সিনেমাটিক #পর্ব-১৫

0
388

#সিনেমাটিক
#পর্ব-১৫
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

জায়ান আসতেই আমি জায়ান কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, জায়ান আ,,আব্বু…..

জায়ান:-আব্বুর কি হয়েছে বলো? না বললে কি করে বুঝবো।

আব্বুর স্টক করেছে, হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে। এই বলে কাঁদতে শুরু করলাম।

জায়ান:-চলো রেডি হয়ে নাও।

কোথায় যাবো?

জায়ান:-কোথায় আবার? তোমাদের ঐখানে,ওখানের কোন হসপিটালে নিশ্চ‌ই ভর্তি করানো হয়েছে। আচ্ছা এখন চলো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বের হতে হবে।আর তুমি নিচে দাঁড়িয়ে ছিলে কেন?

চাচাদের বাসায় দাওয়াত দিয়েছিল না আমাদের?তো সবাই ওখানে গিয়েছি তখন আপু কল করে বললো আব্বুর কথা। আমি আপুর সাথে কথা বলতে বলতে এখানে চলে এসেছি।

জায়ান:-মাকে বাসায় দেখলাম,মা যায়নি?

না, মায়ের হাঁটুতে ব্যথা করছিল তাই মা যায়নি।
(জায়ানদের বাসার পাশেই চাচার বাসা, দূরত্ব পাঁচ মিনিট ও না)

জায়ান:-আচ্ছা এখন বাসায় চলো।

তারপর মায়ের থেকে অনুমতি নিয়ে,রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে।

গাড়িতে চুপ করে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। খুব কষ্ট হচ্ছে আব্বুর জন্য।

জায়ান:-নাজিফা আব্বুর হঠাৎ স্টক করলো, কিছু নিয়ে কি দুশ্চিন্তা করেছেন?

আপু বললো, আমাদের সাত তলা বিল্ডিং টার নাকি অবৈধ গ্যাস সংযোগ ছিল এতদিন।কিন্তু আব্বু সেটা যানতো না। গতকাল নাকি সরকারি লোক এসে গ্যাস কেটে দিয়েছে এবং দশ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছে। তারপর সব ভাড়াটে রা বলেছে সামনের মাসে বাসা ছেড়ে দিবে। এগুলোর জন্য খুব দুশ্চিন্তা করে আব্বু।

জায়ান:-এতো গুলো আঘাত একসাথে নিতে পারে নি তাই এরকম হয়েছে। তুমি চিন্তা করো না ইনশা আল্লাহ সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। আল্লাহ তা’আলার উপর ভরসা রাখো। আল্লাহ তা’আলা আমাদের জান,মালের ক্ষতি করে আমাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ তা’আলা সব ঠিক করে দিবেন।

জানেন সারাটা জীবন আব্বু বিদেশে কাটিয়ে তীরে তীরে আমাদের এই দুইটা বাড়ি তৈরি করেছে। আব্বু বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠাতো আর আম্মু সেই গুলো দিয়ে, মামা আর চাচাদের সাহায্য নিয়ে বাড়ি গুলো তৈরি করে।
আমি জন্মের পর থেকে ছোট বেলা টা আব্বু কে কাছে পাইনি, আমাদের জন্য‌ই আমাদের ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি দেয় আব্বু। তারপর যখন বাড়ির কাজ গুলো কমপ্লিট হল তখন আম্মু আব্বু কে বলে দেশে নিয়ে আসে।আর আমি তখন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ি।
তারপর থেকে দুতলা বাড়িটা তে আমরা থাকি আর সাত তলা টা ভাড়া দেওয়া হয়।আর সেই ভাড়ার টাকার উপর নির্ভর করে চলছে আমার ফ্যামিলি।

এখন আমাদের কি হবে আপনি বলুন?? এই বলে আবার কাঁদতে শুরু করলাম। তখন জায়ান আমাকে তার বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,,এই পাগলি তোমাদের কি হবে মানে কি হুম? আমরা আছি না, আমার উপর একটু ভরসা রাখো দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন কান্না থামাও বলছি।

কিন্তু আমার কান্না কিছুতেই থামছে না।

জায়ান:-আচ্ছা এখন কি অবস্থা আব্বুর?আর কখন হয় এগুলো?

