#সিনেমাটিক
#পর্ব-০৯(সারপ্রাইজ পর্ব)
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
উনার কথা শুনে আমি হাসি চেপে রাখাতে পারলাম না,তাই ফিক করে হেসে উঠলাম। আমার হাসি দেখে আম্মু আমাকে চোখ রাঙালো…..
সবাই তো আর সব কিছু জানে না,আর সবার কথা বাদই দিলাম আমি নিজেও তো সব খাবার খাইনি বা দেখি ও নি। তাই আমার হাসা উচিৎ হয়নি। নিজের ভুল বুঝতে পেরে বললাম,স্যরি।
তারপর, সবার অর্ডার করা খাবার নিয়ে আসে ওয়েটার। খাবার খাওয়ার পর, মাসুম সাহেবে আমাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। আমি কোন ভার্সিটিতে পড়াশোনা করি, কোন ইয়ার এবং কোন ডিপার্টমেন্টের ছাত্রী।আর অনেক রকম প্রশ্ন করলেন এবং আমাকে ও বললেন উনাকে প্রশ্ন করার জন্য। আমি কিছুই খুঁজে পেলাম না উনাকে প্রশ্ন করার তাই চুপ করেই রইলাম।
তবে আম্মু এটা ওটা জিজ্ঞাসা করেছে।
আরও কিছু কথার পর আজকের মতো বিদায় নিয়ে, বাসায় চলে আসলাম আমি আর আম্মু।ও হ্যা মাসুম সাহেবের ফুফা বলেছেন, উনাদের বাসা থেকে কয়েক জন আসবেন আমাকে দেখার জন্য তবে এবার আমাদের বাসায় আসবেন। আম্মু তো খুশিতে আটখানা হয়ে বলে দিয়েছে উনাদের যেদিন ইচ্ছে হয় সেদিন ই যেন আসে।
বুঝিনা আম্মু আমাকে বাসায় থেকে তারাতে কেন এতো উঠে পড়ে লেগেছে। মনে হয় যেন আমাকে খাওয়ানোর সামর্থ্য নেই তাদের।
এরপরের দিন,
আননোন নাম্বার থেকে কল আসে আমার ফোনে। প্রথম বার রিসিভ করলাম না। তারপর আবার কল আসলো, এবার রিসিভ করলাম।
আসসালামু আলাইকুম।
কে বলছেন?
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
আমি মাসুম আহমেদ। কেমন আছো?
বাব্বাহ এতো দূর? আমার ফোন নাম্বার ও নেওয়া হয়ে গিয়েছে।(মনে মনে বললাম)
হ্যালো! তুমি কি শুনতে পাচ্ছো?
হুম,জ্বি। উনি বললেন, জিজ্ঞাসা করলাম কেমন আছো,উওর তো দিলে না তো?
জ্বি, আলহামদুলিল্লাহ। আপনি কেমন আছেন?
ভালো আছি। তোমার মামার কাছ থেকে তোমার ফোন নাম্বার সংগ্রহ করেছি, কিছু মনে করোনি তো? আমি বললাম, না ঠিক আছে।
উনি বললেন, আসলে একটা ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল। কি বলেন? আমার মা, খালাম্মা আর ফুফু তোমাকে আগামীকাল দেখতে চাইছেন।
আমি বললাম, ঠিক আছে আসতে বলুন প্রবলেম নেই।
মাসুম সাহেব বললেন, আসলে প্রবলেম হচ্ছে আমার খালাম্মা কে নিয়ে। অবাক হয়ে বললাম, খালাম্মা কে নিয়ে মানে? আসলে উনি একটু সেকেলের মানুষ তো,তাই অনেক ভুলভ্রান্তি ধরবে তোমার।প্লিজ তুমি কিছু মনে করো না,,
মাসুম সাহেবের কথা শুনে এখন আমার রিতিমত ভয় হচ্ছে, নিশ্চয়ই মহিলা অনেক ডেঞ্জারেস হবে। না হয় এভাবে বলতেন না।
____________
বসে আছি আমি,
পাত্র পক্ষ মানে মাসুম সাহেবের মা, খালাম্মা,ফুফু আর একটা মেয়ে বয়স হয়তো আঠারো কি উনিশ হবে। সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার পর জানলাম মেয়ে টা মাসুম সাহেবের খালাতো বোন রুহি। বেশ মিষ্টি মেয়ে টা। তবে আসা অব্দি চুপচাপ বসে আছে, কোন কথা বলেনি।
