মন_পিঞ্জর,২৯,৩০

0
712

#মন_পিঞ্জর,২৯,৩০
#আরোহী_নুর
#পর্ব_২৯(আঁখির রহস্য ফাঁস)

আয়ান পারছে না নিজের রাগ দমন করতে,বার বার কানে ভাসছে আঁখির বলা কথাগুলো,আঁখি আদৃতকে ভালোবাসে,এর একটা মানে আঁখি আর আয়ানকে ভালোবাসে না,আঁখি আদৃতের,যা মানতে নারায আয়ানের মন,যে আঁখি কখনো আয়ানের জন্য পাগল ছিলো সে নাকি আজ ওকে ভালোবাসে না, আজ অন্য কারো জন্য ওর উপর হাত উঠালো,কি করে মেনে নিবে এই তিক্ত সত্য,এদিকে নিজের বাচ্চাকেও হারাতে হলো,যাকে এক মুহুর্তের জন্য অনুভবেও নিতে পারলো না আয়ান,অনেক কষ্ট হচ্ছে আজ আয়ানের,পারছে না কোনো কিছু মেনে নিতে আর, তাই ঘরের জিনিস ভাঙচুর করতে শুরু করেছে, ইচ্ছেমতো তাই ভাঙচুর করেই নিলো অতপর আবার বেড়িয়ে গেলো কোথাও।

আঁখি চুপচাপ বসে আসে তখনি আদৃত ওর পাশে এসে বসলো,খানিক্ষন পিনপিন নিরবতা কাজ করলো ওদের মধ্যে তারপর নিরবতা কাটালো আঁখি।

আমি দুঃখীত ড.আদৃত,বার বার আমার কারনেই আয়ান আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে।

আপনি কেনো দুঃখীত বলছেন মিস আঁখি,আয়ান লোকটাই এমন নিজের চাহিদা সম্পর্কে কোনো যথেষ্ট জ্ঞান নেই উনার,খাপছাড়া মানুষগুলো যে এমনই হয়,এতে আপনার কি দোষ,এবার চলেন খেয়ে নিন।

হুম চলেন।

আঁখি উঠে চলে যায়,আদৃত আসার পর ফ্রেস হলেও এখনও চেঞ্জ করে নি তাই ভাবলো চেঞ্জ করে আবার অল্প ফ্রেস হয়ে খেতে যাবে সেই ভাবনাতে কাবার্ড খোললো নিজের কাপড় বের করতে তখনি ভুলবশত আঁখির ব্যাগে হাত লাগলে তা নিচে পড়ে যায়, ব্যাগটার চেন খোলা ছিলো হয়তো আঁখি তা খেয়াল করে নি যার পরিনাম স্বরুপ ব্যাগের ভিতর থেকে বেড়িয়ে আসে সব জিনিসপত্র, আদৃত সেসব তুলতে নিলে ওর হাতে লাগে কিছু ওষুধ, যা দেখে আদৃত হতবাক হয়।

আরে এই ওষুধগুলো মিস আঁখির ব্যাগে কি করছে?এগুলোতো…….

আদৃতের মনে সন্দেহ জায়গা করে নেয় খনিকে,তবে কি আঁখি কিছু লুকিয়ে যাচ্ছে সবার থেকে,বার বার মাথা ঘুরা,মাথা ব্যাথা হওয়ার সিনড্রম আর এখন এই ওষুধগুলো তা তো একটা দিকেই ইঙ্গিত করছে,এছাড়া সেদিন আঁখির টেস্ট করাতেও না চাওয়া এবার সন্দেহটা আরও প্রখড় করলো আদৃতের, যা ভয়ের সৃষ্টি করছে ওর মন পিঞ্জরে।কিছু একটা ভেবে আদৃত ওষুধগুলো লুকিয়ে নিলো।

____________________

চার-পাঁচ ঘন্টা পর আয়ান বাড়ি ফিরেছে একদম মাতাল অবস্থায়, হাঁটতেও পারছে না ঠিকমতো,হেলেদুলে হেঁটে এসে কলিংবেল বাজালো,একজন কাজের লোক দরজা খুলে দিলে ঘরে ঢুকতে নিলে পড়তে নিলো আয়ান তখনি লোকটা ওকে ধরলে আয়ান ঝাটকা দিয়ে লোকটাকে ছাঁড়িয়ে নেয়।

ডন্ট টাচ মি,আমি ঠিক আছি আমার কারো সহানুভূতির দরকার নেই,আমি ঠিক আছি,একদম ঠিক।তারপর একা একা যেতে নিয়ে কয়েকবার পড়লো অতপর কোনোরকম রুমে চলে গেলো,ঘরে দুজন কাজের লোক মাত্র দুজন স্বামী স্ত্রী,ওরা দুজন গেলো ওর সাথে,আয়ান বিছানার উপর চিত হয়ে পড়ে রয়েছে,এক হাতে এখনও মদের বোতল,এদিকে পুরো জ্ঞানে নেই ও,বিড় বিড় করে বলছে।

আঁখি তুমি কেনো এমন করলে?আঁখি, আঁখি আসো না আমার কাছে,কথা বলো না আমার সাথে,পাশে থাকো আমার,আমার যে আজ বড্ড একা লাগছে,আঁখি। আঁখি।

এদিকে আয়ানের এমন হালে চিন্তিত স্বামী স্ত্রী দুজনই,লোকটা মদের বোতল নিয়ে নিলো,তারপর দুজন মিলে ওকে ভালো করে শুইয়ে দেয়।

ওগো ছারের তো দেহি অনেক জ্বর মেডামরে কল করমু।

হো তাই করি।

ওরা মাহিকে কল করে বললে মাহি বললো ডাক্তার ডেকে এনে ওকে দেখিয়ে দিতে, তারপর আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিলো যেনো ওর কোনো যায় আসে না এতে।

এহন কি করুম?

