মন_পিঞ্জর,৩৪,৩৫

0
720

#মন_পিঞ্জর,৩৪,৩৫
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৪

আদৃত মাঝরাতে ফিরলো,আঁখি এগিয়ে গেলো ওর দিকে।

আপনি কোথায় ছিলেন এতোসময়?আপনি জানেন আমি কখন থেকে অপেক্ষা করছি,ভিজে কাপড়ে বাইরে গেলেন কেনো,দেখেন শরীরেই শুকিয়ে গেছে।

আমি ঠিক আছি আপনি শুধু শুধু টেনশন করবেন না,আপনার টেনশন নেওয়া ঠিক না আপনার তা মাথায় ঢোকানো উচিৎ।

কথাটা বলে আদৃত কাপড় নিয়ে চেঞ্জ করতে চলে গেলো,অতপর চেঞ্জ করে এসে সোফাতে শুয়ে পড়লো।

এই যে আপনি শুয়ে পড়ছেন কেনো?খাবেন না,না খেয়ে চলে গেলেন তখন কোথাও।চলেন খাবেন।

আমার ক্ষিদে নেই আমি খাবো না মিস আঁখি।

আপনাকে খেতে হবে চলেন।
মা গো, আপনার গা তো দেখি জ্বরে পুঁড়ছে,আপনাকে আমি তখন বলেছিলাম চেঞ্জ করতে,কথা শুনলেন না তো আমার,বলেন না কি আমি জেদি নিজে কি শুনি,আসতো কাকতাড়ুয়া কি আর এমনি বলে,বসেন আমি আসছি।

তারপর আঁখি খাবার নিয়ে এলো আদৃতের জন্য,আদৃত খেতে না চাইলে জোর করে খেতে বাদ্য করলো,আঁখির জেদের সামনে তো সবসময়ই আদৃত নিরুপায় তাই খেয়ে নিলো যতোটা পারলো,আঁখি তারপর ওকে ওষুধ খাওয়ালো,হাতের ব্যান্ডেজ খুঁলে আবারও ওষুধ লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিয়ে শুতে বললো।

আমার ঘুম আসছে না,ঘুমাবো না এখন।

আমি আছি না আমি ঘুম এনে দিবো,জানেন বাবা বলতেন আমার হাতে জাদু আছে,ভাইয়া আর আয়ানও বলতো,কারন আমি যারই মাথায় বিলি কেটে দিতাম সে না ঘুমিয়ে পারতোই না,আপনি চোখ বন্ধ করুন আমি আপনার মাথায় বিলি কেটে দিই ঘুম চলে আসবে।

কিন্তু।

কোনো কিন্তু না চুপ করে শুয়ে থাকুন তো।

দেখুন মিস আঁখি রাত অনেক হয়েছে আপনার বিশ্রামের প্রয়োজন আমি নিজে থেকে ঘুমিয়ে পরবো আপনি ঘুমিয়ে পরুন।

আমি কথা দিচ্ছি আপনি ঘুমানোর সাথে সাথেই নিজে গিয়েও ঘুমিয়ে পরবো,প্লিজ একটু ঘুমানোর চেষ্টা করুন।

আদৃত তাও না মানলে আঁখি অনেক জেদ করে ওকে মানায়,অবশেষে আদৃত চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টায়,আঁখি ওর মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছে, জ্বরে অনেক মাথা ব্যাথা হলেও প্রশান্তি লাগছে এতে,আঁখির ওর প্রতি এতো যত্নবান হওয়া মোটেও সহানুভূতি মনে হয় না আদৃতের তবে তখন আঁখির জবাব না পাওয়ায় নিরাশাটাও যে পিছু ছাড়ছে না ওর।

চিৎ হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আয়ান, আজ আঁখি ওকে বাঁচিয়েছে,ওর জন্য কতোটা অস্থির ছিলো আঁখি তা আয়ান স্পষ্ট আন্দাজ করতে পেরেছে,যা ওর মনে এনে দিচ্ছে প্রশান্তির ছোঁয়া,তারমানে মানে হয়তো আঁখি এখনও ওকে ভালোবাসে,কথাটা ভাবতেই ঠোঁটের কোনে মৃদ্যু হাসি ফুঁটলো,মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিলো এবার।

সায়েদা ঘুমিয়ে ছিলো হঠাৎ কিছু শব্দ শুনতে পেলো ও,আজ দিদু ওর মা আর মিরা রাহমানের সাথে থাকতে চাইলেন,যাতে আয়েশা চলে এলো ওর কাছে।শব্দগুলো শুনে সায়েদা অনেকটা অবাক হলো কেমন যেনো আজবগুবি কিছু শব্দ, এবার বারান্দা দিয়ে কেউ একজন ওকে ডাকছে আন্দাজ করতে পারলো,সায়েদা খনিক ভয় পেয়ে আয়েশাকে ডাকলো,আয়েশা এমন ঘুমে যে নড়ছে অব্দি না,এদিকে বাইরে থেকে ওর নামের ডাকটা এখনও বন্ধ হয় নি,কেউ মৃদ্যু কন্ঠে ওকে বলছে।

