিপঢিপ করছে!আচ্ছা ও যদি আজ বালা জোড়া চায় তবে কি ডাক্তার তাকে ফিরিয়ে দিবে?পরক্ষনে ভাবে ‘দূর কে না কে আর মুহু কিনা ওই ডাক্তার ভেবে বসে আছে!’ তৎক্ষনাৎ দৌড়ে নবনীর পিছু পিছু যায়।
~~~
ঘন্টা খানেক হবে রাস্তার সাইডে দাঁড়িয়ে আছে জাহিন।মুহুর তো কোনো নাম,গন্ধ নেই!খানিক্ষন পর বিকেল হয়ে যাবে।আর কতক্ষণ এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে জাহিন?হাত ঘড়িতে বারংবার চোখ বুলায়।নাহ ধৈর্য্য সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছে।পরক্ষনে গাড়িতে উঠে স্টার্ট দেয় জাহিন।
~~~
রুমের এক কোণে কাপড়ের স্তুপ জমা।প্রায় দশ,বার খানা কাপড় হবে।শুকনো ঢোক গিলে নেয় মুহু।হাড়ভাঙা খাটুনি হবে তা নিশ্চিত।তবে ফাঁকা রুম দেখে খানিকটা নিরাশ হয়।তার মানে ডাক্তার জাহিন বাড়িতে নেই!আশায় এক বালতি জল পরলো মুহুর।কাঁধের ব্যাগ টা খাটের কোণে রেখে কাপড় গুলো নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় মুহতাসনিম।নবনী বলে,
“কিছু লাগলে আমাকে ডেকো।আমি চা বসাই গিয়ে।
কৃত্রিম হাসি ঝুলিয়ে জবাব দেয় মুহতাসনিম,
” ঠিক আছে।
‘
গাদা গাদা কাপড় ভিজাচ্ছে মুহতাসনিম আর রাগে বিরবির করছে।শরীর টা ক্লান্তও লাগছে বেশ।সবে দুইটা কাপড় কেচে শেষ করেছে।
~~~
মন খারাপ নিয়ে রুমে প্রবেশ করে জাহিন।আজকেও মুহুর সাথে দেখা হলো না!মেয়েটাকে কি আদৌ খুঁজে পাবে জাহিন?পরমুহূর্তে পকেট থেকে বালা জোড়া বের করে।স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ!মুহুকে বেশ অদ্ভুত লেগেছে জাহিনের।মেয়েটা কেন সেদিন বাসায় এসেছিল তার কারণ খুঁজে পেতেই হবে!
‘
ওয়াশরুম থেকে শব্দ আসছে!খেয়াল হতেই খাটে ব্যাগ দেখতে পায় জাহিন।ভ্রু কুচকে হাতে নেয় সেটা।তারপর এক পা দু পা করে ওয়াশরুমের দিকে এগোয়।জাহিনের ওয়াশরুমে আসার কথা না কারো!তবে কে এখানে?দরজা টা খোলাই দেখা যাচ্ছে!
সাদা,কালো মিশেল থ্রিপিস পরিহিতা একটি মেয়ে লক্ষ্য করা যাচ্ছে!কৌতূহল বাড়ে জাহিনের!তৎক্ষনাৎ জিগ্যেস করে,
“কে ওখানে?
মুহূর্তেই ফিরে তাকায় মুহতাসনিম!
চলবে~
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য)
#মেঘবতীর_শহরে
~পর্বঃ১১~
~নাদিয়া ইসলাম সানজিদা~
‘
‘
খুব বড়সড় এক ধাক্কা খায় জাহিন!সামনে সত্যি’ই সে মুহুকে দেখতে পাচ্ছে?এ অবস্থায় দেখে যেন বিস্ময়তা কিছুতেই কাটছে না!তারমানে জাহিনের ভাবনাটাই সঠিক!মেয়েটা ঠিক ফলো করছিল জাহিনকে।তাহলে বালা জোড়া রেখে যাওয়ার নাটক করার কি দরকার ছিল!যদি ধরা খায় তাহলে ঠিক এই বালা জোড়ার বাহানা দিয়ে পাড় পেয়ে যাওয়ার ধান্ধা!
