লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
পর্ব ১৮,১৯,২০
সামিরা আক্তার
১৮
**রাফসানের কল দেখে অবাক হলো চৈতালী। এসময় কেন কল করেছে?
চৈতালী কে ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে কনুই দিয়ে গুতা দিলো শাপলা।
বললো- কে ফোন করেছে?? রিসিভ করিস না কেন??
– ইয়ে রাফসান ভাই ফোন করেছে। কিন্তু এসময় কেন??
-ফোন ধরলেই না জানতে পারবি কেন। বললো সাব্বির।
-কিন্তু এই রাফসান ভাই কে?
কথা বলতে বলতে ফোন কেটে গেলো। পরহ্মণেই আবার বেজে উঠলো। চৈতালী ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে রাফসান বলে উঠলো – আমি তোর ইউনিভার্সিটির সামনে দাঁড়িয়ে। বেরিয়ে আয়।
চৈতালী উঠে বললো আমাকে যেতে হবে। ওর সাথে সাথে সবাই বেরিয়ে এলো ক্যান্টিন থেকে। বের হতে হতে উর্মি আবার জিজ্ঞেস করলো বললি- না এই রাফসান টা আবার কে?
– আমার কাজিন।
– কেমন কাজিন??
– চাচাতো ভাই।
-ওহ?
গেটের বাইরেই রাফসান কে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেলো। রাফসান কে দেখেই উর্মি বলে উঠলো – ওহ মাই গড। দোস্ত এই হ্যান্ডসাম পোলাটা তোর কাজিন??
ওর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকালো চৈতালী। উর্মির ভাবগতিক বোঝার চেষ্টা করলো। উর্মি তখন হা হয়ে রাফসানের দিকে তাকিয়ে আছে।
চৈতালীর ইচ্ছে করলো ওকে থাটিয়ে একটা থাপ্পড় মারতে। বেহায়া মেয়ে। অন্যের স্বামীর দিকে নজর দেয়।
**চৈতালী কে দেখে এগিয়ে গেলো রাফসান। কিছু বলার আগেই হঠাৎ উর্মি দৌড়ে এসে বললো- আপনি চৈতালীর কাজিন?? ওমাগো ওর যে এত হ্যান্ডসাম কাজিন আছে তা কিন্তু আমাদের বলে নি। বাই দ্যা ওয়ে আপনি কি সিঙ্গেল?? আমি কিন্তু পিওর সিঙ্গেল।
উর্মির এমন কান্ড দেখে বিরক্ত হলো সাব্বির। পলাশ কে বললো- এই ছ্যাঁচড়া মাইয়া ক্যামনে আমগো বন্ধু হলো ক তো।
– শুধু উর্মির কথা বলিস কেন?? শাপলার দিকে দেখ।
সাব্বির শাপলার দিকে তাকিয়ে দেখলো শাপলা হা হয়ে তাকিয়ে আছে।
সে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিলো। এই মেয়ে জাতি এমন কেন??
ওদিকে উর্মি বলেই চলেছে – ভাইয়া আপনার ফোন নাম্বার দেওয়া যাবে অথবা ফেসবুক আইডি?
চৈতালী হা হয়ে উর্মির কর্মকান্ড দেখছিল। এই মেয়ের লাজ-লজ্জা কিছুই নেই না কি? কোন লেভেলের বেহায়া হলে মানুষ প্রথম দেখায় এরকম ছ্যাঁচড়ামি করতে পারে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলো শুধু উর্মি না অনেক মেয়েই হা করে তাকিয়ে আছে রাফসানের দিকে। চৈতালীর এবার সব রাগ রাফসানের উপর গিয়ে পড়লো। এই লোক কে এখানে আসতে কে বলেছে??
