ঝর_বর্ষায় পর্বঃ৪

0
4176

ঝর_বর্ষায়
পর্বঃ৪
Writer: #Warina_Jyoti

.
.
.
.
.

আমার মাথায় কিছু ঢুকছে না। কি করতে চাইছে কি উজান??

আমার শাশুড়ি রাজি হয়ে গেল ওর কথায়।

আমার শাশুড়ি অনেক ভালোমানুষ, তাই নিজের একমাত্র ছেলের কথায় রাজি হতো। অন্য কেউ হলে হয়তো কখনো রাজি হতো না। উলটে আমাকেই কথা শুনিয়ে দিতো যে আমি উনার ছেলেকে উনার কাছে থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছি। কিন্তু উনি আমাকে কিছু বলেন নি। উনার মতো শাশুড়ি পাওয়া সত্তিই ভাগ্যের ব্যাপার। কিন্তু সবার ভাগ্যে সব কিছু থাকে না। আমি তো সব পেয়েও সব বিলিয়ে দিচ্ছি।
অন্য কেউ হলে হয়তো এরকম ভালো একটা পরিবার ছেড়ে চলে যেত না।

আমার মনে হচ্ছে আমার শাশুড়ি উজানের কথায় কষ্ট পেয়েছে, আর পাবে নাই বা কেনো নিজের ছেলেকে ছোট থেকে অনেক ভালোবাসা দিয়ে মানুষ করেছে আজ সে বিয়ে করে বাবা মার ভালোবাসা ভুলে গেল।

আমি এরকমটা চাইনি। আজ যদি উজানের সাথে আমার বিয়ে না হতো তাহলে হয়তো মামুনিকে এতো কষ্ট পেতে হতো না। কিন্তু উজানের থেকে তো আমি শুধু ডিভর্স চেয়েছিলাম ও কেনো নিজের বাবা মা কে কষ্ট দিচ্ছে? কি চাচ্ছে ও?

মামুনি রুম থেকে চলে যাবার পর, আমি রেগে গিয়ে উজানকে প্রশ্ন করলাম এসবের মানে কি?? আমি আপনার থেকে শুধু ডিভর্স দেয়েছিলাম, আপনি তো বলেছিলেন আমাকে ডিভর্স দিবেন তাহলে এখন কেনো আমাকে নিয়ে আলাদা থাকতে চাইছেন বলুন?

আমি তোমাকে ডির্ভস দিবনা। তোমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোমার সাথে সংসার করব।(উজান)

কি বলছে কি এসব উজান?? তবে কি আমি উজানকে চিনতে ভুল করেছিলাম?? না এইটা হতে পারে না।

আমি উজানকে বললাম, কি বলছেন এইসব আপনি?আপনি কিন্তু আমাকে কথা দিয়ে ছিলেন যে আমাকে ডির্ভস দিবেন, কিন্তু এখন…

তোমরা মেয়েরা সবসময় এক লাইন বেশি বুঝ কেনো? কথাটা তো শেষ করতে দিবে নাকি??(উজান)

উজানের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না।
মানে??

সাধে কি বলি মেয়েদের মাথায় কোনো বুদ্ধি নেই?(উজান)

আমি বললাম, দেখুন এবার কিন্তু আপনি আমাকে অপমান করছেন। আসল কথাটা বললেই তো হয়। এতো ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলার কি আছে??

আমি চাইনা আমার বাবা মা কষ্ট পাক।(উজান)

আমি উজানের কথা পুরো শেষ করতে না দিয়ে বললাম আপনার কি মনে হয় উনারা তোমার এই সিদ্ধান্তে কষ্ট পায়নি??
আপনি উনাদের একমাত্র সন্তান। আপনি উনাদের না দেখলে কে দেখবে?