‘
মুহতাসনিম হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে!ভাবনার রেশ কাটতে চাইছে না যেন।তারমানে ডাক্তার জাহিন আর কেউ না তার পরিচিত সেই লোকটাই!মুহতাসনিম ঠিক জানতো তার সাথে আবার কখনও না কখনও দেখা হবে!
মুহতাসনিমের হাতে জাহিনের ভেজা টি-শার্ট।খানিকটা শরীর ভিজে গেছে মুহুর।গায়ে উড়না বাধা।বড় বড় চোখ গুলো দিয়ে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে!
” আপনি এখানে?
জাহিনের কথায় ঘোর কাটে মুহতাসনিমের।কি দিয়ে বলা শুরু করবে?তবে আনন্দে ভেতরে ভেতরে কাঁপন দেওয়ার মতো অনুভূত!ঠোঁট কাঁপছে কেমন।কিছু বলতে চায় মুহতাসনিম।তক্ষুনি রুমে আসে মিসেস নবনী।জাহিন কে দেখে বলে,
“কিরে তুই কখন এলি বাবা?
সামনে থাকা মুহতাসনিম কে কেন জানি সহ্য হচ্ছে না জাহিনের!কপালে রাগের ভাজ ফেলে জবাব দেয় জাহিন,
” তার আগে বলো যাকে,তাকে আমার রুমে এলাউ করো কেন?আমি না থাকা শর্তে আমার রুমে কোনো বাইরের মানুষ এলাউ করবে না মা মণি!
জাহিনের কথাগুলো একমুহূর্তের জন্য ভেতর টা দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে দিলো মুহুর!এত ঝাঁঝাল ভাবে বলার কি আছে!মুহুর আত্মসম্মানে আঘাত লেগেছে কথা টা!গরীব মানুষ রা কি মানুষ নয়?জাহিনের কথায় স্পষ্ট রাগ ছিল!মুহু কি কোনো অন্যায় করেছে?তবে জাহিনের এই কাঠিন্যে রূপের মানে কি?নাকি সেদিন না বলে হসপিটাল থেকে চলে আসায় জাহিন এমন আচরণ করছে?
‘
ছেলের রাগ দেখে আন্দাজ করতে পারেন নবনী,ছেলে তার রুমে অপরিচিত মেয়ে দেখে বেশ চটেছে!তবে কটাক্ষ করে কথা টা জাহিনের থেকে আশা করেনি মিসেস নবনী।তার জানা মতে সে ছেলেকে এমন শিক্ষা দেননি!মিনা খালার সাথেও তো তার কি অমায়িক ব্যবহার!
“জাহিন?!তুমি মুহতাসনিম এর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন?
“বাইরের মানুষ আমার পারমিশন ছাড়া আমার রুমে আসুক সেটা আমার ভাল লাগে না মা মণি!
‘
মুহতাসনিম এর কাপড় ধোঁয়া তখন প্রায় শেষের দিকে।কাপড় গুলো বালতি তে নেওয়ার সময় মা,ছেলের কথা খুব ভাল করেই কর্ন কুহুরে প্রবেশ করছিল!আর কিছু টা সময় এখানে থাকলে যে চোখের পানি বাধ মানবে না!কোনোরকম কাপড়ের বালতি নিয়ে বেরিয়ে যায় মুহতাসনিম।নবনী পিছু ডাকতেই মুহু বলে,
” আমি ছাদে কাপড় মেলে দিয়ে যাচ্ছি আন্টি।আর দুঃখিত আমি আপনার ছেলের পারমিশন ছাড়া উনার রুমে প্রবেশ করেছি।বলবেন আমায় ক্ষমা করে দিতে।
তৎক্ষনাৎ মুহু স্থান ত্যাগ করে।.
