তোমাতেই পূর্ণ আমি #পর্ব-১১,১২

0
847

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব-১১,১২
#লেখিকা-আসরিফা সুলতানা জেবা
১১

পায়ের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তূর্য ভাইয়া । কোনো হেলদোল নেই ওনার। হোটেল রুমে বিছানায় হেলান দিয়ে বসে আছি আমি পা দুটো একদম সোজা রেখে। ডক্টর এসে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে গেছেন একটু আগে। ব্যান্ডেজ করার পর ইনজেকশন দিতে গিয়ে ডক্টর ভেবেছিলেন আমি হয়তো ভয় পাব তাই তূর্যর দিকে তাকিয়ে বললেন,,,

—মিষ্টার চৌধুরী ওনার হাত টা চেপে ধরুন নয়তো ইনজেকশন দেওয়ার সময় ভয়ে হাত সরিয়ে নিতে পারেন।

তৎক্ষণাৎ তূর্য বলে উঠলেন,,,

—ধরার প্রয়োজন নেই ডক্টর। শি ইজ ভেরি স্ট্রং। রাইট মিস শ্রেয়সী?
কথাটা বলে আমার দিকে তাকালেন তূর্য। সত্যিই তো আমার এসবে ভয় সেই ছোট বেলায় কেটে গেছে। যেখানে নিজের জীবন টা টিকিয়ে রাখার জন্য লড়াই করতে হচ্ছে আমাকে প্রতি মুহূর্তে সেখানে সামান্য ইনজেকশনে ভয় পাওয়া টা নিতান্তই ন্যাকামি। তাই ডক্টর আংকেলের দিকে তাকিয়ে বললাম,,,,

——আমার এসবে ভীতি নেই আংকেল। আপনি নিশ্চিন্তে ইনজেকশন দিতে পারেন।আমি হাত একটু ও নাড়াব না।

কথাটা বলেই তূর্যর দিকে তাকাতেই দেখলাম অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। চোখ দুটো এখনও লাল। মুখের ভাব ভঙ্গি বুঝা বড্ড মুশকিল।ডক্টর আংকেল ইনজেকশন পুশ করতেই চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করে রইলাম আমি।

শ্রেয়া চোখ দুটো খিঁচে বন্ধ করা মুখটা দেখে ঠোঁট দুটো প্রশস্ত করে ফেলল তূর্য। তূর্যর কাছে শ্রেয়া কে ছোট বাচ্চাদের মতো লাগছে। মুখে যতই নিজেকে স্ট্রং বলুক ভিতর থেকে একদম নরম মেয়েটা। শুধু পরিস্থিতির চাপে পড়ে জীবনের টানাপোড়নে কঠিন হওয়ার চেষ্টা। শ্রেয়া আহ্ শব্দ করতেই উৎকন্ঠা হয়ে পড়ল তূর্য। ডক্টরের উদ্দেশ্য ভয়ার্ত গলায় বলল,,,

— সাবধানে ডক্টর
—- এতো বিচলিত হতে হবে না মিষ্টার চৌধুরী। ইনজেকশন দেওয়া শেষ। আপনার ওয়াইফ কয়েকদিন হাটা চলা বন্ধ রেখে নিয়মিত ওষুধ খেলেই একদম ঠিক হয়ে যাবে পা টা। (হেসে)

ডাক্তারের কথা শুনেই বিষম খেলাম আমি। মনটা কেঁপে উঠল।আমি ওনার বউ এটা হয়তো কখনও স্বপ্নে ও সম্ভব না। তূর্যর জবাবের আশায় অপেক্ষা করে রইলাম কিছু না বলে।ওনার দিকে তাকানোর সাহস নেই এখন।ডক্টর সাহেব কেমন লজ্জায় ফেলে দিলেন। মাথাটা নিচু করে বিছানার চাদরের দিকে চেয়ে রইলাম আমি। হঠাৎ হৃদয়ে হানা দিল অন্যরকম অনুভূতি। সারা হৃদয় জুড়ে বিস্তার করে চলেছে নতুন এই অনুভূতিটা। শিরদাঁড়া বেয়ে গেল এক শীতল স্রোত। অশ্রুসিক্ত হয়ে এলো আঁখি দুটো। এ কেমন অনুভূতি! কথাটা কানে বাজছে বার বার।তূর্যর দিকে অশ্রুসিক্ত আখি দুটো নিবদ্ধ করতেই মুচকি হেসে এগিয়ে এলেন তিনি।একটু আগেই ডক্টরের কথার জবাবে তূর্য বললেন,,,

—আমি আমার বউয়ের প্রপার খেয়াল রাখব ডক্টর। বউটা আমার বড্ড বেসামাল তো তাই নিজের বাচ্চামির কারণেই পায়ের এই দশা।( হেসে)

