#সিনেমাটিক
#পর্ব-২০,২১
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
২০
জায়ান হসপিটালে এসে,নাজিফার পরিবারের সদস্যদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়, তবে তারা যাওয়ার আগে সবাই কে বলে দেয় নাজিফা কে যেন বেবির কথা জানানো না হয়,,,,,,
সবাই চলে যেতেই জায়ান নাজিফার কেবিনে ঢুকে আগের ন্যায় টুল টেনে বসে থাকে।আর ভাবে আজকের দিনটা কতো সুন্দর হতো যদি না এরকম কিছু না ঘটতো তাদের সাথে।
সাহারা বেগম জায়ানের জন্য হসপিটালে খাবার পাঠিয়ে দেন কিন্তু জায়ান চাইলে ও খেতে পারে না বার বার নাজিফার শুকনো মুখ টা ভেসে উঠে তার চোখের পাতায়।তাই খাবার খেতে বসেও খাবার গলা দিয়ে নামাতে পারলো না। তাই হাত ধুয়ে খাবার ছেড়ে উঠে গেল।
তারপর আবার নাজিফার হাত ধরে বসে রইল।
________
ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকালাম,শরীলে খুব ব্যাথা অনুভব করছি।তাই উঠে বসার শক্তি টুকুও পাচ্ছি না। চারিদিকে চোখ বুলিয়ে বুঝতে পারলাম আমি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছি।আর বেডের পাশেই জায়ান নামাজ পড়ছে। বুঝলাম ও নিশ্চই তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ছে।প্রায় সময়ই ও রাতের শেষ তৃতীয়াংশে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করে।
নামাজ পড়তে দেখে আমি আর কিছু বললাম না। কারণ নামাজে ব্যাঘাত ঘটবে। চুপ করে তাকিয়ে রইলাম জায়ানের দিকে, জায়ান কে নামাজ পড়া অবস্থায় খুব সুন্দর লাগছে এবং মনে প্রশান্তি অনুভব হচ্ছে।
জায়ানের নামাজ শেষে আমার দিকে তাকাতেই দেখলো আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি। তখন এক প্রকার দৌড়ে আসলো আমার কাছে।
জায়ান:-তোমার সেন্স ফিরেছে আলহামদুলিল্লাহ। আমাকে ডাকলে না কেন? এখন কেমন লাগছে?ডক্টর কে ডাকবো?
কথা গুলো বলতে বলতে জায়ান কেঁদে দিল।তাই অস্পষ্ট কন্ঠেই বললাম তুমি কেঁদো না প্লিজ। এই দেখ আমি একদম ফিট আছি। আমার কথায় জায়ান কান্না বন্ধ করলো না তাই জায়ানের কান্না থামাতে বললাম এই যে মিস্টার কিছুদিন পর বেবির বাবা হবেন অথচ নিজেই বেবিদের মতো কান্না করে যাচ্ছেন লোকে কি বলবে হুম???
অমা একি কাণ্ড এই কথা বলতে ওর কান্না থামার বদলে আরো বেড়ে গেল। আমি পরে গেলাম মহা বিপদে।তাই একটু ভেবে বললাম কান্না থামাতে বলছি না হলে কিন্তু আমি,,
আমার কথা শেষ না হতেই জায়ান কান্না থামিয়ে আলতো ভাবে আমার উপর মাথা রাখলো। তবে আমি বেশ বুঝতে পারছি ও এখনো চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে।
আমি আমার হাত টা ও নাড়াতে পারছি না,যে একটু হাত বুলিয়ে দিব। বেশ কিছুক্ষণ এভাবেই জরিয়ে রইলো আমাকে। আমি আর কিছু বললাম না। তারপর জায়ান মাথা তুলে তাকিয়ে বললো ডক্টর কে ডাকবো?
