সিনেমাটিক #পর্ব–১১

0
416

#সিনেমাটিক
#পর্ব–১১
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই দেখি হিটলার আমার পা দুটো কে কোলবালিশ বানিয়ে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। উঠে পা ছাড়াতে অনেক চেষ্টা করছি কিন্তু হিটলার কিছুতেই পা ছাড়ছেন না।আর টেনে নিয়ে উনার বোকের সাথে মিশিয়ে নিলেন……

এই আমার পা ছারুন বলছি।
কোন হেলদোল ই দেখছি না, হিটলার নিজের মতো করেই ঘুমিয়ে যাচ্ছে।হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছি তাও ছাড়ছে না, ঘুমের মধ্যে মানুষের এতো শক্তি থাকে তা আগে কখনও দেখেনি। বজ্জাত হিটলার একটা,এ আসলেই একটা হিটলার।

আর সহ্য করতে না পেরে, পাশে ট্রি টেবিলে রাখা পানির কন্টিনার হাতে নিলাম। ঘুমের মধ্যে থেকেও আমাকে জালানোর মজা এবার বুঝাবো।

যেই ভাবা সেই কাজ,এক লিটার কন্টিনারের অর্ধেক পানি দিলাম ডেলে হিটলারের উপর। সাথে সাথে লাফিয়ে উঠলেন হিটলার।

উনার লাফিয়ে উঠা দেখে হেসে দিলাম আমি।

হিটলার:-এটা কি হলো?
সকাল বেলা কোথায় নতুন ব‌উ মিষ্টি মিষ্টি আদর করে ঘুম ভাঙ্গবে তা না তুমি আমাকে পানি ডেলে দিলে।

হিটলারের কথা শুনে বললাম, আপনার মিষ্টি আদর গুচাবো আমি। এভাবে আমার পা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে ছিলেন কেন? কতোবার বললাম ছাড়ার জন্য,ছারেন নি কেন?

হিটলার:-একটু পা ধরতেই এই অবস্থা?যদি অন্য কিছু করতাম তাহলে?? মনে হয় মহা ভারত অশুদ্ধ হয়ে যেত!

চোখ গুলো ছোট করে ভ্রু কুঁচকে তাকালাম হিটলারের দিকে।

হিটলার:-না মা,,,মানে নতুন ব‌উ
না থাক কিছু না, আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।

এই বলে হিটলার বাথরুমে ঢুকে গেলেন। আমি উঠে গিয়ে বেলকনিতে দারিয়ে সকালের স্নিগ্ধ পরিবেশ উপভোগ করতে লাগলাম। কিছু সময় পর হঠাৎ আমার উপর পানি পরলো, পানিতে পুরাপুরি ভিজে টুইটুম্বর হয়ে গেলাম। পিছনে তাকিয়ে দেখি হিটলার বালতি হাতে দাঁড়িয়ে হাসছেন।

অগ্নি রুপ ধারণ করে বললাম কি করলেন এসব? আমাকে এভাবে ভিজিয়ে দিলেন কেন? উনি আমার কথার উত্তর না দিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। আমার ইচ্ছে করছে এই হিটলার টাকে গলা টিপে ধরি। শুধু শুধু আমাকে এখন এই সকাল বেলা শাওয়ার নিতে হবে।
আর কি করা শাওয়ার নিতে চলে গেলাম বাথরুমে।

বাথরুমে গিয়ে দেখি আয়নার মধ্যে শেম্পু দিয়ে লিখা_”মানুষের উপকার করলেও দোষ”।
কথাটার মানে ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমাকে ভিজিয়ে দিয়ে কি এমন উপকার করলেন হিটলার?? এখানে উপকারের কি হলো??

