#স্পর্শতায়_তুমি
#পর্ব_০৭
#অধির_রায়
পুষ্প স্যার ধীর পায়ে প্রকৃতির দিকে এগিয়ে যেতে থাকে৷ প্রকৃতির মাথায় সকল প্রকারের বা’জে চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে৷ প্রকৃতি কিছু বলার আগেই পুষ্প স্যার গম্ভীর কন্ঠে বললেন,
“লেহেঙ্গা পড়ে ঘুমাবে৷ লেহেঙ্গা পড়ে ঘুমাতে চাইলে ঘুমাতে পারো। আমার কোন সমস্যা নেই। বরং তোমার ঘুমেরই সমস্যা হবে৷ ঠিকমতো ঘুমাতে পারবে না৷”
প্রকৃতি ঠিক করেছে পুষ্প স্যারের সাথে কোন কথা বলবে না। পুষ্প স্যারের অহংকার ভাঙবে তারপর কথা বলবে৷ প্রকৃতি কিছু না বলে বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে৷ পুষ্প স্যারের সে নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই৷ পুষ্প স্যার প্রকৃতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“আমার সকল আশা মাটি করে দিলে৷ আমি ভেবেছিলাম বাসর রাত… ”
পুষ্প স্যারের কথা শেষ হওয়ার আগেই ছোঁয়া ক্ষোভ নিয়ে ঘৃণামিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না৷ এখানে আপনি লেকচারার নয়৷ আপনার কথা শুনে চলবো। ভুলেও এসব চিন্তা মাথায় নিয়ে আসবেন না৷ রুমের লাইট অন থাকবে সারারাত৷ আপনি চাইলে বিছানার এক পাশে ঘুমাতে পারেন৷”
পুষ্প স্যারকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে প্রকৃতি ওয়াসরুমে চলে যায়৷ জিন্স আর টপস পড়ে ওয়াসরুম থেকে বের হয়। প্রকৃতির এমন রুপ দেখে পুষ্প স্যারের চোখ রসে গোল্লার মতো৷ মুখটা বাংলার পাঁচ হয়ে গেছে৷ কিছু বলার আগেই প্রকৃতি বলল,
“আমি নতুন বউয়ের মতো শাড়ি পড়ে চলতে পারব না৷ আমি যেগুলো পড়তে ভালোবাসি সেগুলো পড়ব৷ এ নিয়ে কারো যেন কোন সমস্যা না হয়৷”
পুষ্প স্যার কি বলবে, বুঝতে পারছে না? প্রকৃতি বিছানার এক পাশে শুয়ে পড়ে৷
আঁধার কেটে দিনের আলো৷ সূর্য্যি মামাকে হাজার চেষ্টা করলেও বেঁধে রাখা যায় না৷ মানুষের মনে জাগে নতুন করে বাঁচার ইচ্ছা৷ নিত্য দিনের বেঁচে থাকার লড়াই চলে যায়৷ তিথি বলল,
“প্রকৃতি তুই এ পোশাকে রুমের বাহিরে যাবি৷ তোকে এমন পোশাকে দেখলে নানা জানে হরেক রকমের কথা বলবে৷”
প্রকৃতি কিছু বলার আগেই ছোঁয়া মুচকি হেঁসে বলল,
“তিথি তুই থামবি৷ প্রকৃতি শাড়ি পড়তে পারে না৷ সেজন্য জিন্স আর টপস পড়ে আছে৷ আমরা প্রকৃতিকে শাড়ি পড়তে সাহায্য করব৷ আমি প্রকৃতিকে শাড়ি পড়িয়ে দিব৷”
তিন বান্ধবী মিলে প্রকৃতিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেয়৷ প্রকৃতির রিসিপশনের কোন খামতি রাখেনি পুষ্প স্যারে৷ ধুমধামে রিসিপশন করেছে পুষ্প স্যারে৷ প্রকৃতি পুষ্প স্যারের সকল ফ্রেন্ডদের সাথে পরিচয় হয়৷ তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো ভার্সিটির কেউ আসেনি৷ কোন ছাত্রছাত্রী জানে না পুষ্প স্যারের বিয়ে৷ সে নিয়ে প্রকৃতির কোন মাথা ব্যথা নেই৷ প্রকৃতি নিজ বাড়িতে ফিরে আছে৷
