সিনেমাটিক #পর্ব-০৭

0
429

#সিনেমাটিক
#পর্ব-০৭
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

এভাবেই কেটে গেল এক সপ্তাহ,
সে দিনের পর হিটলার আর কল করেন নি। কিন্তু কেন জানি আমি উনার কলের অপেক্ষায় আছি কখন উনি কল করবেন,,,,

কিন্তু উনি কল করেন না। এখন যেন আমার পাগলামো বেড়ে যাচ্ছে। সবকিছুতেই উনার কথা মনে পরছে। কিছু তেই মাথা থেকে বের করতে পারছি না।

“আমি সব কিছু নিয়ে অনেক বেশি ভাবি, একটা বিষয় আমার মাথায় আসলে সেটা নিয়েই সারাদিন জল্পনা কল্পনা করতে থাকি। এই যে এখন হিটলার কি পরিমান আমার মস্তিষ্ক দখল করে নিয়েছে,তা কাউকে বুঝাতে পারবো না”।

“কেন করছেন এরকম? খুব তো বলেছিলেন আমাকে পছন্দ করেন”। এখন কোথায় গেল উনার সেই কথা। এতো সহজে ভুলে গেলেন”!!

আমার ভাবনার মাঝে তাঁবু দৌড়ে এসে, দরজার সাথে লেগে ব্যাথা পেল। আমি বললাম,ব্যাথা পেয়েছো আম্মু? তাঁবু দরজা কে ইশারা করে দেখিয়ে বললো,ই,,ই,,ই। আমি বললাম এটা তোমাকে ব্যাথা দিয়েছে? তাঁবু বললো,হু। আমি বললাম,একে বকে দেই? তাঁবু বললো,হু। তাঁবুর কথা শুনে বললাম, এই দরজা তাঁবু কে মারলি কেন?বপ। তখন তাঁবু দরজা কে হাতে থাপ্পর দেয়, অতঃপর নিজেই আবার ব্যাথা পায়।
তখন আবার আমাকে দেখায় হাতে ব্যাথা দিয়েছে। আমি বলি আহারে, বেয়াদব দরজা তুই আবার ব্যাথা দিলি তাঁবু মামুনিকে, তোকে অনেক গুলো বপ। আমার কথায় খুশি হয়ে তাঁবু আমাকে জড়িয়ে ধরে।

“শিশুরা নিষ্পাপ একটা ফুলের মতো হয়ে থাকে। ওরা অল্পতেই খুশি হয়ে যায়। ওদের থাকে না কোন লোভ,আর না থাকে কোনো কষ্ট”।

“ইচ্ছে করে আবার শৈশবে ফিরে যাই। যেখানে থাকবে না কোন দুঃখ কষ্ট। থাকবে না কোন আকাঙ্ক্ষা”।

কেটে গেল আরো তিন দিন।
হিটলারের কোন খোঁজ নেই, আমিও কল করতে পারছি না, কোথাও একটা বাধা কাজ করে কল করার কথা ভাবলে।

“আপু এসে বলে,বেশ কিছুদিন তো হয়ে গেল। কি সিদ্ধান্ত নিলি”?

আমি বললাম, হিটলার তো এখন আর কল করেন না। হয়তো ভুলে গিয়েছেন আমাকে।

“আপু বিষ্ময় হয়ে বললো!! এই হিটলার টা আবার কে? আমি বললাম,এস আই জায়ান মুস্তাফি। আপু হেসে বললো, তুই পারিস বটে। উনার ও নাম দিয়ে দিলি? হুম, উনার মতো মানুষ কে নাম না দিয়ে থাকতে পারি বলো”?
আপু বললো, তো জায়ান মুস্তাফি জানেন উনার এতো সুন্দর নাম রাখা হয়েছে? না আপু উনার সামনে এখনো বলিনি।

“আচ্ছা এসব বাদ দে, এখন বল আমি কি আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলবো? আমি অবাক হয়ে বললাম কি ব্যাপার”? আপু বললো জায়ান মুস্তাফির ব্যাপারে। আমি বললাম, না আপু আমি আগে উনার সাথে কথা বলে নেই তারপর। আপু বললো আচ্ছা ঠিক আছে।