আমি:-না। তুমি আমার কাছে থাকো তাহলেই হবে।
আমার কথায় জায়ান আর গেল না। আমার কাছেই বসে রইল। তারপর ফজরের আজান হতে জায়ান নামাজ পড়ে নিলো।
দিনের আলো ফুটতেই জায়ান ডক্টর কে ডেকে আনলো ।ডক্টর এসে চ্যাকআব করে মেডিসিন লিখে দিলেন আর বললেন কিছুদিন তরল জাতীয় খাবার খাওয়ার জন্য এবং মেডিসিন গুলো যেন অবশ্যই নিয়মিত নেওয়া হয়।
তখন জায়ান বললো ডক্টর ওর ব্যাথা তো এখনো অনেক আছে তার জন্য,,,,
জায়ানের কথা শেষ হওয়ার আগেই ডক্টর বললেন, আমি এখানে ব্যাথার ইনজেকশন লিখে দিয়েছি। আপনি মেডিসিন গুলো আনলে নার্স ইনজেকশন পুশ করে দিবে।
জায়ান:-আচ্ছা ঠিক আছে ডক্টর আমি মেডিসিন গুলো আনার ব্যবস্থা করছি।
তারপর ডক্টর চলে যাওয়ার পর, জায়ান আমাকে এখানে একা রেখে যেতে ভরসা পাচ্ছে না। কোন নার্স কে ও ভরসা করতে পাচ্ছে না তাই কি করবে ভেবে চলেছে। তখনি আম্মু আসে বাসা থেকে এবং সাথে করে আমাদের জন্য খাবার নিয়ে আসে।
আম্মু আসতেই জায়ান নিশ্চিন্ত হয়ে মেডিসিন আনতে চলে যায়।জায়ান চলে যেতেই আম্মু আমাকে আম্মুর বানিয়ে আনা চিকেন স্যুপ খাইয়ে দিল। তারপর জায়ান মেডিসিন আনার পর, রেস্ট নিয়ে নিয়ে অনেক গুলো মেডিসিন নিতে হলো।
এখন ইনজেকশন পুশ করার পালা আমার খুব ভয় হচ্ছে। এটা সবসময় ই হয়ে থাকে।তাই জায়ান বললো কিছু হবে না আমি আছি তো।
নার্স এসে ইনজেকশন পুশ করার জন্য মেডিসিন ঠিক করছে তখন জায়ান বলে তুমি ঐ দিকে তাকিয়ো না। তারপর জায়ান আমাকে বিভিন্ন কথায় ব্যাস্ত রাখলে অপর দিকে নার্স ইনজেকশন পুশ করে দিল। তখন হালকা ব্যাথা পেয়ে আউচ করে উঠলাম।
আর জায়ান আমার অবস্থা দেখে ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো বেশি ব্যাথা পেয়েছো??আরো অনেক কিছু যখন বলতে শুরু করল তখন জায়ানের কান্ড দেখে নার্স এবং আম্মু দু’জনেই হেসে দেয়।
বেশ কিছুদিন পর,,
আমি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠিনি।
কিছুক্ষণ আগে জায়ান কে থানায় যেতে হয়েছে কিছু কাজে। আম্মু আমার কাছে আছে বলে জায়ান ভরসা করে যেতে পেরেছে, আর একটু পর আপু ও আসবে।
জায়ান যাওয়ার আগে অনেক গুলো ফল কেটে আম্মুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছে,আর আম্মু কে বলে গিয়েছে আমাকে যেন সব গুলো খাওয়ানো হয়। কারণ জায়ান না থাকলে আমি খেতে চাইবো না তাই এই করা নির্দেশ। আম্মু টা ও হয়েছে,জায়ানের মতোই জোর করে করে আমাকে ফল গুলো খাওয়াচ্ছে।
অপরদিকে,,
ঘাতক লোক গুলো কে রিমান্ডে দেওয়া হয়। রিমান্ডে দেওয়ার ফলে লোক গুলো আসল ক্রিমিনালের কথা বলে দেয়।আসল ক্রিমিনালের নাম শুনে জায়ান স্থব্দ হয়ে যায়, কারণ আসল ক্রিমিনাল হচ্ছে পুলিশ কর্মকর্তা মিস নীলিমা নিলা।
জায়ানের মাথায় কিছু আসছে না,যে মিস নীলিমা নিলা কেন এরকম জগন্য কাজে জড়িত হলেন। তথ্য সূত্রে জানা গেছে ঘাতক লোক গুলো কে আটক করার পর থেকে মিস নীলিমা নিলা কে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে। উনি ঐ দিন থেকেই উধাও,তাই এখানে আর কোনো সন্দেহ নেই যে উনি ই আসল ক্রিমিনাল।
হাজার কিছু ভেবে চলেছে জায়ান, কেন করলো এরকম মিস নীলিমা নিলা? কি এমন কারণ থাকতে পারে এর পিছনে???