সায়েদা বেড়িয়ে এসো,সায়েদা এসো না।

কে আপনি কাকে চাই? আমি বেড়িয়ে কেনো আসবো?আসবো না।

সায়েদা এসো না,সায়েদা এসো।
সায়েদা ভয়ে লাইট জ্বালাতে গেলে বিদ্যুৎ চলে গেলো,ও নিজের ফোনটাও খোঁজে পেলো না,সায়েদা এবার প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলো,আয়েশাকে চিৎকার করে ডাকছে তবে সে যেনো তা শুনতেই পারছে না, এবার নিজেকে বাঁচাতে মা বাবা বলে চিৎকার করতে শুরু করলো,প্রায় ২ মিনিট কাঁদার পরে ওর হাল বেহাল দেখে তাজবীর লাইটটা জ্বালিয়ে হাসতে লাগলো,ওর পিছন নোমানও,আয়েশাও উঠে বসে হাসছে।সায়েদা বুঝতে পারলো না কোনো কিছু,এবার নোমান বললো।

আরে আমার পাগলি বোনটা,ভয় পেয়েছে খুব,আরে ভয় পাস না,আমরা তাজবীরের সাথে মিলে তোর সাথে একটু মজা করছিলাম,আসলে তুই তো ভুতে অনেক বিশ্বাস করিস কথাটা শুনার পর তাজবীর ভাবলো তোর ভুতের ভয় নিয়ে তোর সাথে একটু মজা করে নিবে যাতে তোর ভুতের ভয়টাও চলে যাবে,তাই আমরাও ওর সাথে একটু যোগ দিলাম,আরে এসবে তো আঁখিও ছিলো তবে ও আসতে পারে নি ভাইয়ার একটু শরীর খারাপ করেছে তাই।

হোয়াট তোমরা আমার অনুভুতি নিয়ে মজা করলে?আর উনি কখন এলেন এখানে?

আরে আমরা যেদিন এসেছি সেদিনই এসেছিলো,আঁখিই জেদ করলো ওকে এখানে আসতে,তবে তোর সামনে পরে নি নয়তো এমন মজা হতো কি করে।

সাদে কি আর বোকা,বাচ্চা টিউবলাইট বলি,এভাবে সামান্য ভুতের ভয়ে কারো এমন হাল হয় না কি,কোনো বাচ্চা ছাঁড়া,হা হা হা।

অনেক মজা লাগে না মি.তাজবীর আমাকে নিচু করে,অসম্মান করে,ছাড়বোনা আমি আপনাকে,কখনো ছাড়বোনা,আর ভাইয়া আয়েশা আঁখি আমি তোমাদের কারো সাথেই আর কথা বলবো না।

সায়েদা ছুঁটে চলে যায় ওর মায়ের রুমের দিকে।

ইশ আমরা বোধ হয় একটু বেশি করে গেছি।

তুমি চিন্তা করো না আয়েশা আমার বোন,চিনি আমি ওকে খুব ভালো করে এক বক্স চকলেট এনে দিলেই সব রাগ ভুলে যাবে।

___________________

আয়ান রিসোর্টে হাঁটছিলো তখনি ওর মা বোনকে দেখতে পায়,অল্প করে হলেও ওদের সাথে কথা বলতে মন চায় ওর,কিন্তু পরক্ষণেই মনে চলে আসে কিছু তিক্ত চিন্তা।

ওরা নিজের ইচ্ছেতেই গেছে আয়ান,যাদের তোর সম্মানের চিন্তা নেই তাদের চিন্তা তোর করে কি লাভ?আয়ান মুখ ঘুরিয়ে চলে গেলো রুমের দিকে,আয়েশা আর মা দেখতে পেলেন ওকে,মা এগিয়ে আসতে নিয়েছিলেন, ছেলেকে দেখে যে উনি আর নিজের আবেগ আটকে রাখতে পারলেন না,ইচ্ছে হলো বড্ড ওকে জড়িয়ে ধরে নিজের অশান্ত মন পিঞ্জরটা অল্প শান্ত করে নিতে তবে সে অধিকারটুকুও আয়ান কেঁড়ে নিবে উনার জানা ছিলো না উনার,কান্না আসলো উনার বুক ফেঁটে,চোখের জল মুছতে ব্যস্ত হয়ে চলে গেলেন উনি,আয়েশাও চোখের গড়িয়ে পরা জল আলতো হাতে মুছে মায়ের সাথেই এগিয়ে গেলো,ওর ভাই ওদের পর করে দিলেও মন থেকে যে আয়েশা কখনো আয়ানকে পর করতে পারে নি আর পারবেও না।

আঁখি একটা নদীপাড়ে একা বসে আছে।বড্ড ভালো লাগছে ওর একা এই উতলা নদীর সৌন্দর্যে বিমোহীত হতে,নদীপাড়ের মিষ্টি বাতাস গায়ে ভালোলাগার শিহরন তৈরি করছে বার বার,অনুভবে ভরে নিতে ইচ্ছে হচ্ছে বড্ড নদীপাড়ের এই সীমাহীন সৌন্দর্য। কিন্তু হঠাৎই ওর কাজে বিঘ্ন ঘটালো কেউ একজন।পাশের পাথরেই এসে বসলো কেউ,বিরক্তির পরিমানটা একটু বেশি বেড়ে গেলে আঁখির যখন চোখ ঘুড়িয়ে সেই ব্যক্তি হিসেবে আয়ানকে ধিদ্বার করতে পারলো।আয়ান মুখে বিশ্ব জ্বয়ের হাসি ঝুলিয়ে বললো।

