#সিনেমাটিক
#পর্ব-০৫,০৬
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
০৫
একবার রাতের শহরের এই দৃশ্য ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করেছিলাম, তো আমার এক ফ্রেন্ড কমেন্ট বক্সে লিখে,কিরে নাজিফা মতলব টা কি?ওর এরকম কথা শুনে আমি চরম অবাক হই।পরে জিজ্ঞাসা করলাম ঐ ফাজিল এখানে মতলবের কি হলো?ও এর উত্তরে বলে,,,
আমি কি খুব বেশি খারাপ? আমার প্রফেশন টাই কি সব কিছু? আমার ভাবনার মাঝে, দুজনার মধ্যকার নিরবতা ভেঙ্গে হিটলার কথাটা বললেন।
উনার কথা শুনে আমি বলা শুরু করলাম,,ছোট বেলা থেকেই আব্বু আম্মুর বাধ্য সন্তান আমরা দুই বোন। আব্বু আম্মু যেমন আদর করেন ঠিক তেমনি শাসন ও করেন। তবে সেটা আমাদের ভালোর জন্যই।আম্মু সব সময় বুঝাতো যাতে কোন অন্যায় কাজ কখনো না করি এতে আব্বু কষ্ট পাবে।তাই কখনো রিলেশানে জড়াইনি নিজেকে। এবং আজো, আব্বু আম্মু কষ্ট পাক এরকম কাজ করবো না আমি।
আব্বু আম্মু কখনো কোন চাহিদার অপূর্ণ রাখেনি, না চাওয়ার আগেই হাজির করে দিয়েছেন সব সময়, সবকিছু। সেই আব্বু আম্মু কে কি করে কষ্ট দেই বলুন??
চলো বাসায় যাই,
এই বলে উনি হাটা শুরু করলেন।
আজব মানুষ, আমি কি বললাম আর উনি কি বললেন। আচ্ছা উনি তো চলে যাচ্ছেন, এখন যদি আমি পালিয়ে যাই তাহলে তো মন্দ হয় না।
আমি পালিয়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই হিটলার এসে বললেন, পালানোর কোন দরকার নেই। আমি আগামীকাল সকালে তোমাকে তোমার বাসায় পৌছে দিব। এখন বাসায় চলো। আমি তো উনার কথা শুনে সেই খুশি,তাই আর কিছু না ভেবে চলে এলাম বাসায়,,,,,
ছাদ থেকে রুমে আসার পর থেকে, পেট ব্যথা শুরু হয়। হিটলার উনার রুমে চলে গিয়েছে,আর না গেলেও উনাকে তো আর বলতে পারতাম না আমার অসুস্থতার কথা।
সারারাত ব্যাথায় ছটফট করি।
সকাল বেলা হিটলার এসে বলে গিয়েছেন, বাসায় যাওয়ার জন্য তৈরি হতে। কিন্তু পেট ব্যথার জন্য বেড থেকে উঠার শক্তি পাচ্ছি না আমি।
আমি উঠছি না বলে, আবারও আসেন হিটলার। উনার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ গুলো ফুলে আছে এবং অসম্ভব ভাবে লাল হয়ে আছে।
মনে হচ্ছে সারারাত ঘুমান নি।
“ছেলেরা সহজে কান্না করতে পারে না,আর যখন কান্না করতে না পারে তখনি এরকম অবস্থা হয়ে থাকে”।
উনাকে দেখে খুব খারাপ লাগলো, উনার এই অবস্থার জন্য হয়তো আমিই দায়ী।
হিটলার বললেন কি ব্যাপার, তুমি এখনও শোয়া অবস্থায় আছো? তৈরি হবে কখন? আমি তোমাকে তোমার বাসায় ড্রপ করে অফিসে যাবো। তাই তৈরি হয়ে নাও তারাতাড়ি।
আমি উনার কথার উত্তর না দিয়ে, নিজেকে আর গুটিয়ে,বালিশ দিয়ে পেট চেপে ধরলাম।