ব্যাস তূর্যর এই কথাটায় হৃদয়ে হাতুড়ি পিটাচ্ছে অনেক জোরে। যেই ডাকটা শোনার জন্য তৃষ্ণাত ছিলাম বহু মাস আগে। সে ডাক শুনে আজ ইচ্ছে করছে চিতকার করে কাঁদতে। প্রচন্ড বেগে আছড়ে পড়তে মানুষটার বুকে। চিতকার করে বলতে আমি আগেও আপনাকে চেয়েছি আজও চাই তূর্য। সুখী একটা জীবন চাই। একটু শান্তি চাই।হেরে যাচ্ছি বার বার এই কঠিন জীবনে। ক্লান্ত আপনার শুভ্রপরী,, অনেক ক্লান্ত। কিন্তু সেই অধিকার সেই সাধ্য আজ আর নেই। এখন তো আমি অন্য কারো বিধবা। অশ্রুসিক্ত নয়নে ওনার দিকে তাকাতেই কিছু না বলে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন আমার কাটা পায়ের দিকে।


পাঁচ মিনিট যাবত পায়ের দিকে তাকিয়েই আছেন তিনি।কি দেখছেন ওনি?এবার লজ্জা +অস্বস্তি দুটো ঝেকে ধরেছে আমায়। পা টা একটু সরিয়ে নিতেই খুব জোরে চেপে ধরলেন তিনি।ব্যাথায় মনে হলো আমার অন্তর আত্মা বেরিয়ে যাবে।ঠোঁট দুটো চেপে বসে রইলাম আমি ব্যাথায়। কান্না পাচ্ছে ভীষণ।
শ্রেয়ার মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে পা টা ছেড়ে দিল তূর্য। তাচ্ছিল্য কন্ঠে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠল,,,,

—ইশ খুব ব্যাথা লাগছে তাই না?ননসেন্স গার্ল। নিজের বিপদ ডেকে এনেছে তো এনেছে আবার অন্যের ঘুরা ও হারাম করেছে। পা কেটেছে ওনি আর রক্ত ঝড়ছে অন্য কারো হৃদয়ে। কেয়ারলেস মেয়ে একটা যেখানেই যায় আপদ ডেকে আনে। কে যে বলে এসব মানুষ কে কোথাও যেতে।

ওনার এমন কথায় চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ল আমার। সবাই বলে আমি অপয়া আপদ ডেকে আনি। আজ ওনিও বললেন। ওনার মুখে এমন কথা শুনে মরে যেতে ইচ্ছে করছে আমার। কেন আপনি এমন করছেন তূর্য? আড়ালে ভালোবাসছেন তো প্রকাশ্যে অপমান করছেন কষ্ট দিচ্ছেন। কি অপরাধ আমার? কেন এভাবে আঘাত করছেন আমায়? মনের কথা গুলো মনে রেখেই বললাম,,,,

—আমি আপনাকে একবারও বলে নি নিজের ঘুরাঘুরি বাদ দিয়ে আমায় সবার সামনে দরদ দেখিয়ে এখানে নিয়ে আসতে। আমার পা কেটেছে সেটা আমি বুঝব। আপনার এতো কিছু করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। প্রথম থেকেই আপনি আমায় ঘৃণা করছেন অপমান করছেন কিছু বলি নি আমি। এখনও হেল্প করে আবার অপমান করছেন। ডক্টরের কাছে আমাকে বউ পরিচয় দিয়ে মহৎ সাজছেন। আমার এমন হেল্প বা দরদের কোনো দরকার ছিল না। আপনি আমায় ঘৃণা করেন করতে থাকেন সবসময়। কে বলেছে আপনাকে আনতে? ওখানে তো আয়ুশ,,,,,

কথাটা শেষ করতে না দিয়ে পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস টা খুব জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারলেন তূর্য ভাইয়া। ভয়ে আঁতকে উঠলাম আমি।চোখ দুটো আগের থেকে ও বেশ লাল হয়ে উঠেছে তার। মনে হচ্ছে অগ্নি বর্ষণ হবে চোখ থেকে। তীব্র রাগে লাল বর্ণ ধারণ করেছে ওনার ফর্সা মুখটা। আমার দিকে তেড়ে আসতেই খাটের সাথে একদম সেঁটে গেলাম আমি। তীব্র রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,,,

—তোর মতো মেয়ের জন্য তূর্য মরে না। চরিত্রহীন মেয়ে যার হাজার টা পুরুষ লাগে। এতো পুরুষের সাথে ঘেঁষা ঘেঁষি করার শখ তোর অথচ আমি একটু ছোঁয়াতেই ধার লাগছে তাই না?আমার কোলে উঠে তৃপ্তি মেটে নি আয়ুশের কোলে উঠার জন্য মরে যাচ্ছিস তাই না? এমন চরিত্রহীন নির্লজ্জ মেয়ে আমি কখনও দেখি নি। এই আভাসের চরিত্রে দোষ ছিল নাকি তোর চরিত্রে? আভাস তো বেঁচে গিয়েছে মরে তোর মতো দুশ্চরিত্রা মেয়ের হাত থেকে। কান খুলে শুনে রাখ শুধু মাত্র খালামণির জন্যই তোর হেল্প করেছি। নয়তো তোকে ধরতেও ঘৃণা হয় আমার।

