ধরিত্রী_কথন #পার্ট২১,২২

0
816

#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট২১,২২
#পিকলি_পিকু
২১

“না, আন্টি। ওকে ধরিত্রীর পাশে থাকতে দিন। আমরা ওকে মিষ্টি মুখ করাই।” রিমা এই কথা বলে মিম কে নিয়ে বেরিয়ে এলো। আর এদিকে রাধা মীরাকে টেনে বাইরে নিয়ে আসলো। হাসপাতালের বাইরে ওরা চারজন। রাধা হেসে বলল, “কীরে, তুই খুশি না? এভাবে থাকলে সবাই বলবে তুই নজর দিচ্ছিস। বাই দ্য ওয়ে, মিম। তোর ঐ কথাটা ঠিক। প্রকৃতির প্রতিশোধ সবচেয়ে বড় আর সন্তুষ্টির! ধন্যবাদ ভগবান! আমি বলে বোঝাতে পারব না আমার সন্তুষ্টি। কালই আমি কালী মন্দিরে পূজো দিতে যাব।” রাধা ওর দুই হাত জোড় করে চোখ বন্ধ করে ভগবানকে স্মরণ করে।!”

রাধার কথা শুনে মিম বলল,
– আহ! রাধা, এবার আর কিছু বলিস না। মিষ্টি কিছু কিনি চল। আমরা আর ঝামেলা চাই না। বুঝেছিস তো, সবুরে মেওয়া ফলে।
– একদম। আমার আসলে আজকে সেই ছবি গুলো না দেখালেও হতো। গাল বরাবর একটা থাপ্পড় ভগবান নিজেই ব্যবস্থা করলো। মীরা, এবার শুধরে যাস। এক কাজ কর, একটা বাচ্চা নিয়ে নে। অঙ্কনের সাথে সংসার আগা। নিজেরটা উপভোগ কর, অন্যকে উপভোগ করতে দে।
– হ্যাঁ ঠিক। নিজেরটা নিয়ে হ্যাপি থাক। আমি আর তোদের এসব ঝামেলা তে থাকবো না।

রিমা বলল, “আমিও না। আজকে কিন্তু অনেক বড় ঝামেলা হতে পারত। রাফসানের বউ গর্ভবতী। আর মীরা, সবাই অভিনন্দন দিল। তুই দিলিনা, খারাপ দেখায়। ভেতরে যেটাই থাকুক, ধরিত্রীকে জানতে দিস না।”

“তোরা থামবি! কী মনে করিস আমাকে?” চিৎকার করে বলল মীরা। “আমি কিছু বলছি না এর মানে এই না যে আমি মেনে নিয়েছি। আজকে আমার জন্মদিন। ইটস মাই ফা*কিং বার্থডে। কিন্তু তোরা আমাকে আজ সবার সামনে অপদস্থ করতে চাইলি। আই ডোন্ট ডিজার্ভ ইট! ” মীরা কাঁদতে থাকে। এরপর কাঁদতে কাঁদতেই সেখান থেকে চলে আসে। ওরা তিনজন সেখান থেকে একটা দোকান থেকে চকলেট কিনে আবার হাসাপাতালে আসে,

“অনেক লেগেছে তাই না?” – রাধা
“চুপ রাধা! এই নিয়ে আর একটা কথাও না।” – মিম
” ওখানে গিয়ে আমরা কী বলব?” – রিমা

” মীরা আসলো না?” রাফসান বলল। রাধা মুখ খোলার আগেই মিম বলল, “ওর বাসা থেকে কল এসেছে। আজকে তো ওর জন্মদিন ছিল। আমরা এ পার্টিতেই তো ছিলাম।”

রাফসান ভাবতে লাগলো, ও ভুলে গিয়েছিল আজ মীরার জন্মদিন। যাই হোক ঐ তিনজন থেকে বিদায় নিয়ে সবাই মিলে বাড়ি ফিরল। বাড়িতে আগে থেকেই ধরিত্রীর বাবা মা অপেক্ষা করছিল। তারা ধরিত্রীর গোমড়া মুখ দেখে বিচলিত হয়ে গেলেন। বাচ্চা হবে আর ও খুশি না কেন? রুবাইয়া জোহরা কে ইশারা করে ডাকলো।

– কী হয়েছে?
– কিছু না। একটু ঘাবড়ে গেছে। প্রথমবার মা হবে। তুমি তো জানো। ওকে নিয়ে একটু ঘরে গিয়ে বসো।

ধরিত্রীকে নিয়ে জোহরা ঘরে গেল।

– চিনি, তোর কী হলো রে?
– কিছু না।
– তুই কী খুশি না?
– জানি না।

জোহরা ধরিত্রীকে শুইয়ে দিল।

– মা, আসো না একটু।
– কেন?
– তোমাকে একটু জড়িয়ে ধরি?
– হঠাৎ এমন বাচ্চাদের মতোন করছিস কেন?

