#মন_পিঞ্জর,১০,১১
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১০
ভার্সিটি শেষে বাড়ি ফিরছিলো আঁখি,হঠাৎই নজরে গেলো কয়েকটা বাচ্চা কানামাছি খেলছে,আঁখিরও ওদের সাথে সঙ্গ দেওয়ার বড্ড ইচ্ছে হলো,তাই ছুটে গেলো ওদের কাছে,ওরাও আঁখিকে সঙ্গে নিলো, বাচ্চাদের সাথে আঁখি বাচ্চাদের মতোই খেলতে লাগতে,বাচ্চাদের সঙ্গ যেনো আঁখিকে খনিকের জন্য নিজের তিক্ত অতীত ভুলতে সাহায্য করলো,এদিকে তখনি সে ছোট্টো মাঠের পাশ দিয়ে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছিলো আদৃত,হঠাৎ চোখ পড়লো আঁখির উপর,তৎক্ষনাৎ গাড়ি থামিয়ে নিলো আদৃত,আনমনে আঁখিকে নিয়ে অনেক কথা জমে উঠলো ওর।
মেয়েটাকে দেখে বুঝাই যায় না ওর জীবনে এতো কিছু ঘটে গেছে,সবকিছুই হাসিমুখে মেনে নিতে জানে।তবে কি সব হাসিমুখে মেনে নেওয়া এতোটাও সহজ?
কথাটা ভাবতেই আদৃতের স্মৃতিতে কিছু তিক্ত স্মৃতি জমা হয়,সাথে সাথেই চোখের কোনে জল খেলা করতে শুরু করে ওর,আদৃত আর সেখানে দাঁড়ায় না,গাড়ি স্টার্ট করে চলে যায়,এদিকে আঁখির চোখে কাপড় বেঁধেছে বাচ্চাগুলো আঁখি ওদের ধরতে হাত নাড়িয়ে হাঁটছে আর ওরা ছুঁটছে,আঁখিও ওদের খুঁজতে ব্যাস্ত,হঠাৎই ও কাউকে পাকড়াও করলো,কিন্তু আঁখি বুঝতে সক্ষম হলো ও কোনো বাচ্চা না বরং বলিষ্ঠ দেহী কেউ একজন,আঁখি যেনো হাতের স্পর্শেই লোকটাকে চিনতে সক্ষম হলো,চট করে চোখের কাপড় খুলে নিলো,আঁখি যা অনুমান করেছিলো তাই,সে লোকটা যে আর কেউ না সয়ং আয়ান,ওকে দেখা মাত্রই আঁখির মনে পড়ে গেলো জীবনের তিক্ত অতীতের কথা,মুখের হাসি মলিনতা পূর্ণ হলো,এদিকে আয়ান আঁখির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো।
এখনও তোমার সে বাচ্চামো অভ্যাসগুলো যায় নি না?তোমার এ বাচ্চামো অভ্যাসগুলোই আমার অনেক ভালো লাগতো।
আঁখি এবার মুখে বেশ বিরক্তি ভাব টাঙিয়ে বললো।
ভালোলাগার দিন শেষ মি.আয়ান রাহমান,অভ্যাস না পাল্টালেও মানুষের রুচি পাল্টে যায়,তা আপনার সাথে থেকে জানতে পারলাম আমি।
কথাটা বলে আঁখি যেতে নিলে আয়ান আবার ওর হাতটা পিছন দিক দিয়ে ধরে নেয়,আঁখি আয়ানের এমন পিছুটানে থমকে দাঁড়ায়, নিজেকে একটু শক্ত করে মুখে আবারও বিরক্তি ভাব নিয়ে ফিরে তাকায় আয়ানের ধরে থাকা স্থানের দিকে।আয়ান এবার নরম কন্ঠে বলে উঠলো।
আসলে কাল রাতের কান্ডের জন্য আমি দুঃখিত,তখন আদৃত আর তোমাকে একসাথে দেখে কেনো যেনো অনেক রাগ হয়েছিলো আর রাগের মাথায় না জানি কিসব বলে গেছিলাম,আমার তোমাকে আঘাত করার কোনো ইচ্ছে ছিলো না।
আঁখি এবার নিজের হাত টান দিয়ে ছাড়িয়ে নিলো,অতপর মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুঁটিয়ে বললো।
আমাকে অন্য কারো সাথে দেখে আপনার রাগ হওয়ার কোনো মানে হয় না মি.আয়ান।কথাটা যে পুরোই অযুক্তিক।আর যেখানে কথা আপনার কথায় আমার খারাপ লাগার সেটাও এখন আর হওয়ার না মি আয়ান,কারন মানুষ আপনজনের কথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়,আর আপনি এখন আর আমার আপন কেউ না,আপনার কোনো কথায়ই আমার এখন আর কোনো আসে যায় না।
কথাগুলো কিঞ্চিৎ আঘাত হানে আয়ানের বুকে,আয়ান কন্ঠে খনিক ব্যাথার্থ ভাব এনে বলে।
তবে কি তুমি জীবনে এগুনোর কথা ভেবে নিয়েছো?
