লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি ,পর্ব ২৯,৩০,৩১,৩২

0
784

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
পর্ব ২৯,৩০,৩১,৩২
সামিরা আক্তার
২৯

** এত পায়চারী করছিস কেন?? কি হয়েছে??
রাফসানের কথায় চৈতালী একটু চমকে গেলো। এটা ঠিক যে সে একটু অস্থির। তবে এই অস্থিরতার কারণ আছে।
সে এই মাসের পিরিয়ড মিস করে গেছে। এই নিয়েই একটু অস্থির। এতদিনে বোধহয় সৃষ্টিকর্তা মুখ তুলে চাইলো।
ভেতরে ভেতরে মনটা খুশিতে বাগবাকুম করছে। তবে সিউর না হয়ে তো রাফসান কে বলা যাবে না। চৈতালী ঠিক করলো কালকে ফার্মেসী থেকে প্রেগনেন্সি কিট এনে টেষ্ট করবে।
– কি রে বললি না এত অস্থির কেন?
– কিছু না এমনি। তুমি কাজ করো। বলে আবার পায়চারী শুরু করলো চৈতালী। আচ্ছা এটা কি মাস চলছে?? আগষ্ট?
চৈতালী কিছুহ্মণ ভাবলো। তার রাফসান কে বলার জন্য মনটা আকুপাকু করছে। আচ্ছা পুরো কথাটা না বলে একটু বললেও তো হয়। সামান্য একটু টাস দিলো।
না হলে তো আজ তার ঘুম আসবে না।

চৈতালী আস্তে আস্তে রাফসানের কাছে গিয়ে বসলো।তারপর আস্তে করে রাফসান কে ডাক দিলো। রাফসান মন দিয়ে কাজ করছে।
সম্প্রতি তারা সিলেটের টুরিস্ট প্লেসে একটা আবাসিক হোটেল খুলেছে। বেশ ভালই চলছে। তবে সামান্য একটু সমস্যা দেখা দিয়েছে ইদানীং। যা ওখানে ম্যানেজার সামলাতে পারছে না। সেও এখানে বসে ম্যানেজ করতে পারে নি। হয়তোবা দুই একদিনের মধ্যে তাকে সেখানে যেতে হবে।
এসব ভাবনার মধ্যে চৈতালীর ডাক তার কানে যায় নি।
চৈতালী তাই এবার ধাক্কা দিলো রাফসান কে।

– কি হলো ধাক্কা দিলি কেন??
– তো কি করবো?? কখন থেকে ডাকছি।
রাফসান এবার ল্যাপটপ অফ করে চৈতালী কে জরিয়ে ধরে বললো- আমি তো সারাদিনই তোর কথা শুনতে চাই। তুই ই তো পাত্তা দিস না। বলে মুখটাকে দুঃখী দুঃখী একটা ভাব করলো সে।
– পারলে সারাহ্মণ আমার সাথে চিপকে থাকো আবার বলো পাত্তা দেই না??
– তাহলে তোর সাথে চিপকে থাকবো না বলছিস?? তোর ঐ বান্ধবী কি যেন নাম…উর্মি মেবি৷ ওকে….

রাফসান পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই চৈতালী ওর উপর ঝাপিয়ে পরে কামড়ে খাঁমচে ওকে একাকার করে দিতে লাগলো।
– এটা ট্রেইলার ছিলো। জীবনে অন্য মেয়ের কথা মুখে আনলে পুরো মুভিটা তোমাকে দেখাবো আমি।
রাফসান শব্দ করে হেঁসে উঠলো। ওর হাঁসির শব্দে চৈতালী ওর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। কি যেন বলছিলি..বললো রাফসান।
– আমি এ মাসের পিরিয়ড মিস করেছি।
রাফসান একটু ভ্রু কুচকে তাকালো। তার পর বললো
– তো কি হয়েছে?? হয় নি হয়ে যাবে।
– হু। কোনরকমে বললো চৈতালী। মনে মনে যদিও রাফসান কে হাজার বার গাঁধা বললো।
– চৈতী??
– হ্যাঁ বলো।
– তুই কি টেনশন করছিস?? মেডিসিন নিচ্ছিস তো??
চৈতালী একটু থতমত খেলো। পরহ্মণেই নিজেকে সামলে নিয়ে বললো- আরে না সেরকম কোন ব্যাপার না। আমার তো এমনিতেই পিরিয়ড লেটে হয়। দিন তারিখ ঠিক থাকে না।
– সেটাই।
চৈতালী ঠিক করলো টেস্ট করে সিউর হয়ে তবেই রাফসান কে জানাবে। এর মাঝে রাফসানের ফোন বেজে উঠলো। রাফসান কথা বলতে বলতে বারান্দার দিকে গেলো।
কথা শেষ করে এসে বললো- চৈতী আমায় কাল একটু সিলেট যেতে হবে। আর্জেন্ট।
চৈতালীর একটু মন খারাপ হয়ে গেলো। পরহ্মণেই বললো- কয়দিন থাকবে??
– এই ধর চার পাঁচদিন। ড্রাইভার কে বলে দেবো তুই একয়দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে আয়।
– চৈতালী কোনরকমে মাথা নাড়ালো।
কালকে সে আগে টেষ্ট করবে তার পর বাড়ি গেলে যাবে। রাফসান ফিরলেই না হয় ওকে জানাবে।

