#মন_পিঞ্জর,পর্ব_১৫
#লেখিকা_আরোহী_নুর
বেশ কটা দিন ভালোই কেটেছে আঁখির,আয়ান এ ফাঁকে আর ওকে দেখা দেয় নি যার ফলে আঁখি অনেকাংশে নিজের মনকে গুটিয়ে নিতে পেরেছে,তবে এই আদৃতকে ও যতো দেখছে ততোই রহস্যময় মনে হচ্ছে,আঁখি জানে লোকটা ভালো কখনো কারো খারাপ চায় না,আর সবসময় আঁখির ভালোই চায়, ওকে সব কিছুতে সাপোর্ট করতে চায়,কিন্তু কেনো যেনো আঁখির মনে হয় লোকটার ভিতর অনেককিছু লুকিয়ে আছে যা আঁখি জানতে ইচ্ছুক হলেও তা জানাতে নারায আদৃত সেটাও বুঝতে বাকি নেই আঁখির।
এদিকে আয়ান, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে রাজ্য জয় করা হাসি টাঙিয়ে রেডি হতে ব্যাস্ত।মাহি ওর হাবসাব কিছুই বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না।তাই হতবাক হয়ে প্রশ্ন করলো।
কি হয়েছে আয়ান তোমার?হাসপাতালের ছেড়ে দিলে নিজের ইচ্ছায়,আর এখন পাগলের মতো বিনা কারনেই হাসছো,এখন আবার কোথায় যাবার জন্য রেডি হচ্ছো?
ও তুমি বুঝবে না মাহি,শুধু এটা জেনে রাখো নতুন কাজ পেয়েছি আর সেটা আগের টার থেকে অনেক বেশিই উন্নত।
ঠোঁটের কোনে একটা রহস্যময়ী হাসি টাঙিয়ে কথাটা বললো আয়ান,মাহি কিছুই বুঝতে পারলো না আয়ানের এই হাসির মানে,আয়ান এবার এগিয়ে গিয়ে মাহির গালে ধরে টান দিয়ে বললো।
চলি সুইটহার্ট, বাই,লাভ ইউ।
আয়ান চলে গেলো,মাহি এখনও হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার পানে,ওর ভাবসাব কিছুই যেনো বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না মাহি,কিন্তু মাহির ওর এমন বিহেইব তেমন একটা সুবিধারও মনে হলো না।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,গুটিয়ে গুটিয়ে দেখছে নিজেকে,ধবধবে ফর্সা গায়ের রং,হরিণীর মতো টানা টানা ডাগর দুটি চোখ,ছুটো সরু একটা নাক,চিকন দুটি ঠোঁট যাতে গোলাপের পাপড়ির ন্যায় আবরণ দেওয়া, ঘন সিল্কি লম্বা চুলগুলো কোমড়ের নিচ অব্দি গেছে,উচ্চতা ৫ ফুঁট ৩ ইঞ্চি, শরীরের গঠনও তো মন্দ না,না অতিরিক্ত মোটা না অতিরিক্ত চিকন,সব দিক থেকেই তো পরিপূর্ণ লাগছে নিজেকে তবে কেনো আয়ানের মন ভরে উঠলো ওর উপর থেকে,মাহির থেকেও তো আঁখি কোনোদিকে কম না,তবে কেনো অন্যত্র গমন করলো আয়ান,হয়তো দ্রব্য পুরাতন হয়ে গেলে সে যেরকমই হোক না কেনো তাকে আর মনে ধরে না,নতুন দ্রব্যের খোঁজে লোক বেড়িয়ে যায় পুরাতনটা ছুঁড়ে ফেলে,আর আয়ানের জন্যও হয়তো আঁখি একটা দ্রব্য থেকে বেশি কিছুর সমতুল্য ছিলো না,আনমনে এসব ব্যাথাভরা মনোভাব সেই মুহুর্তে আঁখির দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করার কারন হয়ে উঠলো,এসব অনর্থক চিন্তাগুলোকে একসাইড করে নিজের কিছু কাপড় ভাজ করে রাখতে লাগলো