প্রণয়ের_তৃষ্ণা (২২)

0
645

#প্রণয়ের_তৃষ্ণা (২২)
অলিন্দ্রিয়া রুহি
______
‘আমাকে বিয়ে করো অর্ক, আজকে, এক্ষুনি, এই মুহূর্তে।’

পুনরায় ভারী শব্দগুলো দ্বিধাহীন ভাবে একের পর এক উচ্চারণ করে গেল ইথিশা। তারপর অর্ক’র দিকে চেয়ে রইলো এক সমুদ্র আশা নিয়ে। তার চোখের ভাষায় করুণ চাহনি স্পষ্ট। অর্ক বিচলিত বোধ করতে শুরু করে। সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলো। অস্পষ্টে আমতা আমতা করে বলল,

‘এ..এভাবে হঠাৎ…’

তাকে কথার মধ্যখানে থামিয়ে দিয়ে ইথিশা জোরালো কণ্ঠে বলে উঠল,

‘আংকেল আন্টি, আমার বাবা মা সবাই তো আছে। আমি শিউর তারাও রাজী হবে অর্ক। কিন্তু তোমার হয়েছে কী? তুমি এরকম মিনমিন করছো কেন? তাহলে কী আমি ভেবে নিবো..’

ইথিশা কথা থামিয়ে গম্ভীর মুখ করল। অর্ক হতাশাজনক একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘তুমি নিজেও বুঝতে পারছো না তোমার কারণেই আমাদের সুন্দর সম্পর্ক টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি এখনই বিয়ের জন্য প্রস্তুত নই। এটা তুমিও খুব ভালো করে জানো। বিয়েটা কোনো ছেলেখেলা নয়। খুব ভেবেচিন্তে, সময় নিয়ে, ধীরেসুস্থে করতে হয়।’

ইথিশা যেন সব বুঝে ফেলেছে এমন ভঙ্গি করে বলল,

‘ও! এর মানে আমার সন্দেহই ঠিক। তোমার সঙ্গে ওই মেয়েটার..’

‘আশ্চর্য! ওকে আবার এখানে টেনে আনছো কেন ইথি? ও কত ছোট বয়সের আর তুমি..’

‘অথচ বিয়ে করে দিব্যি ঘর সংসার করছে। আর তুমি তাকে ছোট বলছো?’

‘ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন, ও কিন্তু বিয়ে করেনি, ওকে বিয়ে দেওয়া হয়েছে ইথি।’

ইথি গম্ভীর একটি শ্বাস ফেলে বলে,

‘বেশ, তাহলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে না?’

অর্ক সামান্য সময় চুপ করে থেকে বলল,

‘এখন না। আমার সময় প্রয়োজন। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, আমার সিদ্ধান্তে কোথাও না কোথাও ভুল আছে।’

ইথিশা চোখ গোল গোল করে তাকাল। তার চোখেমুখে অবাক বিস্ময়। যেন সে বিশ্বাসই করতে পারছে না এতদিন পর এসে অর্ক আজ এই কথা বলছে। উত্তেজনা ধরে রাখতে পারে না সে। প্রায় চিৎকার করেই বলে উঠল,

‘এসব তুমি কী বলছো অর্ক?’

অর্ক দরজার দিকে একনজর তাকিয়ে ভীষণ ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে তাকাল ইথিশার দিকে। গুমোট স্বরে বলল,

‘প্লিজ, লো ডাউন ইউর ভয়েস ইথি।’

তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে স্বাভাবিক কণ্ঠে বলে,

‘প্লিজ ইথি, ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। ইউ লাভ মী রাইট?’

ইথিশা কয়েক সেকেন্ড চুপ করে নীরবে মাথা দোলালো। তবে হ্যাঁ বলল নাকি না বলল সেটা স্পষ্ট প্রকাশ পেল না। অর্ক সেই সবে না গিয়ে তার মনের কথাগুলো ব্যক্ত করে চললো ধীর স্বরে,

‘আমার বিয়ে নিয়ে, বিয়ের পরের জীবন নিয়ে অনেক স্বপ্ন আছে। সেগুলো এভাবে হুটহাট অপরিকল্পিত কাজের দ্বারা আঘাত করতে চাই না আমি ইথি। যদি আমাকে সত্যিই ভালোবেসে থাকো, তবে ইউ হ্যাভ টু ওয়েট। আমি একদিন সত্যিকারের রাজপুত্রের মতো এসে হাঁটু গেঁড়ে তোমায় ‘উইল ইউ ম্যারি মি’ বলব ইথি। তুমি কী সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না আমার জন্যে?’

