মন_পিঞ্জর,পর্ব_০৭

0
1003

#মন_পিঞ্জর,পর্ব_০৭
#লেখিকা_আরোহী_নুর

আয়ান চিৎ হয়ে শুয়ে আছে বিছানায়,আঁখির বলা কোনো কথাই মন থেকে বের করতে পারছে না আয়ান,বার বার মনে ধরা দিচ্ছে সেসব তিক্ত কথাগুলো,আঁকি যে এমনভাবে কখনোই ওর সাথে কথা বলে নি,সবসময় আয়ানের মন জয় করতেই ব্যাস্থ থাকতো,ও যাই চাইতো সেটাই করতো আঁখি,কখনো ওর কোনো কথার উপর কোনো প্রতিবাদ করে নি আঁখি,আয়ান প্রায় অনেক সময়ই অন্যদের রাগও আঁখির উপর ঝাড়তো কিন্তু তারপরও আঁখি কিছু বলতো না,ওর না বলা কথাগুলোও যেনো আঁখি নিজের অনুভব শক্তি দ্বারা বুঝে নিতে সক্ষম হতো,তাই হয়তো আজকে আঁখির এমন তিক্ত ব্যবহার মেনে নিতে পারছে না আয়ানের মন,না চাইতেও সেসব কথা এসে মনে বার বার নাঁড়া দিয়ে উঠছে,আয়ান নিজেই আঁখির সাথে সব সম্পর্ক ভেঙে দিয়েছে, ও তো তাই চাইলো যাতে আঁখিও তা মেনে নেয়,তবে আজ যখন আঁখি তা মেনেই নিয়েছে তবে সেটা ভেবে খারাপ লাগার কারনটা বিবেচনা করে বের করতে ব্যার্থ হচ্ছে আয়ানের মন,চলেই তো গেছে জীবন থেকে সেই একঘেয়ে অতীত তবে কেনো আয়ানের এই অবাধ্য মন পিছুটানে ছুঁটতে বড় ইচ্ছুক হচ্ছে আজ,জবাবটা যে আদোও জানা নেই আয়ানের।এদিকে বর্তমান মুহুর্তে মাহির মনে রোমান্টিকতা কাজ করছে বড্ড,একটা নাইটি পড়ে আয়ানকে ঘায়েল করার সব রকম কৌশলে এগিয়ে আসলো আয়ানের কাছে,এদিকে আয়ানের আজ কোনো খেয়ালই নেই মাহির দিকে,মাহি এবার একদম আয়ানের কাছে এসে আয়ানের বুকের উপর থেকে শার্টের দুটি বোতাম খুলে দিয়ে আয়ানের উন্মুক্ত বুকে আঙুলের নখ দিয়ে আলতো খোঁচা মারতে মারতে নেশালো কন্ঠে বললো।

কি হয়েছে বেবি, এতো হট বউটার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না বুঝি আজ,তাকিয়ে দেখো না আমাকে কতো হট দেখাচ্ছে।

আয়ান এবার স্বাভাবিক ভাবে মাহির হাত নিজের বুক থেকে সরিয়ে শুয়া থেকে উঠে বসে নিজের শার্টের বোতাম লাগাতে শুরু করলো।

কি হলো বেবি শার্টের বোতাম লাগিয়ে ফেলছো যে।

ওই আসলে আজকে অনেক টায়ার্ড ফিল হচ্ছে, কোনো কিছুরই মুড নেই শুয়ে পড়ো তুমি,আমারও অনেক ঘুম পাচ্ছে।

তাহলে এই ব্যাপার,আমি এখনই তোমার ঘুম দূর করে দিচ্ছি।আসো আমার কাছে।

কথাটা বলে মাহি ওর ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আসলে আয়ান এবার খনিক বিরক্তি নিয়ে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাঁড়িয়ে যায়।

আমি বলছি যখন আমার ভালো লাগছে না তবে জোর করছো কেনো?