চলে যাচ্ছে প্রকৃতি পুষ্প স্যারের দিন গুলো৷ প্রকৃতি পুষ্প স্যারের সাথে কোন কথা বলে না৷ পুষ্প স্যার কিছু বলতে নিলে প্রকৃতি বলে উঠে,
‘একটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রীকে মাঠে সবার সামনে কান ধরাতে ভালো লাগে৷’
পুষ্প স্যার নিজের করা কাজের জন্য খুব লজ্জিত। পুষ্প স্যারকে ক্ষমা চাওয়ার কোন সুযোগ দিচ্ছে না৷
ঋষি প্রতিদিন নিজের কেবিনে একটা করে গোলাপ পাচ্ছে রেগুলার৷ কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়। ঋষি জানে ছোঁয়া এমন কাজ করতে পারে না৷ ঋষি নিজের বুদ্ধি খাঁটিয়ে বুঝতে পারে এসব কাজ অজান্তার৷ অফিস শেষে ছোঁয়া চলে গেলে ঋষির অজান্তার কেবিনে যায়৷ ছোঁয়া নিজের জন্য আলাদা গাড়ি কিনেছে৷ সে এখন নিজের গাড়িতে চলাচল করে৷ অজান্তা ঋষিকে দেখে খুশি হয়ে যায়৷ মুচকি হেঁসে আহ্লাদী স্বরে বলল,
“ঋষি আপনি৷ আমার কেবিনে কি মনে করে? কোন সমস্যা হয়েছে৷”
.ঋষি চেয়ারে টেনে বসতে বসতে বলল,
“ম্যাম অনেক বড় সমস্যা হয়েছে৷ আমার লাইফের কিছু সমস্যা হয়েছে৷ আপনার সাথে আমার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে৷”
অজান্তা অনেক খুশি৷ অজান্তা ঠিক করেছে আজই ঋষিকে নিজের ভালোবাসার কথা জানাবে৷ উচ্ছাস নিয়ে বলল,
“আমরা কোন ক্যাফেডিয়ামে বসে কথা বলতে পারি। অফিসে এসব নিয়ে কোন কথা বলতে চাইনা৷”
ঋষির অজান্তার কথায় দ্বিমত পোষণ করল না৷ ঋষি অজান্তার কথার জবাবে বলল,
“ওকে ম্যাম৷ আমরা সামনের ক্যাফেডিয়ামে কফি খেতে খেতে কথা বলতে পারি৷”
ক্যাফেডিয়ামে দুই পাশে দুইজন বসে আছে৷ অপরিচিত কেউ বসে থাকলে কথা বলতে যতটা সংকোচ না হতো তার থেকে বেশি সংকোচ হচ্ছে৷ অজান্তা বলল,
“আপনার লাইফে কি এমন সমস্যা আছে? যা আমার সাথে শেয়ার করতে চান৷ জানতে খুব ইচ্ছা হচ্ছে৷ আপনার সমস্যার সাথে মোকাবেলা করতে ইচ্ছা করছে৷”
ঋষির কফির কাপে চুমু দিয়ে বলল,
“কিভাবে বলব? আমার মাথা কোন কাজ করছে না৷ আমি কিছুই বুঝতে পারছি না৷ কে আমার সাথে এমন কাজ করছে? অফিসে আমার সাথে খারাপ কিছু ঘটতে চলছে৷”.
অজান্তা চিন্তিত কন্ঠে বলল,
” অফিসের লোক আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে? কেউ আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে? আমাকে নির্ধিধায় বলতে পারেন।”
” আমার সাথে কেউ খারাপ ব্যবহার করেনি৷ প্রতিদিন অফিসে এসে আমার টেবিলে একটা করে গোলাপ পাচ্ছি৷ কে রাখছে সেই গোলাপ? কেন রাখছে আমি কিছুই জানিনা?”
অজান্তা মুচকি হেঁসে বলল,
“আপনার কি গোলাপ পছন্দ নয়? আপনি গোলাপ লাইক করেন না৷ গোলাপে কি আপনার এলার্জি?”