এসব ভাবতে ভাবতে শাওয়ার নিয়ে বের হলাম। তারপর রুম ছেড়ে বের হলাম,ভাবিরা কিচেনে দেখে ঐ খানে গেলাম। আমাকে দেখে বড় ভাবি বললো, নাজিফা ঘুম কেমন হলো?তার উওরে মেজ ভাবি বললো,ভাবি আপনি ও না সারা রাত ঘুমোতে পারলে তো ঘুম ভালো হবে।
সেজ ভাবির কথা শুনে সবাই কাজের মহিলা সহ সবাই হেসে উঠল।

যাহ বাবা এরা নিজেরাই নিজেদের মতো ভেবে হাসা শুরু করে দিলো।আর এদিকে কিনা হলো উল্টো বাসর (মনে মনে ভাবছি)যাই হোক আমার আর হিটলারের মাঝে যাই হোক না কেন এদের কে জানতে না দেওয়াই ভালো হবে।

“তখন কাজের মহিলা বলে ছোট ব‌উমনি তো তাও গোসল ক‌ইরা রুমের তে বাইরোছে। মেজ ব‌উমনি বিয়ার পরের দিন গোসল না ক‌ইরা কিচেনে আইছিলো ব‌ইলা সবাই কি লজ্জা টাই না দিছিলো”।

মহিলার কথা শেষ হতেই মেজ ভাবি রেগে বললো,রুপোসি তোকে এতো কথা কে বলতে বলেছে? ইদানিং বড্ড বেশি কথা বলিস তুই।এই বলে মেজ ভাবি কিচেন থেকে চলে গেলেন।

আমি ভাবছি, তার জন্য‌ই কি হিটলার আমার সাথে এরকম টা করলেন??

তখন আরিফ চাচা এসে বললেন,মনিমা তুমি কিচেনে এসেছো কেন? নতুন ব‌উ এখন তোমাকে কাজ করতে হবে না।বড় ভাবি ও সাথে বললো, নাজিফা তুমি রুমে যাও আমাদের এইতো হয়ে এসেছে।

আমি বললাম,ভাবি রুমে একা একা ভালো লাগে না। আমাকে কিছু একটা করতে দিন। তখন ভাবি বললো, আচ্ছা এই নাও মাকে চা টা দিয়ে আসো।

ভাবির থেকে চা নিয়ে শ্বাশুড়ি মায়ের রুমের বাহিরে দারিয়ে, দরজায় টোকা দিয়ে বললাম,মা আসবো?

শ্বাশুড়ি মা:-কে? ছোট ব‌উমা। দাঁড়িয়ে আছো কেন? ভিতরে আসো, আমার রুমে আসতে আবার পারমিশন লাগবে নাকি?

মায়ের কথা শুনে ভিতরে গেলাম, তারপর চা টা ট্রি টেবিলের উপর রেখে বললাম,মা আপনার চা‌।
চা রেখে চলে আসতে নিলে, মা বললেন, এখানে বসো ছোট ব‌উমা। মায়ের কথায় উনার পাশে সোফায় বসলাম।

শ্বাশুড়ি মা:-আমি তোমার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি, আমার ছেলে তোমাকে জোর করে বিয়ে করাতে তুমি খুশি ন‌ও।

মায়ের কথা শুনে অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম,আর বললাম মা আপনি সবটা জানেন?

শ্বাশুড়ি মা:-হ্যা, জায়ান আমার থেকে পারমিশন নিয়েই তোমাকে বিয়ে করেছে। কি বলো তো ছেলে টা তোমাকে বড্ড ভালোবাসে।তাই ওর এই আবদার আমি প্রত্যাক্ষান করতে পারিনি।তাই অনুমতি দিয়ে দিয়েছি, তবে এটাও বলেছি তোমার বাবা মায়ের মন যেন জয় করে নেয়।

মায়ের কথা শুনে একটু না অনেক টাই অবাক হলাম।আর বললাম, আমার আব্বু আম্মু নিশ্চ‌ই আমার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে বা পাচ্ছে।এই কষ্ট তো আমি মেনে নিতে পারবো না মা।

শ্বাশুড়ি মা:-আমি জানি মা। তবে দেখ একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। তুমি টেনশান করো না আমি তাদের কে বুঝিয়ে বলবো।
এখন যাও নাস্তা করো গিয়ে, নাস্তা হয়তো তৈরি হয়ে গিয়েছে।

আমি বললাম, আপনি ও আসুন নাস্তা করতে?

