#মন_পিঞ্জর,পর্ব_৪১
#লেখিকা_আরোহী_নুর
আরোহীকে দেখে আদৃত বসা থেকে উঠে পড়লো,কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না আরোহী এখানে কি করছে,তাই হতভম্ব ভাব নিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো।
আরোহী তুমি এখানে?
হ্যাঁ আমি,আমি চলে এসেছি আদৃত,আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি,বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে আমি মরিচিকার টানে হিরে কে ছুঁড়ে ফেলে চলে গিয়েছিলাম।তবে সময়ের সাথে সত্যতা অনুমান করতে পারলাম।
সেদিন যখন তুমি আমাকে আর আদনানকে নিজের উদ্যোগে এয়ারপোর্টে রেখে এসেছিলে তখন তোমাকে যেনো আসতে দিতে চাইছিলো না আমার বোকা মন,তবে সে অনুভুতিকে আমি মোটেও পাত্তা দিতে সক্ষম হতে পারলাম না সে ক্ষনে,চলে গেলাম ওর সাথে,তুমিই তো আদনানকে লন্ডনে ভালো একটা কাজ পাইয়ে দিলে,থাকা খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করে দিলে যাতে ও আমাকে সুখি রাখতে পারে,ওর তো কেউই ছিলো না,দেশে থাকাকালীন নিজের নানুর উদ্যোগে বেশ পড়ালেখা করে নিতে পারলেও কোনো কাজে লাগতে পারে নি,তবে হঠাৎ করে আভিজাত্যের ছোঁয়া পেয়ে ও যেনো দিন দিন কেমন পাল্টাতে থাকে,নিজের কাজে যতো উন্নতি করছিলো আমার থেকে ততোটাই দূরে যেতে শুরু করে,একসময় খবর পাই ও মেয়েদের সাথে পরকীয়ার লিপ্ত হয়,রাতের পর রাত বাড়ি আসতো না,বিভিন্ন পাবে মদ খেয়ে পড়ে থাকতো মেয়েদের সাথে।আমি অনেক চেষ্টা করি ওর সাথে নিজের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার তবে ব্যার্থ হই,ও আমাকে চলে যাওয়ার জন্য মানসিকভাবে টর্চার করতে শুরু করে,একদিন তো সব সীমা লঙ্ঘন করে ও আমার উপর হাত উঠালো,ডিভোর্স পেপারে সাইন করতে বাদ্য করলো আমায়,তারপর আমায় বের করে দিলো নিজের জীবন থেকে, আমার আর কিছু করার থাকলো না,তখন আর এই সাহসটুকুও ছিলো না তোমাকে ফোন করে এসব বলি,কোন মুখেই বলতাম তোমাকে এসব?যার কারনে তোমার মতো নিঃস্বার্থ মানুষকে সারা জীবনের জন্য পীড়া দিয়ে গেলাম সেই স্বার্থপরটা আমাকে জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেললো অল্পতে মন ভরে উঠলে,এটা যে আমার পাপের সাজা ছিলো আস্তে আস্তে তা অনুভব করতে পারলাম,সাথে অনুভবে এটাও ধরা দিলো যে আমি তোমাকে ভালোবাসি,দেশে ফিরে আসলাম কোনো মতে,আমি যাতে কখনো কোনো অভাবে না পরি তাই তুমি দিনাজপুরে বড় একটা বাংলা আমার নামে লিখে দিয়েছিলো,দেশে ফিরে আমি সেখানেই উঠি,তারপর একটা স্কুলে শিক্ষিকা হিসেবে নিয়োগ হই,ভেবেছিলাম দূর থেকে তোমাকে ভালোবেসে জীবনটা পার করে দিবো কিন্তু পারি নি,সময়ের সাথে তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বাড়তে থাকে,অবশেষে আন্দাজ করতে পারি আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবো না আর,যেকোনো মুল্য