নির্বাক ইথিশা। সে চোখ সরিয়ে ফ্লোরের দিকে তাকাল। দু’জনের ভেতর নেমে এসেছে নীরবতা। অর্ক চেয়ে রয়েছে জবাবের প্রত্যাশায়, আর ইথি বুঝতে পারছে না এর প্রেক্ষাপটে কী বলা উচিত তার। এভাবেই প্রায় দু মিনিট সময় শুধু শুধু অপচয় হলো। অর্ক অবাক হয়ে বলল,

‘ইথি, তোমার উত্তর দিতে এত সময় লাগছে আজ!’

ইথিশা করুণ চোখ করে তাকাল। অসহায় কণ্ঠে বলল,

‘তোমার স্বপ্ন টা শুনলাম,বুঝলাম কিন্তু আমার মনের অবস্থাটা তোমাকে কী করে বোঝাবো অর্ক? না চাইতেও বারবার তোমার উপর সন্দেহ চলে আসছে। তুমি হারিয়ে যাবে- এমনটাই জপে চলেছে মনবাড়ি। আমি আর পারছি না নিজের সঙ্গে দ্বিধাদ্বন্দের খেলায় মেতে থাকতে। আমি ক্লান্ত, বড্ড ক্লান্ত অর্ক।’

অর্ক ভারী কণ্ঠে বলল,

‘একদিন রিয়েলাইজ করবে, তোমার আর আমার সম্পর্ক টা শুরু হওয়ার আগেই শেষ হলো শুধুমাত্র এইসব অহেতুক সন্দেহের কারণে। সবসময় চাইলেও বুঝিয়ে দেওয়া যায় না। একটা সম্পর্ক টেকাতে কত কিছু স্যাক্রিফাইস করতে হয়, তা তুমি এখনো ইমাজিন করতে পারো না। যাইহোক, নিজেকে সময় দাও। আমার কথাগুলো ভেবে দেখো। যদি তোমার উত্তর হয় হ্যাঁ, তবে কল মী। আর নাহলে…’

‘নাহলে?’

অর্ক একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,

‘আমি নিজেও জানি না! আমি বরং উঠি। আমি টায়ার্ড, প্রচুর টায়ার্ড। মানসিক অবসাদ আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে। আমার ঘুম প্রয়োজন ইথিশা।’

ইথিশার জবাবের অপেক্ষা না করেই অর্ক বেরিয়ে পড়ল ঘর ছেড়ে। এমনকি অন্য রুমে থাকা তার বাবা মা, ইথিশার বাবা মা কাউকেই কিছু না বলে সে সোজা মেইন গেট খুলে চলে এলো বাইরে। আজ সে বাসায়ও যাবে না। উদ্দেশ্যহীন ভাবে কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত বন্ধুর বাড়িতে হানা দেবে। ওখানেই আজকের রাতটা কা-টিয়ে দিবে। প্রিয় বন্ধু নিশ্চয়ই কোনো না কোনো সাজেশন নিয়ে তার অপেক্ষায়…

_____

ক্লান্তিকর সন্ধ্যা। সারাদিন সেরকম কোনো কাজই পুতুল করেনি। তারপরও এই সময়ে এসে কেন যেন ভীষণ ভীষণ ক্লান্তি লেগে থাকে প্রতিটি শিরা উপশিরায়। আখতার বিকেলে এসেছিলেন পুতুলকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। পুতুল যায়নি। আখতার রাগ নিয়ে বলেছেন, পুতুলও ঝাঁঝ মিশিয়ে বলেছে সে আজ যাবে না। আগামীকাল বিকেলে যাবে। তখন এসে নিয়ে যাওয়া হয় যেন। বাপজানের এমন অসুস্থতায় একটা রাত এই বাড়িতে কা-টাতে চায় সে। আখতার রগচটা মেজাজ নিয়ে ফিরে গেছেন, ওই বাড়িতে ফিরলে কোন আযাব তার জন্য অপেক্ষা করছে কে জানে। তবুও পুতুলের সেসবে চিন্তা নেই। বিকেলের পর পর শাপলা এসেছে। আজকের রাতটা এ বাড়িতে কা-টাবে। প্রাণের সই যে আছে। কিন্তু কিছুতেই শাপলাকে একা পাওয়া যাচ্ছে না। সবার সামনে কথা গুলো তোলাও যাচ্ছে না। কিন্তু মনটা খুব আঁকুপাঁকু করছে সবকিছু ব্যক্ত করার জন্য।