কথাগুলো বলেই দেয়ালে প্রচন্ড জোরে একটা ঘুষি দিল তূর্য ভাইয়া। ওনার কথাগুলো শুনার চেয়ে হয়তো মরণ ও ভালো ছিল। ডুকরে কেঁদে উঠলাম আমি। যাকে না দেখেই ভরসা করেছি ভালোবেসেছি তার মুখে এমন বিষাক্তময় কথাগুলো মেনে নিতে পারছি না আমি। দূরে চলে যাবো ওনার থেকে অনেক দূরে কখনও আর আসবো না ওনার সামনে। চোখের পানি আজ কোনো ভাবেই থামছে না।

শ্রেয়ার কান্নারত চেহারা টা দেখে মনটা অস্থির হয়ে উঠল তূর্যর। কাছে যেতে চেয়েও গেল না। নিজের রাগ কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। বেরিয়ে গেল রুম থেকে। তূর্য কে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে অবাক হল দরজায় দাড়িয়ে থাকা প্রিয়ু ও আয়ুশ। এ মুহুর্তে শ্রেয়ার কাছে না গিয়ে তূর্যর কাছে যাওয়া উচিত আমার কথাটা মনে মনে ভেবেই ছুটে চলল আয়ুশ তূর্যর রুমের দিকে।

প্রিয়ু রুমে ঢুকেই দেখল শ্রেয়া কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে।প্রিয়ু কে দেখেই নিজের চোখ মুছার চেষ্টা করলাম। আমার হাত টা ধরল শ্রেয়া। ভয়ার্ত গলায় প্রশ্ন করল,,

—কি হয়েছে শ্রেয়া?তূর্য ভাইয়া এভাবে রেগে বেরিয়ে গেলেন কেন?আর তুই বা কাঁদছিস কেন?

—-এমনি।

—আবার লুকাচ্ছিস?কি হয়েছে খুলে বল?তূর্য ভাইয়া তো সবার সামনেই তোকে কোলে তুলে নিয়ে আসল।আবার তুই কাঁদছিস।কি হয়েছে শ্রেয়া?

—কিছু না। ওনি কি আমায় সহ্য করতে পারেন নাকি?তোকে না বলেছিলাম ওনি মার বোনের ছেলে?তাই একটু সাহায্য করেছে আরকি!!সাথে ফ্রি তে অপমান ও।(একটু হেসে বললাম আমি)

—তূর্য ভাইয়া তোর সাথে এতো রুড বিহেভ কেন করে শ্রেয়া?কি দরকার ছিল ওনার সাথে তর্ক করার?আচ্ছা যাই হোক ওনার থেকে দূরে দূরে থাকাই বেটার এখন।

হুম অনেক বেটার। ওনার থেকে দূরে থাকলেই ওনার মঙল হবে। আমি তো অপয়া আপদ তাই ওনার জীবনে কোনো আপদ ডেকে আনতে চাই না আমি। আমি জানি তূর্য তখন কথাগুলো আপনি রাগের মাথায় বলেছেন। কিন্তু কথাগুলো একদম সত্য ছিল।তবে আমি ক্যারাক্টারলেস নয়। পবিত্র ছিলাম আমি। চেয়েছিলাম আপনার হতে কিন্তু বাবার মিনতি আমি ফেলতে পারি নি তূর্য। তবুও ক্ষীণ আশা ছিল আপনি এসে নিজের কাছে নিয়ে যাবেন আমায়। সবকিছু শেষ করে দূরে সরে যাব আমি। আমি জানি আপনি পাগলের মতো ভালোবাসেন আমায়। যেকোনো ভাবে আমায় নিজের করতে চাইবেন।কিন্তু বিধবা হয়ে কীভাবে নিজের হাতে নিজের ভালোবাসার মানুষটার জীবন নষ্ট করে দেই বলেন?তাই কোনো পিছুটান না রেখে চলে যাব আমি।—কথাগুলো ভেবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম।কোনো কিছু না বলে শুয়ে রইলাম চোখ বুঝে।

প্রিয়ু খাওয়ার জন্য অনেক জোরাজোরি করলেও খেলাম না। মেডিসিন খাওয়ার ও ইচ্ছে নেই। এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে আমি মরে গেলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।পালিয়ে ও বেড়াতে হবে না আর। প্রিয়ু এসে জানিয়ে গেল রুমে আজ একা থাকতে দেওয়া হয়েছে আমায়।কারণ জিজ্ঞেস করার ইচ্ছে নেই। তাই কিছু জিজ্ঞেস না করেই শুয়ে পড়লাম।
——————————————–