**পরদিন রাফসান বের হয়ে গেলো সিলেটের উদ্দেশ্য। রাফসান যাওয়ার পর চৈতালী ফার্মেসী থেকে ৫ টা প্রেগনেন্সি কিট নিয়ে এলো। সে পাঁচ বারই টেস্ট করবে।

রাফসানের হোটেল টা সিলেটের বিশ্বরোড, সোবাহানীঘাট নামক জায়গায়। বেশ বড় এরিয়া নিয়ে। টুরিস্টদের কথা মাথায় রেখে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। দেখলে যে কারো ভালো লাগবে। গার্ডেনে বেশ বড় সুইমিংপুলের ব্যবস্থা আছে। আর আছে নানা ফুলের সমাহার, দোলনা আরও অনেক কিছু।
ফ্লাইটে আসার কারণে তাড়াতাড়ি পৌঁছে গেছে রাফসান সেখানে। এখন যত তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে ঢাকায় ফিরতে পারে।
কারণ প্রান পাখি চৈতী কে যে সে ঢাকায় রেখে এসেছে। চাইলেই চৈতী কে সাথে আনতে পারতো কিন্তু সে জানে তাকে ব্যাস্ত থাকতে হবে তাই আনে নি।

**চৈতালী কিট হাতে করে বসে আছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। মনে হচ্ছে সে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে। তার হাতে পাঁচ পাঁচটা কিট। সবগুলোতেই দুটো করে দাগ দেখা যাচ্ছে।
এতহ্মণে সে খুশিতে কেঁদেই দিলো। এহ্মণি তার রাফসান কে জানাতে হবে। এই নিউজ টা সে রাফসানের আগে কাউকে দেবে না। কিন্তু চার পাঁচদিন এই কথা চৈতালী কিভাবে চেঁপে রাখবে??

আচ্ছা চৈতালী যদি সিলেট গিয়ে একদম রাফসান কে সারপ্রাইজ দেয়?? ব্যাপার টা কেমন হবে?? এক মুহুর্ত ভাবলো সে।
তারপর সে সিধান্ত নিলো সে কালই সে সিলেট যাবে। তাড়াহুড়ো করে আসমাত শিকদার কে ফোন দিলো চৈতালী।
– কি ব্যাপার মা?? এসময়ে ফোন?? ওপাশ থেকে হাসিমুখে বলে উঠলো আসমাত শিকদার।
– এমনি। তুমি ভালো আছো বড় আব্বু?
-আছি মা। খুব ভালো আছি।
– ইয়ে বড় আব্বু একটা কথা ছিলো। ইতস্তত গলায় বললো চৈতালী।
– হ্যাঁ বলো না।
– আমি সিলেট যেতে চাই বড় আব্বু। ব্যবস্থা করো। তবে রাফসান ভাইকে বলো না। সারপ্রাইজ।
আসমাত শিকদার মৃদু হাসলেন। তারপর বললেন- আচ্ছা বলবো না।
ফোন রাখার পর চৈতালী মনে মনে বললো তোমাদের জন্যও সারপ্রাইজ আছে বড় আব্বু। সিলেট থেকে এসে দেবো।
(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৩০
সামিরা আক্তার

** রাফসানের হোটেলের নাম হ্মণিকালয়। নামটা তার মা পছন্দ করে দিয়েছে।
এই মুহুর্তে রাফসান গার্ডেনে ম্যানেজারের সাথে বসে আলাপ করছিল। এমন সময় তার হোটেল প্রবেশ করলো আফরিন।
আর ঢুকেই রাফসান কে দেখে থমকে দাঁড়ালো সে। সেই মানুষটা। কত বছর পর দেখলো। একমাত্র এই মানুষটাই তাকে পাগলের মত ভালবেসেছিল।
কিন্তু সে তখন অর্থবিত্তের মোহে রাফসানের ভালবাসা কে পায়ে ঠেলেছিল।
রাফসান কি তাকে হ্মমা করতে পেরেছে??

দূর থেকে খুটিয়ে খুটিয়ে রাফসান কে দেখতে লাগলো আফরিন। মানুষটা আগের চেয়ে বেশি সুদর্শন হয়ে গেছে। বয়স যেন কমে গেছে। বুকের ভিতর চিনচিন ব্যাথা অনুভব করলো সে।
এই স্মাটনেস নিয়েও কত কথা শুনিয়েছে সে।

রাফসান কথা শেষ করে নিজের রুমের দিকে এগুলো। টায়ার্ড লাগছে একটু রেস্ট নেওয়া দরকার। চৈতী কে ফোন দেওয়া দরকার। পাগলিটা কি করছে কে জানে??

