মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৪২,৪৩,৪৪

0
604

#মেঘবতীর_শহরে,পর্ব-৪২,৪৩,৪৪
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
৪২
,

আজকাল প্রকৃতিকে বোঝা বড্ড দায়।মুহূর্তের মধ্যে বিচিত্র রূপ ধারণ করে।রোদের মধ্যেও ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।পড়ন্ত বিকেলের নরম রোদবৃষ্টি গায়ে মেখে হাটছে মুহতাসনিম।নবনীর জুতা জোড়ায় চোখ পড়তেই বুঝতে পারে বেশ দামি জুতাজোড়া!আদৌ এত দামি জুতা কখনও দেখেছে কিনা জানা নেই মুহতাসনিমের।পায়ে দেওয়া তো বিরাট সৌভাগ্য!

রোদের আলোয় জুতার উপরের নীল রঙা স্টোন গুলো হিরার মতো জ্বলজ্বল করছে!ছোট্ট একটা তপ্ত শ্বাস ছেড়ে রিক্সা ডেকে নেয় মুহতাসনিম।বিকেল হলেই প্রায়শই রিক্সায় দেখা মেলে কপোত-কপোতী!হাতে হাত রেখে কেউবা কাঁধেও মাথা এলিয়ে রাখে!গন্তব্য বুঝি অজানা থাকে!নিষ্পলক কেবল দেখে যায় মুহতাসনিম।

~~~

চিলেকোঠার রুমে বসে আছে নবনী।বেলা গড়িয়ে এখন বিকেল।মুহতাসনিমের অপেক্ষায় নবনী।ঠিক সময় এসে হাজির হয় মুহতাসনিম।মুখে প্রসন্ন হাসি নবনীর।মুহতাসনিম খানিকটা অবাকই হয়।নিচে অবশ্য নবনীর খোঁজ করে এসেছিল।তেমন কেউ উত্তর দেয়নি বিধায় উপরে চলে এসেছে।বিছানার উপর চোখ পরে মুহতাসনিমের।অগনিত ব্যাগ রাখা!রঙবেরঙের ব্যাগ!সেদিকে তোয়াক্কা না করে বলে মুহতাসনিম,

“এই সময় আপনি এখানে?দুপুরে খাওয়া হয়েছে?

মুখে হাসি রেখেই জবাব দেয় নবনী,

” হ্যাঁ খেয়েছি।তুই ফ্রেশ হয়ে আয় তো।

আলগোছে জুতা জোড়া হাতে তুলে নেয় মুহতাসনিম।পুরোনো ন্যাকরা দিয়ে মুছতে মুছতে বলে,

“আমায় ডাকতে পারতেন তো মা।কষ্ট করে আপনার না আসলেও হতো।

ব্যাগ গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল নবনী।পরক্ষণে শান্ত কন্ঠে বলে,

“আমার যখন ইচ্ছে করবে আমি আসবো।আমার মেয়েটা তো আর আমার কাছে কাছে থাকে না।সবসময় চোখের দেখাটাও দেখা হয় না।

ছোট্ট একটুখানি মলিন হাসে মুহতাসনিম।পরক্ষণে জুতাজোড়া নবনীর দিকে বাড়িয়ে বলে,

” এই নিন মা আপনার জুতো।

কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল নবনী,

“এখন যে ফিরিয়ে দিচ্ছিস কাল কি পরবি তাহলে?

চুপ হয়ে যায় মুহতাসনিম।আসলেই কালকে কি পরবে ও?নিজের কাছে যে এক জোড়া জুতো ও নেই!তবে নবনীর এই দামি জুতা জোড়া পায়ে দিতেও বড্ড অসস্থি কাজ করে!পাছে যদি ছিড়ে যায় জুতো জোড়া!আমতা আমতা করে বলে মুহতাসনিম,

” কাল না হয় অন্য এক জোড়া চেয়ে নিবো।

“কেন এগুলো কি ভালো লাগেনি তোর?

“হ্যাঁ।খুব সুন্দর।

নবনীর ঠোঁটের কোণে হাসি।হাত টেনে মুহতাসনিম কে পাশে বসিয়ে দেয় নবনী।মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

” তোর জন্য আজকে নিজে গিয়ে শপিং করে এসেছি আমি।নিজের পছন্দে সব কেনা।দেখতো পছন্দ হয় কিনা তোর।

চকিতে ফিরে তাকায় মুহতাসনিম।এতটাও বোধহয় আশা ছিল না।জাহিনের পরিবার থেকে কোনোকিছুই আশা রাখে না মুহতাসনিম।

“আপনি অসুস্থ শরীর নিয়ে! কোনো দরকার ছিল না তো মা।

ততক্ষণে নবনী প্যাকেট খুলে সমস্ত কিছু বের করে।অবাক দৃষ্টি মুহতাসনিমের।এখন নিতান্তই অপচয় মনে হচ্ছে তার কাছে এসব।কি দরকার ছিল এতগুলো টাকা নষ্ট করার!এতকিছু তো লাগবেও না।শুধু এক জোড়া জুতা হলেই হতো!

নবনী পুনরায় বলল,

” এখানে পাঁচখানা থ্রি পিছ,সাতটা শাড়ি,আর পাঁচ জোড়া জুতা আছে।আমি জানি টাকা দিলে তুই কখনই নিতিস না।জাহিন পাঠিয়েছে টাকা।একটু আগে টাকা পাঠিয়ে বলল,মা মণি কিছু টাকা পাঠিয়েছি তুমি এটা দিয়ে মুহু কে শপিং করে দিও।আমি কিন্তু বেশি কিছুই কিনি নি!জাহিন যা টাকা দিয়েছে তা দিয়েই এসব কিনেছি।

বাকরুদ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।আদৌ এসব তার নেওয়া উচিৎ হবে কিনা জানা নেই।তবে ভালোবাসে কেউ কিছু দিলে সেটা কখনও ফিরিয়ে দিতে নেই।তবে জাহিন কেন দিলো তাকে এসব?অবশ্য এতে নবনীর ভালোবাসাও যে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত!নিজে পছন্দ করে কিনেছেন উনি এসব।কি করে ফিরিয়ে দিবে মুহু?ছোট্ট একটা হাসি দিয়ে বলল মুহতাসনিম,

“এতকিছুর প্রয়োজন নেই এখন মা।আপনি বরং আমায় শুধু এক জোড়া জুতো দিয়ে গেলেই হবে।বাকি টা দরকার পরলে আমি চেয়ে নিবো।

মুহতাসনিমের কথা তোয়াক্কা করে না নবনী।নিজের মতো করে ভাজ করে রাখে সমস্ত কিছু।পরক্ষণে এগিয়ে এসে হাতে থাকা একটা বাক্স থেকে চেইন সমেত লকেট বের করে।লকেট টা ডায়মন্ডের বোঝা’ই যাচ্ছে।হাত বাড়িয়ে মুহতাসনিমের গলায় পরিয়ে দেয় নবনী।এহেন কান্ডে চমকে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম!

” এটা স্পেশালি জাহিন পাঠিয়েছে।এবং আজই।আমি নিজের হাতে তোর গলায় পরিয়ে দিয়েছি একদম খুলবি না।

পড়ন্ত বিকেলের সূর্য টা সেই কখন হেলে পরেছে।ধূসর আকাশ রাতের প্রস্তুতি নিচ্ছে।চোখ জোড়ায় স্পষ্ট জলেরা চিকচিক করছে মুহতাসনিমের।

“আমি চাই তোকে আর জাহিনকে হানিমুনে পাঠাতে।দেশের বাইরে থেকে ঘুরে আয় তোরা।ভালো লাগবে দেখবি।আমার ছন্নছাড়া,নীড়হারা পাখির মতো ছেলেটাকে নীড়ে আবদ্ধ করার আকুল আবেদন রইল তোর কাছে।

স্তব্ধ হয়ে নবনীর মুখোপানে তাকিয়ে আছে মুহতাসনিম।পরক্ষণে বলে,

” যার কাছে সম্পর্কের কোনো দাম নেই সে কি করে নীড়ের তাগিদে ছুটবে মা?

তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে নবনী,

“একটা মানুষ এমনিতেই পাল্টে যায় না মুহতাসনিম।পরিস্থিতি তাকে অনেক কিছু করতেই বাধ্য করে।তুই জাহিনকে বুঝতে চেষ্টা করলেই তোর অজানা অনেক কিছুর প্রশ্নোত্তর খুঁজে পাবি।

পাল্টা আর কথা বাড়ায় না মুহতাসনিম।হাসি মুখ নিয়েই চলে যায় নবনী।

