মন_পিঞ্জর,৩১,৩২

0
803

#মন_পিঞ্জর,৩১,৩২
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩১

আয়ান নিজের লাগানো লোক লাগিয়ে জানতে সক্ষম হয়েছে যে আঁখি আদৃত ভ্রমণে যাচ্ছে এমনকি ওদের পরিবারের সবাইও,কথাটা শুনেই ওর গা জ্বলে উঠলো।

ভ্রমণে যাওয়া হচ্ছে,ছাড়বো না আমি ওই আদৃতকে,আঁখিকে বিয়ে করার সাহস আসলো কোথা থেকে ওর,আর এখন ওকে নিয়ে ভ্রমণ যাওয়া,রাঙামাটি যাওয়া হচ্ছে তাই না।দেখে নিবো।

দেখেন ড.আদৃত একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না এবার,আমি তো সব নিয়ম মেনে চলছি কিন্তু আপনি একটু বেশিই করছেন,সারাদিন রুটিন মেনে চলতে হচ্ছে আমায়,খেতে গেলে নিয়ম শুতে গেলে নিয়ম, এমনটা মনে হচ্ছে আমি যেনো আপনার পোষা প্রাণী,আরে বাবা এতো নিয়মের কি আছে,আমার আয়ু যতটুকু আছে ততোটুকু নিয়ে তো বাঁচবো, তাই না।

খাবার আর ওষুধ খেয়ে আঁখি আয়েশার সাথে আড্ডা দিতে যেতে চাইলে আঁখিকে রেস্ট করানের সুবিধার্তে আদৃত রুমে নিয়ে যাচ্ছিলো আর রিরক্ত হয়ে আঁখি এসব কথা বলছিলো তৎক্ষনাৎ ওর মাথা ঘুরলো অনেকটা বেশি, যাতে আঁখি সাথে সাথে পড়তে নিলো,আদৃত যেহেতু ওর হাত ধরা ছিলো তাই আর ও ওকে পড়তে দিলো না,কোলে তুলে নিলো তৎক্ষনাৎ তারপর রুমে নিয়ে গিয়ে বিছানায় শুয়ালো।আঁখি ভালো করে তাকাতেও পারছে না।

এখন কোথায় গেলো আপনার তেজ?কি হয়ে যাবে আপনার নিজের একটু বেশি খেয়াল রাখলে,হ্যাঁ আয়ু তো আল্লাহ প্রদত্ত,কিন্তু তাই বলে কি বাঁচার চেষ্টা ছেঁড়ে দিতে হবে?এমনটা হলো তো আর পৃথিবীতে হাসপাতাল থাকতো না,ডাক্তার থাকতো না,আমাদের সবাইকে আমাদের কাজ করা উচিৎ বাকিটা আল্লাহর হাতে,এবার চুপচাপ শুয়ে থাকেন,মাথা নাড়াবেন না,আপনার দুঃশ্চিতার কারনে টিউমারটার ভয়াবহতা বাড়ছে,তাই আপনার ঘন ঘন মাথা ঘুরছে, খুব জলদি আপনার ওপারেশন করতে হবে কিন্তু এর আগে আপনাকে এই অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে যার জন্য আপনার বাঁচার পার্সেন্টেজ মাস্ট বি ৪০% এর উপর হতে হবে আর তাই এতো নিয়ম বুঝেছেন।এবার রেস্ট করেন।

সায়েদা ছুঁটে যায় হাসপাতালে, কেবিনে ঢুকে দেখে তাজবীর শুয়ে আছে হাতে পায়ে ব্যান্ডেজ করা,ওকে দেখে ডাক্তার বললেন রোগী আর বাঁচবে না,তাজবীর অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে আছে,সায়েদা এবার অতিরিক্ত ভয় আর অনুশোচনায় কাঁদতে লাগলো, তাজবীরের পাশে বসে বেশ শব্দ করেই কাঁদছে আর বলছে।

তাজবীর সাহেব,ও তাজবীর সাহেব উঠেন না,প্লিজ আপনি মরবেন না,আমি চাই নি আপনি মরে যান,প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন,আপনি মারা যাবেন না।
সায়েদা কাঁদতে কাঁদতে বেহাল দশা বানিয়ে ফেলছে,তাজবীরের হাত ধরে ধরে কাঁদছে,এবার আবার হাসতে হাসতে উঠে পড়লো তাজবীর, অবিরত হেসেই যাচ্ছে,হাসতে হাসতে নিজের শরীরের সব বেন্ডেজ খুলে খাঁড়া হলো সায়েদার সামনে, সায়েদা ভ্যাবাচ্যাকা হয়ে তাকিয়ে আছে ওর পানে,এবার তাজবীর ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে গেলো পাশের কেবিনে,সেখানের তিন সিটে ওর তিন বন্ধু ভর্তি,হাতে পায়ে তিনজনেরই ব্যান্ডেজ,সায়েদা ছুঁটে গেলো ওদের কাছে।

তোদের এ হাল কে করলো?কি করে হলো এসব?সায়েদা তাকালো তাজবীরের পানে প্রশ্নসুচক চাহনিতে।

