মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ১৮,১৯

0
568

#মেঘবতীর_শহরে,পর্বঃ১৮,১৯
নাদিয়া_ইসলাম সানজিদা
১৮

কাজে মনোযোগী হাত দুটো স্থির হয়ে যায় জাহিনের।মুহতাসনিমের মুখোপানে তাকায়।হাত ভাজ করে দাড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।মাথার আলগা খোপা থেকে কয়েকটা চুল এসে বাতাসে চোখে,মুখে ধাক্কা খাচ্ছে।চেহারা টা ভিষণ মলিন লাগছে কেমন।ছোট্ট করে উত্তর দেয় জাহিন,

“আপত্তির প্রশ্নই আসে না!অবশ্য হাতে কিন্তু কাঁদামাটি লেগে যাবে!

জাহিনের উত্তর পেতেই চারা গাছ গুলো হাত বুলিয়ে দেখতে থাকে মুহতাসনিম।তার পছন্দের কাঠগোলাপ গাছ টাও যে আছে!ছোট থেকেই ফুল ভিষণ পছন্দের মুহতাসনিমের।তারপর ফুলের সাথেই যেন বেড়ে উঠা!আত্নায় যেন মিশে গেছে একদম!

” সবকটি ফুল গাছ’ই খুব সুন্দর!

ছোট্ট করে কেবল হাসে জাহিন।হাতে হাতে কাজ করে মুহতাসনিম।খুব যত্নসহকারে রোপণ করতে থাকে!জাহিন আড় চোখে মুহতাসনিমকে কতবার দেখেছে সে হিসেব অগনিত!মনে হচ্ছে কাজে বুঝি খুব ভালই ব্যাগাত ঘটছে!বিরক্ত লাগার পরিবর্তে একরাশ ভাল লাগা ছুঁয়ে দিচ্ছে যেন!

ছোট্ট চুল গুলো বড্ড জ্বালাতন করছে কাজে,বিরক্তিতে কপালে কিঞ্চিৎ ভাঁজ পরে মুহতাসনিমের।বাধ্য হয়ে কর্দমাক্ত হাতেই কানের পেছন চুল গুজে নেয়।কপালে লেপ্টে যায় কাঁদা!ভারী অবাক হয়ে তাকায় জাহিন,

“সে কি!কপালে তো কাঁদা লেগে গেছে!

জাহিনের দিকে তাকায় মুহতাসনিম।মুখে সরল হাসি টেনে বলে,

” মেঘ ডাকছে শুনতে পাচ্ছেন?

জাহিনের এতক্ষণে খেয়াল হলো সে মুহুতে এতটাই মত্ত ছিল যার দরুন সে আশেপাশে কিছুই খেয়াল করেনি!আকাশে সত্যিই মেঘ ডাকছে!ঠান্ডা হাওয়া বইছে জোড়ে!মুহতাসনিম একাই বেশিরভাগ কাজ সেরে নিয়েছে।আকাশ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে বলল জাহিন,

“হ্যাঁ বৃষ্টি নামবে এক্ষুনি।

” হুম,আপনার কাজ প্রায় শেষ।চলুন গাছ গুলিকে সরিয়ে রাখতে হবে নয়তো বৃষ্টির দাপটে সদ্য লাগানো চারাগুলো নেতিয়ে পরবে!

জাহিন বাধ্য ছেলের মতো মুহতাসনিমের কথা শুনে নিলো।
গাছগুলো বৃষ্টির থেকে বাচাতে আড়ালে রেখে দিলো।দুহাত ঝেড়ে নিয়ে বলল,

“কতটা কষ্ট হয়ে গেল আপনার!কাঁদায় হাত,মুখ মাখামাখি!

” এক্ষুনি বৃষ্টি নামবে,এই কাদামাটির চিহ্নটুকুও আর থাকবে না!

জাহিন ক্রমেই অবাক হয়ে বলল,

“আপনি বৃষ্টিতে ভিজবেন নাকি এখন?

” হ্যাঁ।

“আপনাকে মাঝে মাঝে সত্যিই বুঝি না!রাতে বৃষ্টি হলেও এভাবে কেউ ভিজে?শরীর খারাপ করে না আপনার?

মুহতাসনিম খানিক্ষন চুপ করে থাকে।জাহিনের কথার হিসেব মেলায়।পরক্ষণে বলে,

” অভ্যেস হয়ে গেছে আমার।তা ছাড়া আমাদের মতো সাধারণ মানুষের শরীর খারাপ না হলে আপনারা পেশেন্ট পাবেন কি করে ডাক্তার সাহেব?

দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি নামে।সম্বিৎ ফিরে পায় জাহিন।মুহুর কথায় কেমন জড়িয়ে যাচ্ছিলো যেন!তাৎক্ষণিক দৌড়ে সিঁড়ির কাছাকাছি চলে যায়।

~~~

দূরে একদৃষ্টি রেখে দাড়িয়ে থাকে মুহতাসনিম।মুহূর্তেই বৃষ্টির পানিতে ধুঁয়ে যায় হাতে লাগা সমস্ত কাঁদা!মিনিট দুই তাকিয়ে থেকে চলে যায় জাহিন।

~~~

মধ্য রাতে জানালা খুলে বসে আছে মুহতানিম।বৃষ্টি দেখলেই বোনের কথা প্রচন্ড মনে পরে!এই বৃষ্টির প্রতিটি ফোটায় যেন বোনের গায়ের গন্ধ লেগে থাকে!পড়তে পড়তে রাত গড়িয়ে এসেছে অনেকটা!পুরোনো স্মৃতি চারণে মত্ত হয় মুহতানিম।রাত,দিন না মেনেই বৃষ্টি তে ভিজতো মুহতাসনিম!কত নিষেধ করতো বোনটাকে তবুও অবাধ্যের মতো ভিজতো।বাবা কখনও টের পেলে ভয়ানক রেগে যেত।একবার বাবার হাতে মার খেয়ে পরদিন গাঁ কাঁপিয়ে প্রচন্ড জ্বর এসেছিল মুহতাসনিমের!এ ছাড়া বৃষ্টিতে ভেজার ফলে কখনও অসুস্থ হয়নি।

~~~

ঘন্টাখানেক ঠাঁয় এভাবে দাঁড়িয়ে ভিজতে থাকে মুহতাসনিম।জাহিনকে প্রথম দেখে তাদের বাড়িতে!এমনি কোনো এক বৃষ্টিস্নাত রাতে!জলন্ত সিগারট হাতে অদ্ভুত চাহনিতে দাঁড়িয়ে ছিল লোকটা!প্রথম দেখায় অভদ্র হিসেবে ভেবে নিয়েছিল মুহতাসনিম।ক্রমেই তার ধারণা যেন পাল্টে যেতে থাকে!

বৃষ্টির সাথে জোড় বেগে বাতাস বইতে থাকে।শরীর মৃদু কাঁপুনি মুহতাসনিমের।ভাবনার মাঝে একটুও খেয়াল নেই বৃষ্টিটা কখন যে ঝড়ে পরিনত হয়েছে!মাথার উপর হঠাৎ কোথা থেকে ছাতা চলে আসলো!বেগতিক বাতাসের তোড়ে ছাতার অবস্থা যেন বেসামাল!ঝাঁঝালো এক পুরুষালি কন্ঠস্বর কর্নকুহরে এসে যেন সর্ব জোড়ে ধাক্কা খায় মুহতাসনিমের!

“আপনি আসলেই বদ্ধ পাগল!এই ঝড় বৃষ্টির মাঝেও কেউ ভিজে?এক্ষুনি রুমে যান বলছি।

চেনা কন্ঠস্বর পেয়ে পাশে তাকায় মুহতাসনিম।ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে জাহিন।চেহারাটা রাগে কুঁচকে আছে যেন।চোখের দিক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।এদিকে ছাতা ধরে রাখা দায় হয়ে পরেছে যেন!

” মিস মুহু আপনি কি আমার কথা শুনতে পাননি?!

বৃষ্টির সাথে বাতাস শরীরে কাটা তুলে দিচ্ছিল যেন!ভয়ে সবমিলিয়ে স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।আচমকা ঢলে পড়লো জাহিনের বুকে!

শরীর যেন ঠান্ডা বরফ হিমশীতল!আঁতকে উঠে জাহিন!মেয়েটার কিছু হয়ে গেল না তো?তাৎক্ষণিক ছাতা ছেড়ে মুহতাসনিমকে ধরে জাহিন।ছাতা ততক্ষণে বাতাস উড়িয়ে অনেক দূর নিয়ে চলে যায়!কোনোরকম মুহতাসনিমকে পাঁজাকোলে নিয়ে চিলেকোঠার দিকে চলে আসে জাহিন।
তাৎক্ষণিক পালস্ চেইক করে নেয়।সবকিছুই ঠিকঠাক লাগছে।আকস্মিকভাবে যেন জ্ঞান হারায় মুহতাসনিম।জাহিনের গাঁ ইতিমধ্যে ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে!

কয়েকবার চিলেকোঠার দরজায় ঠক্ ঠক্ শব্দ করে জাহিন।আধো ঘুম চোখে মিনা এসে দরজা খুলে দেন।মুহুকে পাশেই পরে থাকতে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠেন!

“হায় আল্লাহ! কি হইছে মাইয়াটার?এমনে পইরা আছে ক্যান?

আশ্বস্ত দিয়ে জাহিন বলে,

“তেমন কিছুই না।বৃষ্টিতে ভেজার ফলে এমন হয়েছে।

” মাইয়াটারে কত কইছি এই রাইতে ভিজিস না।শোনেই না বাইরে তো ঝড় হইতাছে মনে হয়!

“হুম।ভেজা কাপড় পাল্টে গাঁ মুছিয়ে দিন।ঠিক হয়ে যাবে।
মিনা ততক্ষণে এগিয়ে গিয়ে মুহতাসনিম
কে উঠানোর চেষ্টা করে।

” আমি রুমে নিয়ে যাচ্ছি আন্টি।

“হ একটু দিয়া আসলে ভাল হয় বাবা।

পরক্ষণে আবার পাঁজা কোলে করে রুমে নিয়ে আসে জাহিন।মেয়েটা এখনও চোখ বুজে আছে।হলদেটে শরীর টা ঠান্ডায় জমে নীলচে হয়ে গেছে যেন!

” ঘরে সরিষার তেল থাকলে হাতে পায়ে একটু মালিশ করে দিবেন আন্টি।অতিরিক্ত ঠান্ডায় এমন হয়েছে।

“তোমার গাঁ টাও তো ভিজা গেছে বাবা।তারাতাড়ি গিয়া জামা পাল্টাও তুমি।

জাহিন বাকি আর কিছু না বলে বেরিয়ে আসে।

