তোমাতেই পূর্ণ আমি #পর্ব -৯,১০

0
889

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -৯,১০
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা
০৯

বাসে বসে আছি এক বেয়াদব ছেলের সাথে।একটু ও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারছি না।যতক্ষণে গন্তব্যে পৌছাবো ততক্ষণে হয়তো আমার ছোট্ট প্রাণ পাখিটাই উড়ে যাবে বুকের ধুকপুকানি ও পাশে বসা বেয়াদব ছেলেটার রাগের তেজে।

প্রবলেম কি তোমার?নিজের ওড়না ঠিক করে রাখতে পারো না?ওড়না কি ছেলেদের মুখে ওড়ানোর জন্য গায়ে দাও?পারলে গায়ে ওড়না ঠিকভাবে দাও নয়তো ফেলে দাও।—-রাগী কন্ঠে কথাটা বললেন তূর্য ভাইয়া।

এমন অপমান জনক কথায় ওড়না টা টেনে ভালো করে মাথায় পেচিয়ে নিলাম আমি।কোনো জবাব না দিয়ে তাকিয়ে রইলাম বাহিরের দিকে।বাতাসের তেজে একটু উড়ে গিয়ে ওনার মুখের ওপর পড়েছে তাতেই এতো খারাপ আচরণ করলেন তিনি।একসময় কেয়ার করেন তো একসময় অপমান করেন বিনা দোষে।শুধু প্রিয়ুর জন্য ওনার সাথে বসতে হয়েছে আমার।নয়তো আমি যদি পারি তো ওনার থেকে দশ হাত দূরে থাকি।কিন্তু তা আর হয় না।ঘুরে ফিরে ওনার সামনেই পড়তে হয় আমার।আড়চোখে অপর পাশে তাকিয়ে দেখলাম প্রিয়ু জমিয়ে আড্ডা মারছে আয়ুশ ভাইয়ার সাথে।বাহ! আমাকে এই বেয়াদব ছেলের সাথে বসিয়ে কতো মধুর হাসাহাসি চলছে ম্যাডামের।

এই প্রথম দেখলাম কোনো ছেলেকে জানালার পাশে বসার জন্য এতো রাগ দেখাতে।শুধু একবার মুখ খুলে বলেছিলাম যে ভাইয়া জানালার পাশে বসা যাবে।কথাটা বলা মাত্রই তিনি কঠোর গলায় বলে উঠলেন,,,

—বেয়াদব মেয়ে। সিনিয়র বসে আছে সিটে তুমি কোন সাহসে এমন বলো?শাস্তি পাওয়ার ইচ্ছে হয়েছে আবার?এই সিট টা আমার।তুমি অন্য কোথাও গিয়ে বসতে পারো।(দাতে দাঁত চেপে)

ওনার এমন কথায় আর কোনো কিছু না বলে বসে পড়লাম ওনার পাশের সিটে। কারণ এছাড়া কোনো রাস্তাই খোলা রাখে নি প্রিয়ু।


ভার্সিটি থেকে ট্যুরে নেওয়া হচ্ছে কক্সবাজার। ট্যুরে যাওয়ার মতো টাকা আমার নেই তাই নিষেধ করে দিলাম।আমার জন্য প্রিয়ু বেচারি ও মন খারাপ করে রইল।পরের দিন ইউনিভার্সিটি তে গিয়ে জানতে পারি ট্যুরের জন্য কাউকেই কোনো টাকা দিতে হবে না।এই ট্যুর টা নাকি সম্পূর্ণ ফ্রি।তবুও আপত্তি জানালাম আমি।একাই বেশ ভালো আছি।কোনো সুখ,, আনন্দ আমার জন্য নয় বলে নিষেধ করে দিলাম প্রিয়ু কে।পুরোদিন কেঁদে কেটে ভাসিয়েছে মেয়েটা।আমি না গেলে সেও যাবে না তার একটাই কথা।অথচ কলেজ লাইফ থেকেই খুব এক্সাইটেড ছিল প্রিয়ু ভার্সিটির ট্যুর গুলোর জন্য। শেষমেশ বাধ্য হয়ে রাজি হলাম।নিজেকে মানিয়ে নিলাম এতে আর কি হবে দুদিনের তো ব্যাপার।বরং আমারও সুযোগ হবে নিজেকে প্রকৃতির মাঝে মেলে ধরার।কখনও তো কোথাও ঘুরতে যাওয়া হয় নি।হাসি মুখে আসলেও বিপত্তি ঘটল বাসে উঠে। সকালের টিউশন টা করিয়ে বেরিয়েছি বিধায় পৌঁছাতে একটু দেরি হয়ে গেছে আমাদের। তখনও আমি জানতাম না ট্যুরে পুরো ভার্সিটির স্টুডেন্টরা যাবে।সব বাস ফিল আপ হয়ে যাওয়ায় একদম শেষের বাসে উঠলাম দুজন।উঠেই আমার চোখ ছানাবড়া। মাত্র দুটো সিট খালি আছে মাঝ বরাবর ।তাও আয়ুশ ভাইয়ার পাশে একটা আর তূর্য ভাইয়ার পাশে একটা।দুজন দু প্রান্তে কেন বসেছে কিছুতেই মাথায় ঢুকছে না আমার। আয়ুশ ভাইয়া কে বলতে যাব যে আপনি তূর্য ভাইয়ার সাথে বসে যান তখনি প্রিয়ু আমার হাত টা ধরে কানে কানে বলল,,,,

—দোস্ত এই সুবর্ণ সুযোগ টা নষ্ট করতে চাই না। এতো লং জার্নি আর পাশে তোর ভালোবাসার মানুষ বলতো কেমন ফিলিং?

