পরী পর্বঃ২য়

0
690

পরী পর্বঃ২য়
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা

.
ক্রমেই পায়ের ব্যাথা বেড়েই যাচ্ছে। হাটতে পারছে না সায়েম। খুব কষ্ট হচ্ছে। এরইমধ্য বৃষ্টির ফোটা পরতে আরম্ভ করলো। কোনো রকমে খুড়িয়ে খুড়িয়ে বাড়ি অবদি পৌঁছাতেই কলিংবেলে চাপ দিতেই বিদুৎটা চলে গিয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়। প্রত্যাশা কলিংবেলের আওয়াজ শুনেই দৌড়ে সিড়ি অবদি আসতেই বিদুৎটা চলে গিয়েছে। এখন এই অন্ধকারে এগোবে কি করে। মোবাইল ফোন আর মোমবাতিটাও তো বেড রুমে রেখে এসেছে।খুব ভয় করছে এই অন্ধকারে। সায়েম এবার জোরে জোরে দরজা ঢাক্কাতে শুরু করলো। অন্ধকারেই প্রত্যাশা সিড়ি বেয়ে এক পা এক পা করে নিচে নামছে। নিচে নেমে হাতড়ে হাতড়ে এটা ওটা আসবাবপত্রের সাথে বারি খেয়ে কোনো রকমে দরজার কাছে গিয়ে দরজাটা খুলে দিলো। বাহিরে চাঁদের আলো আর বিদুৎ চমকানোর আলোয় সায়েমকে দেখা যাচ্ছে। বৃষ্টি হচ্ছে। বাতাসে বৃষ্টির ঝাপটা এসে প্রত্যাশার মুখে লাগলো। সায়েমকে দেখা মাত্রই প্রত্যাশা এগিয়ে গিয়ে ওকে জরিয়ে ধরলো। বৃষ্টিতে ভিজে গেছে সায়েম। তবুও ওর শরীর খুব বেশি গরম হয়ে আছে। সায়েমও প্রত্যাশাকে জরিয়ে নেয়।
.
বিদুৎ চলে আসলো। সায়েমের বুক থেকে মাথা তুলে প্রত্যাশা বলে উঠল, তুমি তো ভিজে গেছো দেখছি। শরীরটাও তো গরমই লাগছে। ইস আবার জ্বর না এসে যায়। চলো চলো ভিতরে চলো।
সায়েম খুড়িয়ে খুড়িয়ে ভেতরে আসতেই প্রত্যাশা খেয়াল করলো সায়েম খালি পায়ে আর সেখান থেকে রক্ত ঝরছে। সাথে সাথে প্রত্যাশা ভয় পেয়ে আঁতকে উঠে বলে উঠল, একি তোমার পায়ে কি হয়েছে! কি করে কাটলো? অনেক তো রক্ত বের হচ্ছে। দেখি দেখি হে খোদা!
প্রত্যাশা সায়েমের পা দেখতে নিচু হতেই সায়েম কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলো। কিন্তু পারলো না। তার আগেই সায়েম অচেতন হয়ে প্রত্যাশার গায়ের ওপর পরে গেল। প্রত্যাশা সায়েমকে ধরে ডেকেই যাচ্ছে৷
– সায়েম! সায়েম কি হলো তোমার? ইস জ্বরে তো মনে হয় গা পুরে যাচ্ছে। এই অবস্থায় আমি একে একা রুমে নিয়ে যাবোই বা কি করে। খোদা আমার শক্তি দাও।
.
প্রত্যাশা দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে সায়েমকে নিজের কাধের ওপর ভর দিয়ে এনে শোফায় শুয়ে দিলো। তারপর উপরে গিয়ে সায়েমের দুটো শুকনো কাপড় আর টাওয়েল নিয়ে আসে। সায়েমের ভেজা শরীর মুছে দিয়ে শার্টটা খুলে দিয়ে শুকনো শার্ট পরিয়ে দিলো। পা দুটো ভালোভাবে ধুয়ে দিয়ে রক্ত বন্ধ হওয়ার জন্য ঔষধ লাগিয়ে দিলো। কিছুক্ষন মাথায় জলপট্টি দেবার পর জ্বরটা কমে আসে। শোফায় বোসে প্রত্যাশা সায়েমের মাথাটা নিজের কোলে নিয়েই ওভাবে ঘুমিয়ে যায়।
.
ঘুম ভেঙে সকাল বেলা নিজেকে শোফায় আবিষ্কার করলো সায়েম। আশেপাশে তাকিয়ে প্রত্যাশাকে দেখতে না পেয়ে শোফা থেকে উঠে বসলো। পা টা ফ্লোরে রাখতেই প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো। তারপরই কাল রাতের ঘটনা মনে পড়ে যায় । কিন্তু কিভাবে তার পা দুটো কাটলো কিছুতেই তা বুঝতে পারছে না সায়েম। রান্না ঘর থেকে বের হতেই সায়েমকে উঠে বসে থাকতে দেখে এদিকে এগিয়ে আসে প্রত্যাশা।
– তুমি উঠে গেছো। এখন কেমন লাগছে?
প্রত্যাশার কথায় সায়েমের ভাবনায় ছেদ পরলো। অবাক হয়ে পাশ ফিরে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল, কি হয়েছিল আমার?
– কাল রাতে তোমার অনেক জ্বর ছিলো। আর পা দুটো এভাবে কি করে কাটলো?
.
সায়েম এবার নিজের পায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, আমি জানিনা কি করে কাটলো। হেটে আসছিলাম হঠাৎ করেই এমন হয়েছে।
