#পোড়া_কপালী,পর্ব_৭
#শতাব্দী_নাওয়ার
আর কোন দিন ছবি তোলা হবেনা দীপ্ত।
আর তুলবেনা তুমি কোন ছবি আমার সাথে।
এখন তোমার মোবাইল জুড়ে,জীবন জুড়ে অস্তিত্ব জুড়ে থাকবে শুধু ঝুমুর আর ঝুমুর।
দীপ্তকে ডাক্তার সন্ধ্যায় রিলিজ দিয়ে দেয়।
দীপ্তর মা দীপ্তকে বাসায় নিয়ে যায়।
দীপ্ত বাসায় ঢুকতেই দেখে রুম গুলো আর আগের মত নেই।
আগে যেমন ছিলো,সব এখন অন্য রকম করে সাজানো।
দীপ্ত সব থেকে অবাক হলো ওর নিজের রুমে গিয়ে।কি সুন্দর করে সাজানো ওর রুম টা।
-এখন কি একটু একটু ভালো লাগছে তোর?
-হ্যাঁ মা।
-তুই শুয়ে থাক তাহলে এখন।
-আচ্ছা মা।
দীপ্ত ওর মোবাইল খোঁজে।
কিন্তু কোথাও পায় না।
-মা আমার মোবাইলটা কই?
-তোর মোবাইল তো তুই অসুস্থ হবার পরই একদিন আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলেছিস।
পরে আরেকটা মোবাইল আমি তোকে কিনে দিয়েছিলাম।
কিন্তু ওটা তো তুই শপিং করতে যাবার সময় নিয়ে গিয়েছিলি।
হয়তো এক্সিডেন্টের সময় ওটা হারিয়ে গেছে।
সকালেই একটা মোবাইল কিনে দিবোনে তোকে।এখন একটু রেস্ট নে।
-আচ্ছা,যাও তাহলে তুমি।
পরের দিন সকালে ঝুমুর আর ঝুমুরের বাবা দীপ্তকে দেখতে আসে।
-এখন কেমন আছো দীপ্ত?
-হ্যাঁ ভালো আছি।
-আপা,আমি যত দ্রুত সম্ভব ওদের বিয়েটা দিয়ে দিতে চাই।
-এখনতো দীপ্ত অসুস্থ।একটু সুস্থ হোক,তারপর নাহয় ভাবা যাবে এ বিষয় নিয়ে।
-না আপা,এবার আর আমি কোন ভুল করতে চাইনা,বা দেরি করতে চাইনা।
-কিন্তু আমার কিছু কথা আছে।
-কি কথা আপা?
-আপনি আর ঝুমুর একটু আমার সাথে আসুন।
দীপ্ত রেস্ট নিক।
জুমুর আর ওর বাবা দীপ্তর মায়ের সাথে তার রুমে আসে।
-আমি বুঝতে পারছি আপনি চাচ্ছেন ঝুমুর আর দীপ্তর বিয়েটা তাড়াতাড়ি হয়ে যাক।
কিন্তু একটা কথা আপনারা জানেন না,
-কি কথা আপা?
-দীপ্তর যে বিয়ে হয়ে গেছে।
-মানে কি মা?