প্রিয়ুর কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালাম আমি।যা বুঝার বুঝে গেছি।আয়ুশ ভাইয়ার সাথে বসার জন্য আমায় পাম দেওয়া আরকি!!!আমি একটু হাসতেই অনুমতি পেয়ে প্রিয়ু এক প্রকার লাফিয়ে বসে পড়ল আয়ুশ ভাইয়ার সাথে।আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে আয়ুশ ভাইয়া প্রিয়ুর সাথে কথায় মেতে উঠল। আমি আর কোনো উপায় না পেয়ে ধমক অপমান সব সহ্য করে বসে পড়লাম তূর্য ভাইয়ার সাথে।মানুষ টা কে বুঝার সাধ্য আমার নেই। কিন্তু সেদিন ওনার গাড়িতে করা কেয়ার আমার খারাপ লাগে নি।মনে হয়েছে উপর দিয়ে যতই কঠোর হোক মানুষ টা ভালো।কিন্তু নিমিষেই ভুল প্রমাণিত করল আমায়।
———————–

হঠাৎ বাসের ঝাঁকিতে পড়ে যেতে নিলে আমার কোমড়ের এক পাশে আকড়ে ধরে নিজের একদম কাছে টেনে নিলেন তূর্য ভাইয়া।ওনার ছোঁয়াতে বজ্রপাতের ন্যায় ছলকে উঠল আমার সারা শরীর।নিজের এক হাত দিয়ে খামচে ধরলাম ওনার জ্যাকেটের গলার কাছের অংশ।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ওনি আমার দিকে।আমিও ওনার চোখের দিকে তাকিয়ে কেমন ঘোরে চলে যেতে লাগলাম। সরে আসতে নিলে শক্ত করে কোমর জরিয়ে ধরলেন তিনি।আমতা আমতা করে বললাম,,,

–ভাইইয়া,,,,,

কিছু বলার পূর্বেই তাচ্ছিল্য স্বরে বলে উঠলেন তিনি,,,

—ভুল কিছু ধারণা করবে না শ্রেয়সী।যাকে তাকে তূর্য চৌধুরী স্পর্শ করে না। সো একদম ভুল ধারণা পুষবে না। এখন পড়ে গেলে কোমর ভেঙে আমাদের সবার ট্যুরে যাওয়ায় মাটি করে দিতে তুমি।বাচিয়েছি বলে ভাববে না তূর্য তোমায় লাইক করে বা অন্যকিছু।তোমার মতো হাজার মেয়ে আমার কাছে আসতে চায়।তো তুমি লাকি যে আমার ছোঁয়া বিনা চাওয়ায় পেয়ে গেছ।
কথাটা বলেই আমায় ছেড়ে দিলেন তিনি।আমি কিছু না বলতেই ওনার যা ইচ্ছে হয় বলে গেছেন।তাই রাগী কন্ঠে বললাম,,,,,

—আমি তো একবারও আপনাকে বলে নি আমায় স্পর্শ করুন। নিজেকে খুব বড় মনে করেন তাই না?আপনার এসব তেজ আপনার কাছেই রাখুন। তূর্য চৌধুরী কেন কোনো ছেলের ছোঁয়ায় আমার চায় না।

সাথে সাথেই চোখ কটমট করে আমার দিকে তাকালেন তিনি।ওনার অগ্নি দৃষ্টি দেখে ঢুক গিললাম ।একটু বেশিই হয়তো বলে ফেলেছি।কিন্তু ওনি তো আমার পুরো কথা না শুনেই নিজের বড়াই করতে লাগলেন।আমি তো উল্টো ধন্যবাদ জানাতে চাচ্ছিলাম ওনাকে।আমার দিকে কিছুটা ঝুঁকে আসতে নিলেই আয়ুশ ভাইয়ার ডাকে খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমি।মুখে হাসি টেনে আয়ুশ ভাইয়ার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলাম।

—-আর ইউ ওকে শ্রেয়া?
—জ্বি ভাইয়া।

–কেন আমি থাকতে কি তোর কোনো ডাউট আছে?
তূর্য ভাইয়ার কথায় হালকা হাসলেন আয়ুশ ভাইয়া।

—ভার্সিটির সবার প্রিয় তূর্য ভাইয়া থাকতে কারো আবার কিছু হতে পারে নাকি!!(হেসে)

