মন_পিঞ্জর,পর্ব_৪০(সামথিং স্পেশাল প্লাস ধামাকা?)

0
697

#মন_পিঞ্জর,পর্ব_৪০(সামথিং স্পেশাল প্লাস ধামাকা?)
#লেখিকা_আরোহী_নুর

প্রায় তিন বছর পর চোখের সামনে নিজের পরিবারের সবাইকে একসাথে দেখে চোখের জল আটকাতে পারলো না আঁখি,নিজের চোখে বিশ্বাসই হচ্ছে না ওর,মাকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পরেছে,দাদু আর দিদুভাইকে পাশ থেকে সরতেই দিচ্ছে না,তবে দেখতে পাচ্ছে না নিজের বাবাকে,তাই ব্যাথার্থ কন্ঠে এবার ওর মাকে জিজ্ঞেস করলো।

মা বাবা আসে নি?

তখনি দরজা দিয়ে প্রবেশ করেন ফায়সাল খান,উনাকে দেখে আঁখির পৃথিবী যেনো পলকে থমকে যায়,ভাবে নি সেই প্রিয় মুখ আর কখনো দেখতে পাবে,মুখে এক ফালি হাসি ফুঁটিয়ে ডেকে উঠে বাবা বলে,চোখ টপকে বেড়িয়ে আসে জল,ফায়সাল খানের ক্ষেত্রেও তার ব্যতীক্রম হয় না,এই তিন বছরে নিজের কলিজার টুকরোর মুখে বাবা ডাক শুনার অপেক্ষায় মনটা যে কতোটা উতলা হয়ে উঠেছিলো তা শুধু উনিই জানেন,আজকে যে উনার অপেক্ষার অবসানের ক্ষন চলেই আসলো,কিন্তু পরক্ষণেই আঁখির মনে পরলো তিক্ত অতীতের কথা,অনুশোচনায় চোখ নামিয়ে নিলো,অল্প ক্ষনে নিজের সামনে নিজের বাবার উপস্থিতি অনুভব করতে পারলো আঁখি,ওর বাবা কান্নায় ধরে আসা গলায় বলে উঠলেন।

কথা বলবি না বাবার সাথে?

ব্যাথার্থ কন্ঠে বলা নিজের বাবা এই কথাটা অন্তর আত্মা কাঁপিয়ে তুলে আঁখির,হাত ঝাপটে আঁকড়ে ধরে ফায়সাল খানকে,আর ফুপিয়ে কেঁদে দেয়।

বাবা আমায় ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি,আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা।

পাগলি মেয়ে আমার,নিজের সন্তানদের থেকে বাবা মা আর কতোদিন রাগ করে থাকতে পারে?তুই যে আমার কলিজার টুকরো, তোর সাথে রাগ করে থাকা মানে পৃথিবীর সব সুখ অবহেলা করে বেঁচে থাকা।অনেক হয়েছে আর না,আমি তোকে আমার সাথে করে নিয়ে যাবো,তুই আমাদের সাথে থাকবি।

কথাটা আঁখি আদৃত দুজনেরই চেহারায় নিরাশতার ভাব ফুঁটিয়ে তুললো,তবে দুজনেরই কারন আলাদা।আঁখি এবার আমতা কন্ঠে বললো।

বাবা আমি যাবো না,আমি জীবনে এবার নিজে থেকে কিছু করতে চাই,নিজে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই,বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ।

একদম চুপ,বোঝা ভাবিস আমাদের উপর নিজেকে? আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না,আমার এতো সহায় সম্পত্তি আমি কার জন্য জমিয়ে রেখেছি,বলে না কি বাবা আমি একা নিজের পায়ে দাঁড়াবো,কখন এতো বড় হয়ে গেলি,ছোটোবেলা হাতটেও তোকে আমিই শিখেয়েছি আর তোর জীবনে চলার অংশও আমি হবো,বাবা মায়ের কাছে সন্তান কখনো বোঝা হয় না,আর সন্তানকেও নিজেদের কখনো বাবা মায়ের উপর বোঝা ভাবতে নেই,এতে মা বাবারই অসম্মান হয়,তুই কি এবার আমাদের অসম্মান করবি?