ঋষি আহত কন্ঠে বলল,
“না ম্যাম গোলাপ ফুলের উপর আমার কোন অভিযোগ নেই৷ আমার জীবন থেকে সকল রং ফুরিয়ে গেছে। জীবনের সকল রং আমি অন্য কাউকে দিয়ে দিছি৷ আমার লাইফে এখন কোন রং নেই৷”
ঋষির কথা শুনে অজান্তা খুব কষ্ট পেল৷ কেন ঋষির জন্য কষ্ট হচ্ছে৷ ঋষি অজান্তার কাছে কি লুকাতে চাচ্ছে? তার জীবনে কি অনেক কষ্ট লুকিয়ে আছে৷ অজান্তার নেত্র নিজের অজান্তেই জলে টলমল করতে থাকে৷ অজান্তা বলল,
“আপনার মনে অনেক কষ্ট আমি জানি৷ কিন্তু আপনার কষ্ট বেশিদিন থাকবে না৷ আপনার কষ্ট লুঘু করতে কেউ চলে আসবে৷ আপনি যদি আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেন তাহলে আমি কিছু বলতে চাই৷ কিছু মনে করলে বলব না৷”
ঋষি অজান্তার দিকে সরু দৃষ্টিতে তাকায়৷ নরম স্বরে বলল,
“ওকে ম্যাম৷ আমি কিছু মনে করব না৷ আপনার মনে যা আছে তাই বলতে পারেন৷”
আমি জানি আপনি আমাকে ভালোবাসার কথা বলবেন৷ আমি এ লাইফ পার করে এসেছি। সেজন্য অন্যের মনের কথা সহজেই বুঝতে পারি৷ আমি চাই আপনি যেন আমার লাইফ থেকে সরে যান৷ সেজন্য আপনার সাথে নিজের ইচ্ছাতে কথা বলতে এসেছি৷
অজান্তা হুট করেই ঋষির হাত ধরাতে ঋষি কেঁপে উঠে৷ ঋষি হাত সরিয়ে নিতে চাইলে অজান্তা আরও শক্ত করে চেপ ধরে৷ আশেপাশে তাকিয়ে হাত সরানোর চেষ্টা করলে অজান্তা ঋষির হাত দুই হাতের মুঠোয় নেয়৷ অজান্তা ঋষির চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আপনার সকল কষ্টের অংশীদার হতে চাই৷ আপনার কষ্ট নিজের করে নিতে চাই৷ ভালোবাসা দিয়ে আপনার মন জয় করতে চাই৷ আপনার সকল কষ্ট ভালোবাসা দিয়ে মুছে দিব৷ আমি ঘুরিয়ে কথা বলতে পারিনা৷ আপনাকে আমার খুব পছন্দ। আপনাকে আমি খুব ভালোবাসি৷”
অজান্তার মুখে ভালোবাসার কথা শুনে ঋষির মনে অনেক কষ্ট হল৷ ছোঁয়ার মুখটা ভেসে উঠল। ঋষির নিজের হাত এক টানে সরিয়ে নেয়। ছোঁয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়। কষ্টমাখা আহত কন্ঠে বলল,
“আপনি আমাকে ভুলে যান৷ আমি আপনাকে ভালোবাসতে পারব না৷ আমি অন্য কাউকে ভালোবাসি। আমি তাঁর জায়গা আপনাকে দিতে পারব না৷”
ঋষির কথা অজান্তার বুকে তীরের মতো লাগে৷ টুপ করে চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল।অজান্তার চারদিকে ঘর অন্ধকার নেমে এলো৷ পায়ের নিচের মাটি সরে গেল৷ অজান্তা ভেজা কন্ঠে বলল,
“আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলছেন৷ আমি আপনার বিষয়ে সবকিছু জেনেছি৷ আপনার বোন প্রকৃতি আমাকে আপনার বিষয়ে সবকিছু বলেছে৷ আপনি কাউকে ভালোবাসেন না৷ আমার লাইফে বিয়ে নামে কোন অধ্যায় ছিল না৷ বাসায় অনেক বিয়ের ঘরে এসেছে৷ আপনাকে দেখে মনে ছোট একটা ঘর বাঁধার স্বপ্ন জানে৷ আমি নিজের অজান্তেই আপনাকে নিয়ে ছোট একটা ঘর বেঁধে ফেলেছি৷ আমার কি দোষ? আপনার সাথে ঝগড়া করতে করতে ভালোবেসে ফেলব আমার জানা ছিল না৷ প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিবেন না৷”
ঋষি টলমল চোখে বলল,