মাঝ রাতে কপালে কারো স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম আমি। দরজা তো বন্ধ কে আসবে রুমে? মনের ভুল ভেবে আবারও ঘুমের ঘোরে ডুব দিলাম। ঘুমের ঘোরে ব্যান্ডেজ করা পা টা নাড়তেই ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলাম আমি। গালে তরল কিছু অনুভব করতেই ভিতরটা আর্তনাদ করে উঠল আমার। উড়ে গেল ঘুম। চোখ দুটো বুঝে রইলাম।ফিল করতে পারছি আমার খুব কাছে আছেন ওনি।বুঝতে পারলাম ওনি কাঁদছেন। আবারও গালে ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই হৃদপিণ্ডে শুরু হলো উত্তাল ঢেউ। ওনার উপস্থিতি আর উপলব্ধি করতে পারছি না। তার মানে কি ওনি চলে গেলেন?মিট মিট করে চোখ দুটো খুলে দেখলাম ওনি নেই। হয়তো সত্যিই চলে গেছেন। মনের মাঝে দলা পাকিয়ে রাখা কষ্ট গুলো বেরিয়ে আসতে লাগল কান্না রুপে। আওয়াজ করে কেঁদে দিলাম। দহন হচ্ছে মনের ভিতর।কেন আল্লাহ এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলল আমাকে? কেন ভালোবাসা পেয়েও আঁকড়ে ধরতে পারছি না আমি?আজও মনে পড়ে সেই প্রথম দিনের কথা।


ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছি দু মাস হয়েছে। প্রায় পাঁচ দিন ক্লাস মিস হয়েছে বাবার সাথে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ায়। কতো পড়া হয়তো জমে গেছে। মোবাইল ও নেই যে প্রিয়ুর থেকে ফোন দিয়ে সব জেনে নিব। বাড়ির কাজ শেষ করে হেঁটে আসায় অনেক লেট হয়ে গেছে।ক্লাস শুরু হতে মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি আছে।গেইট দিয়ে তাড়াহুড়ো করে ঢুকতে যাবো তখনি থেমে গেলাম দারোয়ান চাচার ডাকে। একটু হেসে বললাম,,,

—কিছু বলবেন চাচা? ক্লাস শুরু হয়ে যাবে তো তাই তাড়া আছে।

—শ্রেয়া মা,,তোমার খুঁজে আইছিল এক সাহেব। অনেক বড়লোক বাড়ির পোলা মনে হইতাছিল। কি সুন্দর এক খান পোলা। দেখলেই চোখ জুড়ায় যায়।

চাচার এমন কথায় ভ্রু কুঁচকালাম আমি।কোথাকার কোন ছেলে আমার সাথে তার কি সম্পর্ক? আমি তো এমন কাউকেই চিনি না। আমাদের এতো বড়লোক কোনো আত্মীয় ও নাই।তাই আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,,,

—আপনি কি শিওর আমার কথা বলছিল?

–হ মা। তোমার কথাই কয়তাছিল। আমি কইলাম আপনে একটু দাঁড়ান মাইয়াডা হয়তো আইতাছে। কিন্তু পোলাডা দাঁড়াইলো না। আমার হাতে একখানা বক্স দিয়া কইল তোমারে দিতে। আমারে চকচকা এক খান এক হাজার টাকার নোট ও দিল। পোলাডা ভীষণ বড়লোক হইব।

চাচার কথায় খুব অবাক হলাম আমি। আমার তো কোনো বয়ফ্রেন্ড ও নেই। অজানা আড়ালে কোনো আশিক ও নেই
তবে কে হতে পারে?আগ্রহ বেড়ে গেল দ্বিগুণ। চাচা দাঁত কেলিয়ে আমার দিকে একটা বক্স এগিয়ে দিতেই চোখ দুটো কপালে উঠে গেল আমার। এতো সুন্দর কাঠের ছোট একটা বক্স আমি আগে কখনও দেখি নি। বক্সটার উপর খোদাই করে খুব সুন্দর করে লিখা–“আমার শুভ্রপরী।”

লিখাটা পড়েই বজ্রপাতের ন্যায় ছলকে উঠল পুরো দেহ।জীবনে প্রথম এক নতুন অনুভূতি এসে হানা দিল হৃদয় দুয়ারে। বক্স টা হাতে নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে হাত বুলালাম আমার শুভ্রপরী লিখাটার উপর। হৃদয়ের ধুকপুকানি শব্দ টা বেড়েই চলেছে ক্রমশ। মন বার বার আওড়াচ্ছে,,,,,–“”আমার শুভ্রপরী।”