তুমি আগে আমাকে পুরো কথাটা শেষ করতে দাও। আমি যা করছি আমার বাবামার কথা ভেবেই করেছি। আমি তোমাকে ডিভর্স দিব এটা জানলে উনারা সেটা সহ্য করতে পারবেন না। উনারা আমার থেকে অনেক বেশি ভালো তোমাকে বাসে। তাই তোমাকে নিয়ে আলাদা বাসায় থাকার কথা বলতে হলো।

আপনাকে তো আমি বলি নাই যে আলাদা বাসায় থাকব। কেন আমার জন্য নিজের বাবা মার কাছে খারাপ হচ্ছেন??

উজান একটা ভিলেনি হাসি দিয়ে বলল, তোমার মাথায় বুদ্ধি কম, তুমি বুঝবে না।
তারপর রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।

আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলাম এই উজান আমার জন্য এতো কিছু কেনো করছে? ও কি আমাকে ভালোবাসে নাকি সব কিছু করছে আমার থেকে মুক্তি পাবার জন্য। এসব আমি কি ভাবছি? ও কেনো আমাকে ভালোবাসতে যাবে? ও তো প্রীতিকে ভালোবাসে।

রেডি হয়ে নাও। আমরা আজ নতুন বাসায় উঠবো।(উজান)

আর কয়েকদিন থেকে যেতে ইচ্ছে করছে আমার, তবে কি আমি এই পরিবারের মায়ায় পরে গেলাম? কিন্তু আমি তো প্রীতিকে কথা দিয়েছি তাই আমাকে ছেড়ে যেতেই হবে।

তাই উজানকে বললাম ঠিক আছে। আপনি বাহিরে যান আমি রেডি হয়ে নিন।

আজ আমরা চলে যাচ্ছি এই বাসা থেকে। আমার নিজেকে খুব স্বার্থপর মনে হচ্ছে। যারা আমকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসলো আমি কি না তাদের থেকে তাদের সন্তানকে কেড়ে নিচ্ছি?

আমার সেদিনের কথা খুব মনে পরছে যেদিন প্রথম আমরা উজানের বাসায় আসি। আমি যদিও আসতে চাইছিলাম না, তবুও প্রীতির কারনে আসতে হলো।

আমাদের টিমের সবাই গিয়েছিলাম উজানের বাসায়। বাসায় ঢুকতেই উজানের আম্মু আমাকে বেশ যত্ন করতে থাকে নিজের মেয়ের মতো। উজান ওর বাবা মার একমাত্র সন্তান। কিন্তু আমাদের কারও মাথায় ঢুকছিলো না ওর আম্মু কেন আমাকে এতো আদর করছেন?

প্রীতি হয়তো এই জন্য আমার ওপর একটু রাগ করছিল।
কিন্তু বাকিরা আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করছিল।

ছানিয়া তো সবার সামনে বলেই ফেলেছিল উজান ভাইয়ার আম্মু কি জয়াকে বউমা বানাবে নাকি যে এতো আদর করছে জয়াকে, কথাটা শুনে আমি খুব রেগে যাই।

আমি ছানিয়াকে কিছু বলার আগেই উজান বলে কি যে বল না তুমি ছানিয়া! আমার বউ হবে খুব লক্ষী, সুন্দরী, ভদ্র কিছুটা প্রীতির মতো, ওর মতো পেত্নীকে কে বিয়ে করবে, যে কথা কথায় রাগে যায়। ওর সাথে বিয়ে হলে তো আমার জীবন তেজপাতা করে দিবে, হা হা হা!

ওর কথাগুলো শুনে আমার খুব খারাপ লাগে কিন্তু আমি মুখে কিছুই বলিনা।

সবাই ব্যাপারটা নিয়ে হাসাহাসি করে। কিন্তু আমার চোখ দিয়ে পানি বের হচ্ছিল তখন, আমি ঐ রুম থেকে চলে আসি।

আমার পিছে পিছে উজানও আসে। আর আমাকে বলে আমার আম্মুকে পটিয়ে আমার বউ হবার স্বপ্ন ভুলে যাও।

আর হ্যাঁ আমার আম্মু অনেক ভালো তাই তোমার সহজ সরল, মায়াবী চেহারা দেখে গলে গেছে। পারলে আমার আব্বুকে পটিয়ে দেখাও।