চৈতালীর কথা ভাবায় এতটাই মশগুল ছিলো সে যে পাশে আফরিন কে দেখতে পেল না সে। আর বুঝতেও পারলো না সে যে তার সুখের জীবনে ঝড় আসতে চলেছে।

রাফসান যেতেই আফরিন একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। রাফসানের সাথে ডির্ভোসের পরবর্তী জীবন তার খুব বেশি সুখের আর সম্মানের নয়।
সে সাঈদ কে বিশ্বাস করলেও সাঈদ তাকে ঠকিয়েছে। তাদের ঘনিষ্ঠ সময়ের ভিডিও করে তাকে ব্ল্যাকমেইল করেছে।
তাকে বিভিন্ন ডিরেক্টরের কাছে পাঠিয়ে সাঈদ বিভিন্ন নাটক, বিজ্ঞাপনে কাজ নিয়েছে। এই যে সে আজ এখানে এসেছে তাও কারো ভোগের সামগ্রী হতে।

আফরিন আকাশের দিকে তাকালো। তার এই জীবন সে মেনে নিয়েছে। চাইলেও এখান থেকে বের হতে পারবে না সে। আগেই পারে নি। তার লোভ তাকে এখানে এনে দাঁড় করিয়েছে।
হঠাৎ রাফসানের সাথে কথা বলা সেই লোক কে দেখে তাকে ডাক দিলো আফরিন।
– এক্সকিউজ মি।
– ইয়েস ম্যাম। বলুন কিভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি। প্রফেশনাল ভাবে বললেন ম্যানেজার।
– না মানে একটু আগে আপনার সাথে রাফসান কে দেখলাম।
ম্যানেজার এবার একটু অবাক হলো।বললো- আপনি স্যারকে চিনেন??
– হ্যাঁ ফ্রেন্ডস আর কি। ও এখানে কিভাবে?
– ম্যাম এই হোটেলটা স্যারের। মাস ছয়েক আগে শুরু হয়েছে।
– ওহ। ধন্যবাদ আপনাকে।

আফরিন অবাক হয় নি। রাফসান দের যে অনেক টাকা পয়সা সেটা সে আগেই জানতে পেরেছিলো।

হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে আফরিন ভাবলো সে একবার রাফসানের সাথে কথা বলার চেষ্টা করবে। রাফসানের কাছে মাফটা তার চাওয়া হয়নি। সে চাইলেও রাফসানের সাথে যোগাযোগ করতে পারে নি। এমনকি জুনায়েদ ও ফোন ধরে নি। এতদিনে সৃষ্টিকর্তা বোধহয় মাফ চাওয়ার একটা সুযোগ করে দিলো।
ভেবেই রিসিপশনের দিকে গেলো সে।

চৈতলী এয়ারপোর্ট থেকে আসমাত শিকদারের দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী একটা সিএনজি নিয়েছে। আর কিছুহ্মণের মধ্যেই রাফসানের কাছে পৌঁছে যাবে সে।
আচ্ছা রাফসান কি খুব বেশি অবাক হবে??
চৈতালী চিন্তা করেই হেঁসে দিলো।

রিসিপশনের মেয়েটি রাফসানের রুম নাম্বার চাওয়াতে আফরিনের দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। আফরিন অধৈর্য হয়ে বললো- কি হলো বললেন না??
– বাট ম্যাম আপনি কে?? না বললে আমি আপনাকে স্যারের রুম নাম্বার বলতে পারবো না।
আফরিন এক মুহূর্ত ভাবলো। তারপর বললো- আমি আপনার স্যারের ওয়াইফ।
মেয়েটি একটু হকচকিয়ে গেল। আমতা আমতা করতে লাগলো।
আফরিন বললো- বিশ্বাস হচ্ছে না?? ওয়েট। বলে নিজের মোবাইল থেকে তার আর রাফসানের একটা ছবি বের করে মেয়েটির দিকে এগিয়ে দিলো। ছবিটা সে যত্ন করে রেখছিলো।
মেয়েটির কাছ থেকে রাফসানের রুম আফরিন রাফসানের রুমে গিয়ে নক করলো।

রাফসান শুয়ে ছিলো। চৈতালী কে অনেকগুলো ফোন দিয়েছিলো সে কিন্তু চৈতালী রিসিভ করে নাই। হঠাৎ দরজায় করাঘাতের শব্দে দরজা খুলেই দেখতে পেলো আফরিন কে।
মুহূর্তেই তার চেয়াল শক্ত হয়ে গেলো, চোখ দুটো লাল হয়ে গেলো। এতবছর পর সেই বিশ্বাসঘাতনীর চেহারা দেখে হাত দুটো মুঠ হয়ে গেলো আপনা আপনি।
প্রথম কথা আফরিনই বললো- আমি তোমার সাথে কিছু কথা বলতে চাই রাফসান। একটু ভিতরে আসি??