চলবে,,,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

#তোমাতেই পূর্ণ আমি
#পর্ব -১২
#লেখিকা -আসরিফা সুলতানা জেবা

গভীর রাত।অন্ধকার ছেয়ে আছে চারদিকে। ঘুমে আচ্ছন্ন প্রত্যেকটা মানুষ। তবে ঘুম নেই আমার চোখে। মন পড়ে আছে সেই কারুকাজ নির্মিত ছোট্ট বক্সটার দিকে।জীবনে এই প্রথম কোনো কিছুর প্রতি এতো আগ্রহ পাচ্ছে আমার।হয়তো কঠিন এই জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু হয় নি বলে। আজকের জিনিসটা আমার জন্য অপ্রত্যাশিত। এজন্যই এতো কিউরিওসিটি কাজ করছে আমার মাঝে। কলেজে ব্ক্স টা খোলে দেখার সময় ও সুযোগ কোনোটাই হয়ে উঠে নি। বাসায় এসে ও মায়ের ভয়ে লুকিয়ে রেখেছি। ওনি যদি এটা দেখেন তবে তুলকালাম বাঁধিয়ে দিবেন। এমনিতেই বাবার কাছে হাজার নালিশ করে আমার নামে। কখন আমাকে এ ঘর থেকে বের করবে সেই ফন্দি আঁটে। কিন্তু এই মহিলার থেকেই খুব ইচ্ছে করে মায়ের আদর পেতে। তা আমার ভাগ্যে নেই। ওনি দু চোখে ও দেখতে পারেন না আমায়। অসভ্য, অপয়া, বেয়াদব মেয়ে এসব সারাক্ষণ ওনার মুখে লেগেই থাকে। অথচ আজ পর্যন্ত এমন কিছুই করি নি যে কেউ অসভ্য,, বেয়াদব মেয়ে বলে আক্ষায়িত করবে। বাড়ি থেকে কলেজ আর কলেজ থেকে বাড়ি এই দুটোই থাকে সবসময় আমার গন্তব্য। কখনও ফ্রেন্ডসদের সাথে কোথাও যাওয়া হয় না। মন চাইলে ও সাধ্য আমার থাকে না। কোথাও ঘুরতে গেলেও টাকার প্রয়োজন। তাই ঘুরতে ভালে লাগে না বলে কাটিয়ে দেই। বাবা হাত খরচ দিলে সেটাও আড়ালে ছিনিয়ে নেই মা। বাসায় সব কাজ করতে হয় বলে নিজের ঘুরার সাধ ও কখনও মেটাতে পারি না। কলেজে যাওয়াটা ও ছলেবলে বন্ধ করতে চেয়েছেন তিনি। কিন্তু বাবার জন্য পারেন নি। বাবার একটু একটু ভালোবাসা ও সাপোর্টই আমার জন্য অনেক।

ছোট বোন রিহা গভীর ঘুমে। রিহা ও আমায় বেশ একটা পছন্দ করে না। মা সারাক্ষণ ওর কান ভরে। কিন্তু মেয়েটা কে খুব ভালো লাগে আমার। ছোট্ট এই বোনটাকে ইচ্ছে করে আগলে রাখি। ভীষণ ভালোবাসি ওকে। ওর ঘুমানোর অপেক্ষায় ছিলাম এতোক্ষণ। ওর সামনে বক্সটা খুললে মায়ের কানে যেতে শুধু সেকেন্ডের দেরি। একটু কাছে গিয়ে ভালো করে চেক করে নিলাম ঘুমিয়েছে কিনা। হে,,গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন রিহা। পা টিপে টিপে কলেজ ব্যাগ থেকে বক্সটা বের করলাম। বক্সটা হাতে নিতেই ভীষণ ভালো লাগা ছেয়ে গেল মনে। আবারও একবার উচ্চারণ করলাম অতি যত্ন সহকারে লিখা ” আমার শুভ্রপরী” নামটা। আশ্চর্য অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে। বুকের ভিতরটা কেঁপে উঠল ভীষণ জোরে। মন বলছে এই নামের মাঝে মিশে আছে এক রাশ ভালোবাসা। এক মুঠো আবেগ। আসলেই কি এই নামটার মাঝে নাকি যে এতো সুন্দর নামটা দিয়েছে সেই মানুষটার মাঝে!! আর কোনো কিছু না ভেবে অতি সাবধানে বক্সটা খুললাম আমি।