~~~
নবনী রাগী কন্ঠে বলে,
“জাহিন তোর এ ধরনের কথা আমার মোটেও ভাল লাগেনি।ছোট্ট একটা মেয়ে মুহতাসনিম!তুই এভাবে বললি কেন?মেয়েটা কত কষ্ট পেয়েছে!
‘
জাহিনের মাথায় তখন অন্য চিন্তা ঘুরছে!মেয়েটা কতটা ধান্ধাবাজ!সোজা বাড়ি অব্ধি এসে একদম কাজের লোকের কাজ আদায় করে নিয়েছে!জাহিন তো শুনেছিল মেয়েটা ফুলের ব্যবসা করতো!বাড়ি থেকে পালিয়েছে হয়তো কোনো ধান্ধাতেই!
নবনী খানিকটা জোড়েই বলে,
” আমি তোকে কিছু জিজ্ঞেস করছি জাহিন।এমন ব্যবহার কেন করেছিস মেয়েটির সাথে?
“আমি কিছু ভুল বলিনি মা মণি।কোথা থেকে আসে এরা কে জানে।কোনো ধান্ধাও তো থাকতে পারে বলো?
‘
নবনী এবার কিছু বিবেচনা না করেই জাহিনের গালে থাপ্পড় বসায়!স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে জাহিন।চোখ জোড়া জলে টলমল করছে নবনীর!
” খুব ছোট থেকে একা’ই তোমাকে মানুষ করে আসছি।যখন যা চেয়েছো তা দিয়েছি।যা মর্জি হয়েছে তাই করতে দিয়েছি।কখনও লোককে এটা বলার সুযোগ দিও না যে তোমাকে আমি মানুষ করতে পারিনি!তোমার পরিচয় হবে তুমি শুধু নবনীর ছেলে।তোমার শরীরের বিষাক্ত রক্ত আমি উগড়ে ফেলে দিতে চেয়েছি!আমি হয়তো ভুলেই গিয়েছি বিষ কোনো কিছুর সাথে মিশ্রিত হলে তা আলাদা করা দুষ্কর!
‘
জাহিন বেশ বুঝতে পারছে মা মণি রাগ,ক্ষোভ থেকে এ কথাগুলো তাকে বলেছে!এর আগে মায়ের এত কঠিন রূপ দেখেনি জাহিন।এত চড়াই উৎরাই এর মধ্যে দিয়েও জাহিনের শরীরে এতটুকু আঁচ লাগতে দেয়নি মা মণি।আর একটা বাহিরের মেয়ের জন্য তার মা মণি কে কতটা কষ্ট পেতে হলো!
নবনী কান্নারত কন্ঠে বলল,
“আমার তো তোকে নিয়ে ভয় হয় জাহিন!তোর জীবনে যে মেয়ে আসবে তার জীবনটাও ঠিক তুই নরক বানিয়ে দিবি!মানুষের জীবনের কোনো মূল্য নেই তোদের কাছে?আমার তো এখন মনে হচ্ছে তোকে তোর বাবা আর দাদু মণির কাছে রেখে আসা’ই উচিৎ ছিল!আমি কি আবারও ভুলের পথে পা বাড়ালাম জাহিন?
‘
মা মণির কথাগুলো আজ সত্যি অন্তরের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছে জাহিনের!মা মণি এতটা কষ্ট পাবে জানলে সে কখনই এসব বলতো না!তবে নিজেকে ভুল’ও মনে হচ্ছে না জাহিনের।
অস্ফুট স্বরে বলে জাহিন,
” মা মণি আমি তো শুধু ওই মেয়েটাকে বলেছি!এতে তুমি এমন রিয়েক্ট করছো কেন?জগতের সবাই ভাল হয় না মা মণি!সেটা বুঝতে হবে।
চোখ মুছে জবাব দেয় নবনী,
“ঠিক,ভুলের বিচার আমাকে তোর থেকে শিখতে হবে না।আজকে তুই মেয়েটার সাথে যে ব্যবহার করলি এতে আমার দেওয়া শিক্ষাও জড়িয়ে ছিল জাহিন।
” মা মণি তুমি ভুল বুঝছো আমাকে।রাস্তার যে কেউ এলেই তাকে কাজ দিতে হবে?
