মনের নদী বেশি গভীর,০৬,০৭
আমিনা তাবাস্সুম
(৬)
“আমি স্তব্ধ চাঁপার তরু” দেখি একেবারে নাছোড়বান্দা। আমাকে খুব সহজে ছেড়ে দিবে বলে মনে হচ্ছে না। মেয়েটা কি আমাকে কোনো ধরণের ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছে নাকি ডেসপারেট হয়ে আমার সাথে যোগাযোগ করছে সেটা আমি ঠিক বুঝতে পারছিনা। আপাতত সে আমাকে কয়েকদিন অন্তর অন্তর ছোট করে ফেসবুকে একটা মেসেজ পাঠাচ্ছে।
সেইদিন কেমন করে ও জানলো যে রিদওয়ান ভাইয়ের সাথে আমার দেখা হয়েছে সেই রহস্য আমি উদ্ঘাটন করতে পারিনি। তবে আমার ধারণা ফেসবুকই এর জন্য দায়ী। রিদওয়ান ভাই অফিসে আসার পর মালিহা ওদের চারজনের একটা কাজ করার ছবি “Work in progress” ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট করেছিল। ছবিতে অবশ্য আমি ছিলাম না। কিন্তু যেহেতু আমার সংস্থার ছবি সেহেতু ও নিশ্চয়ই ধারণা করেছে যে আমার সাথেও দেখা হয়েছে। তবে এই সব শুধুই আমার ধারণা। সত্যিটা যে কী তা আল্লাহই জানে। আমি সম্পূর্ণভাবে সেই মেসেজটা ইগনোর করেছিলাম।
তার তিনদিন পর হঠাৎ আবার আরেকটা মেসেজ,
“আমার বাবা আমার নাম নদী রেখেছে। এর পিছনে নিশ্চয়ই কোনো সুন্দর একটা কারণ আছে। কিন্তু সেই কারণ বাবা আমাকে কোনোদিন বলেনি। আমারও জানার কোনোদিন ইচ্ছা হয়নি। কিন্তু জানেন, আজকাল ভীষণ জানতে ইচ্ছা করে। জানতে ইচ্ছা করে কারণ বাবার কাছ থেকে এটা জানার অধিকার আমি হারিয়েছি। যখন আমরা কোনো কিছু হারিয়ে ফেলি, তখনই সেই জিনিসটার প্রতি প্রবল আগ্রহ বোধ করি। তাই না আপু?”
এই মেসেজও আমি ইগনোর করলাম। তারপর আবার পাঁচদিন কোনো খবর নেই। তারপর আরেকটা মেসেজ,
“যেইদিন আমি বাসা থেকে পালিয়ে যাই সেইদিন ঝুম বৃষ্টি ছিল। পালিয়ে যাই আমার প্রেমিকের সাথে। মাত্র ছয়মাসের প্রেম ছিল আমাদের। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল ছয়শো বছর ধরে আমি তাকে জানি। বাবার আলমারি থেকে ব্যবসার জরুরি কাজের জন্য রাখা পাঁচ লক্ষ টাকা, মায়ের বেশকিছু গয়না আর আমার পাসপোর্ট নিয়ে পালিয়ে যাই। সেই পাসপোর্টে কিছুদিন আগেই ইংল্যান্ডের ভিসা নেওয়া হয়েছিল, ভিসিটর ভিসা। আমার বাবা মা আর ছোটবোনের সাথে দুই সপ্তাহ পরই ইংল্যান্ডে বেড়াতে আসার কথা ছিল। তাদের আর সেই ইংল্যান্ড ভ্রমণ হয়ে উঠেনি। স্বার্থপর আমি ঠিকই পাসপোর্ট আর ভিসা নিয়ে আমার ভালোবাসার মানুষের সাথে পাড়ি জমাই। আমার শোকে আমার মা নাকি অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে গিয়েছিলো। সেই যে বিছানায় পড়লো, আর কোনোদিন উঠতে পারেনি। কোনোদিন মা কল্পনাও করতে পারেনি যে আমার মতো মেয়ে এমন কিছু করতে পারে। আমিই কি কোনোদিন কল্পনা করেছিলাম যে আমি এত নিচে নামতে পারি? বাবা মাকে এভাবে কষ্ট দিতে পারি? কিন্তু, বিশ্বাস করেন, বাবা মাকে কষ্ট দেবার আমার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিলোনা। আমি ভেবেছিলাম আমি সময়মতো সব ঠিক করে ফেলবো। আমি তো বুঝিনি যে ভাঙা জিনিস সহজে জোড়া দেওয়া যায় না। সেসময় অবশ্য আমার বুঝার মতো অবস্থা ছিলোনা। সেসময় তো আমি প্রেমে অন্ধ ছিলাম। ও যা বলেছে আমি তাই করেছি। আচ্ছা, আমি কি বোকা নাকি আমি অতিরিক্ত খারাপ?”