তুমি আমাকে ব্লেকমেইল করছো বাবা।

ঠোঁট উল্টিয়ে বললো আঁখি কথাটি।ওর বাবা এবার হেসে বললেন।

মনে কর তাই,শুনেছি আগেও এটা নিয়ে তাজবীরকে মানা করিছিস এবার যদি আবারও যেতে মানা করবি তবে তাজবীর আর আমি মিলে কান ধরে তোকে বাড়িতে নিয়ে যাবো।

তোমার কথা না হয় বাদ দিলাম,তবে ভাইয়া এমন করলে আমি ওকে কিন্তু বুড়ো একটা বউ বিয়ে করাবো।

তোর কপালে বুড়ো বর ঝুটবে শাঁকচুন্নি, কথাটা বলেই তাজবীর আঁখির নাক ধরে আলতো টান দিলো,সবাই হাসতে শুরু করলো,এদিকে আদৃতের মুখে হাসি নেই,আঁখি চলে যাবে এই টেনশনে।

______________

আঁখির বাবাকে কেবিনের বাইরে দাঁড় করায় আদৃত।

আঙ্কেল একটা কথা ছিলো আপনার সাথে?আসলে একটা রিকুয়েষ্ট করতে চাইছিলাম আপনাকে।

হুম বলো?

আসলে আমি বলছিলাম যে আঁখি একদম সুস্থ না হওয়া অব্দি আমার কাছে…….আই মিন আমাদের ওখানে থাকুক……..প্লিজ।

আঁখির বাবা যেনো আদৃতের কথায় কিছু একটা আন্দাজ করে নিলেন,যার ফলস্বরূপ বাঁকা হাসলেন উনি,হাসিতে খনিক রহস্যের ছাঁপ, অতঃপর বললেন।

ওকে মাই সন,আমি যতটুকু জানি তোমার থেকে ভালো খেয়াল আমার মেয়েটার হয়তো আমিও রাখতে পারবো না,গত কদিনে তুমি সত্যিই আমার মন জয় করে নিয়েছো,আঁখি তোমাদের এখানেই থাকবে।

থ্যাংক ইউ আঙ্কেল।

আঁখির বাবা মৃদ্যু হাসি উপহার দিয়ে চলে গেলেন,আদৃতের মুখে ফুঁটলো রাজ্য জয় করা হাসি,আদৃত এবার মনে মনে বলতে লাগলো।

উনি একবার সুস্থ হয়ে গেলে তখন আপনার কাছ থেকে উনাকে সারাজীবনের জন্য চেয়ে নিবো আর যতটুকু জানি আপনি আমাকে ফেরাবেন না।আদৃত মনে মনে অফুরন্ত প্রাপ্তির খুশিতে মেতে উঠেছে,ঠোঁট থেকে হাসি সরছে না ওর।
আয়ান অনেক খুশি আজ আঁখির জ্ঞান ফিরেছে,কেউ ওকে আঁখির সাথে দেখা করতে দেয় না তাই সবার অগোচরে লুকিয়ে দেখা করতে গেছে আঁখির সাথে,তবে আঁখি ওকে অবহেলা করে নি,স্বাভাবিক ব্যবহার করেছে ওর সাথে,ও আঁখির জন্য ওর পছন্দের এক বক্স চকলেটও নিয়ে এসেছে যা ফিরিয়ে দেয় নি আঁখি,কারন আঁখি জানতে পেরেছে আঁখির এই অবস্থার কারনস্বরূপ আয়ানকে অনেক মাসুল দিতে হয়েছে,কেউই ওর সাথে ভালো ব্যবহার করে নি,আয়ানের অবস্থা সম্পর্কে জেনে ওর জন্য অনেকটা সহানুভূতি হয় আঁখির তাই।কিন্তু আঁখির এই ভালো ব্যবহার আয়ানের মনে একটু হলেও প্রশান্তির কারন হয়ে ফুঁটে উঠেছে।আয়ান এদিকে জানতে পেরে গেছে আদৃত আঁখি স্বামী স্ত্রী নয়,তবে এখন কাউকে কিছু বলে নি,সঠিক সময়ে অনেক কিছু করার চিন্তাভাবনা করে নিয়েছে আয়ান,এখন যে ওর একটাই লক্ষ্য নিজের ভুলের কারনে যা হারিয়েছে তা আবারও জয় করা।