আমার এহেন কান্ড দেখে হিটলার বললেন, নাজিফা তুমি ঠিক আছো? কিছু কি হয়েছে তোমার? উনি খুব উত্তেজিত হয়ে পরেন। আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, নাজিফা বলো আমাকে, না বললে কি করে বুঝবো আমি।
আমি এবার বললাম, আমার খুব পেট ব্যথা করছে।
উনি বললেন, কখন থেকে? আমি বললাম, গতকাল রাতে ছাদ থেকে আসার পর থেকে।
আর তুমি কিছু জানাও নি? শুধু শুধু আপনাকে বিরক্ত করতে চাইনি।
আমার কথা শুনে, উনি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলেন।
প্রায় ঘন্টা খানেক পর,ডক্টর নিয়ে আসলেন হিটলার। তারপর ডক্টর চ্যাকআব করে বললেন,গ্যাস্টিক থেকে পেট ব্যথা করছে। কিছু মেডিসিন লিখে দিলেন,আর বললেন,বেশি বেশি পানি খেতে এবং খাবারের অনিয়ম না করতে।
ডক্টর চলে যাওয়ার পর, হিটলার খাবার এনে নিজ হাতে খাইয়ে দিলেন।আর বললেন, চাচা কে ফার্মিসি তে পাঠিয়েছি কিছুক্ষণ পরেই মেডিসিন নিয়ে আসবে খেয়ে নিও।আর তুমি বরং আগামীকাল বাসায় যেও, আজকে তো যেতে পারবে না। আমার অফিসের লেইট হয়ে যাচ্ছে, হঠাৎ করে ছুটি কাটাতে পারবো না তাই যেতে হচ্ছে।
আমি বললাম ঠিক আছে, প্রবলেম নেই আমি আগামীকাল ই যাবো। আপনি অফিসে চলে যান।
উনি বললেন, আচ্ছা তুমি মেডিসিন গুলো ঠিক মতো নিও,টেক ইয়ার।
এই বলে হিটলার চলে গেলেন।
মেডিসিন নেওয়ার পর, দুপুরের দিকে অনেকটা কমে যায় ব্যাথা। আগামীকাল বাসায় যাবো কিন্তু আমার তেমন আনন্দ হচ্ছে না। অথচ বাসায় যাবো বলে কতো কিছুই না করলাম। কেন হচ্ছে এরকম?
________
আজকে হিটলার তারাতাড়ি বাসায় চলে এলেন।আর এসেই আমি সুস্থ হয়েছি কিনা জিজ্ঞাসা করলেন। আমি যখন বললাম, অনেকটাই কমে গেছে ব্যাথা। তখন বললেন, তার মানে এখনো পুরোপুরি কমেনি? আমি বললাম তেমন নয় আল্পই আছে ব্যাথা।
আচ্ছা তুমি বসো আমি আসছি,যাস্ট পাঁচ মিনিট ওয়েট।এই বলে চলে গেলেন উনি।
কিছুক্ষণ পর, উনি এসে বললেন এই নাও এটা খেয়ে নাও। তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম কি এটা? উনি বললেন,আদা লবন মাখানো। এটা খেয়ে নাও ইনশা আল্লাহ সুস্থ হয়ে যাবে।
আমি অবাক হয়ে বললাম,কি বলছেন আপনি?আদা খেয়ে সুস্থ হয়ে যাবো মানে? হুম, আমি এটা গুগলে সার্চ দিয়ে দেখিছি। রাতে ডিনারের পর, আধা ইঞ্চি পরিমাণ আদা লবন মাখিয়ে খেয়ে কিছু সময় পর এক কাপ কুসুম গরম পানি খেলে,গ্যাস্টিকের ব্যাথা চলে যায়।
আমি আর কিছু না বলে,আদা টা মখে দিলাম। একটু চিবানোর পর বমি করে দেওয়ার উপক্রম হলো। তখন হিটলার বললেন, প্লিজ কষ্ট হলেও খেয়ে নাও।
উনার কথা শুনে, খুব কষ্ট করে খেয়ে নিলাম। তারপর চাচা কুসুম গরম পানি এনে দিলেন। হিটলার বললেন পানিটা খেয়ে নাও, উনার কথা মতো পানি টা খেয়ে নিলাম।