রাফসান বুঝলো চৈতালী তাকে কাজিন বলেছে। তার কোথাও একটু খারাপ লাগলো। তার বয়স বেশি বলেই কি চৈতী তাকে হাজবেন্ড হিসাবে পরিচয় করে দিচ্ছে না? আজ সে এখানে এসেছে চৈতীকে এক নজর দেখার জন্য। হঠাৎই দেখতে মন চাইলো। কেন চাইলো সে জানে না। একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে সে চৈতালীর দিকে তাকাতেই দেখলো চৈতালী রক্তচহ্মু নিয়ে উর্মির দিকে তাকিয়ে আছে।
তার মানে কি চৈতী জেলাস?? রাফসানের খারাপ লাগা হাওয়ায় মিলিয়ে গিয়ে মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি খেলে গেলো।
সে উর্মি কে বললো- তোমার মত সুন্দরী মেয়েকে ফোন নাম্বার বা ফেসবুক আইডি দিতে আমার কোন আপত্তি নেই। সুন্দরী দের সাথে যোগাযোগ রাখতে কার না ভালো লাগে।
– দিন তাহলে। গদগদ স্বরে বলে উঠলো উর্মি।
এতহ্মণ নিজেকে সামলে রাখলেও এবার মেজাজ হারালো চৈতালী। ঠাস করে এক থাপ্পড় মারলো উর্মি কে। ওর থাপ্পড় দেওয়া দেখে উপস্থিত সবাই বোকা বনে গেলো।
দাঁতে দাঁত চেপে চৈতালী বললো- তোর এই বেহায়াপনা অন্য কোথাও দেখাবি। তোর সাহস দেখে আমি মরে যাই তুই আমার সামনে আমার হাজবেন্ডের ফোন নাম্বার চাস।
বলেই গটগট পায়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো সে।
চৈতালী যেতেই ওর হয়ে উর্মির কাছে হ্মমা চাইলো রাফসান। উর্মি কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো- ইটস্ ওকে ভাইয়া। ওর জায়গা আমি থাকলেও সেম কাজটাই করতাম। তবে আমারও কোন দোষ নেই। আমাদের চৈতালী বলে নি ও বিবাহিত। আপনি ওর হাজবেন্ড।
-একদম ঠিক করছে। তুই একটু বেশিই ছ্যাঁচড়া। বললো সাব্বির। তছাড়া চৈতালীর সাথে আমাদের পরিচয় মাত্র ১মাসের। সময় হলে ঠিকই বলতো।
ওদের কাছে আরেক দফা হ্মমা চেয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো রাফসান আঁড়চোখে তাকালো চৈতালীর দিকে। বুঝতে পারলো চৈতী হ্মেপে বোম হয়ে আছে।
বুকের ভিতর একটা শীতল স্রোত বয়ে গেলো রাফসানের। তারমানে চৈতালীর তার প্রতি ফিলিংস সত্যি আছে। তার জন্য জেলাস হচ্ছে।
রাফসান ইঠাৎ অনুভব করলো জীবনটা ভয়ংকর রকমের সুন্দর।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য সে চৈতালী কে বললো
– শুধু শুধু মেয়েটা কে থাপ্পড় মারলি।
রাফসানের কথা বলার সাথে সাথে চৈতালী যেন হামলে পড়লো তার উপর। বললো- শুধু শুধু? ও যে ছ্যাঁচরামি করছিলো তা তোমার চোখে পড়লো না??
– কিন্তু তুই তো ওকে বলিস নি আমি তোর হাজবেন্ড।
– তো এখন বলে দিলাম বলে কি তোমার আফসোস লাগছে। সুন্দরী ললনা হাত ছাড়া হয়ে গেলো বলে?
রাফসান বুঝলো চৈতী ঝগড়ার মুডে আছে। কিন্তু সে তো ঝগড়া করবে না। তার মন আজ ভীষণ ভালো। তাই বললো – আমি শুধু বললাম তুই কাজ টা ঠিক করিস নি। আর তুই কি বলছিস?