কি হলো সায়েদা?ভেবে পাচ্ছো না কি হয়েছে?আরে এমনি কি আর টিউবলাইট বলি,তুমি একবারও ভাবো নি বাবা আঁখিকে কারাতে শিখিয়েছে আমাকে শেখাবে না এমন হতে পারে।তাছাড়া এই বডিশডি তো আর আমি এমনি এমনি বানিয়েছি না যে তোমার ওই মশার ন্যায় হেংলা তিনটা ফ্রেন্ডকে উড়াতে পারবো না,হা হা হা,আমার সাথে টক্কর নিতে এসো না কারন আমার সাথে টক্কর দেওয়ার মতো ক্ষমতা তোমার নেই মিস টিউবলাইট। তাছাড়া মারা যাবেন না মারা যাবেন না বলে কাউকে বাঁচানো যায় না,চিকিৎসা করতে হয় নয়তো করাতে হয়,ডাক্তার হবেন সো এসব শিখে নিবেন।হা হা হা হা

তাজবীর হাসতে হাসতে চলে গেলো,আর সায়েদা হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ওর যাওয়ার পানে,ওর বন্ধুদের জিজ্ঞেস করলে ওরা বললো তাজবীর ওদের মেরে এখানে ভর্তি করিয়েছে তারপর ওদের দিয়ে কল করিয়ে সায়েদাকে আনিয়েছে।সায়েদা এবার মনে মনে আবারও কঠিন একটা পণে আবদ্ধ হলো।

আবারও আমায় ভ্যঙ্গ করে গেছে,উল্লুকটাকে উপযুক্ত জবাব তো আমি দিবো,তা না হলে আমার নামও সায়েদা না।

শুরু হলো রাঙামাটির সফর,আদৃত আর নোমান প্লেনে আসতে চাইলেও বাকি সবাই বাই রোড আসতে চাইলো,সে হিসেবে বাই রোডেই চলেছে সবাই,বড়রা সব এক গাড়িতে আর ছোটরা এক গাড়িতে,আদৃত ড্রাইব করছে সাথে সায়েদা বসে আছে আর পিছনে আয়েশা আর নোমান পাশাপাশি বসে আছে আঁখি এক পাশে,আয়েশা নোমানের পাশে বসতে না চাইলেও আঁখি ওকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকালো,নোমানের এতো কাছে এসে আয়েশার অনুভুতিগুলো যেনো বাঁধনহারা হয়ে যাচ্ছে,নোমান স্বাভাবিক ভাবে ওর সাথে এটা ওটা কথা বলছে তবে আয়েশা যেনো নিজেকে স্বাভাবিক রাখতেই পারছে না,এদিকে আঁখি ট্রিপটাকে জমিয়ে দিয়েছে,এটা ওটা গল্প করছে হৈ হুল্লোড় করছে,যেনো ও একাই একশো ,আসলে ওরা আরও এমন ভ্রুমণে এলেও এভাবে যাওয়ার পথে এতো আনন্দ উপভোগ করে নি যতোটা আজ আঁখি সম্ভব করছে,সবাই খুব উপভোগ করছে রাস্তার পাশের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ, আঁখি মাঝে মধ্যে ছবিও তুলছে আয়েশার ক্যামরা দিয়ে,গাড়ির সামনে ঝোলে থাকা আয়না দিয়ে আঁখির সমস্ত কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছে আদৃত ঠোঁটের কেনো মৃদু হাসি ঝুলিয়ে।আনমনে ভাবছে আঁখিকেই নিয়ে কিছু কথা।

এমনভাবে থাকে যেনো কিছুই হয় নি ওর সাথে,সব কিছুই যেনো ওর কাছে স্বাভাবিক, তবে ওর জীবনের অস্বাভাবিক জিনিসগুলোও যে আমি স্বাভাবিক করার প্রাণপন চেষ্টা করবো আর এখন এটাই আমার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য,আয়ান নামের চ্যাপ্টার আর ওপেন হতে দিবো না আমি ওর জীবনে, আর এই রোগটাকেও ওর কাছে হার মানতেই হবে।

এদিকে আয়না দিয়ে আদৃতের বার বার আঁখির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট বাঁকানো হাসিটা চোখ এড়িয়ে গেলো না সায়েদার।

একি ভাইয়া হাসছে তাও আঁখির দিকে তাকিয়ে, লাগতাহে ডাল মে কুচতো কালা হে,ইয়া পুরি ডাল হি কালি হে,হি হি হি।মনে হয় ভাইয়ার মনে প্রেমের ফুল আবারও ফুঁটছে।
___________________

আয়ান রেডি হচ্ছে অনেক খুশি মনে,ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নিয়েছে অনেক আগে,তখনি মাহি এলো বাড়িতে,এসে আয়ানকে এতো উৎফুল্ল আর ওর ব্যাগ পত্র গুছানো দেখে খনিক সন্দেহ ভাব চেহারায় ফুঁটিয়ে বললো।

কোথাও যাচ্ছো আয়ান?

মাহিকে দেখে আয়ানের মুখের উৎফুল্ল ভাব চলে গেলে,বেশ বিরক্তি নিয়ে বললো।
রাঙামাটি যাচ্ছি কাজে,

রাঙামাটি আবার কি কাজ পড়ে গেলো তোমার?

সব কিছু কি তোমাকে বলতে হবে?