আর এদিকে আমি তাদের সামনে আসার পর থেকে, একটার পর একটা প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন মাসুম সাহেবের খালাম্মা আর ফুফু। তবে মাসুম সাহেবের মা তেমন কিছু জিজ্ঞাসা করছেন না। উনাকে দেখে যত দূর বুঝতে পারলাম খুবই সহজ সরল একজন মানুষ।
মাসুম সাহেবের ফুফু আমাকে বললেন, তুমি রানতে পারোনি ? আমি বললাম জ্বি কিছু কিছু পারি। তা কি কি পারো শুনি তো? আমি বললাম,ভাত ডিম,ডাল,,,,আর একটু ভেবে বললাম,আর মিল্ক এগুলো পারি রান্না করতে।
আমার কথা শুনে সবাই তাজ্জব বনে গেল,আর আম্মু অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বুঝলাম না কি এমন বললাম,,,
আর মাসুম সাহেবের ফুফু বললেন, তুমি দেহি কিছুই পারো না। রানদন খাওন হইলো গিয়া নিজের কাম।রানতে না পারলে মাইয়া মানুষের কোন দাম নাই।
আম্মু তখন বললো,ভাই আপনি চিন্তা করবেন না,ও আসতে আসতে সব সিখে নিবে।
উনি আবার বললেন, এত বড় মাইয়া রানতে পারে না।এইডা কোন কথা হইলো? রুহি কে দেখিয়ে বললেন, আমার মাইয়ায় তো সব রানতে পারে,ওর তে ছোড হইয়া। তারপর আবার আম্মু কে বললেন,সব দোষ আন্নের বুঝঝেন।আদর কইরা মাইয়ারে রানতে দেন নাই।
তখন আম্মু বললো, না আপা অনেক বলেছি রান্না টা শিখার জন্য। কিন্তু ও নিজেই শিখে নাই। আপনি কোন চিন্তা করবেন না, আমি ওকে সব শিখিয়ে দেব। তখন মাসুম সাহেবের ফুফু বললেন, এতো দিন পারলেন এহন সব শিখায় ফেলবেন কেমনে? মাসুম সাহেবের মা বললেন,মনোরা তুই চুপ করবি? আমার বাসায় কি কাজের লোকের অভাব আছে নাকি যে উরেই রান্না করতে হবে। দরকার পরলে মাসুম কে বলে আরো কাজের লোক আনমু।
আফা তুই ছেলের বউ রে এতো মাথায় তুলিস না,দেখবি পরে আর নামাইতে পারবি না।
আমি মনে মনে এই মহিলা কে ইচ্ছে মতো বকে যাচ্ছি।কি সাংঘাতিক মহিলা রে বাবা। আমি এখানে কিছু তেই বিয়ে করবো না, এই মহিলা না আমার জীবনের তের টা বাজিয়ে দিবে।
অতঃপর দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে তার পর উনারা গেলেন।
উনারা চলে যেতেই, আম্মু কে বললাম, আমি এখানে বিয়ে করবো না।আম্মু বলে কেন করবি না? এতো কিছুর পরেও তুমি জিজ্ঞাসা করছো? শুনলে না ঐ মহিলার কথা। কি সাংঘাতিক মহিলা, বাপের জন্মে এই প্রথম দেখলাম এরকম মহিলা।
ভুল কিছু কি বলেছেন উনি?
আম্মুর কথা শুনে রেগে বললাম কি বলছো আম্মু? তুমি ঐ মহিলার কথা গুলো ঠিক বলছো? তাহলে কি? কতো বার বলেছিলাম রান্না টা শিখে ফেল। আমার কথা যদি একটু শুনতি তাহলে আজকে এই কথা গুলো শুনতে হতো? তোর সাথে সাথে আমাকে ও শুনতে হলো।
তুমি যাই বল না কেন আম্মু, আমি এখানে বিয়ে করছি না ব্যাস। আমার কথা কে আম্মু ব্যাঙ্গ করে বললো, তুই যাই বলিস না কেন তোর বিয়ে এখানেই হবে ব্যাস। আম্মু,,,,,,,
এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?