—হুম এটাই।

কথাটা বলে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলেন তূর্য।আমিও চুপচাপ সিটে মাথা এলিয়ে দিলাম।ছোট থেকেই জার্নিতে ঘুমানোর অভ্যেস আছে আমার।সেই শেষ লং জার্নি করেছিলাম ক্লাস ফাইভে থাকতে বাবা -মায়ের সাথে।বান্দরবানে গিয়েছিলাম ঘুরতে।আম্মু মারা যাওয়ার পর পাল্টে গেল সবকিছু। এতো বছর পর আবারও লং জার্নি করছি।সিটে মাথা এলিয়ে দিতেই রাজ্যর ঘুম এসে ভর করল চোখ।ঘুমের মাঝেই মনে হলো কেউ আমার হাত ধরেছে আলতো করে।কিন্তু ঘুমের জন্য চোখ দুটো মেলতে পারছি না আমি।একটু নড়ে মাথাটা কাত করে আবারও পাড়ি জমালাম ঘুমের রাজ্যে।


মিট মিট করে চোখ মেলে নিজেকে জানালার পাশের সিটে আবিষ্কার করলাম।চারদিকে চোখ বুলিয়ে দেখলাম বাসে কেউ নেই। ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি।কোথায় গেল সবাই?আর আমি এই সিটেই বা আসলাম কিভাবে?তূর্য ভাইয়া কোথায়?ভয়ে কেঁদে দিব এমন সময় বাসে উপস্থিত হলেন তূর্য ভাইয়া। তাকে দেখেই কিছুটা ভয় কমে এলো আমার।আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন ওনি।হেসে বললেন,,,

—কী সুযোগ পেয়ে লুটে নিলে আমার সিট টা?

ওনার কথায় ভ্যাবা চ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি।আমি ভয়ে শেষ আর ওনি আছেন ওনার সিট নিয়ে।রাগে জিদে প্রিয়ুর সিটে গিয়ে বসে পড়লাম আমি।আমাকে এই সিটে দেখে প্রিয়ু বলে উঠল,,,

—কি হয়েছে শ্রেয়া?তুই কি ভয় পেয়েছিস?ঘুমিয়েছিলি তাই আর জাগানো হয় নি তোকে।খাবার আমি নিয়ে এসেছি তোর জন্য।

—খাবো না আমি।আর হে আমি এই সিটে বসেই যাবো।আশা করি তোর কোনো সমস্যা নেই। (রাগী কন্ঠে বললাম)

—সমস্যা নেই শ্রেয়া।আর দু ঘন্টার ই তো ব্যাপার। আমি বরং তূর্য ভাইয়ার সাথেই বসব।

আমার দিকে চোখ রাঙিয়ে প্রিয়ু কে জানালার পাশে বসতে বললেন ওনি।চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এল আমার।আমাকে জানালার পাশে বসতে না দিয়ে উল্টো অপমান করল আর এখন প্রিয়ুকে বসতে দিচ্ছে। করবেই তো এমন আমি তো ওনার শত্রু।আয়ুশ ভাইয়া মুচকি হেসে বসে পড়লেন আমার সাথে।ওনি বসতেই আবারো চোখ রাঙালেন তূর্য ভাইয়া। ওনার আবার কি হলো?এতোক্ষণ তো অনেক ধমকালেন এখন আবার চোখ রাঙাচ্ছেন কেন?আয়ুশ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে বলতে কেটে গেল পুরো সময়।দীর্ঘ জার্নি শেষে আমরা এসে পৌছালাম কক্সবাজার। অন্ধকার ছেয়ে গেছে চারদিকে।আজ হোটেলেই অবস্থান করবে সবাই।কাল সকালে বেড়োবে ঘুরতে।রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নিলাম আমি।এক রুমে চারজন করে থাকতে দেওয়া হয়েছে। ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে নিচে যেতে লাগলাম আমরা।আগে আগে চলে যাচ্ছে প্রিয়ু ও বাকিরা। আরিয়ানা আপু ফোন দেওয়ায় কথা বলতে বলতে এগিয়ে গেলাম কিছুটা দূরে থাকা বারান্দার দিকে।এদিকটায় তেমন আলো নেই। সমুদ্রের উচ্ছ্বসিত ঢেউ দেখা যাচ্ছে। বাতাস এসে শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে সারা শরীরে।ঠান্ডা লাগছে মৃদু মৃদু।রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য এতো বিমোহিত হয়তো আজ না দেখলে কখনও এমন এক সৌন্দর্যের সাক্ষী হতে পারতাম না আমি।এ মুহূর্তে খাবারের চেয়ে বেশি আমার প্রয়োজন এই সমুদ্রের তীরের নির্মল বাতাস টা।কতো বছর পর একটা স্বস্তির সন্ধান পেলাম আমি।

পিছন থেকে কোমরে কারো স্পর্শ পেয়ে আঁতকে উঠলাম আমি।দুহাতে আমার কোমর জরিয়ে ধরে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিল।আমার পিঠ গিয়ে ঠেকল তার বুকে।জমে গেছি একদম বরফের মতো।স্পর্শ টা পরিচিত।পেটে চাপ দিয়ে ধরল মানুষ টা।কিছু টা ব্যাথা অনুভব করলেও অসার হয়ে এসেছে পুরো শরীর।ঘাড়ে সেই মানুষ টার ঠোঁটের আলতো ছোঁয়াতেই কেঁপে উঠল সারা শরীর।খামচে ধরলাম পেটের উপর রাখা ওনার দু হাত।গলা দিয়ে কথা আসছে না আমার।ছাড়াতে চেষ্টা করলে আরো গভীর ভাবে জরিয়ে নিলেন।কানের পাতায় আলতো এক স্পর্শ দিয়ে রাগান্বিত কন্ঠে বলে উঠলেন,,,,