জোহরা হেলান দিয়ে ধরিত্রীর পাশে বসলো। ধরিত্রী খাটের উপর শুয়ে ওর মাকে জড়িয়ে ধরল। জোহরা আস্তে আস্তে ধরিত্রীর পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ধরিত্রী একদম চুপ করে শুয়ে মায়ের আদর খাচ্ছে।

– চিনি রে, এমন করছিস কেন? বাইরে সবাই কী ভাববে?
– জানি না।
– আমার ছোট্ট চিনি আজকে মা হবে। আমার যে কী আনন্দ হচ্ছে!
– আমি যখন হবো শুনলে, তোমার কেমন লেগেছিল?
– জানি না।
– ভালো না খারাপ?
– বুঝতে পারিনি।
– তোমার তো ভালো লাগার কথা। এত বছর পর একটা বাচ্চা হচ্ছে।
– তবুও, অনেক বড় পরিবর্তন। তোর কেন খারাপ লাগছে?
– মা, রাফসান।
– ও কী করল?
– ওর তো সময় হয় না। আমি না হয় বউ, যেভাবেই হোক চালাচ্ছি। বাচ্চার তো বাবাকে দরকার। ও যদি এভাবে বাইরে থাকে আমি কী একা চালাব?
– বাবারা একটু এমনই হয়। বাচ্চাদের মায়েরাই দেখে।
– বাচ্চাটা কী একা আমার? মা, আমি জানি তুমি কত কষ্ট করেছ। বাবা সবসময় অফিসে থাকতো। আমাকে স্কুল, কোচিং, গান ছবি আঁকাতে তুমি একা নিয়ে যেতে। একদিন ও বাবা আসতো না।
– আমার ভালো লাগতো এসব। আমি কখনো তোর বাবাকে বলিনি আসো। আর আমি এসব উপভোগ করতাম। সত্যি বলতে আমার আর কোনো কাজ ছিল না। আমি স্বপ্ন দেখতাম আমার বাচ্চাকে আমি এভাবে বড় করবো। ওর স্কুলে কলেজে আমি নিয়ে যাব। ওকে গান শেখাব, ছবি আঁকা শেখাব।
– তারমানে আমি যখন একা একা ঘুরে বেড়াতাম তোমার খারাপ লাগতো?
– না। আমি একটা মুক্ত পাখি গড়তে চেয়েছিলাম। আমি গড়েছি। তুই উড়তে শিখেছিস এতেই আমি খুশি। তুই জানিস, আমি কোথাও একা যেতে পারি না। আমার সাথে তোর মামা বা চাচা থাকতো। পরে তুই। আমি চাইতাম আমার মেয়ে একা ঘুরবে। ওর কোনো ভয় থাকবে না। আমি সফল, তাই না?
– কিন্তু মা, আমি চাই আমার বাচ্চার সব কিছুতে ওর বাবা পার্টিসিপেট করুক।
– করবে। তুই ওকে খুলে বল। এখন তুই কী করবি? বাচ্চা আল্লাহর রহমত। আর তুই তো বাচ্চা অনেক পছন্দ করিস।
– আমি ওকে মা*রব না।
– আস্তাগফিরুল্লাহ! মুখেও আনিস না।
– আমার ভয় করছে। আমি কী তোমার মতো ওকে একা হাতে মানুষ করতে পারব?
– একা কেন? রাফসান কী না করেছে?
– না।
– ওর সাথে কথা বল।
– মা, তুমি কী সত্যি আমাকে পেয়ে খুশি?
– তা আর বলতে? আমি তোর জন্য আল্লাহর কাছে কতো কেঁদেছি। আমার একটা মেয়ে হবে, তাকে আমি চিনি ডাকবো। আমার বাচ্চা। আমার নিজের বাচ্চা।
– এই জোহরা জাবি, কাঁদছো কেন? তুমি কাঁদলে আমিও কাঁদবো।

ধরিত্রী আর ধরিত্রী মা কান্না করতে থাকে। এ যেন সুখের কান্না। এদিকে রাফসানের বাবা আর শ্বশুর বসার ঘরে ওকে নিয়ে বসে আছে। রাফসানকে সবাই অভিনন্দন দিচ্ছে। নানা গল্প করছে। রান্নাঘরে রুবাইয়া আর মাশরুফা রুমির মা সহ রান্না করছে। কিছুক্ষণ পর রাফসান উঠে এসে রুবাইয়া কে ডাকলো। রুবাইয়া আর রাফসান এখন কথা বলছে,