ডাক্তাররে খবর দেই,তাছাড়া তো আমরা ছারের আর কোনো আত্নীয়রে ছিনি না,স্যার কোন আঁখির নাম নিতাছে উনারে ও তো ছিনি না,ডাক্তারেই কল করি।

তারপর ওরা ডাক্তার ডেকে আনে ডাক্তার আয়ানকে দেখে ওষুধ দিয়ে যান।আয়ানের নেশা এখনও নামে নি খনিক পর পর আঁখি বলে বলে ডেকে উঠছে।

আঁখি খেয়ে এসে নিজের ওষুধগুলো খুঁজে পাচ্ছে না তাই পাগলের মতো খুঁজতে লেগেছে,এদিকে আদৃত বিছানায় বসে ওর সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে,ওর ছটফটের কারনও আন্দাজ করতে পারছে।

কোথায় রাখলাম ওষুধগুলো পাচ্ছি না কেনো?সময়মতো না খেলে যে মাথা ধরবে অনেক,এখন তো আশেপাশে কোনো ওষুধের দোকানও খোলা পাবো না,কি যে করি? কোথায় যে রেখেছি?

আঁখির ভাবনাতে ছেঁদ ঘটিয়ে ললাটে সন্দেহের ভাজ ফেলে গম্ভীর কন্ঠে আদৃত ওকে প্রশ্ন করলো।

কি খুঁজছেন মিস আঁখি?
আঁখি আমতা কন্ঠে বললো কিছুনা তারপর গিয়ে সোফায় শুয়ে পড়লো,কিছুসময়ের মধ্যেই আঁখির মাথাধরা শুরু হয়ে গেলো,আঁখি নিজেকে স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেও পারছে না,আস্তে আস্তে ব্যাথা বাড়ছে,এবার অতিরিক্ত ব্যাথায় আঁখি ছটফট করতে শুরু করেছে,বার বার বালিশ চেপে ধরছে মাথায়,হাত দিয়ে কপাল ঘষছে পারছে না আর সহ্য করতে হঠাৎ আদৃত এসে প্রকট হলো ওর সামনে,এক হাতে পানি আর অন্য হাতে কয়েকটা ওষুধ, ওগুলো নিয়ে স্বাভাবিকভাবে বললো।

খেয়ে নিন।

আঁখি আর দুদিক ভাবলো না,পীড়া কমাতে ঝট করে ওষুধগুলো হাতে নিয়ে খেয়ে নিলো,ব্যাথা কমতে সময় লাগবে আঁখি জানে তাই কোনোরকম কষ্ট সহ্য করার চেষ্টায় আছে,বর্তমানে আর অন্য কিছু খেয়াল করার অবস্থায় ও নেই,আদৃত ওকে সোফাতে শুইয়ে দিলো পরম যত্নে, তারপর নরম কন্ঠে বললো।

শুয়ে থাকুন কিছু সময় নড়াচড়া করবেন না একটু সময়ে ব্যাথাটা নেমে যাবে,ব্যাথায় আঁখির হাত পা গুলো কাঁপতে শুরু হয়েছে,অধরগুলোরও কাঁপন থামছে না,আদৃতের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছে আদৃতও ওকে যথেষ্ট সাহস জোটাচ্ছে,অনেকক্ষণ পর আঁখি স্বাভাবিক হয়,ব্যাথা কমে গেছে এখন,যার ফলস্বরূপ উপস্থিত মুহুর্তের অবস্থা বুঝতে সক্ষম হচ্ছে আঁখি,আদৃত ওষুধগুলো এনে দিয়েছে, কিন্তু আদৃত ওগুলো কোথায় পেলো? আর কি করে জানলো আঁখির এই ওষুধগুলো প্রয়োজন?প্রশ্নবোধক চাহনিতে আঁখি চেয়ে আছে আদৃতের পানে আদৃত এবার স্বাভাবিক স্বরে বললো।

আমি দুঃখীত,আমি চাই নি আমার জন্য আপনার কষ্ট হোক,কিন্তু সত্যটা জানতে গিয়ে এমনটা হয়ে যাবে কখনো ভাবি নি,আমি সত্যিই অনেক দুঃখীত,তবে সত্যটা তো আমি জানতে পেরে গেছি,এখন রোগটার নাম আমি আপনাকে বলবো না আপনি আমাকে বলবেন?

মা মা মানে,কোন রোগ? কিসের রোগ?আমার কোনো রোগ হয় নি?

আমতা আমতা করবেন না মিস আঁখি,আমি একজন ডাক্তার,আর ওষুধগুলো সম্পর্কে আমি ভালো করে জানি,এই ওষুধগুলো ব্রেন টিউমারের রোগিদের দেওয়া হয় মিস আঁখি যেগুলো আপনি এই মাত্র সেবন করলেন,আপনি কি এখনও চুপ থাকবেন।

আঁখি কিছু বলছে না,মাথা নিচু করে ঠায় বসে আছে।

চুপ করে বসে আছেন কেনো মিস আঁখি?বলেন কবে থেকে এই রোগটা ধরা পরেছে?আপনি সবার কাছ থেকে কেনো লুকিয়ে যাচ্ছেন এটা?বলেন মিস আঁখি চুপ করে আছেন কেনো বলেন?

হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ আমার ব্রেন টিউমার,৬ মাস ধরে আমি এটার সাথে লড়াই করছি,টিউমারটা অনেক আগ থেকেই আমার মাথায় প্রায় ১ বছর, সংসারের চাপ সামালতে গিয়ে নিজের দিকে খেয়াল করতে ব্যার্থ হই আমি যার কারনবশত এর সিনড্রোমগুলো এড়িয়ে যাই আর এখন এমন সময় এসে খেয়াল করতে পেরেছি যে সময়ে এর থেকে বেঁচে যাবো বলে কোনো নিশ্চয়তা নেই,ডাক্তার বলেছেন বাঁচার চান্স ৩০ পার্সেন্টও নেই,যখন তখন আমার সাথে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে,এখন আপনি বলেন কি করে বলতাম সবাইকে এ কথা,আর কাকেই বলতাম,আয়ানকে বলে লাভ নেই,আয়েশা আর মা এটা শুনলে নিজেরাই ভেঙে পড়বেন,তাজবীর কি করবে কে জানে আর বাকি রইলেন আপনি আর আপনার পরিবার,আপনাদের আমি শুধু শুধু দুঃশ্চিতায় ফেলতে চাই নি।কারো উপর বোঝা আমি হতে চাই না।

আর ইউ সিরিয়াস মিস আঁখি,আপনি বুঝতে পারছেন আপনি কি বলছেন,১ বছর হয়ে গেছে যার চার মাস
আপনি তা বুঝতেই পারেন নি আর এখন পার্সেন্টেজ
৩০ থেকেও কম,এর মানে জানেন আপনি?আপনি আমাকেও বলতে পারতেন।নিজে সবার জন্য সব করবেন আর অন্যরা কিছু করতে চাইলে তাকে নিজের উপর সহানুভূতি ছাড়া কিছুই মনে করবেন না,অবিশ্বাস্য।আজ থেকে আপনার চিকিৎসা আমি করবো,এটার দায় ভার শুধু আমার ঘাড়ে থাকবে,আর আপনার কোনো জেদকে এখানে কাজ করতে দিবো না আমি,ইট’স মাই প্রোমিজ টু ইউ,আর আজ থেকে আপনি বেডে ঘুমাবেন,কারন আপনার জন্য খোলা আর বড় জায়গায় ঘুমানো দরকার।

আপনি বললেই হলো আমি বেডে ঘুমাবো না।

আপনাকে ঘুমাতে হবে।

কি করছেন? ছাড়েন আমায়।

আদৃত ঝট করে আঁখিকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শুইয়ে দিলো,আঁখি উঠতে চাইলে।

একদম উঠবেন না,নইলে এখনই আয়েশা,মিরা আন্টি আর তাজবীরকে সত্যটা বলে দিবো।

আপনি আমাকে ব্লেকমেইল করছেন?

ওটাই মনে করেন,এটা ছাড়া আমার কাছে আর কোনো রাস্তা নেই আপনাকে কথা শুনানোর,নাও স্লিপ,সকালে উঠে আগে আমার সাথে হাসপাতাল যাবেন।

আঁখি মুখে একরাশ বিরক্তি নিয়ে আদৃতকে মুখ বাকিয়ে ভেংচি কেটে শুয়ে পড়লো।

এদিকে আদৃতের মন ভরে উঠছে হরেক রকম দুঃশ্চিতায় যা শুধু আঁখিকেই নিয়ে।

____________________

সকালের মিষ্টি রোদ মুখে এসে আপছে পড়লে আঁখির ঘুম ভেঙে যায়,মিষ্টি হাসি উপহারে দিয়ে আঁড়মোড়া ভেঙে উঠে পড়ে আঁখি,চোখ খুলতেই দৃষ্টি পড়ে আদৃতের উপর,বিছানার সামনেই একটি চেয়ারে বসারত অবস্থায় ঘুমিয়ে আছে সে,মুখটা আঁখির পানে করা, যেনো সারারাত ওকেই দেখছিলো….. অপলকে,আঁখির ঠোঁটের কোনে অজানা এক ভালোলাগার হাসি ফুঁটলো কারনটা যেনো সাত সকালে আদৃতের দ্বিধার করতে পেরে,উপস্থিত মুহুর্তে বড্ড ভালো লাগছে আঁখির আদৃতকে দেখতে,এতো খেয়াল করে আঁখি এর আগে আদৃতকে দেখে নি,ললাটে চিন্তার রেশ,গালে খোঁচা দাঁড়ি ফর্সা গালে যেনো বড়ই মানানসই,ললাটে সামনের কিছু চুল আপছে পড়ে আছে,বাইরের বাতাসে দোল খাওয়াচ্ছে আদৃতকে যার ফলস্বরূপ ওর ঘন ছোটো চুলগুলোও খনিক খেলতে ব্যাস্ত,যা দেখতে আঁখির ভালোই লাগছে,বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে আঁখির উঠে গিয়ে আদৃতের মুখখানি অল্প ছুঁয়ে দিতে,আগত বাতাসের তেজে উস্কো হয়ে যাওয়া চুলগুলো নিজের আলতো হাতে ঠিক করে দিয়ে আসতে,ভাবনার টানে আঁখি যেনো আগ পিছ সব ভুলে গেলো উঠে গেলো ভাবনাটাকে পুরণ করতে,যেই আদৃতের মুখ ছুঁতে যাবে তখনি আঁখির মনে ধরা দিলো কিছু কথা।