কাবার্ডে,নিজের কাপড় রাখতে গিয়ে আঁখির চোখ পড়লো আদৃতের কাপড়ের দিকে, কয়েকটা কাপড় একটু এলোমেলো হয়ে আছে তাই আঁখি ভাবলো আদৃতের কাপড়গুলোও ভাজ করে নেওয়া যাক,তাই কাপড়গুলো ভাজ করতে নিলো,হঠাৎ একটা কাপড় ভাজ করতে গেলে সে কাপড়ের ভাজ থেকে বেড়িয়ে নিচে পড়ে গেলো অনেক কিছু,আঁখি ওগুলা উঠালো,সেখানে আছে একটা বড়সড় ডাইরি,একটা এলবাম আর সেই ডাইরির ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসা দুটি কাগজ,ডাইরিটার উপরে বড় করে লিখা প্রিয়সী,ডাইরিটা পড়ার আগে আঁখির কৌতুহল জাগলো সেই কাগজগুলোর দিকে,তাই কাগজগুলোর ভাজ খুললো আঁখি,এগুলো যেনো কিসের রিপোর্ট, উপরে নাম লিখা মিসেস আরোহী চৌধুরী, রিপোর্টের অন্যদিকেও আঁখি চোখ বুলাবে এর আগেই কেউ একজন আঁখির হাত থেকে সবকিছু কেঁড়ে নিলো,আঁখি চোখ তুলে তাকিয়ে দেখলো সে আর কেউ না সয়ং আদৃত।আদৃতের চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে সক্ষম হলো আঁখি আদৃত বর্তমান মুহুর্তে অনেক চটে আছে,হয়তো আঁখির এহেন কান্ডে, এবার আদৃত নিজের গম্ভীর কন্ঠে অনেকটা ঝাঁঝালো ভাব টেনে এনে বললো।
মিস আঁখি, আপনি কি জানেন না অন্যের পার্সোনাল জিনিসে হাত দেওয়া ঠিক না?আপনি কি করে আমার এসব জিনিসে হাত দিতে পারেন?
ওই আসলে আপনার কাপড় ভাজ করতে চেয়েছিলাম তখনি এসব বেড়িয়ে এলো আমি ইচ্ছে করে ওসব বার করতে চাই নি।সরি।
ওকে ঠিক আছে,সামনে থেকে আমার কোনো জিনিসে হাত দিবেন না,আর আপনার আমার কাপড় ভাজ করতে হবে না,আমি আমার নিজের কাজ নিজেই করি,অন্য কেউ আমার কাজ করুক আমার তা মোটেও পছন্দ না।
কথাটা বলে আদৃত হনহনিয়ে রুম ত্যাগ করলো,আঁখি কিছুই বুঝতে পারলো না ওর এমন প্রতিক্রিয়ার মানে,আদৃতকে নিয়ে ওর মনে থাকা সন্দেহটা আরও বেড়ে গেলো।
ক্লাসে বসে ছিলো আঁখি,সায়েদার সাথে গল্প করছিলো,এ কদিনে সায়েদা আর আঁখির মধ্যে ভালো একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে,দুজনই গল্প করছিলো তখনি ক্লাসে নতুন স্যার প্রবেশ করলেন,সবাই জানতো আজকে নতুন স্যার আসছেন ভার্সিটিতে কিন্তু সেই স্যার আঁখির চিরচেনা কেউ হবেন তা যে জানা ছিলো না বেচারির,সে যে আর কেউ নয় সয়ং আয়ান,ক্লাসে ঢুকেই আঁখির দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে একটা ডেবিল মার্কা হাসি ঝুলালো,আঁখি যেনো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না তখন,তাই আয়ান এবার সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললো ও এই ভাসিটির নতুন প্রফেসর,আঁখি যেনো বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো কথাটা শুনে,যার থেকে ও পালিয়ে বাঁচতে চাইছে এখন প্রতিদিন যে তারই চোখের সামনে থাকতে হবে ওকে,বিষয়টি ভেবে আঁখির মনটা কেমন আনচান করে উঠলো ,এদিকে সবাইকে বসতে বলার পর আয়ান আঁখিকে ডাক দিলো।