—আমায় রাগিয়ে কী তৃপ্তি পাও তুমি শুভ্রপরী?আমার রাগ তোমার জন্য খুবই ভয়ংকর।আমি চাই না আমার সেই ভয়ংকর রুপ টা তোমায় দেখায়।সেদিন ওয়ার্নিং দেওয়া সত্ত্বেও আমার কথার অমান্য করছো তুমি!ঠিক আছে তোমায় নয় আঘাত করব তোমার কাছে আসা প্রত্যেক টা ছেলেকে।তুমি আমার শুভ্রপরী।যেই কাজটা মাস খানেক আগে করার কথা ছিল সেটা খুব শীগ্রই করবো আমি।বন্দি করে নিব তোমায় আমার খাঁচায়।

—আআআআআমি বিধবা।আপপনি প্লিজ চলে যান।আমমি আর আপনাকে চাই না।—অনেক সাহস করে কথাগুলো বললাম।বলার সময় মনে হচ্ছিল আমার কলিজা টা ছিড়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষ টা কে পেয়েও ফিরিয়ে দিতে কতটা দম বন্ধ কষ্টদায়ক সেটা আজ অনুভব করতে পারছি।

—-তুই ভাবলি কি করে আমি তোকে ছেড়ে দিব?তুই আমার।শুরু থেকেই তুই শুধু আমার।আমার শুভ্রপরী।আজ যদি তোকে পাগলের মতো না চাইতাম তবে আমাকে এসব বলার সাহসে তোকে এই সমুদ্রে ডুবিয়ে মেরে ফেলতাম।মরার খুব শখ হয়েছে তোর তাই না?তার জন্যই তো এমন কথা বলছিস।আমাকে দূরে সরানোর জন্য তোকে তিলে তিলে মারব আমি।অন্যের হওয়ার জন্য তোকে শাস্তি দিব প্রতি মুহূর্তে। প্রস্তুত থাকিস সবকিছুর জন্য। কান খুলে শুনে রাখ পরিশেষে তুই আমার।

চোখ দুটো বন্ধ করে রইলাম আমি। দহন হচ্ছে আমার পুরো মনে।ঘাড়ে খুব জোরে কামড় পড়তেই মৃদু আওয়াজ করলাম আমি।কানের কাছে ওনি স্লো ভয়েসে বলে উঠলেন,,,

–আমার মনে প্রলয় ও হৃদয়ে রক্তক্ষরণের জন্য আমার দেওয়া দ্বিতীয় উপহার আমার শুভ্রপরী।সেই প্রথম দিনের মতোই হৃদয়ে সজীব তুৃমি।

ধীরে ধীরে নিস্তেজ হয়ে গেল সবকিছু। পিছন ফিরে কাউকেই দেখতে না পেয়ে দৌড়ে চলে এলাম সেখান থেকে।টলটল পায়ে যেতে লাগলাম নিচে।ওনি আমায় ছাড়বেন না।কেন জীবনে অতীত গুলো আবার বর্তমান হয়? সেই মানুষ টা কি অতীত বর্তমান সবটা জুড়ে থাকতে পারত না?এমন না হয়ে কি অন্যরকম হতে পারত না জীবনটা?কেন আআপনি ফিরে এলেন তূর্য!!!!! আমমমি জানি আপনিই আমার চিরকুট লেখক।খুব কি মন্দ হতো সেদিন আপনি আসলে!!!! শেষ পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিল আপনার শুভ্রপরী আপনার জন্য।

চলবে,,,,

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -১০
#লেখিকাঃআসরিফা সুলতানা জেবা

সুইমিং পুলের কাছে বসে আড্ডা দিচ্ছে সবাই। পরিবেশ টা খুব রমরমা। স্বচ্ছ নীল পানির সৌন্দর্য খুবই মন কাড়া।এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি নীল পানির দিকে।পাশে কারো বসার উপস্থিতি পেয়েই কিছুটা নড়ে উঠলাম আমি।পাশ ফিরে দেখলাম আয়ুশ ভাইয়া। আমার থেকে কিছুটা দূরত্বে বসলেন তিনি। হাসি মুখে তাকালেন আমার দিকে।এই লোকের মুখে এমন হাসি সবসময়ই বজায় থাকে। কিছুটা সরে বসলাম।আয়ুশ ভাইয়ার দিকে এক পলক তাকিয়ে দূরে বসে থাকা তূর্যর দিকে তাকালাম। আমার দিকেই তাকিয়ে আছেন ওনি মোহময় দৃষ্টিতে। আমি তাকাতেই তার মোহময় দৃষ্টি হয়ে উঠল ক্রোধান্বিত। চোখে চোখ পড়তেই অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিলেন তিনি।তার ফর্সা মুখটাতে রাগের আভা ছেয়ে গেছে। আমিও চোখ সরিয়ে আয়ুশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম। মুখের ভঙি আগের ন্যায় রেখেই আয়ুশ ভাইয়া জিজ্ঞেস করলেন,,,,

—কি তূর্যর অগ্নি দৃষ্টি নিতে পারলে না?