~~~

বেলা গড়িয়েছে বেশ।এখনও বিছানায় জাহিন।ঘুম ভেঙ্গেছে কখন তবুও বিছানা ছাড়তে ইচ্ছে করছে না।শরীর টা ম্যাজ ম্যাজ করছে কেমন।কালকে রাতে খানিকটা ভেজা হয়ে গিয়েছিল।মাথাটা ভার হয়ে আছে।নবনী কফি হাতে ছেলের রুমে প্রবেশ করেন।

“কিরে বাবা এখনও উঠিসনি?

মিষ্টি হেসে বলে জাহিন,

” এই তো উঠছি মামণি।আমাকে এক কাপ আদা চা দিতে পারবে?

“কফি খাঁবি না?

” ন……

বলতে বলতেই দুয়েকটা হাঁচি চলে আসে।বিচলিত হয়ে যায় নবনী!

“অসুখ বাঁধালি কি করে?

” কিছু হয়নি মামণি।তুমি চা নিয়ে এসো তো।

“আচ্ছা।

মুহতাসনিমের কথা বারবার মনে পরছে জাহিনের।কাল রাতের পর ঠিক হয়েছে তো মেয়েটা!ইচ্ছে হলেও উপরে যেতে পারছে না যেন।ভাবনার মাঝে কেউ ডেকে উঠে!

” আসমু বাবা?

চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায় জাহিন।মিনার হাতে চায়ের কাপ।জাহিন ভেবে নেয় মিনা আন্টির কাছেই মুহুর কথা জেনে নিবে।মিনা ততক্ষণে এগিয়ে আসে।মুখটা কেমন শুকনো লাগছে।

“বাবা মুহুর তো জ্বরে গা পুইরা যাইতাছে!কালকে রাইতে জ্ঞান ফিরছিলো একটু এখন তো জ্বরে তাকাইতেই পারতাছে না মাইয়াটা!

জাহিনের বুকটা যেন ধ্বক করে উঠে!মেয়েটার এমন অবস্থা হবে ভাবতে পারেনি!

” কইতাছিলাম কি বাবা তুমি তো ডাক্তার,যদি আমার মুহুটারে একটু দেখতা?