বক্সটা খুলেই চমকে গেলাম আমি। স্তব্ধ হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ। চোখ দুটো এই বুঝি বেরিয়ে আসবে কোটর থেকে।আবছা আলোতেই কেমন ঝলমল করছে ভিতরটা। এতো সুন্দর পায়েল আমি কখনও দেখি নি। একদম অন্যরকম। বুঝাই যাচ্ছে খুব দামি হবে। কাঁপা কাঁপা হাতে পায়েল টা নিলাম আমি। এতো সুন্দর কেন এইটা?মনটা জুড়িয়ে যাচ্ছে আমার। ভালো করে দেখতেই মনে হলো এটা ডায়মন্ডের। সত্যিই কি ডায়মন্ড? তাড়াতাড়ি করে বক্সের মধ্যে রেখে দিলাম পায়েল টা। ভিতরে থাকা রঙিন কাগজের ভাজ করা চিরকুট টা মেলে ধরলাম।

~ আসসালামু আলাইকুম শুভ্রপরী
তোমাকে এক নজর দেখার আশায় হৃদয় আমার বড্ড তৃষ্ণার্ত। যেদিন থেকে তুমি আশ্রয় নিয়েছ আমার হৃদয় মাঝে সেদিন থেকেই আমি পিপাসিত। তুমি কখনও বৃষ্টিতে ভিজবে না। তুমি কখনও কারো জন্য শুভ্র রঙের ড্রেস পড়বে না।তুমি কখনো কারো জন্য শুভ্রময়ী হয়ে উঠবে না। তুমি আমার শুভ্রপরী। আমার মনের মাঝে ঝড় তোলা এক অনন্যা তুমি। আমার কঠিন মনে কখনও কোনো মেয়ে স্থান পায় নি তবে তুমি কিভাবে এক নিমিষেই কেড়ে নিলে আমার এ মন! সেই মুহূর্ত থেকেই দহন হচ্ছে আমার অন্তরে যেই দহন নিঃশেষের একমাত্র উপায় তুমি। তুমি আমার। আমার শুভ্রপরী। আমার নিদ্রা কেড়ে নেওয়া প্রথম নারী তুমি। পায়েল টা আমার দেওয়া প্রথম উপহার। উহু,,,হেয়ালিপনা করবে না এটাকে মুগ্ধময়ী । তোমার জন্য স্পেশালভাবে বানানো এটা যার মাঝে মিশে আছে আমার এতো বছরের জীবনের জমিয়ে রাখা অফুরন্ত ভালোবাসা। ~

থম মেরে দাড়িয়ে রইলাম আমি। প্রচন্ড বেগে কাঁপছে অন্তর। ছোট্ট মনে জড়ো হচ্ছে নাম না জানা এক অনুভূতি। বিস্মিত হয়ে চেয়ারে বসে পড়লাম। কান্না পাচ্ছে না বরং অসংখ্য ভালো লাগায় ভরে উঠছে মনটা। এ কেমন অনুভূতি! অচেনা একটা মানুষের লিখা চিরকুটে এমন অজানা অনুভূতি কেন জাগ্রত হচ্ছে। পরম যত্নে চিরকুট টা বক্সে রেখে ব্যাগে ভরে রাখলাম আমি।বিছানায় শুয়ে পড়লাম। চোখ বুঝতেই চোখের সামনে ভেসে উঠল চিরকুটের লিখা গুলো ও ভালোবাসায় ভরপুর অসম্ভব সুন্দর পায়েল টা। কথাগুলো মনের মাঝে জায়গা করে নিয়েছে। সুন্দর হাতের লিখার মুগ্ধকর বাক্য লিখার অধিকারী মানুষ টা না জানি কতো সুন্দর! কে হতে পারে মানুষ টা? সামান্য লিখা পড়েই এতো মুগ্ধ হচ্ছি আমি আর চাচা তো সরাসরি দেখেছেন।সত্যিই আপনি এতো মুগ্ধময় ঠিক আপনার লিখা শব্দ গুলোর মতোই! কে আপনি জানিনা আমি। আর আমায় বা কোথায় দেখেছেন তাও জানা নেই আমার। তবে আপনাকে দেখার ইচ্ছে জেগেছে ভীষণ। ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করেও ঘুম আমার চোখে ধরা দিল না। লাইট টা জ্বালিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। লাইট জ্বালাতেই একটু নড়ে উঠল রিহা। ক্লাস সেভেনে পড়লে কি হবে মেয়েটা ভীষণ পাকা। আয়নায় নিজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম আমি।মা বলতো রাতের বেলা আয়না দেখতে নেই। তবুও নিজেকে এই মুহূর্তে আয়নায় দেখতে ইচ্ছে হলো। জানতে ইচ্ছে হলো ওনি কি দেখেছেন আমার মাঝে যে এতো আবেগ দিয়ে চিরকুট লিখেছেন। সাদা কালারে কি আমায় এতোই সুন্দর লাগে!

