সিনেমাটিক #পর্ব-২৪,২৫

0
494

#সিনেমাটিক
#পর্ব-২৪,২৫
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক
২৪

জায়ান আমার অবস্থা দেখে বললো কি হয়েছে তোমার? এগুলো কি পছন্দ হয়নি?…….

তখন আমি কাঁদো কাঁদো ফেইস করে বললাম, তুমি এতো গুলো ড্রেস আনতে গেলে কেন? আমি তো এগুলো কিছুদিন পর আর পরতেই পারবো না। আমার কথা শুনে জায়ান হেসে দিল,আর বললো এই ব্যাপার?এর জন্য কাঁদতে হবে নাকি পাগলি।যে কয়েকদিন পারো সে কয়েকদিন পরবে। তারপর যখন ছোট কারেজ চলে আসবে তখন আবার তোমার যত খুশি তত ড্রেস কিনে দিব ইনশা আল্লাহ।জায়ানের কথা শুনে খুব খুশি হলাম।

জায়ান:-এবার বলো গোল্ড এর ডিজাইন গুলো কেমন হয়েছে? পছন্দ হয়েছে তো তোমার?

আমি:-তুমি পছন্দ করে এনেছো,আর আমার পছন্দ না হয় কিভাবে বলো? তোমার পছন্দ খুব সুন্দর,ড্রেস গুলো ও খুব সুন্দর হয়েছে।

জায়ান:-শুনেছি তোমার ডায়মন্ড এর কিছু পছন্দ নয়,তাই গোল্ডের আনলাম।

আমি:-হুম, আমার ডায়মন্ডের থেকে গোল্ড ভালো লাগে। তোমাকে এত্ত গুলো ধন্যবাদ।

আমার ধন্যবাদ শুনে জায়ান বললো, আমার এই শুকনো ধন্যবাদ চাই না। আমি ঠিক আছে এই তোমার জন্য নাস্তা এনেছি এগুলো খেয়ে পানি খেয়ে নাও।জায়ান বললো উহু,, এগুলো ও চাই না তখন আমি বললাম তাহলে মশাই আপনার কি চাই?জায়ান বললো আমার কারেজের এত্ত গুলো ভালোবাসা চাই,আর সেটা এখনি।

আমি:-এখন একদম দুষ্টুমি নয়, না হলে কিন্তু ছোট কারেজ তোমাকে পঁচা বলবে।

জায়ান:-উহু, ছোট কারেজ তার পাপার ব্যাপার টা ঠিক বুঝতে পারবে। এবং এটাও বুঝতে পারবে তার মামুনি খুব কিপ্টে,তার পাপা কে ভালোবাসতে কিপ্টামি করে।

জায়ানের এরকম কথায় খুব হাসি পাচ্ছে আমার, আমি নাকি কিপ্টে। আমি কিপ্টে না তার প্রমাণ দিতে জায়ানের কপালে চুমু এঁকে দিলাম, দিয়ে বললাম এবার নাস্তা গুলো খেয়ে নাও, কিছু সময় পর এশারের আজান হয়ে যাবে।

জায়ান:-আমি কি তোমাকে এমনি এমনি কিপ্টে বলি? তুমি আসলেই একটা কিপ্টে।কেউ যদি তোমাকে একটা কিছু দিতে বলে তখন তুমি তাকে দুটো বা এর বেশি দিবে।আর আমি তো তোমার কাছে অনেক গুলো চেয়েছি, সেখানে তুমি কিনা একটা দিলে, ছোট কারেজের মামুনি আসলেই একটা কিপ্টে।

জায়ানের এরকম যুক্তি শুনে আমি হা হয়ে গেলাম। কি করে পারে ও এরকম যুক্তি দিতে আল্লাহ তা’আলা জানেন।
তারপর জায়ান বললো তোমাকে কিছু হাদিস শোনাবো,এশার নামাজ পড়ে এসে এখন তো সময় নেই আজান দিয়ে দিবে। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে এখন একটু খেয়ে নাও।পরে জায়ান কিছু টা খেতেই আজান হলে নামাজে চলে যায়।