ওনার এহেন প্রশ্নে লজ্জায় সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি কোনো জবাব না দিয়ে।সত্যিই তো তূর্যর অগ্নি দৃষ্টিতে দৃষ্টি নিবদ্ধ করা আমার জন্য খুবই কঠিন।শুধু আমার জন্য না সবার জন্যই।

—তোমার কাছে ভালোবাসার সংজ্ঞা কি শ্রেয়া?

চমকে উঠলাম আমি। এক অজানা ঢেউ খেলে গেল আমার হৃদয় জুড়ে।সামনের দিকে তাকিয়েই সাবলীল ভাবে উত্তর দিলাম,,,

—-ভালোবাসার সংজ্ঞা কখনও কেউ পরিপূর্ণ ভাবে দিতে পারবে না।একেক জনের কাছে ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ একেক রকম।তবে আমার কাছে ভালোবাসা মানে লুকায়িত এক অনুভূতি।যেই অনুভূতি কে একজনের জন্যই হৃদয় কুঠিরে লুকিয়ে রাখা যায় বছরের পর বছর।ভালোবাসা রঙ বদলায় সময়ের সাথে কিন্তু আমার হৃদয়ে গচ্ছিত অনুরাগ কখনও রঙ বদলাবে না বরং একই ভাবে থেকে যাবে চিরকাল।

—-তাহলে তুমি কি কখনও উপলব্ধি করতে পেরেছ আমার মন তোমার প্রণয়ে আবদ্ধ? — হাসি মুখে বললেন আয়ুশ।

বুকটা ধুক করে উঠল আমার।ওনার দিকে তাকিয়ে কিছু বলার সাহস আমার এ মুহুর্তে নেই। কম্পিত স্বরে বললাম,,,

–জ্বি ভাইয়া।আমি আগেই বুঝতে পেরেছি।কিন্তু কারো সাথে জড়ানো কিংবা ভালোবাসা আমার সাধ্যের বাহিরে।কারণ,,,

—কারণ তুমি বিধবা!!

অশ্রুসিক্ত নয়নে আয়ুশ ভাইয়ার দিকে তাকালাম আমি।আমি তাকাতেই একটু হেসে বলতে শুরু করলেন,,,,

—তুমি বিধবা এটা কোনো সমস্যা হতেই পারে না।জীবনে এগিয়ে যাওয়ার অধিকার তোমার আছে।আমি ভালোবাসি বলে এই নয় তোমারও আমায় ভালোবাসতে হবে।তোমায় ভালোবাসলেও কখনো তোমাকে নিজের করে চায় না আমি।তুমি আমার নও অন্য কারো। তাই তোমায় চাওয়ার অধিকার ও আমার নেই। তবে এক তরফা ভালোবাসার অধিকার নিশ্চয়ই আছে।

সাথে সাথেই প্রশ্ন করলাম,,,

—অন্য কারো মানে?

তূর্য ভাইয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে আমার দিকে নজর রেখে বললেন,,,,

—সময়ের সাথে সব বুঝে যাবে। হয়তো নতুন কিছু অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। আরেকটা কথা প্লিজ আমায় ভুল বুঝবে না।ভালোবাসা টা প্রকাশ না করে থাকতে পারলাম না।ভাবলাম নিজেকে রিলেক্স করে নেই। নতুন কারো সাথে গুছিয়ে নেই নিজের লাইফ টা।সবসময়ের মতোই আচরণ করবে আমার সাথে।এটাই আমার রিকুয়েষ্ট। করবে তো?

হেসে জবাব দিলাম,,,

–জ্বি ভাইয়া।

হঠাৎ সবার হৈ হুল্লোড়ে চমকে উঠলাম আমরা দুজন।পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলাম তূর্য ভাইয়ার হাতে গিটার।ওনার গানের গলা খুব সুন্দর। সহজে গায় না তিনি।শুধু মাত্র স্পেশাল মানুষদের জন্যই গায় প্রিয়ুর কাছে শুনেছিলাম।নবীণবরণে গেয়েছিলেন ওনার স্পেশাল মানুষ টার জন্য। আমি ওনার স্পেশাল মানুষ কিনা জানিনা তবে ওনি আমার চিরকুট লেখক আর আমি তাহার শুভ্রপরী। খুব ভালো হত যদি সব ঠিক থাকত আজ।কিন্তু কিছুই ঠিক নেই এখন। আমাদের মাঝে বিশাল বড় দেয়াল।যেই দেয়াল ওনি টপকাতে চাইলে ও ধরা দিতে চাই না আমি।শুধু চাই ভালো থাকুক মানুষ টা। নিজের জীবনটা রাঙিয়ে তুলুক অন্য কোনো এক শুভ্রপরীর সাথে।একটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে চোখ ফিরিয়ে আবারো তাকালাম তূর্যর দিকে। আমার দিকে নজর রেখে গিটারে সুর তুললেন তূর্য।