———————————–

ক্লাসে বসে আছি। মন বসছে না কোনো কিছুতেই। বার বার মনে পড়ছে চিরকুটের কথাগুলো। আচ্ছা চিরকুট লেখক কি আজও এসেছিলেন ?কই চাচা তো আমায় কোনো চিরকুট দেয় নি আজ।তার মানে কি ওনি আসেন নি? এসব ভাবনাই ঘুর ঘুর করছে মাথায়। জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া বুঝাচ্ছেন স্যার।কিন্তু সেদিকে কোনো মনোযোগ নেই। ঘন্টা পড়তেই চলে গেলেন স্যার। টিফিন পিরিয়ড এখন। প্রিয়ুর হাত টেনে বক্স টা নিয়ে চলে আসলাম চার তালায়। চার তালা টা এখনও কম্পলিট হয় নি।তাই এদিক টায় মানুষ তেমন আসে না। এভাবে হাত ধরে টেনে আনায় আমার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল প্রিয়ু্। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠল,,,,

—দোস্ত এভাবে টেনে এনেছিস কেন?কি হয়েছে দোস্ত? তোর চোখে মুখে এতো উৎসাহ ব্যাপার কি?

—আমি তোকে কিছু দেখাতে চাই দোস্ত। –ফিসফিস করে বললাম।

—এভাবে ফিসফিস করছিস কেন নিশ্চয়ই কোনো ব্যাপার স্যাপার আছে। প্রেমে পড়েছিস নাকি রে? পোলা কেডা?ওই আকাশ নাকি!(দুষ্ট হেসে)

—পাগল হয়েছিস। ঐ মস্তান পোলার প্রেমে পড়মু আমি! লম্পট একখান পোলা। মেয়েদের দিকে কু নজরে তাকায়। শুধু পরিবার থেকে সাপোর্ট পাই না বলে নাইলে আমায় উত্যক্ত করার অপরাধে ওই পোলারে জুতা খুলে মারতাম।

—বাহ্ বান্ধুবী আমার প্রতিবাদী রুপ ধারণ করছে। তা ঘটনা কি বইলা ফেলেন আফা।( একগাল হেসে বলল প্রিয়ু)

প্রিয়ুর কথায় হালকা হাসলাম আমি।পেছন থেকে বক্সটা বের করে খুলে ধরলাম ওর সামনে। অবিশ্বাস্য চোখে আমার দিকে তাকালো প্রিয়ু। আলতো করে পায়েল টা হাতে নিল সে। কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,,,

—এটাতো ডায়মন্ডের পায়েল শ্রেয়া?কোথায় পেলি?আর বক্সের মাঝে এই চিরকুট টা?বক্সটা ও তো খুব দামি মনে হচ্ছে।

সবকিছু খুলে বললাম ওকে। আনন্দিত কন্ঠে একটু জোরে বলে উঠল প্রিয়ু,,,,

—-সত্যি দোস্ত? কি বলছিস আমার তো বিশ্বাসই হচ্ছে না। এতো সুন্দর পায়েল। পায়ে পড়েছিস দোস্ত?

—আস্তে প্রিয়ু।কেউ শুনলে হিতে বিপরীত হতে পারে। না পড়ি নি। আমার ভয় লাগে এতো দামি একটা জিনিস পড়লে মা বাবা কি ভাববে বল?

—আচ্ছা বাসায় নাহয় না পড়িস।এখানে তো একটু পড়ে দেখতে পারিস।

কথাটা বলতে দেরি হলেও আমার পায়ে পায়েল টা পড়িয়ে দিতে একটু ও দেরি করল না প্রিয়ু।মুখে হাত দিয়ে বলল,,,

—মা শা আল্লাহ,,,কতো সুন্দর মানিয়েছে পায়েলটা তোর পায়ে। কতো সুন্দর লোকটার চয়েজ।এবার তো আমারও বড্ড ইচ্ছে করছে ওনাকে দেখার।

-পায়েল টা খুলে বক্সে রেখে দিলাম আমি। এক দৃষ্টিতে বক্সটার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললাম,,,,

—আমারও।

প্রিয়ু সন্দেহ নিয়ে বলে উঠল,,,

–দোস্ত এটা আকাশ নয়তো!

একদম নিশ্চয়ইতার সাথেই আমি জবাব দিলাম,,,

—কখনও না। অন্য কেউ। যার মনটা অনেক সুন্দর। যার ব্যাক্তিত্ব নিঃসন্দেহে অনেক মুগ্ধময়।

—প্রথম চিরকুট পড়ে,মানুষটা কে না দেখেই প্রেম।বাহ্ তুই তো অনেক ফাস্ট দোস্ত।

প্রিয়ুর মাথায় একটা বারি দিলাম আমি। গাল দুটো লজ্জায় লাল হয়ে এলো আমার।আস্তে করে বললাম,,,

—প্রেমে পড়েছি কিনা জানিনা তবে আমি মুগ্ধ হয়েছি। নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচিত হয়েছি।