তারপর আমি ও নামাজ আদায় করে বসে থাকি জায়ান আসার অপেক্ষায়।
জায়ান আসলে রাতের খাবার খেয়ে রুমে এসে চল্লিশ পা হাঁটার পর (খাবার খেয়ে চল্লিশ পা হাঁটা সুন্নাত) জায়ান বললো এখানে বসো।জায়ানের পাশে সোফায় বসতে বললো, আমি বসার পর জায়ান বলতে শুরু করল।

গর্ভবতী মায়ের আমল ও দোয়া:-
প্রকৃতপক্ষে গর্ভবতী মায়ের গর্ভাবস্থার জন্য কোরআন-সু্ন্নাহয় বর্ণিত কোনো নির্দিষ্ট আমল বা দোয়া নেই। বরং একজন স্ত্রী তাঁর স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হওয়াটাই একটি স্বতন্ত্র এবং এতটাই ফজিলতপূর্ণ আমল যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বিখ্যাত মহিলা সাহাবি সালামা রাযি.কে বলেছেন—

তোমাদের কেউ কি এতে খুশি নয় যে, সে যখন স্বামী কর্তৃক গর্ভবতী হয় এবং স্বামী তার প্রতি সন্তুষ্টও থাকে তখন (এই গর্ভকালীন) সে আল্লাহর পথে সর্বদা রোজা পালনকারী ও সারারাত নফল ইবাদতকারীর মতো সওয়াব পাবে? তার যখন প্রসব ব্যথা শুরু হয় তখন তার জন্য নয়ন শীতলকারী কী কী নিয়ামত লুকিয়ে রাখা হয়, তা আসমান জমিনের কোনো অধিবাসীই জানে না। সে যখন সন্তান প্রসব করে তখন তার দুধের প্রতিটি ফোঁটার পরিবর্তে একটি করে নেকি দেওয়া হয়। এ সন্তান যদি কোনো রাতে তাকে জাগিয়ে রাখে (অসুখ ইত্যাদির কারণে বিরক্ত করে মাকে ঘুমুতে না দেয়) তাহলে সে আল্লাহর পথে নিখুঁত সত্তরটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে। (আলমু’জাম, তাবরানী: ৬৯০৮, আবু নুআইম: ৭০৮৯, মাজমাউজজাওয়াইদ: ৪/৩০৫ )

তবে এটাতো জানা কথা যে, সন্তান যখন মায়ের গর্ভে থাকে, তখন ভ্রুণ অবস্থা থেকেই মায়ের যাবতীয় চাল-চলন ও গতিবিধির বিস্তর প্রভাব সন্তানের ওপর পড়ে। অপরদিকে ভ্রুণ অবস্থা থেকেই শুরু হয় মায়ের অবর্নণীয় কষ্ট। কোরআনের ভাষায়, তার মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছে। (সূরা লুকমান: ১৪) আর একজন মায়ের এহেন কষ্টের ফসল ‘সন্তান’ যদি তাঁরই অসতর্ক ও আজেবাজে চাল-চলনের কারণে নেক, সৎকর্মশীল ও সুচরিত্রের অধিকারী না হয় তাহলে একদিন এ মা’ই নিজের গর্ভ-ব্যর্থতা স্বীকার করে বলে থাকে, তোকে গর্ভে ধারণ করে ভুল করেছি। এজাতীয় কথা-আল্লাহ্‌র কাছে পানাহ চাই-যেন কোনো মাকে বলতে না হয় এলক্ষে একজন গর্ভবতী মায়ের প্রতি আল্লাহওয়ালাদের পরামর্শের ভান্ডার থেকে দশটি পরামর্শ পেশ করছি তোমাকে,মন দিয়ে শোন_