~~~

সন্ধ্যা নাগাত বাড়ি ফিরে মিনা বেগম।লম্বা জার্নি করে ফিরেছে বিধায় মুখখানা শুষ্ক হয়ে আছে।নিজ হাতে ব্যাগ গুছিয়ে খালাকে ফ্রেশ হতে পাঠায় মুহতাসনিম।নিজের হাতে রান্না করে রেখেছে মিনা খালার জন্যে।

ফ্রেশ হয়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে খাটে আসে মিনা বেগম।চোখ দুটো বিষন্ন লাগছে তার।কত প্রহর যেন অনিদ্রায় কাটিয়ে এসেছে!বিষয় টা খেয়াল হতেই বলে মুহতাসনিম,

” খালা তুমি ঠিক আছো?

মুহতাসনিমের কথায় মুখ তুলে তাকায় মিনা বেগম।খানিক টা হাসি মুখ নিয়ে বলে,

“একদম ঠিক আছি।বরং আজকে না আসলে মনে হয় বেঠিক থাকতাম।

ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলে মুহতাসনিম,

” কি হয়েছে খালা?

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে মিনা বেগম,

“ওই বান্দির পুতে আইছিলো।সে কারনেই তো বাড়িতে গেছিলাম।

মুহতাসনিমের খেয়াল হয় যাওয়ার আগে মিনা খালা কিছুই বলে যায়নি।খুব কি বাজে কিছু হয়েছে তার সাথে?গলা শুকিয়ে আসে!আর ভাবতে পারছে না মুহতাসনিম।পাল্টা প্রশ্ন ছোড়ে,

” কে?তোমার স্বামী?