এগুলো ভাবতে ভাবতে থানা থেকে বের হয়ে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় জায়ান।
এদিকে আম্মু আমাকে ফল গুলো খাওয়াচ্ছে তখন একজন নার্স এসে আম্মু কে উদ্দেশ্য করে বললেন, আন্টি আপনাকে ডক্টর উনার চ্যাম্বারে যেতে বলেছেন নাজিফা শেখের ব্যাপারে কিছু জরুরী পরামর্শ দেওয়ার জন্য। তখন আম্মু বললো আচ্ছা আমি ওকে হাতের ফল গুলো খাইয়ে দিয়েই যাচ্ছি।
তারপর নার্স চলে গেলেন। নার্স চলে যেতেই আম্মু আমাকে তারা দিয়ে বললো,ডক্টর হয়তো জরুরি কিছু বলবেন নাজিফা তুই তাড়াতাড়ি করে খেয়ে নে তো।
আমার খাওয়া শেষ হলে আম্মু চলে যায় ডক্টরের চ্যাম্বারে।আর আমি ফোন হাতে নিয়ে নিউজ ফিড স্ক্রল করতে থাকি।
একটু পর কারো চিৎকার শুনে তাকিয়ে দেখি আমার বেডের কাছে মাস্ক পরহিত একটা লোক ছুরি হাতে দাঁড়ানো আর দরজায় আপু দাড়িয়ে চিৎকার করছে।
আপুর চিৎকার শুনে লোক টা বললো একদম চুপ,,,, ছুরি টা আমার দিকে একবার আবার আপুর দিকে একবার,তাক করে করে বলছে একদম চিল্লাবি না।যদি চিল্লাস তো একদম জানে মেরে ফেলবো দুটো কে। তারপর ছুরি দিয়ে ইশারা করে আপু কে রুমে ঢুকতে বললো। আপু রুমে ঢুকতেই লোক টা বাহিরে বের হয়ে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে চলে গেল।
গেইট দিয়ে জায়ান হসপিটালে ঢুকছে তখন একটা লোকের সাথে ধাক্কা লাগে জায়ানের। লোক টা খুব হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যাচ্ছিল তাই এরকম টা হয়। এবং এর ফলে লোকটার হাত থেকে একটা ছুরি নিচে পরে গেল।
জায়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই লোকটা নিচ থেকে ছুরি টা তুলে দৌড় দিল। লোকটার কর্মকাণ্ড সন্দেহ করে জায়ান পিছন পিছন দৌড়ে যায় কিন্তু কিছুতেই নাগাল পায় না তাই আবার হসপিটালে ফিরে আসে।
আর এদিকে লোক টা দরজা লাগিয়ে চলে যাওয়ার পর আম্মু আসে। আম্মু এসেই জিজ্ঞাসা করে,নামেরা বাহির থেকে দরজা বন্ধ করা কেন?
আমি বললাম, আম্মু তুমি আগে বলো ডক্টরের সাথে কথা হয়েছে তোমার?
আম্মু:-না।ডক্টরের চ্যাম্বারে গিয়ে দেখি ডক্টর নেই। তখন একজন নার্স কে জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ডক্টর নাকি অনেক আগেই বেড়িয়ে গিয়েছেন। তাই চলে আসছিলাম তখন আবার একজন মহিলার মেয়ের নাকি খুব খারাপ অবস্থা, এগুলো বলা শুরু করলেন তাই আসতে দেরি হয়ে গেল।
আম্মুর কথা শুনে আমি আর আপু সবটা বুঝতে পারলাম। তারপর জায়ান আসে, জায়ান আসার পর সব কিছু বলতেই জায়ান বললো উহ সিট তার মানে এই লোকটার সাথেই আমার ধাক্কা লেগেছিল!