এক- গোনাহ থেকে বিরত থাকবে,গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত ইবাদতের ফিকিরের চাইতে গোনাহ ছেড়ে দেয়ার ফিকির অধিক করাটাই হবে তোমার বুদ্ধিমত্তার পরিচয়। আর এটা করতে হবে, তোমার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানের জন্যই। যেমন, নাটক-সিরিয়ালপ্রীতি বর্জন করবে। অবশ্য আমি জানি আমার কারেজ এগুলো থেকে অনেক দূরে থাকে।যাই হোক তবুও বলছি শোন। কণ্ঠস্বরকে সংযত করবে, বিশেষ প্রয়োজন দেখা না দিলে ঘর হতে বের হবেন না। তোমার যে সকল গায়রে মাহরাম আত্মীয় রয়েছে, তাদেরকে তোমার সাথে দেখা সাক্ষাতের কিংবা পর্দা লংঘনের জন্য অনুমতি দেবে না। এভাবে চলতে পারলে পবিত্র কোরআনের সুসংবাদ গ্রহণ করবে— কষ্টের সাথেই আছে সুখ। (সূরা আলাম-নাশরাহ: ৬)

আরেকটি আয়াতের অনুবাদ শোন, যা তোমার জন্যও প্রযোজ্য—

যেগুলো সম্পর্ক সেসব বড় গোনাহ থেকে বেঁচে থাকতে পার। তবে আমি তোমাদের (ছাট) গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেব এবং সম্মানজনক স্থানে তোমাদের প্রবেশ করাব। (সূরা নিসা: ৩১)

দুই- ধৈর্য্য ধারণ করবে অসুস্থতা, বমি বমি ভাব, দুর্বলতা প্রভৃতি কারণে ধৈর্য্যহারা হবে না। এভাবে ভাববে, ‘এই সময়টার প্রতিটি মুহূর্ত তোমার জন্য জিহাদতূল্য ইবাদত’। এতে ধৈর্য্য ধারণ করা তোমার জন্য সহজ হবে। তোমার কষ্ট শক্তিতে পরিণত হবে। নবীজী ﷺ চমৎকার বলেছেন,সবর হল জ্যোতি। (মুসলিম: ২২৩)

তিন- সময় মত নামাজ আদায় করবে: এসময়ে অস্থিরতা বেশি কাজ করে। আর যথাসময়ে নামাজ অন্তরকে প্রশান্ত রাখে। এজন্যই নামাজের সময় হলে নবীজী ﷺ বেলাল রাযি.কে বলতেন, নামাজের ব্যবস্থা কর এবং তার মাধ্যমে আমাকে তৃপ্ত কর। (আবু দাউদ: ৪৩৩৩)

চার- জিকির করবে: অস্থিরতা দূরীকরণের কোরআনি-ব্যবস্থাপনা এটি। এটা তোমাকে এবং ছোট কারেজ কে শান্ত রাখতে সহায়ক হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

যারা ঈমান আনে তাদের মন প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই মন প্রশান্ত হয়। (সূরা রাদ : ২৮)

পাঁচ- শোকর আদায় করবে: দেখ, মা হওয়ার মাঝেই নারীজন্মের স্বার্থকতা। কত নারী এমন আছে,গর্ভবতী হওয়ার জন্যে বছরের পর বছর ধরে চেষ্টা করছে কিন্তু তাদের ভাগ্যে এই নেয়ামত জুটছে না। এজন্য যখনি মা হওয়ার আনন্দে পুলকিত হবে তখনি আল্লাহর শোকর আদায় করবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর; অকৃতজ্ঞ হয়ো না। (সূরা বাকারা: ১৫২)