“স্বামী আর কই থাকলো?

” যাই হোক,কেন এসেছিল উনি?

“আমার ভাই,বোনের সাথে ক্যাচাল করতাছিল কয়েকদিন ধইরাই।না পাইরা নিজেই গেলাম বাড়িতে।অহন সে আমারে আবার বিয়া করতে চায়।ফিরাই নিতে চায়।নিজের ভুল নাকি বুঝতে পারছে।

চটপট জিগ্যেস করে মুহতাসনিম,

” তার আগের পক্ষের বউ?

“কয়দিন আগে মারা গেছে।সে ঘরে সন্তান আছে তিনখানা।

চুপ করে মিনা বেগমের কথা শুনছে মুহতাসনিম।ভদ্রলোক বউ হারিয়ে যে বউ এর শূন্যতা পূরনে ফের ফিরে এসেছে বেশ বোঝা যাচ্ছে।মানুষ কতটা নিষ্ঠুর আর বিবেকহীন হলে এরকম কাজ করতে পারে জানা নেই মুহতাসনিমের।

” বান্দির পুতে আমার পুরা যৌবন টা শ্যাষ কইরা অহন শেষ বয়সে ভরসার হাত খুঁজতে আইছে।তার তো পুরা যৌবন কাটছে বউ,বাচ্চা লইয়া!আর আমি কি পাইছি?আমি কি পারতাম না তারে সন্তান দিতে?আমি কি পারতাম না তার সংসার টা গুছাই লইতে?ক্যান আমার জীবণ টা এমন ভাবে শ্যাষ কইরা অহন ফিরা আসবো?তার শেষ বয়সের হাল ধরার জন্যে আর কেউ ছিল না?পরের সন্তান আমি ক্যান পালমু?আমি কি বান্জা ছিলাম নাকি?তার ছেলে,মেয়ে যখন আমারে মা কইয়া ডাকবো তহন আমার কলিজা ফাইট্টা চৌচির হইয়া যাইবো রে মুহু!

নিঃশব্দে কাঁদছে মুহতাসনিম।খালার কষ্ট তার সহ্য হচ্ছে না।

“আমি ঢাকায় থাকি শুনছে।তার বড় ছেলে বিয়া কইরা বউ নিয়া আলাদা থাকে।ছোট দুইটা নিয়া চাইতাছে ঢাকায় ফিরা আইতে।তার মতলব টা কি বুঝছোস?ষোলকলা তো আমি কোনোদিন পূরণ হইতে দিমু না।তারে বিয়া করলে বিনিময়ে কিছুই জুটবো না আমার কপালে।আর না পারমু অহন তার সন্তানের মা হইতে!সকাল সকাল একপ্রকার পালাইয়াই ঢাকা আইসা পরছি।মানুষ টারে যত দেহি বুক ভার হয় আমার।মানুষের মন বুঝসই তো!কহন আবার মনে কি চাইয়া বসে বলা যায় না। ভালোবাসা বড্ড বিষাক্ত অনুভূতি রে মুহু!

মিনা খালার প্রতিটি কথা কলিজা কাঁপিয়ে দেয় মুহতাসনিমকে।

প্রসঙ্গ পাল্টায় মিনা বেগম।চোখ মুছে নেয়।কখন যে চোখের কিনারায় জলেরা ভীড় জমিয়েছিল!গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

” আলতাফের শরীর টা বেশি ভালো না।সারাদিন মেলা কষ্ট করে।পারুল তো সারাক্ষণই চেঁচামেচি করে।এক দন্ড শান্তি পায়না তোর বাপে।তো….

পুরো কথা শেষ হবার আগেই মুহতাসনিমের ফোন বেজে উঠে।অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে।সে দিকে তোয়াক্কা না করে পুনরায় মিনা খালাকে বলে মুহতাসনিম,

“বাবার কি হয়েছে খালা?শরীর কি বেশি খারাপ?

“অসুস্থই তো দেখলাম।

অনবরত ফোন বেজেই যাচ্ছে।একরাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করে মুহতাসনিম।ওপাশ থেকে কান্নারত আওয়াজ!কলিজা ধ্বক করে উঠে মুহুর!গলা শুকিয়ে টান টান!মুনার কান্নারত কন্ঠ পেতেই বারংবার বলে উঠে,

” এই মুনা কি হয়েছে?মুনা?কিরে?

