#মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ১৭ অংশঃ০১,০২
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,
,
কয়েক সেকেন্ড স্থির দৃষ্টি নিয়ে জাহিনের পানে তাকিয়ে থাকে মুহতাসনিম। পরক্ষণে ভদ্র ভাবেই প্রস্তাব টা ফিরিয়ে দেয়।
“ধন্যবাদ।আমি রিকশা নিয়ে নিবো।
ছোট্ট করে একটা নিশ্বাস ছেড়ে বলে জাহিন,
” আপনার কিন্তু দেরি হচ্ছে।
মুহতাসনিম আর ক্ষনকাল কিছু না ভেবেই গাড়িতে পেছনের সিটে উঠে বসে পরলো।সত্যিই দেরি হচ্ছিল,কাজের ক্ষেত্রে ফাঁকি পছন্দ নয় মুহতাসনিম এর।
অগত্যা জাহিনও আর কথা বাড়ায়নি।ঠোঁটের কোণায় মৃদু একটু খানি হাসি নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
খোলা জানালায় মুখ করে বাইরে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।ক্ষনে ক্ষনে রৌদ্রের তাপ বাড়ছে।ব্যস্ত শহরের ব্যস্ত মানুষগুলো নির্বিঘ্নে ছুটছে।
লুকিং গ্লাসে অবশ্য একবার চোখ পড়েছে জাহিনের।কালো রঙের কুর্তি পরে আছে মুহতাসনিম।চোখে হালকা কাজল লক্ষ্য করা যাচ্ছে,কিছুটা চোখের নিচে লেপ্টে গেছে!জাহিনের হুট করে ইচ্ছে হলো গাড়িটা থামিয়ে মুহুর চোখের কাজল টুকু রুমাল দিয়ে যত্নসহকারে মুছে দিক!কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায় জাহিন।সব ইচ্ছা সবসময় প্রকাশ করতে নেই!কিছু ইচ্ছে যত্নসহকারে ভেতরে পুষে রাখতে হয়!দীর্ঘশ্বাস ফেলে জাহিন।
~~~
দুপুরের পর আনানকে আজ ব্যবসার কাজে বেরুতে দেয়নি রেহানা বেগম।দাদুমনির কথায় বাধ্য ছেলের মতো বাসায় থাকে আনান।সময় নির্ধারণ হয় সন্ধ্যায় তারা রাফসাদের বাড়িতে যাবে।দুপুরে খাওয়ার পরেই রুমে এসে রাফসার সাথে ফোনালাপে ব্যস্ত হয়ে গেছে আনান।তার মনের মতো করে আজকে সাজতে বলে রাফসাকে।নিজের কল্পনার মতো করে আজ রাফসাকে দেখতে চায় আনান।মনের কুঠুরি তে রাফসার জন্যে একটু একটু করে ভালোবাসা জমিয়েছে আনান।রাফসাকে পেতে এত সহজ হবে এটা কল্পনাও করেনি,মানুষ নিজের ভালোবাসার জন্য যুদ্ধ জয় করে নেয়! আর সেখানে আনান যুদ্ধ ছাড়াই স্বাধীন সৈনিক!পরক্ষণে একটুখানি হেসে ফেলে।আবারও মত্ত হয়ে যায় ফোনালাপে!
~~~
★এক টুকরো মেঘের এক পশলা বৃষ্টি
দিন শেষে ঝকঝকে আকাশ হাসে একটুখানি মিষ্টি!’★
দু চার লাইন কবিতা আওড়াতে আওড়াতে নার্সারী তে গাছের চারা নাড়াচাড়া করছে জাহিন।ছাদের এক কোনা টা ফাঁকা পরে আছে।কিছু ফুলের গাছ হলে মন্দ হয় না।বিকেল টা তবে আরও দারুণ কাটবে!কাঠগোলাপ,সাদা গোলাপ,বেলী,টিউলিপ,গাধা বেশ কয়েক জাতের চারা কিনে নেয় জাহিন।ফুলের কর্নার টায় ফুলের সুভাসে কেমন মৌ মৌ করছিল!