– মা, ধরা এমন কেন করছে?
– কারণ বলতে কোনো কারণ নেই। ভয় পাচ্ছে। হঠাৎ করে হলো। ওর মা আছে তো সাথে।
– কি জানি। ও কী বেবি চায় না?
– কেন চাইবে না?
– ঐদিন বলল, আমি বাবা হওয়ার যোগ্য না।
– কেন? কী করেছিস?
– সবসময় আমাকেই দোষ দাও। আগে শুনো তো।
– কী হয়েছিল?
– মোমিন স্যার বললেন বেবি নেওয়ার জন্য এখন ভালো সময় হতে পারে।
– তো?
– ও বের হয়ে বলল আমি তো ওকেই সময় দেই না। বাবা হওয়ার যোগ্য না আমি।
– কী আর করার। ওর ভয় পাওয়ার কারণ বুঝতে পারলাম। ও ভাবছে তুই বেবি কে সময় দিবি না।
– আমি চেষ্টা করব।
– তো সেটা ওকে বোঝা। তোর কর্মকান্ড ভেবেছি বিয়ের পর ঠিক হবে।
– হয়নি বলো। আমি তো এখন অনেক ছুটি করি। তুমি বলো, আগের থেকে অনেক বেশি করি।
– কিন্তু মাঝে মাঝে একদম গায়েব। শোন, এখন থেকে একটু বেশি সময় দিবি ওকে যাতে ও বুঝতে পারে তুই ওকে বেবি সহ একা করে দিবি না। এই সময় টা অনেক কঠিন রে বাবা। ওর তো এখনই এত ভয় করছে না জানি,

ঘর থেকে জোহরা বের হলো। রুবাইয়া আর রাফসান সেদিকে গেল। সবাই জানতে চায় ধরিত্রীর কী অবস্থা,

– বাবা রাফসান।
– জ্বী মা।
– তুমি একটু ভেতরে যাবে? ও কথা বলতে চায়।

রাফসান ভেতরে যাওয়ার পর রুবাইয়া আর জোহরা বসলো। ঘরে ঢুকে রাফসান ধরিত্রীর পাশে গিয়ে বসলো।

– এখন কেমন লাগছে?
– ভালো।
– এমন করছ কেন?
– কেমন করছি?
– তুমি কী খুশি না? বেবি চাও না?
– আমি চাই, কিন্তু তোমার সাথে না।
– মানে কী? কী যা তা বলছ!
– তুমি একটু ভেবে দেখ তো, তুমি বাবা হওয়ার যোগ্য কী না?
– আবার ওসব। আই প্রমিস, আমি বদলে যাব। আমি বেবিকে সম্পূর্ণ সময় দেব।
– সম্পূর্ণ না, যতটুকু দরকার। এটা আমাদের বেবি। আমি যতটুকু দেব ততটুকু ও তোমার থেকেও পাবে। কিন্তু তুমি সেই সময় টা পারবে না। তখন আমার এডজাস্ট করতে হবে।
– হবে না। দেখ, বাচ্চারা শুধু মা বাবার সাথে থাকে না। বাচ্চাদের একটা এক্সটেন্ডেড ফ্যামিলি থাকে। ওর দাদা দাদু, নানা নানু , ফুফু চাচা আছে।
– আমি জানি আছে। কিন্তু তোমার যে জায়গাটা ওটা ওনারা পূরণ করবে না। ওনাদের আলাদা জায়গা আছে। বাবা হিসেবে তোমার আলাদা কর্তব্য আছে। তুমি কী মনে করো রাত বারোটার পর এসে, বা মাসে দুই একবার একটু ছুটি নিয়ে বাবা হয়ে যাবে। আমি জানি, আমার বাবাকে দেখেছি। কিন্তু আমার সাথে আমার মা ছিল। কিন্তু আমিও তো কাজ করি। আমার বাচ্চার কী হবে?
– ওটা পরে দেখা যাবে। ইউ ডোন্ট হ্যাভ টু ওরি। এরকম পরিবারে আমিও বড় হয়েছি। এটা আরো ভালো। বাচ্চারা তাড়াতাড়ি দায়িত্বশীল হয়। আমি অনেক কাজ আমার অনেক বন্ধুর আগেই শিখেছি। আমি বাবা মায়ের উপর বেশি নির্ভরশীল হইনি।
– আমি সেটা বলছি না। আমি চাইনা ওর জীবনে ওর বাবার জায়গাটা খালি থাকুক বা কম থাকুক। স্বাভাবিক থাকুক।
– তাই বলছি শোনো আমার কথা। আই প্রমিস, আমি আমাদের বাচ্চাকে, তোমাকে, আমার পরিবারকে অনেক সময় দেব।
– সত্যি?
– সত্যি! সত্যি! সত্যি! আমি আজকে থেকে আরো দায়িত্বশীল হবো। তোমার প্রমিস।

ধরিত্রী রাফসানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। রাফসান ধরিত্রীর চেহারা স্পর্শ করলো। ধরিত্রী এবার রাফসানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। রাফসান ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

– আমার ভয় করছে।
– কেন?
– জানি না। কেমন যেন ভয় করছে।
– কিচ্ছু হবে না ধরা। অযথা ভয় পেও না। বেবির ক্ষতি হবে।

