#শিশিরের কহিনুর,পর্বঃ১৭
#লেখিকাঃআরোহী নুর
হাসপাতালে রোদেলার পাশে বসে আছি আমি,রোদেলা আমায় জড়িয়ে ধরে কান্না করছে,তখন আমি রোদেলার ঘরে গিয়ে দেখি রোদেলা অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে ফ্লোরে, হাত দিয়ে ওর অজস্র রক্ত গড়াচ্ছে,গড়াবে না কি করে হাত কেটে মরার চেষ্টা করেছিলো,তৎক্ষনাৎ আমার চিৎকারে সবাই সেখানে একত্রিত হয়ে যায় তারপর ওকে হাসপাতাল আনা হয়,আর ওকে অনেক কিছু করে বাঁচিয়েও নেওয়া হয়,আমি যেতে হয়তো আরও দেড়ি হলে আজ রোদেলা আমাদের মাঝে থাকতো না,রোদেলার জ্ঞান ফিরেছে একটু আগে সবাই ওকে বার বার এসে সুইসাইডের কারনটা জানতে চাইলেন,কিন্তু ও কাউকেই কিছু বললো না,এমনকি কারো সাথে কথাও বলতে চাইলো না,সবাইকে বললো শুধু আমায় ডেকে দিতে,এদিকে আমার স্বামী রাজা আমাকে প্রথমে আসতেই দিচ্ছিলেন না হাসপাতাল, বলে কি না সৎ দের জন্য এতো আদর দেখাতে নেই,বলেন তো এটা কেমন কথা,রোদেলার এ অবস্থা দেখে উনার চোখে আমি খারাপ লাগা অনুভব করতে পারলাম, কিন্তু উনি তা অনুভব করতে চান না তাও বুঝতে বাকি রইলো না আমার,কিন্তু কেনো উনি রোদেলাকে আর ওর মাকে সহ্য করতে পারেন না,হয়তো বড় কোনো কারন হবে,শুধু সৎ বলে উনার মতো মানুষ কাউকে ঘৃণা করবেন আমি তা মানতে পারছি না,যাইহোক কতো কাকুতি মিনতি,ন্যাকামো, ইমোশনাল ব্লেকমেইল করে ব্যাঙটাকে সাথে নিয়ে আসলাম এখানে,রোদেলার সাথে দেখা করতে ওর পাশে এসে বসলে ও আমাকে ধরে কান্না করতে শুরু করলো,এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমার সাথেই ওর আলাদা এক সখ্যতা গড়ে উঠেছে,তাই হয়তো আমাকেই সবকিছু খুলে বললো,আর কাউকে কিছু বলতে মানা করলো,জিনিসটা শুনে আমার অনেক খারাপ লাগলো,আকাশ ভাইয়াকে সবার সাথেই ভালো ব্যবহার করতে দেখেছি আমি আর রোদেলার মতো একটা কিউট বাচ্চা মেয়ের সাথে উনি এমনটা করতে পারলেন,আমি ওর কান্না মুছে দিয়ে ওকে শান্তনা দিলাম আর বললাম।
আমি তোমার ভালো বন্ধু হিসেবে একটা কথাই বলতে চাই রোদেলা, মরিচিকার পিছন দৌঁড়ে কোনো লাভ হয় না কখনো,যে তোমার সে তোমারই থাকবে কোনো কারন ছাড়াই,আর যে তোমার না তাকে তুমি বেঁধে ধরেও রাখতে পারবে না,আকাশ ভাইয়া যখন তোমায় ভালোইবাসে না তবে উনার পিছন দৌঁড়েও কোনো লাভ হবে না তোমার,পরিণামে শুধু কষ্টই পাবে তুমি,নিজেকে শক্ত করো রোদেলা দেখবে পৃথিবীর কোনো কষ্টই তোমাকে ভাঙতে পারবে না,আর আমাকে ছুঁয়ে প্রমিজ করো আজকের পর থেকে আর কখনো এমন কিছু করবে না।
আমি আর কখনোই এমন কিছু করবো না ভাবি,তুমি ঠিকই বলেছো উনি যখন আমায় ভালোই বাসে না তবে উনার পিছন ছুঁটে নিজের আত্মসম্মান আর নষ্ট করবো না আমি,আজ থেকে আমিও নিজেকে ঘুটিয়ে নিবো।