এসব আমি কি করছি?আমি আবার কারো মায়ার পড়ে যাচ্ছি না তো?না,না এমনটা কখনো হতে পারে না,আঁখি কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ,আট বছর আগের ভুল আবার করতে যাস না,আর তাছাড়া সে ভুল করার যথেষ্ট ক্ষমতা আর অধিকার দুটোই তোর নেই।

উক্ত ভাবনায় আঁখি গুটিয়ে নেয় হাত আর উল্টো পায়ে চলে যায় ফ্রেস হতে।

আয়ানের নেশা কেটে গেছে এবার।ঘুম থেকে উঠে অনেক মাথা ধরেছে ওর,সাথে মনে পড়তে শুরু হয়েছে সব করুন সত্য যা ওর মাথা ধরার পরিমান আরও বাড়িয়ে তুলছে।বার বার নিজের বাচ্চাকে হারানোর ব্যাথাটাই বেশি মোচড় দিচ্ছে ওর মনের কোনে।এদিকে কোথাও কেউ নেই সে দুই কাজের লোক ছাঁড়া,বাড়িটা শুধুই একটা বন্ধ কুটির থেকে বেশি কিছু মনে হচ্ছে না ওর,আজ বড্ড একা লাগছে আয়ানের,মনের মধ্যে বড়ই লোভ জাগছে যদি এখন আঁখি পাশে থাকতো তবে কোনো একাকিত্ব, কোনো নিরাশা গ্রাস করতে পারতো না ওকে,আঁখি সব কিছু নিমিষেই উড়িয়ে দিতে,আঁখি মানেই তো ছিলো সব কিছুর সুন্দর সমাধান,আঁখির কথা মনে পড়তেই আয়ানের চোখে জল খেলা করতে শুরু করলো,চারিদিকে শুধু শুন্যতা কাজ করতে লাগলো।

আয়েশা এদিকে নিজের ডায়েরি খুঁজে পাগল।

যখনি দেখেছি হয়েছি দিশেহারা,জানতাম না সে অনুভুতির মানে,আগে যে কখনো আসে নি তা অনুভবে,জানা ছিলো কি এই পাগলামি টা আমায়ও করবে গ্রাস? যার নাম হয়তো ভালোলাগা,তবে যে তা না,এটা যে ভালোবাসা,ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি।

হ্যাঁ আপনাকে ভালোবাসি নো…….

দে ওটা, ওটা কোথায় পেলি তুই?ফাজলামোর একটা সীমা থাকে আঁখি।

হা হা হা,আমার দোস্ত ক্ষেপেছে,উনার লুকন্ত অনুভুতি যে ধরা পড়েছে,নোমান সাহেবকে মন দিয়েছেন উনি,আমার কাছ থেকে কখন কথা লুকাতে শিখলি শুনি।

আরে তা নয়,আমি উনাকে ভালোবাসি তবে সেটা আমি কাউকে জানাতে চাই না এমনকি উনাকেও না,এটা আমার মনে সারাজীবন লুকন্ত থাকবে।

চলবে………….

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩০

একাকিত্বে অনেক ভাবনাই কাজ করছে আয়ানের ভিতর,যা বেদনার সৃষ্টি করছে মন পিঞ্জরায়।নিজের করা ভুলগুলো যেনো অনেকাংশে ধরা দিচ্ছে মনে।
কেনো মাহি এমন করলো ওর সাথে,কেনো বাচ্চাটাকে মেরে ফেললো,কি দোষ ছিলো ওই নিষ্পাপ প্রাণের,তবে আয়ানও যে একদিন ঠিক একই কাজ করেছিলো,সেদিন তো আঁখিও বাচ্চা নিতে চেয়েছিলো আর আয়ান ওকে সেই নিষ্পাপ প্রাণকে মেরে ফেলতে বাধ্য করেছিলো,তবে কি সেদিন আঁখিরও এমন কষ্ট হচ্ছিলো?কিন্তু আয়ান তো তখন নিজের কেরিয়ারের জন্য এমনটা করেছিলো,তা কি খুব বড় ভুল ছিলো,সেটা যদি ভুল না হয় তবে তো মাহির করা কাজটাও ভুল না,ও ওতো নিজের কেরিয়ার,নিজের ফিটনেস, অনেককিছুই ভেবেই বাচ্চা নেয় নি যার পিছন ওর যথেষ্ট যুক্তি আছে, তবে কি নিজেদের জন্য অপরের মনের কষ্টানুভুতি অদেখা করা সত্যিই যুক্তিযুক্ত,কিন্তু সে জিনিসটা যে নিজের ক্ষেত্রে মোটেও মেনে নিতে সক্ষম হচ্ছি না আয়ান।আঁখি পাশে থাকলে কি খুব বড় ক্ষতি হয়ে যেতো ওর,নিজেই ওকে সরিয়ে দিলো, মনটা যে ভরে উঠেছিলো আঁখির উপর থেকে, তবে আজ কেনো বার বার ওর ধিদ্বার করতে চাইছে আয়ানের অবাধ্য মন তা বুঝতে ব্যার্থ হচ্ছে আয়ান,একাকিত্বে বসে এসব কথা আনমনে ভেবে যাচ্ছে।

কেনো বলবি না উনাকে কোনোদিন?ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো আঁখি।

দেখ আমি উনার ঘরের সামান্য কেয়ারটেকার মাত্র,তাছাড়া আমার মনে হয় উনার জীবনে অন্য কেউ আছে,সব মিলিয়ে আমার মনের কথা উনাকে বলার প্রশ্নই উঠে না,এই সুপ্ত অনুভুতি থাক না অজানা দোষ কি তাতে?