মিস আঁখি স্ট্যান্ড আপ।
আঁখি দাঁড়ালো।
মিস আঁখি আপনি আপনার বই পত্র নিয়ে সামনের বেঞ্চে চলে আসুন,আর সামনে যারা বসে আছেন তারা প্লিজ অন্য বেঞ্চে চলে যান।
আয়ানের এমন কথায় সবাই হতবাক হলো,নতুন স্যার এসে শুধু আঁখিকেই আলাদা করে মান দিচ্ছেন বিষয়টা কারোই যেনো হজম হতে চাইছে না,আঁখি এবার বেশ গম্ভীরতা নিয়ে বললো।
আমি সামনে যাবো না স্যার,আমি যেখানে আছি একদম ঠিক আছি।
মিস আঁখি আমি আপনার কাছ থেকে এক্সট্রা কোনো কিছু জানতে চাই নি, আপনাকে আমি এখানে এসে বসতে বলেছি আপনি বসবেন। ইট’স মাই ওর্ডার, নয়তো আমি আপনাকে ক্লাস থেকে বের করে দিতে বাধ্য হবো।
আঁখির এই জীবনে প্রথমবার নিজেকে অসহায় মনে হলো,আঁখি কোনো ক্লাসই মিস করতে চায় না আর সেই দূর্বলতার সুযোগ আয়ান নিচ্ছে,আঁখি বুঝেই উঠতে পারছে না আয়ান কেনো এমন করছে,ছেড়েই তো চলে এসেছিলো আঁখি ওকে ওর কথামতো তবে কেনো আয়ান এমনটা করছে ওর সাথে,কেনো শান্তিতে বাঁচতে দিতে চায় না ওকে,আঁখি আর কোনো রাস্তা না পেয়ে উঠে এসে সামনে বসলো,এবার আয়ান আঁখির দিকে দৃষ্টি অটল রেখেই বললো।
আজ থেকে আমার ক্লাসে মিস আঁখি এই প্রথম বেঞ্চে একা বসবেন, কাউকেই যেনো আমি এখানে বসতে না দেখি।তবে চলে প্রথম ক্লাস শুরু করা যাক।
সবাই হতবম্ভ হয়ে গেছে আয়ানের কথায়,আঁখিকেই আলাদা করে দেখার কি আছে এখানে?সবারই মনে এই এক প্রশ্ন।
এদিকে কথাটা বলে আয়ান ক্লাস করাতে শুরু করলো,পুরো ক্লাসেই বার বার আঁখির দিকেই তাকাচ্ছিলো,এদিকে আয়ানের এমন ব্যাবহারে অস্বাভাবিকতা ছাড়া কিছুই অনুভব করতে পারছিলো না আঁখি,এদিকে আয়ান ভার্সিটিতে এসেছে তা আদৃতের কানে পৌঁছাতে দেরি হলো না,আয়ান ক্লাস করাতে এসেছে শুনে আদৃত আর না দাঁড়িয়ে সেখানে এলো কারন আদৃত জানতো আয়ানের এখানে আসার উদ্দেশ্যই আঁখি,আদৃত ক্লাসের বারান্দা থেকে ক্লাসের ভিতরের উক্ত দৃশ্য দেখতে ব্যার্থ হলো না,উক্ত দৃশ্যটি দেখার পর আদৃত অনেক কষ্টে নিজের রাগ দমন করলো তারপর মনে মনে বললো।
অনেক কষ্ট দিয়েছো তুমি আঁখিকে আয়ান আর না,ও একটা মেয়ে তাই বলে এটা নয় যে তুমি নিজের ইচ্ছামতো ওকে ব্যাবহার করবে,হয়তো আঁখি একাই ১০০ জনের উপর ভারি পড়ে,তবে তোমার সামনে ওকে দূর্বল পড়তেও দেখেছি আমি,তুমি ওর দূর্বলতা আর আমি যতটুকু জানি আঁখির দূর্বলতার সুযোগই তুমি নিতে চাইছো , তবে তা আর আমি হতে দিবো না।আঁখি দূর্বল না আর আমি ওকে দূর্বল পড়তেও দিবো না,আমি আঁখিকে কথা দিয়েছি আমি ওর আত্নসম্মানে কখনো আঘাত লাগতে দিবো না আর আদৃত চৌধুরী কখনো নিজের কথার খেলাফ যায় না।
ড.আমির চৌধুরীর কেবিনে………..
