সিনেমাটিক #পর্ব–সূচনা পর্ব

0
1097

#সিনেমাটিক
#পর্ব–সূচনা পর্ব
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

গতকাল বিকালে শপিং মলে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে কিছু মহিলা পুলিশ আমাকে তুলে আনে।আনার পর থেকেই বেশ খাতির যত্ন করছে। আমাকে কেন এভাবে তুলে আনা হয়েছে, বার বার জিজ্ঞাসা করেও কোন উত্তর পাইনি।

কি থেকে কি হয়ে গেল কিছুই বুঝতে পারছি না। বাসায় আব্বু আম্মু নিশ্চ‌ই অনেক টেনশান করছে। মহিলা গুলো কে কতোবার বললাম আমি বাসায় কল করবো, বাসার সবাই টেনশান করবে আমার জন্য। কিন্তু তাদের এক কথা স্যার আসার পর,স্যার যা বলবেন তাই হবে।

আমি বললাম স্যার কে? তাদের মধ্যে একজন বললেন চকরিয়া উপজেলার এস.আই.।

আমি তো কোন অন্যায় করিনি, তাহলে আমাকে এখানে তুলে আনার মানে কি?? কয়েক বার একই কথা বলাতে, একজন মহিলা পুলিশ অবশ্য উনাকে মহিলা বললে ভুল হবে মেয়ে বলা যায়, দেখে মনে হয় না বিয়ে হয়েছে। দেখতে অনেকটাই সুন্দরী।যাই হোক উনি খুব রেগে গেলেন আমার উপর। সাথে একটা উচ্চ স্বরে ধমক দিলেন।

ধমক শুনে আমি চুপ হয়ে গেলাম। তবে মনে মনে এই পুলিশের গুষ্টি উদ্ধার করছি,আর সাথে একটা নাম দিলাম ঘসেটি বেগম।

আমার একটা অভ্যাস,কেউ যদি আমার সাথে খারাপ বা ভালো ব্যবহার করে, তাহলে তাদের নিকনাম দেই। ভালো কে ভালো নাম আর খারাপ কে খারাপ নাম।

তো এই পুলিশের নিকনাম আজ থেকে ঘসেটি বেগম।

অন্যান্য মহিলা পুলিশ গুলো খুব আন্তরিক ভাবে কথা বলে আমার সাথে কিন্তু এই ঘসেটি বেগম কেমন যেন। মনে হয় যেন কতকালের শত্রু আমি।

এসব ভাবছি তখন একজন লোক আমার জন্য খাবার নিয়ে আসলেন। সকালের নাস্তা হিসেবে চিকেন ফ্রাই আর নান রুটি আনলেন।

গতকাল রাতেও বিরিয়ানী দিয়েছে খাওয়ার জন্য।সব কিছু যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আগে কখনো শুনিনি একজন আসামি কে এতো সুন্দর ফ্লাটে থাকতে দেওয়া হয়,তার উপর এতো ভালো ভালো খাবার খেতে দেওয়া হয়। না মানে আগে জানলে, বাসায় আম্মু যখন হাবিজাবি খাবার রান্না করে তখন এখানে চলে আসতাম।

আম্মুর হাবিজাবি রান্না গুলো হলো করলা,পটল,লাউ,কহি,চাল কোমড়ো,সিম ইত্যাদি।যে গুলো আমার একদম পছন্দ নয়। কিন্তু আব্বু আম্মু জোর করে আমাকে এগুলো খাওয়ায়।

ম্যাডাম খাবার গুলো খেয়ে নিন। খাবার সার্ভ করা লোকটার কথা শুনে ভাবনা থেকে বের হলাম।

খুব খিদে পেয়েছে তাই খুব তৃপ্তি নিয়ে খাবার গুলো খেয়ে নিলাম।

এগারোটার দিকে,
সেই খাবার সার্ভ করা লোক টা আমার জন্য অনেক গুলো চকচকে আর একটা কোন আইসক্রিম নিয়ে আসলেন। আমি তো এগুলো দেখে আনন্দে লাফিয়ে উঠলাম, পরক্ষনেই মনে হলো আচ্ছা এরা চাইছে টা কি??আর আমার ফেবারিট সব খাবার দিচ্ছে খাওয়ার জন্য।যদিও আমি কোন অন্যায় করিনি আমি জানি। কিন্তু তারা তো নিশ্চয়ই আসামি হিসেবেই আমাকে তুলে এনেছেন। তাহলে এসবের মানে কি??