“আমি আপনাকে কোনদিন ভালোবাসতে পারব না৷ আমার জীবন অনেক আগেই অন্য কাউকে দিয়ে দিছি৷ জীবনের থেকে বেশি ভালো তাকে বেসেছি৷ তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারিনা৷ আজ সে অন্য কারোর সাথে আছে৷ কিন্তু আমার মনে তার জন্য যতটা ভালোবাসা ছিল তার মনেও ঠিক ততটাই ভালোবাসা আছে৷ আমরা পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে দূরে সরে দাঁড়িয়েছি৷”
অজান্তা রাগী গলায় বলল,
“কে আপনার জীবন এলোমেলো করে দিছে? কে আপনার স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিছে? কে আপনাকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছে? আমি সেসব বিষয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই৷ আমি আপনার সেই চূর্ণ হৃদয়ে এক ফোঁটা জায়গা চাইছি৷ আমি কখনও আপনার ভালোবাসা ছোট করব না৷ আপনার ভালোবাসাকে সব সময় শ্রদ্ধা করব৷”
ঋষি কষ্টমাখা ভারী গলায় বলল,
“আপনাকে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে আপনাকে কোন কষ্ট পেতে দিতে পারব না৷ আমার লাইফে শুধু কষ্ট আর কষ্ট। আমার মনে যতটুকু ভালোবাসা ছিল সব আমার ভালোবাসার মানুষের জন্য৷ তাকে ছাড়া আমি অন্য কাউকে চিন্তা করতে পারি না৷”
ঋষি নিজেকে সহ্য করতে পারছে না৷ ছোঁয়া অফিস শেষে যখন চলে যায় তখন ঋষি বুঝতে পারে কতোটা কষ্ট হয়৷ ভালোবাসার মানুষ হারানোর কষ্ট প্রতিনিয়ত পাচ্ছে৷ নিজের কষ্ট কাউকে দেখাতে পারে না৷ নিজেকে এই বলে শান্ত রাখে রাত শেষে আবার ছোঁয়াকে দেখতে পারে৷ ঋষি কথা দীর্ঘ না করে চলে যেতে নিলেই অজান্তা দৌড়ে এসে ঋষির হাত ধরে। অজান্তা কান্না করতে করতে বলল,
“আমি আপনার পায়ে পড়ছি। প্লিজ আমার ভালোবাসা ফিরিয়ে দিবেন না৷ আপনাকে ছাড়া আমিও দ্বিতীয় কাউকে কল্পনা করতে পারিনা৷ এক সময় আমার কাছে প্রেম, ভালোবাসা, সংসার সব বিষের মতো লাগত৷ আজ নিজেকে সেই বিষে বিষাদিত করতে চাচ্ছি৷ প্লিজ আপনার ভাঙা মনে আমাকে একটু জায়গা দেন৷”
ঋষির নিজের হাত ছাড়িয়ে আবার চলতে শুরু করে৷ অজান্তা সকল লিমিট ক্রস ঋষির পায়ে পড়ে৷ ঋষির নিচে বসে অজান্তার চোখের জল মুছে দেয়৷ মুচকি হেঁসে বলল,
“নিজেকে কখনও দুর্বল ভাববেন না৷ কেন আমার কাছে এতো দুর্বল হয়ে পড়ছেন? আপনার প্রতি একটুও ফিলিংস নেই৷ আমার সব ভালোবাসা অন্য কেউ নিয়ে গেছে৷”
“আমি আপনার জীবন থেকে দূরে সরে যাব৷ আমার শুধু একটা কথা জানার ইচ্ছা। কে আপনাকে এমন শাস্তি দিয়েছে৷ কে আপনার হৃদয় এমন ক্ষত বিক্ষত করেছে?”
“সহ্য করতে পারবেন। আপনাকে বললে আপনি আমার ভালোবাসাকে মেরে ফেলতেও পারেন৷ আমি কষ্ট সহ্য করতে পারব৷ কিন্তু আমার ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করতে পারব না৷”
“আমি আপনার ভালোবাসাকে সম্মান করি৷ তার গায়ে ফুলের টোকা পড়তে দিব না৷ শুধু একটি বার তার নামটা বলেন৷”
ঋষি চোখের জল মুছে বলল,
“আমার ভালোবাসার মানুষ অন্য কেউ নয়৷ আমার ভালোবাসা মানুষ আপনার বউদি ছোঁয়া। যাকে আমি নিজের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসি৷”
চলবে…..