এবার ঘুমিয়ে থাকো ভালো লাগবে,আর কোন প্রবলেম হলে আমাকে বা চাচাকে ডেকে নিও।এই বলে হিটলার চলে গেলেন।
ফজরের নামাজ আদায় করতে যখন ঘুম থেকে উঠলাম, তখন মনে হলো পেট ব্যথা নেই। ভালো করে চ্যাক করে দেখলাম না কোন ব্যাথা নেই। খুবই অবাক হলাম, হিটলারের ঘরোয়া চিকিৎসা এভাবে ম্যাজিকের মতো কাজ করবে, ভাবতেও পারিনি।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে, হিটলারের সাথে নাস্তা করছি। হয়তো এটাই শেষ বারের মতো উনার সাথে আমার নাস্তা করা। হিটলার কোন কথা বলছেন না, নিরবে নাস্তা করে উঠে গেলেন। আমিও অল্প-স্বল্প খেয়ে উঠে পরলাম।
তারপর তৈরি হয়ে, দু’জনে বেড়িয়ে পড়লাম গন্তব্য আমার বাসায়।পথে হিটলার বললেন, আমি তোমার আব্বুর কাছে সব কিছু বলবো,স্বিকার করে নিব আমার সব দোষ। হিটলারের কথা শুনে আমি বললাম তার প্রয়োজন নেই, আমি চাই না আব্বু আম্মু আপনার কথা জানুক।
হিটলার বললেন, কেন চাও না? এমনিতেই তো তোমার আব্বু আমাকে পছন্দ করেন না, এখন না হয় আমার নাম কে ও ঘৃণা করবেন।তাতে তো তোমার কিছু যায় আসে না।
আমি বললাম, এতো কিছু জানি না আমি চাই না ব্যাস।
অতঃপর,
দুই ঘণ্টার পথ পাড়ি দিয়ে, আমার বাসার গেইটে পৌঁছালাম। হিটলার যাওয়ার সময় সুধু বললেন, আল্লাহ হাফেজ কারেজ। তারপর বাসায় ঢুকে গেলাম আমি।
বাসায় যাওয়ার পর আম্মু আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলেন।আর নানা রকম প্রশ্ন শুরু করলেন আব্বু আম্মু দু’জনেই। আমি বললাম, আমি এক ফ্রেন্ডের বাসায় ছিলাম। আব্বু বললো কোন ফ্রেন্ড? আমি তোমার সব ফ্রেন্ডের বাসায় খোঁজ নিয়েছি। আমি বললাম এই ফ্রেন্ড কে তোমরা চিনো না।
আব্বু আম্মু আরো অনেক প্রশ্ন করতে থাকল। তখন আপু এসে বললো, আব্বু আম্মু তোমরা কি শুরু করলে? মেয়েটা কতোদিন পর বাসায় ফিরে আসছে,আর তোমরা কিনা পুলিশের মতো জেরা শুরু করে দিলে।
এই বলে আপু আমাকে রুমে নিয়ে গেল। আমি যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। তবে একটা বিষয় খেয়াল করলাম,আপু কোন রকম প্রশ্ন করলো না। আমি এতো গুলো দিন কোথায় ছিলাম, কি করলাম,এই প্রশ্ন টা যে কারো মনে আসবে এটাই স্বাভাবিক কিন্তু না আপু একদম নর্মাল বিহেভ করলো।
তারপর আমি ক্লান্ত বলে, আপু বলল নাজিফা তুই রেস্ট কর আমি এখন যাই।
আপু চলে যেতেই আমি শাওয়ার নিয়ে এসে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ছোট ছোট হাতের আলতো ছোঁয়া এবং মিষ্টি কন্ঠস্বর শুনে, আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। না তাকিয়েই বুঝতে পারলাম, এটা আপুর মেয়ে তাইফা মামুনির কাজ।ও সবসময় আমার ঘুম এভাবে ভাঙ্গে।