চারা গুলো নিয়ে গাড়ির পেছন সিট টায় বোজাই করে নেয় জাহিন।হাত ইতিমধ্যে কাদাঁয় কিছুটা মাখামাখি!শুকনো মাটি হওয়ায় খানিকটা হাত ঝেড়ে নেয়।তবুও অবশিষ্ট কিছুটা লেগে থাকে হাতে।
আকাশে গুড়ুম গুড়ুম শব্দ হচ্ছে।বৃষ্টি আসার পূর্বাভাস,ঠান্ডা হিমেল হাওয়া ছেড়েছে কিছুক্ষণ আগেই,বৃষ্টি আসার পূর্বের বাতাস টা বেশ দারুণ লাগে জাহিনের।ড্রাইভ করতে করতে জানালার কাচ টা আরেকটু নামিয়ে দেয় জাহিন।সত্যিই চমৎকার লাগছে বাতাস টা!শরীর মন দুলিয়ে দেওয়ার মতো অনুভূতি।
হাত ঘড়িটায় একবার চোখ বুলায় জাহিন।বিকাল চারটে বেজে গেছে!কয়েকটা নার্সারী ঘুরতে ঘুরতে কখন যে এতটা সময় ব্যয় হয়ে গেছে খেয়াল করেনি!গোল গোল করে বৃষ্টি নামতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে,মুহূর্তেই গাড়ির সামনের গ্লাস টা ঘোলাটে হয়ে আসতেই ওয়েপার অন করে দেয় জাহিন।সাইডের গ্লাস উঠিয়ে দেয়।গা খানিকটা ভিজে যায় বৃষ্টির ছাটে।রাস্তার কেউ কেউ ছুটে চলছে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচতে,কারও কারও হাতে ছাতা লক্ষ করা যাচ্ছে।
আচমকা মুহুর কথা মনে পরে জাহিনের।মেয়েটা সত্যি বদ্ধ পাগল!বৃষ্টি হলেই ভিজতে চলে আসে!আজও কি এমন পাগলামি করবে মেয়েটা?হাত ঘড়িটার দিকে তাকায় জাহিন।চারটা তেত্রিশ বাজে।তার মানে মুহতাসনিম এর বাসায় যাওয়ার সময় হয়ে গেছে!কি মনে করে তৎক্ষনাৎ গাড়ি অন্য রাস্তা দিয়ে মোড় নেয় জাহিন।
বৃষ্টির তেজ বেড়েছে ভিষণ!হঠাৎ দূরে দৃষ্টি থমকে যায় জাহিনের!কালো কুর্তি পরিহিতা মুহু রাস্তার সাইডে কাকভেজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!কোনো জড়তা নেই যেন!অনেকটা ইচ্ছে নিয়েই যেন ভিজছে!মাঝে মাঝে আশপাশ টা চোখ বুলিয়ে যাচ্ছে রিকশার দেখায়।এই ঢল বৃষ্টির মাঝে একটা রিকশারও দেখা নেই!গাড়ি নিয়ে তৎক্ষনাৎ মুহুর সামনে এসে থামে জাহিন।
গাড়িটা চিনতে একটুও ভুল হয়না মুহতাসনিম এর!অনেক টা চমকে যায় মুহতাসনিম!ততক্ষণে দরজা খুলে প্রথমেই বলে উঠে জাহিন,
“আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন?এভাবে ভিজছেন কেন?!!
মুহতাসনিম এর ঠোঁট মৃদু কাপছে!বেশ ঠান্ডা অনুভুত হচ্ছে,গালের সাথে ভোজা চুল লেপ্টে আছে।চোখের কাজল ঘেটে একাকার!টিপটিপ করে চোখের পাতা ফেলছে মুহতাসনিম,একমুহূর্তের জন্য অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে জাহিন!
★তুমি শুধু এক টুকরো মেঘ হও,
আমি সে মেঘ ভেঙ্গে বৃষ্টি ঝড়বো আমার আকাশে★
নিজের অজান্তেই আপন মনেই আওড়িয়ে যায় জাহিন।মুহু কে যেন ভয়ংকর সুন্দর লাগছে এই মুহূর্তে!
মুহতাসনিম উত্তর দেয়,
” আপনি এখানে?
পাল্টা গাড়িতে উঠার জন্য মুহতাসনিমকে আহ্বান করে জাহিন,
“ঠান্ডা লেগে যাবে গাড়িতে উঠুন।
কথাটা কেমন আদেশের মতো শোনালো।মুহতাসনিম এবারও উপেক্ষা করে বলল,
” আমি রিকশা নিয়ে নিবো।
কিঞ্চিৎ রাগে কপাল কুঁচকে আসে জাহিনের।
“কথা না বলে উঠুন।এখন কোনো রিকশা পাবেন না।
কিছুটা জড়তা কাজ করছে মুহতাসনিম এর।একে তো ভেজা গাঁ!এক পা দু পা করে এগিয়ে আসে মুহতাসনিম।গাড়ির পেছনের দরজায় হাত রাখতেই জাহিন বলে,
“সামনে বসুন।
জাহিনের ব্যবহারে আজ অনেকটায় অবাক হচ্ছে মুহতাসনিম।কয়েক সেকেন্ড চুপ করে দাড়িয়ে থাকে।কিছু আন্দাজ করতে পেরে নরম সুরে বলে জাহিন,
” পেছনে জায়গা নেই মিস মুহু।
পরক্ষণে ফ্রন্ট সিটে এসে বসে পরে মুহতাসনিম।মাথা ঘুরিয়ে একবার পেছনে তাকায়।গাছ গুলো দেখে যেন আরও খানিকটা চমকে যায়।মুচকি হেসে ড্রাইভ করতে করতে বলে জাহিন,
“আমার কথা বিশ্বাস হলো না?তাই পেছনে একবার দেখে নিলেন?