কান্নার দাপটে কন্ঠস্বর মিইয়ে গেছে মুহতানিমের।কোনোরকম কান্না গলায় আটকিয়ে বলল,

“বাবা খুব অসুস্থ আপু।পারলে একবার বাড়িতে আয়।

মুহূর্তেই লাইন টা কেটে যায়।উম্মাদের মতো বারংবার কল করে মুহতাসনিম।অপরপাশ থেকে ফোন বন্ধ বলছে।হাত পা সহ পুরো শরীর কাঁপুনি মুহতাসনিমের।মিনা তৎক্ষনাৎ এগিয়ে আসে।বুকে জড়িয়ে নেয় মুহতাসনিম কে।হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে মুহু।শান্ত করার চেষ্টায় মিনা বেগম।মিনা খালাকে ছাড়িয়ে কোনোরকম ব্যাগ গুছিয়ে নেয় মুহতাসনিম।নবনীর দেওয়া জামা গুলো ভাজ করা ছিল বিধায় কোনোরকম ব্যাগে পুরে নেয়।

মিনা বেগম পিছু ছুটছে।

” আরে শান্ত হ মুহু।আমিও চলি না হয় তোর লগে।

দৌড়াতে দৌড়াতে বলে মুহতাসনিম,

“তুমি জার্নি করে এসেছো খালা তা ছাড়া ওখানে এখন যেতে হবে না তোমায়।তুমি বরং আমার যাওয়ার খবর টা ডাক্তার সাহেবের মাকে বলে দিও।বাবা অনেক অসুস্থ খালা।

চলবে……..

#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৪৩
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,

ঘুটঘুটে অন্ধকারের মাঝে টিমটিমে আলো জ্বলছে।বাসের সব যাত্রী প্রায় ঘুমে ঢুলুঢুলু।ঘুম নেই কেবল মুহতাসনিমের চোখে।প্রহর যেন কাটতেই চাইছে না।ইচ্ছে করছে উড়ে চলে যাক বাবাকে দেখতে।গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে।হাতে থাকা টাকা গুলোর দিকে একবার চোখ বুলায় মুহতাসনিম।আসার সময় টাকা টা হাতে গুঁজে দিয়েছিল মিনা খালা।মন থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায় খালার প্রতি।পরক্ষনে চোখ বুজে সিটে গাঁ এলিয়ে দেয়।

~~~

চিন্তার ভাজ নবনীর কপাল জুড়ে।পাশেই থমথমে মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিনা।এই রাত্তিরে মেয়েটা ছুটে চলে গেল কত বিপদ হতে পারে সে শঙ্কায় হাত পা সিথিল হয়ে আসে নবনীর।মিনার কোনো কথাই তো কর্নপাত করেনি মুহতাসনিম।সবটা কেমন হুট করেই হয়ে গেল!নবনী অবশ্য কিছুটা বিরক্ত মিনার উপর।

হাতে থাকা ফোনটা বেজে উঠতেই সম্ভিৎ ফিরে পায় নবনী।জাহিন কল করেছে।ছেলে কে কি জবাব দেবে এখন?ভাবতেই কল রিসিভ করে।গলা শুকনো কাঠ হয়ে আছে নবনীর।ঠোঁট জোড়া জিভ দিয়ে ভিজিয়ে নেয় খানিক।ওপাশ থেকে কিছুটা অশান্ত কন্ঠস্বর,

“মুহুর ফোন বন্ধ বলছে কেন মা মণি?

যথাসম্ভব কন্ঠস্বর স্থির রেখে বলে নবনী,

” নেটওয়ার্ক এর সমস্যা হবে হয়তো বাবা।আমিও কয়েকবার কল করেছিলাম সংযোগ প্রদান হচ্ছে না।

মায়ের কথা কিছুতেই বোধগম্য হলো না।পাল্টা প্রশ্ন করে জাহিন,

“মানে?

” মুহতাসনিম তার বাড়িতে গেছে জাহিন।মেয়েটার বাবা নাকি গুরুতর অসুস্থ!এ অবস্থায় কে স্থির থাকতে পারে বল?

তড়িৎ গতিতে প্রশ্ন ছোড়ে জাহিন,

“মুহু কখন বেরিয়েছে মা মণি?

মুখখানা চুপসে যায় নবনীর।মৃদু আওয়াজে বলে

” কিছুক্ষণ আগেই।এখনও নাকি গাড়িতে আছে মিনা আপা বলল।

স্তব্ধ হয়ে যায় জাহিন।আতংকে ভেতর কেঁপে উঠে!এই রাতে মেয়েটা এতদূর জার্নি করছে!চারিদিকে সর্বক্ষন বিপদের আনাগোনা!ভয়ে কলিজা শুকিয়ে আসে জাহিনের।হাত পা রীতিমতো বাঁধা এখন!

“তুমি কি করে যেতে দিলে মা মণি?একবারও মুহুর কথাটা ভাবলে না এত রাতে মেয়েটা কিভাবে যাবে।মা মণি আমার খুব টেনশন হচ্ছে।

” আমার কিছু করার ছিল না জাহিন।মেয়েটা কাউকে কিছু বলার সুযোগ টাও দেয়নি।হুট করে ছুটে চলে গেল।

~~~

ধোঁয়াশা ঘোলাটে আকাশ।ভোর হবার জানান দিচ্ছে আকাশ।বাস থেকে নেমে হাটা ধরেছে মুহতাসনিম।আশেপাশে কোনো রিকশারও দেখা নেই।ক্লান্ত শরীর টা অসার লাগছে।চিরচেনা শহরে পা পরতেই মনটা ফুরফুরে হয়ে উঠে তবে কোথাও একটা চিন্তার ভাজ থেকে যায় কপালে।

