পরী পর্বঃ৩য়

0
649

পরী পর্বঃ৩য়
লেখাঃনীলাদ্রিকা নীলা

.
শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো সায়েম। আয়নার দিকে তাকিয়ে ভেজা চুল গুলো ঠিক করতে করতে আয়নার ভিতর কাউকে দেখা যেতেই সায়েমের বুকটা ধক করে উঠল। কিন্তু পিছনে ঘুরে কাউকে দেখতে পেল না। আবারও আয়নায় দিকে তাকিয়ে দেখলো একটা মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। পরনে সাদা রঙের পোশাক। গায়ের রঙটাও দুধের আলতা। খোলা চুল। শরীরে বিভিন্ন রকমের অলংকার জরিয়ে রেখেছে। সে সায়েমের দিকে তাকিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ভয়ে ঘামতে লাগলো সায়েম। পিছনে ঘুরে দেখলো কেউ নেই। আবার আয়নার দিকে তাকালো। এবার আর কিছু দেখা গেল না৷ ভর দুপুরে কি হচ্ছে এসব। তার কি মাথা খারাপ হয়ে গেল। চুল গুলো ঠিক করে এদিকে ঘুরতেই হঠাৎ প্রত্যাশাকে দেখে আবারও চমকে উঠলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে উঠল, তুমি!
প্রত্যাশা সায়েমের দিকে তাকিয়ে থেকেই অবাক হয়ে বললো, হ্যাঁ মানে, এইতো মাত্র আসলাম। কেন!
– না কিছুনা। অনেকক্ষণ থেকে একা রয়েছি তো৷ তা গিয়েছিলেই বা কোথায়।
– কোথায় মানে? তোমার পায়ের অবস্থার জন্য ডাক্তার আনতে। চলো নিচে চলো উনি বসে আ..
বলতে গিয়েই আটকে গেল প্রত্যাশা আর খেয়াল করলো সায়েম ঠিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে এবং হাটতেও পারছে। সায়েমের পায়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই প্রত্যাশা বলে উঠল, ওমা তোমার পা..
– হুম ঠিক হয়ে গেছে।
– কিন্তু কি করে?
– তা তো জানিনা ।
.
প্রত্যাশা এগিয়ে এসে সায়েমকে দুই হাত দিয়ে জরিয়ে ধরলো। সায়েমের বুকে মাথা রেখে বলতে থাকে, তুমি জানো কাল রাতে আমি কত ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। কত চিন্তায় ছিলাম তোমাকে নিয়ে। থ্যাংক গড তুমি ভালো হয়ে গেছো। তুমি ছাড়া আমার আর এখানে কে আছে বলো। তোমার কিছু হলে আমি সহ্য করতে পারি না।
.
প্রত্যাশার কথা শুনে ঘামতে থাকে সায়েম। কেন যেন রাগ হতে থাকে খুব। প্রত্যাশা বলছে, তুমি তো কাজেই ব্যস্ত থাকো আর আমি সারাদিন বাড়িতে একা একা থাকি। কি করে আমার সময় গুলো কাটবে বলো।
সায়েম হঠাৎ করেই প্রত্যাশাকে ঢাক্কা দিয়ে বুক থেকে সরিয়ে দিলো। খুব অবাক হয়ে এবার প্রত্যাশা সায়েমের দিকে তাকায়। সায়েম চোখ মুখ শক্ত করে প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে আছে৷ প্রত্যাশা সায়েমের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে ফেললো, কি হলো সায়েম। তুমি এমন করলে কেন৷
সায়েম রাগ চোখে প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করেই বলে ফেললো, এতো ন্যাকামির কি আছে! আমি কাজ করবো না তো কি সারাদিন বাড়িতে তোমার সাথে বসে বসে থাকবো?
সায়েমের কথায় প্রত্যাশা আরও অবাক হয়ে গেল। ও তো কখনো এভাবে কথা বলে না। এই দুই বছরে ওর সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করেনি সায়েম। আজই প্রথম।
প্রত্যাশা বললো, তুমি এভাবে কেন বলছো সায়েম। তুমি ছাড়া আমি আর কাকে নিয়ে ভাববো। সে যাক গিয়ে নিচে ডাক্তার সাহেব বসে আছেন। উনাকে নাস্তা পানি দিতে হবে। আমি আসছি।
কিছুটা অভিমানের ভঙি করে রুম ত্যাগ করলো প্রত্যাশা। প্রত্যাশার কথায় সায়েমের এবার খেয়াল হয় সত্যিই তো এরকম ভাবে কেন বললো সে। ওট শিট। মেজাজটাও এভাবে বিগড়ে যাচ্ছে কেন। নিশ্চয়ই মেয়েটা এখন অভিমান করে থাকবে আমার ওপর। নাহ ওর রাগটা ভাঙাতেই হবে।
.
