#সিনেমাটিক
#পর্ব-০৮
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
আম্মু চলে যেতেই আপু জেড়া শুরু করে দিলো। আমি কেন এরকম ডিসিশন নিলাম,,,,,
আপু কে সবটা বললাম কি হয়েছে, আপু সবটুকু শুনে চরম অবাক। বিশ্বাস করতে পারছে না, হিটলার এরকম কিছু করতে পারে।
আপু বললো, আমি জায়ান মুস্তাফি সাহেবের সাথে কথা বলবো। উনি এরকম টা কেন করলেন আমি জানতে চাই। শুধু শুধু এরকম করার তো মানে হয় না, উনি নিজেই চেয়েছিলেন তোকে বিয়ে করতে, এমন নয় যে আমরা উনাকে ফোর্স করেছি। তাহলে এতদিন এতো নাটক করার মানে কি?
আমি আপু কে বললাম, আপু বাদ দাও এসব। উনার সাথে কথা বলার কোন প্রয়োজন নেই। আমি চাই তুমি তোমার সব যোগাযোগ মাধ্যম থেকে উনাকে ব্লক করে দাও ব্যাস।
কিন্তু এভাবেই উনাকে ছেড়ে দিবি?তোর কষ্ট হচ্ছে না? আপুর কথা শুনে বললাম, তুমি খুব ভালো করে জানো,অন্যান মেয়েদের মত আমি এতো ইমোশনাল নই যে, একটা প্রতারকের জন্য কেঁদে কেটে বাসাবো। হুম ঠিক বলছিস, একটা প্রতারকের জন্য কেঁদে কেটে বাসানোর কোন মানে হয় না।
আর শোন তোর ভাইয়া কল করে বললো, আমাকে আগামীকাল চলে যেতে। আমার শ্বাশুড়ি মা নাকি অসুস্থ হয়ে পরেছে। আপু চলে যাবে শুনে মন খারাপ হয়ে গেল। তাঁবু কে ছাড়া ভালো লাগে না,ওর আদৌ আদৌ কথা গুলো খুব মিস করি ও চলে গেলে।তাই আপু কে বললাম,আর কিছু দিন থেকে যাও না আপু? না রে,,আর থাকতে পারবো না, তোর কিডন্যাপের অজুহাতে এবার অনেক দিন থাকা হলো, না হয় জানিস ই তো তোর ভাইয়া এখানে বেশি দিন থাকতেই দেয় না। হুম জানি তো ভাইয়া তো তোমাকে চোখে হারায়।
আমার কথা শুনে আপু বললো, এমনি চোখে হারায়। সারাদিন ভার্সিটিতে বসে থাকে। আমি হেসে বললাম, তাহলে কি তুমি চাইছো ভাইয়া শিক্ষকতা ছেড়ে দিয়ে বাসায় বসে থাকুক? না তেমন টা ও নয়। কাজ করবে ঠিক আছে তাই বলে, সারাদিন?মেয়ে টাকে সময় ই দিতে পারে না।
আসলে কি বলো তো,ভাইয়া একজন সৎ লোক।তাই কাজে ফাঁকি দেয় না।আর আমার ভার্সিটির টিচার দের অবস্থা তো বলেছি তোমাকে,ম্যাম গুলার কথা কি বলব, এমনিতেই ক্লাস করাতে চান না তার পরে আবার যখন ক্লাস করাতে আসেন তখন উনাদের সংসারের কথা বার্তা বলেই বেশিরভাগ সময় পার করে দেন। তখন পারি না কিছু বলতে আর না পারি সহিতে।
তাই আপু এগুলো নিয়ে ভাইয়ার সাথে ঝগড়া করো না। তুমি ই বলো টিচার যদি পড়ানো তে ফাঁকি দেয় তাহলে স্টুডেন্ট রা কি শিখবে?
আমার কথা শুনে আপু বললো, আসলে এরকম করে কখনো ভাবি আমি। তুই ঠিক বলেছিস নাজিফা। আচ্ছা তুই ভালো করে চিন্তা করে ডিসিশন নিস,ঐ ইন্জিনিয়ার কে বিয়ে করবি কিনা? আমি হেসে বললাম, আগে দেখি তারপরে তো বিয়ে। তাছাড়া, উনাদের ও তো পছন্দ হতে হবে নাকি?