– আচ্ছা কাজটা ঠিক করি নি তো কি করতে হবে? তোমার ললনার পায়ে ধরে হ্মমা চাইতে হবে? ঠিক আছে গাড়ি ঘোরাও। গিয়ে তোমার ললনার পায়ে ধরে আসি।
রাফসান হতভম্ব হয়ে গেলো চৈতালীর কথায়। বুঝলো সে এখন যাই বলুক চৈতী তার উল্টো মানে বের করবে। তার কোথাও ভালো লাগছে চৈতালী তার প্রতি এত পজেসিভ দেখে। নিজেকে সামলে বললো- কি যা তা বলছিস আমার ললনা মানে?
– আমার কথা তোমার যা তাই মনে হবে এখন। ব্যাটা লুচু ঘরে বউ থাকতে অন্য মেয়েদের সুন্দরী বলে তাদের ফোন নাম্বার দিতে চায়।
রাফসান চৈতালীর কথা শুনে শব্দ করে হেঁসে ফেললো। বললো- আমি অন্য মেয়ের পাল্লায় পড়লে তুই বেঁচে যাস চৈতী। তোকে এই আধবুড়ো লোকের সাথে থাকতে হবে না।
রাফসান কথা শেষ করার সাথে সাথে চৈতালী সিট বেল্ট খুলে রাফসানের উপর ঝাপিয়ে পড়লো। তাকে খাঁমচে কাঁমড়ে একাকার করে দিলো।
চৈতালীর এহেন আক্রমণে রাফসান দিশেহারা বোধ করলো। কোনরকমে চৈতালী কে জাপটে ধরলো নিজের বুকের ভিতর।
রাফসানের বুকের ভিতর চৈতালী হঠাৎই শান্ত হয়ে গেলো। তারপর ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো। তার বড্ড অভিমান হয়েছে। কেন রাফসান অন্য মেয়েকে সুন্দরী বলবে? কেন তাদের সাথে হেঁসে হেঁসে কথা বলবে? কই তাকে তো সুন্দরী বলে না। তার সাথে তো হেঁসে হেঁসে কথা বলে না। রাফসান কি বুঝে না চৈতী তাকে ভালবেসে ফেলেছে।
** রাফসান যখন বুঝতে পারলো চৈতালী শান্ত হয়েছে। তখন চৈতালীর দিকে তাকালো। এই মেয়ে কবে তার মনের ভিতর ঢুকে বসে আছে সে বুঝতেই পারে নি। আচমকা সে চৈতালীর মুখটা তুলে দু চোখে দুটো চুমু দিলো।
রাফসানের কাজে চৈতালীর সব রাগ অভিমান পালিয়ে গিয়ে সেখানে ভর করলো এক রাশ লজ্জা। রাফসান নিজেও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো।
সারা রাস্তা কেউ আর কথা বললো না।
***সেদিনের ঘটনার পর রাফসান এক প্রকার পালিয়ে বেড়ায় চৈতালীর থেকে। হু হা দিয়ে কথা সারে। চৈতালী নিজেও লজ্জা পায়। যদিও সেই ঘটনার জন্য সে উর্মিকে সরি বলেছে।
তবে কাল রাফসান কি করে এটা দেখার বিষয়। কারণ কাল তার জন্মদিন। তার আঠারো বছর হবে সেই সাথে বিষয়ে পাঁচ মাস পূর্ণ হবে।
অথচ মনে হয় সেদিন তাদের বিয়ে হলো। আশ্চর্যের বিষয় এই পাঁচ মাসে চৈতালীর আশরাফ কে মনে পড়ে নি। তাহলে আশরাফের প্রতি কি ছিলো?? শুধুই ভাল লাগা??