দেখ আয়েশা তোর বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবে আমি তোকে একটা কথাই বলতে পারি,নোমান সাহেবের মতো লোক কারো সাথে কোনো সম্পর্ক রাখতে স্ট্যাটাস খুঁজবেন না অন্ততো,আর যেখানে কথা উনার জীবনে অন্য মেয়ে নিয়ে এটা তো তুই উনাকে তোর মনের কথা জানানোর আগে জিজ্ঞেস করলে পারিস,এমনও তো হতে পারে উনার জীবনে অন্য কেউ নেই,দেখ সময় থাকতে মনের কথা বলে দে নইলে পড়ে অনেক দেড়িও হয়ে যেতে পারে।ভালোবাসা তো আর পাপ না,পরে না আবার তোকে কষ্ট পেতে হয়।

না রে যদি আমি কথাটা উনাকে বলি আর উনি আমায় ভুল বুঝেন,পরে বর্তমানে যে সম্পর্কটা আমাদের মধ্যে আছে ওটাও না নষ্ট হয়ে যায়,তার থেকে এখন যেমন আছি তেমন ভালো।

হুম দেখ তোর যা ইচ্ছে কর, আমি তোর সাথে আছি।

এদিকে আদৃত আঁখিকে খুঁজে খুঁজে পাগল।হঠাৎ খুঁজে পেলো আঁখিকে।

এই যে আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায় না কেনো? কোথায় থাকেন?চলেন আমার সাথে।হাসপাতাল যাবো।

আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না,এখন ভার্সিটি টাইম না সো আপনার সাথে এখন ওখানে যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না?

দেখেন আপনি যাবেন না কি,আমি শেষবার জিজ্ঞেস করছি।

যাবো না আমিও শেষবার বলছি।

ঠিক আছে।

একি করছেন ছাড়েন আমায়,ছাড়েন।

ভালোয় ভালোয় হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছি বেশি জেদ করলে সবার সামনে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যাবো পরে আবার আমায় দোষারোপ করবেন না যে ওয়ার্ন করি নি।

আপনি মোটেও সুবিধার লোক না।

ও আমি জানি আমি কেমন আপনাকে সে নিয়ে ভাবতে হবে না।এবার চলেন।

আদৃত আঁখিকে নিয়ে এলো হাসপাতালে, তারপর ওর বিভিন্ন টেস্ট করালো,আঁখি মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।

দেখেন মি.আদৃত আপনি জোর করে তো আমায় আর বাঁচিয়ে তুলতে পারবেন না,আগের রিপোর্টগুলো তো আছে আবার নতুন করে টেস্টের কি দরকার,সে রিপোর্ট অনুযায়ী তো আমি ওষুধ সেবন করছি।

দেখেন ডাক্তারি পড়ছেন এখনও ডাক্তার হন নি তাই আমার কাজে নাক গলাতে আসবেন না।

ইতিমধ্যে রিপোর্ট আসলো, আদৃত রিপোর্টগুলো দেখে চিন্তামগ্ন হলো অনেক।আঁখি ভ্রুযোগল কুঁচকে তাকিয়ে আছে ওর পানে।

এই যে ডাক্তার সাহেব কি দেখলেন,সেই ৩০% থেকে কম তাই না,শুধু শুধু ডাক্তারি ঝেড়ে কি লাভ হলো,হা হা হা হা।

একদম চুপ,ফাজলামোর সীমা থাকে মিস আঁখি,কি এতো চিন্তা আপনার?আপনার চিন্তার কারনে আপনার অবস্থার উন্নতি হচ্ছে না,মানুষকে জ্ঞান দেওয়া ক্ষেত্রে ঠিক আছে নিজের ক্ষেত্রে খাপছাড়াগিরি না করে থাকতে পারেন না,না কি?

আপনার সাহস হয় কি করে আমাকে ধমক দেওয়ার?আমি মরে গেলে আপনার কি?লোকে সত্যিই বলে যার বিয়ে তার খবর নাই আর পাড়া পড়শির ঘুম নাই।

খবরদার যদি আবার মরার কথা বলেছেন তো,খুব সহজ না আপনার জন্য এসব।আপনি কি মনে করেন আমি আপনাকে মরতে দিবো,আরও একবার যদি মরার কথা বলেছেন না তবে আমি কি করবো আমি নিজেও জানি না,চুপচাপ চলেন ক্লাসের সময় হয়েছে আপনার।