বাড়ির কাছে আসতেই শোরগোলের শব্দ আসে কানে।ভ্রু কুঞ্চিত হয়ে আসে মুহতাসনিমের।ছোট ছোট পা ফেলে ধীর গতিতে এগোতে থাকে।কান্নার শব্দ তীক্ষ্ণ হয় আরও!অজানা ভয় আশংকায় কলিজা কামড়ে ধরে!হাতের আঙ্গুলের ডগা ঠান্ডা হয়ে আসে।ওড়নাটা খামচে ধরে মুহতাসনিম।সদর দরজায় পা রাখতেই মুনার দিকে দৃষ্টি পরে।মেজেতে আলুথালু হয়ে কাঁদছে।পাশে অজ্ঞাত পারুল বেগম কে মাথায় পানি ঢালছে প্রতিবেশীরা।ধরা গলায় ছোট্ট করে কেবল ডাকে মুহতাসনিম,

“মুনা?

চকিতে ফিরে তাকায় মুহতানিম।দৌড়ে ছুটে আসে বোনের সম্মুখে।জাপটে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে চিৎকার করে বলে উঠে,

” বাবা আর নেই মুহুপু!

কথাটা কর্নপাত হতেই বিকট শব্দে চিৎকার করে জ্ঞান হারায় মুহতাসনিম।আচমকা থমকে যায় মুনা।বোন একেবারে বেহুশ হয়ে যাবে ভাবতে পারেনি!কয়েকজন পানি নিয়ে আসে,হাত,পায়ের তালু ঘষতে থাকে।কোনো হেলদোল নেই মুহতাসনিমের।নিথর হয়ে পরে রইল কেবল মাটিতে!মুনা বুঝতে পারে তার বোনটা সুদূর ঢাকা থেকে একা ফিরেছে।তবে ব্যাপার টা মন্দ লেগেছে তার কাছে।জিজু কি করে তার বোনটাকে এই রাত্তিরে একা ছেড়ে দিল!ক্ষোভে চোখ উপচে জল গড়িয়ে গাল ভড়িয়ে দেয় মুনার।

~~~

সারা রাত চিলেকোঠায় কাটালো নবনী।মিনা আর নবনী কারও চোখেই এতটুকু ঘুম নেই।চিন্তায় বুক শক্ত হয়ে আছে।মেয়েটার কান্ডে হতভম্ব দুজনেই।একটা কল তো তাদের করতেই পারে।উল্টো ফোন টা বন্ধ করে রেখেছে।তখন যে জাহিন হুট করে ফোন কেটে দিলো তার মাঝে আর একটিবারও কল করেনি।এহেন কান্ডে হতবাক নবনী।ছেলে তার এতটা দায়িত্বহীন কি করে?

~~~

সারাদিন পেরিয়ে রাত্রি প্রহর শেষে ভোর হবার জানান দিচ্ছে আকাশ।এখন অব্দি জ্ঞান ফেরেনি মুহুর।পারুল বেগমের নির্দেশে ডাক্তার ডাকা হয়নি।তার একটাই কথা মেয়ে যখন এতদিন আসে নাই,বাপের খোঁজ করে নাই সে মাইয়া মরে গেলেও কোনো আফসোস থাকবে না কারো!

মুনার হাত পা শীতল হয়ে আছে।ভয়,চিন্তা ঝেকে বসেছে গায়ে।অবশ্য মুহুপুর স্বামীর প্রতি ধিক্কার আসে মুনার।লোকটা আসলেও তো এতক্ষণে কিছু একটা ব্যবস্থা হতো।আর ভাবতে পারছি না মুনা।

হঠাৎ পিটপিট করে তাকায় মুহতাসনিম।মাথাটা বড্ড ঝিম মেরে আছে।হাটু অব্ধি পা অবশ হয়ে আছে।সারাদিন এক ফোটা পানিও পরেনি পেটে।চারিদিক কেমন ঝাপসা লাগছে!এতক্ষণে শান্ত দৃষ্টি নিয়ে তাকায় মুনা।বুক থেকে যেন ভারী পাথর নেমেছে।শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“মুহুপু ঠিক আছিস তুই?

আচমকা পারুল বেগম এগিয়ে আসেন।অগ্নি রূপ তার।চোখ দুটো দিয়েই যেন ভস্ম করে দিবে মুহতাসনিম কে।রাগত্ব তেজী কন্ঠে বলে,

” শেষ বেলায় বাপের লাশ দেখতে আসছিলি না?দেখতে পারছোস?তুই আসার আগেই দাফন হয়ে গেছে।খোদা ও চায় নাই তুই তোর বাপের মরা মুখ দেখস।একটাবার খোঁজ নিয়েছিলি কি অবস্থায় দিন পাড় করছি?তোর মতো মাইয়া জন্ম দেওয়া তোর বাপের আজন্ম পাপ ছিল!

অসার শরীর,অশান্ত মস্তিষ্কে কথা গুলো নিতে পারছে না মুহতাসনিম।মনে হচ্ছে এক্ষুনি মস্তিষ্কের চিকণ রগগুলো ফেটে রক্তক্ষরণ বইয়ে যাবে!মাথায় সমানে চিকণ ঘামের রেখা ছুটছে বেগতিক ভাবে।ধোঁয়াসা চোখগুলো নিভে আসতে চাইছে!সর্বশক্তি সঞ্চয় করে চিৎকার করে বলে উঠে মুহতাসনিম,

“মা এভাবে বলো না।আমার বাবা আমার কাছে কি আর কতখানি সেটা আমি জানি।এতবড় অপবাদ দিও না।এর চেয়ে মৃতুযন্ত্রনাও সহজ!