এবারও আমি কোনো জবাব দেইনি। মেয়েটা কী চায় বুঝার চেষ্টা করছি। আর এর সাথে রিদওয়ান ভাইয়ের কী? এটুকু তো বুঝতে পারছি যে টাকা পয়সা গয়না চুরি করে সে রিদওয়ান ভাইয়ের সাথে ইংল্যান্ডে পালিয়ে আসেনি। রিদওয়ান ভাই ২৫ বছর ধরে বিবাহিত জীবন যাপন করছেন। কিন্তু তারপরও এবারের মেসেজে একটা কেয়ার রিয়্যাকশন দিয়েছি। সত্যি যদি মেয়েটা কিছু শেয়ার করতে চায় আর তা করে একটু হালকা বোধ করে সেকারণে। আমি আমার দরজা বন্ধ করে দিতে চাইনা।
এই মেসেজ পাঠানোর প্রায় দশদিন হয়ে গেলো। এরপর মেয়েটা আবার চুপ। আমি নিজে থেকে মেয়েটাকে ঘাঁটাতে চাইনা। উপকার করতে গিয়ে আবার কী না কী ঝামেলায় ফেঁসে যাই। কিন্তু ব্যাপারটা মাথা থেকে সরাতেও পারছিনা। আজকাল সারাটাক্ষন বুকটা কেমন ভার হয়ে থাকে।
শুধু এই কারণেই বুকটা ভার না, নানান কারণে বুক ভার হয়ে আছে। রায়ানের দশদিন ধর জ্বর। খুব বেশি জ্বর না কিন্তু ভালো হচ্ছে না। সাতদিন পর্যন্ত ডাক্তার তো পাত্তাই দিলো না। এই দুইদিন আগে বুকে ইনফেকশন বলে অ্যানটিবায়োটিক ধরিয়ে দিলো। মাত্র দশদিনে ছেলেটা কেমন শুকিয়ে গেছে। বাচ্চাদের শরীর খারাপ হলে কেন জানি দুনিয়ার আজেবাজে অসুখের চিন্তা মাথায় ঘুরতে থাকে। আজকেও জ্বর ভালো হয়নি। আমার ব্যাপারটা ভালো লাগছে না।
আমার সংস্থারও অনেক কাজ জমে যাচ্ছে। কোনো কাজই আগাচ্ছেনা। কিছুদিন আগে একটা বড়ো ফান্ডিংয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করেছিলাম। ধারণা ছিল ফান্ডিংটা পেয়ে যাবো। কিন্তু পাই নি। তাই এখন খুঁজে খুঁজে আরো নতুন নতুন ফান্ডিংয়ের জন্য অ্যাপ্লাই করতে হচ্ছে। এদেশের অনেক বাংলাদেশি ধনী ব্যবসায়ী আছে। যাদের কাছ থেকে কিছু স্পনসরশিপ বা ফান্ড সহজেই পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু এইসবের জন্য পলিটিক্স করতে হয়। একে ওকে ধরে তেল মারতে হয়, সবার মন রক্ষা করে চলতে হয়, তাদের পছন্দসই মানুষদের ট্রাস্টি বোর্ডের মেম্বার বানাতে হয়। গ্ৰুপিং, আওমীলীগ-বিএনপি, কূটকচালি সব মিলিয়ে জল ঘোলা না করলে এদের কাছ থেকে ফান্ড পাবার কোনো উপায় নেই। এসবের মধ্যে আমি যেতে চাইনা। তাই যথাসম্ভব সরকারি, আধাসরকারি এবং বড়ো বড়ো কর্পোরেশনকে টার্গেট করছি। কিন্তু এইসব জায়গা থেকে ফান্ড জোগাড় করা মোটেও কোনো সহজ ব্যাপার না।
এই কাজটা বলা যায় আমার ভালোবাসার একটা জায়গা। দুইবছর আগেও এর চেয়ে অনেক কম প্রেশারের নয়টা পাঁচটা চাকরি করে আমি একইরকম আয় করতাম। টাকার জন্য আমি চাকরি ছেড়ে এই কাজে আসিনি। তবে আমার নিজের উপার্জন প্রয়োজন। তাই একেবারে রিতা আপার মতো চ্যারিটি করতে পারছিনা। কিন্তু যতদিন সংস্থার কিছু ফিক্সড ইনকাম না হচ্ছে আমার বেতনটা আমার কাজের তুলনায় অনেক কমই রেখেছি। কিন্তু কাজের প্রেশার দিন দিন বেড়ে চলছে। এই নিয়ে আশফাকের সাথেও আজকাল মনোমালিন্য হচ্ছে। আশফাক আমার কাজ ভীষণ অ্যাপ্রিশিয়েট করে কিন্তু আমার কাজের প্রেশার বেড়ে যাবার কারণে আমাদের সম্পর্কে এর প্রভাব পড়ছে। ওর কাজেরও অনেক প্রেশার। রাত করে কাজ শেষ করে ও যখন আমার সাথে একটু সময় কাটাতে চায় আমি তখন সংসারের কিছু কাজ সেরে আবার চ্যারিটির কাজ নিয়ে বসি।