~হার লামহা মেরি আখেঁ,,,,
তুজে দেখনা হি চাহে,,,,
হার রাস্তা মেরা,,
তেরি তারাফ হি যায়ে,,,
বেপানা পেয়ার তুজসে,,,
তু কিয়ো জানে না,,,
হুয়া ইকরার তুজসে,,,
তু কিয়ো মানে না,,,
বেপানা পেয়ার তুজসে তু কিয়ো জানে না,,,
হুয়া ইকরার তুজসে তু কিয়ো মানে না,,,,,,,,,,,

স্তব্দ হয়ে রইলাম আমি।এতো সুন্দর কেন ওনার কন্ঠ টা!!গানের প্রতি অক্ষর যেনো আমাকেই কেন্দ্র করে গাওয়া যা আমার হৃদয়ে সৃষ্টি করছে উত্তাল ঢেউ। গানটা শেষ করে সাথে সাথেই উঠে গেলেন তিনি।সবাই খুব অবাক হলো এভাবে উঠে যাওয়ায়।কেউ না দেখলেও আমার চোখ এড়ায় নি তূর্য ভাইয়ার চোখ থেকে ঝরে পরা এক ফোঁটা অশ্রু। মনটা বিষাদে ছেয়ে গেল আমার।ওনার চোখের কান্না মনে হলো আমার মনে এসে কোনো দাঁড়ালো ছুড়ির মতো বিধেছে। এ কেমন যন্ত্রণা? প্রিয় মানুষের কষ্টে কি মন ব্যাথিত হয়ে উঠে এভাবে?কিন্তু কেন কাঁদলেন ওনি?ওনাকে একদম মানায় না কান্নায়।একদমই না।এক প্রকার দৌড়ে আমিও চলে এলাম রুমে।সেখানে থাকলে হয়তো সবার সামনেই কেঁদে দিতাম।এতো কষ্টদায়ক কেন সবকিছু? অবাধ্য মন কেন ছুটে যেতে চাইছে ওনার কাছে?আমার কাছে যাওয়া যে তূর্যর জীবনে প্রলয় ডেকে আনবে।
——————————————–

বাস ছুটে যাচ্ছে হিমছড়ির উদ্দেশ্যে।এক পাশে সমুদ্র আরেক পাশে বড় বড় পাহাড় দেখে মুগ্ধ হয়ে রইলাম আমি আর প্রিয়ু। আমাদের দুজনেরই প্রথম বার কক্সবাজার আসা।সমুদ্র ও পাহাড়ের সৌন্দর্য কাছ থেকে দেখার জন্য তর সইছে না আমাদের। হিমছড়ি সম্পর্কে লোক মুখে,, ইন্টারনেটে জানলেও কখনও সরাসরি দেখার সৌভাগ্য হয় নি।একবার একজনের কাছে চিরকুট লিখে আবদার করেছিলাম কখনও যদি সৌভাগ্য হয় দুজন একসাথে কক্সবাজার আসব।স্বপ্নগুলো স্বপ্নই থেকে গেল।তবে তিনি আজ বাস্তবায়িত করেছেন কিন্তু দু’জন একসাথে নয় মাঝে বিশাল দূরত্ব। আজ সকালেই জানতে পারলাম এই ট্যুরের সব খরচ বহন করছেন তূর্য চৌধুরী। কক্সবাজার আসাটা ওনারই ডিসিশন। কেউ না জানুক আমি তো জানি ওনি এমন করেছেন।মানুষটা আমায় ভালোবাসে সত্য হলেও কেন সে আমাকে অন্যের হতে দিয়েছে? আর কেনই বা এতো কঠোর আচরণ আমার সাথে?


হিমছড়ি পৌঁছাতে উল্লাসী হয়ে উঠল প্রিয়ু।চারদিকে এতো দোকান।কিছুটা দূরে আর্মি ক্যাম্প। সামনে সমুদ্র। আগে থেকেই টিকেট বুক করা ছিল।সবাই মিলে ঝর্নার কাছে এসে ভিড় জমাল।পর্যটক সংখ্যা একদম কম।সবার ভিড়ে চোখ দুটো খুঁজে চলেছে একজন কে।কোথায় ওনি?আমাদের বাসে ও তো দেখলাম না।কিছু সময় পর ও না দেখতে পেয়ে হতাশ হয়ে প্রিয়ুর সাথে তাল মিলিয়ে হাঁটতে লাগলাম।ওনাকে ছাড়া কেমন শূন্য শূন্য লাগছে সবকিছু। সিড়ির কাছে এসে আমার চোখ চড়কগাছ। এতো উঁচু আর এতোগুলো সিড়ি বেয়ে উঠতে হবে নিশ্চয়ই আজ পা দুটো কাঁদিয়ে ছাড়বে ব্যাথায়।মন টাও কেমন বিষন্ন হয়ে আছে ওনাকে না দেখতে পেয়ে।আচমকা পাশে কারো অস্তিত্ব অনুভব করতেই শিউরে উঠল পুরো দেহ টা।অনুভব টা একদম চিরচেনা। মুখে ফুটে উঠল এক চিলতে হাসি।কোনো দিকে না তাকিয়েই মাটির দিকে তাকিয়ে রইলাম আমি।

—গাইস রেডি তো সবাই ৩০০ ফুটের মতো উঁচু পাহাড়ে চড়তে?