মাঝে মাঝে আমার ঘুমের মধ্যে এসে পাপ্পি দিয়ে আমার ঘুম ভাঙ্গিয়ে দেয়,আর আজকে দুই হাত আমার গালে রেখে আম্মু বলে ডাকছে।তাইফা এখনো স্পস্ট ভাবে কথা বলতে পারে না, তবে ও যাই বলে না কেন এগুলো শুনতেই অনেক ভালো লাগে। আপু আর আমাকে দুজনকেই আম্মু বলে ডাকে। কিন্তু বাবা ডাকার বেলা যেকোন ছেলে কে দেখলেই বাবা ডাকে। এই নিয়ে ভাইয়ার (দুলাভাই) সাথে বেশ মজা করা যায়।
তাইফা–আম্মু উতো,,,(আম্মু উঠ)
তাঁবু একটু ঘুমাতে দাও না আম্মু কে?(তাইফা কে আমি তাঁবু বলে ডাকি)
তাইফা–নান,এ এ(নানু তোমাকে উঠতে বলেছে)
আম্মু তোমার নানু কে বলো,আরেকটু পরে উঠবো।
এবার তাঁবু বলে,নান আ,আ। আম্মু,,,
এবার তাঁবুর কথা আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।তাই বললাম কি বলো?আমি বুঝতে পারছি না, তোমার কথা আম্মু। তাঁবু আবার বলল, আম্মু উতো।
এবার আর তাঁবুর মিষ্টি ডাকের অবজ্ঞা করতে পারলাম না।তাই উঠে ফ্রেস হয়ে এসে তাঁবু কে নিয়ে, নিচে আসলাম। এসে দেখি আম্মু পাটিসাপটা পিঠা তৈরি করছে।যার জন্যই তাঁবু এগুলো বললো।
আম্মুর পিঠা তৈরি শেষে, সবাই একসাথে খেতে বসলাম। এদিকে তাঁবু কিছুটা মুখে দিচ্ছে আর বেশিরভাগ টাই দুই হাত দিয়ে একবার মাখছে তো আবার ফেলছে।এই কাজ গুলো করে সে ভিশন আনন্দ পাচ্ছে। সবাই প্রথমে বাধা দিলেও পরে আর দেয় না জানে দিলেও কোন লাভ নেই।
এক পর্যায়ে, আব্বু বললো নাজিফা তুমি ঠিক করে বলো এতো দিন কোথায় ছিলে আর কেন ছিলে? আমাদের টেনশান হতে পারে এটা কি তুমি জানতে না?
আমি মাথা নিচু করে বসে রইলাম। কি বলবো বুঝতে পারছি না, তখন আপু বলে, আব্বু নাজিফা ফ্রেন্ডদের সাথে ট্যুরে গিয়েছিল।আর আমাকে বলে গিয়েছিল।
আপুর এরকম কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে টুপ করে পড়লাম।
আর এদিকে, আপুর কথা শুনে আব্বু আম্মু আপুর উপর সাইক্লোন,সিডর,মহাসেন, ঘুর্নিঝড় যা আছে সব কিছু চালিয়ে দিল। আপু কাচুমাচু হয়ে বললো স্যরি আব্বু,স্যরি আম্মু।
আব্বু বললো, আমাদের টেনশন গুলো নিজের চোখে দেখেও কিভাবে পারলে তুমি চুপ করে থাকতে?আর এখন স্যরি বলছো,স্যরি বললেই কি সব কিছুর সমাধান হয়ে যায়।
তারপর রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে,বাসা থেকে বের হয়ে গেল আব্বু।
তোদের এই শিক্ষা দিয়েছে আমি? কি করে পারলি তোরা এরকম কাজ করতে?এই বলে আম্মুও উপরের তলায় আম্মুর রুমে চলে গেল।
সবাই চলে যেতে, আমি আপুকে বললাম, আপু এগুলি কি হলো? আপু বললো নাজিফা আমি সবকিছু জানতাম।হোয়াট? তুমি জানতে এস.আই.জায়ান মুস্তাফি আমাকে কিডন্যাপ করবে বা করেছে?