আজ রাতে আশফাক ঘুমাতে এসেই আমাকে ডাকলো। তখন আমি একটা কাজ প্রায় শেষ করছিলাম। সেটা শেষ না করে আমি উঠতে চাইনি। এমনিতে ও এসব নিয়ে খুব একটা কিছু বলে না। অপেক্ষা করে। আমিও যতসম্ভব তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে আশফাককে সময় দেবার চেষ্টা করি। কিন্তু আজকে একেবারে অস্থির হয়ে বার বার ডাকতে থাকলো। পাঁচ মিনিটে মনেহয় বিশবার বলেছে যে, আর কতক্ষন আর কতক্ষন। অথচ আমি শুরুতেই বলেছি যে মিনিট পনেরোর মধ্যেই শেষ করে আসছি। আমার মনেহয় কোনো কারণে ওর মেজাজ খারাপ। সেটা বুঝানোর জন্য ইচ্ছা করেই এমন করছে। তারপর হুট্ করেই বলে উঠলো,
– তোমার এই বেগার চ্যারিটির জন্য তো দেখি আমরা সবাই সাফার করছি। এক দুইজন মহিলার জন্য তোমরা আদৌ কিছু করো কি করোনা তার জন্য এত সময় দেওয়া লাগে? এমনকি ছেলেটাকে এতদিন জ্বরে ভুগানোর পর ডাক্তারের কাছে নেবার সময় হলো তোমার?
বুঝাই যাচ্ছে আশফাক এখন ঝগড়ার মুডে আছে। এখন কথা বলা মানে তুমুল বাকবিতন্ডা শুরু হয়ে যাবে। এমনিতে যে আমি তর্ক করি না, তা না। এত ভালো মানুষ আমি না। কিন্তু আজকে তর্ক করতে ভালো লাগছে না। আমাকে চুপ দেখে আশফাক মনেহয় আরো ক্ষেপে গেলো,
– কথা বলছো না যে?
– কী বলবো? তুমি তো এখন ঝগড়ার তালে আছো। আমার ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না।
– ঝগড়া করতে ভালো লাগছে না নাকি আমার সাথে কথা বলতে ভালো লাগছে না। অন্যদের সাথে কথা বলার সময় তো তোমার আগ্রহের কোনো কমতি দেখি না।
আমি কিছু না বলে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়লাম। আমি জানি এর চেয়ে একটু ঝগড়া করে তারপর মিটমাট করে ঘুমানো ভালো ছিল। এখন এর রেশ কয়েকদিন ধরে টানতে হবে। আমার এসব ঝামেলা ভালো লাগছে না। তবে আমাকে ভুল প্রমাণিত করে গভীর রাতে আশফাক সরি বলে আমাকে কাছে টানলো। যদিও আমি এসবের মুডে ছিলাম না কিন্তু আমার মনেহলো এই ভালো। মনের গোজামিল মেলানোর পন্থা যদি শরীরের মিলন হয়, তাহলে তাই সই। যুক্তি, তর্ক, কথা দিয়ে মিল করার চেয়ে এটাই অনেক সহজ। তবে ছেলেকে আমি জ্বরে ভুগিয়েছি এই অপবাদ তো মেনে নেওয়া যায়না। বুকটা আমার আরো ভার হয়ে গেলো।
গভীর রাতে একটু পানি খেতে উঠেছিলাম। অভ্যাসবশত বেডসাইড টেবিলে রাখা মোবাইল ফোনটায় চোখ চলে গেলো। ফেসবুকে বেশ কয়েকটা মেসেজের নোটিফিকেশন। অনেকেই মেসেজ করেছে। এর মধ্যে রিদওয়ান ভাইয়ের একটা মেসেজ আছে। অনেকদিন পর তিনি আমাকে মেসেজ করেছেন। লিখেছে,
– আপনি কি ১৭ তারিখে শাশরাঙা চ্যানেলের বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে আসছেন? আপনারা চাইলে আমি আপনাদের জন্য একটা স্টল টাইপের ব্যবস্থা করে দিতে পারি। ফারাহ বলেছিলো বড়ো আয়োজন, মেলা এইসব জায়গায় আপনারদের সংস্থার প্রচার করতে আপনারা আগ্রহী।
প্রায় একঘন্টা আগের পাঠানো মেসেজ। শাশরাঙা ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড়ো বাংলা চ্যানেল। ওরা বিশাল করে বর্ষপূর্তির আয়োজন করে। এধরণের জায়গায় প্রচার করতে পারলে তো আমাদের খুবই ভালো হয়।
যদিও অনেক রাত এখন, তাও আমি রিপ্লাই করে দিলাম,
– এরকম কোনো ব্যবস্থা করতে পারলে তো খুবই ভালো হয়। সেখানে গিয়ে প্রচার করার জন্য আমাদের কী কী করণীয় জানাবেন।
সাথেই সাথেই রিপ্লাই পেলাম,
– কিছু করতে হবে না। আপনার উপস্থিতিই যথেষ্ট। আপনি উপস্থিত থাকলে কি আর কিছুর প্রয়োজন আছে?