মুহতাসনিম খানিকটা লজ্জা পেল।হাসার চেষ্টা করে বলল,
” না,মানে আমি ভেবেছি হয়ত পেছনে কেউ বসেছে।
“আচ্ছা!
এক হাতে পকেট থেকে রুমাল বের করে জাহিন।মুহুর দিকে বাড়িয়ে বলে,
” মাথাটা একটু মুছে নিন।নয়ত মাথা ভার হয়ে থাকবে পরে।
চট করে মুহুর মনে পরে,কাল রাতে ভেজার পর ভাল করে মাথা মুছেনি মুহতাসনিম তাই সকালে মাথাটা এমন ভার ছিল!
“কি ভাবছেন ধরুন?
রুমাল নিতেই জাহিনের হাতের পানে দৃষ্টি থমকে যায় মুহতাসনিম এর।শুকনো কাঁদা লেগে আছে খানিক।
” আপনার হাতে তো কাঁদা লেগে আছে!
নিজের হাতের দিকে একবার তাকায় জাহিন।
“ওহ আপনি খেয়াল করেছেন?
” হ্যাঁ,স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে হাতে।
সামনে থেকে টিস্যু নিয়ে এক হাতে মুছার চেষ্টা করতে করতে বলে জাহিন,
“সব কিছু খেয়াল করলেও অনেক সময় বলা যায় না।
পরক্ষণে মনে মনে বলে,
” এই যে আপনার ঘেটে যাওয়া কাজল টুকু আমি কখন থেকে সুক্ষ্ম ভাবে খেয়াল করেছি!অথচ বলতে পারছি না কেমন!আসলে আপনার চোখে ঘেটে যাওয়া কাজলটুকুই সুন্দর লাগছে মিস মুহু!ভিষণ সুন্দর লাগছে ভিষণ!আমার ভাষায় হয়তো আমি সেটা কখনই প্রকাশ করতে পারবো না!
জাহিনের কথার অর্থ বুঝতে না পেরে নিজের কাজে মনোযোগী হলো মুহতাসনিম।খোপাটা একটানে খুলে নিলো।মুহূর্তেই ধপাস করে গাড়ির সিটে পরলো এক গুচ্ছ মেঘবরণ কেশরাশি!এক পলক সে দিকে দৃষ্টি পরে জাহিনের।খুব গুছিয়ে চুলের ভাজে ভাজে মাথা মুচছে মুহতাসনিম।তৎক্ষনাৎ দৃষ্টি সরিয়ে নেয় জাহিন।মিস মুহুকে আজ সত্যিই কেমন অদ্ভুত সুন্দর লাগছে!আর একমুহূর্তের জন্যেও তাকায়নি জাহিন।
চুল মোছা হয়ে গেলে রুমাল টা দিতে গিয়েও দেয়নি মুহতাসনিম।ভেবে রেখেছে একেবারে ধুয়েই না হয় দিবে।
~~~
সূর্য ডুবে গিয়ে সন্ধ্যার প্রস্তুতি নিচ্ছে আকাশ।বৃষ্টি শেষে আকাশটা কেমন অন্ধকারে ঢেকে গেছে।বাড়ির সবাই তৈরি হয়ে আছে রাফসাদের বাড়িতে যাবে।জাহিনকে পেয়ে অবশ্য আনান বেশ খুশি!বাড়ির বেশীর ভাগ অকেশনে ভাইকে পাওয়া যায় না।আজ কাকতালীয় ভাবেই যেন পাওয়া হয়ে গেল!
একে একে সবাই বের হয়ে গাড়িতে উঠেছে।দুটো গাড়ি নিয়েছে।একটা গাড়িতে শুধু আনান আর জাহিন উঠেছে।আরেকটা গাড়িতে বাড়ির বড় সদস্য রা।
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার পূর্বে ছাদে দিকে দৃষ্টি থমকে যায় জাহিনের!কফির মগ হাতে খোলা চুলে দাড়িয়ে আছে মুহতাসনিম!সন্ধ্যার শেষ আলোয় যেন এক মায়াবতী দাড়িয়ে!মুহুর দিকে তাকালে ক্রমেই যেন মায়ায় জড়িয়ে যায় জাহিন!কি অদ্ভুত টান!