আপনি তো অনেক এগিয়ে গেলেন, আমি কেনো পিছুটানে মন হারাবো।
কথাটা বলে আঁখি চলে গেলো,আয়ান আঁখির যাওয়ার পানে নিরাশাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,মনের অজান্তেই আয়ানের চোখের কোনে জল খেলা করতে শুরু করলো,যার কারন ওর অজানা।এদিকে আঁখি অনেক কষ্টে নিজের চোখের জল দমন করলো আয়ানের সামনে,তারপর ওর পাশ থেকে সরে এসে চোখের বয়ে আসা জল অগোচরে মুছে নিলো।
কিছুক্ষণ পর আঁখি পিলু পিলু পায়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলো হটাৎই লক্ষ্য করলো একজন অনেক বৃদ্ধ মহিলা ধিমি ধিমি পায়ে আরোহী বলে বলে ওর পানে একপ্রকার ছু্ঁটে আসছিলেন,আরোহী বুঝতে পারছিলো মহিলাটি শরীরের সমস্ত শক্তি দিয়ে ওর পিছন ছুঁটে আসার চেষ্টা করছে,এদিকে মহিলাটির খেয়ালেই নেই পিছনে অনেক বড় ট্রাক উনার দিকে তেঁড়ে আসছে,আঁখি আর দেড়ি করলো না,যেহেতু ও মহিলাটির অনেকটাই পাশে ছিলো সেহেতু আঁখি চট করেই মহিলাটাকে টান দিয়ে রাস্তার মাঝখান থেকে সড়িয়ে নিয়ে এলো,ট্রাকটা পাশ কাটিয়ে চলে গেলো।
দাদিমা আপনি ঠিক আছেন?
আরোহী,আমার আরোহী,আমি জানতাম তুই আমায় ছেঁড়ে কোথাও যাবি না,তুই তোর দিদুকে ছেঁড়ে কোথায় যেতে পারিস না,তাই না?চল আমার সাথে চল,চল।আয়।
আঁখি হতবাক হয়ে গেছে মহিলাটির কথায়,কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না।
দেখেন আমি আঁখি,আমি আপনার আরোহী না।
চুপ একদম চুপ,অনেক পাজি হয়ে গেছিস না তুই?চল আমার সাথে,আমি জানি তুই আমার আরোহী।
আরে দিদু তুমি এখানে কি করছো, তোমাদের কি কাজে এমনি রেখেছি? দিদু তোমাদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কি করে কোথাও যেতে পারে?এখন যদি দিদুর কিছু হয়ে যেতো একটাকেও আসতো রাখতাম না,এবার চুপচাপ দিদুকে নিয়ে যাও।
না আমি যাবো না,আমি আমার আরোহীকে না নিয়ে যাবো না,আমাকে আমার আরোহীর কাছে যেতে দাও,ছাড়ো আমায়।
তখন নোমান এসে যায় নিজের কিছু গার্ড নিয়ে,তারপর গার্ডগুলোকে উদ্দেশ্য করে ওসব কথা বললে ওরা দিদুকে নিয়ে চলে যায়,দিদু যেতেই চাইছেন না,পাগলের মতো আরোহী আরোহী বলে চিৎকার করছেন,নোমান এবার আঁখিকে উদ্দেশ্য করে বললো।
মিস আঁখি প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না,আমার দিদু একটু অসুস্থ তাই এমন করলেন।ধন্যবাদ আমার দিদুর প্রাণ বাঁচানোর জন্য,চলি।
নোমান চলে গেলো,এদিকে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আঁখি।
_________________
আদৃত ছুঁটতে ছুঁটতে ঘরে ঢুকলো।
দিদুর কি অবস্থা নোমান?
তোমাকে তো ফোনে বলেছিলাম বিকেলে যখন আমি দিদুকে বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলাম তখন উনি আঁখিকে দেখে ফেলেছেন তারপর থেকেই পাগলামি শুরু করেছেন,রুমের এটা ওটা ভাঙছেন,বার বার বলছেন আরোহীকে এনে না দিলে নিজেকে শেষ করে দিবেন, দিদুর মানসিক অবস্থা সম্পর্কে তুমি ছাড়া আর কে ভালো জানে বলো ভাইয়া?আমার তো মনে হয় আঁখিকে না আনলে অনেক বড় ক্যাল্যাঙ্কারি হয়ে যাবে এবার,দিদু যদি কিছু করে ফেলেন।
কিছুই হবে না আমার দিদুর,আমি দেখছি।
আদৃত ছুঁটে গেলো রুমের ভিতর,কেউ দিদুকে আটকাতে পারছে না,দিদু এটা ওটা ছুঁড়ছেন,নিজেকে আঘাত করতে চাইছেন।আদৃত ছুঁটে গিয়ে দিদুকে জড়িয়ে ধরলো।
দিদু শান্ত হও,আমার কথা শুনো,এই দেখো তোমার দাদুভাই চলে এসেছে।
দাদুভাই,তুই জানিস আমি আজ আমার আরোহীকে দেখেছি কিন্তু কেউ ওকে আমায় আনতে দেয় নি,তুই আমার আরোহীকে এনে দে,দে না দাদুভাই।
দিদু ও তোমার আরোহী না,তুমি যাকে আরোহী ভাবছো ও আরোহী না।
ও আমার আরোহী,আমার আরোহীকে এনে দাও, নইলে আমি নিজেকে শেষ করে দিবো,আমি নিজেকে শেষ করে দিবো।
কথাটা বলে দিদু আপেলের প্লেটে থাকা ছুঁড়ি হাতে নিয়ে নেন,আদৃত দিদুর হাত থেকে ছুঁড়িটা নেওয়ার চেষ্টা করছে,এমন জরাজুরিতেই দিদু জ্ঞান হাঁড়িয়ে যান।
বেশখানিক্ষন পর,
গালে হাত দিয়ে দিদুর পানে একনজরে তাকিয়ে বসে আছে আদৃত,তখনি রুমের বাইরে থেকে নোমান ইশারা করে আদৃতকে ডাকে ওর সাথে হয়তো কিছু কথা বলতে চায় তাই,আদৃতও বেড়িয়ে যায়।
কি দেখলে ভাইয়া দিদুর হাল,এখনও কি নিজের জেদেই অটল থাকবে তুমি বলো?
