প্রণয়ের_তৃষ্ণা (২১)

0
681

#প্রণয়ের_তৃষ্ণা (২১)
অলিন্দ্রিয়া রুহি
_______

সোনালী পারের গাঢ় রানী গোলাপি পরিহিতা পুতুলকে লাগছে সদ্য ডবকা তরুণ গোলাপের ন্যায়। অটো রিকশা জাতীয় অটো ভ্যানে যার গ্রামে নাম টমটমে করে তাকে নিয়ে আসা হচ্ছে বাপের বাড়িতে। নতুন ফোঁটা গোলাপ যে দেখবে সেই আরও একবার তাকাবে,এ কথা সত্য। তেমনই সত্য, রাস্তার প্রায় সকলের নজর পুতুলের দিকে নিবদ্ধ। আখতার নিজেও যে খুব বেশি চমকেছেন। পুতুলের কথা মতো চারটি ছোট শাড়ি এনেছিলেন হাট থেকে। সেইখান থেকে একটা শাড়ি আজ পুতুল পরেছে। তাতে যে এত সুন্দর মানাবে, এত সুশ্রী লাগবে, তা আখতার কল্পনা ও করেননি। এই প্রথম এত সুন্দর বউ নিয়ে তার খানিকটা অহংকার এলো মনের মধ্যে।
তিনি চাপা স্বরে ধমক দিয়ে উঠলেন পুতুলকে, বললেন,

‘উপর দিয়া বোরকাডা পইরা আইতে পারলি না?’

পুতুলের মনে একশো একটা প্রজাপতির পাখা ঝাপটানির কলকল ধ্বনি। এত চমৎকার মেজাজটা আখতারের কথার জবাব দিয়ে নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না। তাই পুতুল এমন ভাব করল যেন সে শোনেইনি কিছু। আখতার ফের কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে গেলেন। তার চোখ পড়ল রাস্তার পাশে। কাচা মাটির চিকন রাস্তায় থপথপ শব্দ তুলে একটি মেয়ে বড় সড়কের দিকে ছুটে আসছে। তার গায়ের রঙ শ্যামল বর্ণের। তবে নয়ন দুটি ডাগর ডাগর। হাবভাবে বোঝা যাচ্ছে, পুতুলকেই দেখতে এসেছে।

পুতুল খেয়াল করল। আখতার বেশ কয়েকবার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলেন। তার ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি। গাড়ি অনেকটা দূরে চলে এসেছে মেয়েটির থেকে। তাকে আর দেখা যাচ্ছে না। শুধু তার পরনের ময়লা হলুদ শাড়ি চোখে পড়ে। এখনো একভাবে দাঁড়িয়ে আছে। পুতুল টিপ্পনী কে-টে বলল,

‘পছন্দ হইছে?’

‘উঁ?’

আখতার সম্বিৎ ফিরে পেয়ে অস্ফুটে শব্দ করলেন। পরক্ষণেই কপালে ভাঁজ ফেলে বললেন,

‘বুকে ছ্যাঁকা লাগে নাকি?’

পুতুল মুখ ভেংচে জবাবে বলল,

‘ছ্যাঁকা লাগবো ক্যান? পছন্দ হইলে কন, নিয়া আহি সতীন কইরা।’

‘আইচ্ছা? লাগে যেন মাইয়াডারে খুব চিনোস তুই।’

‘হ, চিনিই তো। রাজ্জাক কাক্কুর বড় মাইয়া। শেফালী।’

‘রাজ্জাক? ওয় তো আমার দোকানে পেরায় পেরায় আহে। ওর মাইয়ারে এর আগে দেহি নাই তো।’

‘বিয়া দিছিলো, সংসার টিকে নাই। বাচ্চা হইবো না। তাই আবার বাপের বাড়ি ফিরা আইছে। আমার যেসম বিয়া হইলো হের কয়দিন আগেই এই ছেড়ি আইছে শ্বশুর বাড়ি ছাইড়া।’

আখতার ঠোঁট গোল করে বললেন,

‘ওওও..আহারে! মাইয়া মাইনষের কত দুঃখ। সন্তান দিতে পারলে দুঃখ, না দিতে পারলেও দুঃখ। তাই না?’