শুভ সকাল।

আঁখি কিছু না বলে উঠে যেতে নিলে আয়ান ওর হাত ধরে নিলো,আঁখি টান দিয়ে হাত ছাড়ালো মুখে অনেকটা বিরক্তি টাঙিয়ে।

একটু বসো না আমার পাশে,দেখো আমি জানি তুমি এখনও আমায় ভালোবাসো,ওই আদৃতের সাথে এজন্য ঘুরে বেড়াও যাতে আমি জেলাস হই,আমাকে জ্বালানোর জন্যই ওকে নিজের স্বামী বলে দাবি করছো তাই না?আসল সত্য তো এটা যে ওর সাথে তোমার কোনো সম্পর্ক নেই।

আঁখি এবার স্বাভাবিক ভাবে বললো।

মেনে নিলাম উনার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই,আমি উনাকে ভালোবাসি না,আমি আপনাকে জ্বালানোর জন্য এসব করছি,তবে কি আমি সত্যিই সফল হচ্ছি?আপনি কি সত্যিই জেলাস হচ্ছেন।আমার কি মনে হয় জানেন আপনার বুদ্ধির বিলুপ্তি ঘটছে,একবার ভেবে দেখেছেন এসবের কি কোনো মানে আছে?ড.আয়ান আপনি নিজের ইচ্ছেতে আমায় ছেঁড়েন দিলেন আপনার মন ভরে গেছে বলে,তবে কেনো এখন আবার আমার পিছু আসছেন,বলেন কি চাই আপনার?আমি আপনাকে ভালোবাসি না বাসি তা দিয়ে আপনি কি করবেন?আবার আমাকে জীবনে নিয়ে নিবেন?তবে তখন মাহির কি হবে ওকেও ছুঁড়ে ফেলবেন ?না কি দুজনকে একসাথে রাখবেন?দুজনকে আলাদা দুই রুমে রাখবেন না কি এক রুমেই,হয়তো এক বেডেই দুজনকে নিয়ে থাকতে চাইবেন।

আঁখিিিিিি।

চিৎকার করবেন না,কথাগুলো শুনে অনেক খারাপ লাগছে না,এটাই সত্য,ভালো করেই মনে আছে আমার আপনার সাথে কাটানো সেই শেষ দিনগুলোর কথা,আমার সাথেই এক রুমে থাকাকালীন ল্যাপ্টপে ভিডিও কলে বসে আপনার মাহির সেসব অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি দেখতে থাকা,তখন আপনি ইচ্ছে করেই আমাকে জ্বালিয়ে ওসব করতেন কারন হয়তো আপনার মজা লাগতো এতে, যে রাতে ওর কাছে যেতেন না তখন রুমে বসে আমাকে শুনিয়েই অশ্লীল কথাবার্তায় মগ্ন থাকতেন ওর সাথে,আর তাই আজ নিজের মতো আমাকেও মনে করছেন হয়তো ,কিন্তু আপনাকে এলার্ট করে দেই ড.আয়ান আমি না আপনার মতো আর না মাহির মতো তাই আমার কাছ থেকে এমন কিছু আশাও করবেন না।আর হ্যাঁ নিজের মনকে শান্তভাবে বসে জিজ্ঞেস করবেন যে তার চাওয়াটা আসলে কি,আগে নিজের লক্ষ্য স্থির করুন যে আপনার কি চাই তারপর না হয় সে অনুযায়ী চিন্তা করে সামনে এগুবেন।

চলে গেলো আঁখি কথাগুলো বলে,তবে চোখে যেনো আঙুল দিয়ে আয়ানকে সত্যটা দেখিয়ে গেলো।
_________________

মাহি জানতে পারলো আয়ানের রাঙামাটি যাওয়ার আসল কারন,যাতে জ্বলে পুড়ে উঠলো নিমিষেই।

আমি জানতাম আয়ান এমন কিছুই ঘটাবে,ওকে দিয়ে আর কি বিশ্বাস, তবে আয়ানকে নিয়ে আর কোনো মাথা ব্যাথা নেই আমার,ও ফিরে আসুক তারপর না হয় ওকে স্যারপ্রাইজটা দিবো,আর যেখানে কথা ওই আঁখির ওকে ছাড়বো না,ও আমার থেকে জয়ী এবার আর হতে পারবে না,ও আমাকে অনেক জ্বালিয়েছে,সবকিছু কেঁড়ে নিলাম অথচ বুক ফুলিয়ে হাঁটে এবার তো মনে হয় বড় কিছু করতে হবে ওর সাথে,আসুক বেড়ানো থেকে,কদিন ফুর্তি করে মন কে চাঙ্গা করুক তারপর না হয় বেদনা দিতে ভালো লাগবে।

তাজবীর বসে ছিলো ওর রুমে তখনি সায়েদা এলো।

আরে তুমি,ভালো হয়েছে তুমি এসে গেছো,আমি তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম।

কেনো?