দেখ নোমান এটা জেদ নয়,আমি এভাবে ওই মেয়ের আত্নসম্মানে আর দিদুর বিশ্বাসে আঘাত হানতে পারি না,আর তুই জানিস আমি মিথ্যের একদম বিরুদ্ধে, আমি কখনোই মিথ্যে বলতে পারি না,আর আঁখিকে এখানে নিয়ে আসার মানে মিথ্যের আশ্রয় নেওয়া,দিদুকে ধোকা দেওয়া,যা আমি কখনোই করতে পারবো না,এক না একদিন তো দিদু সত্যটা জানতে এবং বুঝতে পারবেই ,ওকে আমরা সারাজীবন তো আর ধরে রাখতে পারবো না এখানে।
সারাজীবন কে চাইছে ভাইয়া,দিদু ঠিক হয়ে গেলে দিদুকে আমরা সব বুঝিয়ে বলবো তখন হয়তো দিদু সব মেনেও নিতে পারেন,তাছাড়া তুমি কাল রাতে তো আঁখিকে এখানে নিয়ে এসেছিলে,আর আমরা বললেই আনতে পারবে না।
কান্নারত অবস্থায় মুখ ফুলিয়ে কথাটা বললো সায়েদা।
তারমানে কাল রাতে তুমি লুকিয়ে আমাদের দেখছিলে সায়েদা,এসব চৌধুরী বংশের ম্যানার না কি,শুনি?হুম?
আদৃতের ধমকে সায়েদা ভয় পেয়ে কেঁপে উঠলো আর চোখ নিচু করে আমতা আমতা করে বললো।
আসলে আমি তখন পানি খেতে নিচে যাচ্ছিলাম তখন তোমাদের দেখেছি।
ঠিক আছে এখন যাও এখান থেকে।
সায়েদা পালিয়ে গেলো,এবার নোমান বলতে লাগলো।
তুমি আঁখিকে নিয়ে কাল রাতে এখানে এসেছিলে কেনো ভাইয়া?
আসলে ওকে কালকে আমি এক রাস্তায় পেয়েছিলাম হঠাৎ ও জ্ঞান হাঁড়িয়ে গেছিলো তাই নিয়ে এসেছিলাম।
দেখো ভাইয়া সায়েদা ভুল কিছু বলে নি,আমরা তো আঁখিকে সারাজীবনের জন্য আনছি না,দাদুর অবস্থা এখন অনেক খারাপ,আঁখিকে দেখলে উনি আগের মতো স্বাভাবিক হতে শুরু করবেন,তারপর স্বাভাবিক হলে উনাকে বুঝিয়ে বলা যাবে সবকিছু, দেখ ভাইয়া আঁখিও আমাদের হেল্প করতে মানা করবে না আমার যতোটুকু মনে হয়,আমাদের ওর হেল্পের দরকার ভাইয়া আমরা তো ওকে এখানে দয়া দেখাতে আনছি না,আর কারো প্রাণ বাঁচানোর জন্য মিথ্যা বলাও তো অযুক্তিক হয় না ভাইয়া,আমার আর কিছু বলার নেই,তুমি জিনিসটা ভেবে দেখো,দিদুর যে অবস্থা আঁখিকে না আনলে কি হবে কে জানে।যখনি জ্ঞান ফিরছে আরোহী আরোহী বলে চিৎকার করে আবার জ্ঞান হারাচ্ছে,প্লিজ যা করার জলদি করো।
কথাটা বলে স্থান ত্যাগ করলো নোমান,আদৃত গভীর চিন্তার দেশে ডুব দিলো।
________________
পারলো না আঁখি টাকা জোগাড় করতে,অনেক চেষ্টা করেছিলো,পারে নি,এখন বাড়ির মালিককে কি বলবে সে,এ চিন্তায় ধিমিধিমি পায়ে হেঁটে ঘরে প্রবেশ করলো আঁখি,দরজাটা খোলা,ঘরে ঢুকে দেখে বাড়ির মালিক আগে থেকে ঘরে বসে আছে।
এসেছেন মহারানী তা আমার ভাড়া কোথায়?
আসলে বাড়িমালিক সাহেব আমি টাকাগুলো জোগাড় করতে পারি নি,আপনি আমাকে আরও কটাদিনের সময় দিন আমি সব টাকা সুধ করে দেবো।
আমি ধরমশালা খুলে রাখি নি যে তুমি ফ্রিতে এখানে ছলচাতুরী করে থাকবে,টাকা দাও নইলে ফুঁটো।
দয়া করে আরও কয়েকটাদিনের সুযোগ দিন আমায় প্লিজ।
আঁখি হাত জোরে সুযোগ চাইলে এবার বাড়ির মালিক কেমন দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো,তারপর ঠোঁটের কোনে একটা খারাপ হাসি ঝুলিয়ে বললো।
আমার কাছে এমন সুযোগ আছে যে সুযোগে তুমি এখানের রানীও হয়ে যেতে পারো,কখনোই তোমাকে এখানে থাকার ভাড়া দিতে হবে না।
লোকটির কুদৃষ্টি নিজের শরীরের দিকে খেলায় করতে সক্ষম হলো আঁখি,ওড়না দিয়ে ভালো করে নিজের শরীর ঢেকে নিলো তারপর ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো।
আপনি কি বলতে চাইছেন?