আদৃত আঁখিকে আবার হাত ধরে নিয়ে যেতে শুরু করলো,আঁখি হতবাক আদৃতের এমন প্রতিক্রিয়ায়,ওর সামান্য মরার কথা বলায় আদৃত এতো ক্ষেপে যাবে ভাবে নি,আঁখির এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো যেনো কথাটা আদৃতের ঠিক বুকে প্রহার করেছে, নিজের জন্য একরাশ দুঃশ্চিন্তা আন্দাজ করতে পারলো আঁখি আদৃতের চোখে।
____________________

আয়ান আজ হাসপাতালে এসেছে,আজ কাজের বাহানায় এলেও আয়ানের চোখ শুধু আঁখিকেই খুঁজছে,পুরো ক্লাসে পড়ানোর ফাঁকে ফাঁকে আঁখিকেই দেখছিলো কিন্তু আঁখি একবারের জন্যও ওর দিকে তাকায় না যা আয়ানের মনে আঘাত করে প্রচন্ডভাবে,আজ যেনো আঁখির ওর দিকে এক পলক তাকানোইটা ওর জন্য বিশ্ব জ্বয়ের খুশি এনে দিবে,মনের মধ্যে আজ আর অন্য কোনো চাহনি নেই শুধু চায় আঁখির অল্প সঙ্গ,আঁখি ওর পাশে থাকুক ওর একাকিত্ব দূর করে দিক কিন্তু তা কি আর আদোও সম্ভব।

আয়ান সারাদিন থেকে আঁখির আশপাশ ঘুরছে তবে ওর সাথে কথা বলার হয়তো সাহস নেই,এমনও হতে পারে কথা বলার যথেষ্ট কারনও খুঁজে পাচ্ছে না,তাই শুধু ওকে দেখেই যাচ্ছে,আঁখি ওকে দেখেও যথারীতি না দেখার ভাব করলো।আয়ানও বুঝতে পারলো বিষয়টা যা ওর মনে ব্যাথার্থ অনুভুতির পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দিলো, পরিণামস্বরুপ আয়ানের চোখ বেয়ে জল গড়াতে শুরু করলো,আয়ান যে বড্ড একা,এই একাকিত্ব একমাত্র আঁখিই দূর করতে পারবে সে আশায় ওকে পাশে চেয়েছিলো কিন্তু আঁখি হয়তো তা করতে নারায,আঁখি যে আজ সত্যিই আয়ান থেকে অনেক দূরে তিক্ত এই সত্যটা বড্ড জ্বালাতন করছে আয়ানকে,সত্যটা মেনে নিতে না পেরে চোখের জল মুছতে ব্যস্ত হয়ে হাসপাতালের পিছনের বিস্তর মাঠটার দিকে এগিয়ে গেলো,সেখানের পাতা বহুল হাত পা ছাড়িয়ে বেড়ে উঠা বড় বটগাছটার নিচে আয়ান বসে পড়লো আর মনে করা শুরু করলো আঁখির সাথে কাটানো সুন্দর স্মৃতিগুলো।আয়ানের ব্যাথার্থ অনুভুতি আঁখির চোখ এড়ালো না,ওর কান্না স্পষ্ট দেখতে পেলো আঁখি যার ফলস্বরূপ আঁখিরও একটু খারাপ লাগলো ওর জন্য,কারন আঁখি মাহির ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ভালোই জানে,আয়ানকে যে মাহি কখনোই ভালো রাখবে না তা খুব ভালোই জানতো আঁখি,কিছু একটা ভেবে আঁখি গেলো আয়ানের পিছন,এদিকে আদৃত আঁখিকে চোখে চোখে রাখছে তাই উক্ত বিষয় চোখে পড়লো আদৃতের,আঁখি মাঠটার দিকে গেলে আয়ান আঁখিকে দেখতে পেলো, আঁখিকে দেখে ওর মনের কোনে আশার একটা প্রদিপ যেনো অল্পতে জ্বলে উঠলো,ঠোঁটের কোনে ফুঁটে উঠলো আলতো হাসি।কিন্তু সেই হাসি নিমিষেই বিলুপ্তি পেলো আদৃতের আগমনে,আঁখি আয়ানের দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই আদৃত এসে খপ করে ওর হাত ধরে নিলো।

এখানে কি করছেন মিস আঁখি আপনি?

ওই আসলে ড.আয়ান।

ড.আয়ান কি মিস আঁখি?আপনি এখানে শুধু একজন স্টুডেন্ট তাই ড.আয়ানের জন্য আলাদা কোনো সহানুভূতি দেখানো আপনাকে শোভা দেয় না আর উনার সাথে আপনার কোনো কাজ আছে বলে আমার মনে হয় না,চলেন।

আদৃত আঁখিকে হাত ধরে নিয়ে যেতে নিলো,আঁখি এবার বেশ গম্ভীর স্বরে বললো।

আপনি একটু বেশি পজেজিব হচ্ছেন না আমাকে নি,আমি কিন্তু আপনারও স্টুডেন্ট মাত্র।

না আপনি শুধু আমার স্টুডেন্ট না,আপনি আমার দায়িত্ব,আর এখন আমার পেশেন্টও, আপনি যখন আমাকে ভালো রাখতে আমার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করতে পারেন তখন আমারও অধিকার আছে আপনাকে ভালো রাখতে আপনার ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার।আপনার সব চিন্তার কারন ওই আয়ান যার ফলস্বরূপ আপনার ওর কাছে যাওয়া বিপদজনক, আর আমি আমার পেশেন্টকে এমন কিছু করতে দিতে পারি না যা উনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