কেনো ভালো লাগবে না,বিয়ের আগে তো সর্বক্ষণ রোমান্টিক মুডেই থাকতে,আমি ছাড়া তো কিছুই বুঝতে না,দিনে দুবার আমাকে বেডে নিয়ে না গেলে তোমার ভালোই লাগতো না,আর বিয়ে করে এখন আর এসব ভালো লাগছে না।(লেখিকাঃআরোহী নুর)

দেখো মাহি তুমি কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছো,আমার তোমাকে ভালো লাগবে না কেনো?মানুষের মন তো আর সবসময় ভালো থাকে না।

কেনো? এমন মন খারাপ তো বিয়ের আগে হতে দেখি নি আমি।দেখো আয়ান আমি আঁখি না যে তুমি যাই বলবে তাতে আমি সায় মিলাবো,আমি মুখ বুঝে সব সহ্য করা মেয়ে না,আঁখির সাথে যা করেছো তা আমার সাথে করতে যেয়ো না পরিনামটা ভালো হবে না।

থ্রেড দিয়ে কথাটা বলে মাহি নিজের বালিশে মাথা রেখে ওপরদিকে মুখ করে শুয়ে পড়লো,আয়ান এবার কিছু একটা ভেবে মাহির কাছে গেলো,গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো, মাহি এখনও মুখ ফুলিয়ে শুয়ে আছে,আয়ান এবার মাহির গালে নিজের অধর ছুঁইয়ে বললো।

আমার বেবিটা রাগ করেছে বুঝি?

মাহি এবারও কিছু বললো না,নিজের ন্যাকামো কান্ড দিয়ে ভালো করে আয়ানকে বুঝিয়ে দিলো উনি বর্তমানে অনেক রেগে আছেন,আয়ানও যে ওর বেবির রাগ না ভাঙিয়ে এবার শান্ত হবেন না উনার ভাবসাব দেখেই তাই স্পষ্ট বুঝা গেলো,তাই এবার উনি নেশালো কন্ঠে বললেন।

এখনই আমার বেবিটার সব রাগ আমি দূর করে দেবো।

কথাটা বলে আয়ান মাহিকে টান দিয়ে বালিয়ে চিৎ করে শুইয়ে দিয়ে ওর ঠোঁটে ঠোঁট জমিয়ে দিলো,মাহিরও রাগের সমাপ্তি নিমিষেই ঘটলো,দুজনই তারপর নিজের জগতে হারিয়ে গেলো।