দেখো তুমি একজন ডিভোর্সি নারী,মাথার উপর স্বামীর ছায়া নেই,আমি বুঝতে পারি তোমার কষ্ট, তাই তোমার সুবিধার্তেই বলছি,আমি তোমাকে স্বামীর মতো ছায়া দিবো বদলে তুমি আমায় বউয়ের আদর দিবে।
কথাটা শুনে রাগে সমস্ত শরীর জ্বলে উঠলো আঁখির,আমাদের সমাজের লোকগুলো আজকাল এতোটা নিচে নেমে গেছে ভেবেই আঁখির গায়ের পশম খাঁড়া হয়ে যায়।এবার ধিক্কার ভরা কন্ঠে বলে উঠে আঁখি।।
ছি,চাচা,আপনি আমার বাবার মতো,নিজের মেয়ের বয়সি মেয়েকে এমনটা বলতে আপনার মুখ কাঁপলো না একবারও।
চুপ,আমি তোর বাবার বয়সী হলেও বাবা না,চুপচাপ আমার সাথে খাটে চল টাকায় ভড়িয়ে দেবো।
কথাটা বলে লোকটা আঁখির দিকে এগুতে লাগলো,আঁখিও পিছাতে লাগলো।
আমার দিকে এগুবেন না চাচা,নয়তো অনেক খারাপ হবে।
লোকটার কানে যেনো কোনো কথাই যাচ্ছে না আঁখির,শয়তানি হাসি দিয়ে আঁখির দিকে এগিয়েই যাচ্ছে,লোকটি আঁখির একদম কাছে চলে গিয়ে আঁখির দিকে হাত বাড়ালেই আঁখি পাশে থাকা কাঁচের একটা বোতল তুলেই লোকটার মাথায় ফাঁটিয়ে দেয়,লোকটা সাথে সাথে মাটিতে পড়ে কাঁতরাতে শুরু করে,মাথা ফেঁটে রক্ত ঝরতে শুরু হয়েছে লোকটির,আঁখি এ সুযোগে পালিয়ে যায় সেখান থেকে,দৌঁড়াতে শুরু করে,থামছেই না আঁখি,অনেকটা রাস্তা দৌঁড়ার পর হঠাৎ আঁখির মাথা ঘুরে যায়,পড়ে যেতে নিলে এক জোড়া হাত ধরে নেয় ওকে আঁখি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে সে আর কেউ নয়……………….
চলবে………….?
#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_১১
আঁখি চোখ তুলেই দেখতে পেলো লোকটা আর কেউ না আদৃত,ওকে দেখে আঁখির মনের কোনে যেনো কোথা থেকে এক ফালি সাহস ধরা দিলো,নিজের অজান্তেই আদৃতকে জড়িয়ে ধরলো আঁখি,হয়তো মুহুর্তটা মনের সাথে মানিয়ে নেবার সুবাদে একটু সাহারার খোঁজে, আঁখির হঠাৎ করে এভাবে ওকে জড়িয়ে ধরায় আদৃত হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো,তখন ওর কি প্রতিক্রিয়া করা প্রয়োজন তাও ওর মস্তিষ্ক ভেবে উঠতে ব্যার্থ হলো,খানিক্ষণ পর আঁখি বুঝতে সক্ষম হলো নিজের পরিস্থিতি, একটু অস্বাভাবিক ভাব নিয়ে আদৃত কে ছেঁড়ে দিলো,সাথে সাথেই আঁখির মাথা আবারও ঘুরতে নিলো,আদৃত এবারও ওকে সাহারা দিলো।
মিস আঁকি আপনি ঠিক আছেন?
আমি ঠিক আছি আদৃত স্যার,একটু পানি হবে প্লিজ।
এখানে বসেন আমি গাড়ি থেকে পানি আনছি।
আদৃত আঁখিকে পাশের একটা বেঞ্চে বসিয়ে গাড়ি থেকে পানি আনতে যায়,এ ফাঁকে আঁখি নিজের কাঁপড়ে থাকা একটা থেকে একটা ওষুধ বার করে মুখে নিয়ে নেয় আদৃতের অগোচরে তারপর আদৃত পানি নিয়ে এলে তা খেয়ে নেয়,তারপর একটু সময় চোখ বন্ধ করে শান্ত হয়ে বসে থাকে,খনিক্ষন পর আঁখি স্বাভাবিক হতে সক্ষম হয়।আদৃত এবার জিজ্ঞেস করে।
আপনি ঠিক আছেন তো?
হ্যাঁ আমি এবার একদম ঠিক আছি স্যার।
হুম,তা আপনি এতো রাতে রাস্তা দিয়ে এভাবে ছুঁটছিলেন কেনো?আঁখি আমতা আমতা করে বললো।
ওই আসলে এমনিতেই একটা কাজে।তা আপনি এখানে কি করছিলেন?
আমি আপনার খোঁজেই আসছিলাম।
কেনো?
আমার আপনার সাথে কিছু কথা ছিলো তাই,আমার আপনার একটু সাহায্যের দরকার যদি আপনি করেন তবে।
কি সাহায্য চাই আপনার?