“মুহতাসনিম কোনো রাস্তার মেয়ে নয় জাহিন।মিনার ভাগ্নি।সকাল থেকে অসুস্থ মিনা।তাই বাধ্য হয়ে এই মেয়েটাকে পাঠিয়েছে।শুধু তোর কাপড় কাঁচার জন্য মেয়েটা টিউশনি থেকে সোজা এখানে চলে এসেছে।তোদের মতো কোনো নামকরা ডাক্তার নয় ওরা, তবে খেটে খাওয়া মানুষ।ওদেরও মানসম্মান আছে।
বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় নবনী।
ছাদে গিয়েও মুহতাসনিম এর দেখা পায় না নবনী।নিচে আনানের মা’কে জিগ্যেস করতেই বলল ‘মুহতাসনিম খানিকক্ষণ আগে চলে গেছে’ যাওয়ার আগে বলে গেছে যেন নবনীকে জানিয়ে দেয়।মেয়েটির জন্য ভিষণ মায়া হচ্ছে নবনীর খালি মুখেই চলে গেল মেয়েটা!
~~~
মা মণির বলা শেষ কথাগুলো কানে বাজছে জাহিনের!মুহু কাজ করতে আসেনি এখানে?মিনা আন্টির পরিচিতা?এ কথাটা মা মণি তাকে আগে বললেই হতো!অবশ্য জাহিন তো বলার সুযোগ’ও দেয়নি।নিজেকে এখন চরম লেভেলের অপদার্থ মনে হচ্ছে জাহিনের।মুহু’ও নিশ্চয়ই জানতো না এটা জাহিনের বাসা?আদৌ কি মুহুর সামনাসামনি দাড়াতে পারবে জাহিন?রাগের বশে তো মেয়েটার সামনে নিজের ইমেজ নষ্ট করেছে’ই তার উপর মা মণি কেউ কষ্ট দিয়েছে!অবশ্যই একবার মুহু কে স্যরি বলতেই হবে শিট!
পরক্ষণে পকেট থেকে মুহুর বালা জোড়া বের করে জাহিন।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সেটার দিকে।
~~~
ঘরে ফেরার পর থেকে মন খারাপ মুহতাসনিম এর।মিনা খালা অবশ্য খেয়াল করলেও জিগ্যেস করেনি।রাতে যখন মুহতাসনিম জানায় সে খাবে না তখন আর চুপ থাকতে পারলেন না মিনা খালা।
“কি হইছে রে মুহু?আসার পর থাইকা কেমন চুপ কইরা আছস?কিছু বলছে কেউ?
” না খালা।আজকে কাজ করেছি তো একটু বেশি তাই ভাল লাগছে না।তুমি খাও।
“তুই না খাইলে আমিও খামু না।
‘
শেষে খালার জোড়াজুড়িতে অল্প একটু খেয়ে নেয় মুহতাসনিম।এতটুকু খাবারই যেন গলা দিয়ে নামছিল না!ভিষণ কষ্ট হচ্ছিল!জাহিন এমন বিচ্ছিরি মানসিকতার একটা লোক তা ঘুনাক্ষরে বুঝতে পারেনি মুহু!আসলে মানুষ দূর থেকেই সুন্দর!যত কাছে আসবে ততোই রূপ উন্মোচিত হবে!সবাই সুন্দর হয়না!মুহতাসনিম হয়ত ভুলেই গিয়েছিল জগতে ভাল মানুষের বড্ড অভাব!তা তো ছোট থেকেই দেখে আসছে মুহতাসনিম!
মনে মনে স্বপথ করে নেয় তার মায়ের চুড়ি জোড়া হাড়িয়ে যাক তবুও কোনোদিন এ মুখ ওই লোকটাকে দেখাবে না মুহতাসনিম।পরক্ষণে শুয়ে পরে।
~~~
সকালে রান্না সেরে রোজকার কাজে চলে যায় মুহতাসনিম।ঘর গুছিয়ে নিজের কাজের জন্য তৈরি হয় মিনা বেগম।পরমুহূর্তে বাইরে থেকে কেউ ডেকে উঠে।বাইরে আসতেই মিনা বেগম দেখেন জাহিন দাড়িয়ে আছে।
” স্যার আপনি?কোনো দরকার?আসলে আজকে কাজে যাইতে একটু দেরি হইয়া গেছে!