আপু বললো, আমার বোন কে পছন্দ হবে না?তা হতেই পারে না।যদি বাই এনি চান্স পছন্দ না হয় তাহলে, বাংলাদেশের আর কোন মেয়ে কেই পছন্দ হবে না ঐ ইন্জিনিয়ারের।
কোন দিক দিয়ে কম আছে?যে পছন্দ হবে না,,,
আপুর কথা শুনে বললাম, আপু তুমি তোমার বোনের প্রশংসা একটু বেশি করে ফেলছো না? আমি ভাবছি, কোন ছেলে যদি তোমার কাছে আমার প্রশংসা শুনে তাহলে ঐ ছেলে আমাকে না দেখেই পাগল হয়ে যাবে,হা হা হা,,,,
আপু বললো,তুই হাসছিস? আমি কি এমন বাড়িয়ে বলছি বল তো। তুই কিন্তু সব দিক থেকে আমার চেয়ে সুন্দরী।যেমন ধর,, লম্বায় আমি পাঁচ ফিট এক আর তুই পাঁচ ফিট তিন। তখন আমি বললাম,আর ফর্সা? তুমি তো দুধে আলতা ফর্সা। আপু বলে,আর তোর গায়ের রং উজ্জ্বল শ্যামবর্ন। তাতে কি?তোর গুলুমোলু ফেইসের সাথে গায়ের রং টা খুব সুন্দর মানিয়েছে।
তুমি যাই বল আপু আমার থেকে তুমি বেশি সুন্দরী।আর এমনি এমনি কি বিসিএস ক্যাডার আমার দুলাভাই হয়েছে বলো?
হুম হয়েছে, আমাকে তো আর কেউ কিডন্যাপ করে নি! তুই সুন্দরী বলেই তো তোকে কিডন্যাপ করলো তাই না?
আমি বললাম,তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করলো কেন?কচুর মাথা সুন্দরী আমি। এই বলে মন টা একটু খারাপ হয়ে গেল। তখন আপু বললো,,,
আসলে কি বল তো, আমাদের সবার সৃষ্টিকর্তা তো একজন ই। আর সৃষ্টিকর্তার পছন্দ অনুযায়ী আমাদের সৃষ্টি করেছেন।তাই যার যার স্থান থেকে আমরা সবাই সুন্দর। এবং যা আছে তা নিয়েই শুকরিয়া আদায় করতে হবে। হুম, তুমি ঠিক কথা বলেছো আপু।
আচ্ছা,যাই রুমে গিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে রাখি। আগামীকাল তারাতাড়ি রওনা হয়ে যাবো ইনশা আল্লাহ। তুই জায়ান মুস্তাফির কথা মনে করে কষ্ট পাস না।
আচ্ছা যাও তুমি।
আপু যাওয়ার পর, আম্মু খাবার খেতে ডাকলো। খাবার খেয়ে এসে দেখি,ফাবু কল করে ছিল।তাই কল ব্যাক করলাম।
__________
বেলকনিতে দারিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি। “পৃথিবীতে কেউ-ই পরিপূর্ণ সুখী নয়, সবার জীবনেই কিছু না কিছু দুঃখ কষ্ট আছেই”।
“আসলে এসব কিছুই আল্লাহ তা’আলার পরীক্ষা। আমরা দুঃখ কষ্ট নিয়েও আল্লাহ তা’আলা কে স্মরণ করি কিনা, তা দেখার জন্যই মূলত আমাদের দুঃখ কষ্ট দিয়ে থাকেন আল্লাহ তা’আলা”।
ফাবু কলে খুব কান্নাকাটি করল, ওর আজকে ডিবর্স হয়ে গেছে। ওর পক্ষ থেকেই ডিবর্স টা দেওয়া হয়েছে।তাও কিছু দিনের মায়ায় জড়িয়ে গিয়েছে, তার উপর এখন সবার কাছে ওর পরিচয় হবে একজন ডিবর্সি মেয়ে।যাকে সমাজ হীন চোখে দেখে।
ফাবুকে কি বলে শান্তনা দিব, তার ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। আসলে সমাজ সবসময় মেয়েদের কেই হীন চোখে দেখে থাকে।কই ছেলেদের তো কখনো বলে না যে ডিবর্সি ছেলে। ছেলেদের ডিবর্স হলে তারা অনায়াসেই আরেকটা বিয়ে করে নিতে পারে কিন্তু মেয়েরা তা পারে না, সেখানেও সমাজ বাঁধা প্রদান করে।
কেন মেয়েদের কেই এসব কষ্ট সহ্য করতে হবে?
নাজিফা,,, নাজিফা কোথায় তুই??
এখানে আম্মু, বেলকনিতে।
আম্মু বেলকনিতে এসে বললো, তোর মামার সাথে কথা হয়েছে। ছেলে সোমবার তোকে দেখতে চাইছে। আম্মু কথার উত্তরে বললাম, ভালো আসতে বলো। আম্মু বলে,উরা এখন বাসায় আসতে চাইছে না, কোন রেস্তোরাঁয় দেখা করতে চাইছে। ওহহ আচ্ছা, কোন রেস্তোরাঁয়?পরে জানাবে বলেছে। আচ্ছা ঠিক আছে, রেস্তোরাঁয় ই মিট করবো, তবে আমি একা যাবো না কিন্তু।
আম্মু বললো,একা জাবি কেন? আমি জাবো সাথে। তবে নামেরা(আপু) গেলে বেশি ভালো হতো কিন্তু নামেরা তো কালকে চলে যাবে। হুম, আপু গেলেই বেশি ভালো হতো।
কি আর করা?
আচ্ছা ফাবিহা কে তো নিতে পারিস?