তখনি আকাশ ভাইয়া রুমে প্রবেশ করলেন,আমি ইশারা করে রোদেলাকে নিজেকে শক্ত রাখার জন্য বললাম,তারপর রুম ত্যাগ করলাম।
আকাশ শান্তভাবে রোদেলার পাশে এসে বসলো, রোদেলা ওপর পাশে মুখ করে বসে আছে,আকাশ বললো।
এমনটা কেনো করলি,জানতাম তুই বেহায়া, বেয়াদব,কিন্তু এতোটা দূর্বল আর বোকা হবি ভাবি নি আমি,এমনটা করার মতো কোনো কারন ছিলো বলে আমার মনে হয় না,জীবনে এতো ইমোশনাল হয়ে বাঁচা যায় না রোদেলা।
রোদেলা এবার স্বাভাবিক ভাবে আকাশের দিকে তাকালো আর বললো।
হ্যাঁ ভাইয়া বোকা ছিলাম বলেই এতোদিন তোমার পিছন পড়ে ছিলাম,কিন্তু এখন আমি সত্যটা বুঝতে সক্ষম হয়েছি ভাইয়া,আর কখনোই তোমার সাথে কোনো রকম বেহায়াগিরি,বেয়াদবি করবো না,তুমি এবার নিশ্চিত হয়ে থাকতে পারো,এ রোদেলা আর আসবে না আকাশের বুকে আলো হয়ে থাকতে,তুমি আজ থেকে স্বাধীন।
আর হ্যাঁ এখন তুমি আসতে পারো ভাইয়া আমি একটু একা থাকতে চাই।
কথাগুলো শুনে আকাশের মনটা কেনো জানি খচ করে উঠলো,যখন থেকে শুনেছে রোদেলা সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে তখন থেকেই ওর মনের ভিতর যেনো ঝড় বইছিলো,কারনটা ওর অজানাই রয়ে গেলো,রোদেলার কথাগুলো শুনে কেনো যেনো মেনে নিতে পারলো না, হন হন করে কক্ষ ত্যাগ করলো।
__________
বাইরে আসতেই কারো সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেতে নিলে লোকটা আমায় ধরে নেয়,উনি একদন সুদর্শন ডাক্তার সাহেব ছিলেন,এক্সিডেন্টলি উনার সাথে ঠাস খেয়ে পড়তে নিলে বেচারা আমায় ধরে বাঁচালো।কিন্তু মুহুর্তটা চোখ এড়ালো না ব্যাঙটার,চট করে পাশে এসেই আমাকে টান দিয়ে নিজের কাছে নিলো আর ওপর হাতে বেচারা ডাক্তারের হাতটা পিছন মুড়ে দিলো,এমন অবস্থা করেছে বেচারার হাতের হয়তো হাতটা ভেঙেই গেছে,বেচারা রিতীমতো হাত ধরে কাতরাচ্ছে, আমি হতবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছি, ব্যাঙটা পুরো হিন্দি ফিল্মের হিরোদের মতো ডায়লগ মারলো।
যেই আমার কহিনুরের পাশে আসার চেষ্টা করবে,তার বাঁচা আমি অসম্ভব করে তুলবো,ও আমার আর ওকে ধরার অধিকারও একমাত্র আমার,কথাটা বলেই পিছন থেকে রিভালভার বার করলো, কথায় কথায় রিভালভার বের করলে কেমনটা লাগে বলেনতো,কোনো মতে টেনে টুনে নিয়ে যেতে লাগলাম আমি,আমার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো এতোসময়ে নাক মুখ ফাঁটিয়ে দিতো,আমি বলেই কিছু বলছে না,জানেন তো ভালোবাসে আমায় তাই হয়তো কথাও শুনে আমার,যাক কোনো মতে টেনে টুনে গাড়ির পাশে আনলাম আর বললাম বাড়ি যাবো,এখানে থাকলে যে আজ ওই ডাক্তারের কপালে নির্ঘাত মৃত্যু আছে তা আমি ভালোয় জানি,যাক ব্যাঙটা নিজের মুখ বাংলা পাঁচের মতো করে ড্রাইব করা শুরু করলো,ওই যে ডাক্তারকে মারতে দেই নি তাই।