রাফসান উচ্চস্বরে হেঁসে উঠলো। তারপর হিংস্র কন্ঠে বললো- আমার চরিত্র এতটা খারাপ নয় মিস। যে যাকে তাকে আমার রুমে ঢুকতে দেবো। আর আমি কোন অচেনা মানুষের সাথে কথা বলি না।
– প্লিজ রাফসান। আমি জাস্ট কয়েক মিনিট সময় নেবো।
– আমার সময়ের প্রচুর দাম। অযথা নষ্ট করার মত সময় আমার নেই।
– প্লিজ রাফসান। আফরিন এবার তার পায়ের কাছে বসে পড়লো
রাফসান অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছিল। এই মেয়ের প্রতি তার কোন ফিলিংস নেই। কথা বলার রুচি ও নেই।
আফরিনের কান্না কে পাত্তা না দিয়ে সে রুমের দরজা লাগাতে গেলেই আফরিন বলে উঠলো – এখনও আমায় ভালবাসো তাই না রাফসান? আমার সামনে নিজের দূর্বলতা দেখাতে চাও না তাই না?? তাই পালাচ্ছ??

রাফসান আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। এই জন্যই সে এই মেয়ের সাথে কথা বলতে চায় নি। কথা বললেই ভাববে রাফসান ওর প্রতি দূর্বল। না বলেও কোন লাভ হলো না।
সেই একই কথা বললো। দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে শক্ত গলায় বললো- জাস্ট পাঁচ মিনিট এর মধ্যে কথা শেষ করবা।
আফরিন ভেতরে ঢুকে দরজা লাগাতে গেলে রাফসান বললো – একদম দরজা লাগাবে না।

সিএনজি থেকে নেমে হোটেলে ঢুকলো চৈতালী। তার পরনে লাল পাঁড়ের সেই সাদা শাড়ি টা। রাফসান বলেছিল স্পেশাল ডে তে শাড়িটা পড়তে। আজ তো স্পেশাল ডেই। তার জন্য।
রাফসানের অবস্থান জানার জন্য রিসিপশনের দিকে গেলো সে।

রাফসানের পাঁ ধরে আছে আফরিন। রাফসান বিরক্ত স্বরে বললো- পা ছাড়ো বলছি।আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।
-আমাকে মাফ না করলে আমি পা ছাড়বো না। আমি অনেক দিন শান্তি তে ঘুমাই না। তুমি মাফ করলে শান্তিতে ঘুমাবো।
রাফসান বাঁকা হেঁসে বললো- আমি তো জানি বেঈমান রাই শান্তিতে ঘুুমায়।

রিসিপশনের মেয়েটি কোন ভাবেই রাফসানের রুম নাম্বার দিতে রাজি নয়। চৈতালী অধৈর্য হয়ে গেলো। একবার ভাবলো বলবে তোর চাকরি খাব আমি। পরহ্মণেই নিজেকে সামলালো।
– দেখুন আমার সত্যি রাফসানের সাথে দরকার আছে।
– সরি ম্যাম। আপনাকে তো অনেকহ্মণ যাবত বলসি পসিবল না৷ তারপরও আপনি যখন এত করে বলছেন তখন কিছুহ্মণ পরে আসুন। স্যার এলাও করলে আপনাকে পাঠাবো।
চৈতালী এবার কন্ট্রোল হারালো।- পরে মানে?? এখন কি হয়েছে??
(ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৩১
সামিরা আক্তার

-দেখুন আমি এখনই রাফসানের সাথে দেখা করবো। কোন পরে টরে না। আর আপনি যদি এই মুহুর্তে আমাকে রুম নাম্বার না বলেন তাহলে আপনার এই চাকরির আজই শেষ দিন।
রাগে গজগজ করতে করতে বললো চৈতালী।

রিসিপশনের মেয়েটা একটু ভয় পেলো। আমতা আমতা করতে করতে বললো- ম্যাম আমি আপনাকে রুম নাম্বার দিচ্ছি। তবে ব্যাক্তিগত ভাবে অনুরোধ করছি একটু পরে যান। আমিই আপনাকে বলে দেবো কখন যাবেন। আপনি স্যারের কে হন আমি জানি না। তবে হুট করে না শুনে পাঠালে যদি স্যার রাগ করে?? আমার প্রবলেম হয়ে যাবে।

চৈতালীর এবার একটু খটকা লাগলো। এই মেয়ে বার বার তাকে পরে যেতে বলছে কেন?? এটা ঠিক সে
পরিচয় দেয় নি।
– কি ব্যাপার বলুন তো?? বার বার পরে যেতে বলছেন কেন??
একটু ইতস্তত করে মেয়েটি বললো- আসলে ম্যাম রুমে স্যারের সাথে ওনার ওয়াইফ আছে।

চৈতালীর মনে হলো ও ভুল শুনেছে। বৌ মানে?? সে তো এখানে। তাই আবার বললো- কে আছে??
– ম্যাম সারের ওয়াইফ। এইতো কিছুহ্মণ হলো এসেছেন। তাইতো আপনাকে পরে যেতে বলছি।