না আম্মু ওর মন ভালো নেই। বলেছিলাম না ওর ডিবর্স হয়ে যেতে পারে? আজকে ওর ডিবর্স হয়েছে।তাই এখন ও জাবেনা বললে। ফাবুর কথা শুনে আম্মু বললো, আহারে!! কতো ভালো একটা মেয়ে,অথচ ওর কপালে এই লিখা ছিল। ওকে কিছুদিনের জন্য আমাদের বাসায় নিয়ে আসিস, তোর সাথে থাকলে একটু ভালো লাগবে মেয়েটার। আচ্ছা ঠিক আছে আম্মু আমি বলবো আসার জন্য।
আম্মু চলে যেতেই কিছু সময় ফেসবুক স্ক্রল করে ঘুমিয়ে পড়লাম।
এরপরের দিন সকাল দশটার দিকে আপু চলে গেল, বাসাটা পুরো ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। তাঁবু সারা বাসায় হেঁটে বেড়াতো, এখন নেই বলে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।বুড়িটা যাওয়ার সময় একটুও আমার কোলে আসলো না।ওর আম্মু বোরকা পরলে ও আর কারো কাছে যায় না, মনে করে আমরা ওকে রেখে দিব।আর ওর আম্মু ওকে রেখেই চলে যাবে।
তাই জোর করে ও কোলে নিতে পারলাম না।
_____________
আজকে ইঞ্জিনিয়ারের সাথে মিট করার সেই কাঙ্ক্ষিত দিন উপস্থিত হলো।
কি পরে যাবো বুঝতে পারছি না, আম্মু বলে শাড়ি পরে যেতাম। কিন্তু আমার একদম ইচ্ছে করছে না শাড়ি পরতে। অনেকক্ষণ বসে থেকে ইউলো কালারের একটা গাউন সিলেক্ট করলাম পরে যাওয়ার জন্য। গাউন টা পড়ে আয়নায় নিজেকে দেখে, মনে হলো এটা বেশী ব্রাইট কালার তাই এটা পরে যাওয়া যাবে না।
আবার কাপবোর্ড খুলে দেখছি কোন ড্রেস টা পরা যায়?? এখন মনে হচ্ছে আমার ভালো কোন ড্রেস ই নেই,,,,,অথচ এতো বড় একটা কাপবোর্ডেও ড্রেসের যায়গা হয় না।
এদিকে আম্মু অনেক তারা দিচ্ছে, আম্মুর এই লজিক টা বুঝতে পারি না, কোথাও যাওয়ার সময় এতো তাড়াহুড়ো করে কি বলবো! তৈরি হতে সময় তো লাগবেই তাই না। কিন্তু না ঝটপট তৈরি হতে হবে, না হয় লেইট হয়ে যাবে।এই সেই বলতেই থাকে…
অবশেষে,
কফি কালারের একটা গাউন ফাইনালি সিলেক্ট করলাম। এটা পরে খারাপ লাগছে না। সাথে হিজাব পরে নিলাম,আর সাজের মধ্যে, হালকা পিঙ্ক কালারের লিপ বাম আর চোখে কাজল। কাজল টা আম্মুর কথাতেই দেওয়া। না হয় দিতাম না।
তারপর তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরলাম, তাদের ঠিকানা অনুযায়ী।
এক ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে গেলাম।
রেস্তোরাঁ টা বেশ সুন্দর, রেস্তোরাঁ টা দেখে কিছু টা আন্দাজ করা যায়, ইন্জিনিয়ার সাহেবের রুচি ভালোই হবে।
মামা সাথে থাকায়, উনাদের চিনতে অসুবিধা হলো না।
ইন্জিনিয়ার সাহেব আর উনার এক ফুফা এসেছেন। আমি তাদের সামনে যেতেই মামা পরিচয় করিয়ে দিল। ইন্জিনিয়ার সাহেব আমাকে বললেন,হাই আমি মাসুম আহমেদ।
আমি হ্যালো বলে বললাম, নাজিফা শেখ।
বাহ্ খুব সুন্দর নাম তোমার।
উনার প্রথম দেখাতেই তুমি করে সম্বোধন করাটা মোটেও ভালো লাগলো না আমার।
যাই হোক, বড়দের সামনে কিছু তো আর বলতে পারবো না তাই চুপ করে রইলাম।
সবার পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার করা হলো, তো আমি অর্ডার করলাম লাচ্ছি। আমার দেখাদেখি, মাসুম সাহেবের ফুফা বললেন উনিও লাচ্ছি খাবেন।
তো ওয়েটার যখন লাচ্ছি নিয়ে আমাদের টেবিলের দিকে আসতেছে তখন মাসুম সাহেবের ফুফা বলে উঠেন, এই গুলান কি লাচ্ছি!ঐ যে গেলাসে সাদা সাদা??
উনার কথা শুনে আমি হাসি চেপে রাখাতে পারলাম না,তাই ফিক করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে আম্মু আমাকে চোখ রাঙালো…..
#চলবে….