বলতে হবে আমি তোমার ওয়াইফ।

মুখে বললেই ওয়াইফ হওয়া যায় না দায়িত্বও পালন করতে হয়,বাই দ্যা ওয়ে তুমি থাকো আমার কাজ আছে রাঙামাটিতে আমি চার-পাঁচ দিন পরে ফিরবো।

চলে গেলো আয়ান,মাহির কপালে পড়লো সন্দেহের ভাজ।

সবাই চলে এলো রাঙামাটি, আসার আগেই ওরা রিসোর্ট বুক করে রেখেছিলো তাই সবাই আগে সেখানেই উঠলো,সবাই যার যার রুমে গেলো এদিকে আদৃতের মিস আঁখির শান্তি নেই এখনও বাইরে ঘুরতে ব্যস্ত,আদৃত এবার বেশ বিরক্তি নিয়ে এলো আঁখির পানে।

এই যে মিস আঁখি এতোদূর জার্নি করে এসেছেন আপনার কি কোনো শান্তি নেই?রাস্তায় একবার ভালো করে ঘুমোতেও দেখলাম না আপনাকে,এতো লম্বা জার্নি করে এসে আপনার মধ্যে ক্লান্তি নামক জিনিস নেই বুঝি? কেনো এমনটা করেন বলেনতো?আপনি জানেন না আপনার জন্য রেস্ট আর শান্ত থাকা কতোটা জরুরি,বেশি দৌঁড় ঝাপ আপনার জন্য ভালো না তাও এতো রোদ্দুরে,আপনার মাথার উপর এসবের ডিরেক্টর প্রভাব পড়বে,এবার চুপচাপ রুমে চলেন।

আঁখি কিছু বললো না,বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে চলতে থাকলো আদৃতের সাথে,ওরা স্বামী স্ত্রী ট্যাগ নিয়ে আছে তাই রুমও একটা বুক করতে হলো দুজনের জন্য।

আয়ানও পৌঁছে গেছে এতোক্ষণে,ও খোঁজ নিয়েই এসেছে,তাই আদৃত আঁখি যে রুমে উঠেছে তার পাশের রুমই নিয়েছে ও,তবে বর্তমানে আদৃত আঁখির সামনে আসতে খনিক চাইছে না।
_____________________

রাতে সবাই ঘুরতে বেরুলো,রাঙামাটি…… জায়গাটার নাম শুনলেই গাছ পালা সবুজের সমারোহ এসবেরই কল্পনা চোখে ভাসে,চারুদিকে অজস্র গাছগাছালি,পাহাড় পর্বত, সবাই যার যার মতো ঘুরছে,এদিকে আদৃত আঁখিকে একা ছাঁড়ছে না,ওর সাথেই আছে ছায়ার মতো,আঁখিও আদৃতের সাথে মন খোলে ঘুরছে আর কথা বলছে,আঁখির মনোভাব আদৃতকে একটু ভালো রাখা আর আদৃতের মনোভাব আঁখির খেয়াল রাখা,ওকে সুস্থ রাখা,দুজনই যেনো দুজনকে নিয়েই চিন্তায় মশগুল,আঁখি বাধাহীন কথা বলছে আর আদৃত প্রকৃতি ছেঁড়ে আঁখির কথা শ্রবনে ব্যাস্ত ওর দিকে অপলক চাহনিতে তাকাচ্ছে বার বার,আঁখির সাথে কথা বলতে ওর কথা শুনতে বড্ড ভালোই লাগছে আজকাল আদৃতের,কথা বলতে বলতে আদৃত আঁখি এক ছোট্ট নদীপাড়ের পাশে দুটো পাথরে বসলো, দুজনের মধ্যে খানিকক্ষণ নিরবতা কাজ করার পর আঁখি বললো

ড.আদৃত দিদু তো এখন সম্পুর্ণ সুস্থ, এখন কি উনাকে আসল সত্যটা বলা যায় না?আর কতোদিন আমরা এভাবে মিথ্যা একটা সম্পর্কে আবদ্ধ থাকবো?আপনার মনে হয় না এখন সময় এসে গেছে দিদুর সাথে এ নিয়ে কথা বলার?

আদৃতের আলতো হাসি রাঙা মুখটা যেনো খনিকে নিরাশায় ভরপুর করলো আঁখির উক্ত কথা,মনের কোনো কিছু হারিয়ে যাবার ভয় উঁকি দিলো,তাই আদৃত বেশ কটমট কন্ঠে বললো এবার।

আপনাকে ওসব নিয়ে ভাবতে হবে না,ঠিক সময় আসলে আমি দিদুকে বলে দিবো সবকিছু ,আপনি এখানে বসেন আমি একটা ইম্পরট্যান্ট কল করে আসছি।

আঁখি কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হলো না আদৃতের মনোভাব।

হঠাৎ ঝোঁপের আড়াল থেকে কিছু নড়াচড়ার শব্দ কানে এলে আঁখি পিছন তাকালে কেউ ঝুঁপের আড়াল থেকে বেড়িয়ে ছুঁটতে লাগলো ততসময়ে,আঁখি বুঝতে পারলো একজন নারী কারন অন্ধকারে বেশি কিছু না আন্দাজ করতে না পারলেও শাড়ি পরনে কেউ একজন এটা বুঝতে ব্যার্থ হলো না আঁখির,তবে চেহারা দেখতে পেলো না ও,মেয়েটা ছুঁটতে লাগলো। আঁখির আবার কৌতুহল বরাবরই বেশি,তাই মেয়েটির পিছু ছুটলো,বার বার বলছে কে আপনি দাঁড়ান,তবে মেয়েটি দাঁড়াতে নারায,একসময় মেয়েটি কোথাও যেনো হারিয়ে গেলো,আঁখি চারপাশেই চোখ বোলাচ্ছে তবে মেয়েটিকে কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না।

