এমেলিয়া,০৯,১০

0
324

#এমেলিয়া,০৯,১০

০৯

রুম্মার মৃত্যুর পর অদ্রি আরো বেশি করে সময় দেয়, তবে এমেলিয়া কেমন যেন উদাসীন হয়ে পরেছে।সবসময় কিছু একটা ভেবে যায়।চঞ্চলতায় ভাটা পরেছে,বকবক করা মেয়েটা কেমন যেন শান্ত।সবুজ চোখ দু’টো যেন কিছু বলতে চায়।
অদ্রি ভাইয়া,আমি তোমাকে কিছু বলতে চাই।খুব জরুরী।
অদ্রি থামিয়ে দেয়।চুপ একদম কথা না।চল আজকে তোকে একজনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।
এমেলিয়া জিগ্যাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।
আরে চলনা, গেলেই দেখতে পাবি।একদম মাটির মানুষ,যাকে আমি অসম্ভব রকম বিশ্বাস করি।বলতে পারিস আমার আইডল।

অদ্রি এমেলিয়াকে নিয়ে চলে আসে ইসতিয়াক আহমেদের বাসায়।ম্যাম এবং স্যার দু’জনেই ওদের খুব আপ্যায়ন করছেন।তবে ইসতিয়াক আহমেদ এর চাহনি খুব একটা ভালো ঠেকছেনা এমেলিয়ার।কেমন যেন চাহনিতে লালসা উঁকি দিচ্ছে।
ইসতিয়াক সাহেব সবার চোখ এড়িয়ে অতি সন্তর্পনে একটুখানি চা ফেলে দেয় এমেলিয়ার শরীরে।যেন সে ইচ্ছে করে কিছু করেনি।ও মাই গড,আই এম সরি।আই রিয়েলি ডিডেন্ট নোটিস।
আচ্ছা সমস্যা নেই বলে ওয়াশরুমের দিকে উঠে যায় এমেলিয়া।

কিছুক্ষণ পর…

এক্সকিউজমি, তোমরা কন্টিনিউ কর আমি একটু আসছি, উঠে যায় ইসতিয়াক আহমেদ।
এমেলিয়া শাড়ি পরিষ্কার করছে আর ভাবছে লোকটার মতলব ঠিক কি হতে পারে।এমতাবস্থায় ইসতিয়াক আহমেদ অতর্কিতেই এমেলিয়ার হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে দেয়।
ওয়াও,চোখ ঝলসে যাচ্ছে আমার।ওই চোখে এত মায়া,তোমার রূপে তো পাগল হয়ে যাচ্ছি সুন্দরী.. ইসতিয়াক আহমেদের এরূপ আচরণে মোটেও বিচলিত না হয়ে জবাব দেয় এমেলিয়া,পাগল হয়ে যাস না।তোকে খুন করতে একটুও মজা লাগবেনা আমার।
হো হো করে হেসে ওঠেন ইসতিয়াক আহমেদ।তুই কি করবিরে অবলা নারী…??
–অবলা ভেবে ভুল করিস না।

কি হলো এমেলিয়া… হয়েছে তোমার?হাক ছাড়ে অদ্রি।
আসছি বলে লোকটাকে ধাক্কা মেরে বের হয়ে যায় এমেলিয়া।ইসতিয়াক আহমেদ ভাবছেন কিভাবে মেয়েটাকে নিজের করে পাওয়া যায়।

কিছুদিন পর এক বৃষ্টিরত সন্ধার দিকে ফুলার রোডে আপন মনে বসে আছে এমেলিয়া।খুব করে কিছু একটা মনে করতে চাচ্ছে কিন্তু মনে আসছে না।এমেলিয়া আজকাল ২/৩ দিন আগে কি হয়েছে সেটাও ভুলে যাচ্ছে।গুছিয়ে কথা বলতে পারছেনা।কিছু কিছু শব্দ খুব চেনা কিন্তু কিছুতেই মনে আসছেনা।
আজব এমন কেন হচ্ছে,কেন কিছু মনে করতে পারছিনা..কয়েকদিন আগেও তো এমন হয়নি।মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে।ছটফট করতে করতে এক পর্যায়ে জ্ঞান হারায়।
ঠিক কতক্ষণ পর জ্ঞান ফিরেছে ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না।
জ্ঞান ফিরলে এমেলিয়া দেখতে পায় তুলতুলে বিছানার উপর শুয়ে আছে।চারদিকে চোখ বুলিয়ে নেয় সে।কিছুই চিনতে পারছেনা।আশেপাশে দেখে খুব বিলাসবহুল লাগছে।কোথায় এসে পরেছি আমি?কেউ আছেন?

এমন সময় ওয়াইন ভর্তি গ্লাস হাতে সামনে এসে দাঁড়ায় সুঠাম দেহের একজন সুপুরুষ।
ওয়েলকাম,ওয়েলকাম টু মাই ফার্মহাউস,বিউটিফুল।
এমেলিয়ার চিনতে আর এক সেকেন্ড সময় লাগে না।বজ্জাত ইসতিয়াক আহমেদ।

চলবে…..