দিয়ে হোক না কেনো আমি আবার তোমাকে ফিরে পেতে চাই,তাই তোমার সাথে কয়েকদিন যোগাযোগ করার চেষ্টা করি,সেদিনও তোমায় ফোন করেছিলাম কিন্তু যখন তুমি ফোন উঠালে আর মনে সাহস জুটিয়ে উঠে পারলাম না তোমার সাথে কথা বলার তাই ফোন কেটে দিলাম,অতঃপর আবারও নিজের অনুভুতিগুলোকে সামলানোতে লেগে পরি কিন্তু ব্যার্থ হই, আবারও মনে সাহস জোটাই তোমার কাছে ফিরে আসার,কিন্তু তখন তোমার সাথে আঁখিকে দেখতে পাই,খবর নিয়ে জানতে পারি আঁখি নামের কাউকে যে হুবহু দেখতে আমার মতো তুমি (লেখিকা:আরোহী নুর) তাকে বিয়ে করেছো,কথাটা শুনার পর নিজের কানে বিশ্বাস হয় নি আমার,তাই তোমাদের পিছু আমি রাঙামাটিও যাই,অনেক পিছু করার পর গতকাল জানতে পারি তোমরা স্বামী স্ত্রী নও,তুমি বিশ্বাস করবে না আমি কতোটা খুশি হয়েছি কথাটা শুনে।
কথাগুলো বলেই চট করে এসেই আরোহী আদৃতের পায়ে পড়ে গেলো,তারপর অঝোর কান্নায় ফেঁটে পড়ে ফুঁপিয়ে বলতে লাগলো।
আমাকে ক্ষমা করে দাও আদৃত,আমি জেনে শুনে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি যার প্রশ্চিত্য হয়তোবা কোনো মতেই কখনো করতে পারবো না,তবে তুমি এর জন্য আমাকে যা সাজা দিতে চাইবে আমি তা মাথা পেতে নিবো,তবুও তুমি আমার জায়গা অন্য কাউকে দিও না,আমি তোমায় ভালোবাসি আদৃত, আমাকে একটা সুযোগ দাও,এতো বড় সাজা আমায় দিও না,এই সাজাটা আমি নিতে পারবো না,পরিবর্তে না হয় আমাকে গলা টিপে মেরে ফেলো।
আদৃত ঠায় দাঁড়িয়ে আছে পাথরের মতো,চোখ উপছে পরছে ওর জল,এদিকে আঁখি ভাবলেশহীন হয়ে ধিদ্বার করছে সামনে চলারত দৃশ্য,আঁখি কি করবে বা বলবে কিছুই ভেবে উঠতে পারছে না,এদিকে আদৃত এবার নিজের স্তব্ধতা ভাঙলো,আলতো হাতে উঠালো আরোহীকে,তারপর গম্ভীর মুখে স্বাভাবিকতার ছাঁপ ফুটিয়ে বললো।
তুমি ফিরে আসতে অনেক দেরি করে ফেলেছো আরোহী,তুমি চলে যাবার পর নিজেকে কিভাবে সামলেছি আমি জানি,তুমি তো নিজের সুখের সন্ধানে চলে গিয়েছিলে,হয়তো কভু ফিরবে না বলে তবুও আমার বেহায়া মন পিঞ্জর দিনশেষে তোমার পথ চেয়ে বসে থাকতো,এতোটা ভালোবেসেছিলাম তোমাকে যে তুমি সবকিছু ছেড়ে আবারও ফিরে আসলে তোমায় আপন করে নিতাম কোনোদিক বিবেচনায় না এনে,কিন্তু তুমি আসো নি,দিনের পর দিন একা নিজের মনের সাথে লড়াই করে গেছি,জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচেছিলাম,তবুও তুমি ফিরো নি,তারপর জীবনে আসলো আঁখি,আমাকে হাত ধরে এগুতে শিখালো,আবারও বেঁচে উঠার প্রেরণা জাগালো ,জীবনে এগিয়ে যেতে উৎসাহ জোটালো মনে,আবারও ভালোবাসতে শিখালো,পুরাতন আমিকে পিছন ফেলে আমি ওর সাথে নতুন এক আমিতে মেতে উঠলাম আর আজ যখন সেই জীবনের সুন্দর একটা সূচনা করতে যাচ্ছিলাম তখন এসে তুমি বলছো যে তুমি আমায় ভালোবাসো,তোমার দ্বিতীয় সুযোগ চাই,একবারও ভেবেছো আজ যদি দ্বিতীয় সুযোগ দেওয়ার জন্য আমিই থাকতাম না তবে কার কাছে চাইতে সেই সুযোগটা,তোমাকে এতোটা ভালোবেসেছিলাম যেনো তোমাকে ছাড়া সবকিছু দমবন্ধ লাগতো,যদি তখন মারা যেতাম তবে কি পারতে আমায় ফিরিয়ে আনতে….. (লেখিকা:আরোহী নুর)….