রাত হয়ে গেছে আয়ান বসে আছে একা,জীবনে আর যেনো কোনো স্বাদ নেই ওর,সব কিছু যেনো বিস্বাদময়,আঁখি পাশে ছিলো সময় কতো সুন্দর ছিলো জীবনটা,মা বোন আর আঁখিকে নিয়ে সবকিছুই একদম পরিপূর্ণ ছিলো ওর,কিন্তু তার থেকে বেশি কিছু পেতে গিয়ে কি আয়ান সবকিছু হারিয়ে ফেললো,আয়ান তো আধুনিক, স্মার্ট, আর যথেষ্ট উচ্চ স্ট্যাটাস সম্পন্ন বউ চেয়েছিলো যার আঁখির মধ্যে বিলুপ্তি পেলে ওকে ছেড়ে দিলো কিন্তু মাহির মধ্যে তো এসব কিছু পুরোপুরিভাবে বিদ্যমান তবে কেনো আজ মাহিকে আর ভালো লাগছে না?মন কেনো আঁখিকে খুঁজছে?আজ যখন আদৃত আঁখির হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছিলো তখন আয়ানের মনে কি ঝড় উঠেছিলো তা শুধু ওরই জানা আছে,আঁখি তো এখন আদৃতের স্ত্রী, তবে এতেও কেনো এখন খারাপ লাগবে আয়ানের,ঠিকই তো বলেছিলো আঁখি আয়ান বিয়ে করেছে, আঁখিরও কি অধিকার নেই বিয়ে করার?সংসার করার?জীবনে এগিয়ে যাওয়ার?পারছে না আর ভাবতে আয়ান,সব চিন্তা কেমন মিলিয়ে যাচ্ছে, কোনো কিছুরই সমাধান খুঁজে পাচ্ছে না তাই মনের শান্তির লোভে আজকেও মদ্যের বোতলকে সাথি বানালো,ছাঁদের প্রান্তে বসে একের পর এক গ্লাস খালি করছে আর আঁখির কথাই ভাবছে।

এদিকে আঁখি আজ বড়ই বিরক্ত আদৃত নামক যুবকের প্রতি, সকাল থেকে যা তা করছে, আঁখি যেনো কোনো ছয় মাসের বাচ্চা,এমন অবস্থা করছে যেনো ও আজকেই মারা যাবে,খেয়ে এসেছে আঁখি ভেবেছিলো পড়ালেখা শেষ এবার বসে একটু টেলিভিশন দেখবে নয়তো ফোন ঘাটবে কিন্তু এসব কোথায় হতে দিলো আদৃত, এনে দিলো ওকে এক রাশি ওষুধ খেতে বললো ওকে আঁখিও ভালো মেয়ের মতো খেয়ে নিলো সব,এবার টিভি দেখতে গেলে ওকে তা দেখতে দিলো না ওর নাকি প্রোপার রেস্ট প্রয়োজন,আঁখি না মানলে টিভির পিছনের লাইনটাই ছিড়ে দিলো,আঁখি ফোন ঘাটতে নিলে ফোনটাও নিয়ে নিলো,আঁখি রেগে বাইরে চলে যেতে নিলে ওকে জোর করে কোলে নিয়ে এনে বেডে বসিয়ে দিলো আঁখি এবার অতিরিক্ত রাগে আদৃতের বুকে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারতে লাগলো আদৃত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে যেনো এতে ওর কোনো যায় আসে না।

আপনি আমার সাথে ফাইট করেন,আমাকে গালি দেন মারেন কিন্তু নিজের খেয়াল রাখেন,একটু ডিসিপ্লিন আপনাকে জীবন দান করতে পারে মিস.আঁখি।

দেখেন ড.আয়ান আমার এভাবে বন্ধি লাগছে,আমি মুক্ত পাখির ন্যায় উড়তে চাই, জীবনটা কতো সুন্দর আমি তা উপভোগ করতে চাই,এভাবে ডিসিপ্লিন মানতে গিয়ে যদি মৃত্যুর দিন টা এসে যায় তবে মরনটাকে যে বড্ড আফসোসের সাথে মেনে নিতে হবে আমায়।

স্টপ ইট মিস আঁখি,আপনার মতো মেয়ে কোনো কিছুর কাছে এভাবে হার মেনে যাবে ভেবেই আমার অনর্থক লাগছে কথাটা, আপনি একজন সংগ্রামী ব্যক্তিত্ব,যে সমাজের হাজারজন লোকের প্রতিবাদে একাই একশো সেই মেয়ে একটা ছোট্ট রোগের কাছে এভাবে হার মেনে যাবে তা শুনলে সত্যিই হাস্যকর লাগে,আপনাকে বাঁচতে হবে মিস আঁখি,নিজের জন্য,আয়েশা, মিরা আন্টি আর তাজবীরের জন্য,আমাদের সবার জন্য।

সেই আমাদের মধ্যে কি আপনিও আছেন ড.আদৃত?