ছয়- বেশি রাত পর্যন্ত জাগ্রত থাকা থেকে বিরত থাকবে: গর্ভাবস্থায় রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুম না হলে স্বাস্থ্যহানী ঘটে। তাই ইশার নামাজ সময়ের শুরুতে পড়ে নিবে। তারপর প্রয়োজনীয় কাজ সেরে যত দ্রুত সম্ভব ঘুমিয়ে পড়বে। দেরি করে ঘুমোতে যাবে না। অন্তত এতটা আগে রাতের বিছানায় যেতে হবে যাতে করে কমপক্ষে ছয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিন্তে যাওয়া যায় এবং ফজর যথাসময় পড়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন,আর আমি তোমাদের নিদ্রাকে করেছি ক্লান্তি দূরকারী। (সূরা নাবা: ৯)

সাত- ওযু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করবে: কেননা দৈহিক সুস্থতা ও আত্মিক প্রশান্তির ক্ষেত্রে ওযুর ভূমিকা অপরিসীম। বিশেষত, ঘুমানোর আগে ওযু করে নিবে। এতে অনিদ্রার বিড়ম্বনা থেকে বাঁচা সহজ হবে। নবীজী ﷺ বলেছেন,যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। (মুসলিম : ৪৮৮৪)

আট- তোমার সন্তানের জন্য কোরআন তেলাওয়াত করবে: প্রায় ২০ তম সপ্তাহে গর্ভের বাচ্চা শোনার সক্ষমতা অর্জন করে। মা প্রতিদিন কিছু কোরআন তেলাওয়াত করে বাচ্চার মাঝেও কোরআনের মাঝে সম্পর্ক জুড়ে দেয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আবদুল্লাহ ইবনে আমর রাযি. বলেন,

কোরআনের বিষয়ে তোমাদের উপর অবশ্য পালনীয় এই যে, কোরআন শিক্ষা করা এবং তোমাদের সন্তানদের কোরআন শিক্ষা দেয়া। কেননা এ বিষয়ে তোমাদের জিজ্ঞাসা করা হবে এবং তার প্রতিদানও দেয়া হবে। (শরহে সহীহ বুখারী, ইবন বাত্তাল : ৪৬)

এক্ষেত্রে কোন সূরা পড়ব? উত্তর হল, গর্ভাবস্থার জন্য মূলত নির্দিষ্ট কোনো সূরা নেই। তবে কোনো বুজুর্গ সূরার বিষয়বস্তুর প্রতি লক্ষ রেখে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এভাবে—

☞ প্রথম মাসে সূরা-আল ইমরান পড়লে সন্তান দামী হবে।

☞ দ্বিতীয় মাসে সূরা-ইউসুফ পড়লে সন্তান সুন্দর হবে।

☞ তৃতীয় মাসে সূরা মারিয়াম পড়লে সন্তান সহিষ্ণু হবে।

☞ চতুর্থ মাসে সূরা-লোকমান পড়লে সন্তান বুদ্ধিমান হবে।

☞ পঞ্চম মাসে সূরা-মুহাম্মদ পড়লে সন্তান চরিত্রবান হবে।

☞ ষষ্ঠ মাসে সূরা-ইয়াসিন পড়লে সন্তান জ্ঞানী হবে।

☞ সপ্তম, অষ্ঠম, নবম ও দ্বশম মাসে সূরা-ইউসুফ, মুহাম্মদ এবং ইব্রারাহিম কিছু কিছু পড়বে।

☞ ব্যাথা উঠলে সূরা-ইনশিকাক পড়ে পানিতে ফুক দিয়ে পান করলে ব্যথা কমে যাবে।

তাছাড়া ঘুমের পূর্বে অবশ্যই চার কুল তথা সূরা কাফিরূন, সূরা ইখলাস ও সূরা ফালাক ও সূরা নাস পড়ে হাতের তালুতে ফু দিয়ে সারা শরীরে হাত বুলিয় নিলে বহুবিধ ফায়দা পাওয়া যায়। এভাবে তিনবার করবে।

নয়- দোয়ার অভ্যাস করবে: গর্ভকালীন সময়ে মাঝে মাঝে অসহায়বোধ হয়। এমনও মনে হয়, না-জানি এবার আমি মরে যাব কিনা! তাই গর্ভকালীন সময়ে দোয়ায় বেশি লিপ্ত হতে হয়। কেননা এসময়ের দোয়া আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ বলেন,