“এভাবে বলছেন কেন আন্টি?আমি অবশ্যই দেখবো।

চা টা না খেয়েই তৎক্ষনাৎ উপরে ছুটলো জাহিন।মিনা গেল নবনীর খোঁজে কিছুটা সময় ছুটির জন্য।

~~~

জাহিন দরজার কাছে এসে দাড়াতেই দেখলো মুহতাসনিম কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে।এগিয়ে সামনে যায় জাহিন।হলদাভাব মুখটা কেমন ফ্যাকাসে লাগছে!চোখের পাতাদুটো লালচে হয়ে আছে যেন!মৃদু স্বরে ডাকে জাহিন,

” মিস মুহু?

চোখ বুজে আছে মুহতাসনিম।ভেতরে এক অজানা কষ্ট চেপে আছে জাহিনের।মেয়েটাকে এভাবে যেন দেখতে ভাল লাগছে না।পূনরায় আবার ডেকে ওঠে জাহিন,

“মিস মুহু আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা?

এবার একটু জোরেই ডেকে উঠে জাহিন।টিপ টিপ চোখে তাকায় মুহতাসনিম।চোখ দুটো মেলতেও যেন বড্ড কষ্ট হচ্ছে!মলিন মুখে একটুখানি হাসি লেগে আছপ।চোখের কোণা বেয়ে জল ঝরছে!জড়িয়ে যাওয়া কন্ঠস্বর নিয়ে বলে মুহতাসনিম,

” ডাক্তার সাহেব?

” হুম,আপনি কি ঠিক আছেন মুহু?

দুদিকে মাথা নাড়ায় মুহতাসনিম।নাকের ডগাটা কেমন লাল বর্নের হয়ে আছে!শুষ্ক ঠোঁট জোড়া কথা বলার সময় কেমন কেঁপে উঠছিল!ভাঙ্গা জড়ানো কন্ঠে বলল মুহতাসনিম,

“একটুও ঠিক নেই আমি।তার জন্যে আপনিই তো দায়ী ডাক্তার সাহেব!কালকে রাতে কেমন করে চমকে দিলেন ছাতা হাতে এসে!আমি সত্যি বড্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম!আপনার চোখের দিকে তাকাতেই আমার পুরো পৃথিবী টা কেমন অন্ধকার হয়ে আসলো!

বলতে বলতেই চোখ জড়িয়ে আসলো মুহতাসনিমের।পলকহীন চোখে তাকিয়ে মুহুকে দেখছে জাহিন।বুঝতে পারছে জ্বরের জন্য নিজের হুস জ্ঞানে নেই মেয়েটা!ততক্ষণে মিনা আর নবনী এসে দরজায় দাঁড়িয়েছে।

” জাহিন?কি হয়েছে মুহতাসনিমের?

মায়ের দিকে ফিরে তাকায় জাহিন।ছোট্ট করে দম ফেলে বলে,

“জ্বর টা চেইক করতে হবে মামণি।

মিনা বেগম পাশ থেকে বলেন,

” জাহিন বাবার ডাক্তারি যে জিনিসপত্র আছে আমি বরং সেগুলা নিয়া আসি।

নবনী বললেন,

“তারাতাড়ি যাও মিনা আপা।

~~~

মিনা কাজ ফেলে রুমে চলে গেছে সেই কখন।রিশানের মা কখন থেকেই এই নিয়ে রাগারাগি করে যাচ্ছেন।সকাল থেকে চা পাননি তিনি।ঘরের কাজ সবই পরে আছে।রেহানা বেগম অবশ্য বলেছেন মিনার ভাগ্নির শরীর ভাল না।

~~~

মিনার কাজ শেষ করতে করতে দুপুর গড়িয়েছে।আজকের দিনটাও ছুটি পায়নি।

দুপুরের খাওয়া শেষে তৈরি হচ্ছে জাহিন।তার ছুটি শেষ আজই চলে যেতে হবে তাকে।মুহতাসনিমকে কয়েকটা ঔষধ লিখে দিয়ে গেছে এবং সেগুলো জাহিন নিজের টাকায় কিনে দিয়ে গেছে।মিনা বেগমকে জাহিন সাফ জানিয়ে দিয়েছে মুহতাসনিমের ভাল করে যত্ন নিতে।

~~~

দুপুরের প্রখর রোদ জানালা ভেদ করে চোখে পড়তেই ঘুম কেটে যায় মুহতাসনিমের।চোখ মুখ কুঁচকে উঠে বসে।মাথাটা বোজা মনে হচ্ছে।চোখ জ্বালা করছে ভিষণ!জানালা ভেদ করে বাইরে দৃষ্টি যায় মুহতাসনিমের হঠাৎ চমকে উঠে!জাহিন গাড়িতে ছোট্ট একটা ব্যাগ নিয়ে উঠেছে!হুট করে মুহুর মনে হলো লোকটা কি চলে যাচ্ছে?

তৎক্ষনাৎ উঠে দৌড়ে ছাদের কোণায় চলে আসে মুহতাসনিম,স্বজোরে ডেকে উঠে,

” ডাক্তার সাহেব?