পুতুল ভ্রু বিলাস করে তাকাল। আখতার যে কীনা নিজে মেয়েদের জীবন অনায়াসে নষ্ট করে ফেলে সে আরেক মেয়ের জীবন নিয়ে এতো দুঃখ প্রকাশ করছে কেন? নাকি পুতুলের টিপ্পনী কা-টার বদলে সেও টিটকারি করছে? পুতুল কিছু না বলে সামনের দিকে তাকাল। ওই যে দেখা যাচ্ছে বড় কারেন্টের খাম্বাটা। এটাই ওদের বাড়ির রাস্তা। পুতুলের বুক ভারী হয়ে আসে। কত ঘন্টা হলো যে ওর প্রিয় মুখগুলোকে একটু ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে না!

_______
যতটা আনন্দ আর উত্তেজনা নিয়ে পুতুল এ বাড়িতে পা রেখেছিল, তার সবটুকু বিষাদের যন্ত্রণায় ছেয়ে গেল। বাপজান ভারী অসুস্থ হয়ে বিছানায় পড়ে রয়েছেন। পুতুলকে দেখে তার ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুঁটে উঠলেও তার চেহারায় দুখী দুখী ভাব। মনে হচ্ছে এক্ষুনি কেঁদে ফেলবেন। পুতুল উঠোন থেকে ছুটে দাওয়ার ঘরে গিয়ে উঠল। একেবারে বাপজানের পাশে গিয়ে, বাপজানের একটি হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে, বাপজানের মাথায় আরেকটি হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে সে নিজেই কান্নায় অস্থির হয়ে উঠল। আখতার বাড়ির ভেতরে ঢুকলেন না। বাহির থেকেই পারুলকে দুটো কথা বলে চলে গেলেন। পারুল থমথমে মুখ নিয়ে ঘরের ভেতর ঢুকল।

মা’কে দেখেই পুতুল অস্থির ভঙ্গিতে একের পর এক প্রশ্ন ছুঁড়তে ব্যস্ত হয়ে গেল।

‘বাপজানের এই অবস্থা ক্যান মা? কী হইছে? তুমি আমারে খবর দিলা না ক্যান?’

পারুল বিরস মুখে বললেন,

‘জব্বারের লগে কাইজ্জা লাগছে ক্ষেত নিয়া। জব্বার আর পোলায় মিল্লা তোর বাপরে ইচ্ছামতো পিডাইছে ক্ষেতের মধ্যে। কেউ ধরে নাই। আমি খবর পাইয়া ব’টি লইয়া গেছিলাম। আমারে দেইখা ওরা পলাইছে। হেরপর থেইকাই হের অবস্থা এমুন। অষুধ আইন্না খাওয়াইছি। কিছুই তো হইতাছে না।’

পুতুল স্তব্ধ হয়ে শুনলো। জব্বার হলো শাহিনের বাবা। এর মানে শাহিন ভাই ও ছিল? সেও তার বাবাকে…ঘৃণায় মনটা তেতো হয়ে উঠে পুতুলের।

‘মাথাডা এক্কেবারে থেতলাইয়া দিছে। জায়গায় জায়গায় টোলা (ফুলা) হইয়া আছে। গরম স্যাঁক দিছি বারবার। তোরে খবর দেওনের মতো মন মানসিকতা আছিলো না। আর দিলেই কী তুই আইতি পারতি নতুন সংসার ফালাইয়া?’

পুতুল রাগ রাগ কণ্ঠে বলল,

‘ক্যান পারতাম না মা? এই ঘর কী আমার না? নাকি বিয়ার পর সব কিছু চিরদিনের লইগা পর হইয়া যায়? আমার মা বাপ সবার আগে। তারপর বাকিসব। আমারে আইতে না দিলেও আমি ছুইটা আহুম মা।’

একটু থেমে পিতার অসহনীয় মুখটার দিকে তাকিয়ে ডুকরে উঠা মনটাকে কোনোক্রমে স্বান্তনা দেয় সে। তারপর পুনরায় মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে,

‘বড় ডাক্তারের কাছে নিতে হইবো। মা, তুমি কাইলকাই সরকারি মেডিকেলে নিয়া যাও আব্বারে। ঘরে হোয়াইয়া রাখলে সুস্থ হইবো না।’

‘বড় মেডিকেল নিতে কত খরচ! ঘরে দুইশো টাকা আছে হুদা। কেমনে নিমু?’