কলেজ ছুটি শেষে ধীরে ধীরে আমি আর প্রিয়ু বেরিয়ে এলাম। চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিনা। পাঁচ মিনিট যাবত গেইটে দাঁড়িয়ে থেকে ও আমাদের সন্দেহের তালিকায় কেউই এলো না। চলে যেতে নিব পাশের দোকান থেকে দৌড়ে এলেন দাড়োয়ান চাচা। হাত দিয়ে ইশারা করলেন থামতে। অবাক হয়ে দাড়িয়ে পড়লাম দুজন। তাড়াহুড়ো করে পকেট থেকে একটা খাম বের করলেন চাচা। আমি নিতে যাব তার আগেই খামটা ছিনিয়ে নিল প্রিয়ু। মেয়েটা একটু বেশিই এক্সাইটেড। দাঁত কেলিয়ে বললেন,,,,

—একটু আগে আইছিল সাহেব। আমার হাতে এইডা দিয়া কইল কলেজ ছুটি হইলে তোমারে দিতাম। পোলা একখান। কি সুন্দর লাগছিল! কতো দামি চশমা পইড়া আইছিল।কি জানি কও তোমরা! ক্রেশ,,

ফট করে প্রিয়ু বলে উঠল,,–ক্রাশ চাচা।

—হু ক্রাশ খাইবার মতো পোলা। মেলা বড়লোক হইয়া ও তোমার লায় প্রত্যেকদিন আইয়ে এইহানে। আমার দো মনে কয় পোলাডা তোমারে প্রেম করে শ্রেয়া মা।

চাচার কথায় এই মুহূর্তেই মনে হচ্ছে মাটি ফাঁক করে নিচে ঢুকে যেতে পারলে খুব ভালো হতো।লজ্জায় মাথাটা নিচু করে ফেললাম আমি। একটু হেসে চাচা বললেন,,,

—লজ্জা পাইয়ো না মা। দেরি হইয়া যাইতেছে যাও বাসায় যাও।নাইলে তোমার বাবার দ্বিতীয় বউ তো বকব তোমারে। এতো সুন্দর মাইয়ার লাই একটু ও মায়া হয় না ওই খারাপ মহিলার।যাও মা বাসায় যাও।

চাচা আমাদের পাড়ায় থাকেন। ছোট থেকেই দেখে আসছি তাকে। একটু লোভী হলেও লোকটা খারাপ না।প্রিয়ুর হাত ধরে পা বাড়ালাম আমি। কিছুটা দূরে এসে নির্জন জায়গায় দাঁড়িয়ে খামটা খুললাম। হাত বাড়াতেই বেরিয়ে আসল চকচকা এক হাজার টাকার দুটো নোট। খুব অবাক হলাম দুজনে। নোট দুটো প্রিয়ুর হাতে দিয়ে খামের ভিতর থেকে নীল রঙা চিরকুট বের করলাম।

” ভাবছো টাকা কেন দিলাম তাই না? টাকা দিয়ে আমার শুভ্রপরী কে অপমান করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।ভুলেও আমায় ভুল বুঝবে না শুভ্রপরী।শুভ্রপরীর অপমান মানে আমাকে অপমান করা। কারণ তুমি আমার সবটা জুড়ে বিরাজ করছো। তোমার কলেজ ড্রেসের সাথের ওড়না টা আমার কাছে খুব ছোট মনে হয়েছে। চাইলেই ওড়না কিনে গিফট দিতে পারতাম।কিন্তু বার বার গিফট দেওয়ার ইচ্ছে আমার নেই। কারণ অতিরিক্ত কিছু পেলে মানুষ পরবর্তীতে সেটা কে সস্তা মনে করে। আমি কখনও সস্তা হতে চাই না বরং থাকতে চায় তোমার মন প্রাণ জোরে। বিরাজ করতে চাই তোমার হৃদয়ে। ওড়না কেনার জন্যই টাকা টা দেওয়া। খুব খুশি হব আমি আমার দেওয়া টাকায় তুমি ওড়না কিনলে। আশা করি আমায় বুঝতে পেরেছ তুমি। বড় দেখে একটা ওড়না কিনবে।কখনও যেন তোমার খোলা চুল কেউ না দেখে। ঘোমটা দিয়ে আসবে সবসময়। সকালের হালকা রোদে ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছিল তোমায়। ইচ্ছে করছিল একটু ছুঁয়ে দেয় তোমায়। পরম যত্নে আগলে নেয় আমার শূন্য বুকে।””

—–তোমার চিরকুট লেখক❤️

শেষ আর এক পা ও নড়ার সাহস নেই আমার। চেপে ধরলাম পাশে থাকা প্রিয়ুর হাতটা। মন মাঝে আবদ্ধ হয়ে পড়ছেন অচেনা অজানা মানুষটা।

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here