মিনা বেগমের মুখে অপরাধবোধ স্পষ্ট!জাহিন অভয় দিয়ে বলে,
“তেমন কিছু না মিনা আন্টি।আমি আসলে মুহুর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম।একটু ডেকে দিবেন ওকে।
জাহিনের মুখে মুহতাসনিমের নাম শুনে বেশ চমকে যায় মিনা বেগম।চমকিত ভাব টা লুকিয়ে বলে,
” মুহু তো বাড়িতে নাই।টিউশনি তে গেছে।
জাহিন কিছু একটা ভেবে বলে,
“ঠিকানা টা দিন আন্টি।
বিনাবাক্যে ঠিকানা দিয়ে দেয় মিনা বেগম।
~~~
মুহতাসনিম যে বাড়িতে পড়াতে যায় তার ঠিক বাইরে একটা টং দোকানে বসে আছে জাহিন।হাত ঘড়ি দেখছে বারংবার।প্রায় ঘন্টার উপরে বসে আছে তবুও মুহতাসনিম এর দেখা নেই!ইতিমধ্যে চার কাপ ‘চা’ শেষ করে নিয়েছে।জাহিন সাধারণত টং দোকানে বসে এভাবে ‘চা’ খায় না।
‘
‘
মুহূর্তেই দেখে সামনে বাড়ির গেইট থেকে মুহতাসনিম বেরিয়ে আসছে!তৎক্ষনাৎ উঠে সে দিকে এগোয় জাহিন।ভেতরে ভেতরে বেশ অসস্থি লাগছে!
দাঁড়িয়ে রিকশা ডাকছে মুহতাসনিম।কোথা থেকে জাহিন এসে উদয় হয়!থমকে দাঁড়িয়ে থাকে মুহতাসনিম।অনেকটা অবাকই হয়েছে!ভাবছে লোকটা এখানে কি করে এলো?এখন নিশ্চয়ই মুহুর মায়ের বালা জোড়া ফিরিয়ে দিবে আর এক গাদা অপমানজনক কথা শুনিয়ে দিবে?
ততক্ষনে রিকশা এসে দাড়িয়েছে।মুহতাসনিম উঠার জন্য উদ্যত হতেই জাহিন রিকশাওয়ালার উদ্দেশ্য বলল,
” মামা আপনি আসুন।কেউ যাবে না এখন।
চলবে~
#মেঘবতীর_শহরে
পর্বঃ১২
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
,
,বেলা গড়াচ্ছে দুপুরের দিকে।বিষন্ন মুখ নিয়ে তপ্ত রোদে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।জাহিনের কথায় এই মুহূর্তে তার কেমন প্রতিক্রিয়া করা উচিৎ তা যেন মস্তিষ্ক জানান দিচ্ছে না!অনুভূতি শূন্য লাগছে চারিপাশ টা।
গরম পরেছে বেশ,কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জড়িয়ে মুহতাসনিমের।ক্লান্ত চোখ দুটি নিয়ে একবার সামনে তাকায়,সামনে মুখে কিঞ্চিত হাসি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জাহিন।
“মুহু আপনার সাথে একটু কথা ছিল।
মুহূর্তেই রাগ তেতিয়ে উঠে মুহতাসনিম এর।লোকটা দিব্যি তাকে কালকে অত অপমান করলো আজকে নিশ্চয়ই আরও কয়টা কথা শুনিয়ে দিবে?আর একটা কথাও বলার সুযোগ দিবে না মুহতাসনিম।কাঠ কাঠ গলায় মুহতাসনিম বলে,
” আমি কারো কথা শুনতে বাধ্য নই।অবশ্য এত বড় মাপের মানুষ!এত নিচু জাতের কারও সাথে রাস্তায় দাড়িয়ে কথা বলবে!বিষয় টা খুবই বেমানান দেখায় মি.জাহিন সাহেব।
কথাগুলো শুনে নিজের কাছে নিজেকে বড্ড ছোট লাগছে জাহিনের।তার তো এমন কথা গুলোই শোনার প্রাপ্য ছিল!