আপু অসহায় লুক নিয়ে বললো,হুম।
আমার মাথায় কিছু ডুকছে না, তুমি উনার সাথে কিভাবে ইনভোলব?…..
#চলবে…..
#সিনেমাটিক
#পর্ব–০৬
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
আপু অসহায় লুক নিয়ে বললো,হুম।
আমার মাথায় কিছু ডুকছে না, তুমি উনার সাথে কিভাবে ইনভোলব?…..
আপু বললো, মুস্তাফির সাথে সেই প্রথম থেকেই কথা হতো আমার।তোর ব্যাপারে সবসময় উনি খোঁজ খবর নিতেন। তুই কি খেতে পছন্দ করিস, কি পছন্দ করিস না, এই সব কিছু জানতে চাইতো। প্রথম প্রথম আমি বলতে চাইনি তারপর উনার পাগলামি দেখে বলি।
উনার সাথে কথা বলে বুঝতে পারি, উনি তোকে খুব পছন্দ করেন।আর উনার সাথে যদি তোর বিয়ে হয় তুই খুব সুখী হবি।সে জন্য রাজি হই উনার কিডন্যাপ করার প্লানে।
তাছাড়া তুই তো সবসময় একজন ভালো মনের মানুষ চাইতি, তোর কাছে তো টাকা পয়সা ম্যাটার করে না।আর এমন নয় যে জায়ান মুস্তাফিরা দরিদ্র, উনাদের যথেষ্ট পরিমাণে সম্পত্তি আছে।ঢাকায় দুটো বিল্ডিং আছে,গ্রামেও বাড়ি ঘর জমিজমা আছে।
এসব কিছু ভেবেই আমি চেয়েছিলাম তুই যেন উনাকে বিয়ে করিস।
আপুর কথা গুলো আমি নিরবে শুনছি,,,
আপু আবার বললো, নাজিফা তুই তো এতদিন ছিলি উনার কাছাকাছি। উনি কেমন উনার সম্পর্কে নিশ্চই ধারণা হয়েছে। এবার বল তো উনাকে তোর পছন্দ হয়েছে?
আপুর কথার উত্তরে বললাম,আপু তুমি জানো না আব্বু উনাকে পছন্দ করেন নি? তাহলে কেন তুমি উনার সাথে যোগাযোগ রাখলে?
আপু বলল, তোদের বিয়ে হয়ে গেলে তখন আব্বু না মেনে পারবে না।আর তাছাড়া আব্বু কে বুঝিয়ে বললে আব্বু হয়তো বুঝবে। এখন তোর মতামত কি বল তো?