কষ্ট দূরীভূত করেন। (সুরা নামল ৬২)

তাছাড়া তুমি তোমার সন্তানের মা। আর মায়ের দোয়া কবুল হয়। সুতরাং নেক, সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে বার বার দোয়া করবে। এক্ষেত্রে কোরআনের বর্ণিত দোয়াগুলোকে অগ্রাধিকার দিবে। যেমন, এ দোয়াটি মুখস্থ করে নিতে পারো—

হে আমার পালনকর্তা! আপনার পক্ষ থেকে আমাকে পুত-পবিত্র সন্তান দান করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রার্থনা শ্রবণকারী। (আল ‘ইমরান: ৩৮)

পুত্র-সন্তান লাভের জন্য পড়তে পার— হে আমার প্রতিপালক! আপনি আমাকে সৎকর্মশীল পুত্র সন্তান দান করুন। (আস-সাফফাত: ১০০)

দশ- আল্লাহর এ দু’টি গুণবাচক নাম পড়বে: কোনো গর্ভবর্তী মহিলা যদি আল্লাহ তাআলার গুণবাচক নাম (اَلْمُتَعَالِىْ) ‘আল-মুতাআ’লি’ এবং (اَلْمُبْدِئُ) ‘আল-মুবদিয়ু’ পড়তে থাকে তবে ওই মহিলা তার গর্ভকালীন কষ্টক্লেশ থেকে মুক্তি পায়।

উক্ত দশ পরামর্শ মেনে চললে গর্ভবতী মা যেমন মহান আল্লাহর কাছে প্রিয় হয়ে ওঠবে, অনুুরূপভাবে তার ভেতরে বেড়ে ওঠা সন্তানও ‘নেক’ হবে। ইনশাআল্লাহ্।

আল্লাহ তা’আলা তাওফিকদাতা। তাই দোয়া করি আল্লাহ যেন এ আমল গুলো পালন করার তাওফিক দান করেন আমিন।

সব কিছু শুনলাম ঠিক কিন্তু আমার তেমন কিছুই মনে নেই তাই জায়ান কে বললাম ও যেন আমাকে বলে দেয় কখন কি করবো।

জায়ান আর নাজিফার দিন গুলো এভাবে আনন্দেই কাটছে, তবে শেষ পর্যন্ত এই আনন্দ থাকবে তো? কারণ কেউ একজন যে সুযোগের অপেক্ষায় বসে রয়েছে…..

চলবে….

#সিনেমাটিক
#পর্ব–২৫
#লেখিকা_ইসরাত_বিনতে_ইসহাক

ভাবিদের কথা মত জায়ান তাদের বসুন্ধরা সিটিতে শপিং করাতে নিয়ে যায়। সাথে নাজিফা কে ও নিয়ে যায়।ভাবিরা ড্রেস কিনলেও নাজিফা আর কিনলো না তবে কিছু কসমেটিকস কিনলো,যেমন হেয়ার ব্যান, ব্রান্ডের সেম্পু,সাইড ব্যাগ আর কিছু।আর জায়ান তার মায়ের জন্য একটা শাড়ি নিল এবং বেবিদের কিছু ড্রেস নিলো যা দেখে সবাই খুব হাসলো, কারণ এতো তাড়াতাড়ি জায়ান কিনা বেবির ড্রেস কিনে বসে আছে।যাই হোক সবার শপিং করা শেষ হলে, জায়ান সবাই কে নিয়ে রেস্তোরাঁয় খেতে নিয়ে যায়।