মেয়েটা আরও কিছু বলছিলো হয়তো। কিন্তু চৈতালীর আর কোন কথা কানে গেলো না। তার মাথায় একটাই কথা বাজছে রুমে স্যারের ওয়াইফ আছে। নিজেকে কোন রকম সামলে নিয়ে বললো- রুম নাম্বার প্লিজ।
মেয়েটা রুম নাম্বার বলতেই সে কোন রকম টলতে টলতে রাফসানের রুম দিকে যেতে লাগলো।

এদিকে আফরিন যখন রাফসানের পা ছাড়ছিলোই না তখন রাফসান বললো- পা ছাড়ো আমি তোমাকে অনেক আগেই মাফ করে দিয়েছি। কারণ তুমি আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে বলেই আজ আমি সুখী। আমার স্ত্রীর মত চমৎকার একজন মানুষ আমার জীবনে এসেছে।
না হলে তো তোমার মত বেঈমানের সাথে জীবন কাটাতে হতো।
আফরিন উঠে দাড়িয়ে অবাক কন্ঠে বললো- তুমি বিয়ে করেছো??
– তো কি ভাবছো তোমার জন্য দেবদাস হয়ে আছি?? হাউ ফানি! তাচ্ছিল্যের একটা হাঁসি দিলো রাফসান

আফরিন আর কথা বাড়ালো না। শুধু বললো – আসি।
আসি বলেই বললো- আমি তোমাকে একটু জরিয়ে ধরতে চাই রাফসান। শেষবারের মত।
– একদম চেষ্টা করো না। দাঁতে দাঁত চেপে বললো রাফসান। অনেকহ্মণ যাবত তোমাকে সহ্য করছি। এবার বের হও। আমি তোমার চেহারা আর দেখতে চাই না। বলেই ঘুরে দাঁড়ালো রাফসান।
কিন্তু তার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই তাকে পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো আফরিন।

অনেকটা নাটকীয় ভাবেই সেই মুহূর্তে রাফসানের রুমের সামনে এলো চৈতালী। দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলো দরজা ভেজানো। দরজায় ধাক্কা দেবার আগে সে শুধু এটাই প্রার্থনা করলো যেন রিসিপশনের মেযেটার কথা মিথ্যা হয়।
তারপর অনেক কষ্টে মুখে হাঁসি এনে আস্তে করে দরজা ধাক্কা দিতেই চোখে পড়লো রাফসানকে জরিয়ে ধরে থাকা আফরিন কে।

নাহ্ চৈতালীর আফরিন কে চিনতে একটু ভুল হলো না। মুহূর্তেই তার চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে গেলো। তার রাফসান!!?? মাথাটা ঘুরে উঠলো। পড়তে গিয়ে কোনরকমে দেয়াল ধরে নিজেকে সামলালো সে। দেয়ালের সাথে হাত লেগে হাতের কাঁচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে বিধে গেলো। সেদিকে নজর না দিয়ে আর একবার রুমের দিকে তাকিয়ে মুখ চেপে কান্না আটকিয়ে ছুটে বেরিয়ে গেলো সে।
হাতের মোবাইলটা পরে গেল সেটাও চেয়ে দেখলো না। এক দৌড়ে হোটেলের বাইরে চলে এলো।

রাফসান এক প্রকার ধাক্কা দিয়ে আফরিন কে সরালো। এই জঘন্য মেয়েকে টাস করার ইচ্ছেই ছিলো না তার। কিন্তু জরিয়ে ধরার কারণে পারলো ও না। ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে বের করে হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে নিলো সে। না চাইতেও এই মেয়েকে ধরতে হয়েছে তার।
এবার রাগ গিয়ে পড়লো রিসিপশনের উপর। ওখান থেকে রুম নাম্বার না দিলে তো আসতো না।
ঝট করে রিসিপশনে ফোন দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো- এই ফালতু মেয়েকে আমার রুম নাম্বার কেন দেওয়া হয়েছে??

মেয়েটি এমনিতে রাফসানের রাগী গলা শুনে ভয়ে সিটিয়ে ছিলো। রাফসানের পরের কথা শুনে ভাবলো চৈতালীর কথা বলছে। কোনরকমভাবে বললো- আমি না করেছিলাম স্যার। কিন্তু উনি বললেন না দিলে চাকরি থাকবে না।
– তোমার চাকরি কে দিয়েছে?? ওই মেয়ে না আমি?? ফারদার আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমার কোন ইনফরমেশন কাউকে দিলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবে না।
বলেই ফোনটা রেখে দিলো সে।