সেই রাতে ধরিত্রীর মা ওকে নিজের হাতে খাইয়ে দিল। ওনারা আবার রাতেই বাড়ি চলে গেল। বাসা খালি ছিল তাই। কিন্তু ধরিত্রী আর রাফসান একটুও ঘুমাতে পারল না। পরদিন সকাল হতেই ওরা গেল হাসপাতালে। ধরিত্রীর পুরো শরীর চেক আপ হচ্ছে। রুবাইয়ার পুত্রবধূ মা হবে। ওনার হাসপাতালে তাই স্পেশাল ট্রিটমেন্ট। রাফসান কিছুক্ষণ থেকেই চলে গেল। সনোগ্রামের রুমে ডাক্তার সাহানা, ধরিত্রী আর রুবাইয়া। ভ্রূনের দিকে তাকিয়ে আছে ধরিত্রী।
“তিন সপ্তাহ আমার জানটার।” রুবাইয়া বলল। ধরিত্রী তাকিয়ে আছে ওর বাচ্চার দিকে।

– মা, ও ঠিক আছে?
– হ্যাঁ।
– ছবি দেবে?
– কেন না? কী করবি?
– বেবি জার্নাল বানাবো।
– তবে ভালো করে ছবি দিও সাহানা।

হাসপাতাল থেকে আসার সময় রুবাইয়া আর ধরিত্রী ঢুকল একটি স্টেশনারীর দোকানে। বেবি জার্নালের জন্য জিনিসপত্র খুঁজছে।

– তোর এত শখ তো কাল এত মন খারাপ করেছিলি কেন?
– আসলে হুট করে তো। আমার প্ল্যান ছিল, আরো ছয়মাস পর। কিন্তু এখনই আসবে। যা হয় ভালো হয়।
– তুই খুশি তো?

রুবাইয়া ধরিত্রীর মাথায় হাত রাখে। ধরিত্রী এক গাল হেসে বলে,

– অনেক। অনেক অনেক অনেক! আসলে, আমার যখন প্রথম পিরিয়ড হয় তখনো এভাবে কেঁদেছিলাম।
– সেটা সবাই কাঁদে। আমিও কেঁদেছি।
– আচ্ছা রুবি, রুবি হিসেবেই বলবে।
– বল।
– রাফসান হবে শোনার পর কেমন লেগেছিল?
– খুশি। অনেক খুশি। আমি আরো পরে জানতে পেরেছি।
– কেন?
– সুস্থ ছিলাম। তোর মতো মাথা ঘুরে পড়িনি।
– শোনো, তোমার একটা ইন্টারভিউ নেব।
– কেন?
– একটা মম জার্নাল বানাবো। সেখানে সব মায়েদের প্রথম মা হবে জানতে পারার অনুভূতি থাকবে।
– বাহ! এটা কী পার্সোনাল?
– হ্যাঁ। পাবলিশ করলেও পরে করা যাবে। নিজের জন্য করব।

ধরিত্রীর মম জার্নালের ও জিনিস কিনল। প্রথম পৃষ্ঠাতে সে নিজের অনুভূতি লিখলো। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সে তার মা আর শাশুড়ির জন্য জায়গা রাখলো। এরপর মাশরুফা, লবঙ্গ, লতিকা আর তার কলিগদের কয়েকজনকে বলবে। পরের পৃষ্ঠা গুলো থাকবে তার বাকি সময় গুলো কী অনুভব করছে সেসব কথা। তবে একটা কথা ঠিক, গর্ভকালীন সময়ে মেয়েদের মাকেই বেশি মনে পড়ে। ধরিত্রীর ওর মাকে খুব মনে পড়ছে।

আসলে মেয়েদের সব ধরণের প্রতিকূল সময়ে মাকেই মনে পড়ে। মা যতটা সন্তানের কষ্ট বোঝে ততটা কেউ বোঝে না। বর্তমানে হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে ধরিত্রী। ওর জ্ঞান ফিরেছে। কিন্তু বসতে পারছে না। কতটা অসহায় লাগছে বলে বোঝাতে পারবে না। ঘৃণা হচ্ছে, নিজেকে, রাফসানকে। মায়ের কথা মনে পড়ছে। মাকে যদি সব বলতে পারতো। মাকে ধরে যদি কাঁদতে পারতো। ধরিত্রীর কষ্টটা সবচেয়ে ভালো আজ জোহরাই বুঝতে পারতো। কিন্তু হায়! তা আর সম্ভব না।

(চলবে)

[???এই পর্বে ডমেস্টিক ভায়ো*লেন্স এর উল্লেখ আছে
???]
#ধরিত্রী_কথন
#পার্ট২২
#পিকলি_পিকু