____________________

পিটপিট নিরবতা কাজ করছে চারিদিকে,মেঘাচ্ছন্ন আকাশে রাতের ওই চাঁদটাও লুকিয়ে পড়েছে ,চারিদিকেই ঘন অন্ধকার ,ছোট্ট জানালা দিয়ে অন্ধকার এই পরিবেশ দ্বিধার করছে একজোড়া চোখ,বাইরে কতোগুলো শেয়াল ডাকছে,একসময় আরশোলা দেখেও ভয় পাওয়া মেয়েটির মন আজ যেনো কোনো কিছুরই ভয়ে কেঁপে উঠে না,আয়ান নামক যুবকের সাথে থাকতে গিয়ে যে নিজের সব ভয়েও জয় করে ফেলেছে আঁখি,ভালোবাসা যে অসম্ভব কে সম্ভব করারও ক্ষমতা মানুষকে দান করে,তবে সবার কপালে যে সত্যিকার ভালোবাসাটা পাওয়ার সুখ সয় না,আঁখিরও যে সয় নি,কি কমতি রয়ে গেছিলো আঁখির ভালোবাসায় যে আয়ানের মনটা এতো জলদিই ভরে উঠলো ওর থেকে,হয়তো এটাই আঁখির কপালেরই লিখন,কথাটা ভেবে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলো আঁখি, নিদ্রা ধরা দিতে যে চাইছে না আঁখির আঁখিদ্বয়ে, চোখ বন্ধ করলেই যে জীবনের তিক্ত সত্যগুলো স্মৃতি হয়ে ধরা দেয় আঁখির নয়নে,একটু আগেই বাড়িওয়ালা অনেক চেঁচামেচি করে বেড়িয়ে গেলো,এক মাসের এডভান্সসে যে উনার মন ভরে নি,উনার দুমাসেরই এডভান্স চাই,আঁখিকে তো বের করে দিচ্ছিলেন উনি,আঁখি অনেক কাকুতিমিনতি করে বাড়িওয়ালাকে রাজি করলো,বাড়িওয়ালা আরও দুদিনের টাইম দিলেন আরও এক মাসের এডভান্সের জন্য,এবার আরও দুদিনে কোথা থেকে আরও ৩ হাজার টাকা আনবে এই চিন্তা মাথায় চড়েছে আঁখির,চারিদিকেই টাকার খেলা,আঁখি যেনো সমুদ্র পরিমান টাকার টানে পড়েছে,এই দুবছরে আঁখি বুঝতে পেরেছে টাকা ছাড়া যে এ পৃথিবীতে এখন ছায়াও সাথে থাকতে চায় না,মেডিক্যাল ভার্সিটির ভর্তিটারও দায় ভার এখনও মাথার উপর আঁখিরই রয়েছে আঁখির,এতো বড় প্রাইবেট ভার্সিটিতে চান্স পেয়ে হাত ছাড়া করতে চায় নি আঁখি,ওটাও যে আয়ানেরই জন্য,আয়ানকে নিজের প্রতি ফিরিয়ে আনতে যে আবারও আগের জীবনে একটু পদার্পণ করতে চেয়েছিলো আঁখি,ভেবেছিলো হয়তো জিনিসটা জেনে আয়ান স্যারপ্রাইজড হবে,আঁখির সাথে আবার আগের মতো ভালো ব্যবহার করতে শুরু করবে কিন্তু সে স্যারপ্রাইজটা যে আঁখি আয়ানকে ওরই টাকা দিয়ে দিতে চায় নি,তাই টাকার টেনশনে পড়ে গেছিলো,বিষয়টি ও কাউকে না জানালেও আয়েশা জানতো,যার ফলে আয়েশা মিরা রাহমানকে জানায়,মিরা রাহমান সাথে সাথেই উনার নামে থাকা উনার মায়ের কিছু জায়গা বন্ধক দিয়ে আঁখির হাতে টাকা তুলে দেন,আঁখি টাকাগুলো নিতেই চায় নি,কিন্তু মিরা রাহমান উনার আদর আর ভালোবাসার দোহাই দিলে আর মানা করতে পারে না আঁখি,তবে মনে মনে এটা পণ করে নেয় যে মিরা রাহমানের জায়গাগুলো হাত ছাড়া হতে দিবে না আঁখি,যেভাবেই হোক জায়গার বন্ধক ও ছাড়াবেই,কিন্তু কিভাবে,অতিরিক্ত চিন্তার ফলস্বরূপ মাথায় প্রচন্ড পরিমানে ব্যাথা শুরু হলো এবার,উঠে গিয়ে একটা ওষুধ বের করে আবার খেয়ে নিলো,তখনি দরজার কড়া নাড়ার শব্দ কানে ভেসে এলো,দরজা খুলতেই আঁখি খনিকের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো,চিরচেনা সেই মুখটার দ্বিধার আবারও করার সৌভাগ্য হবে কখনো ভাবে নি আঁখি,আর কোনোদিক বিবেচনা না করে লোকটাকে ঝাপটে ধরে নিলো ভাইয়া বলে,লোকটাও নিজের বাহুডোর আবদ্ধ করে নিলো আঁখিকে,ভাইবোন একে অপরকে জড়িয়ে ধরে নিজেদের মন পিঞ্জর খানা খনিক শান্ত করার পর একে অপরকে ছেঁড়ে এবার স্বাভাবিক হয়ে দাঁড়ালো,পলক এবার আঁখির উভয় গালে হাত দিয়ে ভালোবাসাময় স্পর্শে বলতে লাগলো।