হঠাৎ ব্যাঙটা গাড়ি থামিয়ে কোথায় যেনো চলে গেলো,আমি বসে আছি আপন মনে,তখনি হঠাৎ ইচ্ছে হলো মায়ের সাথে কথা বলি,যেই কথা সেই কাজ,ব্যাগ খুলে ফোনটা বার করবো তখনি সেই ছেলেটির ছবি পরে যায় পার্স থেকে গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে,ছবিটা পার্সেই ছিলো আমার,আমি গাড়ি থেকে নেমে ছবিটা উঠাবো এর আগেই একটা আধবৃদ্ধ মহিলা এসে ঝাপটে ধরে ছবিটাকে,আর পাগলের মতো বলতে লাগে।
আমার সোনা,আমার মানিক রতন, কোথায় চলে গিয়েছিলি তুই মাকে ছেড়ে? জানিস তোকে কতো খুঁজেছে তোর এই অভাগী মা।আর কোথাও যেতে দেবো না তোকে আমি।
মহিলাটি পাগল বলে মনে হলো না আমার,হয়তো অতি আবেগে এমনটা করছেন,সে রাতের মহিলাটির মুখখানা অন্ধকারে ভালোমতো দেখি নি আমি,হয়তো উনিই হবেন সেই মহিলা কিন্তু তাজ্জবের জিনিস হলো এই মহিলাটি হুবহু দেখতে মি.খানের এলবামের সেই মহিলাটির মতো,শুধু পার্থক্য এটা যে এই মহিলার মুখে বয়সের একটু ছাঁপ পড়েছে,তবে যৌবনকালে যে হুবহু উনার এলবামের সেই মহিলাটির মতোই ছিলেন আমি তা ঠিকই আন্দাজ করতে পারছি,তবে এই মহিলাটির সাথে কি ওই মহিলাটির কোনো সম্পর্ক আছে,না দুজনই একজন,তবে দুজন এক হলে এই মহিলার সাথে মি.খানেরই বা কি সম্পর্ক,এলবামের সেই ছেলেটা কি মি.খান,মনে অনেক প্রশ্ন উকি দিতে লাগলো আমার,আমি মহিলাটিকে কিছু জিজ্ঞেস করবো এর আগেই মহিলাটি আমার পিছনের দিকে তাকিয়ে কেমনটা করে উঠলেন,তারপর চুরের মতো সেখান থেকে পালিয়ে গেলেন,আমি কিছুই বুঝতে না পেরে পিছনে তাকিয়ে দেখি উনি আসছেন,হয়তো উনির মহিলাটিকে দেখতে পান নি,তবে তৎক্ষনাৎ উনার দৃষ্টি আটকে গেলো সামনে চলা একটা দৃশ্যতে,উনার ড্যাবড্যাব করে তাকানো দেখে আমিও তাকালাম সেদিকে,দেখতে পেলাম একটা ছোট্ট বাচ্চা চকলেট খাচ্ছে আর নিজের গায়ে মাখছে,আর ওর মা বারবার ওকে পরিষ্কার করে দিচ্ছেন আর ওকে ভালোবাসার পরশে ভরিয়ে দিচ্ছেন, আমি দেখতে পেলাম দৃশ্যটা দেখে উনার চোখজোরা অশ্রুসিক্ত হলো,আমি উনাকো আলতো করে ডাক দিলাম মি.খান বলে,উনি তৎক্ষনাৎ নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলেন।
তুমি গাড়ির বাইরে কি করছো।
ওই মানে এমনিতেই।
আমার কথা কখনো শুনবে না তাই না,বলেছিলাম না একা একা ঘুরে না বেড়াতে,এবার চল।
কথাটা বলে ব্যাঙটা আমায় কোলে করে গাড়িতে বসিয়ে দিলো নিয়ে,ব্যাঙটা কোলে নিতে নিতে না আবার আমায় হাঁটাই ভুলিয়ে দেয়,যাক আমাকে বসিয়ে ওপর দিক থেকে এসে নিজেও বসলো তারপর আমার পা জোড়া নিজের পায়ের উপর উঠালো আর পকেট থেকে একটা বক্স বের করে সেটা থেকে একজোড়া নুপুর বের করে আমার পায়ে পড়িয়ে দিতে দিতে বলতে লাগলো।