নামেরা:-এরকম চলতে থাকলে কিভাবে হবে? এভাবে কি বাঁচা যায়। সারাক্ষণ একটা আতংকের মধ্যে থাকতে হবে।
জায়ান:- নাজিফার সাথে আর কোন খারাপ কিছু হতে দিব না ইনশা আল্লাহ। আমি আজকেই নাজিফা কে ঢাকায় আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো।
জায়ানের কথা শুনে আপু বললো না নাজিফা কে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো, আপনার সাথে নিয়ে যেতে আমি কিছুতেই ভরসা করতে পাচ্ছি না। তখন জায়ান আপু কে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করলো আমাকে জায়ানের সাথে যেতে দেওয়ার জন্য। কিন্তু আপু শুনছেই না জায়ানের কথা, সবশেষে আম্মু অনুমতি দিয়ে দিল।তার জন্য আপু রেগে মেগে হসপিটাল থেকে বাসায় চলে গেল।
আর আমি নিরব দর্শক হয়ে বসে রইলাম। এরপর জায়ান সব কিছু ঠিক করে আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ করে ঢাকার গন্তব্যে রওনা হলো।
রওনা হওয়ার আগে আব্বু ভাইয়া ফাবু আসে আমাকে দেখার জন্য। আমি ভাইয়া কে বলেছি আপু কে যেন একটু বোঝায় ভাইয়া, কারণ আপু হয়তো খুব রেগে আছে।
গাড়িতে জায়ান বললো আমার এই অবস্থার পিছনে ঘসেটি বেগমের হাত, সবকিছুই নাকি ঐ বজ্জাত মহিলা করেছেন। আমার তো আগেই সন্দেহ হয়েছিল ঘসেটি বেগমের উপর কারণ কেউ শুধু শুধু এরকম কথা কাউকে বলতে পারে না। এখন পুলিশ ঘসেটি বেগম কে খুঁজে বেড়াচ্ছে।বজ্জাত মহিলা নাকি পলাতক, অবশ্য এখন পালানোর ই কথা।
আমার ভাবনার মাঝে জায়ানের ফোনে কল আসল।জায়ান কল রিসিভ করলো।
ওপাশের কথা কিছুই শুনতে পেলাম না, কিন্তু জায়ান খুব উত্তেজিত হয়ে বললো,মিস নীলিমা বলুন মেইন ক্রিমিনাল কে??হ্যালো হ্যালো,,,,,
কল কেটে দেওয়া হয়, তাই জায়ান আবার কল করলো কিন্তু বলা হচ্ছে আপনি যে নম্বারে কল করেছেন তা এই মুহূর্তে বন্ধ আছে, কিছুক্ষণ পর আবার,,,,,,
জায়ান ফোন রেখে দিল,আর টেনশানে গাড়ির সিটে মাথা রাখলো। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে? কি বললো ঐ মহিলা?
জায়ান:-বললো,মি.জায়ান মুস্তাফি আমার পিছনে সময় নষ্ট না করে আসল কালপ্রিট কে খুঁজে বের করুন!!,,,,,,
#চলবে…..
#সিনেমাটিক
#পর্ব–21
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
জায়ান:-বললো,মি.জায়ান মুস্তাফি আমার পিছনে সময় নষ্ট না করে আসল কালপ্রিট কে খুঁজে বের করুন!!,,,,,,
এ আবার কোন শত্রুর আবির্বাভ হলো?দু-দুবার এট্যাক করা হলো,জানি না তৃতীয় বারে বেচে থাকি কিনা,,,,
জায়ান:-কি সব বলছো?এরকম কথা আর কখনো বলবে না।ইনশা আল্লাহ আমি বেচে থাকতে তোমার আর কোন কিছু হতে দিব না আমি।
আমি:-কি করবো বলো?আমার সাথে কার এতো শত্রুতা আমি বুঝতে পারছি না।কেন বার বার এরকম করছে তারা?আমি তো কখনো কারো ক্ষতি করিনি।
জায়ান:-আচ্ছা ভালো করে মনে করে দেখ তো, তোমার কখনো কার সাথে ঝগরা বিবাদ হয়েছিল কিনা?অনেক সময় ছোট ছোট বিষয় গুলো বড় কারণ হয়ে দারায় যা আমরা ছোট বলে অবহেলা করে থাকি।