আমি আর এইসব অপমান সহ্য করতে পারছিলাম না, ইচ্ছে হচ্ছিল এক্ষুণি উজানের গালে ২টা থাপ্পড় বসিয়ে দি। কিন্তু পারলাম না শুধু প্রীতির কথা ভেবে।

নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম, দেখুন আপনার বউ হবার আমার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে নেই। আর হ্যাঁ আমি আন্টিকে পটানোর কোনো রকম চেস্টা করছি না, আর আপনি এই যে বললেন না আপনার বাবার মন জয় করার কথা? এইটা বরং আপনি প্রীতিকে গিয়ে বলুন।

হ্যাঁ জানি, তোমার দ্বারা এটা সম্ভবও না। আসলে তোমাকে দিয়ে কিছুই হবে না। (উজান)

আপনি কি আমাকে চ্যালেঞ্জ করছেন?

মনে কর তাই। (উজান)

উজানের কথাগুলো আমার ইগোতে লেগেছিল, আমি কিছু না ভেবেই বললাম, ঠিক আছে আমি আপনার চ্যালেঞ্জ এক্সসেপ্ট করলাম। ৩দিনের মধ্যে আপনার বাবার মন জয় করবো।

আর যদি না পারো তাহলে??(উজান)

আমি বললাম, তাহলে আর কোনোদিন আপনার সামনে আসবো না। আর যদি পারি তাহলে আপনাকে সবার সামনে আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।

ঠিক আছে। (উজান)

আমি উজানের বাবার মন জয় করে ফেললাম। কিন্তু এটাই আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ালো।

উজানের বাবা আমার আব্বুকে উজান আর আমার বিয়ের পোস্তাব দিয়ে বসে।
আব্বু আম্মুও রাজি হয়ে যায়।
কিন্তু আমার আব্বু আম্মু কেন আমাকে জানালো না আমার কার সাথে বিয়ে হচ্ছে!?
এভাবে জোর করে বিয়ে কেনো দিল? উজান তো যানতো ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে কিন্তু ও বা কেন বিয়েটা ভেঙে দিতে চেস্টা করল না??
শুধুই কি বাবা মার চাপে আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলো?

ও কেন প্রীতিকে ঠকালো?? কি কারন থাকতে পারে এর পেছনে?? এর উত্তর আমি আজ পেলাম উজান ওর বাবা মাকে খুব ভালোবাসে তাই আমাকে বিয়ে করেছিল।

এসব ভেবে এখন কোনো লাভ নেই। আমাদের কিছুদিনের মধ্যে ডিভর্স হয়ে যাবে তখন যে যার নিজের মতো বাঁঁচবো।

হঠাৎ আমার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখি প্রীতি কল করেছে।
সবার আগে আমার গল্প পড়তে চাইলে “নীল ক্যাফের ভালোবাসা” পেজে পাবেন।
আমি কল রিসিভ করতেই ও বলল কেমন আছিস?

ভালো, তুই?

আমিও ভালোই আছি। আগে তুই বল যে উজানকে ডিভর্স দিবি কবে?(প্রীতি)

এইতো ৪, ৫ দিনের মধ্যে।

ঠিক আছে! ভালো থাকিস, বাই।

উজান এসে বলল তুমি রেডি তো?

আমি মাথা নেড়ে বললাম হু।

উজান বলল ঠিক আছে চল।

আমরা নতুন বাসায় আসলাম। কিন্তু আমার একদম ভালো লাগছিল না, মামুনি আর বাবার কথা খুব মনে পড়ছিল। ইশ যদি থেকে যেতে পারতাম উজানের বউ হয়ে। কি ভাবছি এসব আমি? উজান শুধু প্রীতির।

খেয়ে নাও, সকালে কিছু খাওনি ভালো করে! উজানের কথায় সকল ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।

আমি এখন খাব না। আপনি আমাকে ডিভর্স দিবেন কবে??

কিছু না বলে উজান রুম থেকে চলে গেলো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here