বড় কিছুর আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে মেয়েটি,উঁকি দিয়ে দেখছে আঁখিকে,ক্লান্ত হয়ে যাওয়ায় নিশ্বাস ফেলছে ঘন ঘন।

আজকে তো এই মেয়েটা আমায় ধরেই ফেলতো,তবে কি যেটা শুনেছি সেটা সত্য মেয়েটাকে কি আদৃত সত্যিই বিয়ে করেছে?না আমি যতোটুকু জানি আদৃত দ্বিতীয় বিয়ে করবে না,আমাকে সত্যটা বের করতে হবে,তবে এখন ওদের সামনে যাওয়া ঠিক হবে না,প্রথমে পুরো সত্য জানতে হবে তারপর না হয় কি করা যায় ভাববো।

আদৃত ফোনে কথা বলা শেষ হলে ফোনটা রেখে পাশে তাকালে দেখে আঁখি নেই,আদৃতের মনে অল্পতেই ভয় কাজ করতে শুরু হয়,ওর যেনো মনে হয় ও আঁখিকে হারিয়ে ফেলেছে,চারিদিকেই আঁখিকে খুঁজতে শুরু করে অনেকটা অস্থিরতা নিয়ে,এদিকে ওকে ফোন করছে ফোনটা রিং হলেও ধরছে না।

আঁখির অতিরিক্ত দৌঁড়ানোর কারনে মাথা ঘুরতে শুরু হয়েছে এবার,প্রচন্ড মাথা ঘুরছে, পর যাচ্ছে তাই আশেপাশে কোনো কিছু ধরার চেষ্টা করছে,সেখান দিয়ে দুজন মেয়ে যাচ্ছিলো তখন, মেয়ে দুটি আঁখির অবস্থা দেখে ওকে ধরে নিলো,ওরা আঁখিকে বার বার জিজ্ঞেস করছে ওর সাথে কারা এসেছে ওদের বলতে যাতে ওরা ওকে একটু সাহায্য করতে পারে,এদিকে আঁখি ওদের নিজের রুম নাম্বার বলে বললো ওকে ওখানে নিয়ে যেতে,মেয়েগুলো ওকে ধরে ওখানে নিয়ে গেলো,আয়ান রুম থেকে এখনও বের হয় নি,সুযোগ বুঝে আঁখির সাথে একাকিত্বে কিছু কথা বলবে ভেবেছে,তখনি দেখলো দুটি মেয়ে আঁখিকে ধরে নিয়ে আসছে,আঁখিকে অচেতন দেখে দুঃশ্চিন্তায় পরলো আয়ান আঁখিকে নিয়ে তাই আয়ান আর দেরি না করে ছুটে গেলো আঁখির পানে।

কি হয়েছে আঁখির?

জানি না ভাইয়া উনাকে আমরা রিসোর্টের বাইরে পেলাম মাথা ঘুরে পড়তে নিয়েছিলেন আমরা ধরে উনাকে নিয়ে এলাম,আসতে আসতে উনি জ্ঞান হারিয়ে গেছেন।

কি হলো ওর হঠাৎ করে?ঠিক আছে আপনারা যান আমি ওকে দেখছি।

আপনি ওর কে?

আমি…..আমি ওর….আমি ওর হাসবেন্ড।

আমতা কন্ঠে কথাটা বলে আয়ান আঁখিকে নিজের রুমে নিয়ে গেলো,আঁখির জ্ঞান ফিরছে না,আয়ান অনেক চেষ্টা করেও আঁখির জ্ঞান ফিরাতে সক্ষম হচ্ছে না,এদিকে আদৃত আঁখির খোজে রিসোর্ট পর্যন্ত এসে গেছে, রুমে আসলো সবার আগে তবে সেখানে আঁখিকে না পেয়ে আদৃতের মনের ভয়টা আরও বেড়ে গেলো,যখন থেকে আঁখির রোগ সম্পর্কে আদৃত জেনেছে তখন থেকেই ওর ভিতর যেনো আঁখিকে হারিয়ে ফেলার একটা আচমকা ভয় কাজ করতে শুরু করেছে,আঁখিকে যে এখন কোনো মুল্যেই হারাতে চায় না আদৃত,হয়তো জানা নেই সে অনুভুতির মানে ওর।আর এই ভয়েই হয়তো আদৃত এখন একটু অস্বাভাবিক বিহেব করছে।যাকে পাচ্ছে তাকেই আঁখির ছবি দেখিয়ে খুঁজে বেড়াচ্ছে আঁখিকে, পরিবারের সবাইকে ফোন করে জিজ্ঞেস করলেও সবাই নিশ্চিত করলো আঁখিকে কেউ দেখে নি,ও কারো সাথে নেই,তবে কাউকে আর কিছু বলে টেনশন দিতে চায় নি আদৃত তাই নিজেই খুঁজতে ব্যস্ত ওকে,হঠাৎ সেই দুটি মেয়েকে ছবি দেখালে ওরা আঁখিকে চেনে ফেলে আর সবকিছু আদৃতকে খুলে বলে।ওদের কথা শুনে আদৃত হতবাক হলো,কে সেই লোক যে আঁখিকে নিজের স্ত্রীর পরিচয়ে নিয়ে গেলো আদৃতের মনের ভয়টা আরও বাড়লো এবার, তাই মেয়েগুলোর থেকে রুম নাম্বারটা জেনে সেদিকে অগ্রসর হলো ছুঁটন্ত পায়ে।

আয়ান আঁখিকে নিয়ে বেশ চিন্তায় পরে গেছে,আঁখির জ্ঞান ফিরছে না, কি এমন হয়ে গেলো ওর,বার বার আঁখিকে ডাকছেও আঁখির কোনো হেলদুল দেই,যেহেতু মেডিক্যাল কোনো সরঞ্জাম এখানে নেই তাই ভাবলো আঁখিকে কোনো হাসপাতালে নিয়ে যাবে সেই ভাবনাতে আঁখিকে কোলে নিতে চাইলে……..