আমি সাথে সাথে জবাব দিয়ে দিলাম,
– অনেক ধন্যবাদ (সাথে হার্ট ইমোজি)।
মেসেজটা পাঠানো মাত্র মনেহলো আমি হার্ট ইমোজি পাঠালাম কেন? কিন্তু ততক্ষনে দেরি হয়ে গিয়েছে। অপরপ্রান্তে মেসেজ দেখা হয়ে গিয়েছে।
(চলবে)
আমিনা তাবাস্সুম
মনের নদী বেশি গভীর
(৭)
আঠারো বছরের উদ্ভিন্নযৌবনা নদী প্রেমে অন্ধ হয়ে বাবা – মা, পরিবার -পরিজন, বন্ধু – বান্ধব, পরিচিত জীবন সব ত্যাগ করে পাড়ার এক বখাটে ছেলের হাত ধরে বেরিয়ে আসতে একটুও কুন্ঠাবোধ করেনি। সেই ছেলের নাম নয়ন। নদীর পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে সে খুব ভালোভাবেই অবগত ছিল। নদীর কথা থেকে আমার ধারণা হয়েছে যে পরিকল্পনা করে, আটঘাট বেঁধেই নয়ন স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে নদীর জন্য প্রেমের জাল ফেলেছিলো। আর সহজ, সুলভ এবং সুন্দরী নদীকে জালে আটকাতে একটুও বেগ পেতে হয়নি নয়নের।
এইসব সব জেনেছি নদীর মেসেজগুলো থেকে। সুযোগ পেলেই মেয়েটা আমাকে ফেসবুকে একেকটা করে মেসেজ পাঠাচ্ছে। নদীর সবসময় ইন্টারনেট কানেকশন থাকে না। বাইরে বের হবারও খুব একটা সুযোগ নেই। অনেক কাঠ খড় পুড়িয়ে ওর এক ভাবীকে কব্জা করে আমার অফিসে কয়েকবার এসেছিলো ও। আপাতত ও যখন ইন্টারনেট কানেকশন পাচ্ছে, তখন শুধু আমাকে মেসেজ করে ওর জীবনের কিছু অংশ জানিয়ে দিচ্ছে। ঠিক গল্পের মতো করে। আমি ওকে কোনো রিপ্লাই করছি না। এতে ওর গল্প শুনানোর আগ্রহে কোনো ঘাটতি হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে না।
নদী যেইসময় ইংল্যান্ডে আসে সেসময় তথাকথিত ভিসা কলেজগুলোর বেশ রমরমা ব্যবসা ছিল। দলে দলে বাংলাদেশের ছেলেমেয়েরা বড়ো অংকের টাকা পয়সা দিয়ে সেইসব ভিসা কলেজে ভর্তি হতো শুধুমাত্র ভিসা পাবার আশায়। না ছিল তাদের পড়াশুনা করার কোনো বাসনা আর না ছিল সেই কলেজগুলোর পড়ানোর কোনো ইচ্ছা। এক পক্ষের উদ্দেশ্য ভিসা পাওয়া আর আরেকপক্ষের উদ্দেশ্য পয়সা বানানো। নয়ন সেরকম এক ভিসা কলেজে ভর্তি হয়ে ইংল্যান্ডের ভিসা জোগাড় করেছিল। আর সেই ভিসা আর ইংল্যান্ডে আসার খরচপাতি সবকিছু জোগাড় করেছিল তার অন্ধ প্রেমিকা নদী। বাসা থেকে পালিয়ে যাবার পর পরই ওরা অবশ্য বিয়ের কাজটা সেরে নেয়। এরপর ভিসা, অর্থ আর সুন্দরী স্ত্রী নিয়ে নয়ন ইংল্যান্ডে পাড়ি জমায়।
নদীর অবশ্য এখনো ধারণা যে নয়ন তাকে ভালোবেসেছিলো। তা না হলে নদীকে নিয়ে এদেশে নাকি আসতো না। টাকা পয়সা মেরে দিয়ে পরে নিয়ে যাবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দেশেই রেখে আসতো। নদীর ধারণার উপর আমার অবশ্য কোনো আস্থা নেই। ওর অনেক ধারণাই আমার ভুল মনেহয়। আমার ধারণা হলো গিয়ে নয়ন টাকা পয়সার সাথে ফাউ ফাউ পাওয়া এক রক্তমাংসের নারীর লোভও সামলাতে পারেনি। নদীকে তো আমি দেখেছি। কেমন যেন অস্থির সুন্দর মেয়েটা। এধরণের সৌন্দর্য অগ্রাহ্য করার সামর্থ্য পৃথিবীর কম পুরুষেরই মনেহয় আছে।