ওই আসলে তোমার সাথে একটু বেশিই লাগালাগি করে ফেলেছি তাই সরি বলতে চাইছিলাম।

ও ঠিক আছে আমি মনে কিছু নেই নি ইট’স ওকে।

কথাগুলো অনেকটা হেসে হেসে বলছে সায়েদা যা হজম হলো না তাজবীরের। সায়েদা এতোকিছুর পরও ওর সাথে এতো ভালো ব্যবহার করছে কেমন সন্দেহ জনক মনে হলো বিষয়টা ওর কাছে।সায়েদা এবার মুখে হাসি টাঙানো অবস্থায় আবারও বললো।

আরে এতো কি ভাবছেন?আপনি তো মজা করেছেন এসব নিয়ে আবার মন খারাপ করে থাকতে হয় না কি?বাদ দেন এসব,আমি তো এসেছিলাম আপনাকে কিছু বলতে।

কি বলবেন বলুন?

ওই আসলে আমি আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছিলাম,আঁখি আমার ফ্রেন্ড সে হিসেবে আপনাকেও ফ্রেন্ড তো বানাতেই পারি।

হুম কিন্তু।

কিন্তু কি?ওকে আপনি ফ্রেন্ডশিপ না করতে চাইলে আমার তো আর কিছু করার থাকবে না,আমার মতো বোকা টিউবলাইটের সাথে ফ্রেন্ডশিপ কেনোই বা করবেন আপনি।

আরে না না ওসব তো আমি মজা করে বলি,তুমি তো অনেক ভালো মেয়ে,আমি ফ্রেন্ডশিপ করতে রাজি।

সায়েদার মলিন মুখটা মেনে নিতে না পেরে রাজি হয়ে গেলো তাজবীর,সায়েদা এতে রহস্যময়ী একটা হাসি দিয়ে হাত আগে বাড়িয়ে দিলো।

ফ্রেন্ডস।

ফ্রেন্ডস।

তাজবীরও হাত মিলিয়ে নিলো।

আদৃত ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজ করছে আঁখি তখনি এসে তা কেঁড়ে নিলো।

আরে মিস আঁখি কি করছেন?আমার কাজ আছে।দেন ওটা।

ছুটিতে এসে আবার কাজ কি?তাও অসুস্থ অবস্থায়, চুপচাপ রেস্ট করেন।

আপনি আমার কথা শুনেন? যে আমি শুনবো?

আপনি যেমন জোর করে আমাকে কথা শুনিয়ে নেন আমিও তেমনি শুনাবো,এবার শুয়ে পড়ুন ওষুধ খেয়েছেন এখন বিশ্রামের প্রয়োজন আপনার।

এখন আর রেস্ট করতে ভালো লাগছে না মিস আঁখি।

দেখেছেন আমাকে যে পুরোদিন রেস্ট রেস্ট বলে মাথা খান তখন আমার ঠিক এমনই লাগে,আচ্ছা চলেন রেস্ট করতে হবে না আমার সাথে বাইরে চলেন প্রকৃতির ধিদ্বার করলে রোগ ব্যাধি সব ছুঁটে পালাবে,মন ভালো তো শরীর ভালো,চলেন।

আঁখি আদৃতকে টেনে নিয়ে গেলো বাইরে……….

আয়ান এদিকে গভীর চিন্তায় ব্যস্ত,মনের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে,আঁখির কথা অনুযায়ী এবার………..

চলবে………

#মন_পিঞ্জর
#লেখিকা_আরোহী_নুর
#পর্ব_৩৫ (অল্প ধামাকা)

আঁখির কথা অনুযায়ী এখন যেনো অনেক তিক্ত সত্য অনুভবে ধরা দিচ্ছে আয়ানের,সত্যিই তো ও আঁখির সাথে কি না করেছে,ওকে যেমনটা চায় তেমনটা নাচিয়েছে ৮টা বছর ধরে, কখনো আঁখি ওকে কিছুই বলে নি,শুধু নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসে গেছে ওকে আর এর প্রতিদানে আয়ান ওকে দিয়েছে শুধু ছল-চাতুরী, দেখিয়েছে স্বার্থপরতা,আঁখিকে দেখিয়ে মাহির সাথে কতো নোংরামি করতো আর আঁখিও তা মুখ বুজে সহ্য করতো কখনো কিছুই বলে নি ওকে এসব নিয়েও ,হয়তো সে ব্যাথা অনুভব করতে পারতো না আয়ান কোনোদিন যদি সেটা নিজের সাথে না ঘটতো,আজ আঁখিকে সাধারণ ভাবে আদৃতের হাত ধরে ঘুরে বেড়াতে দেখে তা সহ্য করতে কতোটা কষ্ট হচ্ছে মন পিঞ্জরায় তা শুধু আয়ান জানে, আঁখিকে তো এর থেকেও হাজার গুন বেশি কষ্ট আয়ান দিয়েছে ভেবেই গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে ওর,নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করতে গিয়ে যেনো খুঁজে পেয়েছে এবার অনেক প্রশ্নের জবাব,বোধগম্য হচ্ছে এবার নিজের মনের সত্য অনুভুতি।