চলবে……….

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩২

আয়ান আঁখিকে কোলে নেবে তখনি আদৃত এসে ওর হাত ধরে নেয়।

সাহস কি করে হলো আপনার ওকে নিয়ে আসার?আর আপনি এখানে কি করছেন?

দেখুন ড.আদৃত এসব কথা বলার সময় এখন নেই,আঁখি অজ্ঞান হয়ে গেছে কখন থেকে চেষ্টা করছি ওর জ্ঞান ফিরছে না ওকে হাসপাতালে নিতে হবে।

আমি থাকতে ওর চিন্তা আপনাকে করতে হবে না,সরেন সামনে থেকে।

আয়ানকে সাইড কাটিয়ে আদৃত আঁখির পাশে গেলো।

মিস আঁখি,কি হয়েছে আপনার চোখ খুলুন?
তারপর সব রকম চেষ্টা করে আদৃত আঁখির জ্ঞান ফিরাতে পারলো না,আয়ান দুঃশ্চিন্তা ভরা চাহনিতে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে।

দেখেন ড.আদৃত আমাদের ওকে পাশের কোনো হাসপাতালে নেওয়া উচিত, ওখানে নিয়ে বুঝা যাবে ওর কি হয়েছে।

তার কোনো দরকার নেই,আমি থাকতে মিস আঁখির কিছুই হবে না।
আদৃত আঁখিকে কোলে নিয়ে নিলো তারপর নিজের রুমের দিকে গেলো,আয়ানও পিছু গেলো।আদৃত আঁখিকে বেডে শুইয়ে নিজের ব্যাগ থেকে একটা ইনজেকশন বের করে আঁখির হাতে পুশ করলো,আয়ান হতবাক হয়ে দেখছে শুধু, আদৃত ইনজেকশনটা দিয়ে আঁখির মাথার পাশে গিয়ে বসে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে নরম কন্ঠে বললো।

আপনার কিছুই হবে না মিস আঁখি আমি আছি তো।

আদৃতের কান্ডে আয়ানের গা জ্বলে উঠলো, কটমট কন্ঠে আদৃতকে প্রশ্ন করলো।

আপনি আঁখিকে কি ইনজেকশন পুশ করলেন ড.আদৃত?কি হয়েছে আঁখির?ওর জ্ঞান কেনো ফিরছে না?

সেটা আমি আপনাকে বলা গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না,আপনি এখানে এসেছেন কেনো আগে সেটা বলুন?

আগে বলেন ইনজেকশনটা কিসের ছিলো।……..
ওকে না বললেও সমস্যা নেই আমি দেখে নিচ্ছি।

আয়ান ইনজেকশনটা দেখতে ডাস্টবিনের দিকে গেলে আদৃত ওকে আটকে নেয়।

আপনার ওটা দেখতে হবে না,আঁখি এখন একদম ঠিক আছে আপনি যেতে পারেন।

আমি যাবো না আমি আগে দেখবো আঁখিকে আপনি কি ইনজেকশন দিয়েছেন,আঁখির কি হয়েছে তা জানার যথেষ্ট অধিকার আছে আমার।

আর ইউ সিরিয়াস?অধিকার,কিসের অধিকারের কথা বলছেন আপনি?একটা মেয়েকে ইচ্ছেমতো ছুঁড়ে ফেললেন অন্য কারো মোহে পড়ে,তখন তো ওর খোঁজ নেন নি আর এখন আসছেন মিথ্যে অধিকার খাটিয়ে করুনা দেখাতে,ওর উপর আপনার কোনো অধিকার নেই ড.আয়ান কারন ওকে আপনি স্বজ্ঞানে ডিভোর্স দিয়েছেন,ও আপনার কেউ না,তাই অধিকার খাটাতে আসবেন না,আর আরেকটা কথা আজকে ওর যা খারাপ অবস্থা সব আপনার জন্য তাই নিজের বিবেক খাটিয়ে একবার ভেবে দেখবেন আপনি কি আদোও ওর উপর অধিকার খাটানোর যোগ্য,আশা করি আপনি আর যাই হোন বিবেকহীন হবেন না,তাই নিজেকে বিবেকবান পরিচয় দিয়ে আপনি এখন এই রুমটা ত্যাগ করলে খুশি হবো,আঁখির কি হয়েছে তা আপনাকে জানতে হবে না,আপনি যদি ওর জন্য কিছু করতে চান তবে এখনি রুমটা ত্যাগ করুন কারন ওর এখন কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বিশ্রাম দরকার।

আয়ান আর কিছু না বলে আঁখির দিকে অসহায়ের মতো একটা চাহনিতে তাকিয়ে চলে যায় সেখান থেকে।