গতকাল হয়েছে,আর আব্বু স্টক করেছে আজকে এগারোটার দিকে। আপুর সাথে কথা বলার সময় আপু বলেছিল আব্বু কে আইসিও তে রাখা হয়েছে। কাঁদতে কাঁদতেই কথা গুলো বলছি।

জায়ান:-এখন কি অবস্থা তার খবর না নিয়ে তুমি কিনা কান্নাকাটি শুরু করলে? আমাকে তো আপু ব্লক করে রেখেছে তাই কল করতে পারবো না। তুমি কল করো।

জায়ানের কথায় কল করলাম,
আপু রিসিভ করতেই জিজ্ঞাসা করলাম,আপু আব্বুর এখন কি অবস্থা? আব্বু ভালো আছে তো?

আপু:-নাজিফা কান্নাকাটি না করে আব্বুর জন্য দোয়া কর।আর ডক্টর বলেছেন আব্বু এখন বিপদ মুক্ত তবে আর যেন কোন দুশ্চিন্তা না করে সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে বলেছেন।

আলহামদুলিল্লাহ।
আম্মু কি করে? আমি আর জায়ান আসতেছি।

আপু:-আম্মু আর কি করবে সারাক্ষণ কান্নাকাটি করে।তোরা কখন র‌ওনা হয়েছিস? এখন কোথায় আছিস?

প্রায় এক দের ঘন্টা হবে র‌ওনা হয়েছি। এখনো ঢাকাতেই আছি।

আপু:-ওহহ আচ্ছা। তাহলে তো আগামীকাল এসে পৌছাবি ইনশা আল্লাহ। আচ্ছা সাবধানে আসিস, এখন রাখি “আল্লাহ হাফেজ”।

আচ্ছা, “আল্লাহ হাফেজ”।
কল রেখে, জায়ান কে বললাম আব্বু এখন আলহামদুলিল্লাহ সুস্থ। তখন জায়ান বলে, আলহামদুলিল্লাহ। এবার একদম কান্না করবে না।আর চাচাদের বাসায় যে গিয়েছিলে খেয়েছিলে ঠিক মতো?

আমি এখন কিছু খাবো না।
জায়ান:-তোমাক আমি কি জিজ্ঞাসা করলাম আর তুমি কি উওর দিলে?বলো খেয়েছিলে তখন?

খাওয়া শুরু করার আগেই আপু কল করে, তারপর তো আমি চলেই আসি।

জায়ান:-কামরুল ভাই একটা ভালো রেস্তোরাঁ দেখে গাড়ি পার্কিং ক‌ইরেন।

আমি বললাম তো কিছু খাবো না।

জায়ান:-আমি কি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করেছি? তুমি খাবে নাকি খাবে না। কোন কথা না বলে হালকা কিছু খেয়ে নিবে, আমি কিছু শুনতে চাই না।

তারপর,
কামরুল ভাই রেস্তোরাঁয় গাড়ি পার্কিং করলে,ড্রাইভার কামরুল ভাই সহ আমরা তিনজন যাই খাওয়ার জন্য।অগর্তা ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও আমাকে খেতে হয় জায়ানের জন্য।
ফ্রেন্স ফ্রাই আর বার্গার খেয়ে তারপর আবার র‌ওনা দেই।

__________

অতঃপর,,
এরপরের দিন আমরা গিয়ে পৌছাই। প্রথমে আব্বু কে দেখতে হসপিটালে যাই। আব্বুর জ্ঞান ফিরেছে,তাই আপু বললো এখন যেন আমি আর জায়ান আব্বুর সামনে না যাই। কারণ আব্বু আমাদের দেখে হয়তো রেগে যেতে পারে।আর আব্বুর জন্য এখন উত্তেজনা একদম ঠিক হবে না।তাই দূর থেকেই আব্বু কে দেখে বাসায় চলে আসি।