সবাই মেনু কার্ড দেখে খাবার অর্ডার করলো, এবং আমিও আমার পছন্দের নান রুটি আর গ্রিল। তারপর খাবার আসতেই সবাই খাবার খেতে শুরু করলো। আমি একটু মুখে দিতেই, গা গুলিয়ে ওঠলো তাই আর খেতে পারলাম না। ইদানিং আমি আমার পছন্দের খাবার গুলো খেতেই পারি না।যে খাবার গুলো আমার সবচেয়ে অপছন্দের ছিল ঐ খাবার গুলো কিছু টা হলেও খেতে পারি। অবশ্য জায়ান যদি নিজ হাতে খাইয়ে দেয় তাহলে একটু বেশি ই খেতে পারি।

এখন সবাই খাচ্ছে কিন্তু আমি খেতে পারছি না বলে জায়ান আমার জন্য চিকেন স্যুপ আনতে বললো। তারপর চিকেন স্যুপ টা কিছুটা খেতে পারলাম।

সবার খাওয়া শেষ হলে,তরল জাতীয় কিছু খেয়ে বাসায় র‌ওনা হলাম। ইস আমি আর জায়ান এক গাড়িতে আর বাকিরা অন্য গাড়িতে। গাড়িতে থাকা কালীন আম্মু কল করে জানালো আগামীকাল আব্বু আম্মু আপু ভাইয়া সবাই আমার শশ্বুর বাসায় আসবে। খবর টা শুনে জায়ান এবং আমি দুজনেই খুব খুশি হলাম।

এরপরের দিন,
আমার বাসার সবাই আসতে আসতে সন্ধ্যা হয়ে গেল, কিন্তু এখনো বাসায় এসে পৌঁছায় নি তবে কাছাকাছি চলে এসেছে। সবার আসার কথা শুনে মা খুব খুশি হয়েছেন। আরিফ চাচা এবং অন্যান্য কাজের লোক দের খুব ভালো রান্না বান্না এবং অন্যান্য কিছু করতে বলে দিয়েছেন।

তারপর সবাই আসলে, আমি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেই, সবাই সবার সাথে কুশল বিনিময় করে। আম্মু আমাকে এতো দিন পর দেখে কান্না করে দেয়। আম্মু কে শান্তনা দিয়ে বললাম, আম্মু দেখ তোমার মেয়ে ভালো আছে। কিন্তু না আম্মু কেঁদেই যাচ্ছে, তার পর সবাই বুঝাতে কান্না থামালো।
তারপর সবাই ফ্রেস হয়ে আসলে, আরিফ চাচা সবাই কে নাস্তা দিলেন। আব্বু আম্মু আর মা খেতে খেতে কথার আসর বসালেন।মা আব্বু কে বললেন,বেয়াই মশাই এক বছরের ওপরে হয়ে গেল মেয়ের বিয়ে হয়েছে আর আপনারা এতো দিন পর আসলেন মেয়ের বাসায়? তখন আব্বু বললো বিভিন্ন ঝামেলায় আসতে পারিনি, তার জন্য আমি দুঃখিত বেয়াইন। তখন মা বললেন আপনাদের মাফ করতে পারি যদি আপনারা বেশ কিছুদিন থেকে যান। আম্মু বললো জানেন ই তো বেয়াইন বাসায় কেউ নেই একদম তালা দিয়ে তার পর আসতে হয়েছে।
তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছে দেখে
আমি আপু কে আর ভাইয়াকে নিয়ে আমার রুমে চলে এলাম।আর তাঁবু অনেক দিন পর আমাকে দেখে খুব খুশি, এখন তাঁবু আগের চেয়ে মা শা আল্লাহ বড় হয়েছে এবং স্পষ্ট করে কথা বলতে পারে তবে আমাকে আম্মু ডাকা এখনো ভুলেনি।
আপু আর ভাইয়ার সাথে অনেকক্ষণ আড্ডা দিলাম। এতো দিন পর সবাই কে পেয়ে খুব ভালো লাগছে।