আয়েশা আর নোমান একসাথে হাঁটছিলো,দুজনই নানা গল্পে মশগুল,পিলু পায়ে হাঁটছে দুজন ভালোই লাগছে সুন্দর এই পরিবেশটা,পরিবেশটা যেনো প্রেমাক্ত হৃদয়কে আরও নেশাক্ত করে তুলতে সক্ষম ,কথাটা আয়েশার ক্ষেত্রে সত্য মিলে গেলেও নোমানের ক্ষেত্রে তা কি আদোও মিলে যায় তার অনুমান করা উপস্থিত মুহুর্তে অনেক দূরুহ,হঠাৎ নোমানের একটা ফোন আসলো আয়েশার চোখে গেলো সেইব করা সেই নামে, পুষ্প নামে সেইব করা নাম্বারটা, ফোনটা আসতেই নোমান আয়েশাকে ইমপোর্টেন্ট ফোন বলে পাশে গেলো কথা বলতে যাতে আয়েশা মনে অনেক জ্বালাতন অনুভব করতে পারলো,মনে উকি দিলো সব ব্যাথার্থ অনুভুতি

কে এই পুষ্প,কতো সুন্দর করে কতো কথাই না বলছিলেন তাজবীর সাহেব আমার সাথে হঠাৎ ফোনটা আসতেই আড়ালে চলে গেলেন কথা বলতে,তবে কি উনার জীবনে সত্যিই অন্য কেউ আছে।

আয়ান বসে আছে রুমে তবে মনে শান্তি পাচ্ছে না,তখন আদৃত কি ইনজেকশন দিলো আঁখিকে তা যে জানতে হবে ওকে,আঁখির বড় কিছু হলো না তো চিন্তাটা চেপে বসেছে ওর মাথায়,এদিকে আদৃতের বলা কথাগুলোও ওকে বড্ড জ্বালাতন করছে,আদৃত কতো সুন্দর করে আঁখির উপর অধিকার খাঁটিয়ে নিলো যা আয়ান চাইলেও এখন পারে না,কারন সে নিজের হাতেই সেই অধিকার ছেঁড়ে দিয়েছে,তবে আবার যে তার সে অধিকারটা পেতে বড্ড লোভ হচ্ছে ওর।

আদৃত আঁখির মাথার পাশে বসে হাত বুলাচ্ছে,আঁখি শুয়ে আছে শান্তিতে।অপলকে দেখছে ওকে আদৃত,একটুর জন্য আদৃতের মনে হয়েছিলো ও আঁখিকে হারিয়ে ফেলেছে,আঁখিকে যে হারাতে চায় না আদৃত,ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে আদৃতের বার বার মনে পড়ছে আঁখির বলা কথাগুলো,আঁখি বলেছিলো জীবনকে দ্বিতীয়বার সুযোগ দিতে,জীবনে এগিয়ে যেতে,আর আদৃত যেনো নিজের অজান্তেই সেই এগিয়ে যাওয়ার মাধ্যমটা আঁখিকেই বানাতে চাইছে এবার।

আমি জানি না মিস আঁখি আমার মনে চলা আপনাকে নিয়ে এই অনুভুতির নাম কি,তবে যেনো জীবনে আমি নতুন আলোর ছোঁয়া অনুভব করতে পারছি ,সাথে একরাশ অন্ধকারও,তবে সে অন্ধকার আমি থাকতে দিবো না বেশিদিন,আপনাকে আমি কিছুই হতে দিবো না,আর যেখানে কথা আয়ানের ওকে আমি আর আপনাকে কোনো আঘাত করতে দিবো না।কথা দিলাম।

সায়েদা দিদুদের সাথে ছিলো এবার আয়েশা আর আঁখির খোঁজে একা হাঁটছিলো হঠাৎ পাশের ঝোঁপ থেকে কিছু নড়ে উঠার শব্দ পেলো,সায়েদা এতে কর্ণপাত না করে এগুতে থাকলো,এখান বার বার এখান ওখান থেকে কি না কি সব আজগুবি শব্দ কানে আসতে লাগলো ওর,হঠাৎ শুনতে পেলো শেয়াল ডাকার শব্দ তবে আশেপাশে কোনো শেয়াল দেখতে পেলো না,এবার সায়েদা খনিক ভয় পেলো,বার বার কে বলো জিজ্ঞেস করতে লাগলো তবে কারো উত্তর পেলো না,হঠাৎ শুনলো কেউ একজন মৃদ্যু কন্ঠে সায়েদা বলে ডাকছে বার বার,সায়েদা প্রচুর ভয় পেয়ে গেলো আর ভুত বলে রিসোর্টের দিকে দৌঁড়ালো।
__________________

পরদিন সকালে……..