অথচ চৈতালী এখন চিন্তাও করতে পারে না সে রাফসান কে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকবে।
চৈতালী এটা বুঝে গেছে রাফসান ও তার প্রতি দূর্বল। রাফসানের তার কাছে ধরা দেওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।
( ক্রমশ)
লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ১৯
সামিরা আক্তার
**রাফসান অফিসের কাজে একটু ব্যাস্ত ছিলো একয়দিন। গাজীপুরের প্রজেক্ট টা নিয়ে একটু ঝামেলায় ছিলো।
আজ একটু ফ্রি হয়েছে। কয়দিন ধরে তার রাফিয়ার সাথে কথা হয় না। ভাবলো আজ কল করবে। এর মাঝে রাফিয়া নিজেই কল করলো। রাফসান রিসিভ করতই ফোনের স্কিনে ভেসে উঠলো রাফিয়ার সুখী সুখী চেহারা।
রাফসান বুকের ভিতর কেমন শান্তি অনুভব করলো। এই একটা জায়গাতে তার কোন ভুল হয় নি। জুনায়েদ কথা রেখেছে। তার বোন কে ভালো রেখেছে। রাফিয়াকে বললো- কেমন আছিস রাফু?? তোর শরীর কেমন??
– আমি ভালো আছি। তুমি আর চৈতালী ভালো আছো তো??
– আমরা ভালো আছি।
– তুমি যে ভালো আছো আমি বুঝতে পেরেছি ভাইয়া। তোমাকে বলেছিলাম চৈতালী ভালো মেয়ে। তোমাকে ভালো রাখবে। মিললো আমার কথা??
রাফসান মৃদু হাঁসলো। রাফিয়া আবার বললো- কাল চৈতালীর জন্মদিন। তোমার মনে আছে তো।
রাফসানের মনে ছিলো। গত ১৫ দিন চৈতালী ইনিয়েবিনিয়ে একথাই বলেছে তাকে। তাই অন্যরকম কিছু ভেবেছে রাফসান। সে রাফিয়া কে বললো- হুম মনে আছে।
ওপাশ থেকে রাফিয়া বললো- শোন ভাইয়া একদম নিরামিষ হয়ে থাকবে না। ওর জন্য সারপ্রাইজ প্ল্যান করবে।
-দেখি।
-দেখি না। করবে। একগাদা বকবক করতে লাগলো রাফিয়া।
**রাফসান শপিংমলে এসেছে। উদ্দেশ্য চৈতালীর জন্য কিছু কেনা। কিন্তু কি কিনবে তাই বুঝতে পারছে না। সে মেয়েদের জিনিস কখনো কিনে নাই। রাফিয়া নিজের আর জন্য একাই শপিং করতো।
১ বছরের সংসারে আফরিনও নিজেই শপিং করেছে। আচ্ছা রাফিয়া কে ফোন দিয়ে জানতে চাইবে কি কেনা যায়??
না থাক। রাফিয়া হয়তো কিছু বলবে না। কিন্তু জুনায়েদ দায়িত্ব নিয়ে পুরো দুনিয়া জানিয়ে দিবে।
তার থেকে বরং সে চৈতী নিয়ে এসে শপিং করবে ভেবে বেরিয়ে যাচ্ছিলো।
আচমকা তার চোখ গেলো দোকানে পুতুলের গায়ে জরানো একটা শাড়ির দিকে।
লাল পাঁড়ের একটা সাদা শাড়ি। এক মুহূর্তর জন্য রাফসান চৈতালী কল্পনা করলো পুতুলের জায়গায়।
আচ্ছা চৈতীর কি এরকম শাড়ি আছে?? নাহ্ এরকম শাড়ি তো পড়তে দেখে নি ওকে।
রাফসান শাড়ির দিকে এগিয়ে গেলো। খুবই সিস্পল। আঁচল টা লাল। পাঁড় টাও লাল। শাড়ির জমিন টা সাদা। সাদা মধ্যে হালকা সুতার কাজ।
রাফসানের মনে হলো এই শাড়ি টা চৈতীর জন্যই তৈরি হয়েছে।
কোন কিছু চিন্তা না করেই শাড়িটা কিনে নিলো সে।
**রাফসান যখন ফিরলো তখন চৈতালী হাতে মেহেদী দিচ্ছিলো। ওর দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্তত বোধ করলো রাফসান। শাড়ি তো কিনে ফেললো এখন কি ভাবে দেবে??
রাফসানকে ওরকম করতে দেখে চৈতালী বললো- কিছু বলবে??