মীরা জন্মদিনে বাসায় এসেই দেখল অঙ্কন ওর জন্য ঘর সাজাচ্ছে। মীরা আসতেই অঙ্কন এগিয়ে গিয়ে মীরাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা দিতে দিতে জড়িয়ে ধরল। সবাই সামনে থাকায় মীরা ওকে কিছু বলেনি। তবে অঙ্কন বুঝে গেছে, মীরা খুশি নেই।

– কোথায় গিয়েছিলে?
– বন্ধুদের সাথে বাইরে।
– পার্টি ছিল?
– হ্যাঁ। তুমি এখন আবার পার্টি করবে?
– হ্যাঁ। একটা মাত্র বউ আমার। আর তার একটা মাত্র জন্মদিন।
– আমি একটু ক্লান্ত। আমি কী বিশ্রাম নিতে যেতে পারি?
– যেও। কেকটা কেটে নেই।

মীরা ওর ঠোঁট চেপে নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। ওর খুব কান্না পাচ্ছে। ও মানসিকভাবে ঠিক নেই আজকে। ওর পুরনো বন্ধুরা যা করলো ওর সাথে। বিশেষ করে ওর একসময়ের প্রাণের বান্ধবী ওকে এইভাবে অপদস্থ করতে চাইলো, তাও আবার ওর জন্মদিনে। এরপর রাফসানের মায়ের ওর উপর চেঁচানো। আন্টি তো এরকমই, কিন্তু রাফসান। রাফসান আগে এগিয়ে আসতো। ওর পক্ষে একটু কিছু বলত। আজকে যেন শুনতেই পায়নি। সব মিলিয়ে ওর জন্মদিন টা খুব বাজে গেছে। কেউ একটু ওর জন্য দয়া দেখালো না। কিন্তু দিন শেষে মীরাই খারাপ হবে। এসবের মধ্যে অঙ্কনের এসব আয়োজন ওর ভালো লাগছে না। কোনোভাবে কেকটা কেটেই মীরা ওর ঘর গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। অঙ্কন তো শ্যাম্পেইনের ও ব্যবস্থা করেছিল। মীরা তো দাঁড়ালোই না। ও একা একাই শ্যাম্পেইনটা খুলল। মীরা আবার এসব হারাম পানীয় থেকে দূরে থাকে। ওর বাবা মায়ের বারণ। এত বছর সম্পর্কে মীরা এসব কখনো ছুঁয়ে ও দেখেনি। তবুও অঙ্কনের একটু বাড়াবাড়ি।

রাতের বেলা ঘুম থেকে উঠে মীরা ওর ফোন চেক করলো। রাফসান কী একটা কল দিয়েছে কি না? কার কাছে আশা করছে এসব? অঙ্কন এসে মীরার পাশে বসলো। ওর হাতে শ্যাম্পেইনের গ্লাস। এক হাতে গ্লাস আর অন্য হাত দিয়ে মীরার চেহারা স্পর্শ করে দেখছে অঙ্কন। ওর গয়না গুলো ধরে দেখছে সে। মীরা মূর্তির মতো বসে আছে। এই গয়না গুলোতে মীরাকে খুব সুন্দর লাগছে। বাইরে থেকে এসে ও যেভাবে ঘুমিয়ে পড়লো। কিন্তু গয়না একটুও খুলেনি। এতটাই পছন্দ? হয়তো প্রিয় কারো ছোঁয়া।

– এই চীপ জুয়েলারি গুলো কোথায় পেলে?
– ধরিত্রী দিয়েছে।
– রাফসানের বউ?
– হ্যাঁ।
– রাফসানের বউ বলার কী দরকার? রাফসান দিয়েছে বলতে পার না?
– রাফসান দিলে আমি লুকাতাম না। বলতাম রাফসানই দিয়েছে।
– হ্যাঁ। জানি তো। এসব সস্তা জিনিস দেই না বলে আমার দাম নেই।
– ইউ আর ড্রাঙ্ক অঙ্কন।
– হ্যাঁ। এই যে, তোমার জন্মদিনের উৎসবের জন্য। একটু খাবে?
– তুমি জানো আমি এসব খাই না।
– খাও না। খাও না একটু।