আমি:-ছোট বেলা থেকেই ঝগরা বিবাদ ভয় পাই আমি।আর তাই এগুলো থেকে সবসময় দূরে থাকি।আমার এরকম কিছুই মনে পরছে না ।
তবে একটা বিষয় খেয়াল করে দেখ,মিস নিলীমা নিলা উনার সাথে কিন্তু তোমার কারণে পরিচয় হয়েছে।এর আগে কিন্তু উনাকে আমি দেখিনি পর্যন্ত।তাই আমার মনে হচ্ছে তোমার কোন লুকায়িত শত্রু আছে,যাকে তুমি চিনতে পারছো না।
জায়ান:-তোমার কথায় যুক্তি আছে।কিন্তু আমার এরকম কোন কিছু মনে পরছে না।তবে মিস নিলীমা নিলা কে খুজে পাওয়া গেলে আসল কালপিট কে সহজেই খুজে বের করতে পারবো।পুলিশ টিম যথাসম্ভব চেষ্টা করছে মিস নিলীমা নিলা কে খুজে বের করার,বাকি টা আল্লাহ তা’আলার হাতে।
জানো টেনশানে আমার ঘুম চলে গেছে,যতোদিন পর্যন্ত কেইসটা সল্ভ হচ্ছে ততো দিন আমার শান্তি নেই।
আমি:-টেনশান করো না আল্লাহ ভরসা,আল্লাহ তা’আলার বিপদ দিয়েছেন,একদিন আল্লাহ তা’আলার ই সব বিপদ কেটে দিবেন।শুধু ধৈর্য ধরে ভরসা রাখতে হবে আল্লাহ তা’আলার উপর।
আচ্ছা এসব এখন বাদ দাও,তুমি এটা খেয়াল করছো?আজ কতোদিন হয়ে গেল আমি আইসক্রিম খাইনা,তুমি আমাকে এক্ষুনি আইসক্রিম কিনে দিবে।
আমার কথা শুনে জায়ান বললো,তুমিও একটা বিষয় খেয়াল করছো,আমিও আমার কারেজের আদর পাইনা বলতো?
জায়ানের এরকম কথায় ভ্রু কুচকে এলো আমার। জায়ান আমাকে পাত্তা না দিয়ে,,কামরুল ভাইকে বললো কামরুল ভাই গাড়ির লাইট টা অফ করে দিন তো।বাহির থেকে যে পরিমানে পোকার বাহিনী আসা শুরু হয়েছে,আল্লাহ না করুন একবার হুল ফুটিয়ে দিলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।
কামরুল ভাই:-ভাইজান তাইলে জানালা বন্ধ কইরা দেই?
জায়ান:-কামরুল ভাই দেখেন না আপনার ভাবি এসির ঠান্ডা সহ্য করতে পারে না।তাইতো জানালা খুলে রাখতে হচ্ছে,জানালা বন্ধ করলে তো গরমে অবস্হা খারাপ হয়ে যাবে।আর ভাই সামনে কোথাও আইসক্রিম পার্লার দেখলে গাড়ি রাইখেন।
আমি শুধু নিরব দর্শক হয়ে দুজনের কথা শুনে চলেছি।তবে জায়ানের মতলব বেশ বুঝতে পারছি।
তারপর জায়ানের কথায় কামরুল ভাই লাইট অফ করে দিলেন।আর লাইট অফ হতেই জায়ান আমার মাথার পিছনে আলতো হাত রেখে ধীরে ধীরে আমার ঠোটৈ নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিল।প্রথমে বাধা দিলেও পরে আর বাধা দিলাম না,নিজিও সায় দিলাম।ইসলামের একটা বিধি আছে স্বামীর ডাকে সারা না দিলে,জান্নাতি হুর রা অভিশাপ দিতে থাকে।এবং কোন স্ত্রী যদি রান্না বা অন্যান্য কাজে ব্যাস্তও থাকে তাহলে সব কাজ রেখে আগে তার স্বামীর ডাকে সারা দিতে হবে।এটাই ইসলামের বিধি।
যাই হোক,বেশ কিছূক্ষন পর জায়ান আমাকে ছাড়লো। তারপর বাহির থেকে আসা আবছা আলোয়, জায়ান আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো,ওর এরকম গোর লাগা চাহনি দেখে আমি লজ্জা রাঙ্গা হয়ে ওর বুকে মুখ লুকালাম।
তারপর যখন আইসক্রিম পার্লারের কাছে আসি, তখন কামরুল ভাই বললেন ভাইজান এখানে একটা আইসক্রিম পার্লার আছে। এখানে কি যাবেন?