আঁখি বোন আমার,এ কি হাল বানিয়েছিস নিজের?এ কোথায় থাকছিস তুই?এমন ঘরে তো আমাদের কাজের লোকও থাকতে চাইবে না,বলেছিলাম না ওই আয়ান তোকে সুখি রাখবে না,ও তোকে ডিজার্ভ করে না শুনিস নি তো আমাদের কোনো কথা,চলে এলি আভিজাত্য ফেলে মরিচিকার পিছনে, দেখলি আজকে পরিনামটা কি এসে দাঁড়ালো,তবে যা হয়েছে হয়ে গেছে এবার বাড়ি চল আমি তোকে এমন অবস্থায় আর থাকতে দেবো না।
কথাটা বলে পলক আঁখির হাত ধরে নিয়ে যেতে গেলে আঁখি গেলো না বরং ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো নিজের জায়গায়,পলক এবার অবাকত্ব নিয়ে আঁখির পানে তাকালো,আঁখি গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো।

আমি যাবো না ভাইয়া।

যাবি না মানে?কেনো যাবি না তুই?ও তুই মনে হয় বাবাকে ভয় পাচ্ছিস?তবে তুই ভয় পাস না,তুই তো জানিস বাবা তোকো কতো ভালোবাসে,আরে আমরা সবাই একদিকে আর বাবার জন্য তুই একদিকে,হয়তো তোর সাথে রাগ করে আছে কিন্তু তুই একবার গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলে বাবা তোর সাথে কথা না বলে থাকতেই পারবে না,জানিস আমি কতো দেখেছি এ দুবছর বাবাকে তোর ছবি নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে,তুই একবার চল দেখিস বাবা তোকে ফিরিয়ে দিবে না,হয়তো বাবা তোর এই হাল সম্পর্কে জানে না, জানলে কবেই তোকে নিতে আসতো,চল না প্লিজ বাবা তোকে কখনোই ফিরিয়ে দিবে না দেখিস,আর যদি বাবা ফিরিয়েও দেয় তবে সমস্যা কোথায় তোর ভাই এখনও মরে নি,নিজের শরীরে যতোদিন রক্ত আছে ততোদিন তোর ভরনপোষণের দায়ভারটা আমার কাঁধ থেকে নামাবো না,তুই শুধু চল আমার বোন।

আমি যাবো না ভাইয়া। (লেখিকাঃআরোহী নুর)

কিন্তু কেনো আঁখি?

আমি যাবো না ভাইয়া।জন্মানোর পর থেকে আভিজাত্যেই বড় হয়েছি, পৃথিবীর কোনো কষ্ট আমায় ছুঁতেও পারি নি,তোরা সবাই যে আমায় আগলে রেখেছিলি,হয়তো এতো আদর এতো ভালোবাসা আল্লাহ সবার কপালে লিখে থাকেন না,যা আল্লাহ আমার কপালে লিখলেন,আর সেই আদর সেই ভালোবাসাকে অসম্মান করলাম আমি শুধু একটা মরিচিকার টানে,খান বংশ থেকে তোদের প্রতিরক্ষার দেয়াল বেধ করে পৃথিবীতে বেড়িয়ে বুঝতে পারলাম ভাইয়া পৃথিবীটা যেমন দেখতে ঠিক তেমন নয়,এখানে চলতে গেলে ধোঁকাবাজি, স্বার্থপরতা,মিথ্যাবাধিতা,চালকপট শিখে নিতে হয়,আর যারা তা জানে না তাদের অবহেলার শিকার হতে হয়,আয়ানের জন্য আমি তোদের ছেড়েছিলাম,আর আজ আয়ানই আমায় ছেঁড়ে দিলো,এটা হয়তো তোদের কষ্ট দেওয়ার পরিনাম,তবে এই পরিনামটা আমি মাথা পেতে নিতে চাই ভাইয়া,নিজের সত্যবাধিতা,সরলতা,আত্নবিশ্বাস নিয়ে জয় করতে চাই জীবনের সব তিক্ত সত্যকে,দেখিয়ে দিতে চায় এই পৃথিবীকে যে একটা মেয়ে কখনো দূর্বল হয় না, একটা মেয়ে চাইলে পৃথিবী জয় করেও দেখাতে পারে,দেখিয়ে দিতে চাই এই পৃথিবীকে যে সত্য, সরলতা আর আত্মসম্মানের জয়ও একদিন ঘটে হয়তো তা অনেক অন্যায় অত্যাচার সহ্য করার পর,কিন্তু দেড়িতে হয়ে থাকলেও সে জয় হয় একদিন এটা নিশ্চিত।

কিন্তু তুই এসব একা কি করে?