“কিরে গাড়ি স্টার্ট দিচ্ছিস না যে?বাবাদের গাড়ি তো এগিয়ে চলল!
আনানের কথায় ঘোর কাটতেই গাড়ি স্টার্ট দেয় জাহিন।
~~~
রাফসার বাবা আগেই সদর দরজায় দাঁড়িয়ে আছেন।যত্নসহকারে সবাইকে সাদরে গ্রহন করলেন তিনি।মহিলা রা সব ভেতরের রুমে চলে গেছেন।মেয়ে দেখতে যেন তর সইছে না শায়লা বেগমের।
জাফর সাহেব,আনান আর জাহিন ড্রয়িং রুমে বসে আছে।আনান অবশ্য ভেতরের ঘরের দরজার কাছে দু একবার উঁকি মেরেছিল।পরমূহুর্তে জাহিনের কানে কানে বলছে,
” নার্ভাস ফিল হচ্ছে খুব!
জাহিন পাল্টা বলে,
“এখানে নার্ভাস হওয়ার কি আছে?তুই তো রাফসা কে আগে থেকেই চিনিস!
” কাকে কি বলি?তুই এসব কোনোদিন বুঝবি না।
মনির সাহেব ইতিমধ্যে কাজের লোকদের দিয়ে খাবার আনা নেওয়ার ব্যবস্থা করছেন।আফজাল সাহেব বললেন,
“এসব পরেও আনা যাবে।তুই এখানে বোস কথা বলি।
মনির সাহেব মুখে হাসি রেখে বললেন,
” কথা তো সব আগে থেকেই ঠিক।ফর্মালিটির কি দরকার?
বেয়াই তো হয়েই গেছি!
বলেই শব্দ করে হাসছে মনির সাহেব।তাল মিলিয়ে আফজাল সাহেবও হাসছে।জাহিন বুঝতে পারছে আনানের এখানে তাদের কথায় অসস্থি লাগছে,বাধ্য হয়ে জাহিন বলল,
“আংকেল আপনাদের ছাদের সিড়ি কোনদিকে?আমি আর আনান একটু হেটে আসি।
মনির সাহেব বললেন,
” সেকি ছাদে যাবে কেন?ওই দিকে খোলা বারান্দা আছে যাও হেটে আসো দুজন।তার পাশেই রাফসা মামণির রুম।
মনির সাহেব রুম টা দেখিয়ে দিতেই আনান আর জাহিন হেটে সে দিকে চলে গেলো।মহিলা রা সব ড্রয়িং রুমে চলে আসলেন।
বেলকনিতে আসতেই ফুস করে দম ছাড়ে আনান।
“টেনশন কাজ করছে রে জাহিন!একটা সিগারেট হলে মন্দ হতো না এখন!টেনশন একমুহূর্তেই ফিনিশ!
আনানের পেছনে চোখ পরতেই জাহিন ইশারায় বলল,
” পেছনের টা কি আমাদের ভাবী?
“কি?
” পেছনে তাকা একবার।
আনান ঘুরে তাকাতেই ছোট্ট একটা ঢোক গিলে নেয়।রাফসা শুনে নিয়েছে নাকি তার কথা?তাহলে কপালে শনি আছে!
“ইয়ে মানে তু…তুমি কখন এলে রাফু?
” মাত্রই এলাম।বাবা খবর পাঠিয়েছে তুৃমি এখানে।
আনান বুঝতে পেরেছে তারমানে রাফসা কিছু শোনেনি!জাহিনকে সালাম জানায় রাফসা।হাসিমুখে উত্তর দেয় জাহিন।পরক্ষনে রাফসা বলে,
“আপনার ভাইয়া কে একটু নিয়ে যেতে পারি ভাইয়া?
জাহিন অবাক হয়ে রাফসার কথা শুনছে!ভাবছে কি বেহায়া মেয়ে রে বাবা!অবাকতা লুকিয়ে বলে,
” আপনার জিনিস আপনি নিবেন এতে অন্যের পারমিশন লাগে?
আনান কে দেখে বোঝা যাচ্ছে খানিকটা লজ্জা পেয়েছে বেচারা!
রাফসা হাসি মুখে আনানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
রাফসার রুমে আসতেই আনান বলে,
“জাহিনের সামনে এভাবে বললে কেন?কি ভাববে এখন জাহিন?এমনিতে জাহিন এসব সম্পর্ক মন থেকে মানতে পারে না!