জায়ান:-হুম, আপনি একদিকে সাইট করে গাড়ি পার্ক করুন।
তারপর কামরুল ভাই গাড়ি থামালে, জায়ান আমাকে ধীরে ধীরে গাড়ি থেকে নামিয়ে কোলে তুলে নিলো।ওর এহেন কান্ড দেখে বললাম কি করছো? আশেপাশে অনেক লোক জন আছে তারা কি মনে করবে? আমার কথায় জায়ান বললো তাতে আমার কি আমার বউ কে আমি কোলে নিয়েছি এতে অন্যরা কি বলবে বা মনে করবে তাতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এই বলে জায়ান হাঁটা শুরু করলো।একদম আমাকে আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিল সাথে নিজেও একটাতে বসে পরলো।
তারপর যখন আইসক্রিম আনা হলো তখন জায়ান বললো তোমার যত ইচ্ছে আইসক্রিম খাও তবে আইসক্রিম এর ঠান্ডা ভাব টা চলে গেলে তার পর খাবে, এখন চলো আমরা গল্প করি তাহলে এর মধ্যে আইসক্রিম এর ঠান্ডা ভাব টা চলে যাবে।
জায়ানের প্রথম কথায় যতটা না খুশি হয়েছিলাম, কিন্তু পরের কথাটায় আমার খুশি গুলো সব উরে গেল।ওর থেকেই এসব আজব আজব কথা শুনছি আমি, আইসক্রিম কিনা ঠান্ডা ভাব দূর মিল্ক পান করতাম। ওর কথা কিছুতেই মানতে রাজি নই আমি,তাই এর তীব্র প্রতিবাদ জানাতে হবে।
জায়ান:-কি ভেবে চলেছো তুমি সেই কখন থেকে?
জায়ানের কথা আমি আর পাত্তা না দিয়ে একটা চকলেট কোন আইসক্রিম হাতে নিয়ে মুরক খুলে অলরেডি খাওয়া শুরু করে দিলাম এবং অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ করে আরেকটা নিয়ে কামর দিতেই জায়ান আমার হাত থেকে আইসক্রিম টা কেরে নিলো যার ফলে আমার ঠোঁটের চারপাশে আইসক্রিম মাখামাখি হয়ে গেল।জায়ানের এহেন কান্ডে কোমরে হাত রেখে বললাম তুমি কি করলে এটা?জায়ান আমার কথার উত্তর না দিয়ে আমার দিকে ঝুঁকে আমার ঠোটে লেগে থাকা আইসক্রিম টিস্যু দিয়ে মুছে দিলো এবং একটা ছোট করে কিস করে দিল।
ও আকস্মিক কিস করায় চোখ গুলো বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম কি হলো এটা?
জায়ান:-নাথিং।
আমি:-তাই না? তোমাকে আমি পরে দেখে নিব এখন আমাকে আইসক্রিম খেতে দাও।একদম ডিস্টার্ব করবে না।
আমার কথায় জায়ান বললো একদম না আমার কথা না শুনলে,,,,
জায়ান কথাটা শেষ করার আগেই ওর ফোনে কল বেজে উঠল তার পর জায়ান যখন ফোনে কথা বলায় ব্যাস্ত হয়ে পড়ল তখন আমি এই সুযোগ হাত ছাড়া না করে একটা মিল্ক আইসক্রিম এর বক্স খুলে গপাগপ মুখে ঢুকিয়ে দিতে শুরু করলাম এবং অল্প সময়ের মধ্যেই পুরো বক্স শেষ করে আরেকটা হাতে নিতেই জায়ান আমার কাছ থেকে আইসক্রিম এর বক্স টা নিয়ে নিলো। নিয়ে টেবিলের উপর রেখে আমাকে পুনরায় কোলে তুলে নিলো, এবং সোজা নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিল। বসিয়ে ও চলে গেল আইসক্রিম এর বিল দিতে।
আর একটু খেতে দিলে কি এমন হতো?জায়ানের উপর রাগ করে মুখ ফুলিয়ে
জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে রইলাম।
তারপর জায়ান আসতেই গাড়ি চালানো শুরু করলো।গাড়ি আবার পুনরায় ছুটে চলেছে তার গন্তব্যে।
আমি রাগ করেছি বুঝতে পেরে জায়ান পিছন থেকে আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু ওর কথায় আমি গলছি না। শেষ মেষ না পেরে ও বললো আচ্ছা ঠিক আছে আগামীকাল থেকে একটা করে আইসক্রিম বরাদ্দ করে দিলাম সাথে অনেক গুলো চকচকে।
জায়ানের কথা শুনে বললাম আর যদি এর নরচর হয় তবে?