তাজবীর বেড়িয়ে যাচ্ছিলো বোনের পছন্দের কিছু জিনিস আনতে,বোনটা ওর এতোদিন পরে ফিরে এসেছে,আজ যেনো তাজবীর থেকে খুশি আর কেউ না,ঠোঁটে হাসি লেপ্টে আছে,বেড়িয়ে যেতে গিয়ে হঠাৎ আন্দাজ করলো কেউ ওর হাত ধরে নিয়েছে, পিছন ফিরে তাকিয়ে দেখে সায়েদা,ওকে দেখতেই মুখের হাসি উদাও হয়ে গেলো তাজবীরের,তবে এর কারন ওর প্রতি ঘৃণা না বরং ওর সায়েদার হাল।সায়েদার দিকে তাকানোই যাচ্ছে না,চোখের নিচ কালো হয়ে গেছে,শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে আছে,যেনো খাবারের সাথে ওর সব সম্পর্কই শেষ,মুখটা কেমন ফ্যাকাশে হয়ে গেছে,প্রায় দুমাসে আজ দেখেছে তাজবীর সায়েদাকে,এ দুমাসে ওর স্মৃতি তাজবীরকে অনেকটা বিরক্ত করলেও নিজেকে সামলে নিয়েছে তাজবীর,মন ভাঙা আর বোনকে হারানোর ভয় কিভাবে একসাথে মানিয়ে নিয়েছে তা শুধু ওই জানে,এদিকে দীর্ঘ দু’মাস পর তাজবীরকে দেখতে পেয়ে শুকিয়ে থাকা ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটিয়ে তুললো সায়েদা।

তাজবীর কর্কশ গলায় বললো।

আমার হাত ছাড়েন?

সায়েদা কেঁদে দিলো,তারপর ফুঁপিয়ে বলতে লাগলো।

আমাকে ক্ষমা করে দাও তাজবীর,আমি আসলে বুঝতে পারি নি যে আমি কতো বড় পাপ করতে যাচ্ছিলাম,আর সেই পাপের অনুশোচনা আমায় দিন দিন খুঁড়ে খাচ্ছে,আমায় ক্ষমা করে দাও,প্লিজ আমাকে একটা সুযোগ দাও,আমি তোমাকে কখনো নিরাশ করবো না,আল্লাহর কসম করে বলছি।

অন্তত আল্লাহ তায়ালার মিথ্যে কসম খাবেন না মিস সায়েদা,আবার আপনার ওই ছল চাতুরীতে পরার ভাবনা আমি কল্পনাতেও আনতে পারি না,আমার কাজ আছে ছাড়েন আমায়।

তাজবীর হাত ছাঁড়িয়ে চলে যায়,সায়েদা বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,যখন ও মিথ্যে বলেছে তাজবীর কিছু না ভেবেই বিশ্বাস করে ফেলেছে সে কথাগুলোতে,আর আজ যখন সত্য বলছে তবে তাতে বিশ্বাস করার কথা ভাবতেও চাইছে না তাজবীর,তাজবীর সায়েদাকে তুমি করে ডাকতো এখন আপনি করে ডাকছে যা খুঁড়ে খাচ্ছে সায়েদার মন,তাজবীর যে ওকে পর করে দিচ্ছে যা মোটেও মানতে প্রস্তুত না সায়েদার বেহায়া মন পিঞ্জর।