জানি না কথাটা কি করে বলবো,আসলে,আসলে আপনাকে আমার স্ত্রী হতে হবে।
আদৃতের আমতা মুখে বলা এমন কথায় খনিকে মাথা গরম করে আঁখির,বেঞ্চ থেকে উঠে গিয়ে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে।
হোয়াট?আর ইউ সিরিয়াস মি.আদৃত?আমি আপনার ওয়াইফ হবো,শেষ মেষ আপনার মনেও এসব ছিলো?ছি,আমি আপনাকে কতো ভালো মানুষ মনে করেছিলাম।
আদৃত এবার চেহারাতে বিরক্তিকর ভঙ্গি এনে বললো।
আপনি কি বলেন তো মিস আঁখি?পুরো পৃথিবীকে রেখে আপনার আমাকেই ভুল বুঝতে হয়?আমার উপরই সব সন্দেহ থাকে আপনার?আমার পুরো কথাটা তো ভালো করে শুনবেন,পুরো কথা না শুনে কাউকে জাজ করা একদম ঠিক না মিস আঁখি।আপনার ইচ্ছে হলে কথাটা শুনুন নয়তো আমি চলে যাচ্ছি।
ওকে ফাইন,আসলে আপনাকে দেখলেই আমার কেমন রহস্যময়ী মনে হয়,আপনাকে ভুল বোঝা তো কি আমি আপনাকে বুঝতেই পারি না,আপনাকে দেখলে মনে হয় আপনার মুখে এক আর ভিতরে আরেক,তাই।আর প্রথমে উঠেই যদি একটা মেয়েকে বলেন ওয়াইফ বানাবেন তবে তার প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক হবে তা কি করে আশা করতে পারেন আপনি। আচ্ছা বাদ দেন বলেন আপনি কি বলতে চান আমি শুনবো।
আবারও আমতা মুখে বললো কথাগুলো আঁখি।তারপর আদৃতের পাশে বসলো।আদৃত অনেক চেষ্টায় নিজের বিরক্তিভাব কাটিয়ে এবার বলতে লাগলো।
আরোহী আমার স্ত্রী, ছোটবেলায় আমি, বাবা, মা, নোমান লন্ডন চলে যাই ওখানে অনেকদিন যাবত থাকি,এ ফাঁকে দিদু আর দাদু বাড়িতেই থাকতেন,উনারা লন্ডন যেতে চান নি তাই,এদিকে বাবার অনেক কাজ ছিলো লন্ডনে আসতে পারছিলেন না আমাদের নিয়ে আর এমতাবস্থায় দাদু দিদু একদম একা হয়ে গেছিলেন ,তখন হঠাৎ একদিন দিদু একটা শিশুকে কুড়িয়ে পান,ওকে নিয়ে এসে দত্তক নেন উনারা,তারপর উনাদের একাকিত্ব ও ই দূর করে দেয়,উনারা আদর করে ওর নাম রাখেন আরোহী,ও আসার বেশ কয়েকমাস পর মা-বাবা সবাই বাড়ি ফিরে যান,শুধু আমি লন্ডনে ছিলাম,কারন আমার ওখানে থেকে পড়ালেখার অনেক ইচ্ছে ছিলো তাই,গত তিন বছর আগে আমি ডাক্তারি কমপ্লিট করে বাড়ি ফিরার পর দিদু আমাকে জোড় করেন আরোহীকে বিয়ে করতে,উনি আমার সাথে বিয়ে করিয়ে আরোহীকে নিজের কাছেই রাখতে চাইছিলেন,আমি এর আগে আরোহীকে দেখি নি কথাও বলি নি,এমনকি আরোহীও,আমরা দুজনই দিদুকে অনেক ভালোবাসতাম তাই উনার কথায় আমরা দুজন বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হই,তারপর অনেক ভালো যাচ্ছিলো আমাদের দিন,এ্যারেন্জ মেরেজ হলেও আমাদের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিলো কম দিনে,কিন্তু সে সুখ আমাদের বেশিদিন সয় নি,দুবছর আগে একটা কার এক্সিডেন্টে আরোহী মারা যায়।কথাটা বলে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলো আদৃত।
আদৃত সামনে তাকিয়ে কথাগুলো বললেও আঁখি আদৃতের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনছিলো,তখন ও একটা জিনিস লক্ষ্য করলো,পুরো কথা আদৃত স্বাভাবিক ভাবে বললেও শেষের কথাটা বলার সময় ওর চোখের পাতা কেমন জানি বার বার পড়ছিলো,ঠোটগুলোও কেমন কাঁপছিলো,আদৃতের কথায় খারাপ লাগার সাথে কেমন একটা খটকাও লাগলো আঁখির,তাও আবার আদৃতের কথায় মন দিলো।
সেই থেকে দিদুর অবস্থা খারাপ,উনি মানতেই চান না যে আরোহী মারা গেছে,কারন লাশ দেখে কারোই এটা বলার ক্ষমতা হয় নি ওটা আরোহী না কি অন্য কেউ,গাড়িতে আগুন লেগে যাবার ফলে এমনটা হয়েছিলো,তারপর থেকে দিদু মানসিক ভাবে একদম ভেঙে পড়েছেন,দিন দিন উনার অবস্থা আরও খারাপ হচ্ছে,এমনটা চলতে থাকলে একদিন উনি মানসিক ভারসাম্য একেবারেই হারিয়ে ফেলবেন।সায়েদা আমায় জানিয়েছে যে ও আপনাকে আরোহীর বিষয়ে বলেছিলো,তার মানে আপনার জানাই আছে যে আরোহী আপনার প্রতিরুপ আর তাই আজ বিকেলে আপনাকে দেখার পর থেকে দিদুর অবস্থা অনেক খারাপ, জ্ঞান ফিরলেই আরোহীকে দেখার জেদ করছেন,এমনটা চলতে থাকলে যে উনাকে বাঁচানোই যাবে না।
কথাটাগুলো বলতে গিয়ে আদৃতের ভিতরে অসম্ভব যন্ত্রনা কাজ করছিলো তা অনুভব করতে পারলো আঁখি,এবার আদৃতের কাঁধে হাত রেখে বললো।
আমি আপনাকে সাহায্য করতে রাজি আছি,উনার অবস্থা দেখে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে তখন,আমার দাদু আর দিদুকেও যে কতোদিন হয় দেখি না,আপনি বলেন আমায় কি করতে হবে।
আপনাকে শুধু কটাদিন আমার স্ত্রী হয়ে আমাদের ওখানে থাকতে হবে,আপনাকে দেখলে দিদু আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবেন,তারপর না হয় উনাকে বুঝিয়ে বলা যাবে সবকিছু, আমি প্রমিজ করছি আপনাকে, এতে আপনার জীবন চলার পথে কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না,আপনি যেভাবেই চান সেভাবেই থাকতে পারবেন সেখানে,এখন ডিসিশন আপনার,আপনি যেতে না চাইলে আমি আপনাকে জোর করবো না।
আঁখি খনিক সময় চুপ থেকে বলে উঠলো।
আমি যাবো তবে আমার একটা শর্ত আছে।
কি শর্ত বলেন?