সায়েম নিচে গিয়ে দেখলো প্রত্যাশা ডাক্তারের সাথে কথা বলছে, উনি উনার মোবাইল নাম্বার দিয়ে চলে গেলেন। কোনো সমস্যা হলে ফোন করে জানাতে বললেন। ডাক্তার সাহেবকে বিদায় দিয়ে প্রত্যাশা এদিকে ফিরে সায়েমকে দেখতে পেয়ে মুখ ভার করে রান্না ঘরের দিকে চলে যেতে লাগলো। প্রত্যাশাকে চলে যেতে দেখে সায়েম এগিয়ে এসে প্রত্যাশার হাত ধরে প্রত্যাশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। ওর মুখটা উপরের দিকে তুলে ধরে বললো,ম্যাডাম মনে হয় খুব রেগে আছেন।
– ছাড়ো রান্নাঘরে কাজ পরে আছে।
– উহুম। তার আগে আমার সাথে কাজ আছে।
.
সায়েম প্রত্যাশার ঠোঁটে ঠোঁট দিতে যাবে ওই সময়ই রেনু রান্নাঘর থেকে বের হলো,
– আফা! এইগুলান কি করুম?
.
সাথে সাথে সায়েম প্রত্যাশাকে ছেড়ে ছেড়ে দিয়ে সরে দাঁড়ালো। প্রত্যাশাও নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,তুই যা আমি আসছি।
তারপর সায়েমের দিকে তাকিয়ে বললো, আর তুমি এখানে কি করছো? যাও বিশ্রাম নেও। আমি দুপুরের খাবার রেডি করছি।
সায়েম প্রত্যাশার দিকে অপরাধীর মতো তাকিয়ে থেকে বললো, সরি জান। আসলে আমার মাথাটা ঠিক নেই। কি বলতে কি বলে ফেলেছি। সরি!
– হুম ঠিকাছে। আমি জানি। তোমার একটু বিশ্রাম নেয়া দরকার।
– মাথাটা খুব ধরেছে। এক কাপ কফি হবে প্লিজ?
– তুমি রুমে যাও। আমি বানিয়ে আনছি।
.
সায়েম রুমে এসে বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। কিছুক্ষণ পর প্রত্যাশা রুমে কফি হাতে উপস্থিত হয়।
– একি! তুমি আবার এসব নিয়ে বসেছো?
– অফিসে যাই নি। কাজ গুলো তো কমপ্লিট করতে হবে নাকি। এতো বেশি বেশি মাইনে কেন দেয় বলতো আমায়। এসবের জন্যই তো।
– উফ শুধু কাজ আর কাজ।আজ কোনো কাজ চলবে না।
.
প্রত্যাশা ল্যাপটপটা নিয়ে টেবিলের ওপর রেখে দিলো। তারপর কফিটা সায়েমের হাতে দিয়ে চলে যাচ্ছিলো এমন সময় সায়েম বলে উঠল, চিনি ঠিকমতো দিয়েছো তো। অবশ্য তোমার চুমুর থেকে তো আর কোনো কিছু বেশি মিষ্টি হতেই পারে না। তখনকার চুমুটা কিন্তু বাকি রইলো। রাতে হবে।
বলেই সায়েম এক চোখ টিপ দেয়। প্রত্যাশা লজ্জারাঙা মুখে ধ্যাত বলে দৌড়ে রুম থেকে পালালো।
.
বিছানায় বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে সায়েম। হঠাৎ করেই খুব রাগ হতে থাকলো। সাথে সাথে হাতে থাকা কফির মগটা ফ্লোরে ছুড়ে ফেলে দিলো। শব্দ পেয়ে প্রত্যাশা রান্নাঘর থেকে দৌড়ে ছুটে এলো। ফ্লোরের ওপর মগের ভাঙা টুকরো গুলো দেখে তারপর সায়েমের দিকে তাকিয়ে বললো, কি হয়েছে?
– জানিনা। তুই যা আমার সামনে থেকে।
প্রত্যাশা অবাক হয়ে সায়েমের কাছে এগিয়ে গিয়ে ওর গায়ে হাত দিয়ে বলছে, সায়েম? তোমার কি শরীর খারাপ! কি হয়েছে?
সায়েম চোখমুখ শক্ত করে উত্তর দেয়, তোকে না বললাম যা এখান থেকে। আমায় একা থাকতে দে।
সায়েম প্রত্যাশার হাত ওর গা থেকে সরিয়ে দেয়। তারপর রাগ চোখে প্রত্যাশার দিকে তাকিয়ে থাকে। ভয় পেয়ে প্রত্যাশা রুম থেকে চলে যাচ্ছিলো আর বার বার পিছনে ফিরে সায়েমকে দেখছিলো।
.