আমি বললাম,এখনি কিছু বলতে পারছি না আপু। এটা বলে উপরে রুমে চলে আসলাম।
রুমে এসে ফোন টা হাতে নিলাম, আসার সময় জায়ান মুস্তাফি আমার ফোন টা দিয়েছেন।ঐ দিন আমাকে কিডন্যাপ করার পর মহিলা পুলিশ গুলো, ফোন টা নিয়ে গিয়েছিল যার ফলে এতো দিন উনার কাছে ছিল ফোন টা।
ফোন টা বন্ধ হয়ে আছে,তাই চার্জে দিয়ে খুললাম।খুলার পর দেখি ফাবু (আমার বেস্টু ফাবিহা)অনেক গুলো মেসেজ দিয়ে রাখছে, হয়তো কল ও দিয়েছিল।
আমি চার্জে রেখেই কল করলাম ফাবু কে। কিন্তু রিসিভ করছে না।তাই ফোন চার্জে রেখে, বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ালাম।
মন খুব ভিশন্ন লাগছে, কিছুই ভালো লাগছে না। আচ্ছা হিটলার সাহেব এখন কি করছেন? আমার কথা কি উনার মনে পড়ছে। আমার ভাবনার মাঝে ফোট টা বেজে উঠল রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে দেখি ফাবু কল করেছে।
রিসিভ করে সালাম দিলাম।
কুশল বিনিময়ের পর ফাবু বললো,
(ফাবিয়াকে আমি ফাবু বলে ডাকি আর ফাবু আমাকে নাজু বলে ডাকে)
নাজু তুই এতো দিন কোথায় ছিলি? তোকে কতোবার কল করেছি মেসেজ করেছি, তোর ফোন বন্ধ পেয়েছি। আমি বললাম স্যরি দোস্ত আমি বাসায় ছিলাম না।
ফাবু বললো নাজু আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
আমি বললাম তুই আবার মজা করছিস তাই না? না রে দোস্ত সত্যিই আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।তোকে কতোবার কল করেছিলাম, বিয়েতে আসার জন্য, কিন্তু তোকে তো পেলাম না।
ফাবুর কথা বিশ্বাস না করে পারলাম না। তবে এবার আর মিথ্যা বলছে না বুঝতে পারলাম।তাই বললাম ফাবু ভাইয়া কি করেন?আর তুই তাড়াতাড়ি ভাইয়ার পিক দে দেখবো।
ফাবু বললো, আমার কাছে উনার পিক নেই। আমি অবাক হয়ে বললাম!!মজা করছিস কেন?তোর কাছে ভাইয়ার পিক না থাকে কেমনে? তখন ফাবু বললো, আমাদের মনে হয় ডিবোর্স হয়ে যাবে নাজু। কি বলছিস ফাবু!! বিয়ে হতে না হতেই এসব কথা কেন বলছিস?
হুম,রে। তুই আগামীকাল ভার্সিটিতে আসবি? আমি বললাম তুই আসলে আসবো।ফাবু বললো আমি আসবো, তুই ও আসিস, আসলে সব কিছু বলবো।
এখন রাখি আগামীকাল দেখা হচ্ছে তাহলে। আমি বললাম, হুম ইনশা আল্লাহ।
ফোন রেখে, আপুর রুমে গেলাম।
আপু তাঁবু কে সেরেলাক খাওয়াচ্ছে। আমি গিয়ে বললাম তাঁবু আমি খাবো। তখন তাঁবু ইশারা করে ওর আম্মু কে বললো, আমাকে দেওয়ার জন্য।
আমি বললাম, না আম্মু আমি খাবো না এমনিতেই বলেছি, তুমি খাও। কিন্তু তাঁবু আমি না খেলে ও খাবে না।পরে গেলাম বিপদে,আপু বললো এবার খাঁ বললি কেন খাবি? অনেক বুঝিয়ে ও তাঁবু কে খাওয়াতে পারছি না,তাই বাধ্য হয়ে একটু খেয়ে নিলাম। তারপর ও খেলো।
তাঁবু কে খাওয়ানো শেষে আপুকে ফাবুর কথা বললাম। আপু শুনে খুব দুঃখ প্রকাশ করলো।
ভার্সিটির প্রথম দিন থেকে ফাবুর সাথে আমার পরিচয়, খুব ভালো একটা মেয়ে ফাবু।তাই ওর সাথে এরকম একটা কষ্টদায়ক ব্যাপার মেনে নেওয়া খুবই কষ্টের। আব্বু আম্মু আপু সবাই চিনে ফাবু কে।