দু পাশে মাথা নাড়লো রাফসান। তারপর আচমকা শপিং ব্যাগটা চৈতালীর হাতে দিয়ে দ্রুত পায়ে বেড রুমে চলে গেলো সে।
মেহেদী দেওয়া হাতটা ধুয়ে এসে ব্যাগের ভিতর থেকে শাড়িটা বের করলো চৈতালী।
অজান্তেই তার মুখ দিয়ে বের হলো ওয়াও। তারপর শাড়ি দেওয়ার ধরণ মনে পড়তেই হেঁসে ফেললো সে।
**রাফসান চৈতালী কে নিয়ে একটা এতিমখানায় এসেছে। চৈতালী সারা রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিলো তারা কই যাচ্ছে?
রাফসান একটাই উত্তর দিয়েছে গেলেই দেখতে পাবি। যদিও এতিমখানায় কেন এনেছে সে বুঝতে পারছে না।
এখানে এসে দেখছে ছোট ছোট ছেলে মেয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে।
সবার মুখে হাঁসি। রাফসান কাছে যেতেই ওকে ঘিরে ধরলো সবাই। বোঝা যাচ্ছে এখানে রাফসানের যাতায়াত আছে।
এতিম খানার এক পাশে দুটো গরু জবাই হয়েছে। বাচ্চারা চরম উৎসাহ নিয়ে গরু কাটা দেখছে। কেউ রান্নার জায়গা তে।
অনেকে আবার কাজও করছে। যেন আজ ওদের ঈদ।
চৈতালী ঘুরে ঘুরে ওদের দেখছিল। এর মাঝে রাফসান বললো- চৈতী।
-হুম। বলেই তাকালো চৈতালি।
– ভালো লাগছে তোর এখানে??
– খুব ভালো লাগছে। কিন্তু তুমি আমাকে এখানে কেন নিয়ে এলে?
– আজ আমরা ওদের সাথে খাবো তাই। আমি তো মাঝে মাঝেই খাই।
– তুমি যে মাঝে মাঝে খাও সেটা বোঝা যাচ্ছে। তবে আমি কিছু বুঝছি না।
রাফসান হাঁসলো। বললো – ওদিকে চল বলি।
এতিম খানার একপাশে গাছের ছায়ায় বসে চৈতালী বললো- এবার বলো।
রাফসান বললো-এই এতিমখানা তে আমি মাঝে মাঝেই ডোনেশন দেই। এজন্য আসতে হয়। আজ তোর জন্মদিন। তাই ভাবলাম এই খুশিটা এই এতিম বাচ্চাদের সাথে শেয়ার করি। তাই এই ব্যবস্থা।
– হুম বুঝলাম। কিন্তু তুমি তো ওদের বাইরে নিয়ে গিয়ে রেস্টুরেন্টে খাওয়াতে পারতে। তা না কারে….
– তা পারতাম। তাহলে একটা জিনিস মিস হয়ে যেতো। এই দেখ বাচ্চা গুলো কি খুশির সাথে গরু কাটা থেকে শুরু করে সব কাজে অংশ নিচ্ছে দেখেছিস। যেন পিকনিক পিকনিক ভাব। ব্যাপারটায় আলাদা মজা পাচ্ছে। এইটা রেস্টুরেন্টে গেলে হতো না তাই এ ব্যবস্থা।
চৈতালী অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো রাফসানে দিকে। এই রাফসান কে সে আজ আবিষ্কার করলো।
**ওরা যখন এতিম খানা থেকে বিদায় নিলো তখন বিকেল গড়িয়েছে। গাড়িতে বসে চৈতালী প্রথম বললো- ধন্যবাদ তোমাকে। এত সুন্দর একটা দিন আমাকে গিফট করার জন্য।
জবাবে রাফসান মৃদু হাসলো।
চৈতালী হঠাৎ খেয়াল করলো গাড়ি বাসার দিকে যাচ্ছে না। বললো- বাসায় যাবে না?