মেয়েটাকে খুবই বিষন্ন লাগছে।চোখ দুটো কেমন নিষ্প্রাণ লাগছে!শুকনো ঠোঁট জোড়া কথা বলার সময় কেমন কাঁপছিল!আগে পিছে আর কিছু না ভেবে জাহিন বলে,
“আ,,,আসলে মুহু আই এম স্যরি!প্লিজ আমার কথা টা একটু শুনুন।
সামনের কাটা চুল গুলো কানের পেছনে গুঁজে নেয় মুহতাসনিম।শব্দ করে হেসে বলে,
” অন্যায় তো আমার।বিনা পারমিশনে কারও বেডরুমে চলে গিয়েছিলাম কিনা!কোনো বদ উদ্দেশ্য ও তো থাকতে পারে!আমি সত্যি দুঃখিত মি.জাহিন সাহেব।দ্বিতীয় বার আপনার বেডরুম কেন আপনার বাড়ির ছায়াতেও পা রাখবো না।
“আপনি ভুল বুঝছেন।আমার কথাটা শুনুন?
” আচ্ছা!ভুল টা আমার’ই ছিল!এখন বোঝাটাও আমারই ভুল?
আমার সময় নেই প্লিজ সাইড দিন আমায়।
বলেই হরহর করে হেটে চলে গেল মুহতাসনিম।খানিকটা সময় দাড়ালে যে চোখের পানি লুকানো দায় হয়ে যেত!
মুহতাসনিম এর যাওয়ার পথে নিষ্পলক তাকিয়ে আছে জাহিন।হটাৎ করেই বুকটা কেমন ভার লাগছে!মেয়েটা যে পাহাড় সম অভিমান নিয়ে চলে গেল!জাহিনের কথা টা একটু শুনলে কি বড্ড অন্যায় হয়ে যেত মেয়েটার?পরক্ষণে হাত ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে নেয় জাহিন।সময় যে তার’ও সংকীর্ণ,এক্ষুনি তাকে কর্মস্থলে যেতে হবে।
~~~
পরের টিউশনি টা মনোযোগ দিয়ে পড়াতে পারলো না মুহতাসনিম।মন টা অজানা কোনো কারণে বড্ড খারাপ হয়ে আছে।আজকে বিশ মিনিট আগেই ছুটি দিয়ে চলে গেল মুহতাসনিম।
~~~
মিনা খালার কাজের মাঝে একবার আসেন মিসেস নবনী।মুখখানা তার বিষন্ন হয়ে আছে।নিজের মাঝে হাজার জড়তা!তারপরও জিগ্যেস করে বসলো মিনাকে,
“মিনা আপা?তোমার শরীর টা এখন কেমন?
” আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছে।
আমতা আমতা করে বলে নবনী,
“কালকে মুহতাসনিম কিছু বলেছে তোমায়?
কাজের মাঝে থমকে যায় মিনা বেগম।তার মন টা কালকে থেকেই খচখচ করছিল।মুহতাসনিম কে কতবার জিগ্যেস করার পরও তো কিছু বলল না!নিশ্চয়ই কিছু হয়েছে।মন টা ভয়ে সেধিয়ে গেল মিনার।মেয়েটাকে নিজের ভরসায় রেখে কোনো ভুল করে ফেলল না তো মিনা!শুকনো ঢোক গিলে বলে মিনা,,
” কি বিষয়ে বলতাছেন আপা?কি হইছে?আমার মুহুর কিছু হইছে?মাইয়া টা ভারী চাপা স্বভাবের কিচ্ছু বলবো না।
চমকে যায় নবনী!তারমানে এখনও কিছু বলেনি মুহতাসনিম।কোনোরকম বলে উঠে নবনী,
“ন,,,না কি হবে?কালকে কাজ করে গেছে তার’ই কথা বলছিলাম আরকি।মেয়েটা খুব মিষ্টি আরেকদিন নিয়ে এসো তো।
নবনীর কথায় মন মানলো না মিনার।কোথাও খটকা থেকেই গেল!আনমনা হয়ে কাজে মন দিতে চাইল মিনা।পাশেই চা বসিয়েছে নবনী।
মিনা এবার বলেই ফেলল,
” সকালে তো জাহিন সাহেব আমাদের কলোনিতে গেছিলো মুহুরেও খুঁজতাছিল।আপনি কি কিছু জানেন এই ব্যপারে আপা?