আজ কেটে গেলো বেশ কটা দিন,আদৃত আঁখির এমনভাবে খেয়াল রাখছে যেনো ও ৬ মাসের বাচ্চা,আদৃতের আঁখিকে নিয়ে এতো টান,এতো খেয়াল ভালোই লাগে আঁখির,মনের কোনে জমে থাকা কিছু অজানা অনুভুতির মানে যে আঁখিও বুঝতে সক্ষম হয়েছে,যা খুব জলদি জানাতে চাইছে আদৃতকে,আর ও জানে আদৃতও তাকে ফিরিয়ে দিবে না,উক্ত অনুভুতি যেনো আদৃতের চোখে নিজের জন্যও আন্দাজ করতে পারে আঁখি,এদিকে আয়ান প্রায়ই আসে ওর সাথে দেখা করতে,কেউ প্রথম প্রথম ওকে আসতে দিতো না কিন্তু পরে আঁখিই চায় ওকে আসতে দেওয়া হোক,অতীতে যা হওয়ার হয়ে গেছে ও আর আয়ানের জীবনে ফিরে যাবে না আয়ান চাইলেও কিন্তু একজন বন্ধু হিসেবে তো আয়ানের পাশে থাকতেই পারে,তবে আয়ান আঁখির এই ভালো ব্যবহারের মানে অন্যভাবে মনের ভিতর পোষন করে চলেছে।প্রথমে আঁখি আয়েশা আর মিরা মাকে নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যেতে চেয়েছে,তাজবীর, ফায়সাল খান আর উনাদের পরিবার অনেক খুশি হন তাতে,কিন্তু পরক্ষণে আয়ানের প্রচেষ্টা দেখে আঁখি আয়েশা আর মিরা মাকে বুঝিয়ে বলে আয়ানের সাথে চলে যেতে,আয়ান মিরা মায়ের পায়ে পরে মাফও চেয়েছে,আয়েশার কাছে হাত জোর করে আরেকটা সুযোগের জন্য যাতে ওরা আর ওকে ফিরাতে পারে নি,তবে আঁখি সুস্থ হওয়ার আগে ওরা যাবে না এটা বলে দিয়েছে।

আঁখি এখন প্রায় সম্পুর্ন সুস্থ,অনেকদিন ধরেই আদৃত মনে মনে অনেক কিছু জমিয়ে রেখেছিলো আঁখিকে বলবে বলে,তবে তার সঠিক সময় খুঁজছিলো,আর আজ সুযোগ বুঝে তার সব ব্যবস্থা করে নিয়েছে,আঁখিকে এতোদিন আদৃত নিজের রুমেই রেখেছে ওর যথেষ্ট খেয়াল রাখার সুবিধার্তে যার জেদ আদৃতেরই ছিলো,আজ দু তিনদিন হলো ওকে আদৃতের পাশের রুমে শিফ্ট করা হয়েছে,যেহেতু এখন দিদুও জানে ওরা স্বামী স্ত্রী নয়।আঁখি সকাল সকাল শাওয়ার নিয়ে ওয়াসরুম থেকে বেড়ুতেই হঠাৎ চোখ গেলো ড্রেসিংটেবিলের দিকে ওখানে সুন্দর গিফ্টপেপারে মোড়ানো একটা বক্স রাখা,আঁখি বেশ কৌতুহল নিয়ে ওটার দিকে এগুলো, তারপর ওটা খুলেই নিলো,ভিতরের জিনিসগুলো দেখে ঠোঁটের কোনে এক চিলতে হাসি ফুঁটলো ওর।ভিতরে আছে নীল রঙের একটা শাড়ী,সাথে মেচিং করা কিছু জুয়েলারি,নিচে একটা নীল রঙের চিরকুটও,আঁখি মৃদ্যু হেসে উঠালো চিরকুটটা,মন যেনো বলেই দিয়েছে ওকে অনেক আগ থেকেই যে এটা কার কাজ হতে পারে,যার পরিনামস্বরুপ এই হাসি,তবে চিরকুটা পড়ার পর মুখের সে হাসিটা আরও প্রশস্থ হলো,ওটাতে লিখা।

মিস আঁখি,
‌‌‌‌
আপনার পছন্দ সম্পর্কে তেমন কিছু জানি না,তাই নিজের পছন্দ অনুযায়ী একটু সাজানোর চেষ্টা করলাম আপনাকে,নীল রঙ টা আমার বড্ড পছন্দ, আশা করি আপনারও ভালো লাগবে,প্লিজ ওগুলো পরে সন্ধ্যা ৭ টায় আমার বলা এড্রেসে চলে আসবেন,আমি আপনার অপেক্ষা করবো,আপনার ফোনে এড্রেসটা সেন্ড করে দিয়েছি।একটু তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবেন আপনাকে যে অনেক কিছু বলার আছে যার জন্য অপেক্ষা আর করতে পারছে না আমার ব্যাকুল এই মন পিঞ্জরখানা।