চালের গুড়ি আর আঁখের মিষ্টি গুড় দিয়ে তেলের পিঠা বানাচ্ছেন পারুল। তার মনটা ভালো। পুতুলের বাপটাও সেড়ে উঠছে। প্রিন্স বাহির থেকে এসে উঁকি দিলো।

‘ওমা, হইছে?’

পারুল চোখ ন ফিরিয়ে বললেন,

‘এই কয়ডা নিয়া বুবুরে দিয়া আয় যা।’

প্রিন্স পা টিপে টিপে এগোলো। পিঠাগুলো খুব গরম। মাত্রই ভেজে নামানো হয়েছে। তিনটা পিঠা নিজের পকেটের ভেতর চালান করে দিয়ে সে বলল,

‘শাপলা বু আইতাছে। ওরে দিয়া পাঠাও। আমার কাম আছে।’

তারপর এক মুহূর্ত নয়, পাজি ছেলে পিঠা চুরি করে ভো দৌড় দিয়ে পালালো। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে পারুল ছেলের উদ্দেশ্যে গা’ল দিয়ে উঠলেন। ততক্ষণে শাপলা এসে পড়েছে। সে এক চিলতে হাসি ঠোঁটে ফুঁটিয়ে বলে উঠল,

‘বইকো না চাচী। আমারে দাও। আমি দিয়া আইতাছি।’

পারুল নির্ভার হলেন।

‘কেমন বজ্জাত হইছে ছেড়াডা দেখছোস? তোর চাচার একটা পোলাও ভালা হইলো না।’

‘চাচার পোলা আপনের কী লাগে চাচী?’

পারুল থতমত গলায় বললেন,

‘ভাবলে দুঃখ লাগেরে মা। একটা পোলারেও মানুষ করতে পারলাম না। বড়ডা কোনহানে গিয়া ম’রছে কে জানে। মেজ জন মন মতো আহে, যায়। তিন চারদিন গায়েব থাকে। কই যায়, কী করে, হাজার পি’টাইলেও মুখ খোলে না। এই ছোটডাও হেই পথে হাঁটতাছে। ভাইগো মতো নেমোক হারাম হইবো।’

শাপলা কথাগুলো শুনতে শুনতে একটা প্লেটে পাঁচ পিস পিঠা তুলে নিলো। সচেতন গলায় বলল,

‘হাসিব ভাই ৩-৪ দিন পর পর গায়েব হইয়া থাকে?’

পারুল সাবধান হলেন। কাজের ছলে কথাখানা বলে ফেলেছিলেন। এই কথা কাউকে বলতে কঠোর নিষেধ করেছে পুতুলের আব্বা। মানুষ শুধু মন্দই বলবে না, একটা না একটা অপরাধের ট্যাগও গায়ে লাগিয়ে দিবে। তিনি কথার প্রসঙ্গ ঘুরাতে বললেন,

‘এত কম নিছোস ক্যান? আর দুইডা পিঠা ল।’

‘এডি আগে খাক। পরে লাগলে নিবানি চাচী।’

পারুল যে আর কিছু বলবেন না তা বুঝতে পেরে শাপলা উঠে পড়ে তৎক্ষনাৎ। শাপলা চলে গেলে পারুল হাঁপ ছেড়ে বাঁচে।

_______

‘তোর জন্য পিঠা নিয়া আইছি।’

বলতে বলতে একটা পিঠা মুখে চালান করে দিলো শাপলা। তারপর প্লেটটা নিয়েই মাটির উপর ধপাৎ করে বসে পড়ল। পা দুটো ঝুলিয়ে দিয়ে বলল,

‘তোর মনে আছে, আমরা কত রাইত আকাশের চাঁন দেখতাম আর এমনে বইয়া রাইজ্যের গল্প জুড়তাম?’