পুরো শরীর থরথর কাঁপছে মুহতাসনিমের।বিধাতা তাকে কোন পাপের শাস্তি এভাবে দিলো জানা নেই।শেষ বার মৃত বাবার মুখদর্শন টাও হলো না!ভাবলেই কলিজা ছিড়ে বেরিয়ে আসতে চায়।মস্তিষ্কের নিউরন গুলো অশান্ত হয়ে উঠে!

মায়ের ভয়ে কিছু বলতে পারে না মুনা।তার মায়ের মনের অবস্থাও যে এখন ভালো নেই!

” শহরে গিয়া পাখনা গজিয়েছে তোর।বাপ,মা মরলে আর কি আসে যায়?এখন এসব ঢং দেখাবি না।

চোখ উপচে জল পরে মুহতাসনিমের।দুহাতের পিঠ দিয়ে মুছে যাচ্ছে বারংবার।বাবার কথা মনে হতেই দু পা শক্ত করে উঠে দাঁড়ায়।বাবার কবর টা তো আর দেখতে বাঁধা নেই!এলোমেলো পা ফেলে এগোতে থাকে মুহতাসনিম।ছুটে গিয়ে পেছন থেকে হাত চেপে ধরে পারুল বেগম।

“বাপের কবর দেখতে যাবি?তোর ওই মুখ নিয়া যাইস না।আর কি ভাবছস চাইলেই তোরে যেতে দিবো?

হঠাৎ করে সদর দরজা থেকে পুরুষালি গাম্ভীর্য কন্ঠস্বর ভেসে আসে।থমথমে কন্ঠে কেউ বলে উঠে,

” মুহুর হাতটা ছেড়ে দিন।

বলেই ছোট ছোট পা ফেলে এগিয়ে আসে।অবাক দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে পারুল বেগম।বিস্ময়ে মুখ আপনাআপনি হা হয়ে যায় মুনার!এই লোকটাকে আগেও দেখেছে মুনা।কোনো এক বৃষ্টির রাতে এই আগুন্তকের দেখা পেয়েছিল সে!এখন এখানে কি করে এলো?!কোনো হিসেবই সে মিলে না মুনার!

জাহিন ততক্ষণে এসে মুহতাসনিম কে ধরে ঠিকঠাক ভাবে দাড় করায়।পারুল বেগমের থেকে হাত ছাড়িয়ে নেয় মুহুর হাত।এহেন ঘটনায় স্তম্ভিত পারুল বেগম!

চোখ খানিকটা দেবে আছে মুহুর।শুষ্ক ঠোঁট জোড়া লেগে আছে একটার সাথে আরেকটা।মাথায় চুলগুলো এলোমেলো!

মায়াভরা দুটো করুণ চোখ সবকিছু পর্যবেক্ষন চালালো!একরাতে তার মেঘবতীর এ কি হাল!ঠিকভাবে দাড়াতে পর্যন্ত পারছে না মেয়েটা!

আচমকা মুহুকে সবার সম্মুখেই পাঁজা কোলে তুলে নিলো জাহিন।আলতো হাতে গলা জড়িয়ে,জড়ানো কন্ঠে বলল মুহতাসনিম,

“আমার বাবার কবরের কাছে নিয়ে যাবেন ডাক্তার সাহেব?

চলবে……

#মেঘবতীর_শহরে
পর্ব-৪৪
নাদিয়া ইসলাম সানজিদা
,
,

মিনা তার বাড়ি থেকে আলতাফ সাহেবের মৃত্যুর খবর পেয়ে নবনীকে নিয়ে রওনা হয়।অবশ্য মুহতাসনিমের বাড়ির ব্যাপারে তেমন কিছুই জানে না নবনী।জানার প্রয়োজন মনে করেনি কখনও।নিজে থেকে কখনও কিছু বলেওনি মুহতাসনিম।

~~~

আশেপাশের মানুষের কানাঘুষা শুরু হয়েছে।মুহতাসনিম এই ছেলের সাথেই সেদিন বিয়ের আসর ছেড়ে পালিয়েছে।অবশ্য ছেলে টা নজরে পরার মতো!দেখতে কোনো অংশে ফেলবার মতো নয়।শিক্ষিত,মার্জিত স্বভাব আর কথাতেই বোঝা যায়।সাথের আরো দুই গ্রাম খুঁজলেও এমন মেয়ের জামাই কারো পাওয়া যাবে না।অবশ্য মুহতাসনিম যে পারুলের ঠিক করা পাত্র ছেড়ে পালিয়ে ঢের ভালো করেছে সেটা আর মুখে বলতে হবে না।

ঘোরের মাঝেই স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুনা।পারুল বেগম আশেপাশে প্রতিবেশির কথা শুনে গা জ্বলে উঠে!মুহতাসনিমের ভালো তিনি কখনই হতে দিবেন না।অন্তত তার দেহে যতক্ষণ প্রান আছে।