মুহুর্তেই মুখ থেকে একরাশ কালো মেঘ কেটে গেল নবনীর।তারমানে জাহিন নিশ্চয়ই মুহতাসনিম এর কাছে ক্ষমা চাইতে গেছে!ছেলেকে তিনি একটু হলেও ভাল শিক্ষা দিয়েছেন।কালকে নিশ্চয়ই কোনো কারণে মন খারাপ ছিল জাহিনের সে থেকেই মেয়েটার সাথে এমন ব্যবহার করে ফেলেছে!গদগদ খুশী নিয়ে বলল নবনী,
“মুহতাসনিম এর সাথে কথা হলো জাহিনের?
” মুহু বাড়িতে ছিল না।পরে কই গেছে জিগ্যেস করায় আমি ঠিকানা দিয়া আসছি।
“খুব ভাল করেছো মিনা আপা।
” হঠাৎ জাহিন সাহেব ক্যান গেল আপা?
কাপে চা ঢালতে ঢালতে বলল নবনী,
“হবে হয়তো কোনো কারণ!ফিরলেই জিগ্যেস করে নিবোনে জাহিন কে।
~~~
রাতে বাড়ি ফেরার পর ব্যাগ গোছাচ্ছে জাহিন।দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে সেটা খেয়াল করছেন মিসেস নবনী।অবশ্য মাকে এখনও খেয়াল করেনি জাহিন।মনটা ভিষণ উদাস হয়ে আছে।কোনো কাজেই আজ ঠিকমতো মন বসাতে পারেনি।এত কেন অপরাধবোধ হচ্ছে ভেবে পায় না জাহিন!ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে মুহুর গালে ঠাস ঠাস করে দুটো চড় লাগিয়ে বলুক ‘এই মেয়ে আমার কথা তোমাকে শুনতেই হবে!শুনতে বাধ্য তুমি।কি এমন অন্যায় করেছি শুনি?’
জাহিনের ভাবনার মাঝেই নবনী এসে পিছু দাঁড়ায়।সে দিকে খেয়াল নেই জাহিনের।অগোছালো ভাবে ব্যাগ গোছাতে ব্যস্ত জাহিন।ছেলের অন্য মনস্ক ভাব টা চোখ এড়ালো না নবনীর।
” কোথাও যাচ্ছিস বাবা?
ঘুরে তাকায় জাহিন,মাকে দেখে খানিকটা চমকে উঠে!তার সাথে মায়ের এমন সহজ আচরণ ঠিক হজম হচ্ছে না জাহিনের।বিস্ময়তা কাটিয়ে বলল,
“আগামী নয় দিনের জন্য বাড়িতে থাকবো না মা মণি।ডিউটি পরেছে।
এই কথাটা বরাবরই কষ্ট দেয় নবনীকে।দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে নবনী,
” সবে তো দুদিন হয়েছে এসেছিস।আবার ডিউটি?
“কাজ পরে গেলে কি করবো মা মণি?
” তা বেশ! কিন্তু আমাকে আগে বলিসনি কেন তুই সবে দুদিনের জন্য এসেছিস?