আপনার
ড.আদৃত

আপনার ড.আদৃত কথাটা যেনো মন ছুঁয়ে যায় আঁখির।দিন যেনো ওর কাটছিলোই না কখন জানি সন্ধ্যা হবে,অবশেষে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো,শাড়ীটা পড়ে নিলো আঁখি,নীল কালারের ওড়না দিয়ে হিসাব করেছে,চুলগুলো পুরোপুরি ফিরতে যে এখনও অনেক সময় বাকি,চুল না থাকায় প্রথম প্রথম অনেক নিরাশ হয়েছিলো আঁখি তবে আঁখির নিরাশতা বেশিক্ষণ থাকতে দেয় নি আদৃত,চুলের ভিগও এনে দিয়েছিলো আঁখিকে যাতে আঁখি নিরাশ না হয়ে থাকে,ওর মন ভালো রাখার কোনো রাস্তাই যে ছাড়ে না আদৃত।
হিজাব করে চোখে গাঢ় করে কাজল দিয়েছে,আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক ,হাতে নীল রঙের চুড়ি,বেশ বিনা সাজেই ওকে যেনো অপসরা দেখাচ্ছে।আঁখি বরাবরই অসাধারণ সুন্দরী, এতো বেশি সাজগোছ করে না তবে আয়ানের জন্য সাজতে ওর ভালোই লাগতো,আজ আবারও অনেক ভালো লাগছে একটু সাজতে পেরে তবে সে সাজ আজ আয়ানের জন্য না বরং যে শুধু আদৃতের জন্য,এই লোকটাই যে আঁখির মনের অজান্তেই ওর সবকিছুতে অধিকার জমিয়ে নিয়েছে,অনুভুতিটা মনে সুখের দোলা ভাসিয়ে দিচ্ছে আঁখির,আজ আঁখি অনেক খুঁশি,আজকে আদৃতকেও আঁখি নিজের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা অনুভুতিগুলো প্রকাশ করবে ভেবে নিয়েছে।

আঁখি রেডি হয়ে বেড়ুবে তখনি ড্রাইবার জুবেল গাড়ি নিয়ে ওর সামনে আসে।

ম্যাম উঠে পরেন,আদৃত স্যার বলেছেন আপনাকে নিয়ে যেতে।

আঁখি মৃদ্যু হেসে উঠে পরলো।

গাড়ি থামালো একটা সুন্দর ফার্মহাউজের সামনে।এটা আদৃতের জানতো আঁখি তবে এর আগে কখনো এখানে আসা হয় নি,আদৃত ওকে প্রায়ই বলতো যখন ওর ভালো লাগে না তখন ও এখানে চলে আসে একা কিছু সময় পার করতে আর এখানে আসতে ওর ভালোই লাগে,আঁখি এবার এগিয়ে গেলো ভিতরের দিকে,চারিদিকেই হরেক রঙের লাইট জ্বলছে,বিভিন্ন ধরনের ফুল আর হার্ট সাইজের বেলুন দিয়ে সাজানো,পায়ের চারিপাশে গোলাপের পাপড়ির বিছানো পুরো এরিয়াটা জুরে,অনেকগুলো ক্যান্ডেলও জ্বলছে আশেপাশে , সুন্দর লাগছে আঁখির এ সবকিছুই,একদম ওর কল্পনার মতো পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যা কখনো কেউ ওর জন্য করে নি,হয়তো আঁখি আয়ানের থেকে কখনো এমন কিছু মনে মনে আশা করলেও মুখ ফুঁটে বলে নি,চারিদিকের সৌন্দর্যে বিমোহিত আঁখি,একটা বক্সে চলছে হালকা সাউন্ডে রোমান্টিক গান, হৃৎস্পন্দনের গতি যেনো ক্রমাগত বেড়েই চলেছে আঁখির,হয়তো বড় কোনো প্রপ্তির পূর্বাভাস পেয়েছে তাই,আঁখির চোখদুটো শুধু আদৃতকেই খুঁজছে আশেপাশে, কোথাও খুঁজে পাচ্ছে না ওকে,হঠাৎই কেউ ওর পিছন থেকে ওর চোখগুলো বেঁধে দিলো,তবে আঁখি ঘাবড়ালো না কারন চিরচেনা সেই স্পর্শে যে আস্থা ওর নিজের থেকেও বেশি,আদৃত আঁখির চোখ বেঁধে দিয়ে ওর হাত ধরে নিয়ে এলো কোথাও, হঠাৎ ওকে ছেঁড়ে দিয়ে অল্প ক্ষন সময় কাটিয়ে বললো এবার চোখের বাদন খুলে নিতে,আঁখি ঝটফট তাই করলো,চোখ খুলে সামনের দৃশ্য দেখে আঁখি কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না,নিজের চোখে বিশ্বাস কিভাবে করবে ও, ফুলের পাঁপড়ি দিয়ে তৈরি বড় একটা হার্টের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে আঁখি,তারই ঠিক সামনে আদৃত হাঁটুগেরে বসে আছে হাতে একটা ডায়মন্ডের আঁটি,নীল কালারের শার্ট পরেছে,হাতে ঘড়ি,সামনের চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে,অন্যদিনের তুলনায় আদৃতকে আজ বড্ড বেশি আকর্ষণীয় মনে হলো আঁখির ,আদৃত ভালোবাসাময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে।