রাফসান ফোন রাখার কিছুহ্মণ পরেই তার ফোনে ফোন দিলো আসমাত শিকদার। ফোন ধরতেই তিনি হাসিমুখে বললেন – কিরে কেমন লাগলো সারপ্রাইজ??
– সারপ্রাইজ মানে? রাফসানের ভ্রু দুটো আপনা আপনি কুচকে গেলো।
আসমাত শিকদার একটু অবাক হলেন। চৈতালী এখনও পৌঁছায় নি?? কিন্তু হিসাব মত তো চৈতালীর আরও ১ ঘন্টা আগে পৌঁছে যাওয়ার কথা। এবার তার চিন্তা হতে লাগলো। চৈতালী ফোন তোলেনি বলে তিনি ভেবেছেন ও পৌঁছে গেছে। বললেন – আমি তোকে পরে ফোন করছি। বলেই রাফসান কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দিলেন।
রাফসান অবাক হয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকলো। কি বললো তার বাবা সব তার মাথার উপর দিয়ে গেলো।

আসমাত শিকদার একের পর এক ফোন দিয়ে যাচ্ছেন চৈতালী কে। কিন্তু কোন রেসপন্স নেই। এবার চিন্তায় তিনি ঘামতে শুরু করলেন। মেয়েটার কোন বিপদ হলো না তো?
তাড়াতাড়ি রাফসান কে ফোন করলেন আবার। কেউ জানতেও পারলো না চৈতালীর ফোনটা রাফসানের হোটেলের গার্ডেনে বেজে চলেছে।

রাফসান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখলো তার বাবা আবার ফোন করেছে। রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ব্যাস্ত গলায় আসমাত শিকদার বললেন- চৈতালী এখনও পৌছায় নি??
রাফসান অবাক হলো। বললো- চৈতালী পৌছাবে মানে??
– চৈতালী আজ সিলেট গেছে তোকে সারপ্রাইজ দিতে। ২টার সময় ওর ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে। তারপর সিএনজি তে উঠে আমার সাথে কথা হয়েছে। কিন্তু এখন ফোনে পাচ্ছি না।
রাফসানের মাথা ফাঁকা হয়ে গেলো। গলায় কথা আটকে গেলো। অজানা ভয়ে শিরদাঁড়া দিয়ে একটা ঠান্ডা স্রোত বয়ে গেলো। একট শুকনো ঢোক গিলে কোন রকমে বললো- কয়টায় ফ্লাইট ল্যান্ড করেছে বললে??
-২ টায়।
রাফসান কথা বলতে ভুলে গেলো। এখন প্রায় চারটা বাজে। এয়ারপোর্ট থেকে এখানে আসতে লাগে বড়জোর ৩৫ মিনিট। তাহলে কই গেলো চৈতী??
কোন বিপদ হলো না তো??
রাফসান ধপ করে খাটে বসে পড়লো। তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। রুমের ড্রেসআপেই সে বাইরে বেরিয়ে এলো।
দরজার কাছে আসতেই পায়ে কিছু বিধলো তার। তখনই মনে হলো জুতা পরে নি। বিষয়টা কে পাত্তা না দিয়ে পায়ের দিকে তাকিয়ে যা দেখলো তাতে পৃথিবী দুলে উঠলো তার।

ভাঙা লাল কাঁচের চুড়ি। চৈতীর চুড়ি। এই চুড়িই তো রাফসান প্রথম বিবাহবার্ষিকীর দিন পড়িয়ে দিয়েছিলো। এই চুড়ি এখানে?? তার মানে চৈতী এখানে এসেছিল?? তাহলে তার কাছে গেলো না কেন??
এক দৌড়ে রিসিপশনে গেলো রাফসান। রিসিপশনের মেয়েটা রাফসান কে এরকম টাউজার আর গেন্জিতে দেখে হকচকিয়ে গেলো।
রাফসান ফোন থেকে চৈতালীর একট ছবি বের করে এগিয়ে দিয়ে বললো-ও এসেছিল??
মেয়েটা একবার ছবির দিকে আর একবার রাফসানের দিকে তাকালো। রাফসান কে কেমন উদ্ভট দেখাচ্ছে।
– কি হলো বলছো না কেন? এক চিৎকার দিয়ে বললো সে।
রাফসানের চিৎকারে সবাই কেঁপে উঠলো। মেয়েটা কোনরকম কাপতে কাপতে বললো- ওনার কথাই তো আপনাকে ফোনে বলেছিলাম স্যার।
– ওর কথা বলেছিলে মানে??
– স্যার উনি এসে আপনার রুম নাম্বার জানতে চাইলো। আমি প্রথমে দিতে চাই নি। কিন্তু যখন চাকরির ভয় দেখালেন তখন দিয়েছিলাম। কিন্তু রুমে পরে যেতে বলেছিলাম। কারন রুমে তখন আপনি আর আপনার ওয়াইফ ছিলেন।
রাফসান যেন এবার আকাশ থেকে পড়লো। বললো – ওয়াইফ মানে?? তুমি যাকে কথাটা বলেছো সেই আমার ওয়াইফ।
মেয়েটা যেন এবার কথা বলতে ভুলে গেলো। তো তো করতে করতে বললো- তাহলে ওই সবুজ ড্রেস পরা মেডাম?? উনি যে বললেন উনি আপনার ওয়াইফ।
রাফসান এবার মেয়েটার দিকে তেড়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে বললো- আমি ফোনে ওই মেয়েটার কথাই তোমাকে বলছি।
পরহ্মণেই আবার বললো- চেতীর যদি কিছু হয় তোমাকে সহ তোমার ওই সবুজ ড্রেস পরা মেডাম কে আমি দেখে নেবো।
বলেই চৈতালীর নাম্বারে ফোন দিলো সে। এরই মাঝে একজন গার্ড এসে তার দিকে একটা ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো- স্যার এই ফোনটা গার্ডেনে পরে ছিলো।