পারতে না।তুমি আজও আসতে না আমার কাছে ফিরে যদি আদনান তোমাকে তাড়িয়ে না দিতো।আসলে আজকে বড্ড হাসি পাচ্ছে আমার,মানুষের স্বার্থপরতারও একটা লিমিট থাকে,তোমার তো দেখছি তাও নেই,তুমি নিজে অন্যের হাত ধরে চলে গিয়ে আমার কাছ থেকে আশা করছিলে যেনো আমি তোমার আশায় জীবন পার করে দেই?হয়তো আমিও তাই করতে চেয়েছিলাম, ভালো যে বেসেছিলাম তোমাকে অনেক, কিন্তু আঁখির সাথে থেকে বুঝতে সক্ষম হলাম স্বার্থপরদের কখনো ভালোবাসতে নেই,যারা অন্যকে কষ্ট দিয়ে খুশি থাকে তাদের থেকে দূরে থাকাই ভালো,তাদের কাছে ভালোবাসার কোনো মানে থাকে না,তবুও হয়তো তুমি আরও আগে আসলে তোমাকে নির্ধিদায় জীবনে নিয়ে নিতাম কিন্তু এখন আর তা সম্ভব না,কারন এখন আমার সর্বস্বে শুধু আঁখির বসবাস।
তুমি এতো সহজে আমার জায়গা অন্যকে দিয়ে দিলে আদৃত?
আমি তোমার জায়গা কাউকেই দেই নি আরোহী,আঁখি নিজের জায়গা বানিয়ে নিয়েছে,তুমি যে জায়গায় ছিলো সেখানে একসময় শুধু ভালোবাসা ছিলো তোমার জন্য,কিন্তু আজ সেখানে তোমাকে নিয়ে ঘৃণা ছাড়া কিছুই নেই,আর আঁখি যেখানে আছে ওখানে শুধুই ভালোবাসা,চাইলেও সেখানে ঘৃণার উৎপত্তি আমি করতে পারবে না,হয়তো আঁখি আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা না,তবে ও আমার জীবনের শেষ ভালোবাসা,প্রথম ভালোবাসা হয়তো সব থেকে আলাদা অবস্থানে থাকে,তবে শেষ ভালোবাসা নিশ্বাসের সাথে মিশে যায়।আর আঁখিও আমার কাছে আমার নিশ্বাসের সমতুল্য।
কথাটা আরোহীর মনে ব্যাথার্থ অনুভুতির সৃষ্টি করলো,চোখ বেয়ে পানি নামা থামে নি ওর,এদিকে আদৃতের বলা কথাগুলো শুনে কি প্রতিক্রিয়া করবে ভেবে পাচ্ছে না আঁখি,হয়তো এই কথাগুলোই অনেক আগ থেকে আঁখি শুনতে চাইছিলো কিন্তু এমনভাবে শুনতে পাবে ভাবে নি।
আদৃত এবার টান দিয়ে আঁখির হাত নিজের হাতে নিয়ে ওর অনামিকা আঙুলে ডায়মন্ডের আংটিটা পরিয়ে দিলো,আরোহীর সামনেই।
আরোহী আঁখি দুজনই ভ্যাবাচ্যাকা খেলো এতে।
আদৃত এবার আরোহীকে উদ্দেশ্য করে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললো।
নাও উই আর এংগেইজ্ড, সি ইজ মাই ফিয়ানসে,আর দুদিনের মধ্যে আমি ওকে বিয়েও করছি আশা করি আমাদের মধ্যে আসার চেষ্টা করবে না।
কথাটা বলে আদৃত আঁখির হাত ধরে সেখান থেকে নিয়ে যায়,আঁখি এখনও পরিস্থিতির তাল সামলে উঠতে পারছে না,এদিকে আরোহী কান্নায় মশগুল,কখনো ও আদৃতের এমন রুপ দেখে নি,হয়তো আরোহীর ভুলের পরিমাণই এতো বেশি যে আদৃত অবশেষে এমন ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছে ওর সাথে,কথাটা অনুভবে ধরা দেওয়াও কলিজা যে বেড়িয়ে আসার উপক্রম হচ্ছে ওর।
_______________________
আয়েশা আঁখি কোথায়?