লেখনীতে-Shahana urmi

#এমেলিয়া

পরদিন খবরে হেডলাইন আসে,ধানমন্ডি ৩২ এর একটি ফার্মহাউস থেকে বিশিষ্ট ডিবি ইনভেস্টিগেটর ইসতিয়াক আহমেদের ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার।
চেয়ারম্যান ম্যাম সকাল থেকে উদ্বাস্তুর মত কেঁদেই চলছেন।একটু পর পর জ্ঞান হারাচ্ছেন। তাকে সামলে রাখা যাচ্ছেনা।দুই ছেলেই বিদেশে থাকে।খবর পেয়ে তারাও রওনা দিয়েছে।অদ্রি লাশের পাশে থ মেরে বসে আছে।কিভাবে সম্ভব?স্যারের সাথে কার শত্রুতা থাকতে পারে তাও আবার এমনভাবে খুন,যেরকমটা শহরে বেশ কিছু দিন ধরে হয়ে আসছে?নাহ্ আমাকে বসে থাকলে চলবে না।কিছু একটা করে স্যারের খুনি পর্যন্ত পৌঁছাতেই হবে।
পুলিশ ফোর্স ব্যস্ত ইসতিয়াক আহমেদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফনের কাজ নিয়ে।অদ্রি স্বভাবতই ইনভেস্টিগেশনের জন্য আশে পাশে তাকাতে থাকে। একটু দূরে সোফার পাশে রক্তমাখা এক টুকরো কাগজ দেখতে পায়।টুপ করে কাগজটা তুলে নেয় অদ্রি।তাতে লেখা আছে
‘সবুজে সত্য
সবুজে শক্তি
সবুজে পাপের ইতি।’

অদ্রি কিছু বুঝতে পারে না।আরো একটু ঘুরে এ ঘর ও ঘর দেখতে থাকে।ডাইনিংয়ের পাশে বেলকুনির সাইটে ছোট্ট একটা ছিমছাম পকেট রুম দেখতে পায় অদ্রি।রুমের একপাশে বিশাল বইয়ের সেল্ফ, পুরো সেল্ফ দেশি বিদেশি ডিটেক্টটিভ বই,উপন্যাস,ধর্মতত্ব,ইত্যাদি বই দিয়ে ঠাসা।তবে সব ক্যাটাগরি করে রাখা।স্যার নিশ্চয়ই প্রচুর বই পড়তেন।নিক পিরোগের একটি চেনা বইয়ে হাত দিতেই বইয়ের পিছনে একটি ডায়েরি দেখতে পায় অদ্রি। কৌতুহলবসত খুলে দেখতেই চোখ কপালে উঠে যায়।এটা তো এমেলিয়ার কানের দুল।স্পষ্ট মনে আছে যেদিন স্যারের বাসায় গিয়েছিলো সেদিন মেয়েটা এই দুল পড়েছিলো।তবে ফেরার পথে রাত হয়ে যাওয়ায় তাড়াহুড়োয় আর সেভাবে খেয়াল করা হয় নি।
নিচেই লেখা,’অনেকদিন সুন্দরী কোনো মেয়ের সঙ্গ পাইনা।বয়স ও হয়ে যাচ্ছে।আজকাল কেন যেন মনে হয় স্ত্রীকে ঠকাচ্ছি।গতকাল অদ্রি একটি মেয়েকে নিয়ে এসেছিল।সবুজ চোখ,অসম্ভব রকম সুন্দর।জীবনে শেষ বারের মত এই মেয়েটিকে আমার চাই’।
তার ঠিক একটু নিচেই লেখা,
‘আমি কি আসলেই খারাপ মানুষ?’

অদ্রির গা গুলিয়ে যাচ্ছে।এসব কি?স্যার তো এমন নয়।তবে কি আমি স্যারকে চিনতে পারিনি?তারমানে সেদিন স্যার ইচ্ছে করে এমেলিয়ার উপর চা ফেলে দিয়েছিলো?আমার,এমেলিয়াকে স্যারের বাসায় নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি। পাতা উল্টোতে আবারো লেখা’ ‘আজ ১১ই সেপ্টেম্বর। বাইরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।পুরো ফার্মহাউস ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।ওই সবুজ চোখওয়ালিকে প্রয়োজন।এই বার ই শেষ। জীবনে আর এমুখো হবো না।’

অদ্রি ভয়ংকর বাজে অবস্থায় পরে যায়।এমন দিন দেখতে হবে জীবনে স্বপ্নেও ভাবেনি।এখন তার কাছে দিনের আলোর মত সব পরিষ্কার।সত্যি কিছু কিছু সময় অসম্ভব ভয়ংকর হয়। এ বিষাদময় সত্যি সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা।বার বার মনে হচ্ছে কোথাও একটা ভুল হচ্ছে।দুইয়ে দুইয়ে চার মিললে সত্যিটা আরও ভয়ংকর রূপ নেয়।১১তারিখ,সবুজ চোখ,লাশের পাশে থেকে পাওয়া চিরকুট, সেদিন ওইভাবে সাপটাকে ধরা সব মিলিয়ে সব ক্লু এমেলিয়ার দিকেই যাচ্ছে।তবে কি তিলে তিলে গড়া কল্পনার সাম্রাজ্যের ইতি এখানেই?

পর্ব ১০।
চলবে….

লেখনীতে-Shahana urmi

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here