রাফসান না চাইতেও ফোনের দিকে তাকালো। আর তাকিয়েই বুকটা কেঁপে উঠলো তার। কারণ ফোনটা চৈতালীর।
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে দেখলো স্কিনে রাফসানের নাম্বার ভাসছে। তিনটা লাভ ইমুজি দিয়ে সেভ করা নাম্বার।
( ক্রমশ)

লাল পাঁড়ের সাদা শাড়ি
*পর্ব ৩২
সামিরা আক্তার

হোটেলের সব কয়টা সিসিটিভি ফুটেজ দেখার ব্যাবস্থা করা হয়েছে। ফুটেজ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে চৈতালী হাসিমুখে হোটেল ঢুকছে। তার পরনে লাল পাঁড়ের সেই সাদা শাড়ি।
রিসিপশনে কথোপকথনের পরই তার হাঁসি মুখটা আঁধার হয়ে গেল।
রাফসানের বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে কষ্ট পেয়েছে।
রাফসানের ইচ্ছে হলো পুরো দুনিয়া উল্টে ফেলতে।

– স্যার থানায় খবর দেওয়া হয়েছে। চারিদিকে লোক লাগানো হয়েছে। ইনশাআল্লাহ তাড়াতাড়ি ম্যাডামের খবর পাব আমরা।
ম্যানেজারের কথা শুনে একটু তাকালো রাফসান। তার অসহ্য কষ্ট হচ্ছে। চৈতী কে না পাওয়া পর্যন্ত এই কষ্ট কমবে না।
হঠাৎ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেমে গেল সে। ফুটেজ টা তার রুমের সামনের। যেখানে চৈতালী আরও বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। তার মানে রুমে আফরিন কে দেখেছিলো চৈতী। তার কাছে পুরো ব্যাপারটা আগেই ক্লিয়ার হয়ে গেছিলো।
এবার একদম পানির মত হয়ে গেলো ব্যাপারটা।
রাফসানের হাত আপনা আপনি মুঠ হয়ে এলো। সব ঝামেলা এই মেয়ের জন্য। এত বছর পরে আবার তার জীবন ওলট-পালট করার জন্য এসেছে
এই মেয়েকে তো সে দেখে নেবে আগে চৈতীকে পাক।

রাফসানের চৈতালীর প্রতি অভিমান হলো। এই মেয়ে এই চিনেছে তাকে। এতটা অবিশ্বাস। এক
বার পেয়ে নিক রাফসান কথাই বলবে না।

**দু পায়ে মাথা গুজে বসে আছে চৈতালী। জায়গা টা কোথায় সে জানে না। তেমন একটা লোকজন ও নেই
না থেকে বেশ ভালো হয়েছে চৈতালী ইচ্ছে রকম কান্না করতে পেরেছে।
নিজের ভাগ্যের উপর হাঁসি পেলো তার। দিনশেষে তাকেই কেন ঠকতে হলো? যার সাথে বিয়ে হবার কথা ছিল সে ঠকালো, বাবা মা তাকে বোঝা মনে করে দ্বিগুন বয়সী একজনের সাথে বিয়ে দিলো।
সবশেষে চৈতালী যখন সেই মানুষটাকে পাগলের মত ভালবাসলো তখন সেই মানুষটা ও তাকে ধোকা দিয়ে প্রথম স্ত্রীর সাথে হোটেল রুমে….
চৈতালী আর ভাবতে পারলো না। তার চোখে শুধু আফরিনের রাফসানকে জরিয়ে ধরার দৃশ্য টাই ভাসতে লাগলো।
কিন্তু চৈতালী জানতেও পারলো না সে যাকে ভুল বুঝেছে সে তাকে না পেয়ে পাগলের মত অবস্থায় আছে।

আসমাত শিকদার কে রাফসান কেবল এতটুকুই বলতে পেরেছিল যে বাবা চৈতী হারিয়ে গেছে। আর কিছু বলতে পারে নি।
তাতেই আসমাত শিকদার বুঝে গিয়েছেন ছেলের মনের অবস্থা। পুরো শিকদার পরিবার তাই ছুটেছে সিলেটের উদ্দেশ্য।
সবার মনে একটাই কথা যেন তাড়াতাড়ি পাওয়া যায় চৈতালী কে।