আমি ওখানে থাকবো কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে কোনো হেল্প নিবো না,শুধু দিদু জানবে যে আমি আপনার স্ত্রী, তাছাড়া আমি ওখানে একজন ভাড়াটে হিসেবে থাকবো,মাস শেষে আপনাকে আমার কাছ থেকে নিদিষ্ট পরিমান টাকা নিতে হবে,কারন আমি কারও সাহায্য চাই না, নিজের ক্ষমতায় নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।
আমি বেঁচে থাকতে আপনার এই আত্মসম্মানে কখনো আঁচও পরতে দিবো না মিস আঁখি,আমার আপনার শর্ত মানতে কোনো প্রবলেম নেই।
ঠিক আছে তবে আপনার সাথে যেতেও আমার কোনো প্রবলেম নেই।
____________________
মাহির পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে আছে আয়ান,ঘনিষ্ঠ মুহুর্ত কাটিয়ে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে মাহি,তবে আয়ানের চোখে ঘুম নেই,আজকে মাহির পাশে যাবারও কোনো আগ্রহ ছিলো না ওর,আজকে মাহির পাশে যাবার একটাই কারন মাহির মন রাখা,তবে এমনটা কেনো হচ্ছে বুঝতে পারছে না আয়ান,যে মাহির এক ঝলক না দেখলে দিন কাটতো না সে মাহিকে এতো পাশে পেয়েও এমন অনুভুতির মানে বুঝতে ব্যার্থ আয়ান,অথচ যে আঁখিকে চোখের বিষ মনে হতো আজ কেনো যেনো সে চোখের পাতা থেকে নামতে চাইছে না,না চাইতেও আঁখির স্মৃতি ধরা দিচ্ছে আয়ানের মনে বারে বারে,মন পিঞ্জরে আলাদা এক খালিলাগা কাজ করছে ওর,জানা নেই অনুভুতিটার মানে,মাহির কাছে গেলেই যেনো এখন আঁখির স্মৃতি মস্তিষ্কে এসে নাড়া দিয়ে উঠে,এখনও আয়ানের মনে ঘুরছে আঁখির সাথে কাটানো সুন্দর মুহুর্তগুলোর স্মৃতি ,মনের আবেগের টানে পাশ থেকেই ফোনটা হাতে নিলো,তারপর ওর আর আঁখির সুন্দর মুহুর্তের কিছু ছবি দেখতে মগ্ন হলো,আঁখির ছবিগুলো বেশ বড় করেই দেখছে,আয়ানের এমন কান্ডের মানে আয়ান নিজেও জানে না,তবে মনের টানে আয়ানের মস্তিষ্কও যেনো সাড়া দিতে চাইছে আজ,হঠাৎই ফোনটা বেজে উঠলো ওর,ফোনটা রিসিভ করে ওপর পাশ থেকে ভেসে আসা কিছু কথা শুনে নিজের মাথা ঠিক রাখতে পারলো না আয়ান,তৎক্ষনাৎ চোখগুলো রক্তবর্ণ ধারণ করলো,কোনোদিক আর বিবেচনা না করে কাপড় পড়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো কোথাও।
আঁখিকে আদৃত বাড়িতে নিয়ে আসে,ওকে দেখে বাড়ির গার্ড থেকে শুরু করে চাকরবাকর সব হতবাক হয়ে গেছে,সবাই যেনো ভুঁত দেখে নিয়েছে,চোখের সামনে ঘটে যাওয়া দৃশ্যে বিশ্বাস করতে নারায সবার মন,এদিকে আদৃতের পরিবারের সবাই অনেক খুশি আঁখিকে দেখে,আদৃত আঁখিকে সোজা দিদুর ঘরে নিয়ে যায়,জ্ঞান ফিরতেই দিদু আঁখিকে দেখতেই ওকে আকঁরে ধরেন শক্ত করে,ওকে ছাঁড়তেই নারায উনি,আদৃত আর বাকিরা অনেক কিছুই বলে উনার কাছ থেকে আঁখিকে ছাড়াতে ব্যার্থ হলো,তারপর আঁখি নিজেই বললো ও দিদুর কাছে থাকতে চায়,আর তাই রাতে আঁখি দিদুর পাশেই থাকলো, সারারাত আঁখি দিদুর পাশেই বসে থাকলো,দিদু ওকে ছাড়ছেনই না,ও নিজেও দিদুকে ছাঁড়াতে চায় না,হয়তো উনার এই ভালোবাসা ওর জন্য না তারপরও অনেক দিন পর কারো কাছ থেকে অসীম এক নিঃস্বার্থ ভালোবাসা পেলো আঁখি,ভালোই লাগছে ওর তাই,সারারাত দিদুর মাথার পাশে বসে উনার খেয়াল রাখলো।