তারপর জায়ান অফিস থেকে আসলে সবার সাথে কুশল বিনিময় করে।
এভাবেই তিনটি দিন পার করলাম আনন্দে আনন্দে। আজকে সকালে সবাই চলে গেছে, সবাই চলে যেতে বাসাটা পুরো ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।তারা যাওয়ার সময় ইচ্ছে করছে আমিও তাদের সাথে চলে যাই, কিন্তু আবার জায়ান কে ছেড়ে যেতেও ইচ্ছে করে নি।জায়ান যেন আমার আভাসে পরিনত হয়েছে, একদিন ও ভালো লাগে না জায়ান কে ছেড়ে থাকতে। কখনো যদি যায় অফিসের কাজে আটকে যায় এবং বাসায় না আসে ঐ দিন যেন আমার সব কিছু অসহ্য লাগতে শুরু করে।তাই ঠিক করেছি যেখানেই যাবো জায়ান কে সঙ্গে করে নিয়ে যাব। আবার জায়ানের সাথেই ফিরে আসবো।

একদিন একদিন করে সময় যাচ্ছে আর আমার অবস্থা নাজেহাল হচ্ছে। একজন মা ই জানে এই সময়টা কতো কষ্ট করে পার করতে হয়। তবে দিন শেষে বেবির কথা মনে পরলে সব কষ্ট গুলো যেন নিমিষেই দূর হয়ে যায়।

ছয় মাস পর,,,
আমার পেট বেশ বড় হয়েছে অন্যদের তুলনায়। খুব ইচ্ছা ছিল আমার টুয়িন হবে, তাদের কে একরকম ড্রেস থেকে শুরু করে সব কিছু একরকম পরাবো।যখন আমার প্রেগন্যান্সির ছয় মাস চলে তখন আলট্রা করে জানতে পারি আমার ছেলে বেবি হবে। এখন আঁট মাস চলছে, কিন্তু অন্যদের তুলনায় পেট বেশি বড় হয়ায় খুশি মনে আবার পরশুদিন গিয়ে টেস্ট করি কিন্তু ফলাফল শূন্য ডক্টর বললো আমার
বেবি একজন ই টুইন বেবি নয়।
যাই হোক তবুও আল্লাহ তা’আলার কাছে কুটি কুটি শুকরিয়া আলহামদুলিল্লাহ।

আজকে বাসার সবাই আমার শশ্বুর মশাইয়ের কবর জিয়ারত করতে গিয়েছে, আজিমপুর কবরস্থানে। আমার শরীর তেমন ভালো নয় বলে মা আর জায়ান যেতে নিষেধ করেছেন, জায়ান ও অফিসের কাজের জন্য যেতে পারেনি। আমি বাসায় একা বলে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবে বলেছে জায়ান। তবে একা বললেও চলে না আরিফ চাচা আছেন বাসায়। আমি একা বলে আরিফ চাচা রয়ে গেছেন।

আমি ড্রয়িং রুমে বসে টিভি তে সংবাদ দেখছি। অনেক দিন পর টিভি দেখছি, ছোট বেলায় টিভি দেখতে খুব ভালো লাগতো কিন্তু আম্মুর জন্য বেশি দেখতে পারতাম না, আম্মু সারাক্ষণ পড়তে বসিয়ে রাখতো। তারপর যখন ফোন ইউজ করা শুরু করলাম তার পর থেকে টিভি দেখতে আর ভালো লাগতো না।তাই আজকে টিভি দেখতে অন্য রকম লাগছে।

যখন সংবাদ দেখায় মনোনিবেশ করি তখন আরিফ চাচা এসে বললেন মনিমা, তুমি একদিন আমার পরিবার সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলে মনে আছে?

আমি:-জ্বি চাচা, আপনি তো পরে বলবেন বলে আর বললেন না।

আরিফ চাচা:-এখন বলছি শোন, আমি আমার স্ত্রী এবং এক ছেলে আর এক মেয়েকে নিয়ে খুব সুখেই দিন কাটাচ্ছিলাম। কিন্তু একদিনের কালো অধ্যায় আমাদের জীবনে এসে সব কিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়।

আমি:-কালো অধ্যায় মানে?