কেনো ভাইয়া তোর কি আমার উপর বিশ্বাস নেই?জীবনে নিজের সুখের খোঁজে যখন স্বার্থপরদের মতো তোদের ছেঁড়ে এসেছিলাম তখন কি তোদের কথা আমি একবারও ভেবেছিলাম?তবে আজ যখন নিরুপায় হয়ে আছি তখন কেনো তোদের কাছে ফিরে যাবো,এটা আমার সংগ্রাম ভাইয়া,শেষ নিশ্বাস অব্দি বিজয়ের লড়াই চালিয়ে যাবো।তুই আমাকে দূর্বল করতে আসিস না ভাইয়া,এ লড়াই যে আমার আত্মসম্মানের লড়াই।

কথাগুলো শুনে হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো পলক আঁখির দিকে,চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো ওর দুফোঁটা নোনাজল।

কাঁদছিস কেনো ভাইয়া?

এটা জলগুলোতো খুঁশিতে আসছে রে পাগলি,বিশ্বাসই হচ্ছে না আমার সেই ছোট্ট আঁখিটা আজ কতো বড় হয়ে গেছে,যে আঁখিকে কখনো মাটিতে নামতে দিতে চাইতাম না সে আঁখি আজ হোঁচট খেয়ে পড়ে আবার উঠে দাঁড়াতে শিখে গেছে।
কিন্তু তোকে যে আমি কোলেপিঠে করে মানুষ করেছি তোকে কি করে এখানে ছেঁড়ে যাবো বল?

আমি একদম ঠিক আছি ভাইয়া,তোর সাথে যাওয়া মানে আমার আত্মসম্মান ত্যাগ করা,আর তুই কি চাস না তোর বোন আত্মসম্মানের সাথে বেঁচে থাকুক,নিজের পায়ে নিজে দাঁড়াক।

কিন্তু।

কোনো কিন্তু না ভাইয়া,তোকে দেখে নিয়েছি এটাই অনেক,তুই আমাকে কথা দে তুই আমার কোনো সাহায্য করতে আসবি না।আমাকে দূর্বল প্রমাণ করবি না।

পলক খানিক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে বলে উঠলো।

ঠিক আছে তোকে আমি দূর্বল করবো না বোন আমার,আর আমি জানি আমি তা করতেও পারবো না,বোনটাযে আমার পাথরের থেকেও বেশি শক্ত হয়ে গেছে,আল্লাহ যেনো তোকে তৌফিক দেন,তবে হ্যাঁ আমি তোর জন্য আর কিছু করতে পারি আর না পারি ওই আয়ানকে আমি ছাড়বো না,ওকে আমি পথের ভিখারি বানিয়ে শান্ত হবো।

না ভাইয়া তুই আমাকে কথা দে তুই এমন কিছুই করবি না।

মানে?আর ইউ সিরিয়াস আঁখি!কোন মাটি দিয়ে আল্লাহ তোকে বানিয়েছেন!ওই লোকটা তোর সাথে এতোকিছু করলো আর তুই ওকে এভাবে যেতে দিবি।

কিছু কিছু জিনিস প্রকৃতির উপর ছেঁড়ে দিতে হয় ভাইয়া,তুই আমার হয়ে ওর থেকে বদলা নিলে ওর মধ্যে আর আমাদের মধ্যে কি পার্থক্য রয়ে যাবে বল?উক্ত জিনিসটাও যে আমার আত্মসম্মানে আঘাত হানবে,ওর কর্মের ফল না হয় আল্লাহই ঠিক করে দেবেন।তাছাড়া আমি ওকে ক্ষমা করে দিয়েছি,ও শান্তিতে বেঁচে থাকুক,ভালো থাকুক আমি শুধু এটাই চাই।বাদ দে এসব এটা বল এতোদিন পর বোনের কথা কি করে মনে পড়লো।

ভেবেছিলাম আর তোর ওই মুখটা দেখবোই না,কিন্তু যখনি তোর এই হালের কথা শুনলাম নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না রে। (লেখিকাঃআরোহী নুর)

তা বাবা-মা কেমন আছেন?