দাঁত কিরমির করে বলে রাফসা,
” রাখো তোমার ভাইয়ের কথা।তোমাকে তো একাকি ডেকেছি সিগারেট খাইয়ে তোমার টেনশন দূর করবো বলে!
শুকনো ঢোক গিলে আনান।গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে চৌচির হওয়ার পথে!কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে আনানের।
“তুমি শুনে নিয়েছো রা,,,,,রা,,,রাফু?
~~~
খোলা বেলকনিতে আকাশের পানে মুখ করে দাড়িয়ে আছে জাহিন।দমবন্ধ কর পরিস্থিতি লাগছে!মাথায় উদ্ভট চিন্তা ঘুরছে,আদৌ আনান আর রাফসা কি জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত একসাথে থাকতে পারবে?পরিস্থিতি বিষিয়ে দিবে না তো জীবনকে?বাকি আর উদ্ভট কিছু ভাবতে পারে না জাহিন।
কারও ডাকে ঘোর কাটে জাহিনের।
” হাই,
ঘুরে তাকায় জাহিন।ওয়েস্টার্ন ড্রেসে এক মেয়ে দাড়িয়ে আছে।মুখে হাসি লেগে আছে তার।
“আমি রাফসা আপুর কাজিন সিমিন।আপনি?
জাহিন ছোট্ট করে বলল,
” জাহিন।
পরক্ষণে ডাক আসলো ড্রয়িং রুম থেকে।সবাই একসাথে উপস্থিত হলো ড্রয়িং রুমে।কথা বড় রা আগেই শেষ করে নিয়েছে।জাফর সাহেব অবশ্য রাফসাকে রিং পরিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।শেষে সিদ্ধান্ত হয়েছে সামনের সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে বাগদান হবে।
সিমিন অনেকবার জাহিনের পাশ ঘেষতে চেয়েছে জাহিন যথা সম্ভব এড়িয়ে গেছে।সিমিনের জন্য বেশ বিরক্তি ধরে গিয়েছিল জাহিনের।বিদায় বেলা সবার অগোচরে জাহিনের পকেটে ছোট্ট একটা কাগজ গুজে দিয়েছিল সিমিন।সেটা বাইরে এসেই মুচড়ে ফেলে দিয়েছে জাহিন।দেখার প্রয়োজনও মনে করেনি।
~~~
চারিদিকে ঘন রাতের আধার।আকাশে আজ তারা নেই!বিশাল চাঁদটাকে লুকিয়ে দিয়েছে ধূসর মেঘের দল!কখনও কখনও চাঁদ টা উকি দিয়ে হাসছে কখনও বা মেঘেদের আড়ালে লুকিয়ে পরছে!সব কিছু মুগ্ধ হয়ে দেখছে মুহতাসনিম।বিকেলে মুহতানিমের সাথে কথা হয়েছে।তার বোনটা এবার এস এস সি পরীক্ষা দিবে।বোনের কাছে কতশত গল্প জুড়ে দিয়েছে ফোনে!বাবাকে মাঝে মাঝে ভিষণ দেখতে ইচ্ছে করে মুহতাসনিমের!বাবা তো তাকে একটাবার দেখার ইচ্ছা পোষণ করে না!ভাবতেই বুকটা হুহু করে উঠে!ভার হয়ে আসে বুক।জীবণ এত কঠিন কেন জানে না ছোট্ট মুহতাসনিম।ছোট বয়সে’ই সে নিষ্ঠুর দুনিয়ার অনেকটা রূপ দেখে নিয়েছে!
মৃদু পায়ের শব্দে ঘোর কাটে মুহতাসনিমের।চোখ দুটো কখন ভিজে গেছে টের পায়নি।চোখ মুছে পাশে তাকাতেই দেখলো জাহিন একটা লোক দিয়ে গাছগুলো ছাদে উঠিয়েছে।সে দিকে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।
লোকটাকে কিছু টাকা দিয়ে বিদেয় করে দেয় জাহিন।পরক্ষনে মাটি নিয়ে টবে পুরতে থাকে মনোযোগ সহকারে।কি মনে করে সে দিকে এগিয়ে যায় মুহতাসনিম।
একবার চোখ তুলে মুহতাসনিমের দিকে তাকায় জাহিন।তারপর কাজে মনোযোগী হয়ে বলে,
“ঘুমান নি এখনও?
পাল্টা মুহতাসনিম বলল,
” আমি আপনার সাথে কাজে সাহায্য করলে আপনার কি কোনো আপত্তি আছে?
চলবে…….