ইংল্যান্ডে এসেই নয়ন একটা বাংলাদেশি রেস্টুরেন্টে কাজ শুরু করে দেয়। নয়নের এক বন্ধু আগে থেকেই ওর জন্য এই কাজের ব্যবস্থা করে রেখেছিলো। তিন তলা বিল্ডিঙের নিচের তলায় বিশাল রেস্টুরেন্ট আর উপরের দুই তলায় রেস্টুরেন্টের স্টাফদের থাকার ব্যবস্থা। দুই তলায় মূলত বেশিরভাগ স্টাফরা থাকে। তিন তলায় ছোট ছোট এক বেডরুমের দুইটা ফ্ল্যাটের মতো আছে। তার একটাতে থাকে রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জামিল ভাই এবং তার স্ত্রী। আরেকটা রেস্টুরেন্টের মালিক ফরিদ সাহেব নিজেই ব্যবহার করেন। তিনি দূরে এক শহরে থাকেন। তাই মাঝে মাঝে রাত পর্যন্ত রেস্টুরেন্টে থাকতে হলে এই ফ্ল্যাটে থেকে যান।
মধ্যবয়সী ফরিদ সাহেব বহুকাল যাবৎ এই দেশে। রেস্টুরেন্টের ব্যবসা করে ভালো টাকা বানিয়েছেন তিনি। কিন্তু কোনো এক কারণে দেশ থেকে স্ত্রী সন্তানদের আনেন নি। দেশে ফরিদ সাহেবের বাবা মায়ের সাথে তার পরিবার থাকে। বছরে বেশ কয়েকবার তিনি দেশে গিয়ে পরিবারের সাথে থেকে আসেন। সেই রেস্টুরেন্টের দুই তালার একটা স্টাফদের রুমে নয়ন নদীকে নিয়ে উঠে। এখানে মূলত ব্যাচেলর পুরুষ স্টাফদের থাকার ব্যবস্থা। তাই ফরিদ সাহেব প্রথমে নদীকে নিয়ে এখানে থাকতে দিতে চান নি। কিন্তু এখানে ফ্রিতে থাকার ব্যবস্থা। নদীকে নিয়ে অন্য কোথাও থাকতে হলে অনেক খরচের ব্যাপার। নয়ন সেয়ানা ছেলে আর সাথে কথা বার্তায়ও ভীষণ তুখোড়। কেমন করে যেন ফরিদ সাহেবকে পটিয়ে ফেলে সে। তিনি নয়নকে শুধু স্ত্রী নিয়ে থাকতেই দেননি, সুদর্শন এবং কথা বার্তায় স্মার্ট নয়নকে কয়েকদিনের মধ্যেই ওয়েটারের কাজের সাথে সাথে টিলের টাকা পয়সা ম্যানেজ করার দায়িত্বও দিয়ে দেন।
লোভী নয়ন এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে একটুও দেরি করেনি। একেবারে প্রথম থেকেই টিল থেকে অল্পকিছু করে টাকা পয়সা সরানো শুরু করে দিয়েছিলো। নদীকেও গর্ব করে ব্যাপারটা বলেছিলো। নদীর একেবারেই ব্যাপারটা ভালো লাগেনি কিন্তু এইসব নিয়ে কথা বললে নয়ন নাকি ভীষণ রেগে যেত। তবে খুব বেশিদিন চুরি করে সুবিধা করতে পারেনি নয়ন। ফরিদ সাহেবও তুখোড় ব্যবসায়ী, সব দিকে তার কড়া নজর। অল্পদিনের মধ্যেই নয়নের দুই নম্বরি তিনি ধরে ফেলেন। ফরিদ সাহেব প্রথমে ওকে পুলিশে ধরিয়ে দেবার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। তারপর নাকি নয়নের কান্না কাটি, মাফ চাওয়ার কারণে আর পুলিশের কাছে রিপোর্ট করেন নি। পুলিশে রিপোর্ট করলে নয়ন মহা বিপদে পড়ে যেত। সে যে স্টুডেন্ট ভিসায় এসে পড়াশুনা না করে পুরাদমে কাজ করছে তা জানতে পারলে ওকে নির্ঘাত ডিপোর্ট করা হতো। অবশ্য পুলিশ কেস হলে ফরিদ সাহেবও বিপদে পড়তেন। নিয়ম অনুসারে স্টুডেন্ট ভিসাধারী কাউকে ফুল টাইম চাকরি দেবার কথা না। কিন্তু তিনি জেনেশুনে এধরণের মানুষদের কম বেতনে কাজ করান। তবে সেই ব্যাপারটা তখন নতুন নতুন এদেশে আসা নদী বা নয়ন কারোই বুঝার অবস্থা ছিলোনা। নয়ন শুধু নিজের কথা চিন্তা করেই ভয়ে ছিলো।