গেছে কোথাও শাড়ী চুরি পড়ে,হু হু।
মানে?ভ্রুযোগল কুঁচকে বললো (লেখিকা:আরোহী নুর) তাজবীর।আয়েশা এবার দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো।
একটু নিচু হও ভাইয়া কানে বলছি।
তাজবীর নিচু হলে আয়েশা ওর কানে কানে বলে উঠে।
ডা.সাহেব উনাকে ডেকেছেন হয়তো কোনো রোমান্টিক সারপ্রাইজ আছে উনার জন্য।
বলিস কি?তারমানে আমরা যা সন্দেহ করেছিলাম তাই?
হুম,ঠিক তাই।
তাব তো মু মিঠা বানতা হে,চকলেট বক্স দেখিয়ে বললো তাজবীর।
দুজনই হাতে হাতে তালি বাজিয়ে হাসতে মশগুল হয়ে পরলো,তাজবীর আয়েশাকেও আঁখির মতো নিজের বোনের নজরে দেখে,আর আয়েশাও তাজবীরকে ভাইয়ের মতো মনে করে,কিন্তু এদের এ সম্পর্ক সম্পর্কে পুরো ধারনা নেই দুটি হৃদয়ের, দুজনই দুদিক থেকে নিজেদের মন পিঞ্জরে বাস করা মানুষকে অন্যের সাথে মন খুলে হাসতে দেখে হৃদয়ে খনিক জ্বালাতন অনুভব করছে,আয়েশা অনেক হাসছে তাজবীরের সাথে ,তাজবীর ওর আর আঁখির জন্য চকলেট এনেছিলো যা আয়েশাকে দিলে আয়েশা ওখান থেকে একটা চকলেট ছিঁড়ে তাজবীরের মুখে দিলো,তাজবীর এক বাইট খেয়ে বাকি অংশ আয়েশাকে খাওয়ালো আঁখি আদৃতের খুশিতে মেতে উঠে।এদিকে নোমান সহ্য করতে পারলো না মুহুর্তটা,কেনো জানি মনে হলো আয়েশাকে ও না আবার হারিয়ে ফেলে,তবে এমন ভয়ের মানেও জানা নেই তার,অন্যদিকে সায়েদারও নজর পড়েছে ওদের উপর,বুক ছিঁড়ে যাচ্ছে তাজবীরকে অন্যের সাথে এভাবে দেখে,চোখ ফেঁটে কান্না আসছে খুব,বুকের জ্বালাতন আর নিতে পারছে না সে।
তখনি দরজা দিয়ে আঁখি আদৃত প্রবেশ করলো,দুজনেরই মুখ ফ্যাঁকাশে,আয়েশা ছুঁটে গেলো সেদিকে,আঁখির পাশে গিয়েই ওর হাতে দেখতে পেলো আদৃতের দেওয়া আংটিটা, তারপর আর আয়েশার বুঝতে বাকি রইলো না যে আদৃত আঁখিকে প্রপোজ করেছে,আয়েশা উৎসুক হয়ে আঁখিকে জড়িয়ে ধরে বললো। (লেখিকা:আরোহী নুর)
আমি জানতাম জীবন তোকে দ্বিতীয় সুযোগ দিবেই।
আদৃত তখন রুমে চলে যাচ্ছিলো,আয়েশার কথা অনুযায়ী সঠিক জিনিস আন্দাজ করতে পেরে আঁখি আদৃতের জন্য খুশি হয়ে নোমান আর সায়েদাও সেদিকে আসলো,ওরাও যে এমন কিছুই সন্দেহ করছিলো কদিন থেকে,ঠিক তখনি আয়েশা দেখতে পেলো পিছন থেকে ঘরের দিকে হেঁটে আসছে কেউ একজন,পুরোই যেনো হুবহু আঁখি,আয়েশা হতভম্ব হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়লো সেদিকে।
কে আপনি?
আমি আরোহী?