এটা তুমি কি করলে বাবা, যাচাই না করে কাউকে এভাবে নিয়োগ কি করে দিতে পারো তুমি।
ড.আয়ান তো ভালো ডাক্তার আদৃত,উনার যথেষ্ট কোয়ালিকেশন আছে এখানে প্রোফেসর হিসেবে নিয়োগ হওয়ার।
হ্যাঁ শিক্ষাগত কোয়ালিফিকেশন আছে বটে কিন্তু ব্যাক্তিত্বের কোনো কোয়ালিফিকেশন একদম নেই বাবা।তুমি জানো ওই আয়ান কে? আর এখানে কি জন্য এসেছে?
কে ও?
আঁখির প্রাক্তন স্বামী আর ওর এখানে আসার একমাত্র টার্গেটই হোক না হোক আঁখিই।
এ কি বলছো আদৃত তুমি?কিন্তু ওকে তো এবার নিয়োগ দেওয়া হয়ে গেছে আর ওকে হুট করে বার করা তো যাবে না কোনো কারন ছাড়া।আমাদের হাসপাতালের একটা রেপুটেশন আছে।
তুমি চিন্তা করো না বাবা,ও এসেছে এখানে নিজের মর্জিতে কিন্তু বেড়িয়ে যাবার কারনটা না হয় আমিই দিবো।
মনে মনে দৃঢ় কোনো প্রতিঙ্গা বদ্ধ হয়ে গম্ভীর কন্ঠে বললো আদৃত কথাটা।
___________________
আঁখি একটা খালি ক্লাসরুমে বসে আছে একাকিত্বে,আয়ানের এসব অনর্থক কাজগুলো কোনো মতেই মেনে নিতে পারছে না আঁখি,কেনো এমন করছে আয়ান,কেনো ওকে শান্তিতে বাঁচতে দিতে চায় না,এসব প্রশ্নের উত্তর পেতে ব্যার্থ আঁখি,হঠাৎ কক্ষে কারো উপস্থিতি অনুভব করলো আঁখি,পিছন মুড়ে তাকিয়ে দেখলো আয়ান,আয়ান এবার আঁখির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বললো।
আই এম সরি আঁখি,ক্লাসে ওভাবে তোমার সাথে কড়া ব্যবহার করার জন্য,তবে আমি কি করতাম বলো তুমি তো কথাই শুনো না।
হুম,তবে আপনার আমাকে নিয়ে আলাদা করে এতো ভাবার কারন জানতে পারি মি.আয়ান ?
জানিনা,তবে এটা জানি আমি তোমার সাথে কিছু খারাপ হতে দিতে চাই না।তুমি মেডিক্যাল ভার্সিটিতে পড়ালেখা করছো সেটা শুনে অনেক ভালো লাগলো আমার,তুমি আগের মতো নিজের কেরিয়ার নিয়ে ভাবছো শুনে মনে কতোটা ভালোলাগা কাজ করছে তা আমি তোমাকে বলে বুঝাতে পারবো না,তবে যখন শুনলাম তুমি ওই আদৃতের ভার্সিটিতে পড়ালেখা করছো ওর বাড়িতে থাকছো তখন আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলাম না,আমি যে তোমার ক্ষতি হতে দিতে পারি না,তুমি কেনো বুঝতে পারছো না আঁখি একটা ছেলে এমনিতেই একটা মেয়ের সাহায্য করতে চায় না,ওই আদৃতেরও তোমাকে সাহায্য করার পিছনে নিশ্চয়ই কোনো স্বার্থ আছে,তুমি কেনো তা বুঝতে চাইছো না?আমি তো বলেছি আমি তোমাকে সব দিক থেকে সাহায্য করবো কেনো তুমি ইচ্ছে করে অন্যের কাছে ঋনি হচ্ছো বলো?