তারপর ফরিদ সাহেবের সাথে নয়নের কী কথা হয়েছে তা নদী জানে না। নদীকে সেখানে রেখেই নয়ন হঠাৎ করেই উধাও হয়ে যায়। আর নদীকে নাকি রেখে যাওয়া হয় ফরিদ সাহেবের রক্ষিতা হিসেবে। ফরিদ সাহেবের কথা অনুসারে এই শর্তেই তিনি নয়নকে পুলিশে না দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন। তবে ফরিদ সাহেব নাকি ভীষণ ধর্মপ্রাণ মানুষ। তাই অনৈতিক কাজ খুব বেশিদিন তিনি করতে চাননি। কয়েকমাস নদীকে সানন্দে ভোগ করার পর হঠাৎ একদিন এক হুযুরকে ডেকে এনে তিনি গোপনে নদীকে বিয়ে করে নেন।
ফরিদ সাহেবের ধর্ম জ্ঞানে আমি কিছুটা স্তম্ভিত। তবে নদীকে আমি কোনো প্রশ্ন করিনি। ওকে ওর মতো কথা বলে যাবার সুযোগ দিচ্ছি। নয়নের সাথে ওর ডিভোর্স হয়েছে কিনা সেটা পর্যন্ত নদী জানে না। আর ফরিদ সাহেবের দেশের স্ত্রীকেও নাকি কিছু জানানো হয়নি। সম্পূর্ণ গোপনীয়তা বজায় রেখে তিনি নদীকে বিয়ে করেছেন। নদীকে বুঝানো হয়েছে যে ফরিদ সাহেব পুরুষ মানুষ। একা একা বিদেশ বিভুঁইয়ে ব্যবসা করেন। পরিবার সাথে থাকেনা। এরকম সময়ে দেশের স্ত্রীকে না জানিয়েই আরেকটা বিয়ে করা জায়েজ আছে। এদেশে তার অনেক আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব আছে। বন্ধু যেমন আছে শত্রুও নাকি তেমন আছে। ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেলে একেবারে কুরুক্ষেত্র বেঁধে যাবে। তাই গোপনীয়তা রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। শুধুমাত্র রেস্টুরেন্টের স্টাফরা ছাড়া আর সবার কাছ থেকে নদীকে গোপন রাখার ব্রত তিনি নিয়েছিলেন।
অতঃপর সেই রেস্টুরেন্টের তিন তালার ফরিদ সাহেবের ছোট ফ্ল্যাটটাতে নদীর এবং ফরিদ সাহেবের নতুন গোপন জীবন শুরু হয়। নদীর বয়স তখন আঠারো, ফরিদ সাহেব চল্লিশোর্ধ। নদী ইতিমধ্যে মা হারিয়েছে। যদিও ধরা পরে মায়ের হার্টের সমস্যা নাকি অনেকদিনের। কিন্তু সবাই নদীকেই ওর মায়ের মৃত্যুর জন্য দায়ী করেছে। বাবার দরজা ওর জন্য চিরোদিনের মতো বন্ধ। যেই অপরাধ ও বাবা মায়ের সাথে করেছে তা তো ক্ষমার অযোগ্য। নদী এই দেশ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বলতে গেলে ওর কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। এইচ এস সি পরীক্ষা দেবার আগেই তো পালিয়ে যায়। আর সর্বোপরি যার জন্য ও সব হারিয়েছে, সেই অনায়াসে নদীকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।
অতঃপর নদীর সেই নতুন জীবন বিষের মতো মনে হলেও বিষপান ছাড়া আর কোনো উপায়ই ওর ছিলো না। শুরু হয় নদীর গোপন জীবন। গৃহবন্দীর জীবন। পাশের ফ্ল্যাটের ম্যানেজার জামিল ভাই এবং তার স্ত্রী নীলু ভাবির সবসময় নদীর উপর কড়া নজর। আর দুই তলার স্টাফরাও নজরদারিতে কোনো অংশে কম না। তারা সবাই তো ফরিদ সাহেবের ভীষণ ভক্ত। ফরিদ সাহেবের দয়ায় তারা এই দেশে বেঁচে বর্তে আছে। তাদের নজর এড়িয়ে নদীর কোথাও যাবার কোনো উপায় ছিলো না। আর উপায় থাকলেই কি ও কোথাও যেতে পারতো? এই দেশে ও না কাউকে চিনে না কাউকে জানে। ধীরে ধীরে এটা ওর পাপের প্রায়শ্চিত্ত মনে করে এভাবেই ফরিদ সাহেবের বন্দিনী হয়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার ব্যাপারটা মেনে নেয় নদী।