আব্বু আম্মু শুনলেও দুঃখ প্রকাশ করবেন, আমি নিশ্চিত।
রাতের বেলা,আপু আদা লবন মাখিয়ে নিয়ে এসে বললো, এটা খেয়ে নে। আমি অবাক হয়ে বললাম! তুমি এগুলোর কথা জানলে কি করে? আপু বললো, জায়ান সাহেব কল করে আমাকে সবটা বলেছেন।আরো বললেন, এগুলো নাকি তিন বার খেতে হবে, একবার নাকি খেয়েছিস।আর আমাকে বললেন,আমি যেন মনে করে, আজকে আর আগামীকাল খাইয়ে দেই।
আপুর কথা শুনে বিষ্ময়ে হা হয়ে গেলাম। তখন আপু বললো দেখলি উনার তোর প্রতি কতটা কেয়ার।তাপরেও কি তুই উনাকে এভোয়েড করবি? আপুর কথা শুনে বললাম, আমাকে কিছুদিন ভাবতে দাও আপু।
আপু বললো ঠিক আছে এখন এগুলো খেয়ে নে। আমি বললাম,আপু আমার পেট ব্যথা ভালো হয়ে গেছে,তাই এসব আর খেতে হবে না। কিন্তু আপু আমার কথা শুনলো না,বললো তিন দিন খেলে পুরোপুরি ভালো হয়ে যাবো।তাই খেয়ে নিলাম।
ঘুমানোর সময় হিটলারের কথা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলাম।
এরপরের দিন সকাল বেলা,,
হিটলার আর একটু ঘুমাতে দিন,,,
নাজিফা কি সব বলছিস?আর হিটলার কে? আম্মুর প্রশ্ন শুনে ঘুম দৌড়ে পালালো। আম্মু আবার ও বললো হিটলার কে? আমি বললাম কোন হিটলার আম্মু? আম্মু বললো আমি কি জানি তুই তো বললি, হিটলার আর একটু ঘুমাতে দিন!!
আম্মুর কথা শুনে বুঝলাম, ঘুমের মধ্যে হিটলারের নাম নিয়ে নিয়েছি। এখন আম্মু কে কি বলি? কি হলো চুপ করে আছিস কেন বল হিটলার কে?আরে আম্মু ঘুমের ঘোরে কি না কি বলে ফেলেছি, এই নিয়ে তুমি জেড়া শুরু করে দিলে।
তখন আম্মু বললো, ঠিক আছে।
তুই না আজকে ভার্সিটিতে যাবি বললি,নয়টা বেজে গেছে তো এখনো উঠছিস না কেন?
আম্মু আমার ক্লাস দশটার দিকে আবার কখনো কখনো এগারোটার দিকে ও হয়ে থাকে,স্যার ম্যাম দের ইচ্ছে অনুযায়ী।তো এতো সকাল সকাল গিয়ে কি করবো?
আর একটু ঘুমাতে দাও। আমার কাথা শুনে আম্মু চলে গেল। আমি আমার ঘুমে আবার মনোযোগ দিলাম।
ঘুমাতে না ঘুমাতে করকস শব্দে ফোনের রিং টোন বেজে উঠল। বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করে কানে ধরলাম। ফোনের উপাস থেকে মৃদু কন্ঠে কেউ বললো, আসসালামু আলাইকুম।
কেমন আছো কারেজ?
ফোন চেক করে দেখি আননোন নাম্বার।তাই জিজ্ঞাসা করলাম,কে আপনি?
চিনতে পারনি? হুম। তাহলে?এই প্রথম আপনি কল করেছেন তো,তাই বুঝতে একটু সময় লাগলো। ওহ্ আচ্ছা, তোমার পেট ব্যথা কমেছে। হুম, এখন আর নেই ব্যাথা।
আমার পেট ব্যথা নেই শুনে হিটলার বললেন, আলহামদুলিল্লাহ।
আপনি কেমন আছেন?
আমার প্রশ্নের জবাবে উনি বললেন,যেমন রেখে গেছো, তেমনি আছি। আমি আবার বললাম, আপনার বাসার সবাই কেমন আছেন? উনি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছেন। তোমার বাসার সবাই কেমন আছেন? আমি বললাম, সবাই ভালো আছেন।
উনি বললেন, আলহামদুলিল্লাহ বলতে হয়, তাহলে আল্লাহ তা’আলা খুশি হন।
আমি বললাম, হুম।
আলহামদুলিল্লাহ অর্থ কি জানো?