জায়ান:-তবে ম্যাম যা শাস্তি দিবে তা আমি মাথা পেতে নিবো।
আমি:-ঠিক আছে এটা মনে থাকলেই হয়।
তারপর জায়ানের কোলে মাথা রেখে ঘুমানোর ট্রাই করলাম আর জায়ান আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।এক সময় ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম।আর এই ঘুম ভাঙ্গলো বড় ভাবির ডাকে। আমরা কখন বাসায় পৌঁছে গেলাম,ঘুমে এতো বিবর ছিলাম যে বুঝতেই পারিনি। এতো ঘুমের কারণ হয়তো মেডিসিনের প্রভাব আছে।
যাই হোক,,
ভাবি খাবার খেতে ডাকছে আমাকে। তখন উঠতে নিলে শরীরে ব্যাথা অনুভব করলাম।ভাবি বুঝতে পেরে আমাকে শোয়া থেকে উঠতে সাহায্য করলো। তারপর বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিল।
তারপর ভাবীর সাথে কুশল বিনিময় করে ভাবির সাহায্য নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে আসলাম। এসে ভাবির কাছে জায়ানের কথা জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম ওর নাকি জরুরী কাজ পরে যাওয়ায় অফিসে চলে গেছে। তারপর ভাবি আমাকে খাবার খাইয়ে মেডিসিন দিলেন।
খাওয়ানো শেষ হলে ভাবি চলে যায়। তারপর মা মেজ ভাবী ভাইয়ারা আমাকে দেখতে এলেন। সবাই খুব দুঃখ প্রকাশ করলেন আমাকে দেখে কিন্তু মেজ ভাবী বললেন, এরকম চলতে থাকলে কিভাবে হবে মা? নাজিফা এ বাসায় আসার পর থেকেই একটার পর একটা অঘটন ঘটে চলেছে। না জানি নাজিফার জন্য আবার জায়ানের উপর আবার এট্যাক শুরু হয় নি।
মেজ ভাবির এরকম কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো, আমার জন্য জায়ানের ক্ষতি হোক তা আমি কখনোই চাই না।
শাশুড়ি মা:-মেজ বউমা তুমি চুপ করবে, কি সব আজেবাজে কথা বলছো।
মেজ ভাবি:-আমার কথা যেদিন মিলবে সেদিন বুঝবেন মা।
এই বলে মেজ ভাবি চলে গেলেন আমার রুম থেকে। তারপর ভাইয়ারা বললেন ওর কথা কিছু মনে করো না ও একটু এরকম ই।মা ও তাই বললেন।
তারপর সবাই চলে গেলেন।আর আমি মন খারাপ করে বসে রইলাম।
এর বেশ কিছুদিন পর, আমি অনেক টা সুস্থ হয়ে উঠি।সবটাই জায়ানের জন্য ও খুব কেয়ার করে আমাকে প্রতিদিন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে আমাকে ধরে ধরে বাগানে হাঁটতে নিয়ে যায়, নিজ হাতে খাইয়ে দেয় আর কতো কি।
রুমে বসে আছি তখন আরিফ চাচা এসে বললেন মনিমা জায়ান বাবার নামে একটা পার্সেল আসছে। তারপর আমাকে পার্সেল টা দিলে আমি খুলে দেখি,আমরা যে সেন্টমার্টিন দ্বীপে ছবি তুলেছিলাম সেই ছবি গুলো এলবাম করে দিয়েছে। তখন ছবি গুলো একে একে দেখতে লাগলাম।
তার মাঝে আরিফ চাচা বললেন,মনিমা তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। চাচা কথা শুনে বললাম, কি কথা বলেন?
আরিফ চাচা:-আমি তোমাকে যে কথাটা বলবো তুমি কিন্তু কাউকে বলতে পারবে না।
চাচা কথা শুনে কিছু টা অবাক হলাম। তারপর বললাম আচ্ছা চাচা কাউকে বলবো না, এবার আপনি বলেন।
আরিফ চাচা:-মনিমা তুমি তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলে, ঘাতকদের আঘাতের ফলে বেবি টা মারা যায়…..
#চলবে…..