___________________
পরদিন সকালে উঠে আঁখি সবার জন্য নিজের হাতে নাস্তা বানালো, তারপর দিদুকে নাস্তা করিয়ে ওষুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য বেড়িয়ে গেলো।
গুটিশুটি পায়ে ফুটপাত দিয়ে হাঁটছিলো আঁখি,হঠাৎই খেয়াল করলো পিছন থেকে কয়েকটা ছেলে ওকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করছে,ছেলেগুলো এই এলাকারই আঁখিকে চেনে,আঁখি ওদের কথা শুনেও না শোনার ভান করছে,এদিকে ছেলেগুলো বলতেই আছে।
ও সুন্দরী কোথাও যাও?কি সুন্দর তোমার ফিগারের সাইজ,শুনেছি স্বামী নাকি ছেড়ে দিয়েছে তোমায়,অনেক কষ্ট হয় গো তোমার শরীরটার জন্য,আমাদের কাছে এসো পারলে স্বামীর অভাব মিটিয়ে দিবো,হা হা হা।আসো না বেবি তোমার একাকিত্ব দূর করে দিবো।
অনেক সময় ধরে ছেলেগুলো অনেক কিছু বলছিলো আঁখি কোনো প্রতিক্রিয়া না করলেও এবার থমকে দাঁড়ালো আঁখি।এদিকে আঁখি কাউকে না বলেই ভার্সিটির জন্য বেড়িয়ে গেছে আদৃত আঁখির খুঁজে রাস্তার চারপাশে নজর রাখতে রাখতে আস্তে করে ড্রাইব করে যাচ্ছিলো,আঁখিকে নিজের সাথে করে নিয়ে যাবে ভেবে,তখনি উক্ত ঘটনায় চোখ গেলো আদৃতের,খনিকে মাথা গরম হয়ে যায় ওর,গাড়ি থেকে নেমে ছেলেগুলোর পাশে যাবে এর আগেই আঁখি এমন কান্ড ঘটায় যাতে আদৃত এবং সেখানের আশেপাশে থাকা সবাই অবাকের চরম শির্ষে পৌঁছে যায়,হাতে একটা ইট আঁখির, ওটাতে রক্ত লাগানো,এই মাত্র একটা ছেলের মাথায় চালিয়েছে ওটা,সবাই পরিস্থিতি বুঝে উঠার আগে আরেকটা ছেলের মাথায়ও চালালো,তারপর সাথে সাথে আরেকটার,লোকগুলো ফোন বের করে ভিডিও করতে শুরু করলো,কেউ আঁখিকে থামাচ্ছে না,না পরিস্থিতি বুঝতে ইচ্ছুক,আদৃত ছুঁটে গিয়ে আঁখির হাত ধরে নিলো,আঁখি এতোটা রাগে যে আজ এদের একটাকেও যেনো জীবন্ত রাখবে না,এদিকে সেখানে ছয় টি ছেলে ছিলো আঁখির এমন পাগলামি দেখে ওরা ভয় পেয়ে যায়,আঁখির হাতে বেশ বড় সর ইটের একটা টুকরা আর ইচ্ছেমতো প্রহার করছে,তাই ছেলেগুলো আর সেখানে দাঁড়ালো না,তিনটা প্রাণ বাঁচানোর সুবিধার্থে আগেই পালিয়েছে আর যাদের মাথা ফেঁটেছে তারা মাথায় হাত দিয়ে বলতে বলতে পালালো।
মাগো এ দেখি পালগ হয়েছে পালাও,এ তো দেখি মেরেই ফেলবে।
কই যাচ্ছিস তোরা?আয় না একাকিত্ব মেটাবি আমার?স্বামীর কমতি মেটাবি না আয় না?কোথায় যাচ্ছিস?