আমি বললাম, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ তা’আলার। ভেরি গুড জানার পরেও বলো না কেন? মনে থাকে না তাই। আচ্ছা, আজকে থেকে বলবে? আমি বললাম, চেষ্টা করবো বলার। আচ্ছা, নাস্তা করেছো? না। আপনি করেছেন? হুম, অনেক আগেই করে অফিসে চলে এসেছি। ওহহ আচ্ছা। হুম, বেলা তো অনেক হলো, নাস্তা করে নাও। আচ্ছা ঠিক আছে। তারপর আল্লাহ হাফেজ বলে, হিটলার কল রেখে দিলেন।
আমি ও উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে, বেড়িয়ে পড়লাম ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।
ভার্সিটির গেইটে ফাবুর সাথে দেখা হয়ে যায়।ফাবু বললো, আজকে ক্লাস করবো নাজু চল কোথাও ঘুরে আসি। আমি বললাম কোথায় যাবি?কাছেই একটা কফি সপ আছে চল ওখানে যাই। আমিও রাজি হয়ে গেলাম কারণ আমার ও ক্লাস করার একদম মুড নেই।
তারপর দুজনে কাছাকাছি একটা কফি সপে গেলাম।
এবার বল তো এরকম সিদ্ধান্ত কেন নিতে চাচ্ছিস?ফাবু বললো, তোকে কিভাবে যে কথা টা বলবো বুঝতে পারছি না। আমি বললাম আরে বলনা,,,ফ্রেন্ড দের মধ্যে এতো হ্যাজিটেশনের কি আছে? ফাবু বলতে যাবে,, তখনি ওয়েটার কফি নিয়ে আসে।ওয়েটার কে দেখে ফাবু চুপ হয়ে যায়। তারপর দু’জনেই কফির কাপে চুমুক দিলাম। আমি এবার অধৈর্য হয়ে বললাম, কি হলো বল?
আমার বরের শারীরিক কিছু প্রবলেম আছে,যা আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন আমাদের কাছ থেকে গোপন করেছেন।
ফাবুর এরকম কথা শুনে আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না।তাই আমি বললাম, শারীরিক প্রবলেম আছে তো কি হয়েছে? ট্রিটমেন্ট করলেই তো হবে।ফাবু নারে ট্রিটমেন্ট করলে কোন কাজ হবে না।ওর কথা শুনে খুবই খারাপ লাগলো আমার। বিয়ে নিয়ে খুব স্বপ্ন ছিল ফাবুর, কিন্তু এরকম হবে কে জানতো!
এবার বল তো তুই এতো দিন কোথায় ছিলি?ফাবুর থেকে আর লুকালাম না,তাই সব কিছু বলে দিলাম।সব কিছু শুনে ফাবু বললো, দোস্ত এতো পুরো সিনেমাটিক কাহিনী!!ইশ আমার সাথে যদি এরকম সিনেমাটিক কাহিনী হতো,কত্ত মজা হত।
ফাবুর কথা শুনে বললাম, তোর কাছে তো এখন মজা লাগবেই, আমার জায়গায় যদি তুই থাকতি তাহলে বুঝতি মজা।
আরে না নাজু, তোর কথা অনুযায়ী মনে হচ্ছে,এস আই লোক টা ভালোই হবে। তোকে খুব ভালোবাসবে।
তারপর,দুজনে আরো কিছু সময় কথা বার্তা বলে,যারযার বাসায় চলে আসি। বাসায় আসার পর থেকে হিটলারের কথা ভেবেই চলেছি।
এভাবেই কেটে গেল এক সপ্তাহ,
সে দিনের পর হিটলার আর কল করেন নি। কিন্তু কেন জানি আমি উনার কলের অপেক্ষায় আছি কখন উনি কল করবেন,,,,
#চলবে…..