তুমি তোমার মেয়ে কে এভাবে বিপদের মুখে ঠেলে দিতে চাইছো? আম্মু বললো আমি ভেবে চিন্তেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ছেলের খালা কোন ওদের বাসায় সারাজীবন পরে থাকবে না।
আম্মুর কথা শুনে বললাম, সারাজীবন না থাকলে ও যখন আসবে তখন সারাজীবনের শোধ তুলে নিবে,যেই মহিলা। ভালো করে চিনা হয়ে গিয়েছে আমার।
সবশেষে বিয়েটা ঠিক হয়েই গেল। আব্বু আর ভাইয়া খোঁজ খবর নিয়ে দেখেছে ছেলে ভালো।তাই আমার কথা তারা শুনলোই না,তারা দেখতে আসার তিন দিন পর, মাসুম সাহেব উনার বাবা চাচা আর ফুফা এসে বিয়ের ডেইট ফিক্স করে গিয়েছেন, আগামী দশ দিন পর শুক্রবার।
এখন মাসুম সাহেব দিনে বেশ কয়েক বার কল করেন আমাকে।আর আজকে বলেছেন আগামীকাল উনার সাথে শপিং মলে যেতে। আম্মু কে বলতেই আম্মু বলল বেশ তো বলেছে যখন তখন যাবি।
আপু বিয়ের চার দিন আগে আসবে বলেছে। ভাইয়া নাকি ঐ সময় নাকি ভাইয়া ছুটি নিবেন তো ভাইয়ার সাথেই আসবে,তাই আর জোর করিনি।
রাতে ঘুমানোর সময় হিটলারের কথা খুব মনে পড়ছে। আমি এখন যেন বিশ্বাস করতে পারছি না যে উনি এরকম নাটক বাজ মানুষ,যাই হোক বিয়ে করে হয়তো সুখেই আছেন উনি।
এরপরের দিন,,,,
কাজী অফিসে বসে আছি আমি। আর পাশে বসে আছেন এস আই জায়ান মুস্তাফি আর ফাবু কে গ্রেফতার করে আছেন কয়েক জন পুলিশ। কাজী সাহেব বার বার কবুল বলার জন্য তারা দিচ্ছেন। কিন্তু আমি কিছুতেই কবুল শব্দ টা উচ্চারণ করতে পারছি না।
আমি কবুল বলছি না বলে, পুলিশ গুলো বললেন, আমরা কি আমাদের কাজ করবো মিস নাজিফা শেখ?
তখন আমার টনক নড়ল,,,
আমার যে আর কোন পথ খোলা নেই, কবুল তো বলতেই হবে।তাই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললাম কবুল।আর আমার পাশে বসে থাকা ব্যাক্তিটি অনায়াসেই বলে দিলেন কবুল। জানিনা কোন জন্মের প্রতিশোধ নিতে উনি এরকম করলেন আমার সাথে। আবার কোন নাটকে মেতে উঠেছেন তা উনিই জানেন।
ফ্লাসব্যাক,,,,,
মাসুম সাহেবের সাথে শপিং মলে গিয়েছি, তখন ফাবু কল করে। আমি রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ওর কান্না শুনে বিচলিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম ফাবু তোর কি হয়েছে? এভাবে কান্না করছিস কেন।
তারপর ফাবু যা বললো, আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিনা,,,,
ফাবু কান্না করতে করতে বললো,নাজু আমাকে কিছু পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ওরা বলছে আমি নাকি নিষিদ্ধ পল্লী তে ব্যবসায় করে বেরাই।তাই আমাকে গ্রেফতার করেছে। নাজু তুই এসে বল না ওদের আমি এসব কিছুই করিনি।
ফাবু্র কথা শুনে বললাম, তুই এখন কোথায় আমাকে ঠিকানা বল আমি এক্ষুনি আসছি।ফাবু ঠিকানা দিতেই,তারাহুড়ো করে শপিং মল থেকে বের হয়ে চলে আসি। মাসুম সাহেব কলে কথা বলছিলেন বলে আমাকে খেয়াল করেন নি।
ফাবুর দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী এসে দেখি এটা কাজী অফিস। তারপর এস আই জায়ান মুস্তাফির বিয়ের প্রস্তাব এবং বিয়ে করলে ফাবু কে ছেড়ে দিবেন শুনে আমার আর বুঝতে বাকি রইল না যে এসব কিছুই উনার সাজানো ছিল।
পুলিশ বলে উনি তার সুযোগ নিলেন।
বিয়ে শেষে ফাবু কে ছেড়ে দেওয়া হলো।ফাবু অনেক কান্নাকাটি করলো আমার জন্য,আর বার বার নিজেকে দায়ি মনে করলো আমার এই অবস্থার জন্য।
কিন্তু আমি তো জানি,ফাবু তো শুধু গুটি ছিল এখানে,,,,,
#চলবে…….