আয়ান আর এলো না আঁখি আদৃতের সামনে,মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিয়েছে,অনেক ভুল চোখে ধরা দিয়েছে যা হয়তো এবার শুধরাতে চায় আয়ান,দুদিন ঠিকমতো ঘুমোতেও পারে নাই সত্যতার উপলব্ধিটা মেনে নিতে গিয়ে।সবাই আজ সকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো,ওদের চলে যাবার পর আয়ানও বেরুলো,অশান্ত মন নিয়ে নিরাশাগ্রস্থ ভাব চেহারায় ফুঁটিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করলো আয়ান, দেখতে পেলো বাড়িতে কিছু গার্ড আছে যাদের আয়ান রাখে নি,হয়তে মাহি ওদের রেখেছে ভাবনাটা মাথায় এনে সামনে এগোলো,মেইন দরজাটা আজানো,দরজা ঢেলে ভিতরে প্রবেশ করতেই দেখলো আয়ান…. মাহি অন্য একটা পুরুষের কোলে বেশ আরামে বসে ওকে আপেল খাওয়াচ্ছে,লোকটাও আপেল খাচ্ছে আর মাজে মাধ্যে রসিকতা করে মাহির আঙুলে কামড় দেওয়ার চেষ্টা করছে,মাহি হাসতে হাসতে হেলে দুল খাচ্ছে লোকটার কেলো,মাহির এমন নোংরামি সহ্য করতে না পেরে এবার আয়ান গর্জে উঠলো মাহির নাম নিয়ে।

মাহি।

আয়ানকে দেখেও যেনো মাহির কোনো যায় আসলো না,স্বাভাবিক ভাবে লোকটার কোল থেকে উঠলো আর আয়ানের দিকে এগিয়ে গেলো।

আরে আয়ান বেবি এসে গেছো তুমি।

এসব কি নোংরামি চলছে মাহি?লোকটা কে?

কে আবার আমার বয়ফ্রেন্ড,ভালো লাগে নি ওকে,ও কিন্তু অনেক সাকসেসফুল বিজনেসম্যান।

হোয়াট?তুমি পাগল হলে না তো!তুমি আমার স্ত্রী, ওই ছেলে তোমার বয়ফ্রেন্ড কি করে হতে পারে?

কেনো পারে না আয়ান?আঁখি তোমার স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তো আমি তোমার গার্লফ্রেন্ড ছিলাম,তখন তা হতে পারলে এখন কেনো তা হতে পারবে না,হা হা হা।

আয়ান তেঁড়ে গিয়ে মাহির বাজুতে শক্ত করে চেপে ধরলো।

দেখিয়ে দিলি না নিজের নোংরা স্বভাব,তোর জন্য আমি সব ছেঁড়েছি আমার মা বোন আর আঁখিকেও আর তুই কি না শেষে এমনটা করলি,আঁখি অনেক আগে তোকে নিয়ে আমাকে একটা কথা বলেছিলো যে কয়লা ধুলে তার ময়লা যায় না,তুইও একটা কয়লার টুকরা মাত্র যাকে হিরা ভেবে গলায় ঝুলিয়েছি আমি,তোর মতো চরিত্রহীনকে নিজের জীবনে আর রাখবো না আমি,তোকে জীবনে এনে কতো বড় ভুল করেছি তা এখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি,তবে সে ভুল আমি শুধরাবো আমি আজকেই তোকে ডিভোর্স দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।

কথাটা বলে আয়ান মাহিকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দিলে,ওই লোকটি আয়ানের দিকে তেঁড়ে আসতে চাইলে মাহি হাতের ইশারায় ওকে থামালো।আর হাসতে হাসতে উঠে পড়লো ফ্লোর থেকে,আয়ান কিছুই বুঝে উঠতে সক্ষম হচ্ছে না ওর হাসির মানে।মাহি হাসতে হাসতে বলতে লাগলো,দাঁড়াও এখনি আমি তোমার ইচ্ছে পুরন করে দিচ্ছি।

এগিয়ে গিয়ে একটা পেপার এনে ওর হাতে দিলো মাহি,আয়ান চোখ বুলিয়ে দেখলো ওটা ডিভোর্স পেপার,মাহি আগে থেকে সাইন করে দিয়েছে।

তোমার কাছ থেকে আর বেশি কিছু আশা করি নি আমি,তোমার মতো মেয়েকে আমিও জীবনে রাখতে চাই না আর,পেন কোথায়?