পুতুল চুপ করে রয়। যতবার সে ভুলে যেতে চায় দারিদ্র্যতার অভিশাপ, ততবার তাকে মনে করিয়ে দেওয়া হয়, তারা শুধু দরিদ্রই না, হতদরিদ্র! তাদের মাথার উপর ছায়া আছে কিন্তু ঘর নাই। পেটে ক্ষুধা আছে কিন্তু খাবার নাই। পোশাকের রুচি আছে কিন্তু পোশাক জরুরি নয় ভেবে ২-৩ কাপড়েই বছরের পর বছর কাটিয়ে দিতে হয়। বাপজানের একার কামাইয়ে পুরো সংসারটা চলে। সেই যখন বিছানা ধরেছে, তখন কে ধরবে সংসারের হাল? তবে কী এভাবেই যুঝতে যুঝতে তার আব্বা চলে যাবেন? চোখের সামনে এসব দেখার পর কোনো সন্তানের সহ্য হয় তা?

চোখের পানি মুছে পুতুল উঠে আসে। কোমরের গোঁজ থেকে একটা ছোট্ট কাপড়ের ব্যাগ বের করে সে। ব্যাগের ভেতর এক হাজার টাকার তিনটি নোট। আরও একটি কাগজে একটি নাম্বার লেখা। নাম্বার যেন না দেখে এমন ভান করে পুতুল দুই হাজার টাকা বের করে মায়ের হাতে তুলে দিলো। ব্যাগটা পূর্বের স্থানে রাখতে রাখতে বলল,

‘আর কোনো বাহানা না। কাইলকাই আব্বারে নিয়া তুমি মেডিকেলে যাবা। আব্বার ঠিকমতো চিকিৎসা করাবা মা।’

পারুল চোখ কপালে তুলে ফেলেছেন ততক্ষণে।

‘এত টাকা তুই কোনে পাইছোস? এই ছেড়ি, তুই চুরি করছোস?’

‘চুরি করতে যামু ক্যান?তুমি আমারে এই শিক্ষা দিছো নাকি জীবনে? কত না খাইয়া থাকছি, তাও কেউ কইবার পারবো কারো এক টাকাও নিছি? খাইছি?’

‘তাইলে কই পাইছোস?’

পুতুল উশখুশ করে। এই টাকাটা আর ওই নাম্বারটা অর্ক’র। কোন ফাঁকে পুতুলের বিছানার বালিশের নিচে ফেলে চলে গেছে, পুতুল খেয়াল করেনি। কাগজে আরও একটি কথা লিখা ছিল, ‘প্রয়োজন হলে ফোন করবে।’
টাকা দেখে পুতুলের চোখ ফেটে কান্না বেরিয়ে এসেছিল। না জানি কত ছোটলোক ভেবেছে ওকে অর্ক! নইলে এভাবে কেউ টাকা দিয়ে যায়? পুতুল টাকাটা নিজের সঙ্গে রাখলেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, এখান থেকে একটি টাকাও সে খরচ করবে না। যখন অর্ক আবার আসবে তখন তার হাতেই তুলে দিবে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি এমন যে…
পুতুল ভাবনার গতিপথে লাগাম টানে। কোনোরকমে বলে,

‘বিয়া হইলে মাইয়াগো টাকা দেয় কেডা? বুঝো না তুমি? বাপজান খাইছে সকালে? বাসায় কী রানছো? তুমি একটু বাজারে যাও তো মা। বাপজানের লইগা ভালোমন্দ কিছু একটা আনো। আমি আজকে নিজের হাতে আব্বারে খাওয়াই দিমু।’

কথা কা-টিয়ে দেয় পুতুল। হুড়মুড় করে অন্য ঘরে চলে যায়। পারুল ও মেয়ের কথার তালে আর ভাববার অবকাশ পান না। আখতার তো ভালো টাকা পয়সার মালিক, নিশ্চয়ই সে দিয়েছে। তবে তার মন নিশ্চিত হয় এই ভেব্র যে মেয়েটা তার সুখেই আছে!

______
‘ইথি, দরজাটা খোলো, প্লিজ!’

রাত বাজে এগারোটা। বাসায় ফিরে গোসল দিয়ে খাওয়াদাওয়া করে বাবা-মায়ের সঙ্গে আসল ঘটনা কী সব বোঝানো শেষে তাদের নিয়ে ইথিদের বাড়িতে পৌঁছুতে পৌঁছুতে রাত অনেকটাই গড়িয়েছে। তবে এত রাত ঢাকা শহরের জন্য কিছুই না। ঢাকা শহর রাতের রাজা, ভোরের রাণী! এত রাতেও কত মানুষ দিব্যি পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এখনো মোড়ের কাছে লাল-সবুজ আলোর সিগন্যাল, জ্যামে বসে মানুষ ‘হুফ হুফ’ করে নিশ্বাস ছাড়ছে।