অঙ্কন মীরার গাল চেপে ধরে জোর করতে থাকে। মীরা মুখ চেপে এসব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে থাকে। একটা সময় সে অঙ্কনকে দূরে সরিয়ে দেয়। অঙ্কনের খুব রাগ হয় মীরার উপর। তাই ও মীরার চুলের মুঠি ধরে ওকে মা*রতে থাকে। মীরা কোনো চিৎকার করে না। অঙ্কন ও কোনো শব্দ করে না। নিজের ক্ষোভগুলো ঝাড়তে থাকে মীরার ওপর। এই চার দেয়ালে এখন শুধুই মা*রের শব্দ। তবে আস্তে মীরা শব্দ করতে থাকে। ওকে ছেড়ে দেওয়ার আকুতি করতে থাকে। অঙ্কন মীরাকে মা*রতে মা*রতে এক পর্যায়ে মীরার শরীর থেকে গয়নাগুলো ছুড়ে ফেলে দেয়। মীরা চিৎকার করে কাঁদতে থাকে, “অঙ্কন! এগুলো আমার গয়না না। এসব ধরিত্রীকে ফেরত দিতে হবে।” মাতাল অঙ্কন এখন মীরার হাত থেকে চুড়ি খুলতে চাইছে। ব্যথায় মীরা আর্তনাদ করছে। অঙ্কনের হিং*স্রতার কারণে শেষ পর্যন্ত মীরার চুড়িগুলো গুলো ভেঙে যায়। ভাঙা কাঁচের টুকরো গুলো অঙ্কনের হাতে লাগতেই অঙ্কন ব্যথায়, “আহ!” করে ওঠে। এদিকে সেই একই কাঁচের আঘাতে মীরার হাত ক্ষত বিক্ষত হয়ে গেছে।

“অঙ্কন, আমাকে ছাড়ো!!!” বলে মীরা অঙ্কনকে ধাক্কা দিল। ক্ষোভে অঙ্কন এসে মীরার মুখে ঘু*ষি মা*রতেই মীরা জ্ঞান হারালো। আর এদিকে মাতাল অঙ্কন ও ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

ঘুম ভাঙতেই অঙ্কন দেখলো মীরা র*ক্তাক্ত পড়ে আছে। ও বুঝতে পারল না এসব হলো কখন? আস্তে আস্তে ওর মনে পড়লো, কাল রাতে ঠিক কী করেছিল। মুহূর্তেই অঙ্কন চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো, “মীরা! মীরা!”

অঙ্কনের কান্না শুনে ওদের বাড়ির কাজের লোকেরা আসলো। ওরা মীরার জ্ঞান ফেরাতে চেষ্টা করল। ওর নাকে র*ক্ত শুকিয়ে আছে। মুখের আশেপাশে র*ক্ত জমে আছে। অঙ্কন খুঁজে পাচ্ছে না কী করবে। একটু পর মীরার জ্ঞান ফিরল। মীরার জ্ঞান ফিরতেই অঙ্কন মীরাকে জড়িয়ে ধরল, “তুমি বেঁচে আছ মীরা! আ’ম স্যরি। আমাকে ক্ষমা করে দাও। আ’ম স্যরি।” অঙ্কন এখনো কান্না করছে। মীরা কিন্তু ভয় পেয়ে আছে। এখনো সকাল হয়নি। অঙ্কন ফার্স্ট এইড বক্স এনে মীরার হাতে ব্যান্ডেজ করছে। কাউকে মীরাকে ধরতে দিচ্ছে না। নিজের হাতে মীরার চিকিৎসা করছে। কিন্তু মীরা ভয়ে একটা কথাও বলছে না।

মীরার গা হাত পা খুব ব্যথা করছে। ভোরের দিকে ওর জ্বর এসেছে। অঙ্কন হাসপাতাল থেকে ওর বিশ্বস্ত ডাক্তারকে ডেকেছে। ডাক্তার মীরাকে দেখেছে। পেইন কিলার আর মুখের দাগের জন্য একটা ঔষধ দিয়েছে। সে মীরার সাথে কথা বলছে,

– কী নিয়ে হলো?
– আপনার জানার দরকার নেই।
– এভাবে থাকবে?

মীরা আর কিছু বলল না। ডাক্তার যাওয়ার পর অঙ্কন এসে মীরার পায়ের পাশে বসলো। এরপর ওর পা ধরে কান্না করতে লাগলো,

– কী করছ কী অঙ্কন! সবাই দেখবে।
– দেখুক। সবাই ওটা দেখল এটা কেন দেখবে না। মীরা আমার ভুল হয়ে গেছে।
– পা ছাড়ো আমার।
– আই ওয়াজ ড্রাঙ্ক। আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমি তো আমি ছিলাম না।
– আমার পা ছাড়ো!

অঙ্কন পা ছাড়লো।

– তুমি এই কয়দিন আর বাইরে যাবে না।
– আমার পেশেন্ট আছে।
– ওদের অন্যরা হ্যান্ডেল করবে। তুমি বিশ্রাম নাও।
– বিশ্রাম নাকি এই দাগ গুলো দেখে ফেলবে বলে?
– যেটাই মনে করো। বাসা থেকে কী, রুম থেকে এক পা ও বের করবে না।

মীরা কিছু বলল না। ওর আপনাআপনি কান্না পাচ্ছে।

– অঙ্কন, তুমি যে ধরিত্রীর গয়না গুলো নষ্ট করে ফেললে?
– ডোন্ট ওরি। ওর জন্য একটা ডায়মন্ড সেট দিয়ে দিও।
– কী অকেশন?
– মা হতে যাচ্ছে। সেই অকেশন।

মীরা কিছু বলল না। কিন্তু ওর হঠাৎ মনে হলো অঙ্কন কী করে জানে?