চলবে………

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য)

#মেঘবতীর_শহরে
পর্বঃ১৯
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,

দুপুরের তপ্ত রোদে আশাহত দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।চোখের সামনে সাঁই করে চলে গেল মস্ত বড় গাড়িটা!রৌদ্র প্রখরে গাঁ গরম হয়ে গেছে মুহতাসনিমের।মাথা টাও কেমন ঝিম ধরে আছে।চারিপাশ শূন্য আর ফাঁকা লাগছে!

“এই রৌদ্রে কেউ এইভাবে দাড়ায় থাকে?

কারও কথায় ঘোর কাটে মুহতাসনিমের।মিনা বেগম চেঁচাতে চেঁচাতে এগিয়ে আসলেন।কয়েক দফা হাত বুলালেন মুহতাসনিমের গলায়,কপালে।

” আরে পুইড়া যাইতাছস তো!ঘরে আয়।

নিজেকে সামলে দাড়ালো মুহতাসনিম।চোখ দুটো পিটপিট করছে কেমন।প্রচন্ড জ্বালা করছে যেন।

“ডাক্তার সাহেব কি চলে গেছে খালা?

মুহতাসনিমের কথায় কিছুটা থমকে যায় মিনা।পরক্ষণে মুহতাসনিমকে ধরে রুমের দিকে যেতে যেতে বলে,

” ঘরে আয় তো আগে।বাকি কথা পরে বলমু।

~~~

মিনিট দশ জ্যামে বসে আছে জাহিন।হাত ঘড়িটায় চোখ বুলিয়ে নেয় একবার।সময় ভাল গরিয়েছে!মন টা কেমন অজানা কারণে খচখচ করছে!মুহতাসনিমের শরীর টা ভাল আছে তো?মেয়েটার ঘুম ভেঙ্গেছে এখনও?বের হবার সময় চুপিচুপি একবার চিলেকোঠায় পা রাখে জাহিন!গায়ে কাথা টেনে গভীর ঘুমে তলিয়ে ছিল মুহতাসনিম।জাহিনের খুব করে ইচ্ছে করছিলো মেয়েটাকে জাগিয়ে বলুক ‘আমি চলে যাচ্ছি মিস মুহু,আপনি নিজের খেয়াল রাখবেন’ ঘুমন্ত আদুরে মুখ খানি দেখে আর জাগাতে ইচ্ছে করেনি জাহিনের।বড্ড মায়াবী লাগছিল যে মুখ খানি!

~~~

খোলা জানালা গলে দুপুরের তপ্ত রোদে মদু বাতাস বয়ে আসছে।জানালার পর্দা দুটো এক পাশে হেলে গেছে!বাইরে দৃষ্টি রেখে বসে আছে মুহতাসনিম।মিনা বেগম,মুহতাসনিমের গোসলের জন্য কাপড় বের করছেন।

মনে হাজারটা কথা ঘুরপাক খাচ্ছে মুহতাসনিমের।কালকে শেষ বারের মতো যখন চোখ বুজে আসছিল,আবছা জাহিনের মুখ খানি দেখেছিল মুহতাসনিম।আচমকা কি হয়েছিল খেয়াল নেই!মানুষটা কি ভাববে তাকে?এভাবে ঢলে পরা নেহাৎ মন্দই দেখায়!তবে সব তো নিজের ইচ্ছেতে হয়নি!মানুষটাকে দেখলেই সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়!বৃষ্টিস্নাত রাতে জাহিনের আচমকা আগমন যেন বজ্রের মতো আঘাত হেনেছিলে!বজ্রপাত হয়তো মনের কোনো ছোট্ট গহীনে হানা দিয়েছিল!শেষ রাতে কপালে ছোট্ট একটুখানি পরশ পেয়েছিল মুহতাসনিম সেটা জাহিনের এতে কোনো সন্দেহ নেই!লোকটাকে তো কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সময় টুকুও দিলো না!মিনা খালা বলেছে এবার নাকি পাক্কা এক মাসের জন্য কাজে বেরিয়েছে লোকটা!কথাটা তীব্র দুঃখ অনুভূতি দিয়েছে যেন!

দরজায় দাড়িয়ে নবনী বললেন,

“মুহতাসনিমের শরীর কেমন এখন?

নবনীর ডাকে ঘোর থেকে বেরিয়ে আসে মুহতাসনিম।উঠে সালাম জানায়।নবনী ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে বলে,

” আরে উঠতে হবে না বসো তুমি।শরীর কেমন এখন?

“জ্বী ভালো।

” জাহিন কালকে রাতে দুবার এসে দেখে গেছে।নিজে ঔষধ নিয়ে এসেছে বৃষ্টির মধ্যেও,সুস্থ না হয়ে উপায় ছিল?হঠাৎ এত জ্বর বাধালে কি করে?