মাহির কাছ থেকে পেন নিয়ে আয়ান সাইন করে দিলো ডিভোর্স পেপারে তারপর ওটা মাহির মুখের উপর ছুঁড়ে মারলো।

নাও ডিভোর্স আর বেড়িয়ে যাও আমার ঘর থেকে।

আয়ানের কথাটা যেনো মাহির কাছে খুব বড় কোনো জোকস মনে হলো যে হাসতে হাসতে লুটুপুটু খাচ্ছে।

কি হলো পাগলের মতো হাসছো কেনো?আমি কমিডি করছি না কি এখানে।

দাঁড়াও দাঁড়াও তুমি যে কমিডি করছো তার প্রুভ এখনি আমি তোমাকে দিচ্ছি, ইশান বেবি পেপারস গুলো আনো তো।

ওই লোকটা কিছু পেপারস আনলো আয়ানের রুম থেকে তারপর মাহির হাতে দিলে মাহি ওটা আয়ানের হাতে দিলো,এবার এই কাগজগুলোতে চোখ বুলিয়ে আয়ান ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,অবিশ্বাসের নজরে তাকালো মাহির পানে মাহি ঠোঁট বাকিয়ে হাসছে।ক্ষিপ্ত গলায় বললো আয়ান

এটা কখন করলে তুমি?এগুলাতে আমার সাইন কি করে এলো?

মাহি টান দিয়ে পেপারসগুলো নিজের হাতে নিয়ে বললো।

ওই যে সেদিন ভার্সিটির কাগজে সাইন করেছিলে না এগুলা সেই কাগজ,আসলে জানো কি সেদিন ভার্সিটির একটা ভুয়া ফর্ম উপরে রেখে নিচে এই কাগজগুলো রেখে দিয়েছিলাম আর তারপর তো তুমি সুরসুর করে সাইন করলে ভুলে গেছো।

তোমাকে আমি।

আয়ান মাহির দিকে রাগে তেঁড়ে গেলে ওই ইশান নামক লোকটা মাহির ঢাল হয়ে সামনে এসে যায়,আয়ানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে আয়ান উঠে আবার তেঁড়ে আসলে মাহি দুজন গার্ডকে ডাক দেয়, বাহির থেকে দুজন গার্ড এসে আয়ানকে ধরে নেয়।
আয়ান অতিরিক্ত রাগে এবার গর্জে বলছে।

তুমি আমার সাথে এতো বড় ফ্রড করতে পারো না মাহি,আমি তোমাকে ছাড়বো না,আমার সবকিছু এভাবে কেড়ে নিতে পারো না তুমি,এই সবকিছু আমার বাবার রেখে যাওয়া আমানত।যা শুধুই আমার।

এসব কিছুই তোমার না,এসব কিছুই আমার,বেবি…..হাহা হা।তোমার বাবা তো বোকা ছিলেন যে নিজের ছেলের নামে সব সম্পত্তি লিখে দিয়েছিলেন,আর মেয়ে বউয়ের নামে শুধু এই বাড়িটা,যা ওই বোকা দুইটাও তোমার নামে ট্রান্সফার করে দিলো,আসলে কি জানো ওরা ভেবেছিলো তুমি ওদের সব দায় ভার নিজের ঘাড়ে নিবে বিশ্বাস করেছিলো তোমায়,আর তুমি কি করলে আমায় বিশ্বাস করলে,সো তুমি ওদের ঠকিয়েছো আর আমি তোমায় ঠকালাম,সহজ সমাধান।
তোমার সম্পত্তি কিন্তু বিশাল,বাবা অনেক কিছু রেখে গেছেন ছেলের জন্য,উনি কি জানতেন সবকিছু ছেলে বউ পাবে,সো এখন তুমি নিজে থেকে বেড়িয়ে যাবে না আমি গার্ডদের একটু কষ্ট দিয়ে তোমাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করাবো।বেড়িয়ে যাও বাড়ি থেকে তোমার জিনিসপত্র কালকে গেটের বাইরে ফেলে দেওয়া হবে এসে নিয়ে যেও সকালে।

হয়তো এটা আমার কর্মফল,তবে তোকেও ছাড়বোনা আমি মাহি।

আয়ান চলে গেলো সেখান থেকে,যাওয়ার আগে নিজের বাবার রেখে যাওয়া শেষ স্মৃতি এই বাড়িটার দিকে একবার আবেগে ছলছল করে উঠা চোখ বুলিয়ে নিলো।
_________________

আয়েশা আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে,আঁখি ওকে শান্তনা দিতে ব্যস্ত।

আজকে হঠাৎ নোমানের বাবা সবার উদ্দেশ্যে বললেন দু-একদিনের মধ্যেই উনার বন্ধু রিহান উনার স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে পুষ্পিতাকে নিয়ে লন্ডন থেকে উনাদের বাড়িতে আসছেন, নোমানের সাথে পুষ্পিতার বিয়ের ডেইট ঠিক করতে,ওদের বিয়ে না কি অনেক আগে থেকে ঠিক করা,পুষ্পিতার পড়ালেখা শেষ না হওয়া অব্দি ওর বাবা বিয়েটা করাতে চাইছিলেন না,এবার ওর পড়ালেখা শেষ তাই বিয়েটা খুব জলদি সাড়তে চান উনি,উনারা এলে এক সপ্তাহের মধ্যে বিয়েটার ডেইট ফেলার ব্যবস্থা করা হবে,কথাটা শুনে আর আয়েশা নিজেকে স্বাভাবিক রাখতে পারলো না,রুমে এসে কাঁদতে শুরু করলো,ওর অবস্থা আন্দাজ করে আঁখিও ওর পিছু এলো।