রাফসান পাগলের মত খুঁজে চলেছে চৈতালী কে। মনটা তার বড্ড কু গাইছে। চৈতালীর কোন বিপদ হলো না তো? কোথায় আছে মেয়েটা? এই শহরের কিছু তো চিনে ও না।
একটু পর তো সন্ধ্যা নামবে। রাফসান আর ভাবতে পারে না। তার কলিজাটা কোথায় আছে??
কেন ভুল বুঝলো তাকে??
না ভালবাসে নি। একদম ভালবাসে নি চৈতী তাকে। না হলে তাকে অবিশ্বাস করতে পারতো না।
চৈতী কি জানে না তাকে ছাড়া মরে যাবে রাফসান। একদম মরে যাবে।

** সবাই যখন চৈতালী কে খুঁজতে ব্যাস্ত চৈতালী তখন নিজের জীবনের পাওয়া না পাওয়ার হিসাব কষছে। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো সন্ধ্যা নামতে চললো।
চৈতালীর সামনে একটা নদী। এই নদী কি তার সব যন্ত্রনা নিভিয়ে দিতে সহ্মম?
কাঁধের ব্যাগটা নামিয়ে রেখে পায়ের জুতাটা খুলে একপাশে রাখলো সে। তারপর একটা হাত আপনাআপনি চলে গেল পেটে।
মনে মনে বললো -কেউ জানলো না তোর কথা। টেস্ট করা ৫টা কিট ময়লার ঝু্ড়িতে ফেলে এসেছি আমি। তোর বাবাও কোনদিন জানতে পারবে না।
বলেই এক পা দুই পা করে নদীর দিকে এগিয়ে গেলো সে।

**রাত দশটা বাজার পরও যখন চৈতালী কে খুঁজে পাওয়া গেলো না তখন পাগলের মত করতে শুরু করলো রাফসান৷
ছেলের অবস্থা দেখে মুখে কাপড় চেপে কাঁদতে শুরু করলো আয়শা বেগম। কেন তার ছেলেটার কপালে সুখ সহ্য হয় না।
আসলাম শিকদারের অবস্থা ও শোচনীয়। রেবেকা বেগম কে ঘুমের ইন্জেকশন দেওয়া হয়েছে। মেয়েকে হারিয়ে তিনি পাগলামি করছিলেন।

**এই পুরো বিষয়টার জন্য আসমাত শিকদার নিজেকে দায়ী মনে করছেন। তিনি যদি চৈতালীর পাগলামিতে সায় না দিতেন তাহলে এত কিছু হতোই না।
দুই ভাই, ভাতিজা সবাই কে একা হাতে সামলাচ্ছে চৈতালীর ছোট চাচা আরমান শিকদার। ভাতিজির জন্য তার কষ্ট হলেও সেটা দেখানোর সময় নেই তার।

পুরো হোটেল জুরে নিস্তব্ধতা। কেউ কেউ রাফসানের জন্য আফসোস করছে। আবার কেউ কেউ পিন ফুটাতে ছাড়ছে না।
নিশ্চয়ই তাদের স্যার ওই ম্যাডামের সাথে এমন কিছু করছিলেন যা তার বৌ দেখে নিয়েছে। যার জন্য এই অবস্থা।

** পুরো একদিন একরাত চৈতালীর কোন খবর পাওয়া গেলো না। শিকদার পরিবারের অবস্থা পাগল প্রায়।
দ্বিতীয় দিন হোটেলের ম্যানেজার এসে বললো – স্যার এই পাশে একটা নদী আছে আমাদের একটু সেখানে যেতে হবে।
– চৈতী কে পাওয়া গেছে?? ম্যানেজারের দিকে এক প্রকার দৌড়ে এলো রাফসান।
ম্যানেজার মাথা নিচু করে রইলো।
– কি হলো বলছো না কেন? চিৎকার দিয়ে উঠলো রাফসান।
ম্যানেজার কেঁপে উঠলো। ভয়ে ভয়ে বললো- স্যার ওখানে কিছু জিনিস পাওয়া গেছে। সম্ভবত সেগুলো ম্যামের। মানে সিসিটিভি ফুটেজে যেরকম দেখেছিলাম।

নদীটা ছোট তবে খরস্রোতা। পাহাড়ি নদী। পাশেই চৈতালীর ব্যাগ আর জুতা পরে আছে। চিনতে কারো ভুল হলো না।
কয়েকটা ভাঙা চুড়ি ও দেখা গেলো। নদীর তীরে কতগুলো পায়ের ছাপ যা নদীতে নেমে গেছে।

জুনিয়র পুলিশ অফিসার ওসির দিকে তাকিয়ে বললেন
– স্যার মনে হচ্ছে তো সুইসাইড কেস।
– হু আমারও তাই মনে হচ্ছে।
– স্যার খরস্রোতা নদী। জাল ফেললেও তো কিছু পাওয়া যাবে না। লাশ মেবি স্রোতে ভেসে গেছে।
রাফসান বিধ্বস্ত অবস্থায় চৈতালীর জিনিসগুলো বুকে জরিয়ে বসে ছিলো। পুলিশ অফিসারের কথা শোনা মাত্র তার গলা চেপে ধরলো।
– লাশ মানে?? কি বলতে চাইছেন আপনি??
(ক্রমশ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here