ওই যেভাবে রেখে এসেছিলি।থাকতে না আসলেও কখনো বেড়াতে আসিস।

আসবো,যেদিন সেখানে যাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে নিবো।

তারপর কতোসময় ভাইবোন নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতা করার পর পলক চলে যায়,পলক তারপরও আঁখিকে ছাড়া যেতে চায় না আঁখিই ওকে অনেক বলে কয়ে আবার পাঠিয়ে দেয়,তারপর দরজা বন্ধ করে চিৎকার করে করে কাঁদতে থাকে,পলকের সামনে নিজের দূর্বল অনুভুতিগুলো লুকিয়ে যেতে পারলেও একাকিত্বে তা বেড়িয়েই এলো।একটুর জন্য যেনো আঁখি মনে অনেক জোড় পেয়েছিলো কিন্তু খনিকে আবার একা হয়ে গেলো।

__________________

গুটিশুটি পায়ে হাঁটছিলো আঁখি রাস্তা দিয়ে,হঠাৎই লক্ষ্য করলো একটা বাচ্চা রাস্তায় পড়ে গেছে একটা গাড়ির সাথে ধাক্কা লেগে,গাড়িটাও সাথে সাথে ব্রেক কষে গেছে,আঁখি ছুঁটে গিয়ে বাচ্চাটিকে উঠালো,বাচ্চাটি একটা টোকাই,বাচ্চাটির কপাল খনিক কেটে গেছে আর হাঁটু অনেকটা ছিলে গেছে,বাচ্চাটির এমন হাল দেখে আঁখির রাগ চড়ে বসলো মাথায় নিমিষেই, বাচ্চাটির মা পাশেই ফুল বিক্রি করছিলেন ছুঁটে এসে বাচ্চাটিকে ধরলেন,এবার আঁখি উঠে দাঁড়ালো,রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির উদ্দেশ্যে বলতে লাগলো। (লেখিকাঃআরোহী নুর)

আর ইউ মেড? চোখে দেখেন না?কিছু টাকা হয়েছে বলে রাস্তাঘাটে মানুষ মেরে বেড়াবেন না কি?

আঁখির কথার মধ্যেই গাড়ি থেকে নেমে এলো কেউ একজন,লোকটা গাড়ি থেকে নেমেই গাড়ির পিছন থেকে ফাস্ট এইড বক্স বের করে ছেলেটির কাছে গিয়ে ওকে দেখতে লাগলো,এদিকে লোকটিকে দেখে আঁখি হতবাক এ যে আর কেউ নয় সয়ং ড.আদৃত চৌধুরী।আদৃতকে দেখে আঁখি হতবাক হলো।

স্যার এমনটা করলেন,খবরের কাগজে উনাকে নিয়ে এতো ভালো ভালো খবর পড়লাম আর উনিও নাকি শেষমেষ ওই অহংকারী ধনীদের লিস্টে পড়লেন,না উনি যেই হোন না কেনো আঁখি কখনো অন্যায়ের সাথি হয় নি আর হতেও পারে না,হয়তো সম্পর্কে উনি আমার গুরু কিন্তু এর মানে এটা নয় উনার অন্যায়ে আমাকে সায় দিতে হবে,এর বিরোধীতা আমি করবোই।

আদৃত তুলো দিয়ে ছেলেটির কপালের রক্ত মুছতে গেলে আঁখি চট করে ওর হাত ধরে ফেলে।

ইচ্ছে করে ছেলেটিকে মেরে এখন ভালোমানুষির ট্যাগ পাওয়ার সব ব্যবস্থা করছেন নাকি ড.আদৃত চৌধুরী? হয়তো খবরের কাগজে রিপোর্টারেরা আপনার এই শো অফ গুলোকেই রিয়েলিটি মনে করে ভালো কথাগুলো লিখে থাকেন?