~~~

বাবার কবরের উপর পরে হাউমাউ করে কাঁদছে মুহতাসনিম।শরীর কাঁপছে সমান তালে।পাশে হাটু গেরে বসে আছে জাহিন।যে কোনে সময় মুহুর শারিরীক,মানসিক যে কোনো দূর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে!মৃদু স্বরে ডাকে জাহিন,

“মুহু শান্ত হোন প্লিজ।এমনিতে ওইক আপনি।

নিথর হয়ে পরে কাঁদছে মুহতাসনিম।জাহিনের কথা তার কর্নপাত হয় না।কথা বাড়ায় না জাহিন ফের কোলে তুলে নেয় মুহতাসনিম কে।হাত,পা ছুড়ে নেমে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টায় মুহতাসনিম।বাড়ির দিকে হেটে যাচ্ছে জাহিন।মুহুর ভালো চাইতে একটু কঠোর জাহিনকে হতেই হলো।ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয় মুহতাসনিম।

সদর দরজায় মুনা দাঁড়িয়ে।তার দিকে একপলক তাকিয়ে জিগ্যেস করে জাহিন,

” মুহুর রুম কোনটা?

ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে হাতের ইশারায় উপরের রুমটা দেখিয়ে দিলো মুনা।সেদিকে পা বাড়াতেই বাধ সাধে পারুল বেগম।

“এক গাদা লোকের সামনে এই বেহায়াপনা তো চলবে না।এটা মরা বাড়ি।এর মধ্যে তুমি কি তামাশা শুরু করলা?

শান্ত স্বরে বলে জাহিন,

” মুহু আমার ওয়াইফ।সে হিসেবে আমার কাজ এখানে নিন্দনীয় কিছুই না।মেয়েটা অসুস্থ।স্বামি হিসেবে হাত পা গুটিয়ে বসে থাকবার মতো কাপুরুষ আমি নই!

“তুমি যে মুহুর জামাই এইটা প্রমান কি?

” আমি কি কাবিননামা পকেটে নিয়ে ঘুরবো?আপনাকে প্রমান দেওয়ার মতো যথার্থ কারণ আমি খুঁজে পাচ্ছি না।দয়া করে রূমে প্রবেশ করতে দিন আমায়।

জাহিনের গলায় মুখ গুঁজে,বুকের পাশে শার্ট খামচে ধরে,চোখ বুজে আছে মুহতাসনিম।শরীর একেবারেই শক্তিশূন্য!কয়েক সেকেন্ড পর পর হেচকি উঠছে।মুনা এতক্ষণ পর এসে জবাব দেয়।

“মা উনি ঠিকই বলছে।মুহুপুর বিয়ে হয়ে গেছে।তুমি আর আটকিও না রুমে গিয়ে একটু বিশ্রাম নিক আপু।

চুপ হয়ে যায় পারুল বেগম।এখন বেশি বাড়াবাড়ি করাও ঠিক হবে না।আশেপাশের মানুষ শেষে খারাপ উপাধি তাকেই দিবে।সময় সুযোগ বুঝে কাজ করতে হবে।

জাহিন ততক্ষণে রুমে চলে আসে।খাটে শুইয়ে দেয় মুহতাসনিম কে।সারা গাঁ কাদামাটি তে ভরপুর!মুনাকে উদ্দেশ্যে করে বলে জাহিন,

” পানি নিয়ে আসুন।সাথে খাবার হলে ভালো হয়।

মুনা সাথে সাথে সব ব্যবস্থা করে।পরক্ষণেই চলে যায়।এখানে থাকাটা এখন তার কাছে অনুচিত মনে হচ্ছে।

মাথায় আলতো হাত রেখে ডাকে জাহিন।নিভু নিষ্প্রাণ চাহনি মুহতাসনিমের।চোখ দুটো প্রচন্ড রকম লাল হয়ে আছে!এই মুহুর্তে খাওয়া আর প্রচুর ঘুমের প্রয়োজন মুহুর।মোলায়েম কন্ঠে বলে জাহিন,

“একটুখানি খেয়ে নিন মুহু তারপর ঔষধ নিতে হবে।

একদৃষ্টি নিয়ে পাথরের ন্যায় তাকিয়ে থাকে মুহতাসনিম।বাধ্য হয়ে মুহতাসনিম কে ধরে বসায় জাহিন।হুট করে জাহিনকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে মুহতাসনিম!ফুপিয়ে শব্দ করে কেঁদে উঠে।হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে আছে জাহিন।বুক টা কেমন তার চিনচিন করে ওঠে!এই যে মেয়েটা কেমন কষ্টে জর্জরিত হয়ে আছে সেটা জাহিনের কেমন সহ্য হচ্ছে না!নিজের অজান্তেই কোমল ওষ্ঠ জোড়া মুহুর কপালে আলতো করে ছুঁয়ে দেয়।হালকা করে ধরে আবদ্ধ করে নেয় তার বাহুডোর!
কাল রাত থেকে একমুহূর্তের জন্যে চোখের পাতা এক করতে পারেনি জাহিন।ছটফট করেছে রীতিমতো!কখন তার মেঘবতীর দেখা মিলবে আর মনে একটুখানি সস্থি পাবে!এখন তো দেখছে ঢের অসস্থি তে পরেছে আরো!