এ তো গেলো পাঁচ বছর আগের কথা। এই পাঁচ বছরে ভাগ্যকে মেনে নিয়ে ফরিদ সাহেবের সাথে থেকে গেলেও মাঝে মাঝে নদীর এই বন্দি জীবনে হাঁফ ধরে যেতো। শুধুমাত্র খুব অসুস্থ হলে ডাক্তারের কাছে যাওয়া ছাড়া নদীর বাইরে যাবার কোনো উপায় ছিল না। আর নদী নাকি অসুস্থও তেমন হতো না। মাঝে মাঝে ওর নিজের উপর নিজের রাগ হতো। একটু অসুস্থ হলে কী ক্ষতি হয়? সেই ছুতোয় তো অন্তত এই দম বন্ধ জীবন থেকে একটু বিরতি নেওয়া যায়।
ওর ঘরে অবশ্য কোনো কিছুর অভাব নেই। কাপড়, চোপড়, খাবার, দাবার সবকিছুর ভালো ব্যবস্থা। সারাদিন ঘরে বসে টেলিভিশনের বাংলা চ্যানেলগুলো দেখে সময় কাটিয়ে দিতে পারে নদী। প্রথম প্রথম নীলু ভাবীর ব্যবহার দেখলে নদীর নিজেকে জেলের কয়েদি মনে হতো। কিন্তু মধ্যবয়সী নিঃসন্তান নীলু ভাবীর মনেহয় ধীরে ধীরে নদীর প্রতি মায়া জন্মায়। বিশেষ করে নদীকে যখন অ্যাবরশন করানো হলো তখন নীলু ভাবি তো পুরোটা সময় ওর সাথে ছিল। তখন থেকেই নদীর সাথে তার ব্যবহার বদলে যেতে থাকে। নীলু ভাবি থাকার কারণে নদীর এই বন্দি জীবন কিছুটা সহনীয় ছিল। নীলু ভাবির কারণেই ধীরে ধীরে নদী কালে ভাদ্রে একটু বাইরে যাবার সুযোগ করে নিতে পারতো।
রিদওয়ান ভাইকে নদী টেলিভিশনেই প্রথম দেখে। বাংলাদেশি মেয়েদের ক্ষমতায়ন, পুনর্বাসন এইসব নিয়ে বিভিন্ন সচেতনামূলক অনুষ্ঠানে। রিদওয়ান ভাইয়ের অনুষ্ঠান দেখেই নদীর মধ্যে এক ধরণের আশার সঞ্চার ঘটে। ভিন্নভাবে বেঁচে থাকার আশা। নদী জানে এর এর চেয়ে ভালো কিছু পাবার যোগ্য নদী না। কিন্তু তারপরও মন তো সবসময় তা মানতে চায়না।
ঘরে ওর সব সুযোগ সুবিধা দেওয়া হলেও বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগের কোনো সুযোগ একেবারেই দেওয়া হয়নি। নদীকে ইন্টারনেট অ্যাকসেস দেওয়া হয়নি। এই ব্যাপারে ফরিদ সাহেব ভীষণ স্ট্রিক্ট। ওর একটা মোবাইল ফোন আছে কিন্তু তার ব্যবহার শুধুমাত্র ফরিদ সাহেবের ফোন রিসিভ করা বা তাকে মিস কল দেবার মধ্যে সীমাবদ্ধ। কিন্তু এরপরও নদী বুদ্ধি করে ঠিকই ওর ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা করে নেয়। নীলু ভাবীর মোবাইল ফোনে ডাটা আছে। সুযোগ পেলেই নদী নীলু ভাবীর হটস্পটে কানেক্ট করে তা ব্যবহার করে। নীলু ভাবীর এইসব সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকার কারণে ব্যাপারটা কখনো টের পান নি। সেই নীলু ভাবীর হটস্পট দিয়েই ওর ফেসবুকের ব্যবহার। আর সেখান থেকেই টেলিভিশনের রিদওয়ান ভাইকে খুঁজে বের করা। তার সাথে সংযোগ স্থাপন। অনেকদিন ধরে শুধুই ফলো করা। অন্য কোনো উদ্দেশ্য ছিলোনা নাকি নদীর। যদি কোনো সাহায্য পাওয়া যায়, মুক্তির পথ দেখাতে পারে সেই আশায় রিদওয়ান ভাইকে ফলো করা। কয়েকমাস ফলো করার পর সাহস করে একটা মেসেজ পাঠিয়ে দেয় নদী ,
– আমি আপনাকে টিভিতে দেখেছি। ফেসবুকেও ফলো করি। আমি একটু বিপদে আছি। আমাকে কি একটু সাহায্য করতে পারবেন?