তূর্য ভাইয়ার কথাটা শুনেই একসাথে চিল্লিয়ে সম্মতি জানাল সবাই।প্রিয়ুর হাত টানায় আমিও শুরু করলাম সিঁড়ি বেয়ে উঠা।আঁড়চোখে তাকাতেই চোখ আটকালো ওনার দুচোখে।সাথেই সাথেই চোখ ফিরিয়ে মনোযোগ দিলাম পাহাড়ে উঠায়।প্রিয়ু তো একের পর এক ছবি তুলেই যাচ্ছে। খুবই এক্সাইটেড মেয়েটা। পাহাড়ে উঠে ক্লান্ত হয়ে বসে পড়ল সবাই। বিন্দুমাত্র ক্লান্তি ভর করে নি আমাকে।ইচ্ছে করছে এখানেই থেকে যায় চিরকাল।পাহাড় থেকে সমুদ্র টা অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে।একদিকে সমুদ্র একদিকে পাহাড় একদিকে ঝর্ণা এ যেন এক অপূর্ব মিলনমেলা। বাতাস এসে উড়িয়ে দিচ্ছে খোলা চুলগুলো। সব লাজলজ্জা ভুলে দুহাত মেলে ধরলাম। উচ্ছ্বসিত হচ্ছে আমার মন,,হৃদয়। কাউকে পরোয়া না করে কালো অতীত ভুলে মন চাইছে আবারও নতুন এক জীবন সাজাতে।প্রকৃতির মাঝে এক অদ্ভুত মায়া। এতো মাসের অশান্ত মনটা কে ও কেমন শান্ত করে দিল।জীবনের সব বিষাদ ভুলে হারিয়ে যেতে চায় এই মুগ্ধতায় ভরপুর প্রকৃতির মাঝে।

দূর থেকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একজন।শ্রেয়ার সাথে সাথে সে ও উপভোগ করছে সৌন্দর্য।তবে প্রকৃতির নয় তার শুভ্র পরীর খোলা চুল,,মিষ্টি হাসির মুগ্ধতায় মুগ্ধ হচ্ছে শুভ্রপরীর চিরকুট লেখক। নিজের ফোনে শ্রেয়সীর সৌন্দর্য টা বন্দি করে নিল মানুষ টা।ঠোঁট দুটো প্রসারিত হয়ে এল তার।

—প্রথম দিনের মতো আজো স্নিগ্ধ তুমি।প্রকৃতির চেয়ে আমার কাছে মুগ্ধময় তুমি।এই মুগ্ধতা উপভোগের জন্যই আমার এতো সাধনা।খুব শীগ্রই আমার কাছে নিয়ে আসব তোমায়।যেন কোনো বাহানা না লাগে আমার তোমাকে এক পলক দেখার জন্য শুভ্রপরী।

আমাদের ডিপার্টমেন্টের ইমাদ হাতে দুটো ডাব নিয়ে দৌড়ে আসল আমার আর প্রিয়ুর দিকে।আমি আর প্রিয়ু একে অপরের মুখ চাওয়া চাওয়ি করে ফিরে তাকালাম ইমাদের দিকে।আমাদের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে হাফাচ্ছে ইমাদ। হাতের ডাব দুটো এগিয়ে ধরল আমাদের দিকে।হাঁফাতে হাঁফাতে বলে উঠল,,,,

—-ভভভাা,,, বলতে গিয়ে ও থেমে গেল ইমাদ।একটু জিরিয়ে আবারও বলে উঠল,,,

—প্রিয়ু ডাব দুটো তোমার ও শ্রেয়া আপুর জন্য। খেয়ে নিবে হে?না খেলে কিন্তু আমার গর্দান যাবে।প্লিজ এই অধম টাকে বাচিয়ে দিও।শ্রেয়া আপু আপনি কিন্তু অবশ্যই খাবেন।খাবেন কিন্তু।

কথাটা বলে ডাব দুটো আমাদের হাতে দিয়ে চলে গেল ইমাদ।ইমাদের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝলাম না আমরা ।অবাক চোখে তাকিয়ে রইলাম আমরা দুজন।পাশ থেকে প্রিয়ু বলে উঠল,,,,

—দোস্ত আমাকে নাম ধরে ডাকল আবার তোকে আপু বলে কেন ডাকল?তোকে এতো সম্মান! ঘটনা কি? আর আমাদের জন্য ইমাদ ডাব কেন নিয়ে আসল?কেমন জানি লাগছে সবকিছু?

প্রিয়ুর প্রশ্নে আমি বেক্কল বনে গেলাম।সত্যিই তো ইমাদ কেন আমাদের জন্য ডাব নিয়ে আসল?তূর্য পাঠায় নি তো?