আদৃত আঁখি কেউই আশা করে নি আরোহী সেখানে চলে আসবে যার ফলস্বরূপ দুজনই এবার অবাকত্ব নিয়ে সত্যটা উপলব্ধি করতে পিছনে তাকায়,আরোহী এতো সময়ে ঘরে ঢুকে গেছে,সবাই যেনো ভুত দেখে নিয়েছে,সায়েদা চিৎকার করে সবাইকে ডাকতে শুরু করে।
মা-বাবা,দিদু কোথায় তোমরা দেখো আরোহী আপু চলে এসেছে।
কথাটা কর্নপাত হতেই সবাই হন্তদন্ত হয়ে সেখানে আসেন,দিদু আরোহীকে দেখেই একপ্রকার ছুঁটে এসে ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করেন,আরোহীও কান্না করছে উনাকে জড়িয়ে ধরে, এদিকে ঈশা মা নিজের চোখে বিশ্বাস করতে নারাজ,কৌতুহলতার বশে ওর উদ্দেশ্য প্রশ্ন ছুঁড়লেন উনি।
আরোহী তুমি বেঁচে আছো?
তারপর আর কি করার ছিলো আরোহীর,নিজের ভুলের প্রশ্চিত্য ওকে করতে হবে তাই ও যাদের কাছে অপরাধী উনাদের দেওয়া সাজাও মাথা পেতে নিবে কথাটা মনের সাথে মানানসই করে নিয়ে সত্যটা বলতে শুরু করলো।
তারপর সবকিছু ও পরিষ্কারভাবে সবাইকে বলে গেলো,উপস্থিত সবাই অবাকত্বের শেষ সীমায় পৌঁছে গেলেন কথাগুলো শুনে, হঠাৎ অতিরিক্ত পীড়া সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেলেন দিদু,সবাই ছুঁটে এসে উনাকে উঠিয়ে রুমে নিয়ে গেলেন,আদৃত আর নোমানের প্রচেষ্টায় অল্পক্ষণে জ্ঞান ফিরলো দিদুর,তবে উনি জ্ঞানে এসে এখন আরোহীকে দেখতেও চাইছেন না,আরোহী কক্ষের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নিচু করে,চোখ দিয়ে জল পরা থামে নি।দিদু এবার ওর দিকে তাকিয়ে কাঠ কন্ঠে বলে উঠলেন।
ওকে বলো চলে যেতে আমার চোখের সামনে থেকে,লোক ঠিকই বলে দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষতে নেই,আমিও যে দুধ কলা দিয়ে কালসাপ পুষেছিলাম,আর আজ তার সাজা আমাকে, আমার পরিবারকে, আমার দাদুভাইকে পেতে হলো,সব আমার দোষ…… আমার।
দিদু কথাটা বলে নিজের কপাল চাপড়াতে শুরু করলেন,আঁখি উনাকে আটকালো,উনার পাশেই বসে ছিলো সে তখন।
দিদু নিজেকে সামলাও,এভাবে ভেঙে পরলে তো হবে না,প্লিজ এমনটা করো না।
দিদু আঁখিকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন এবার।
আরোহী কান্না করতে করতে কক্ষ ত্যাগ করলো।
______________________
আরোহী যায় নি বাড়ি থেকে,কোনো এক গেস্ট রুমে নিজে থেকেই থেকে গেছে,কেউ ওকে থাকতে বলে নি না যেতে বলেছে,হয়তো চৌধুরী ম্যানশনের সবার ভালো মানুষত্ব সম্পর্কে ভালো জ্ঞান ওর আছে তাই নিজে থেকে এখানে থেকে যেতে ওর ধিদ্বা হলো না,দিদু অনেক কান্না করে ঘুমিয়ে পরলেন,আঁখি উনাকে ঘুম পারিয়ে আদৃতের রুমের দিকে এগুতে নিলো কারন ও জানে এই মুহুর্তে আদৃত মোটেও ভালো নয়,আসতে আসতে নিজের হাতের দিকে চোখ গেলো ওর,ডায়মন্ডের আংটিটা ঝলঝল করছে ওর হাতে,যেটা স্পষ্ট প্রমাণ করছে আদৃত ওকে একটা বন্ধনে আবদ্ধ করে নিয়েছে,হয়তো ওর এতে খুশি হওয়ার কথা ছিলো অনেক,তবে এখন যেনো মনে উঠছে ওর অনেক প্রশ্ন,আদোও কি আঁখির আদৃতকে মেনে নেওয়া ঠিক হবে,সে প্রশ্নগুলোর জঠিলতা বাড়িয়ে আঁখির দিকে (লেখিকা:আরোহী নুর) এগিয়ে আসলো আরোহী।
আঁখি তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
চলবে……..