-হ্যাঁ মা,ডাক্তার যখন কোন ভাবেই সুস্থ করতে পারছিলোনা দীপ্তকে,ঠিক তখন তারা বলেছিলো দীপ্তকে বিয়ে করিয়ে দিতে।বলেছে যেহেতু ওর স্মৃতিশক্তি হারায় ভালবাসার মানুষকে হারানোর কষ্টে,সেহেতু ওকে কেউ ভালবাসলে আদর যত্ন করলে,সেবা করলে হয়তো ও ভালো হয়েও যেতে পারে।
আর তাই আমি দীপ্তকে কয় মাস আগে রিয়া নামের এক মেয়ের সাথে বিয়ে দেই।
আর ও এত দিন দীপ্তকে সেবা যত্ন করে,আর ওর সেবা যত্ন আর ভালবাসায়ই ও অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে উঠে।
গত কাল যখন ও তোমাকে আর দীপ্তকে এক সাথে দেখে এবং জানতে পারে তুমি বেঁচে আছো তখন ও আমাদের সবাইকে ছেড়ে চলে যায়।
আর বলে যায় তোমার আর দীপ্তর যেন বিয়ে দেই আমি।
দীপ্তর খুশিতেই ওর খুশি।
চলে যায় রিয়া চিরদিনের মত আমাদের জীবন থেকে।দীপ্তর জীবন থেকে।
দীপ্ত এসবের কিছুই এখনো জানেনা।
ও একটু সুস্থ হলেই ওকে আমি সব বলে দেবো।তারপর ও যা করতে চায় করবে।
-আপনি ওকে কিছুই বলবেন না মা।কিছুই বলার দরকার নেই আপনার দীপ্তকে।ও কিছুই জানবেনা।ওর এসব কিছুই জানার প্রয়োজন নেই।
রিয়া দীপ্তর জীবনে অল্প ক’দিনের মেহমান হিসেবে এসেছিলো।এবং চলেও গেছে।
আর আমি দীপ্তর অতীত বর্তমান আর ভবিষ্যৎ।সব কিছু আমি ওর।
-বাবা তুমি বিয়ের ব্যবস্থা করো।যত শীঘ্র সম্ভব আমি দীপ্তকে বিয়ে করে আপন করে নিতে চাই।যাতে কেউ কখনো দীপ্তকে আমার কাছ থেকে কেড়ে না নিতে পারে।
-আচ্ছা মা,তুই যা বলবি তাই হবে।
-আর মা,আপনাকে দীপ্তর কসম দিলাম।দীপ্তকে আপনি কিচ্ছু জানাবেন না।
-ঝুমুর,
-সরি মা,এ ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিলোনা।
৩ ৪ দিন পর দীপ্ত একটু সুস্থ হয়।
ঝুমুর দীপ্তদের বাসায় আসে, দীপ্তকে নিয়ে ঘুরতে বের।
ঝুমুর দীপ্তকে একটা মোবাইলের দোকানে নিয়ে যায়,ওকে মোবাইল কিনে দিবে বলে।
-আসসালামু আলাইকুম স্যার!
-ওয়ালাইকুম সালাম।
-আচ্ছা ভাইয়া ভালো একটা মোবাইল দেখান তো।(ঝুমুর)
-দেখাচ্ছি আপা।
স্যার আজ ভাবীকে নিয়ে আসলেন না যে?ওইদিন ভাবীকে যেই মোবাইলটা কিনে দিয়েছিলেন আপনি ওই মোবাইলটা দেখাবো?
-ভাবী?(দীপ্ত)
-আপনি কোথাও ভুল করছেন।বেশি কথা না বলে নতুন কোন মোবাইল দেখান।(ঝুমুর)
-আচ্ছা আপা এই নিন,এটা একদম নতুন আসছে বাজারে।
-আচ্ছা এটাই প্যাক করে দিন।
ভালো না সেট টা দীপ্ত?
-হুম ভালো।
চলো তাহলে।
ঝুমুর দীপ্তকে নিয়ে ফুচকা খেতে যায়।
-ভাই আজ কয় প্লেট বাজি ধরবেন?
ওই দিন তো আপা ই জিতে যাচ্ছিলো,কিন্তু আপনার জন্য নিজেই ইচ্ছে করে হেরে গেলো।
পরে যখন আপারে বললাম,আপনি নিজে ইচ্ছায় হারলেন তাইনা আপা?
আপনি আরো ফুচকা খেতে পারতেন তাইনা?
আপা তখন কি বলছিলো জানেন?
এটা আমার হার নয়,ওর জিতই তো আমার জিত।
আপনি বড়ই ভাগ্যবান ভাই।
এ যুগে এমন মানুষ পাওয়া যায়না।যেখানে সবাই নিজের স্বার্থটাই বুঝে।
আজ আপা আসে নাই বুঝি?
-কোন আপা?
-চলোতো দীপ্ত এখান থেকে,এই ফুচকাওয়ালার মাথায় সমস্যা আছে।
-চলো ঝুমুর বাসায় ফিরে যাই,আমার কিছুই ভালো লাগছেনা।
-আচ্ছা চলো তাহলে বাজার থেকে ইলিশ মাছ নিয়ে যাই।
আজ আমি তোমাকে নিজ হাতে সর্ষে ইলিশ রান্না করে খাওয়াবো।
সর্ষে ইলিশ না তোমার ফেভারিট?
-হুম,চলো।
দীপ্ত আর ঝুমুর মাছের বাজারে ঢোকে।
ঝুমুর ইলিশ মাছ দেখছে।
সেই সময় এক মাছ ওয়ালা ডেকে বলে,
ভাই আজ আমার কাছ থেকে নিবেন না মাছ?