সবাই রাতে এসে যার যার মতো শুয়ে গেছে,সায়েদা দিদু এক রুমে, এক রুমে আয়েশা আর ওর মা, ইশা চৌধুরী আর আমির চৌধুরী আলাদা এক রুমে।নোমান একা এক রুমে উঠেছে।

আঁখি সকালে ঘুম থেকে উঠেই আদৃতকে ওর মাথার পাশে বিছানার সাথে হেলান দেওয়া অবস্থায় ঘুমন্ত পায়,আদৃতের ঘুমন্ত চেহারা দেখে আবারও খনিক ভালোলাগা কাজ করলো আঁখির মনে,ঠোঁটের কোনে মৃদ্যু হাসি ঝুলিয়ে উঠে চলে গেলো ফ্রেস হতে,তবে রাতের কথা ওর কিছুই মনে নেই আদৃত ওকে পেলো কি করে,তাই ভাবলো আদৃত উঠলে জেনে নেবে, আর অতিরিক্ত কিছু না ভেবে সকালের মন মাতানো শীতল হাওয়া উপভোগের লোভে বাইরের দিকে চলে গেলো,অনেক ভালো লাগছে পার্বত্য এই অঞ্চলটা,প্রায় সকাল ৫ টা বাজে তাই কাউকে আর ডাকতে গেলো না আঁখি সকালের সুন্দর পরিবেশ একাই ধিদ্বার করতে বেড়িয়ে গেলো,হাঁটতে হাঁটতে বেশ বড় একটা টিলার উপর চলে আসলো,তখনি টিলার এক প্রান্তে আয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেলো আঁখি,হতবাক হলো অনেক,আয়ান এখানে কি করছে?আয়ান আপন মনে প্রকৃতির ধিদ্বার করছে তখনি পিছন থেকে বললো আঁখি।

আমার পিছু করতে করতে এখানেও চলে এসেছেন?

আঁখিকেই যেনো মন টানছিলো এতোক্ষণ, তাই হঠাৎ ওর মধুর কন্ঠ শুনে মনে তৃপ্তি এলো আয়ানের,পিছন মুড়ে তাকিয়ে নরম কন্ঠে বললো এবার।

হ্যাঁ পিছু এসেছি তোমার,তবে অনেক জরুরি কাজ ছিলো তোমার সাথে,একটু কথা বলতে চাই শুধু,যদি তুমি বলতে চাও।

বলেন কি কথা?

আয়ান ওর পানে এগিয়ে এসে ওর হাতজোড়া ধরলো তারপর মৃদ্যু কন্ঠে বললো।

আমায় ক্ষমা করে দাও,আমি নিজের টা ভেবে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে,কখনো এটা বুঝে উঠতে পারি নি যে আমার ব্যবহার তোমাকে কতোটা কষ্ট দিচ্ছে,শুধু সেখানে নিজের সুখটাই খুঁজেছি,তবে তুমি চলে আসার পর বুঝতে পারলাম আমি হয়তো অনেক ভুল করেছি তোমার সাথে যার অনেকটা নিজের সাথে হওয়ার পর মেনে নিতে পারলাম না,তাই ক্ষমা চাইতে এসেছি তোমার কাছে।

আঁখি নিজের হাতটা ছাঁড়িয়ে নিলো তারপর স্বাভাবিক স্বরে বললো।

আপনি আপনার ভুলটা একটু হলেও বুঝতে পেরেছেন এটাই বড়, তবে আমি আপনাকে অনেক আগেই ক্ষমা করে দিয়েছি তাই আপনাকে আলাদা করে ক্ষমা চাইতে হবে না আমার কাছে আর,আপনি আজ থেকে নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন।

আঁখি চলে যেতে নিলে আঁখিকে পিছু ডেকে একটা কথা বললো আয়ান যাতে আঁখি থমকে দাঁড়ালো।

আদৃতকে সত্যিই ভালোবাসো?যতোটা আমাকে বাসতে তার থেকেও বেশি?
আঁখি ফিরে এবার সোজা জবাব দিলো।

জানিনা,তবে এটা জানি আমরা একে অপরের যথেষ্ট সম্মান করি,একে অপরকে বিশ্বাস করি,একে ওপরের পরিপুরক,আর যে সম্পর্কে বিশ্বাস আর সম্মান বজায় থাকে সে সম্পর্ক কখনো দূর্বল হয় না,আর ভালোবাসার কি এক ছাঁদের নিচে থাকতে গেলে সেটা এমনিতেই জীবনে উঁকি দেয়।

আঁখি চলে গেলো কথাটা বলে,তবে এখন যেনো আয়ানের মনের জ্বালাতনটা আরও বেড়ে গেলো।

তবে কি আদৃত কেঁড়ে নিলো আঁখিকে,আয়ান হারিয়ে ফেললো ওকে, আয়ানের যেনো মনে হচ্ছে ও আঁখিকে হারায় নি হারিয়েছে সবকিছু, এখানে এসেছিলো মনের শান্তির খোঁজে, চোখে স্পষ্ট ধরা দিয়েছিলো আঁখির সাথে করা অন্যায়গুলো যার অনুশোচনায় রাতে শান্তিতে ঘুম হচ্ছিলো না আয়ানের ,মাহি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার না করলে হয়তো তা কখনোই বুঝতে সক্ষম হতো না,একাকিত্বে ভোগতে গিয়ে অনেককিছু অনুশোচনায় এসে গেছে ওর তাই আঁখির কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছিলো এই আশায় হয়তো মনে কিছু শান্তি নিয়ে আসতে পারবে তবে তা যে আর পেরে উঠলো না,আয়ানের মন যেনো এখন অন্য কিছু চাইছে তবে তা বুঝে উঠতে সক্ষম হতে পারছে না।
_____________________