শাপলার চোখেমুখে উচ্ছ্বাস খেলা করছে। পুতুলের বড় ভালো লাগছে। পুতুল মৃদুস্বরে উত্তর করল,

‘আমার বিয়া হইছে মোটে তিনদিন। এত তাড়াতাড়ি সেসব দিন ভুলার না।’

শাপলা পুতুলের চোখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তোর কাছে তিনদিন, আমার কাছে তিন বছর। তুই ছাড়া বড় একলা একলা লাগছে রে।’

শাপলার চোখেমুখের উপর থেকে সমস্ত উচ্ছ্বাস সরে গিয়ে জায়গা করে নিলো বিষাদের নীল ঢেউ। পুতুল মিষ্টি হেসে বলল,

‘তাইলে তুইও বিয়া কইরা নে। স্বামী সংসার হইলে আমারে আর এত মনে পড়বো না। একলাও লাগবো না।’

মুহূর্তে পুরোনো দীপ্তি খেলে গেল শাপলার বদনে। লাজুক কণ্ঠে প্রত্যুত্তর করে,

‘আমি তো রাজীই। বাসায় এখনই কত বিয়ার প্রস্তাব আহে। আমি না কইরা দেই। জিদ দেহাই। শাহিনরে কত বুঝাইতাছি, বান্দায় কিছুতেই ওর বাপ মা নিয়া আইতেছে না। আল্লাহ-ই জানে আমার আর কতদিন অপেক্ষা করা লাগবো এই বান্দার লইগা।’

পুতুল চুপ করে গেল। শাপলা পিঠা চিবোতে চিবোতে বলল,

‘শাহিন আমারে কয়, ওর আব্বা নাকি এহনো ওরে দুধের শিশু মনে করে। ওর সাহসে কুলায় না বাসায় বিয়ার কথা কওনের। খালি কয়, তুমি আমার লগে আইয়া পড়ো। আমরা পলাইয়া ঢাকা যাই গা। আমি রাজী হই না। এতবড় দাগ কেমনে দিমু বাপ মা’রে, ক?’

পুতুল নড়েচড়ে বসল। এখনই সময়। বাপজান ঘুমুচ্ছে, মা ব্যস্ত, আর কেউ নেই। শাপলাকে সবকিছু জানানোর সময় এসেছে। পুতুল দম নিয়ে ফুসফুস বায়ু ভর্তি করে। তার হাঁসফাঁস লাগছে। ভয় হচ্ছে। শাপলা কেমন রিয়েক্ট করে উঠবে, কে জানে!

পুতুল আস্তে করে ডাকল,

‘শাপলা, শোন।’

শাপলা তাকাল,

‘কী?’

বুকের মধ্যে সাহস সঞ্চয় করে নিয়ে পুতুল বলতে শুরু করল,

‘তোরে একটা কথা কওনের আছে। আমার কথা বিশ্বাস করবি তো তুই?’

শাপলা চোখ পিটপিট করে। পুতুলের হাবভাব বোঝার চেষ্টা করে। তারপর হেসে দিয়ে বলে,

‘এমন হাবাইত্তার মতো করতাছোস ক্যান? আমি কী তোর পর লাগি? যা বলার বইলা ফেল নির্ভয়ে। আমি হুনতাছি।’

বলে আরেক কামড় বসায় পিঠার গায়ে। পুতুল মাটির দিকে তাকিয়ে বলল,

‘শাহিন ভাই ভালা লোক না। তার থেইকা সইরা আয়। ভালা পোলা দেইখা বিয়া কইরা নে। তার লইগা নিজের জীবনডা শ্যাষ করিস না।’

অর্ধেক চিবিয়েছে কী চিবোয়নি, শাপলার সমস্ত কার্যকলাপ থমকে গেল। সে এমন ভাবে তাকাল পুতুলের দিকে যেন পুতুল নয়, কোনো ভূতকে নিজের পাশে দেখছে সে। পুতুল ভ্রু কুঁচকে অসহায় কণ্ঠে বলল,

‘আমারে ভুল বুঝিস না। শাহিন ভাইরে খারাপ কওনের পেছনে অনেক কারণ আছে। তোর মনে আছে, আমার বিয়ার আগে রাতে আমি যে কইছিলাম আখতাররে আমার ভালো লাগে না, তার বয়সটা একটু কম হইলে হইতো। এসব নিয়া প্যাঁচাল পারছিলাম তোর লগে? সেগুলা সব আখতার জানে। কেমনে জানে হুনবি? শাহিন ভাই কইছে।’