রাতের বেলা খাবার সময় সায়েম বার বার প্রত্যাশাকে সরি বলতে থাকে। এক পর্যায়ে প্রত্যাশা রেগে গিয়ে বলে ফেললো, হয়েছে তো আর কত বার সরি বলবে। নাও হা করো। বাকিটা তাড়াতাড়ি খেয়ে উদ্ধার করো আমায়।
সায়েম প্রত্যাশার বাম হাতটা ধরে ফেললো,সরি জান। আমি সত্যিই জানিনা কিভাবে…
– চুপ। এসব আর শুনবো না এখন।
– আচ্ছা তাহলে রাতের চুমুটা মিস যাবে না তো বলো। কোনো শাস্তি দিবে না তো আমায়?
.
পাশে থেকে রেনু খিলখিল করে হেসে উঠল। প্রত্যাশা ওর দিকে ফিরে রেগে বলে উঠল, তোর খাওয়া হয়েছে? যা গিয়ে শুয়ে পর।
– জি আফা।
হাসি বন্ধ করে রেনু চলে গেল। যাওয়ার সময় এদিকে একবার ফিরে মুচকি হেসেই দৌড় দিলো।
.
সায়েম প্রত্যাশার মুখে লেগে থাকা কিছু খাবার মুছে দিতে গিয়ে ঠোঁটে হাত দিয়ে ফেললো। প্রত্যাশা সায়েমের দিকে তাকিয়ে আছে। সায়েম আস্তে আস্তে প্রত্যাশার ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট নিয়ে যাচ্ছে তখনই বিদুৎ চলে গিয়ে পুরো বাড়ি অন্ধকার হয়ে যায়। আচমকা ভয় পেয়ে প্রত্যাশা সায়েমকে জড়িয়ে ধরলো। সায়েম মোবাইলের আলোয় চার্জার লাইটা খুঁজে বের করে ওটা জ্বালায়।
পানির খেতে খেতে সায়েম বলতে থাকে, বুঝিনা যখন তখন এভাবে কেন বিদুৎটা চলে যায়। আমি কালই এর জন্য কমপ্লেইন করবো।
তখনই উপর থেকে গ্লাস ভাঙার আওয়াজ আসে। একটার পর একটা কাঁচ ভাঙছে মনে হচ্ছে। সায়েম আর প্রত্যাশা দুইজনেই একটু ঘাবরে গেল। উপরে তো কেউ নেই। শব্দ তাহলে কে করছে। মনে হচ্ছে বেডরুম থেকে শব্দটা আসছে। সায়েম সামনে পা বাড়াতে গেলেই প্রত্যাশা সায়েমের শার্ট টেনে ধরলো।
.
বিদুৎ চলে এসেছে। এখন দুইজনেই উপরে গিয়ে দেখলো বেড রুমে অনেক গুলো ভাঙা কাঁচের টুকরো মেঝেতে পরে আছে। রুমে থাকা কাঁচের গ্লাস,জানালার গ্লাস, আর কাঁচের ছোট টেবিল সব ভেঙে গেছে। কিন্তু এগুলো ভাঙলো কিভাবে। ঝড় তো আসে নি। সায়েম প্রত্যাশার ভয় কাটানোর জন্য বলে উঠল, ওই দেখো বাহিরে বাতাস উঠেছে। ঝড় এলো বলে। ওই জন্যই বিদুৎ চলে গিয়েছিল। তুমি অযথা এই নিয়ে চিন্তা করো না। প্রত্যাশা রুমটাকে কোনো ভাবে পরিষ্কার করে লাইট অফ করে শুয়ে পরলো। সায়েম প্রত্যাশার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে আর চিন্তা করছে, এসব হচ্ছেটা কি। কিছু একটা ঝামেলা তো আছেই। মাথা কাজ করছে না। কিভাবে কি হচ্ছে কিচ্ছু বোঝা যাচ্ছে। প্রত্যাশা ঘুমিয়ে গেছে। সায়েমেরও আস্তে আস্তে চোখ দুটো লেগে যায়। হঠাৎ করে রুমটায় গরম অনুভুত হতে থাকলো। রুমের তাপমাত্রা সাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাচ্ছে। মেঝের ওপর একটি মেয়ের ছায়া ফুটে উঠছে। জানালার পাল্লা দুটো বাতাসে একটার সাথে অন্যটা বারি খাচ্ছে। বাহিরে থেকে দমকা হাওয়া রুমে প্রবেশ করছে।
.
মাঝরাতে প্রত্যাশার ঘুম ভেঙে যায়। বাহিরে প্রচন্ড বাতাস উঠেছে। জানালা দিয়ে এলোমেলো ভাবে বাতাস ভিতরে ঢুকছে। রুমটা শীতল হয়ে আছে। পাশ ফিরে দেখলো সায়েম বিছানায় নেই। সাথে সাথে ভয়ে বুকটা ধক করে উঠল। বেড রুমের দরজাও খোলা।
.
চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here