“আপু চলে যেতেই,ফাবুর সাথে প্লান করলাম, আগামীকাল হিটলারের বাসায় গিয়ে হিটলার কে চমকে দিব। শুক্রবার আছে তাই হিটলার বাসায় থাকবেন,নিশ্চ‌ই”।

“হিটলার কি পরিমান অবাক হবেন,তা কল্পনা করে, আমার খুব আনন্দ হচ্ছে”।

খাবার টেবিলে সবাই একসাথে বসে ডিনার করছি তখন আম্মু বললো, নাজিফা তোর মামা একটা ছেলের সন্ধান পেয়েছে। ছেলে ইন্জিনিয়ার,ঢাকায় বাড়ি আছে। আমার মনে হয় খুব ভালো হবে।

আমি বললাম, আম্মু আমি এখন বিয়ে করবো না। আব্বু শুনে বললো, কেন বিয়ে করবে না? এতো ভালো ছেলে, তোমার সমস্যা থাকার কথা নয়। সবকিছু ঠিক হলে,এখানেই তোমার বিয়ে হবে।

আব্বুকে আর কিছু বলতে পারলাম না আমি। আব্বুর মুখের উপর কথা বলার সাহস কখনো হয়নি আর হবেও না।

খাবার শেষ করে, আপুর রুমে আসলাম। আপু বললো, আব্বু আম্মুর কথা নিয়ে টেনশান করছিস? “আমি বললাম, আপু আমি আগেই জানতাম এরকম কিছুই হবে।জায়ান মুস্তাফি কে কখনোই আব্বু আম্মু মেনে নিবেন না”। আপু বললো,আরে এখনি এতো চিন্তা করার কিছু নেই। বিয়ে তো আর ঠিক হয়ে যায়নি।ঐ ইন্জিনিয়ার কে কোন ভাবে ম্যানেজ করতে পারলেই হবে।

কিন্তু কিভাবে, আমরা তো ঐ লোকের কিছুই জানি না।
আপু বললো আরে এটা কোন ব্যাপার নাকি? কিছু একটা বলে মামার কাছ থেকে নেওয়া যাবে। আচ্ছা তাহলে ঠিক আছে।

কিন্তু আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করছি!! আপুর কথা শুনে বললাম, কি? মনে হচ্ছে আমার বোন টা তার হিটলারের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে!! আপুর কথা শুনে বললাম, মোটেও না।যাস্ট,,,,

আপু আমাকে ব্যাঙ্গ করে বললো,যাস্ট ভালো লেগে গেছে,তাই তো? আপু তুমি না ফাজিল একটা, এই বলে দৌড়ে আমার রুমে চলে এলাম।

ফোন টা হাতে নিয়ে দেখলাম, হিটলার কল করেছেন কিনা। কিন্তু না কল করেন নি। উনাকে একবার হাতের কাছে পাই, তারপর বুঝিয়ে দিব নাজিফা শেখ কে ইগ্নোর করার মজা।কত্ত বড় সাহস উনার, আমাকে কল করে না।

___________

সকাল দশটায়,
আম্মু কে ফাবুর বাসায় যাবো বলে বাসা থেকে বের হলাম। “আজকে বাসার গাড়ি সাথে নেই নি।বাই এনি চান্স, আব্বু বা আম্মু যদি ড্রাইভার চাচা কে জিজ্ঞাসা করে আমি কোথায় গিয়েছি? তাহলে অকালে বাড়ি ছাড়া হতে হবে।তাই এই রিস্ক নিলাম না”।

“ফাবু কে কল করে জানলাম ও আমার বলে দেওয়া স্থানে চলে এসেছে। তারপর দুজনে একসাথে হয়ে,র‌ওনা হলাম হিটলারের বাসার উদ্দেশ্যে। গাড়িতে ফাবু ও পিন্চ করে কথা বলতে ভুললো না”।

ফাবু বললো ব্যাপার টা কি বল তো? এতো জরুরি তলব কেন?এস আই এর বাসায় যাওয়ার। মনে হচ্ছে ডালমে কুচ কালা হ্যে,,,,