কাঁদিস না,সব যে নিয়তির খেলা।

আমি এখানে আর থাকবো না রে,চল না আমরা কোথাও চলে যাই,আমরা দুজন মিলে আমাদের আর মায়ের সবকিছু ম্যানেজ করে নিতে পারবো,চল না।

আমিও যে তাই চাই,আর কতোদিন অন্যের ছায়াতলে থাকবো,আমি আজকেই ড.আদৃতের সাথে কথা বলছি,যতো তাড়াতাড়ি পারি আমরা এখান থেকে চলে যাবো,কিন্তু বর্তমানে তুই নিজেকে শক্ত কর,এভাবে ভেঙে পড়লে তো হবে না,প্রথম ভালোবাসা তো আর সবার কপালে জুটে না।

অনেকক্ষণ পর আঁখি আয়েশাকে একটু স্বাভাবিক করে আদৃতের কাছে এলো কথা বলতে,এসে দেখলো আদৃত ওয়াসরুমে, সার্জারী করে এসে শাওয়ার নিতে গেছে,তখনি বেজে উঠলো আদৃতের ফোন,আঁখি ফোনের দিকে না তাকিয়েই আদৃতকে বললো ওর ফোন এসেছে কিন্তু আদৃতের কান অব্দি কথাটা গেলো না শাওয়ারের জল পড়ার শব্দে,আঁখি ইমপোর্টেন্ট কল হতে পারে ভেবে ধরতে গেলো ফোনটা,স্ক্রিনে সেইব করা নাম দেখে একটু চমকালো আঁখি,নামটা আরু নামে সেইব করা,আঁখির মনে পড়লো আদৃত কভু ওকে বলেছিলো ও আরোহীকে আদর করে আরু বলতো,এমনকি ওর নাম্বারটাও এই নামে সেইব করেছিলো,তারমানে কি………?
আঁখির আর দুদিক না ভেবে ফোন উঠালো তবে কিছু বললো না আগে ওপর পাশের কথাগুলো শুনার সুবাদে।অপর পাশ নিরব কোনো শব্দ শুনতে না পাওয়ায় এবার আঁখি নিরবতা কাটালো।

কে আপনি?

এবার মেয়েলি একটা শব্দ ভেসে এলো আঁখির কানে?কন্ঠ স্বরটা যেনো পুরো নিজেরই কন্ঠ স্বরের হুবহু আন্দাজ করতে পারলো আঁখি।

আপনি কে?

আমি আঁখি,আপনি কে বলুন?

আগে বলুন আদৃত কোথায়?আপনার সাথে ওর কি সম্পর্ক? কি হয় ও আপনার?

আঁখি ভেবে পাচ্ছে না কি বলবে,দিদুর জন্য প্রায় সব জায়গায়ি আদৃতকে নিজের স্বামী পরিচয় দিতে হয় ওকে,তবে কি এখানেও তা বলা দরকার?যদি ওই মেয়েটা দিদুর পরিচিত কেউ হয়,আঁখি তো আর আসল সত্যও জানে না মেয়েটি কে তাই এবার ভেবে নিয়ে উত্তর দিলো।

আমি উনার স্ত্রী কেনো?আপনার তাতে কি কাজ?কে আপনি বলেন?

কেটে গেলো ফোনটা, আঁখি আশ্চর্য অনুভুতি নিয়ে আরও কয়েকবার ট্রাই করতে নিলে ওটা বন্ধ আসতে লাগলো প্রতিবার।আঁখি দুঃশ্চিন্তায় পরে গেলো,কে এই মেয়েটি,ও কি আরোহী?তবে আরোহী কেনো এবার আদৃতকে ফোন করবে,সবকিছু মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে আঁখির,ভাবলো বিষয়টি আদৃতকে বলবে পরক্ষণেই ভাবলো আদৃত অনেক কষ্টে নিজের অতীত পিছু ফেলে সামনে এগুতে নিয়েছে,এভাবে কিছু না জেনে ওর সুপ্ত অনুভুতি আবার জাগানো একদম ঠিক হবে না,তাই নাম্বারটা নিজের ফোনে নিয়ে আদৃতের ফোনের কল লিস্ট থেকে কেটে দিলো।

কিছুক্ষণের মধ্যে আদৃত বেড়িয়ে এলো,আঁখি আর আদৃতকে কিছু বলতে গেলো না,কিছুক্ষণ পর আদৃত রিলাক্স করে বসলে এবার ওকে উদ্দেশ্য করে বললো আঁখি।

ড.আদৃত,আমি বলি কি দিদুর শরীর এবার একদম ভালো,উনি তো এখন একদম স্বাভাবিক বিহেইব করেন,বলছি কি আমিই না হয় উনাকে বুঝিয়ে বলি,আর কতোদিন এখানে থাকবো।

আপনার কি এখানে কোনো সমস্যা হচ্ছে মিস আঁখি,আপনার আত্মসম্মানেও তো আমি কোনো আঘাত লাগতে দেই নি,আপনি এখানে থাকার জন্য যথেষ্ট ভাড়া দিচ্ছেন আমাকে,আমিও তো তা নিচ্ছি শুধু আপনার মান রাখতে গিয়ে,আপনি যেভাবে চাইছেন সেভাবেই থাকছেন।এমনকি আপনার চিকিৎসার ফি টাও আমাকে না চাইতে নিতে হচ্ছে, শুধু আপমার আত্নসম্মানের খাতিরে,তারপরও কি আপনার মনে হয় আমি আপনার সম্মান রক্ষার্থে পিছুপা হচ্ছি?কোনো দিক থেকে কি আপনাকে আমি নিরাশ করছি বলেন,যে আপনি চলে যেতে চান?