– তোমার কাল এই জন্যই মেজাজ খারাপ ছিল, তাই না?
– অঙ্কন, তুমি এখনো আমাকে চিনতে পারনি। আশা করি আর দরকার না হোক।
– আমাকে ছাড়ার কথা স্বপ্নেও ভাববে না।

মীরা ঠিক করে কাঁদতে ও পারছে না। ওর মুখমণ্ডল ব্যথা করছে। অঙ্কন এসে ওর পাশে শুয়ে পড়লো,

– দেখি মীরা, বল তো কোন হারটা ভালো হবে?

মীরা চোখ বন্ধ করে নিলো। ও অঙ্কনের সাথে কোনো কথাই বলতে চায় না। অঙ্কন কিছুক্ষণ পর বাইরে চলে গেল। একটু বেলা হতেই মীরার ফোনে রাফসানের কল আসে।

– হ্যাপি বাসি বার্থডে। স্যরি রে, কাল এত কাহিনী হলো যে,
– থ্যাংকস। কোন দিনই বা মনে রাখিস।
– তোর গলা এমন কেন? কী হয়েছে?
– একটু জ্বর এলো। ধরিত্রী কেমন আছে?
– আছে। ও না অনেক কান্নাকাটি করেছিল। আমাকে নিয়ে যত কমপ্লেইন।
– সময় দিস না কেন?
– চেষ্টা করি। আচ্ছা শোন, কাল অঙ্কন ভাই কী কী গিফ্ট দিল।

অনেক গুলো চ*ড়, থা*প্পড়, ঘু*ষি আর কা*টা দাগ। এত অত্যাচা*রের পর আর বিছানা ছেড়ে উঠতে না পারা।

– অনেক কিছু। পরে দেখা হলে বলব।
– আচ্ছা। ধরাকে দেখতে আসিস। ওর মন একটু ভালো হবে। তুই আমার জন্য অনেএএএক লাকি। তোর জন্মদিনে আমি জানলাম আমি বাবা হবো।
– ও হ্যাঁ, কংগ্র্যাটস্!
– থ্যাংকস।
– শোন, ওকে একটা দোলনা কিনে দিস। দুজন বসতে পারে এমন। উঠবি যখন আবার ভেঙে ফেলিস না।
– তোকে বলেছে?
– না। আমি গিয়ে দেখলাম ওটা নেই। আচ্ছা রাখি। পরে কথা হবে।

অঙ্কন এসে দেখল মীরা ফোনে কথা বলছে। আবার একটা অসহায় মতো চেহারা করে মীরার পাশে বসলো,

– ওকে বলেছ, পুলিশ নিয়ে আসতে?
– পুলিশ ডাকার জন্য আমি একাই যথেষ্ট। রাফসানের দরকার পড়বে না। আর ডাকলে অনেক আগেই ডাকতাম।
– চলো না, আমরাও ধরিত্রী আর রাফসানের মতো একটা,
– আ’ম নট রেডি। তোমার খুব বেবি দরকার হলে অন্য অনেক পদ্ধতি আছে। আরো অপশন আছে। আমাকে বিরক্ত করো না।
– বাট আই ওয়ান্ট মাই বেবি অনলি উইথ ইউ।
– বাট আই ডোন্ট।

অঙ্কন চুপ করে বসে থাকে। মীরা মনে মনে ভাবছে আর না। এবার ডিভোর্স ফাইল করেই ছাড়বে।

– যদি অন্য কিছু ভেবে থাকো তো শোনো, সারাজীবন প্র্যাকটিস করার লাইসেন্সটা হারাবে।
– মানে?
– কিছু না। তোমাকে অনেক স্বাধীনতা দিয়েছি, দিচ্ছি। কাজী বাড়ির মেয়ে বউরা বাইরে কাজ করে না।
– বাইরে কোথায় করছি? নিজেদের হাসপাতালেই করছি।

ধরিত্রী বাড়ি ফিরে বিশ্রাম নিয়ে ওর জার্নালের কাজ করতে বসলো। জার্নাল লেখার সময় ওর হঠাৎ মনে হলো বেবির একটা নাম থাকা উচিত। ফিটাস নেম। তাই ও বাড়ির সবাইকে মেসেজ দিয়ে আসতে বলল। জোহরাকে ভিডিও কলে রেখে আসর সাজালো। রাফসান আজকে জলদি এসেছে। আসতে তো হতোই। কথা দিয়েছে যে।

“আসসালামু আলাইকুম সবাইকে। আজকে একটা বিশেষ কাজে সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।”

সবাই জিজ্ঞেস করতে লাগলো কী কাজ? ধরিত্রী গলা ঝেড়ে বলল,

“বেবির নাম রাখার কাজ।”