আমি বললাম হুম কিছু তো আছেই,গেলেই দেখতে পাবি।

“অবশেষে হিটলারের বাসায় গিয়ে পৌঁছালাম”।”কলিং বেল চাপতেই চাচা দরজা খুলে দিলেন। আমাকে দেখে চাচা ভিশন আনন্দ হয়ে বললেন,মনিমা তুমি এসেছো? আমি জানতাম তুমি আসবে।জায়ান বাবা কে আমি বার বার বলতাম,মনিমা ঠিক আসবে”।

কিন্তু মনিমা জায়ান বাবা,,,,,
চাচা কথাটা শেষ করার আগেই, কেউ একজন এসে বললো,কে এসেছে চাচা? আমি তাকিয়ে দেখি,ঘসেটি বেগম!! মানে আমাকে ধমক দেওয়া ঐ দিনের সেই মহিলা পুলিশ নিলীমা নিলা।

“”উনি উনার স্যারের বাসায় আসতেই পারেন, এটা কোন ব্যাপার না”। “কিন্তু ব্যাপার হলো, উনাকে দেখে মনে হচ্ছে, উনি এ বাসার গৃহিণী। শাড়ি পরে আছেন, এবং শাড়ি টা কোমরে এমন ভাবে গুঁজে রেখেছেন”।যে কেউ দেখলে বলবে পাক্কা গৃহিণী উনি।আরো একটা বিষয় খেয়াল করলাম, আমার জন্য কাপবোর্ডে রাখা শাড়ি থেকে উনি একটা শাড়ি পড়েছেন”।

উনাকে এখানে এরকম অবস্থায় দেখে যে কেউ ই অবাক হবে। কি হচ্ছে এসব কিছুই বুঝতে পারছি না।

ফাবু ফিসফিস করে বললো,নাজু উনি কে?ফাবুর কথার উত্তর না দিয়ে,ঘসেটি বেগম কে বললাম, আপনি এখানে?

ঘসেটি বেগম বললেন, কেন জায়ান তোমাকে কিছু বলেনি? আমি বললাম, কি বলবে? তখন উনি বললেন, আমাদের বিয়ে,,,, কথাটা শেষ না করেই, চাচা কে উদ্দেশ্য করে বললেন, চাচা একটু দেখুন তো তরকারিটা মনে হয় পুরে যাচ্ছে।

ঘসেটি বেগমের কথা শুনে চাচা বললেন,জ্বি,ম্যাডাম আমি দেখছি।এই বলে চাচা কিচেনে চলে গেলেন।

চাচা চলে যেতেই,ঘসেটি বেগম বললেন, কি যেন বলছিলাম?ও হ্যা, আমি আর জায়ান বিয়ে করেছি আজকে এক সপ্তাহ হলো। তোমাকে এতো বড় একটা খবর জায়ান জানালো না, খুব খারাপ কাজ করেছে জায়ান। আজকে জায়ান বাসায় আসুক ওকে অনেক বকে দিব।

ঘসেটি বেগমের কথা শুনে আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কি বলছেন উনি এসব? উনার মাথা ঠিক আছে?

কোন রকমে বললাম, আপনি আমার সাথে মজা করছেন তাই না?

উনি বললেন, আমি তোমার সাথে মজা করতে যাবো কেন? তোমার সাথে কি আমার মজা করার সম্পর্ক?

তখন ফাবু বললো, আচ্ছা জায়ান মুস্তাফি সাহেব কোথায়, আমরা উনার সাথে কথা বলবো। আপনি ডাকুন উনাকে,,
ফাবুর কথার জবাবে,ঘসেটি বেগম বললেন, জায়ান বাসায় নেই।ও একটা কাজে বাহিরে গিয়েছে।ফাবু বললো আচ্ছা ঠিক আছে আমরা উনার জন্য অপেক্ষা করছি।

আমি বললাম, তার কোন দরকার নেই ফাবু।চল যাই। তখন ঘসেটি বেগম বলে উঠেন,সেকি চলে যাবে কেন?বসো, জায়ান আসলে কথা বলো ওর সাথে। আমি তখন বললাম, না,আর কোন কথা নেই ওনার সাথে।

ফাবু চল,,,
এই বলে হাটা শুরু করলাম।
গাড়িতে,ফাবু অনেক কথা বললো। কিন্তু আমি শুধু নির্বাক হয়ে র‌ইলাম।