না আর ভাবতে পারছি না, চোখের সামনে প্রিয় খাবার গুলো দেখে না খেয়ে কিভাবে পারি।

তাই প্রথমে আইসক্রিম টা খেয়ে নিলাম তারপর চকলেট গুলো ধীরে ধীরে খাচ্ছি আর ভাবছি এখানে বসে বসে খেলে তো চলবে না। আম্মু নিশ্চ‌ই এখন কান্না করছে।আর আব্বু বসে বসে টেনশান করছে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছি না।

আমাকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে সে রুমের দরজার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখলাম দুজন মহিলা পুলিশ আছে, আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম ঘসেটি বেগম কোথাও নেই।

তাদের দুজনের কাছে গিয়ে বসলাম, বসার পর আমি বলতে যাবো ম্যাম তার আগেই একজন বলেন ম্যাম আপনার কিছু লাগবে??

আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম! মানে পুলিশ আমাকে উল্টো ম্যাম বলছে?? আচ্ছা আমি এসব স্বপ্ন দেখছি না তো??

আমাকে চিমটি কাটেন তো। বেশি জুরে আবার দিয়েন না ঠিক আছে।
আমার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল পুলিশ গুলো। আমি বললাম কি হলো চিমটি কাটুন? একজন বললেন জ্বি ম্যাম।

তারপর একজন চিমটি কাটলো। কিছু টা ব্যাথা অনুভব করলাম। তাহলে কি সত্যি আমার সাথে এসব ঘটনা ঘটতেছে।

বিরবির করে এসব বলছি, তখন একজন মহিলা পুলিশ বললেন ম্যাম এনি প্রবলেম?? আমাদের বলতে পারেন।

আমি বাসায় যাবো, আপনারা কেন আমাকে এভাবে আটকে রেখেছেন??বুঝার চেষ্টা করুন আমার বাসার সবাই খুব টেনশান করছে।

একজন বললেন ম্যাম স্যার আগামীকাল চলে আসবেন।স্যারের খুব জরুরি কাজ পরে গিয়েছে তাই স্যার আসতে পারছেন না।

উফ এই স্যার টা কে?? কি এমন অন্যায় করেছি আপনাদের স্যারের সাথে?যার জন্য আমাকে এভাবে আটকে রেখেছেন।

ম্যাম তা স্যার ভালো বলতে পারবেন, আমরা কিছু জানি না।

মেজাজ খুব গরম হয়ে যাচ্ছে। তাই মেজাজ ঠান্ডা করতে রুমে চলে এলাম।

রুমে এসে,,,
আউযু বিল্লা-হি মিনাশ শাইত্বা-নির রাজীম পড়লাম।
(অভিশপ্ত সয়তান থেকে, আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাইছি)
__সুনান আবু দাউদ (হাদিস নাম্বার: ৪৭৮১)

রাগ কে দমন করতে এই দোয়া পড়তে হয়,তাই আমার যখন রাগ হয় আমি এই দোয়া পড়ি।

সাড়ে বারোটার দিকে একজন মহিলা পুলিশ এসে বললেন ম্যাম কাপবোর্ডে ড্রেস আছে আপনি চাইলে শাওয়ার নিতে পারেন। এটা বলে উনি চলে গেলেন।

কৌতূহল বসত আমি কাপবোর্ড খুললাম।খুলে দেখলাম খুব সুন্দর সুন্দর ড্রেস রাখা এবং শাড়ি ও আছে। এসব কিছু দেখে আমার মনে হচ্ছে আমি বিয়ে করে শ্বশুর বাড়িতে এসেছি,যার কারণে আমাকে এতো কিছু দেওয়া হচ্ছে।

কি হচ্ছে আমার সাথে এসব??

কিছুক্ষন পর যোহরের আজান হবে তাই আর না ভেবে, শাওয়ার নিতে চলে গেলাম।

অপরদিকে,
সাব-ইন্সপেক্টর জায়ান মুস্তাফি যত দ্রুত সম্ভব নিজের কাজ শেষ করার চেষ্টা করছেন।একুশ ঘন্টা পার হয়ে গেছে অথচ তিনি তার কারেজ কে এখনও দেখতে পারলো না।

যাকে কিনা একটা মোবাইল নামক যন্ত্রের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত দেখতে হয়, কিন্তু এখন সে আমার বাসায়।আর আমি কিনা এই কচুর মাথা কাজের জন্য আমার কারেজ কে দেখতে পাচ্ছি না।কাজ করছেন আর এসব ভেবে চলেছেন সাব-ইন্সপেক্টর জায়ান মুস্তাফি।