আয়ান নিজের রুম থেকে খেয়াল রাখছে কখন ক্লিনার কেউ একজন এসে আদৃতের রুম ক্লিন করবে,অবশেষে একজন ক্লিনারকে রুম ক্লিন করে রুমের সব ময়লা ডাস্টবিনে করে নিয়ে যেতে দেখলে ওকে ডেকে আনলো,তারপর ওর কাছ থেকে ডাস্টবিনটা নিয়ে ওতে আদৃতের ফেলা ইনজেকশনটা খুঁজতে শুরু করে তবে তাতে আর তা খুঁজে পেতে ব্যার্থ হয়।আয়ান তাজ্জব হয়ে যায় ইনজেকশনটা যে আদৃত এখানেই ফেলেছিলো তবে গেলো কোথায়।

এদিকে বেশ খনিক দূর আড়ালে দাঁড়িয়ে আদৃত মুচকি হাসলো আর মনে মনে বলতে লাগলো।
আমি আপনাকে কোনো মতেই আঁখির জীবনে হস্তক্ষেপ করতে দিবো না ড.আয়ান,আপনার আর আঁখির মাঝে যে দেয়াল এখন আদৃত চৌধুরী ,যা চাইলেও আপনি কখনো ভাঙতে পারবেন না।আমার আপনার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে ভালোই জানা হয়ে গেছে তাই ইনজেকশনটা আমিই সরিয়ে দিয়েছি।

সায়েদা রাতে ভয় পেয়ে এসে যে ঘুমিয়েছিলো এই এখন উঠলো মাত্র,তবে এখন কোনো ভয়ের রেশ নেই ওর মধ্যে।

আয়েশা সকাল সকাল আজ গোসল সেরেছে,রুমের বারান্দাতে মৃদ্যু বাতাসের সম্মুখীন দাঁড়িয়ে ভিজা চুল ঝাড়তে ব্যস্ত রমনি,বেগুনী কালারের একটা কামিজ পড়েছে,সাদা সালোয়ার ওড়নার সাথে যাচ্ছে ভালো,চুলের আগা দিয়ে পড়ছে পানি,মুছতে ব্যস্ত সে,কিছু ভেজা চুল ওর নরম গালের সাথে লেপ্টে আছে, বড়ই যেনো মোহিত লাগছিলো ওকে দেখতে ঠিক অনেকটা সামনে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের,নোমান তখন পরিবেশের ছবি তুলতে ব্যস্ত ছিলো হঠাৎ ওর নজর গেলো আয়েশার দিকে চোখ আটকে গেলো যেনো আয়েশাতেই,আর কখনো যে এভাবে কাউকে দেখে মোহিত হয় নি নোমান,কারন ছাড়াই কোনোদিক বিবেচনায় না নিয়ে একটা ছবি আয়েশারও নিয়ে নিলো সে।

সবাই মিলে হৈহুল্লোর করতে শুরু করেছে,আঁখি সবার আগে,আর আদৃত ওকে আটকাতে ব্যস্ত,রাতের কথাটা জানার পর ওটা নিয়ে অনেক বকেছে আদৃত আঁখিকে,এখন আদৃতের সাথে কথাই বলছে না আর,ওর কথা না বলা যেমনটা আদৃতের মন পোড়াচ্ছে ততোটাই জ্বালাতন করছে আঁখির দৌঁড় ঝাপ,এসব যে এই মুহুর্তে আঁখির জন্য বিপদজনক যা আদৃতের মন পিঞ্জরখানা অশান্ত হয়ে থাকার কারন হয়ে উঠেছে।

আঁখি আয়েশা সায়েদার সাথে ছুটাছুটি করছে, হাসি মসকরা করছে তখনি আদৃত এগিয়ে গিয়ে ওর হাত ধরে সেখান থেকে ওকে সরিয়ে নিয়ে এলো।

কি হয়েছে মি.কাকতাড়ুয়া আপনার?সারাদিন খবরদারি না করলে হয় না?
মুখে বেশ বিরক্তি ফুঁটিয়ে বললো আঁখি।

আমি কাকতাড়ুয়া?

না ওর নানু?হুহ

দেখন মিস আঁখি আমি জানি আমি আপনার সাথে বেশি কড়া বিহেইব করছি কিন্তু একবার বুঝার চেষ্টা করেন এভাবে দৌঁড় ঝাপ আপনার জন্য ক্ষতিকর,একবার আপনি সুস্থ হয়ে গেলে যা ইচ্ছা দৌঁড় ঝাপ করে নিবেন আমি আপনাকে কিছু বলবো না।

আর সে দৌঁড় ঝাপ করার জন্য যদি আমি আর না থাকি…..

কথাটা আঘাত করলো আদৃতের মনে বড্ড,কিছুই বললো না জবাবে,পাথরের ন্যায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলো।
আঁখি বুঝতে সক্ষম হলো ওর এই কথাটা অল্প করে হলেও আদৃতকে আঘাত করেছে তাই এবার মুখে এক ফাঁলি হাসি টাঙিয়ে আদৃতের হাত ধরে বললো।

আচ্ছা ঠিক আছে দৌঁড় ঝাপ কম করবো আমি,এবার বাংলা পাঁচের মতো মলিন মুখটাকে একটু উজ্জ্বল করুন আর চলুন একটু বেড়িয়ে আসি,দেখুন না চারপাশটা কতো সুন্দর চোখ সরানোরই ইচ্ছে করে না।

আঁখি আদৃতের হাত ধরে নিয়ে যাচ্ছে নিজের সাথে করে,আদৃতও ওকে অনুসরণ করে হাঁটছে।

চলবে………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here