আম্মু প্রথমে অভিমান করে আমার সাথে কথা বলতে চাইনি, তারপর আর আমার সাথে অভিমান করে থাকতে পারেনি।

আম্মু আব্বুর সাথে হসপিটালে আছে।আর আপু আমাদের সাথে বাসায় চলে আসে।

বাসায় এসে আমি আর জায়ান ফ্রেশ হয়ে নিলে আপু আমাদের খাবার খেতে দেয়।আমরা বলে আপুকে সহ আমাদের সাথে খাবার খেতে বসাই।
আর এসে থেকে দেখি তাঁবু ঘুমিয়ে আছে।

খাবার শেষ করে, আমি আর জায়ান দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম কারণ এতো দূরের জার্নি করে এসেছি ঘুমাতে পারিনি তার উপর খুব ক্লান্ত লাগছিল।

কারো কথায় ঘুম ভেঙ্গে গেল,
চোখ খুলে দেখি জায়ান আর তাঁবু কথা বলছে।

জায়ান:-মামুনি তোমার ছোট আম্মু কে বলবে তোমার জন্য একটা ছোট বোন এনে দিতে ঠিক আছে।

তাঁবু:-থোত বোন!(ছোট বোন!)
থোত বোন তি তরে?(ছোট বোন দিয়ে কি করে?)

জায়ান:-ছোট বোন যে তোমার সাথে খেলা করবে তোমাকে আপু বলে ডাকবে।

ওদের দুজনের কথা শুনে আমি হাসতে হাসতে শেষ। আমার হাসির শব্দ শুনতে পেয়ে দুজনে আমার দিকে তাকায়, তারপর তাঁবু দৌড়ে এসে আম্মু বলে জড়িয়ে ধরে আমাকে। তারপর আঙুল দিয়ে জায়ান কে দেখিয়ে বলে আব্বু।
তাঁবুর কথায় বললাম,হুম মামুনি এটা তোমার ছোট আব্বু।

জায়ান:-মামুনি তোমার আম্মু কে বলো ঐ যে তোমাকে বললাম।

ছোট মানুষ তাই ওর ছোট্ট মস্তিষ্ক কাজ করছে না জায়ান কিসের কথা বলছে ওকে।তাই জায়ান বললো,ঐ যে তোমার ছোট বোনের কথাটা,,,

তাঁবু:-আততা থোত বোন।
আম্মু থোত বোন দাও।

তখন জায়ান কে বললাম আপনি ওকে কি শিখাচ্ছেন এগুলো?

জায়ান:- তাঁবুর একটা বোন দরকার বুঝছো। বেচারার একা একা খেলা করতে হয়।তাই তো তাঁবু কে বললাম তাঁবুর ছোট আম্মু কে যেন বলে তাঁবু কে একটা বোন এনে দিতে।

জায়ানের কথা শেষ হতেই তাঁবু আবার বায়না শুরু করে থোত বোন দাও আম্মু থোত বোন দাও।

এদিকে আমি পরে গেলাম মহা বিপদে, এখন আমি কোথায় থেকে তাঁবু কে বোন এনে দেব? তাঁবু তো আর জায়ানের কারসাজি জানে না।

এখন এমন অবস্থা হয়েছে, তাঁবু কেঁদেই দিবে তার থোত বোনের জন্য।আর এদিকে জায়ান ফাজিল টা হেসে চলেছে।তাই তাঁবুর কান্না থামাতে বলে দিলাম আচ্ছা মামুনি তোমাকে বোন এনে দিব আম্মু ঠিক আছে। এটা বলতেই তাঁবু আমাকে পাপ্পি দিয়ে,,,,,
আম্মু থোত বোন দিবে,, বলতে বলতে দৌড়ে ওর আম্মুর কাছে চলে যায়।

তাঁবু চলে যেতেই, জায়ান আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে পরে। তারপর কোমর জড়িয়ে বলে তাঁবু কে কিন্তু কথা দিয়েছ তাঁবুর বোন এনে দিবে।

জায়ানের কথা শুনে বললাম, আপনি কি সত্যি চাইছেন?

জায়ান:-কি??