“আমি নিজেও জানতাম না মা মণি!মাত্রই কল এলো।
মাকে মুহূর্তেই ছোট্ট একটা মিথ্যে কথা বলে নিলো জাহিন।নয়ত মা ভিষণ কষ্ট পেত!একমাত্র মায়ের কষ্ট টা সহ্য হয় না জাহিনের।নবনী এবার কথার অন্য প্রসঙ্গ টানলো,
” তুই কি মুহতাসনিম এর কাছে গিয়েছিলি জাহিন?
মা মণির কথায় বেশ খানিকটা চমকে যায় জাহিন!অবশ্য মা মণির জানবারই কথা,মিনা খালা খবর টা কানে তুলেছে নিশ্চয়ই।
“হ্যাঁ গিয়েছিলাম।
” তুই মুহতাসনিম এর কাছে ক্ষমা চাইতে গিয়েছিস সেটা আমি বুঝতে পেরেছি।কিন্তু ক্ষমা টা কেন চাইতে গিয়েছিস,আমি কষ্ট পেয়েছি বলে?নাকি নিজ থেকে অনুতপ্ত হয়ে?
“মা মণি!আমার ভুল টা’ই স্বীকার করতে গিয়েছিলাম।
“তা মুহতাসনিম কি বলল?
চুপচাপ আবার নিজের কাজে মনোযোগী হয় জাহিন।রাগ টা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠে!
” মেয়েটি ক্ষমা করলো না তাই তো?!!
রাগ মিশ্রিত মুখ নিয়ে বলল জাহিন,
“আমার কথাটা’ই শুনলো না মা মণি।কি এমন অন্যায় হয়েছে আমার?
দু হাত ভাজ করে দাড়ান নবনী পরক্ষণে বলেন,
” তাই তো!একটা মেয়েকে যা খুশী তাই বলে অপমান করা এমন কি আর অন্যায় বল?
ধপাস করে খাটে বসে পরে জাহিন।দু হাত চুলের মাঝে চালিয়ে নিয়ে বলে,
“আমি আগে থেকেই মুহু কে চিনতাম মা মণি।
জাহিনের কথায় বেশ খানিকটা চমকে যায় নবনী!ছেলে তার আগেই যদি মুহতাসনিম কে চিনতো তবে এমন উটখো ব্যবহার কেন করলো?কৌতুহল বাড়ে নবনীর।জাহিন বাজে ব্যবহার এমনি এমনি করেনি?এর পেছনে নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে তবে!
” খোলাসা করে বল?
পাশে থাকা গ্লাস থেকে একটু পানি খেয়ে নেয় জাহিন।পরক্ষণে বলা শুরু করে,’মুহতাসনিম এর সাথে হসপিটালে দেখা এবং বালা জোড়ার কথাও বলে জাহিন।কিন্তু তার’ও আগে সে দু বার মুহতাসনিম দের বাড়ি অব্ধি যায় সে কথাটা মায়ের কাছে গোপন রাখে।
সব কথা শুনে নবনী বলে,
“মেয়েটির তো কোনো অন্যায় দেখছি না!তবে দ্বিতীয় বার তোর সাথে যে ওর দেখা হবেই সে বিষয় টা কি করে নিশ্চিত হলো মেয়েটি?এই বিষয়টা অবশ্যই ভাববার!তোর ভাবনা টা তো তবে ভুল নয়।তোর জায়গায় থাকলে যে কেউ এটাই ভেবে নিতো!
জাহিন চুপ করে আছে,তার ভাবনা অন্য কিছু।মুহতাসনিম জানতো জাহিন তার বাড়ি চেনে।ভবিষ্যতে সে মুহতাসনিম কে না পেলেও তার বাড়িতে ঠিক বালা জোড়া পৌছে দিত!সে ভরসাতেই মেয়েটি বালা জোড়া রেখে গেছে।সেটা তো আর এই মুহূর্তে মাকে বলতে পারবে না জাহিন।তবে মুহু মেয়েটার যে তীব্র আত্মসম্মান বোধ আছে এতে সন্দেহ নেই জাহিনের।
জাহিন কে চুপচাপ দেখে আশ্বাস দেয় নবনী,
” আমি নিজে কালকে মুহতাসনিম এর কাছে যাবো।
চলবে…..