অনেকদিন পর সেই মেসেজের রিপ্লাই পায় ও। ছোট করে উত্তর।
– কী বিপদ সেটা ছোট করে জানালে কার সাথে যোগাযোগ করতে হবে তা জানাতে পারবো। আর বেশি বিপদে পড়লে অবশ্যই ৯৯৯ কল করে পুলিশের সাহায্য নিবেন।
এরপর ছোটকরে নদী জানিয়ে দেয় যে ওকে এক বয়স্ক লোক ট্র্যাপে ফেলে বিয়ে করে আটকে রেখেছে। এর থেকে ও বের হতে চায়।
আবারও অনেকদিন পর রিপ্লাই পেয়েছিলো ও। বেশ কিছু হেল্পলাইনের নাম্বার পাঠিয়ে নদীকে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলে দেন রিদওয়ান ভাই।
নদী কেমন করে ফোন করবে? ও তো কাউকে ফোন করতে পারে না। কিন্তু ও আর কিছু বলে নি। হাল ছেড়ে দিয়ে নিয়তি মনে করে আবারও বাকি জীবন এভাবেই কাটিয়ে দেবার জন্য মনস্থির করে নেয়।
এর কিছুদিন পর ও হঠাৎ করেই বেশ ভালো জ্বরে পড়েছিল। দুই সপ্তাহে যখন জ্বর ভালো হয়নি তখন ফরিদ সাহেব নদীকে নীলু ভাবীর সাথে ডাক্তারের কাছে পাঠায়। সেই ডাক্তারের চেম্বারে যাওয়া মাত্র ওয়েটিং এরিয়ার প্রথম সারির চেয়ারে বসে থাকা মানুষটার দিকে চোখ চলে যায় নদীর। এতদিন ধরে টেলিভিশনে দেখা, ফেসবুকে ফলো করা রিদওয়ান ভাইকে দেখে ওর চিনতে এক মুহূর্তও সময় লাগেনি।
যদিও নদী ভাগ্যকে মেনে নিয়েছিলো, তারপরও নীলু ভাবি যখন নদীকে সেখানে বসিয়ে টয়লেটে গেলো তখন ও নিজেকে সংবরণ করতে পারেনি। কোনো রকমে সাহস সঞ্চয় করে রিদওয়ান ভাইয়ের কাছে গিয়ে হড়হড় করে কিছু কথা বলে আসে।
“আমি নদী। আপনাকে ফেসবুকে মেসেজ করেছিলাম সাহায্য চেয়ে। আপনি কয়েকটা হেল্পলাইনের নাম্বার দিয়েছিলেন। মনে করতে পারছেন কিনা জানিনা। আমার কাউকে ফোন করার কোনো উপায় নেই। আপনি কি আমাকে আর কোনো উপায়ে সাহায্য করতে পারবেন? আমি এই নরক থেকে বের হতে চাই। ফেসবুকে আমাকে জানাবেন প্লিজ। আমি কে আপনি মনে না করতে পারলে আমি আপনাকে আবার মেসেজ করবো। আপনি আমাকে সাহায্য করলে আমি সারাজীবন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।”
তারপর কোনো রকমে নীলু ভাবি টয়লেট থেকে বের হবার আগেই আবার নিজের জায়গায় চলে এসেছিলো নদী।
তারপর যতক্ষণ রিদওয়ান ভাই সেখানে ছিলেন পুরোটা সময় আড়চোখে নাকি নদীকে দেখার চেষ্টা করেছিলেন। ঘরে ফিরে এসে নদীর আর রিদওয়ান ভাইকে মেসেজ করার প্রয়োজন হয়নি। তার আগেই রিদওয়ান ভাইই ওকে মেসেজ করেছিলেন। রিদওয়ান ভাই বিস্তারিত কিছু না জেনেই কথা দিয়েছিলেন যে নদীকে তিনি মুক্ত করে সুন্দর জীবনের সন্ধান দিবেন। রিদওয়ান ভাইয়ের ভাষায়,
“নদীর মতো এরকম বহমান, নির্মল, স্বচ্ছ, টলটলে মেয়েটাকে তো এরকম বদ্ধ জলাশয় হয়ে যেতে দেওয়া যায়না।”
এরপর ধীরে ধীরে নদী হয়ে যায় রিদওয়ান ভাইয়ের,
পাগল-পারা
তন্দ্রাহারা
ফুলের ধারা
আপন-হারা
এরপরই ধীরে ধীরে নদী হয়ে যায় রিদওয়ান ভাইয়ের “স্তব্ধ চাপার তরু”।
(চলবে)
আমিনা তাবাস্সুম