জাহিন তার বাহুডোর এক হাতে জড়িয়ে অপর হাতে খাইয়ে দেয় মুহতাসনিম কে।প্রথমে খেতে না চাইলেও জাহিন এপ্রকার জোড় করে খানিকটা খাইয়ে ঘুমের মেডিসিন দিয়ে দেয়।সবটাই দরজায় দাঁড়িয়ে দেখে মুনা।খুশিতে ভেরত টা আত্মহার হয়ে ওঠে!সে তো এটাই চেয়েছিল!শত কষ্টের পর তার মুহুপু একটু সুখের দেখা পাক!আলগোছে চোখ মুছে বেরিয়ে যায় মুনা।

~~~

জীর্নশীর্ন দোতলা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে নবনী।বাইরে কত লোকের আনাগোনা।অজানা এক কারনে বুক ঢিপঢিপ করে নবনীর।তাড়া দেয় মিনা।পরক্ষণে ভেতরে প্রবেশ করে নবনী।

পারুল বেগম এখনও কান্না করে যাচ্ছেন।মিনা বেগম সেদিকে দেখিয়ে নবনীকে বলল এটা হচ্ছে মুহুর মা।ইনি যে মুহুর সৎ মা বেশ ভালো করে জানে নবনী।দু কদম সেদিকে এগিয়ে গিয়ে সালাম জানায়।হুট করে অজানা,অচেনা মধ্যেবয়সী মহিলাকে দেখে চমকে উঠে পারুল।বুঝতে পেরে বলে নবনী,

“আমি আপনার মেয়ের শাশুড়ী।আশা করি এবার চিনতে পারবেন।

মুখ খানিকটা বাকিয়ে বলে পারুল,

” কিসের শাশুড়ি? কার শাশুড়ি? আমার মাইয়া একটা আর তার এখনও বিয়ে হয় নাই।

কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে নবনী,

“সৎ মেয়েকে যে নিজের মেয়ে বলা যায় না সেটা আপনি না বললে জানতামই না।

নবনীর কথায় তেলেবেগুনে জ্বলে উঠে পারুল।

” যে মেয়ে বিয়ের আসর ছেড়ে পালায়,বাপ মায়ের কথা ভাবে না তারে মেয়ে বলে পরিচয় দিতে চাই না।

মিনা জানে পারুল ঠিক কি ধরনের কথা বলতে পারে।তাই আগেই নবনীকে কিছুটা বলে এসেছে রাস্তায়।শান্ত স্বরে নবনী বলে,

“দোষ টা নিশ্চয়ই ওর একার ছিল না।এক হাতে তো তালি বাজে না।যাই হোক এই মুহুর্তে আপনার সাথে তর্কে জড়াবার ইচ্ছা বা মানসিকতা কোনোটাই নেই আমার।

” আপনার ছেলের সাথে তো আগেই পিরিতি ছিল!আগেই বলতো তাহলে আর বিয়ের আয়োজন করে লোক হাসাই না, আর মানসম্মান এভাবে জলাঞ্জলি দেই না!

মুনা জড়োসড়ো হয়ে এক কোণে দাঁড়িয়ে আছে।সেদিকে দৃষ্টি পরে নবনীর।দেখতে হুবহু সামনে থাকা মহিলার মতো দেখতে।তার মানে উনার মেয়ে বেশ বোঝা যাচ্ছে।

ধীর পায়ে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসে জাহিন।জাহিনকে দেখতে পেয়েই অবাকের শেষ সীমানায় নবনী!ছেলে তার সোজা এখানে চলে আসলো!মাকে একবার বলেও তো আসতে পারতো।তবে ব্যাপার টা বেশ ভালো লেগেছে নবনীর।ভালোবাসা,মায়া,অনুভূতি মানুষকে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে!মিনা জাহিনের উদ্দেশ্যে বলে,

“তুমি কখন আসলা জাহিন বাবা?

শার্টের গুটানো হাতা ঠিক করতে করতে জবাব দেয় জাহিন

” আজকেই।

মায়ের পাশে এসে দাঁড়ায় জাহিন।অপরাধী কন্ঠে বলে,

“তোমাকে বলে আসতে পারিনি মা মণি।চিন্তায় আমি সবকিছুই ভুলে বসে ছিলাম।ছুটি টাও ম্যানেজ হয়নি।তবুও সোজা চলে এসেছি।নেটওয়ার্ক সমস্যার কারনে ফোন করা হয়নি।

মৃদু হেসে বলে নবনী,

” আমার মেয়েটা কই?ঠিক আছে সে?

ছোট্ট তপ্ত শ্বাস ছেড়ে বলে জাহিন,

“মুহুর দিকে তাকানো যায় না মা মণি।কষ্ট হয় খুব।কাল থেকে ভালোমতো কিছুই খায়নি।অবশ্য আমি ঘুমের মেডিসিন দিয়েছি।

চলবে………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here