– যাব একটু পর। এদিকে একটা সুন্দর জায়গা আছে ওখানেই যাচ্ছি।
চৈতালীরা যেখানে এসেছে সে জায়গাটা ভীষণ নিরিবিলি। সামনে একটা নদী। এখানে নদীর পাড়ে বেশ কয়েক জোড়া প্রেমিক যুগলকে দেখা গেলো বসে থাকতে।
চৈতালীর ও ইচ্ছে করলো ওভারে রাফসানের কাঁধে মাথা দিয়ে বসে থাকতে।
কিন্তু লজ্জায় বলতে পারলো না ও। ওর যে আজকাল কি হয়েছে শুধু লজ্জা পাচ্ছে। কই আগে তো এরকম লজ্জা পেতো না সে।
রাফসান হঠাৎ ডেকে উঠলো বললো- চৈতী নৌকায় চড়বি??
লাফিয়ে উঠলো চৈতালী বললো -চড়বো।
রাফসান একটা নৌকা ভাড়া করলো। চৈতালী নৌকায় বসেই পানিতে পা ডুবিয়ে দিলো। তারপর রাফসানের দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হাঁসলো।
চৈতালীর এ হাঁসি বুকে গিয়ে ধক করে উঠলো রাফসানের। মনে হলো সময়টা এখানেই থেমে যাক।
রাফসান কি জানতে পারলো তার পাশে বসে চৈতালীও ঠিক একই দোয়া করছে।
(ক্রমশ)
লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ২০
সামিরা আক্তার
** শ্রাবণের মাঝামাঝি সময় চলছে। এই তীব্র গরম আবার এই স্বস্তির বৃষ্টি।
এর মাঝে আরও ২ মাস কেটে গেছে। রাফসান চৈতালীর সম্পর্ক আরও সহজ হয়ে গেছে। দুজনেই দুজনের ভালবাসা বুঝতে পারে তবে দেয়াল ভেঙ্গে সামনে আগায় না কেউই।
রাফসানের আজ কাজ তাড়াতাড়ি শেষ হওয়ায় বাসায় চলে এসেছে তাড়াতাড়ি। এমনিতেই ওর বাইরে সময় কাটানোর অভ্যাস কম। এক সময় প্রচুর বন্ধু বান্ধব থাকলেও সময়ের সাথে দূরে চলে গেছে সবাই। এখন একমাত্র জুনায়েদই কাছের বন্ধু। তাও সে দেশের বাইরে। তাই অফিস আর বাসা এটুকুই তার গন্তব্য।
রাফসান যখন বাসায় ফিরলো তখন মেঘে ছেয়ে গেছে চারপাশ। যেকোন সময় বৃষ্টি নামতে পারে। কলিং বেল বাজিয়ে না পেয়ে চাবি দিয়ে দরজা খুললো সে।
আওয়াজ করে চৈতালী কে ডাকলো। চৈতালী সারা দিলো না।
রাফসান অবাক হলো। তারপর ভাবলো ওয়াশরুমে গেছে হয়তো। সে ডাইনিংয়ের সোফায় বসলো। কিন্তু অনেক সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরও যখন চৈতালী এলো না তখন টনক নড়লো রাফসানের।
দ্রুত পায়ে বেড রুমে এলো কিন্তু চৈতালী কে পেলো না। ওয়াশরুম দেখলো সেখানে নেই। বারান্দা চেক করে বাকি রুমটাও চেক করলো সে। নেই চৈতালী।
রাফসানের মাথা ফাঁকা হয়ে গেলো। কই গেলো চৈতালী। ও কি কোন দরকারে বাইরে বের হয়েছে?? বের হলে আসবে কিভাবে? যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি হতে পারে। আর তাকেও তো কিছু বলে নি।
হঠাৎ বিছানার পাশে চৈতালীর ফোন টা নজরে এলো রাফসানের।
ফোন তো এখানেই তাহলে চৈতী কোথায়??