বাসায় পৌঁছে,কারো সাথে কথা বললাম না। দরজা বন্ধ করে বসে রইলাম। আমার কষ্ট হচ্ছে ঠিক আছে কিন্তু অন্যান্য মেয়েদের মত কেঁদে কেটে বাসাবো না আমি। কষ্টের চেয়ে রাগের পরিমাণ টাই বেশি হচ্ছে। হিটলার কে হাতের কাছে পেলে বুঝিয়ে দিতাম, আমার সাথে নাটক করার মানে। আমি উনাকে কখনোই ক্ষমা করবো না কখনোই না।

এরমধ্যে আম্মু আর আপু বেশ কয়েক বার খাবার খাওয়ার জন্য ডেকে গেছে। কিন্তু আমার একদম ইচ্ছে করছে না গিয়ে খাবার খেতে।তাই রুমে বসে বসে চকলেট আর কন্টিনারে রাখা বিস্কেট খাচ্ছি। কোন অমানুষের জন্য আমি নিজেকে কষ্ট দিব এরকম বোকা মেয়ে আমি ন‌ই।

মাঝে মাঝে এফবিতে, মেয়েদের ইমোশনাল পোষ্ট দেখে, ইচ্ছে করে ঐ মেয়ে গুলো পিটাই।আরে জীবনটা তো তোর নিজের,অন্যেন জন্য কেন নিজের জীবন নষ্ট করবি?মানছি তোকে কেউ ধোঁকা দিয়েছে বা অনেক লাভ করতি।তার জন্য সাময়িক কিছু দিন কষ্ট পাবি তাই বলে, সারাজীবন এর জন্য কষ্ট ভয়ে বেরানোর কোন মানে হয় না।

_________

বেশ কয়েক দিন কেটে যায়,,
দুপুরে ঘুমিয়ে আছি, তাঁবু এসে বললো আম্মু উতো,,, আমার এখন একদম উঠতে ইচ্ছে করছে না তাই, তাঁবু কে বললাম আম্মু আমি পরে উঠবো তুমি এখন যাও। কিন্তু ও আমাকে না উঠিয়ে যাবে না ‌।তাই উচ্চ স্বরে বললাম, তাঁবু যাও বলছি।

আমার কথায় ছোট্ট তাঁবু খুব কষ্ট পেলো। দৌড়ে গিয়ে ওর আম্মু জড়িয়ে সেই কি কান্না। তাঁবুর কান্না দেখে, আপু এসে বললো নাজিফা তোর কি হয়েছে বল তো। আমি খেয়াল করছি, তুই সবসময় কেমন যেন মনমরা হয়ে থাকছিস। তুই তো এরকম ছিলি না, কি হয়েছে বলবি না আমাকে?

আমি বললাম, আমার কিছু হয়নি।
মিথ্যা বলছিস কেন? আমার কাছ থেকে কখনো কিছু লুকিয়ে রাখিস নি, কি এমন হয়েছে যে এখন লুকাচ্ছিস?

তখন আম্মু রুমে আসলো। আম্মু কে দেখে বললাম, আম্মু তুমি সেদিন কোন ছেলের কথা যেন বললে? তাদের আসতে বলো, আমি বিয়ে করবো। আম্মু অবাক হয়ে বললো,ব্যাপার কি বল তো ঐদিন না বললি বিয়ে করতে চাস না। আজকে কি এমন হলো,যে এখন বলছিস বিয়ে করবি।

আমি রেগে গিয়ে বললাম, সমস্যা কি তোমাদের? যখন বিয়ে করবো না বলেছি তখন তোমাদের সমস্যা, এখন যখন বললাম বিয়ে করবো, এতেও তোমাদের সমস্যা। আম্মু বললো এর জন্য এভাবে রেগে যাওয়ার কি আছে? হঠাৎ ডিসিশন চেঞ্জ করলি তাই জিজ্ঞাসা করলাম। আমি তোর মামা কে বলছি, ছেলে কে নিয়ে আসার জন্য।

আম্মু চলে যেতেই আপু জেড়া শুরু করে দিলো। আমি কেন এরকম ডিশিসন নিলাম,,,,,

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here