সারাটাদিন না খেয়ে এক ঘরে নিজেকে আঁটকে রেখেছে ইথিশা। কারো কোনো কথায়ই তার মন গলেনি। সন্ধ্যার আগেও সে বন্ধ ঘরের ভেতর থেকেই বাবা-মা’র উদ্দেশ্যে চিল্লিয়ে কথা বলেছিল, এরপর থেকে তাও বলছে না। ইথিশার আম্মার কান্না কোনোমতেই বন্ধ হচ্ছে না। মেয়েটা কিছু করে বসেছে কীনা কে জানে! ইথিশা ছোট বেলা থেকেই বরাবর রকমের জেদী এবং রাগী মেয়ে। যেটা তার চাই, সেটা না পেলে অসম্ভব জেদ নিয়ে বসে থাকে। এর জন্য কতবার কত সমস্যায় পড়তে হয়েছে তাদের!

ইথিশার বাবার সবচেয়ে কাছের বন্ধুর ছেলের সঙ্গে ইথিশার বিয়ের কথাবার্তা প্রায় পাকাপাকি করে ফেলেছিলেন ওঁরা। এরই মধ্যে ইথিশা জানালো ওর নিজের পছন্দ আছে। অর্ক’র সঙ্গে পরিচয় করালো। ছেলে ভালো, দেখতে সুন্দর, পড়াশোনা জানা, ফ্যামিলিও শিক্ষিত, বড়লোক, তবুও কেন যেন তাদের মনে ধরল না। তারপরও মেয়ের মুখের দিকে বলতে গেলে জিদের দিকে তাকিয়েই তারা রাজী হয়ে গেলেন। আর ক’দিন পর বিয়ে। এনগেজমেন্ট সাড়া হয়েছে। এই মুহূর্তে এসে ঠিক কী যে হলো দু’জনার!

সবার ধারণা ছিল ইথিশা এবারেও দরজা খুলবে না। দরজা ভেঙেই তাকে উদ্ধার করতে হবে। কিন্তু অর্ক’র একটা ডাক শোনামাত্র সে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো। চোখমুখ অসম্ভব লাল। প্রায় পুরো শরীরই কেমন লাল আর ফুলে ফুলে আছে। দেখে মনে হচ্ছে মাটিতে পা দিয়ে দাঁড়াতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। নিজের টাল নিজেই সামলাতে পারছে না।

সবার সঙ্গে সঙ্গে অর্ক নিজেও ভীষণ অবাক হয়ে গেল। এত জেদ ইথিশার এর আগে তার দেখা হয়নি। অর্ক’র খারাপ লাগল, খুব খুব খারাপ লাগল। আপসেট হয়ে পড়ল সে ভীষণ ভাবে। সেটা বাহিরে প্রকাশ না করে সে হাত দিয়ে টেনে ইথিশাকে নিয়ে ড্রয়িং রুমের সোফায় বসিয়ে দিয়ে নিজেও পাশে বসে পড়ল।

‘ইথিশা আমি তোমার থেকে এসব একদম আশা করিনি। সারাদিনে এক ফোঁটা পানিও নাকি খাওনি তুমি। কেন? আমি কী এমন করেছি যার জন্য এতোটা আঘাত করছো নিজেই নিজেকে? বলো..’

অর্ক’র স্ট্রেইট ফরোয়ার্ড কথা। ইথিশার বাবা মাঝখান দিয়ে বলে উঠলেন,

‘আমার মেয়েকে নিয়ে এতদূর আসার পর এখন অন্য আরেকটা মেয়েকে নিয়ে লটরপটর করছো, আর আমার মেয়ে এসব করবে না? ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আরও বেশি করতো অর্ক। তুমিও যেগুলা করছো সেটা একদমই ঠিক করছো না, বুঝলে?’

‘আংকেল আপনি..’

অর্ককে হাত ইশারায় থামিয়ে দেয় অর্ক’র বাবা। তিনি বললেন,

‘ছেলে মেয়েরা যখন এখানে আছেই, ওরা ওদের মতো কথা বলে ব্যাপার টা ঠিক করুক নাহয়। আমরা বরং অন্য রুমে গিয়ে বসি। ওরা খোলাখুলি ভাবে কথা বলুক।’

‘হ্যাঁ,হ্যাঁ,তাই ভালো হয়।’

বললেন ইথিশার মা। বাকি ৪ জন উঠে চলে গিয়ে ইথিশা আর অর্ককে কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দিলেন। ইথিশাকে দেখে মনে হচ্ছে সে দম আঁটকে বসে আছে। সবাই চলে গেলে অর্ক ইথিশার বাহুতে ধাক্কা মে-রে ডেকে উঠে,

‘এই ইথিশা..’