ছাঁদে যায়নি তো?? ছাদের কথা মাথায় আসতেই দ্রুত ছাদের দিকে গেলো সে।
** ছাঁদে আসতেই থমকে গেলো রাফসান। ততক্ষণে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর আকাশের দিকে মুখ করে দুহাত প্রসারিত করে সেই বৃষ্টি উপভোগ করছে চৈতালী।
চৈতালীর পরনে রাফসানের দেওয়া সেই লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি টা। যেটাতে রাফসানের কল্পনার চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে চৈতীকে।
লাল হাতাকাটা ব্লাউজের সাথে লাল পাঁড়ের এই সাদা শাড়ি। খোলা চুল, দুহাত ভর্তি সাদা চুড়ি, চোখে মোটা করে কাজল টানা, ঠোটে গাঢ় লিপিষ্টিক। মোহনীয় লাগছে ওকে।
কিন্তু সাদা চুড়ি পড়লো কেন?? লাল নেই না কি??
একটা শুকনো ঢোক গিললো রাফসান। মনে হলো এই ঠান্ডা আবওহাওয়াতেও সে ঘামছে।
আচ্ছা এই মেয়ের কি হাতা কাটা ছাড়া আর কোন ব্লাউজ নেই। চৈতীর এই রুপে যে খুন হচ্ছে রাফসান তা কি বুঝতে পারছে চৈতী??
আচমকাই বৃষ্টি জোরে আসতে শুরু করলো। চৈতালীর শরীরে লেপ্টে থাকা বৃষ্টির কণা গুলোকেও হিংসা হলো রাফসানের।
কিভাবে তার প্রেয়সী কে ছুয়ে আছে। কই সে তো ছুতে পারছে না।
হঠাৎ চৈতালী রাফসানকে দেখতে পেলো। ইশারায় ডাকতেই এগিয়ে গেলো রাফসান। তার কানে আর কিছু বাজছে না। সে চৈতালীর ডাক ছাড়া যেন আর কিছু শুনতে পাচ্ছে না।
চৈতালীর কাছে আসতেই রাফসান চৈতালীর দু গালে হাত রাখলো। চৈতালী একটু অবাক হলো সেও তাকালো রাফসানের দিকে। রাফসানের চোখে যেন আজ অন্য কিছু দেখতে পেলো সে।
রাফসান এক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে চৈতালীর ঠোটের দিকে। ঠোটে বিন্দু বিন্দু পানি কণা। আচমকা রাফসান চৈতালীর ঠোঁটে নিজের ঠোট ডুবিয়ে দিলো।
রাফসানের এমন আক্রমনে ঘাবড়ে গেলো চৈতালী।
হঠাৎ একটা বজ্রপাতের শব্দে হুশ ফিরে আসে রাফসানের। চৈতালী কে ছেড়ে দিয়ে অপ্রস্তুত গলায় বলে উঠলো – আই এ্যাম সরি চৈতী। আমি আসলে বুঝতে পারি নি। আমার সত্যি এরকম কোন ইচ্ছা ছিলো না।আমাকে ভুল বুঝিস না।
বলেই ছাঁদ থেকে যাবার জন্য পাঁ বাড়ালো সে। কিন্তু পিছনে টান অনুভব করতেই দেখলো চৈতালী তার শার্ট মুঠ করে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। সে ঘুরে দাঁড়াতেই মাথা তুলে তাকালো চৈতালী। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে থাকলো অনেকহ্মণ।
মুখে কিছুই বলতে হলো না দুজনে বুঝে নিলো দুজনের মনের কথা, চোখের ভাষা।
আচমকা চৈতালী কে কোলে তুলে নিলো রাফসান। তারপর ছাদ ত্যাগ করে বাসায় এসে বেড রুমে প্রবেশ করলো তারা।
প্রকৃতিও বোধ হয় তাদের এই মিলন কে সাহ্মী হয়ে বৃষ্টির বেগ বাড়িয়ে দিলো। বাইরে এক বৃষ্টি। ভিতরে একজোড়া কপোত কপোতী সাহ্মী হলো প্রেমের বৃষ্টির। কিছু উষ্ণ নিঃশ্বাসের।
(ক্রমশ)