আমি আজ টকামু নাতো।
ওই দিন ভাবী যেই ভাবে আমারে উচিৎ শিক্ষা দিছে।আমি আর কাউরে এখন থেইকা ঠকাই না।ভাবী আমার চোখ খুইলা দিছে।
-এই আমরা আপনার প্যাচাল শুনতে চাইছি?
এত বক বক করেন কিসের জন্য?(ঝুমুর)
-ভাই তাড়াতাড়ি দেন তো মাছ,
কোত্থেকে যে এসব পাগলরা মাছ বিক্রি করতে আসে।
-কিন্তু ঝুমুর সবাই ই কি পাগল?
সবাই ই তো কার যেন কথা বলছে।আর সেই মানুষটা আমার সাথেই এসেছিলো বিভিন্ন জায়গায়।
কিন্তু আমি মনে করতে পারছিনা কিছুই।
-ধুর তুমি বাদ দিবে এগুলো?
তোমার কিছুই মনে করতে হবেনা।
এসব ওদের বিক্রয় করার নতুন বুদ্ধি।
কথা বলে ইম্প্রেশ করে বিক্রয় করে।
বাদ দাও তুমি এগুলো।
চলো বাসায় চলো।
রাতে ঝুমুর ওর বাবাকে বলে আগামীকালই আমি দীপ্তকে বিয়ে করতে চাই।
কোন অনুষ্ঠান করা লাগবেনা।
বিয়ে আমাদের বাসায় হবে,
তুমি শুধু দীপ্তকে আর মাকে আমাদের বাসায় ফোন দিয়ে সকালেই চলে আসতে বলো।
রাতে ঝুমুরের বাবা দীপ্তর মাকে ফোন দিয়ে বলে ঝুমুর সকালে আপনাদের, আমাদের বাসায় আসতে বলেছে।
আপনারা দুজন চলে আসবেন।
দীপ্ত আর দীপ্তর মা দুজন সকালে নাস্তা করে ঝুমুরদের বাসায় চলে যায়।
-মা আমি এখনই দীপ্তকে নিয়ে বিয়ের কাপড় চোপড় কিনতে যাচ্ছি,
বিকেলেই আমাদের বিয়ে হবে।
-এভাবে হঠাৎ?
আমাদের একটা প্রস্তুতি আছেনা?
-আপনি চিন্তা করবেন নাতো মা,আপনার কিচ্ছু করতে হবেনা।
সব হয়ে যাবে।
আপনি বাবার সাথে বসে গল্প করুন।
আমি আর দীপ্ত শপিং করে ফিরছি।
-কিন্তু বিয়ের শাড়ী,গহনা এসবতো আমরা দেবো।(দীপ্ত)
-আরে বাবা,আজ আমি কিনি,কাল তুমি কিনে দিও।
আর আমার যা কিছু সবই তো তোমার।আর তোমার যা কিছু সবই তো আমার।
তাহলে আমি কিনলেও যে কথা তুমি কিনলেও সে কথা।বুঝেছো?
-বাবা তুমি কাজী সাহেব কে বলেছো?
-নারে মা,আমি এখনি জানিয়ে দিচ্ছি।
আচ্ছা বাবা,
আমরা তাহলে বিয়ের শপিং করতে বের হলাম,
তোমরা এদিকটা দেখো।
দীপ্ত আর ঝুমুর বিয়ের শপিং করতে যাচ্ছে।
-দীপ্ত,
-হুম।
-আজ আমি অনেক খুশি।
-আমিও।
-আজ আমাদের এত দিনের ভালবাসা সফল হতে যাচ্ছে।
ফাইনালি আমরা সারাজীবনের জন্য এক হতে যাচ্ছি।আমি অনেক হ্যাপি আজ দীপ্ত,অনেক হ্যাপি।
-লাভ ইউ দীপ্ত।
-লাভ ইউ টু ঝুমুর।
-আমার না খুব ভয় হচ্ছে দীপ্ত,
-কেন?
-আজ আবার কোন সমস্যা হবেনাতো?
দুই বছর আগের মত।
-একটা কথা সব সময় মনে রাখবে,
আল্লাহ্ যা করেন তার বান্দার ভালোর জন্যই করেন।চিন্তা করোনা,তিনি যা করবেন,আমাদের ভালোর জন্যই করবেন।
চলবে,