মিনা একবার মুহতাসনিমের দিকে তাকায় পরক্ষণে নবনীর দিকে তাকিয়ে বলে,

“এখনও শরীর টা দূর্বল আছে।এই মাইয়া কখন যে কি কান্ড কইরা বসে আপা।রাতে বৃষ্টির মধ্যে ভিজছে।

কিছু সময় চুপ করে থাকে নবনী।পরক্ষণে মুহতাসনিমের গালে হাত বুলিয়ে বলে,

” ছোট্ট একটা জিনিস দিতে এসেছি।জাহিন যাওয়ার পূবে বলে গেছে ফোন নম্বর টা দিয়ে দিতে তোমায়।শরীরের খবর জানিয়ে দিও।শত হোক ডাক্তার হিসেবে জানার অধিকার আছে জাহিনের।

পাল্টা কিছু বলতে গিয়েও বলেনি মুহতাসনিম।ছোট্ট কাগজ টা হাতে গুঁজে দিয়ে চলে যায় নবনী।সবটা কেমন ঘোলাটে লাগে মুহতাসনিমের।শরীর এখন দিব্যি সুস্থ আছে এটা তো উনি দেখেই গেলেন!নিজ দায়িত্বে ছেলেকে জানিয়ে দিতে পারতেন না?

গোসলের জন্য তাড়া দিতে থাকে মিনা বেগম।তড়িঘড়ি করে কাগজ টা তোষকের নিচে রেখে বাথরুমে চলে যায় মুহতাসনিম।

~~~

সামনের সপ্তাহে আনানের এংগেইজমেন্ট তার তোড়জোড় যেন এখনই শুরু হয়ে গেছে।আনান অবশ্য এর জন্য রাগ।জাহিন বরাবরেই বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠানে থাকতে পারে না।মাঝে মাঝে তো কোনো ঈঁদেও থাকে না।রেহানা বেগম প্রচন্ড রেগে আছেন জাহিনের জন্য।তবুও তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যদি জাহিন না আসে তাহলে কখনও জাহিনের বিয়ে হলে তিনি সেখানে উপস্থিত থাকবেন না।

আনান বরাবরেই খুব আদরের নাতি রেহানা বেগমের।দেখতে হুবহু যেন দাদার মতোই হয়েছে!কথা,ভাব ভঙ্গিমা সবই দাদার কার্বন কপি!আনানের মাঝে যেন তিনি তার মৃত স্বামীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পান!