মাশরুফা আর রাশা হাসতে হাসতে শেষ। “ধরিত্রী, মাত্র তিন সপ্তাহ। আরো অনেক দেরি। আরো পরে করো।”

“উহুঁ! আমি বেবি মানে ফিটাসের নাম রাখতে চাই। অনেকটা ধরো নিক নেম। এটা অফিসিয়াল না। প্রাথমিক ভাবে এটা ডাকা হবে।”

রাফসান মুচকি হেসে ভাবতে লাগলো, তো কাল ঢং করছিল। এমনিতে ওর বেবি খুব পছন্দ। ওকে ভয় পাওয়াতেই এসব চাল।

ধরিত্রীর মা ভিডিও কল থেকে বলল, ” জোবায়ের। জায়েদের পর আমি আমার আরো একটা ভাই চেয়েছিলাম। তার নাম জোবায়ের রাখতে চেয়েছিলাম।”

“জোহরা, তুমি কী করে জানো এটা নাতি।” রুবাইয়া বলল।

“হ্যাঁ মা, নাতনি ও তো হতে পারে।” ধরিত্রী বলল।

রাশা বলল, “ভাবি, তবে এলজা। এলজা আমার প্রিয় প্রিন্সেস। এলজার পর এনা।”

“আরে বাবা, নাম টা হবে জেন্ডার নিউট্রাল। ছেলে মেয়ে না।” ধরিত্রীর কথা শুনে রাফসান বলল, “পুচকু!” “এটা অনেক কমন। বেশির ভাগ বাবা মা এটাই ডাকে।”

ধরিত্রীর কথা শুনে আহসান বলল,

– ভাবি, আনকমন চাই?
– হ্যাঁ।
– তো শোনো, আমার মাথায় অনেকদিন ধরে তোমাদের কাপল কাপল নেম ঘুরছে। সেটা অনেক সুন্দর। তোমার মা তো তোমাকে চিনি ডাকে। তো চিনির চি, আর রাফসানের রা। চিরা।
– ইউ মিন টু সে, চিড়া?
– হ্যাঁ! চিড়া ভাজা। আমার খুব প্রিয় খাবার। আমার চিড়া ভাতিজা বা ভাতিজি।

রাফসান লজ্জায় মুখে হাত দিল। এর মাথায় খাবার জিনিস ছাড়া কিছু ঘোরে না। আস্ত বোকা ছেলে একটা। মাশরুফা আহসানের পিঠে একটা লাগিয়ে দিয়ে বলল, “ধরিত্রী, চিড়া না, চিকু। চিকু সুন্দর। কার কথা শুনছ। ”

আহসান কাঁদতে কাঁদতে বলল, “চিড়াতে দোষ কী? চিড়া কী খারাপ? ”

রাফসান বলল, “আহা! চিড়া মুড়ি গুড় এগুলো নাম নাকি কোনো! এসব হবে না। একটু ভালোই রাখি। অফিসিয়াল না তো কী হয়েছে। আর্টিস্টিক কিছু হবে।”

ধরিত্রী এতক্ষণ কিছুই বলেনি। কিন্তু এখন বলল, “ভালো বুদ্ধি রাফসান! ও চিড়া, এরপর মুড়ি আর গুড়।”

সবাই হাসতে লাগলো। ধরিত্রী পাগল হয়ে গেছে। ধরিত্রী সবাইকে অগ্রাহ্য করে বলল, “আমি চিনি হতে পারলে আমার বাচ্চা কেন চিড়া হতে পারবে না। ধন্যবাদ আহসান, তুমি অনেক ক্রিয়েটিভ। তোমাকে দশে দশ দিলাম। তুমি সত্যিকারের মুশকিল আহসান বাবা।”

আহসানের এত প্রশংসা দেখে রাফসানের হিংসে হলো। সবার প্রশংসা করে কিন্তু রাফসানের করে না। তাই ও বলল,

– তাহলে আমি চিকেন ডাকবো। সবাই সবার প্রিয় খাবারের নাম ডাকবে। এই রাশা, তুই চুইংগাম ডাকবি।
– তোমার যা ইচ্ছা তুমি ডাকো। আমি তো চিড়া ডাকবো। চিনি আর চিড়া।

রাশা হেসে বলল, “তবে ভাইয়ার নাম আজ থেকে গুড়। চিনি আর গুড়ের সন্তান চিড়া। তাদের আবার ছোট ভাইবোন হবে মুড়ি। সুন্দর সাজানো সংসার।”

সবাই হাসিতে মেতে উঠলো। এত খুশি সবাই। এত সুখ আর শান্তি। আর অন্যদিকে মীরা পড়ে আছে ওর ঘরে। কীভাবে কোনো ঝামেলা না করে, অঙ্কনকে না রাগিয়ে এই সম্পর্ক থেকে বের হতে পারবে তা ভাবছে।

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here