এক্সকিউজ মি মিস আঁখি,মাইন্ড ইওর ল্যাঙ্গুইজ,ড.আদৃত চৌধুরী কখনো শো অফ করে না,ইট ওয়াজ নট মাই ফল্ট, ইট ওয়াজ জাস্ট এন এক্সিডেন্ট,সো আপনি শুধু শুধু মনগড়া কথা না বলে আমাকে আমার কাজ করতে দিন।

চুরি করে চোরও তো বলে যে সে চুরি করে নি তাই বলে কি সে চোর না?আপনাদের মতো ধনীরা গরিবের সাথে যা ইচ্ছা তাই করবে আর আমরা গরিবেরা তা মাথা পেতে নিবো,নো ওয়ে। (লেখিকাঃআরোহী নুর)

হোয়াট দ্যা হেল, কি বলছো এসব আপনি?

হ্যালো মি.আমাকে মেজাজ দেখিয়ে বেঁচে যাবেন মনে করেছেন?তবে শুনে রাখেন আঁখি ভয় পেয়ে দমে যাওয়ার মেয়ে না,এই যে ভাইয়েরা এভাবে দাঁড়িয়ে দেখবেন না ইনার কিছু খাতিরদারিও করবেন?

ওখানে তখন অনেক ভিড় লেগে গেছিলো,আঁখির কথায় ভিড়টা পুরো আদৃতের পানে তেঁড়ে আসছিলো তখনি ছেলেটা বলে উঠে।

আঙ্কেলরে মাইরো না, মুই রাস্তার মাঝে একটা কাগজ দেইখা কোনোদিকে না তাকাইয়াই ওইটা আনতে দৌঁড় দিছিলাম।আঙ্কেল জলদি কইরা গাড়ি না থামাইলে মুই মইরাই যাইতাম।

কথাগুলো শুনে ভির থেমে গেলো আর আঁখি সাথে সাথে জিহ্বায় কামড় দিলো,আদৃত এবার বাচ্চাটির পাশে বসে ওর মাথায় আর হাঁটুতে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে ওকে চেকআপ করে ওর মায়ের হাতে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দিয়ে বললো ওগুলা নিয়ে নিতে,সাথে একটা কার্ডও দিলো দিয়ে বললো এই নাম্বারে যোগাযোগ করতে,ও ছেলেটির মাকে ভালো স্যালারির একটা কাজ পাইয়ে দেবে।আঁখি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লোকটার সব কর্মকাণ্ড দেখে এবার নিজের মাথায় চাপড় মারলো।

কি যে করি আমি,লোকটা কতো ভালো আর আমি একে এখন গণধোলাই খাওয়াতে চলেছিলাম,কেনো যে সঠিক সময়ে বেঠিক কাজ করি একমাত্র আল্লাহ জানেন,জানিনা ভার্সিটিতে এবার কি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।

আঁখির এসব ভাবনার মাঝেই আদৃত উঠে নিজের গাড়ির দিকে যেতে নেয়,কিন্তু যেতে যেতে খনিক রক্তচক্ষু নিয়ে আঁখির দিকে দৃষ্টি ব্যাক্ত করে তাকাতে তাকাতে গিয়ে গাড়িতে ঢুকে গাড়ি স্টার্ট করে দেয়,আঁখির মনের সংশয়ের পরিমানটা এখন আরও বেড়ে যায়,আঁখি নিজেকে সামলে বলতে থাকে।

ভয় পাস না আঁখি,তুই একটা সাহসী মেয়ে,তুই যেকারো সাথে যেকোনো মুহুর্তেই সংগ্রাম করতে সমর্থ,ভয় পেলে চলবে না,তোকে সবকিছুতেই জয়ি হয়ে দেখাতে হবে।

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here