আদৃত টান দিয়ে আঁখির হাতের ইট টা সরিয়ে নিয়ে ফেলে দেয়।
আঁখি শান্ত হও,প্লিজ।
কেনো শান্ত হবো আদৃত স্যার?কেনো শান্ত হবো বলেন আপনি?শান্ত আছি বলেই সবাই কথা শুনিয়ে যায় আমায়।সবাই বেচারি ভাবে,আরে হ্যাঁ আমার স্বামী ছেঁড়ে দিয়েছে আমায় তাই বলে কি আমার জীবন শেষ,আমি কি সবার ভোগপণ্য হয়ে গেছি,যে চাইবে আমাকে ছিঁড়ে খেতে আসবে,যে চাইবে আমায় কথা শুনিয়ে যাবে,এই দেখো এই,এই হলো আমাদের সমাজের লোক,এই দেখো সবাই ভিডিও করছে,আজকের ঘটনা ফেসবুকে আপলোড দিবে,আমাকে সেখানে কতো নামে ফুঁটিয়ে তুলবে #হিটলার দিদি,#বিদ্রোহী নারি আর না জানি কি কি,সবাই আমায় নিয়ে জয় জয় করবে,কিন্তু তা শুধুই ফেসবুকে নিজেদের লাইক কমেন্ট বাড়ানোর সুবিধার্থে হবে,সবাইকে ওরা শো ওফ করবে যে ওরা কতো সচেতন, ন্যায়ের সাথে আছে,কিন্তু ওরা কতোটা সচেতন আপনি বলেন?আজকে এতো লোক থাকা সত্ত্বেও ওই লোকগুলো আমার সাথে খারাপ আচরন করছিলো কিন্তু কেউ সেদিকে ভ্রুক্ষেপ দেখায় নি,সবাই নিজেদেরকে নিয়েই ব্যাস্ত আর আমি এখন তার প্রতিবাদ করলাম বলে সবাই এখন এসে আমার কর্মকাণ্ড ভিডিও করছে,এরা যে পোস্ট করে বেশি বেশি লাইক কমেন্ট পাওয়ার জন্য একটা ভালো খবরের সন্ধান পেয়ে গেলো,কজন এগিয়ে এলো পরিস্থিতি সামলাতে?কজন জানতে চাইলো আসল সত্যটা?আজ এদের এমন নিম্ন অবস্থার কারনে দেশে ধর্ষণ,রাহাজানী,সন্ত্রাসী,জঙ্গি এসবের মতো অবৈধ কর্মকলাপ বেড়েই চলেছে,আমাদের সমাজের লোকগুলো যদি শো ওফ করতে ব্যাস্ত না হয়ে সত্যতার মোকাবিলা করতো তবে প্রতিদিন কোনো না কোনো মেয়েকে ধর্ষনের স্বিকার হতে হতো না,যেখানে সেখানে বোমা হামলা হতো না,চুরি ছিনতাই বাড়তো না,কিন্তু আফসোস আমাদের সমাজের লোকগুলো ধীরে ধীরে বিলুপ্তির দিকে গড়াচ্ছে,আজকে যদি আমি ওই লোকগুলোর প্রতিবাদ না করতাম তবে কোনো একসময় আমিও ধর্ষণের স্বিকার হয়ে লাশ হয়ে পড়ে থাকতাম কোনো ঝোঁপের আড়ালে ,তখনও লোকগুলো আমাকে নিয়ে নিউজ পোস্ট করতো,ফেসবুকে আমাকে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করতো কিন্তু একবার এরা এটা ভাবতোও না যদি এরা একটু সচেতন হতো তবে আজকাল আমাদের মা বোনেরা যখন তখন যেখানে সেখানে ধর্ষনের স্বিকার হতো না,আমিও চেয়েছিলাম আজ আর আট- দশ টা মেয়ের মতো এদের এড়িয়ে চলে যেতে কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম এই সমাজে একটা একা মেয়েকে লোক বাঁচতে দিতে চায় না শান্তিতে,তাই বাঁচতে হলে নিজের সংগ্রাম নিজেই করতে হবে।
কথাগুলো শুনে লোকগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ওর দিকে তাকিয়ে ,তবে ভিডিও করা এখনও কেউই বন্ধ করে নি,হয়তো সমাজের লোকগুলো আজকে বিলুপ্তির একদম শেষ দিকে চলে গেছে তাই এমন কথাও ওদের বিবেকে বাঁধছে না,আঁখি এবার ইট নিয়ে ওদের দিকেও তেঁড়ে যায়,ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠে।
সবাই চলে যাও এখান থেকে নয়তো আমি সবার মাথা ফাঁটিয়ে দেবো।সবাইকে মেরে ফেলবো।
লোকগুলো স্থান ত্যাগ করলো ধীরে ধীরে,আদৃত এবার আঁখিকে শান্ত করার চেষ্টা করলো।
মিস আঁখি শান্ত হন আপনি প্লিজ,সমাজটা যে সত্যিই আজ বিলুপ্তির দিকে,এদের সাথে কথা বলে কোনো লাভ নেই,আপনি এখানে দাঁড়ান আমি আপনার জন্য পানি নিয়ে আসি।
লাগবে না স্যার,আমি ঠিক আছি,এই যে রিক্সাওয়ালা চাচা দাঁড়ান।
রিক্সায় যাবেন কেনো? আমিওতো ভার্সিটি যাচ্ছি আমার সাথে চলুন।
ধন্যবাদ, কিন্তু আমি নিজের সবকিছু একাই ম্যানেজ করতে চাই।
কথাটা বলে আঁখি রিক্সা করে চলে গেলো,আদৃত তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে।
ভার্সিটিতে আজ সারাদিন আদৃত আঁখিকে লক্ষ্য করলো,অন্যদিনের মতো আজকে আর কথা বলছে না হাসছেও না আঁখি,হয়তো সবকিছুই হাসিমুখে মানিয়ে নিতে এখন ধীরে ধীরে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে ওকে দেখে এমন সব কথা মস্তিষ্কে নাড়া দিলো আদৃতের।সত্যিই একটা মেয়েকে লোক সমাজে একা বাস করতে দিতে চায় না,সবদিক থেকে ওর বাঁচা মুসকিল করে তুলে,আদৃতের এসব ভাবনায়ই ভার্সিটির সময় শেষ হলো,আঁখিকে বেড়িয়ে যেতে দেখলো আদৃত,নিজেও ওর সাথে বের হলো ওকে সাথে করে বাড়ি নিয়ে যাবে বলে,এদিকে ভার্সিটির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,একটা অটোর জন্য অপেক্ষা করছে, হয়তো বাড়ি যাওয়ার সুবাদে, হঠাৎই কোথা থেকে যেনো ছুঁটে এসে ঝাপটে ধরলো আয়ান আঁখিকে,আঁখি আয়ানের এহেন কান্ডে হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
চলবে…………..