বুঝতে পেরে আবার জিজ্ঞাসা করছেন কেন? ফাজিল ছেলে একটা।

জায়ান:-হা হা হা হা,,,,

আমার কথা শুনে হাসে জায়ান।
তারপর আমার পেটে চুমু এঁকে দিয়ে বলে, আমি খুব খুব চাই আমার ছোট্ট বেবি এখানে (আমার পেট কে দেখিয়ে)একটু একটু করে বড় হবে।দেবে কি আমাকে সেই সুখ?? জানো তাঁবু তখন আমাকে আব্বু বলে ডাক দেওয়াতে এক অন্য রকম শান্তি অনুভব হয়েছে আমার,যা তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না।

জায়ানের এরকম আবদার আমি ফেলতে পারি না তাই,আমি হুম বলে জায়ানের কপালে কপাল রাখি।

তারপর আজান হতে, জায়ান ফ্রেশ হয়ে মসজিদে নামাজ পড়তে চলে যায় আর বলে যায় কিছু কাজ আছে ফিরতে দেরী হবে আমি যেন দুশ্চিন্তা না করি।

_________

আজকে আঁট দিন পর আব্বু কে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে দেওয়া হয়। আব্বু বাসায় আসতেছে,,,,

আর জায়ান একদিন থেকে চলে যায়, উনার ছুটি নেই বলে, আমাকে কিছুদিন পর এসে নিয়ে যাবেন বলেছেন।

আমি আর আপু সকাল থেকে আমাদের হেল্পিং হেন্ড চুমকি কে দিয়ে সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রেখেছি এবং রান্না বান্না সব কিছু করেছি।

আমি জায়ানের সাথে কলে কথা বলছি তখন চুমকি চেচিয়ে বলে উঠল আফারা আপনারা ক‌ই চাচাজান রে ল‌ইয়া আইছে।

চুমকীর কথা শুনে জায়ান কে বলে কল রেখে দিলাম। এখন ভাবছি আব্বুর সামনে যাবো কিনা??

উপরে দাঁড়িয়ে দেখছি আব্বু কে ভাইয়া আর আপু ধরে এনে সোফায় বসিয়েছে। কিন্তু আমি নিচে যাওয়ার সাহস পাচ্ছি না।

তারপর আম্মু আমাকে দেখতে পেয়ে ডাক দেয়। আম্মুর কথা শুনে আব্বুর কাছে যাই আমি।
কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকি, তখন আব্বু আমাকে হাত দিয়ে ইশারা করে যেতে বলে আব্বুর কাছে।

আমি কাছে গিয়ে কেঁদে দেই,আর বলি আমার উপর এখনো রেগে আছো আব্বু? আমাকে মাফ করে দাও। তখন আব্বু আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বলে আমি যেন কান্না না করি।আর বলে কোন বাবা কি তার মেয়ের সাথে রাগ করে থাকতে পারে বল?

আব্বুর কথায় সবাই খুব খুশি হয়। তখন ভাইয়া এসে বলে বাবা, আমি ব্যাংকের সাথে কথা বলেছি। কয়েক দিনের মধ্যে লোন উঠাতে পারবো। এটা শুনে আমরা একটু আশার আলো দেখতে পেলাম।

এরপরের দিন,,
আব্বুর কাছে নোটিশ আসে, আমাদের সাত তলা বিল্ডিং এ এই মাসের মধ্যেই সরকারি বৈধ ভাবেই গ্যাস সংযোগ দেওয়া হবে।আর জরিমানার সব টাকা পরিশোধ করা হয়েছে, সেই রশিদ ও সাথে দেওয়া।

শুধু তাই নয়, আমাদের কয়েকজন ভাড়াটে কল করে আব্বু কে বলে তারা এখন আর বাসা ছাড়বে না, আব্বুর ছোট জামাই তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই মাসের মধ্যেই গ্যাস আসবে।

সব কিছু শুনে আব্বু তাজ্জব বনে গেল। আব্বুর মনে হচ্ছে যেন সব কিছু মিরাক্কেল ঘটলো…..

#চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here