সায়েম উঠে দাড়িয়ে হাটতেই পরে যাচ্ছিলো। প্রত্যাশা সায়েমকে ধরে ধরে হেটে নিয়ে যায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করিয়ে উপরে বেড রুমে নিয়ে গিয়ে শুয়ে দিলো। আজকে আর অফিস যেতে পারলো না সায়েম। পায়ে খুব বেশি ব্যাথা।
.
প্রত্যাশা রেডি হয়ে সায়েমের কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সায়েম ঘুমিয়ে গেছে। পায়ের অবস্থা বেশি খারাপ দেখে বাড়িতেই ডাক্তার নিয়ে আসতে বাহিরে বের হয়ে গেল।
বেলা দুপুর ১২ টা বেজে গেছে। জায়গা খুবই নির্জন হয়ে আছে। সূর্য এখন সোজা মাথার ওপর। সায়েম বাড়িতে একা রয়েছে। বেডরুমের জানালা খোলা। জানালা দিয়ে রোদ ভিতরে আসছে। চারিদিকে নিরবতা। বাহিরে বাতাস বইছে।
.
সায়েম ঘুমিয়ে রয়েছে। পুরো বাড়ি ফাকা। দুপুরবেলা এমন নির্জনতাতেও ভয় করে। রুমের ভিতর ফ্যান ঘুরছে। হঠাৎ মেঝেতে একটা ছায়া দেখা গেল। ছায়াটি সায়েমের বেডরুমের জানালা দিয়ে আসছে। মেঝেতে যেখানে রোদ পরেছে ওখানটায় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে একটা মেয়ের ছায়া। তার খোলা চুল গুলো বাতাসে হালকা উড়ছে। ছায়াটি আস্তে আস্তে রুমের মাঝখানে চলে এলো। রুমটি হঠাৎ করেই মাত্রাতিরিক্ত গরম হতে থাকে। ঘেমে যচ্ছে সায়েম।
কিছুক্ষণের মধ্যেই রুমের গরম ভাবটি চলে গেল। রুমের অবস্থা আবার সাভাবাবিক অবস্থায় ফিরে এলো। ছায়াটি এবার সায়েমের পায়ের কাছে চলে আসে। সায়েমের পায়ের ওপর ছায়াটি পরলো। স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে পায়ের তলায় হাতের ছায়া পরেছে। একটু নরেচরে উঠল সায়েম কিন্তু ঘুম ভাঙলো না। মনে হচ্ছে কেউ যেন এক দৃষ্টিতে সায়েমের দিকে চেয়ে আছে। ছায়াটি এবার সায়েমের মাথার কাছে চলে এলো। মৃদু স্বরে কিছুটা হাসির আওয়াজ শোনা গেল। সায়েম ঘুমিয়ে আছে। ছায়াটি এবার সায়েমের কপালের ওপর পরতেই ধক করে জেগে উঠল সায়েম।
.
চোখ খুলে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেল না। শোয়া থেকে উঠে বসে কপালের ওপর পরে থাকা চুল গুলো ঠিক করে নিলো। আচমকা বিছানা থেকে নামতেই খেয়াল হলো পায়ে কোনো ব্যাথা নেই। পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো পায়ে কোনো ক্ষত চিহ্নও নেই। পা তো পুরোপুরি ভালো হয়ে গেছে। কিন্তু এটা হলো কি করে। কয়েক ঘন্টা আগেও তো ক্ষত চিহ্ন ছিল। এতো তারাতারি তো এভাবে সারার কথা নয়। সায়েমের মাথা কাজ করছে না। এসব হলো কিভাবে।
.
এসব ভাবতে ভাবতে মাথাটা ধরে আসলো। তবুও উত্তর খুঁজে পেল না। কফি খাওয়ার জন্য নিচে এসে রান্নাঘরে ঢুকে কফি বানিয়ে নিলো। কফিতে চুমুক দিতে দিতে আবারও ভাবতে লাগলো সায়েম। হঠাৎ রুমের ভিতর শব্দ হওয়ায় চমকে উঠল সায়েম। আশেপাশে তাকিয়ে বলে উঠল,
– কে…কে?
রান্নাঘরের পাশের দেয়াল থেকে রেনু বের হয়ে বললো, ভাইজান আমি! আইয়্যা পরছি। আপা কইলো আপনে বাড়িত অসুস্থ। একলা আছেন৷ তাই আজকাই আইতে কইলো।
সায়েম এবার একটা দম নিয়ে বললো, ওহ তুই! আমি তো ভয় পেয়ে গেছিলাম।
– ক্যান ভাইজান। আপনের সামনে দিয়াই তো গেলাম। দেহেন নাই? আপনারে কয়েকবার ডাকলাম। আপনি কি জানি ভাবতাছেন এহা এহা।
– ও আচ্ছা। যা কাজ কর।
.
সায়েম বুঝতে পারছেনা কি হচ্ছে এসব। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ এভাবে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিল। কেউ ডাকলেও শুনতে পায় নি। তাই উপরে চলে গেল শাওয়ার নিতে। বোধহয় তার শরীর অতিরিক্ত ক্লান্ত তাই এমনটা হচ্ছে। শাওয়ার নিতে গিয়ে মনে হলো বাথরুমের ভিতর কেউ তার ভেজা শরীরটা জরিয়ে ধরছে। কিন্ত বাথরুমে তো সে ছাড়া আর কেউ নেই। সায়েম বেশি করে নাক মুখ ভিজিয়ে মাথায় পানি দিতে থাকে। হয়তো তার শরীরটাই খারাপ তাই এমন লাগছে।
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here