আরিফ চাচা:-বলছি শোনা।
আমি তখন চট্টগ্রাম একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি,সপ্তায় একদিন আসতাম বাসায়,বাসা ছিল ঢাকায়। আমার মেয়ে সামিয়া জামান ইন্টারের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ছিল,আর ছেলে টা ছিল তিন বছরের।

একদিন মেয়েটা আমাকে কল করে বললো বাপি কলেজ থেকে শিক্ষাসফরে গাজীপুর মেঘবাড়ি রিসোর্ট এ আমাদের নিয়ে যাবে, আমি কিন্তু যাবো তুমি না করলেও শুনবো না।পরে তাই হলো আমি নিষেধ করা সত্ত্বেও মেয়েটা শিক্ষাসফরে চলে গেল। তারপর শিক্ষাসফর থেকে এসেই মেয়ে আমার কেমন জানি হয়ে যায়। কারো সাথে তেমন কথা বলতো না, সারাক্ষণ কিছু নিয়ে চিন্তা ভাবনায় মত্ত থাকতো। একদিন কলেজ থেকে বাসায় ফিরার পর ও মা লক্ষ করে ওর চোখ গুলো অনেক ফুলে আছে দেখেই বুঝা যাচ্ছে অনেক কান্নাকাটি করেছে। ওর মা জিজ্ঞাসা করাতে ওর মাকে জড়িয়ে অনেক কান্নাকাটি করে কিন্তু কিছু বলে না। এরপরের দিন সকাল বেলা কলেজে যাওয়ার জন্য ওর মা অনেক ডাকাডাকি করে কিন্তু আমার মেয়েটা দরজা খুলে না। তারপর যখন কয়েক ঘণ্টা ডাকার পর ও খুলছে না, তখন আমার স্ত্রী আমাকে কল করে জানালো। আমি তখনি র‌ওনা হয়ে যাই ঢাকার উদ্দেশে। এদিকে আমার স্ত্রী মানুষ জন ডেকে দরজা খুলার চেষ্টা করে,পরে না পেরে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখে আমার মেয়ে সামিয়া আর নেই, অনেক গুলো ঘুমের ঔষধ খেয়ে আত্ম*হত্যা করেছে। চলে গেল মেয়েটা আমাদের একা করে দিয়ে।

“আরিফ চাচার কথা শুনে আমার চোখে পানি চলে এলো”।চাচা ও কাঁদছে চাচাকে কি বলে শান্তনা দিব, আমার ভাষা নেই।

চাচা আবার বলতে শুরু করলেন,,,
মেয়েটা কে পুলিশ এসে নিয়ে গেল, আমার ভালো মেয়েটাকে নিয়ে গিয়ে সব কিছু রেখে দিল তারা। তারপর কোন রকম দাফন করা হলো।
এই শোক আমার স্ত্রী সহ্য করতে পারলো না, সারাক্ষণ কান্নাকাটি করতো,এক ফোঁটা পানি ও স্পর্শ করতো না। তারপর মেয়েটার শোকে শোকে আমার স্ত্রী ও চলে গেল। ছেলে টা আমার একা হয়ে গেল এই অল্প বয়সে মা হারা হয়ে গেল। এই বয়সেই ছেলে টা অনেক দুষ্টু ছিল,ওকে ওর মা ছাড়া কেউ সামলাতে পারতো না,ওর খালামনির কাছে নিয়ে গিয়েছিল কিন্তু ওকে কেউ খাওয়াতেই পারতো না তাই আবার আমার কাছে নিয়ে আসি। কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় না বলে ছেলে টা ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠে নিচে নিচে গড়িয়ে পড়ে যার ফলে মাথা ফেটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।

এভাবে সবাই আমাকে ছেড়ে চলে গেল, কিন্তু আমার মরণ হলো না।এসব কিছুর প্রতি’শোধ নিতেই হয়তো আমি বেঁচে আছি……

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here