আর আপনার এমন কেনো মনে হয় যে আমি উনার কাছ থেকে সাহায্য নিচ্ছি?আমার সাহায্যের দরকার?আসলে মি.আয়ান আপনার মেন্টালিটি কখনো পাল্টাবে না,যাদের চিন্তাধারা নিচ থাকে তাদের সে চিন্তাধারা কখনো উপরে উঠতে সক্ষম হয় না।যাকে আপনি সন্দেহ করছেন সে লোকটা আমার আপন কেউ না হলেও আমাকে ঠিকই বুঝে,সে আর যাই হোক কখনো আমার খারাপ চায় না আর চাইবেও না এ বিশ্বাস আছে আমার,বরং আমার খারাপের আশঙ্কা আপনার কাছ থেকেই বেশি মনে হয় ,আফসোস হয় আমার… কখনো আমি আপনাকে ভালোবেসেছিলাম,আল্লাহ যদি আমাকে আপনার সাথে দেখা না করাতেন তবে ভালোই হতো।
একটু দমে গিয়ে দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করে এবার আঁখি আবারও বলতে লাগলো।
আরেকটা কথা মি.আয়ান,আজকে কিছু বলি নি তাই বলে এটা মনে করবেন না আমি আপনাকে সবদিন ছেঁড়ে দিবো,আগামীকাল থেকে যদি আপনি আমাকে ক্লাসে সবার থেকে আলাদা অবস্থান দিতে চেয়েছেন, এমনি এভাবে একা আমার সাথে কথা বলতে এসেছেন তবে আমি ভার্সিটি কমিটির কাছে গিয়ে আপনার বিরুদ্ধে স্টেপ নিতে বাধ্য হবো।
আর হ্যাঁ আমি কোথায় থাকছি কার সাথে থাকছি,কিভাবে থাকছি সেটা নিয়ে আপনি ভাববেন না,আমি নিজের টা নিজেই দেখে নিবো।
কথাটা বলে আঁখি সেখান থেকে চলে গেলো,আয়ান রাগে পাশে থাকা একটা বেঞ্চে পাঞ্চ মারলো তারপর বললো।
তুমি কখনোই আমার সাথে এ স্বরে কথা বলো নি আঁখি,হোক না হোক ওই আদৃত তোমাকে আমার বিরুদ্ধে কান মন্ত্র দিচ্ছে,আমি জানি না ও কি চায় তবে হ্যাঁ আমি তোমাকে ওর সাথে আর থাকতে দিতে পারি না।কিছু একটা তো আমায় করতেই হবে।
আঁখি হেঁটে হেঁটে আসছিলো তখনি ওর কানে কিছু কথা ভেসে এলো।আদৃত কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।
কি? এখনও প্রমাণগুলো নষ্ট করা হয় নি?এতো ইরেসপন্সিবল কি করো হতে পারো তোমরা?ইট’স ফাইন,আমি লোক পাটাচ্ছি ওগুলা আমার কাছে পাঠিয়ে দিও আর হ্যাঁ কেউ যাতে কিছুই বুঝতে সক্ষম না হয়।ওগুলা যাতে কারো হাতে না লাগে।
কথাগুলো আঁখির কাছে অনেক সন্দেহজনক মনে হলো, এদিকে ফোন কেটে আদৃত যেতে নিলে সামনে আঁখিকে দাঁড়ানো অবস্থায় পায় ওর দিকে সন্দেহজনক দৃষ্টি অটল রেখে তাকিয়ে আছে,আদৃত এবার খনিক ঘাবড়ানো প্রতিক্রিয়ায় আঁখিকে প্রশ্ন করে।
আপনি এখানে?আপনি এখানে কি করছেন?
আমি আসলে এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম।
কথাটা বলে আর আঁখি সেখানে দাঁড়ালো না এগিয়ে যেতে নিলে আঁখির মাথা ঘুরালো ,আঁখি নিজেকে নিজের জায়গায় অটল রাখতে পাশে কিছুতে ধরতে নেয়,হুট করেই জায়গা না বুঝে ধরতে যাওয়ায় তখনি পাশের একটি জানালার কাচে লেগে আঁখির হাত অনেকখানি কেটে যায়,রক্ত ঝড়তে শুরু হয় অনেক,আদৃত ছুটে এসে ওকে ধরে নিয়েছে ততোক্ষণে।
মিস আঁখি,আপনি ঠিক আছেন?