—আমিও তো বুঝতে পারছি না দোস্ত।

—থাক বাদ দে।এতো উঁচুতে উঠে গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে ছিল। ভালোই হয়েছে ডাব খেয়ে এখন তেষ্টা মেটানো যাবে।যেই দিয়েছে মন থেকে ধন্যবাদ তাকে।
———————————-

হিমছড়ি থেকে চলে এসেছি প্রায় ঘন্টাখানেক হবে।এই মুহুর্তে আমরা সবাই অবস্থান করছি ইনানি তে।পাথরে ভরপুর এই দ্বীপের সৌন্দর্য বর্ণনা করলেও অনেক কম হবে।কেনা কাটায় ব্যস্ত সবাই। কক্সবাজার এসেছে স্মৃতি হিসেবে কিছু নিয়ে যাবে না তা তো হতেই পারে না।কিন্তু আমার হাত একদম ফাঁকা। প্রিয়ু কিনেছে অনেক কিছু। না করা সত্বেও কিনেছে আমার জন্য। মাঝে মাঝে ভীষণ খারাপ লাগে মেয়েটা আমার জন্য এতো করে কিন্তু আমি তাকে কিছুই দিতে পারি না। তবে আল্লাহ চাইলে আমি ওকে ওর জীবনের প্রিয় একটা জিনিস উপহার দেওয়ার চেষ্টা করব। চমকে দেব ওকে।পাথরের ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট সামুদ্রিক মাছ ঘুরে বেড়াচ্ছে। রঙিন কাকড়া হেটে বেড়াচ্ছে পাথরের উপর।সবকিছুই খুব মনোমুগ্ধকর। দিক বিদিক ভুলে এগিয়ে গেলাম ছোট একটা মাছ ধরতে। সাথে সাথেই চিতকার দিয়ে বসে পড়লাম পাথরের উপর। তরল রক্ত ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রের পানিতে।পাথরের সরু অংশে বেসামাল ভাবে পা লেগে কেটে গেছে অনেক খানি।

শ্রেয়ার চিতকারে আয়ুশ প্রিয়ু সবাই দৌড়ে এলো। আতঙ্কিত কন্ঠে বলে উঠল প্রিয়ু,,,,

—দোস্ত কিভাবে হলো?অনেক বেশি রক্তক্ষরণ হচ্ছে তোর পা থেকে।আয়ুশ কিছু করেন প্লিজ।

শ্রেয়ার কান্নারত মুখ টা দেখে আয়ুশের বুকটা কেঁপে উঠল। হেঁটে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই শ্রেয়ার।সব দ্বিধা ঝেড়ে শ্রেয়া কে কোলে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল আয়ুশ।রক্ত পড়া না আটকালে খারাপ কিছু হয়ে যেতে পারে।একটু ঝুঁকে শ্রেয়া কে কোলে নিতে যাবে তার আগেই ঝড়ের বেগে এসে শ্রেয়ার পায়ে হাত দিল কেউ। কারো স্পর্শ পেয়ে ব্যাথায় কুকড়ে উঠলাম আমি।কান্না মিশ্রিত চোখে তাকিয়ে দেখলাম তূর্য ভাইয়া আমার পা টা বেধে দিচ্ছে নিজের রুমাল দিয়ে। চোখ দুটো ভীষণ লাল হয়ে আছে তার।এমন লাগছে কেন মানুষ টা কে?

তূর্য কে এভাবে দেখে অবাক হলো সবাই। আয়ুশ পিছিয়ে এল কিছুটা। এই প্রথম কারো সামনে ঝুঁকতে দেখেছে সবাই তূর্য কে।যে মেয়ে কে কয়েকদিন আগেও অপমান করছিল সেই মেয়ের জন্য এতো উত্তেজিত হয়ে পড়তে দেখে সবার চোখ কপালে।

আকস্মিক শূণ্যে ভাসতেই ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি।খামচে ধরলাম আমাকে শূণ্যে ভাসানো ব্যাক্তিটার বুকের কাছের শার্টের অংশ টা।চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে রাখলাম।লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে এতো মানুষের সামনে এমন পরিস্থিতিতে পরে।পিট পিট করে চোখ মেলে হাতের মুঠো টা আরেকটু শক্ত করে তাকালাম মানুষটার মুখের দিকে। চোখ দুটো এখনো রক্তিম। কোনো হেলদোল নেই ওনার।

—এভাবে তাকালে অন্য পা টা ও ভালো থাকবে না। নির্লজ্জ মেয়ে একটা।–সামনের দিকে দৃষ্টি রেখেই কথাটা বললেন তূর্য।

ওনার কথায় বিষম খেলাম আমি। গুটি শুটি হয়ে রইলাম ওনার বুকে।

অবাকের শীর্ষ পর্যায়ে চলে গেল সবাই তূর্যর শ্রেয়া কে কোলে নিতে দিতে।একদম অবিশ্বাস্য এক দৃশ্য যেন দেখছে সবাই। কারো কিছু বলার সাহস নেই তূর্য কে।চোখ ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। প্রিয়ুর চোখ দুটো বড় বড় হয়ে এল এমন দৃশ্য দেখে। স্বপ্ন ভেবে অজান্তেই খামচে ধরল পাশে থাকা আয়ুশের হাত।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here