আপনি এভাবে কোনো বলছেন ড.আদৃত,আপনি কখনোই আমার সম্মান রক্ষার্থে পিছুপা হন নি আর হবেনও না এটা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি,কথা এটা নয়,কথা হলো যে আমি তো আর সত্যিই আপনার স্ত্রী না যে সারাজীবন এখানে থেকে যাবো,একদিন না একদিন তো আমায় চলে যেতে হবে,আপনি বলেছিলেন দিদু সুস্থ হয়ে গেলে উনাকে সব টা বুঝিয়ে বলবেন আর সেদিনটা তো আমার মনে হয় অনেক আগেই এসে গেছে।

আঁখির বলা স্বাভাবিক কথাগুলো আদৃতের কাছে অনেক তিক্ত মনে হলো,মন পিঞ্জরায় ঝড় উঠলো অল্পতে,আদৃত যেনো এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে,ওর মন যেনো এখন শুধু আঁখিকে চায় আর আদৃত চায় নিজের মনের শান্তি, তাই যেনো আঁখিকে যেতে দিতে একদম প্রস্তুত না আদৃতের হৃদয়, কিন্তু সে কথাটা আঁখিকে আন্দাজ করতে দিলো না,স্বাভাবিক স্বরে বললো আদৃত।

বিষয়টা নিয়ে পড়ে কথা বলবো,আমার কাজ আছে।

আদৃত ল্যাপটপ নিয়ে কিছু কাজে বসে গেলো।

আঁখি কিছুই বুঝে উঠতে পারে না আদৃতের এমন ব্যবহার,অন্য সব কিছুতে আদৃত স্বাভাবিক বিহেইব করলেও আঁখির যাওয়ার কথা শুনলেই কেমন অস্বাভাবিকতা দেখায়।
_____________________

আয়ান একটা ভাড়া রুম নিয়ে উঠেছে সেখানে,আজ কান্না আসছে অনেক,সব শেষ হয়ে গেলো ওর ,নিঃস্ব হয়ে গেলো আজ আয়ান,যে মাহির জন্য সব ছাড়লো আজ সেই মাহিই ওর সব কিছু কেড়ে নিলো,না আছে ওর কাছে পরিবার না আছে ওর বাবার রেখে যাওয়া স্মৃতি। হাসান ভিলা ওর বাবার স্বপ্ন মহল ছিলো যা আজ অন্যের কবলে,ওর মা-বাবা সবকিছু এজন্য ওকে লিখে দিয়েছিলেন কারন উনারা বিশ্বাস করতেন উনাদের ছেলে সব সামলে নিবে,উনাদের সবাইকে আগলে রাখবে আর সেই আয়ান আজ কারো বিশ্বাস জয় করে রাখতে পারলো না।আজ বড্ড মনে পড়ছে ওর মা বোনের কথা আঁখির কথা।বিছানায় শুয়ে চোখের জলে নিজের ব্যাথার্ত অনুভুতিগুলো ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে আয়ান।আজ বুঝতে পারছে সেদিন আঁখির কেমন লেগেছিলো যখন আয়ান ওকে ছুঁড়ে ফেলেছিলো,ওরও তো সেদিন কোনো আশ্রয় ছিলো না।ওর মা বোনের কেমন লেগেছিলো যেদিন ওরা চলে আসছিলো আর আয়ান ওদের আটকায়ও নি,ওদের তো ঘর থেকে চলে যেতে আয়ানই একপ্রকার বাধ্য করেছিলো।

সায়েদা প্রায় সারাদিন তাজবীরের সাথে কথা বলতে মগ্ন থাকে,কখনো ফোন দেয় আর বাকি সময় চেট করে,সায়েদা ইচ্ছে করেই এমনটা করে,তাজবীর কখনো ওকে নিজে থেকে টেক্সট করে না,তবে সায়েদা চায় তাজবীর যেনো সারাদিন ওতেই মগ্ন থাকে,তাজবীর কখনো কাজের ব্যস্ততা দেখালে সায়েদা রাগ করে যায়,কিন্তু তাজবীরও কেনো যেনো সায়েদার ওর সাথে রাগ করে থাকাটা মেনে নিতে পারে না তাই সব ফেলেই এখন সায়েদাকে সময় দেয়,সেদিনের ফ্রেন্ডশিপ করার পর থেকেই এমনটা করছে সায়েদা,প্রথম প্রথম সায়েদার কর্মকাণ্ড খনিক সন্দেহজনক মনে হলেও এখন যেনো তাজবীরের ওর উপর কোনো সন্দেহ নেই,আসতে আসতে সায়েদার উপর ওর বিশ্বাসটা যেনো দৃঢ় হয়ে উঠছে আরও,আর সায়েদা যেনো তাই ই চায়।

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here