আমি একদম ঠিক আছি ড.আদৃত,যেতে দিন আমায়।
কথাটা বলে আঁখি নিজেকে আদৃতের কাছ থেকে ছাড়িয়ে আবার যেতে নিলে আঁখির মাথা আবারও ঘুরে যায়,আদৃত আবারও ওকে ধরে নেয়।
যখন তখন জেদ করা ভালো না মিস আঁখি।কখনো কথা শুনবেন না আমার,পণ নিয়েছেন তাই না?
কথাটা বলেই আদৃত আঁখিকে কোলে নিয়ে নিলো।
আরে কি করছেন আপনি?
একদম চুপ একটা কথাও বলবেন না।
কথাটা বলে আদৃত আঁখিকে কোলে নিয়ে যেতে নিলো নিজের কেবিনের দিকে,আঁখি নিজেকে ছাড়াতে চাইলেও পারলো না মাথাটা ঘুরা যে বন্ধই হচ্ছে না ওর,এদিকে আয়ানও তখন আঁখির পিছনে যেহেতু আসছিলো তাই মুহুর্তটা চোখ এড়ালো না ওর,আদৃতের কোলে আঁখিকে দেখে একদম মেনে নিতে পারলো না আয়ান,চোখে যেনো ওর তখন মরিচ পড়লো,বুকের ভিতর আচমকা জ্বালা অনুভুত হলো ওর।
ছাড়বোনা তোকে আদৃত, ইচ্ছে করেই আঁখির পাশে আসিস তাই না?তোর এই সব ডং বার করবো আমি।
আয়ান রাগে নিজের মুঠো শক্ত করে নিলো,তারপর পাশের দেয়ালেই একটা ঘুষি বসিয়ে দিলো অতিরিক্ত রাগে।
আদৃত আঁখিকে নিজের কেবিনের সোফাতে বসিয়ে ওকে পানি পান করতে দিয়েছে,তারপর ফাস্ট এইড বক্স এনে ওর হাতে ব্যান্ডেজ করতে শুরু করে দিয়েছে।খুব খেয়ালের সহিত ব্যান্ডেজ করছে আর বলছে।
কেমন মানুষ আপনি মিস আঁখি? এমনিতো কতো দায়িত্বশীলতা দেখান আপনি কিন্তু আপনি এতো কেয়ারলেস আমার তা জানা ছিলো না,দায়িত্বজ্ঞান শুধু অন্যের প্রতি থাকলে হয় না মিস আঁখি নিজের প্রতিও থাকতে হয়।
আঁখির মাথা ঘুরা এখন বন্ধ হয়ে গেছে,আদৃত যখন পানি দেয় তখন আবার আদৃতের অগোচরে ওষুধ খেয়ে নিয়েছিলো,এবার অপলকে তাকিয়ে আছে আদৃতের দিকে আঁখি,কতো কেয়ারফুল এই লোকটা,শুধু একটা দায়িত্বের টানে আঁখির কতো খেয়াল রাখছে আদৃত, না জানি ভালোবাসার মানুষটির কতো খেয়াল করতো,আরোহী সত্যিই অনেক ভাগ্যবতী ছিলো যে আদৃতের মতো একজন মানুষকে ও স্বামী রুপে পেয়েছিলো,আঁখিও যে আয়ানের কাছ থেকে সবকিছুর বদলে একটু খেয়াল, একটু যত্ন, একটু ভালোবাসা চেয়েছিলো,পাই নি যে তেমন কিছুই,আয়ান যে সর্বদা নিজেতেই মগ্ন থাকতো,কখনো এতোটা খেয়াল করে নি ও আঁখির,ভালোবাসার টানে তো দূর মনুষ্যত্বের টানেও করে নি,আঁখির বড়ই আশা জাগলো মনে যদি আয়ান আদৃতের মতো হতো তবে ওর জীবনটা হয়তো সুন্দর থাকতো,কোনো অপূর্ণতা কোনো শুন্যতা থাকতো না ওর জীবনে,কিন্তু সেটা যে এখন শুধুই একটা কল্পনা মাত্র, কথাটা ভেবে একটা দীর্ঘনিশ্বাস ত্যাগ করলো আঁখি।