শাপলা চোখ বড় বড় করে বলল,

‘তোর কথার আগামাথা কিছু বুঝতাছি না। কী কইবার চাস খুইলা ক পুতুল। নাটক করিস না।’

পুতুল বিচলিত হয়। এতটুকু শুনেই শাপলার রিয়েকশন এরকম পরিবর্তন হয়ে গেল। বাকিটুকু শুনলে কী করবে ও! মনের ভেতর ঝড়ের গতিতে ভাবে, বাকি আর কিছুই শাপলাকে বলবে না। ওর ভালো ও বুঝে নিক। পরমুহূর্তেই সিদ্ধান্ত বদলে নেয়। শাপলা ওর বান্ধবী। প্রাণের সই। তার ভালোমন্দ ভাববার অধিকার পুতুলেরও আছে। তাই যা হওয়ার হবে। পুতুল বলবে, সব বলবে।

‘শাপলা, দ্যাখ, আমারে ভুল ভাবিস না। আমি যা কইতাছি সত্যি কইতাছি। আখতার যেমন ভালো লোক না, ঠিক তেমনই শাহিন ভাই ও ভালো লোক না। আমি এই কয়দিনে অনেক কিছু বুঝতে পারছি। তার সবচেয়ে বড় কথা হইলো, ও তোরে ঠকাইতেছে। আমার জায়ের মাইয়া আঁখির লগে ওর সম্পর্ক। গতকাল রাইতে আমি ওগোরে হাতেনাতে ধরছি। মাচার উপর দুইজনে…’

শাপলা বিদঘুটে মুখাবয়ব করে বলে উঠল,

‘এই পুতুল, সাবধানে কথা কইস। তুই কী বলতাছোস, মাথায় ঢুকতাছে তোর?’

‘শাপ…’

‘চুপ, একদম চুপ। আর একটা কথাও ক’বি না। তোর বুইড়ার লগে বিয়া হইছে দেইখা কী আমার প্রেম ভালোবাসা সহ্য হইতাছে না, না? আমার কানের মধ্যে বিষ ঢালতে আইছোস? শাহিন ঠিক কইছিল আমারে। তুই ভালা না। আমার ভালা দেখবার পারোস না। আমারে হিংসা করোস। তুই আমার আর শাহিনরে এক হইতে দিবি না। আমি বিশ্বাস করি নাই। শাহিনের লগে তোরে নিয়া কাইজ্জা করছি। কিন্তু এহন তো দেখতাছি..’

‘শাহিন ভাই তোরে এইসব বলছে? আমি তোরে হিংসা করি?’

পুতুল চোখজোড়া জলে ভরে উঠল। শাপলা তার তোয়াক্কা না করে উঠে দাঁড়াল। শাসানোর সুরে বলল,

‘আর কোনোদিন আমার লগে কথা ক’বি না তুই। আমি ভাইবা নিমু তুই ম’ইরা গেছোস। তোরে না বন্ধু ভাবছিলাম, তুই আমার বুকে কেমনে ছু’রি মা’রলি?’

‘শাপলা বিশ্বাস কর, তুই যদি চাস তোরে আমি..’

শাপলা কথার মাঝখানেই বলে উঠল,

‘হুনতে চাই না। তোর কোনো কথা হুনতে চাই না। আমি শাহিনরে ভালোবাসি আর শাহিনও আমারে ভালোবাসে। যেদিন আমগো বিয়া হইবো হেইদিন তোরে দাওয়াত দিমু সবার আগে।’

শাপলা পিঠার প্লেটটা ডিঙিয়ে দাওয়ার দরজা ছেড়ে নিচে নেমে এলো। পেছন থেকে আহত অন্তকরণ নিয়ে বারবার তাকে ডেকে চললো পুতুল। শাপলা শুনলোই না। রাতের আঁধারের বুক চিঁড়ে সে তরতর করে এগিয়ে চললো বুকে বুক লাগিয়ে দাঁড়ানো ঘন বনের দিকে। এখান থেকে তার বাড়ি যাওয়ার রাস্তাটা কাছাকাছি হয়। একসময় অন্ধকারের মাঝেই শাপলা হারিয়ে গেল। পুতুলের চোখ ফেটে বেশ কয়েক ফোঁটা অশ্র গড়িয়ে পড়ল গালের উপর। সে যে ভয়টা পাচ্ছিল ঠিক তাই হলো!

(চলবে)
★সবার মন্তব্য চাই❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here