~~~

রাতের প্রহর বাড়ছে।ছাদের রেলিং ঘেষে দাঁড়িয়ে আছে মুহতাসনিম।মুহতানিমের সাথে কথা বলে নিয়েছে খানিক্ষন আগে,পরীক্ষা চলছে মেয়েটার।মুহতাসনিম নিজে পড়াশোনার সুযোগ একেবারেই পায়নি বললে চলে,মনে প্রানে চায় বোনটা যেন শিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে!বড্ড ইচ্ছে করছিল আজ বাবার কন্ঠস্বর টা একটু শুনুক!বাবা কি একটুও মনে করে না তাকে?নিষ্ঠুর দুনিয়ায় কতদিন বা এভাবে লড়ে যাবে মুহতাসনিম?মাঝে মাঝে নিজেকে রক্তমাংস প্রানহীন মনে হয়!কেবল অন্ধকারে মৃদু আলোয় আবছা অবয়ব লাগে নিজেকে!একটুখানি আলো পেলেই কেবল যার অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়!কে দেবে অন্ধকারে একটুখানি আলো?!!ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে মুহতাসনিমের।

~~~

খানিক্ষন আগে কাজ সেরে একটুখানি সময় পেয়েছে জাহিন।মুহতাসনিমের কথা মাথায় ঘুরছে প্রচন্ড!মেয়েটা সুস্থ আছে তো?পায়চারির মতো অবস্থা হয়ে গেছে যেন!

★★★

আগামীকাল আনানের এংগেইজমেন্ট,বাড়ি পুরো বিয়ের আমেজে মজে আছে।বাড়িতে মেহমানের আনাগোনা বেড়েছে।পুরো বাড়ি মরিচ বাতিতে সজ্জিত!ছাদে দাঁড়িয়ে মুগ্ধ হয়ে দেখছে মুহতাসনিম।আশায় আছে আজ নয়তো কাল জাহিন ঠিক আসবে!অন্তত একটা ধন্যবাদ তো প্রাপ্ত আছে লোকটা।ইতস্তত বোধের কারণে একবারও কল করেনি মুহতাসনিম। কেমন জড়তা কাজ করে!

মিনা বেগম চিলেকোঠার দরজায় দাঁড়িয়ে সজোরে ডাকে মুহতাসনিমকে,

“মুহু রুমে আয় একবার,নবনী আপা খুঁজতাছে তোরে।

” যাই খালা।

তৎক্ষনাৎ রুমের দিকে ছোটে মুহতাসনিম।হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নবনী।ঠোঁটের কোণে সেই মিষ্টি হাসিটুকু লেগে আছে।

“এসো মুহতাসনিম।

“জ্বী ম্যাডাম বলুন?

কপালে খানিকটা রাগের ভাঁজ ফেলে বলে নবনী,

” ম্যাডাম ডাকো কেন?আন্টি’ও তো বলতে পারো।

“জ..জ্বী আন্টি।

ব্যাগ থেকে কালো রঙের একটা শাড়ি বের করে নবনী।গোল্ডেন পাড়।

” দেখো তো পছন্দ হয় কিনা?

“হ্যাঁ খুব সুন্দর।

” তোমাকে বেশ মানাবে মুহতাসনিম।

চকিতে নবনীর মুখোপানে তাকায় মুহতাসনিম।অবাক হয় বেশ!

“কালকে আনানের এংগেইজমেন্টে এটা পরবে তুমি।আমার তরফ থেকে ছোট্ট একটা উপহার!

” আ,,,আমি মানে আমার তো কাজ আছে।

“হুম, অনুষ্ঠান তো রাতে।সমস্যা হবে না।

” আচ্ছা ঠিক আছে।

মিনা বেগম ঠোঁটের কোণে হাসি নিয়ে প্রশ্ন ছোড়ে,

“জাহিন স্যার আসবো না আপা?

দীর্ঘশ্বাস ফেলে জবাব দেয় নবনী,

” তুমি তো জানই মিনা আপা আমার ছেলেটা বাড়ির কোনো অকেশনেই থাকতে পারে না!মা হয়ে কষ্ট ভোগ করি আমি।সব কিছুতে সবাই থাকে কিন্তু আমার জাহিন টা দূরে পরে থাকে!

বলতে বলতে চোখের কোণে জল চিকচিক করে উঠে নবনীর।এক দৃষ্টিতে নবনীর দিকে তাকিয়ে থাকে মুহতাসনিম।ভয়ংকর রকমের কষ্ট যেন লুকিয়ে আছে এই মহিলার ভেতরে!যা চাপা দিতে আপ্রাণ চেষ্টায় থাকে সারাক্ষণ!বাকি আর কিছু না বলে চলে যায় নবনী।

শাড়িটা হাতে নেয় মিনা বেগম।উল্টেপাল্টে দেখে বলে,

“তোরে খুব মানাইবোরে মুহু!একদম পরীর মতো লাগবো!একবার মাথায় ঘোমটা ধরতো দেখি কেমন দেখায়!

মুহতাসনিমের কানে কোনো কথা যেন প্রবেশ করছে না!তৎক্ষনাৎ তোষকের নিচ থেকে কাগজ টা নিয়ে ছাদের দিকে ছোটে মুহতাসনিম।মিনা বেগম বোকার মতো কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকেন মুহতাসনিমের যাওয়ার পথে।