এদিকে আদৃত আঁখির হাত ব্যান্ডেজ করে আঁখির দিকে তাকাতেই ওর চোখে চোখ পড়লো,যেহেতু আঁখি ওর পানে এক ধ্যানে তাকিয়ে ছিলো।খনিকের জন্যই দুজনের চোখাচোখি মনোরম দৃশ্যতে পরিনত হলো তবে সে ক্ষন বেশি সময় টিকলো না দুজনই অস্বাভাবিক বোধ থেকে নিজেদের চোখ সরিয়ে নিলো।
এবার আদৃত বলে উঠলো।
আপনার মাথা বার বার ঘুরে যায়,এটা ভালো লক্ষন না মিস আঁখি,আমাকে আপনার কিছু টেস্ট করাতে হবে।
কথাটা শুনে আঁখি বিষম খেলো একপ্রকার।আমতা আমতা করে বললো।
না না আমার কোনো টেস্টের দরকার নেই,আমি একদম ঠিক আছি।
সব কিছুতে জেদ ঠিক না মিস আঁখি,আপনার শরীর খারাপ,এমন লক্ষণ ভালো না মিস আঁখি,নিজের টেস্ট করাতে প্রবলেম কোথায় আপনার?
দেখেন সব জায়গায় নিজের ডাক্তারি ঝারবেন না,আমি যখন বলছি আমি একদম ঠিক আছি তবে আপনি জোর কেনো করছেন?আপনার কথায় তো আমি অসুস্থ হয়ে যেতে পারি না,আমি একদম ঠিক আছি,আমি করাবো না কোনো টেস্ট।
আজব মেয়ে তো আপনি।
হ্যাঁ আমি আজব আর আমি এমনই।
কথাটা বলে আঁখি ছুঁটে চলে গেলো সেখান থেকে।আদৃত অনেকটা অবাক হলো আঁখির এমন কান্ডে,বার বার মাথা ঘুরে তবে টেস্ট কেনো করাতে চায় না,বিষয়টা কেমন খটকা লাগলো ওর।
______________________
আয়েশা ভার্সিটি থেকে বাড়ি ফিরবে তাই রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রাস্তার পাশে, ওর পাশে দাঁড়িয়ে একটা ছেলে ফোনে কথা বলছে কারো সাথে এদিকে উপরে একটা দালান রং করার কাজ চলছে, আয়েশা ছেলেটার অনেক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো তখন ,হঠাৎ ওর উপরে খেয়াল গেলো ওখানে একটা কিছুর উপর একটা বালতি রাখা ছিলো যা কর্মীর অসতেনতার কারনে পড়ে যেতে নিচ্ছিলো আয়েশা খেয়াল করতে না করতে বালতি টা পড়তে নেয় তখনি আয়েশা টান দিয়ে ছেলেটাকে সেখান থেকে সড়িয়ে নেয় যাতে বালতিটা ছেলেটি আগে যেখানে ছিলো সেই জায়গায় এসে ছিটকে পড়লো,মুহূর্তেই ছেলেটি বুঝে উঠতে পারলো সেখানে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা।আজকে এই মেয়েটা না থাকলে ওর কি হালটাই না হয়ে যেতো।ছেলেটি আর কেউ নয় ড. নোমান চৌধুরী ,জরুরি কাজে এখানে কোথাও এসেছিলো,আয়েশা নোমানের প্রাণ বাঁচিয়েছে তাই নোমান এবার কৃতজ্ঞতার সহিত ওকে বললো।
ধন্যবাদ,আপনি আমার প্রাণ বাঁচালেন।
আয়েশা মুখে খনিক হাসি ফুঁটিয়ে বললো, না না মানুষ হিসেবে এটাতো আমার কর্তব্য ছিলো,তা সামনে থেকে ফোনে কথা বলতে থাকলেও চারিদিকে খেয়াল রাখবেন,কখন কি ঘটে যেতে পারে তা তো আর বলা যায় না।
হুম,আমি খেয়াল রাখবো।
ঠিক আছে।
কথাটা বলে আয়েশা চলে যায় আর নোমানও।
চলবে………..