আদৃত সহানুভূতিময় ছোঁয়ায় আঁখির গালে হাত রেখে কথাগুলো বললে আঁখিও যেনো আদৃতের কথায় হারিয়ে যায় অল্পতেই,ঘোরের ঘরে বোকার ন্যায় প্রশ্নটা করে বসে আদৃতকে,যার ফলস্বরূপ দুজনই খানিকক্ষণ চুপচাপ থাকে একে অপরের পানে তাকিয়ে অতপর পরিস্থিতির বেগ মাথায় গেলে দুজনই নিজেদেরকে স্বাভাবিক করে নেয়।আঁখি আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে।
_____________________

চৌধুরী বাড়িতে পড়েছে ভ্রুমনে যাওয়ার হৈচৈ, প্রতিবছর ওরা কোথাও না কোথাও ভ্রুমনে যায়,বেশিরভাগ দেশের বাইরে ঘুরতে যায় তবে এবার দেশের ভিতরই কোথাও যাবে,জায়গা সিলেক্ট করা হলো রাঙামাটি, সায়েদা তো নেচে পাগল,আয়েশা একসাইড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে তখনি নোমান এসে বললো।

কি মিস আয়েশা ভ্রুমনের নাম শুনে মুখটা ফ্যাকাশে হলো কেনো আপনার? জায়গা পছন্দ হয় নি বুঝি?

আসলে তা না,আপনারা ভ্রুমনে যাবেন, আপনাদের পছন্দ হতে হবে আমার পছন্দ দিয়ে কি হবে এখানে? তাছাড়া রাঙামাটি জায়গাটা আমারও খুব পছন্দ।

আরে বলেন কি আপনি? আমরা যাবো মানে?আমরা পুরো ফ্যামিলি যাবো যেখানে আপনি আন্টি আর আঁখিও আছেন।

আরে না না, তা কি করে হয়?আপনার মন বড় এজন্য এমনটা বলছেন,আপনাদের ফ্যামিলি ট্রিপে আমাদের নাম আসবে কেনো?

পর করে দিলেন তো,সত্যিই আপনার কথায় অনেক কষ্ট পেলাম আজ, আমি বা আমার পরিবার কখনোই আপনাদের পর কেউ ভাবি নি,যদি আপনারা না যান আমিও কিন্তু যাবো না এই বলে দিলাম।

নোমানের কথার উপর আর না করতে পারলো না আয়েশা রাজি হয়ে গেলো,এদিকে আঁখি জানতে পেরেছে আদৃত কখনো এসব ফ্যামিলি ভ্রুমনে পার্ট নেয় না কাজ নিয়ে পড়ে থাকে,অন্য সময় হলে আঁখি ওকে টেনেটুনে ভ্রুমনে পাঠাতো একটু ভালো থাকার উপায় হিসেবে কিন্তু এখন আঁখির অন্য ফন্দি, আদৃতের হাত থেকে দু-তিনদিনের জন্য বাঁচতে আঁখি ফন্দি করলো সবার সাথে ভ্রুমনে চলে যাবে যা আন্দাজে গেলো আদৃতের,তাই সবাইকে অবাক করে দিয়ে আদৃত বললো।

আমি এবার সবার সাথে ভ্রুমনে যাবো,হাসপাতাল থেকে ছুটি আমি নিয়ে নিয়েছি,আর ভ্রুমনের সব দায়িত্বও আমিই নিলাম।

সবাই আদৃতের কথা শুনে অবাক হবার সাথে সাথে অনেক খুশিও হলো,এদিকে আদৃত ঠোঁটের কোনে ডেবিল স্মাইল টাঙিয়ে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে।

কি মনে করেছিলেন মিস আঁখি পালিয়ে বাঁচবেন?আপনার জেদ সম্পর্কে ভালোই জানা আছে আমার,আর আপনি জেদি হলেও আমিও কিছু কম নয়।
মনে মনে বললো আদৃত।

উল্লুকটাকে যে কোন মাটি দিয়ে বানানো হয়েছে একমাত্র আল্লাহ জানেন,বাঁচানোর নামে মারতে লেগে গেছে আমায়,সুযোগ বুঝে এর মাথায় কয়েকটা কাচের বোতল ফাঁটিয়ে দিতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার বড্ড।

পরশু সবাই ভ্রুমনে যাবে ডেইট ফিক্স হলো।

এদিকে সায়েদা লুকিয়ে কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।

কি রে তোদের যে কাজ দিয়েছিলাম তা হয়েছে?

হ্যাঁ হয়েছে,ব্যাটাকে এমনভাবে মেরেছি যে এখন হাসপাতালের বেডে পড়ে আছে,বাঁচবে কি না সন্দেহ।

হোয়াট,এটা কি করলি তোরা? আমি তো শুধু উনাকে একটু ধমকাতে বলেছিলাম যাতে আমার সাথে আর না লাগেন। তোরা উনাকে মারলি কেনো?এখন কি অবস্থা উনার?কোন হাসপাতালে আছেন উনি?

দেখ তোর কথামতো কাজ করেছি আমরা,তোর বন্ধু হবার দায়িত্ব পালন করেছি,এমন মার দিয়েছে বাঁছাকে মনে হয় বেঁচে গেলেও আর হাঁটতে পারবে না,অবস্থা খারাপ,আমরা হাসাপাতালের ঠিকানা পাঠাচ্ছি মেসেজ করে চলে আয়।………..
ফোনটা রেখে দিলো।

এ কি করলাম আমি,আমি তো এমন কিছু চাই নি,তাজবীর সাহেবের কিছু হয়ে গেলে কি করে ক্ষমা করবো নিজেকে।

সায়েদা ছুটে চলে গেলো বাইরের দিকে।

চলবে……………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here