মিস আঁখি, কখনো ভাবি নি জীবন আমাকে দ্বিতীয় সুযোগ দিবে,কিন্তু জীবন যে আমায় দ্বিতীয় সুযোগ হিসেবে আপনার মতো কাউকে দিয়ে দিবে তা কল্পনার বাইরে ছিলো,জানিনা কখন আর কিভাবে তবে আপনি যে আমার নিশ্বাসের সাথে মিশে গেছেন,আমার যে আপনাকে বড্ড প্রয়োজন,আমি জীবনে এগিয়ে যেতে চাই তবে সেই পথে যে আপনার সঙ্গ চাই আমার,আপনার হাত ধরে আপনার ওই আলকিত জগতের ধিদ্বার করতে চাই আমি,শেষ নিশ্বাস অব্দি ভালোবেসে যেতে চাই আপনাকে,আপনি দেবেন কি এগিয়ে নিজের হাত,নিবেন কি আমাকে নিজের আলোকিত জীবনে ভরে,আসবেন কি আমার জীবন সুখের ছোঁয়ায় মাতিতে দিতে,দিবেন কি আমার ভালোবাসার প্রতিদানটুকু,তা না দিলেও হবে,শুধু আপনাকে একটু ভালোবাসার অধিকার দিয়ে দিয়েন আমায়,এটাকেই জীবনের বড় পাওয়া মনে করে স্বচ্ছন্দে জীবন পার করে দিতে পারবো।আমি যে আপনাকে নিজের জীবনে ভরে নিতে চাই বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনের মধ্য দিয়ে,বাকি জীবনটা কাটাতে চাই আপনার সাথে।
সো মিস আনাহিতা তাবাসসুম আঁখি উইল ইউ মেরি ইওর ড.আদৃত।ওরফে কাকতাড়ুয়া।

কথাগুলো আঁখির চোখে জল নিয়ে এলো ,যা চোখ টপকে বেড়িয়ে আসলো নিমিষেই, এগুলো যে খুশির জল,চোখের জল মুছে মুখে এক ফাঁলি হাসি ফুঁটালো আঁখি,আদৃত জবাবের আশায় উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আঁখির পানে,আঁখি কিছু বলবে এর আগেই পাশ থেকে কারো জোড়ালো কন্ঠ কানে ভেসে উঠলো ওদের।

এটা কখনোই সম্ভব না আদৃত,তুমি শুধুই আমার।

দুজনই পাক ফিরে তাকিয়ে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো,সামনেই দাঁড়িয়ে আছে সয়ং আরোহী।চোখে মুখে কান্নার স্পষ্ট ছাঁপ।

আঁখির হতবাকতা বেশিই,সয়ং যেনো আঁখি নিজেকেই দেখছে,হুবহু ওর মতোই কি করে অন্য কেউ হতে পারে।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here