~~~

রাতের প্রহর বেড়েছে বেশ।আকাশ ভরা আজ তারায়!মস্ত চাঁদটা ঝুলে আছে মিটিমিটি হেসে!চাঁদের আবছা আলোয় হাতে থাকা কাগজটায় চোখ বুলায় মুহতাসনিম।জ্বলজ্বল করে জ্বলছে যেন এগারো ডিজিটের সংখ্যা গুলো!ফোনের দিকে একবার তাকায় মুহতাসনিম।কল দিবে কিনা ভাবছে।ছয়দিন আগে যে কল দেওয়ার কথা তা আজকে দিলে নেহায়েত বেনানান লাগবে।সব জড়তা কে তুচ্ছ করে দূরে ঠেলে অবশেষে কল করে বসে মুহতাসনিম।হার্টবিট ছুটছে বেগতিক ভাবে!ফোনটা ধরবে তো?

~~~

রোগী দেখায় ব্যস্ত জাহিন।রিং বাজাতে একবার চোখ বুলায় ফোনে।আননোন নাম্বার দেখে পরোয়া করে না।পুনরায় কাজে মন দেয়।ফোনটা বাজতে বাজতে একপর্যায়ে কেটে যায়।বড় করে দম ছাড়ে মুহতাসনিম।আশাহত হয়ে ফোনে তাকিয়ে থাকে।সিদ্ধান্ত নেয় আর ফোন করবে না।

এগিয়ে যায় জাহিনের রেখে যাওয়া গাছগুলোর দিকে!সদ্য চারাগুলো একটু একটু করে বড় হচ্ছে যেন!কি সুন্দর দৃশ্য!

আচমকাই ফোনটা বেজে উঠে!বুকের ভেতর খপ করে উঠে মুহতাসনিমের!কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা চোখের সামনে ধরে।জাহিন কল করেছে!ফোনটা কি রিসিভ করবে মুহতাসনিম?কথা বলার জন্যই তো কল দেওয়া!পরক্ষণে রিসিভ করে কানে ঠেকায়।গলা শুকিয়ে কেমন কাঠ কাঠ লাগছে!

“হ্যালো কে বলছেন?

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে উত্তর দেয় মুহতাসনিম,

” আ,,,আমি।

“আমি কে ন…..

বলতে গিয়েও থেমে যায় জাহিন!কন্ঠস্বর টা ভিষন চেনা লাগছে ভিষণ!পুনরায় বলে মুহতাসনিম,

” আমি মুহতাসনিম বলছিলাম।

জাহিনের মাথায় ততক্ষণে এই প্রশ্ন ঘুরছে তার নাম্বার কি করে পেল মুহু?কল’ই বা করেছে কেন?নিজেকে সামলে বলল,

“হুম বলুন?

” না,,,মানে বলছিলাম আমার ঔষধের টাকা নাকি আপনি দিয়েছেন?ক,,,,কত টাকা দিয়েছেন তার হিসেব চাইতে ফোন করেছি।

মুহতাসনিমের কথা নিতান্তই এখন খুব উদ্ভট লাগছে জাহিনের।

“মিস মুহু আমি এখানে কাজে ব্যস্ত থাকি বুঝতে পেরেছেন?আর টাকা শোধ করে দিবেন ভাল কথা সেটা না হয় আমি বাসায় গেলেই বলবেন।

চট করেই প্রশ্ন ছুড়ে দিলো মুহতাসনিম,

” ওহ আচ্ছা কবে আসছেন আপনি?

“আগামী মাসের বিষ তারিখ।

মুহতাসনিমের মুখটা চুপসে যায় উত্তর শুনে।

” না আসলে আন্টি আপনার ফোন নাম্বার টা দিয়ে গিয়েছিল আপনি যে দিন গিয়েছেন সেদিনই।আমি সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম বিধায় আর ফোন দেইনি।আপনি বলেছিলেন জানানোর জন্য।আসলে আমি দুঃখিত।

মুহতাসনিমের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারছে না জাহিন।একবার ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে বলে,

“আমার সময় নেই মিস মুহু।আমি রাখছি।

ততক্ষণে ওপাশ থেকে কল কেটে যায়।মুহতাসনিম বলে ‘এই যাহ ধন্যবাদ টাই দেওয়া হলো না’

~~~

সকাল থেকে মধ্যে দুপুর পর্যন্ত টিউশনি করিয়ে চলে আসে মুহতাসনিম।সন্ধ্যায় আয়োজন শুরু হবে।মন টা কিঞ্চিৎ ভার লাগছে মুহতাসনিমের।

সন্ধ্যার দিকে শাড়ি পরে নেয় মুহতাসনিম।চোখে গাঢ় করে কাজল টেনে নেয়।ঠোঁটদুটো খানিকটা রাঙিয়ে নেয়।সবশেষে কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ!হাটু ছুঁই চুল গুলো ছেড়ে দেয়।

মিনা বেগম একবার মুহতাসনিমের দিকে তাকাতেই বলে,

“মুহু!তোরে যে কত্ত সুন্দর লাগতাছে!তোর হলুদ গায়ের রঙের সাথে শাড়ির রঙ টা কি যে মানাইছে!

লাজুক মুখ লুকায় মুহতাসনিম।

” আয় আয় তাড়াতাড়ি আয়,অনুষ্ঠান শুরু হইয়া গেছে।

~~~

আশেপাশে কতশত মেহমান তাদের কাউকেই চেনে না মুহতাসনিম।সবার মাঝে নিজেকে নিয়ে অসস্থি লাগছে কেমন!হঠাৎ সামনে তাকাতেই চোখ বড় বড় করে তাকায় মুহতাসনিম।সামনে থাকা একজোড়া চোখ মুগ্ধ দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে!মুখটা যে অপরিচিত নয়!

চলবে…..???

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিযোগ্য)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here