শ্বাশুড়ি মা:-ঔষধ খাওয়ার জন্য আমাকে খুব তাড়াতাড়ি খেতে হয়,আর আমি খেয়েছি। তুমি খেতে যাও।

জ্বি আচ্ছা।
এই বলে মায়ের রুম থেকে চলে এলাম।
রুম থেকে বের হতেই, হিটলারের বড় ভাইয়ার মেয়ে তরি এসে বললো, কাকিমা চলো নাস্তা করবে। মেয়ে টা খুবই মিষ্টি, মুচকি হেসে বললাম আচ্ছা চলো।

গিয়ে দেখি সবাই অপেক্ষা করছে আমার জন্য, তখন হিটলার বললো, নাজিফা উনি আমার মেজ ভাই।

আমি তাকিয়ে বললাম, আসসালামু আলাইকুম।

মেজ ভাইয়া:- ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কেমন আছো?
জ্বি, ভাইয়া ভালো। আপনি কেমন আছেন?

মেজ ভাইয়া:-আমিও ভালো আছি।
বসো বসো খেতে বসো।

জ্বি,বসছি।আপনারা খাওয়া শুরু করুন।

সবাই খেতে শুরু করলে, হিটলার বলে বড় ভাবি নাজিফা কে বেশি করে সবজি দিন। তখন ভাবি বলে, আচ্ছা দিচ্ছি।আর এদিকে হিটলার টা মুচকি মুচকি হেসে চলেছে।

হিটলারের কথা শুনে ভাবি সত্যি সত্যি আমাকে সবজি দিতে নিলে, আরিফ চাচা এসে বলেন_বড় ব‌উমা নাজিফা সবজি খায় না।

বড় ভাবি:-তাহলে জায়ান যে বললো নাজিফা কে সবজি দেওয়ার জন্য।ওর কথা শুনেই তো আমি দিতে চাচ্ছিলাম।

আরিফ চাচা:-হা হা হা হা,,,, জায়ান বাবা মজা করছে।মনিমা এসব খায় না বলে।

তারপর চাচা আমাকে চিকেন ফ্রাই আর নান রুটি দেন খেতে।

এর মাঝে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। আমার আর হিটলারের মধ্যে কোন রকম বন্ডিং তৈরি হয়নি। হিটলার প্রতিদিন আমার জন্য, চকলেট আইসক্রিম নিয়ে আসে। প্রথম কয়েক দিন জিদ করে খাইনি এগুলো তাই আইসক্রিম গুলো গলে নষ্ট হয়ে যেত। এখন আর নষ্ট করি না, খাবারের উপর রাগ করে তো আর কোন লাভ নেই তাই আইসক্রিম গুলো খেয়ে নেই তার‌উপর আমার ফেবারিট এগুলো কি করে নষ্ট হতে দেই।

আজকে আমরা তিন জা মিলে শপিংয়ে বের হয়েছি। হিটলার বলে দিয়েছে বোরকা,নিকাব পরে যেন বের হ‌ই। ঠিক করেছিলাম হিটলারের কথা শুনবো না, কিন্তু বড় ভাবি বললো,মা নাকি রাগ করবেন বোরকা নিকাব না পরলে তাই এগুলো পরেই বের হলাম।

প্রথমেই ড্রেসের দোকানে গেলাম, তো ভাবিরা ড্রেস পছন্দ করতে বললেন। আমি লজ্জায় কোন ড্রেস পছন্দ করতে পারছি না।তাই বললাম ভাবিরা আপনারা পছন্দ করলেই হবে। কিন্তু ভাবিরা বললো, আমাকেই পছন্দ করতে হবে। তখন আমি বললাম, আচ্ছা আমরা তিন জন একরকম ড্রেস নিব।