__________

এক ঘন্টার শাওয়ার নিয়ে অবশেষে আমি বের হয়ে আসলাম। কাপবোর্ড থেকে যে ড্রেস টা পরেছি,আশ্চার্য হলেও সত্যি ড্রেস টা আমার গায়ে একদম পারফেক্ট হয়েছে।

ড্রেসের মধ্যে কুর্তি আমার পছন্দের মধ্যে একটা।আর কালার টা আমার খুব পছন্দের বেগুনি।

এগুলো কি আদৌ পসিবল, একটা আসামি কে, কিনা এতো ফেসিলিটি দেওয়া হচ্ছে। এটা তো ইতিহাসে স্বর্নাক্ষরে লিখা উচিৎ, অবশ্য কবি লেখক রা জানতে পারলে ঠিক কবিতা বা গল্প লিখে ফেলবেন।

যাই হোক,
এখন আমি নামাজ পড়ে নেই।

নামাজ শেষে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম, পাশের বাসার একটা আপুর বয়সী মেয়ে একটা ছোট্ট ছেলে কে এটা ওটা বলে খাবার খাওয়াচ্ছেন। আমি গিয়ে দারাতে ঐ আপু টা আর চোখে আমাকে দেখছেন বার বার।

আচ্ছা আপুটা এভাবে আমাকে দেখছে কেন? আচ্ছা উনি কি জানেন নাকি যে এখানে পুলিশ রা তাদের আসামি কে বন্ধি করে রাখেন??যদি জেনে থাকেন তাহলে তো আমার মান সম্মান সব প্লাস্টিক।এসব ভেবে বেলকনি থেকে চলে এলাম আমি।

রুমে এসে ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম রুম টা। রুম টা খুব সুন্দর, দেয়ালে প্রকৃতির পেন্টিং আঁকা, মনে হয় যেন জীবন্ত। আসবাবপত্র গুলো ও খুব সুন্দর।

ম্যাডাম আসবো?
পিছনে ঘুরে দেখলাম খাবার হাতে দাঁড়িয়ে আছেন সেই বয়স্ক খাবার সার্ভ করা লোক টা।

আমি দেখে বললাম জ্বি আসুন। উনি রুমে এসে ট্রি টেবিলে খাবার সাজিয়ে রাখছেন, তখন আমি বললাম আপনি আমাকে ম্যাডাম বলেন কেন? আমি তো আপনার অনেক ছোট। আমার কথা শুনে লোকটা বললেন স্যার বলেছেন। আমি অবাক হয়ে বললাম স্যার!!এই স্যারের মতলব টা কি?? কেন করছেন এসব।

ম্যাডাম খেয়ে নিন।
চাচা আপনি আমাকে আর ম্যাডাম বলে ডাকবেন না। তাইলে কি বলে ডাকমু? আমার নাম নাজিফা,নাজিফা বলে ডাকবেন।নাম নিয়ে আমি ডাকতে পারুম না, আমি তোমারে মনিমা বলে ডাকমু। আচ্ছা ঠিক আছে তাই ব‌ইলেন।

দুপুরের খাবার খেয়ে শুয়ে ছিলাম কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি বলতে পারবো না।

ঘুমের মধ্যে শুনতে পেলাম,কেউ স্যার বলে কথা বলছেন। কথা টা ভালো করে শুনতে পেয়ে আমি তরিগরি করে উঠে রুম থেকে বের হলাম।

দেখলাম একজন পুরুষ পুলিশের পোশাক পরিহিত। পিছন ফিরে আছেন তাই দেখতে পাচ্ছি না।

তাদের কথা গুলো শুনতে পেলাম, মহিলা পুলিশ গুলো বলছেন,স্যার আমরা কি এবার অফিসে ফিরে যাবো? লোক টা বললেন, হুম আপনারা এবার অফিসে চলে যান,আর আপনাদের অনেক অনেক ধন্যবাদ। ধন্যবাদ দিতে হবে না স্যার এটা তো আমাদের ডিউটি, এটা বলে মহিলা পুলিশ গুলো খুশি মনে লোক টাকে সেলুট করে চলে গেলেন।

তারা চলে যেতেই, লোক টা ঘুরে হেটে আসবেন
তখন আমাকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লেন।

পুলিশ টাকে দেখে আমার খুব চেনা চেনা মনে হলো। তাই বলে ফেললাম, আপনাকে খুব চেনা চেনা লাগছে!!কে আপনি??

এস.আই. জায়ান মুস্তাফি।
কোথায় যেন শুনেছি এই নামটা??…..

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here