সঙ্গে সঙ্গে অর্ক’র বুকের উপর ইথিশা ঝাপিয়ে পড়ে। কেঁদে উঠে হাউমাউ করে। কান্নার শব্দে কেউ এসে না পড়ে এই ভেবে বিব্রত বনে যায় অর্ক। বারবার দরজার দিকে তাকায়। ইথিশাকে ঠেলে নিজের বুক থেকে সরিয়ে সোজা ভাবে বসার জন্য বলে। ইথিশার চোখের পানি নিজের হাতে মুছিয়ে দিয়ে বলল,

‘তুমি এরকম পাগলামি কেন করছো ইথি? তুমি কী ছোট মানুষ? অবুঝ?’

‘হুম, অবুঝ, তোমার জন্য অবুঝ। শুধু অবুঝই না আমি পাগল, তোমার জন্য পাগল। তোমাকে ভালোবেসে আমি পাগল।’

ইথিশা পুনরায় কান্না করে উঠে। অর্ক সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল,

‘দেখো, এভাবে উতলা হওয়া ঠিক না। তুমি একটা মেয়ে। যেটা আমার করার কথা সেটা তুমি করছো। আমার সঙ্গে ইন্টিমেট হওয়ার জন্য একপ্রকার জিদ চাপিয়ে দিয়েছো মাথার ভেতরে। ইথিশা, আগেও বলেছি, এখনো বলছি, বি কুল, কাম ডাউন! এভ্রিথিং উইল বি অলরাইট দ্যান। তুমি নিজেই জল ঘোলা করে আমাকে ব্লেমিং করছো কিন্তু। সবাই অলরেডি ভেবে নিয়েছে, আমার দোষ, আমিই সবকিছু করেছি। আমি তোমাকে ছেড়ে দিয়েছি বা প্রতারণা করেছি। তুমিই বলো ইথি, সত্যিই কী তাই? একটা মেয়েকে সাহায্য করতে চাওয়া কী অপরাধ আমার? যদি তাই হয়, তাহলে সবার সামনে আমাকে শাস্তি দাও। তাও নিজেকে এভাবে শাস্তি দিও না প্লিজ! তোমার বাবা মায়ের কাছে তুমি ভীষণ দামী রত্ন। সেটা সময় থাকতে বুঝে উঠো ইথি..প্লিজ!’

ইথিশা চুপ করে রইলো। তার মুখে জবাব নেই। অর্ক বারবার একই প্রসঙ্গ নানান কথার দ্বারা বুঝিয়ে গেলেও ইথিশার ভেতর কোনো ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেল না। শেষমেশ উপায় না পেয়ে অর্ক বলল,

‘আচ্ছা তুমি কী চাও? আমাকে বলো তোমার মনে কী চলছে?’

ইথিশা তাকাল। তার চোখের দৃষ্টি অর্ক’র চেনা মনে হলো না। শান্ত গলায় ইথিশা বলল,

‘আমার মনে হচ্ছে তুমি আমাকে ফেলে চলে যাবে। কার কাছে যাবে জানি না। শুধু মনে হচ্ছে চলে যাবে।’

‘কী করলে তোমার এই ভয়টাকে অযাচিত ভয় বলে প্রমাণ করতে পারব আমি বলো তো।’

‘বিয়ে করো আমাকে।’

‘কী?’

‘বিয়ে করো আমাকে অর্ক। এই মুহূর্তে, এক্ষুনি আমরা বিয়ে করব। আজকের রাতটা হবে আমার অপেক্ষার শেষ রাত। আজই আমরা বাসর করব। তোমার সন্তান আমার পেটে আসবে। আর তাহলেই তুমি আমাকে ছেড়ে কোত্থাও যেতে পারবে না। কোত্থাও না।’

অর্ক হতভম্ব চোখমুখে তাকিয়ে রইলো। তার দিকে এক সমুদ্র আশা নিয়ে তাকিয়ে থাকা ইথিশা, অন্যদিকে এক পাহাড় ভরসা নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকা পুতুল, কে হবে তার আসল জীবনসঙ্গিনী?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here