আমার কথা তে দুই ভাবি শায় দিলেন।তো প্রথমে একিই রকম মিষ্টি কালারের শাড়ি নিলাম ভাবিদের পছন্দে। এবার ড্রেস আমার পছন্দে নিবো ।তো কয়েকটি দোকান ঘুরেও একিই রকম তিনটি ড্রেস পাচ্ছি না।সব দোকানিরা বলছে একরকম একিই কালারের ড্রেস তারা আনে না। নিতে হলে ভিন্ন কালারের নিতে হবে।

তাই আমি বললাম, চলুন আরো দোকান দেখে নেই। তখন দোকানিরা বলেন,আফারা পাইবেন না। এগুলো ই নিয়ে নেন, এরকম সুন্দর ড্রেস আর কোথাও পাইবেন না।

দোকানিদের কথা শুনে বললাম, দেখি না পাই কিনা।দেখলে তো আর সমস্যা নেই তাই না।

দোকানি:-আচ্ছা, না পাইলে কিন্তু আমাদের এখান থেকে নিয়েন।

আমরা আর কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম অন্য দোকানে। কয়েকটি দোকানে একিই কথা বললো। তারপর শেষ মেষ একটা দোকানে একিই কালারের তিনটা কুর্তি খুঁজে পেলাম। আমার পছন্দের বেগুনি কালারের কুর্তি গুলো নিলাম।

তারপর আরো কিছু থ্রিপিস এবং কসমেটিকস কিনে, গাড়ির সামনে আসলাম। হেঁটে হেঁটে সবার শপিং করতে করতে পা ব্যাথা হয়ে গিয়েছে তাই ঠিক করলাম, কোন রেস্তোরাঁয় বসে হালকা কিছু খাবো। শপিং ব্যাগ গুলো সব গাড়িতে রেখে দিলাম।

রেস্তোরাঁয় যেতে যেই না পা বাড়ালাম ঠিক তখনি মেজ ভাবি চেঁচিয়ে উঠলেন। ভাবির চেঁচানো শুনে আমি আমার স্থান থেকে কিছু টা সরে গেলাম।সরে যেতেই কারো ছুরির আঘাতে আমার হাত কেটে রক্ত ঝরতে শুরু হলো।

ব্যাথায় আর্তনাদ করে উঠলাম আমি।ভাবিরা দৌড়ে এসে আমার হাত ধরলো, কামরুল ভাই ঘাতক লোকটার পিছনে দৌড়ে যায় কিন্তু তাকে আর ধরতে পারে না। তারপর এসে আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।ডক্টর বলেন অল্পের জন্য বেঁচে গেছি না হয় রগ কেটে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তারপরেও পাঁচটা সেলাই দিতে হয়েছে।আর কিছু মেডিসিন লিখে দিলেন।

মেডিসিন গুলো কিনে তারপর আমরা বাসায় ব্যাক করলাম।

আমার অবস্থা দেখে বাসায় যেন দুঃখের ছায়া নেমে আসে। প্রথমে সবার অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হয় তিন জন কে।

তারপর মায়ের কথায় আমাকে রুমে পাঠানো হয়।আর মায়ের আদেশ খাবার খেয়ে যেন ঔষধ গুলো খেয়ে নেই।

মায়ের কথা মতো আরিফ চাচা রুমে খাবার দিয়ে যান।
হাত ব্যাথা করছে বলে কিছু টা খাবার খেয়ে, ঔষধ খেয়ে নেই সাথে ঘুমের ঔষধ ও খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে গেল।
পাশে তাকিয়ে দেখি হিটলার আমার আহত হাত টা ধরে পাশে বসে,বেডে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছেন……

#চলব…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here