আসলে হঠাৎ নুপুর জোড়ার উপর নজর পড়লো,ভাবলাম এগুলো আমার কহিনুরের পায়েই শোভা পাবে তাই নিয়ে এলাম,তোমার ছোঁয়ায় মেতে থাকবে এগুলো সারাদিন,তাছাড়া তোমার তো আবার পালানোরও অনেক শখ,তাই পালিয়ে গেলে এগুলোর শব্দেও তোমাকে খুঁজে পেতে সুবিধা হবে,হা হা,আসলে জানো নুপুর আমার সচরাচরই অনেক পছন্দ, মা অনেক শখ করে পড়তো।সারাদিন মায়ের নুপুরের শব্দে মেতে থাকতাম আমি,আমার মা যে আমার আশেপাশেই থাকতে তার জানান দিতো উনার সেই নুপুরজোড়া।
কথাটা বলে উনি দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ত্যাগ করলেন,তারপর আবার বলতে লাগলেন।
কিন্তু এখন আবার আমার এই পায়েলগুলোর সাথে অনেক হিংসেও হচ্ছে,তুমি তো শুধুই আমার,তবে তোমার ছোঁয়া,তোমার পরশের শোভা পাওয়ার অধিকারও তো শুধু আমারই আছে,তবে সে অধিকার এগুলো কেনো পাবে।
আমি খেয়াল করলাম উনি কেমন ডেবিল লুক নিয়ে নুপুর গুলোর দিকেই তাকিয়ে আছেন,আমি চট করে নিজের পা নামিয়ে নিলাম,ব্যাঙটা না আবার আমার পা জোড়াই কেটে দেয়,একে নিয়ে কিছু বিশ্বাস রাখা যায় না বাবা,এমনটাও ভাবা যায় যে লোক কোনো বস্তুর সাথেও জেলাস ফিল করে,ইনি তো শুধু বস্তু কি এখন তো আমায় কোনো মেয়ে বা মহিলাদের সাথেও সহ্য করতে পারে না,এমনও কি লোক হয়,কি যে এক পাগলের পাল্লায় পড়লাম আমি,না জানি খোদা কখন এর চক্কর থেকে বাঁচাবেন আমায়,আমি তো এর থেকে বাঁচলেই পারি।
______________
রাতে রুমে ঢুকে হঠাৎ খেয়াল করলাম বারান্দার এক কোন দিয়ে ধোঁয়া উড়ছে,আমি আবার ভাবলাম আগুন টাগুন লাগলো না তো,তাই এগিয়ে গেলাম গিয়ে দেখি উনার মুখে আগুন লেগেছে,মানে উনি সিগারেটের স্বাদ গ্রহণ করছেন,তেড়ে গিয়ে টান দিয়ে হাত থেকে ফেলে দিলাম ওটা,আমার জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো এই মুহুর্তে মাথায় রিভালভার দিয়ে দেশের মানচিত্র এঁকে দিতো,আমার ভালোবাসে তাই এমনটা করবে না জানি,কিন্তু ভ্রুযোগল ঠায় কুঁচকিয়ে বললো।
সিগারেটটা ফেললে কেনো?
বেশ করেছি,এসব পঁচা জিনিস খেতে হবে না আপনাকে।আজকের পর থেকে যেনো এটা খেতে না দেখি আমি আপনাকে।
আরে ওটা আমার নেশা ওটা কি করে ছাড়বো।
আপনিই তো বলেন আমি আপনার নেশা, আর আমি না কি সামনে থাকলে আপনার অন্য কোনো নেশা কাজ করে না,তবে এটার নেশা কেনো ছাড়েন না,আমাকে দিয়ে কাজ চলে না বুঝি।
আরে তুমি নামক নেশা থেকে নেশাময় কিছু না পেলে অন্য নেশা কি করে ছাড়বো বলো।
কথাটা বলে উনি তৎক্ষনাৎ আমার অধরে নিজের অধর জোঁড়া ছুঁইয়ে দিলেন,এহেন কান্ডে আমি থ হয়ে গেলাম,বড় ভর চোখ করে তাকিয়ে রইলাম ঠায় সামনের দিকে,লজ্জায় আর অস্বাভাবিকতায় পুরো জমে গেছি আমি,উনি আমার কানের কাছে এসে আলতো করে বললেন।
যখনি সিগারেটের নেশা পাবে তখনি তোমার ঠোঁটের নেশায় মেতে উঠবো এই বলে দিলাম।
কথাটা শুনে আমার প্রচুর লজ্জা হলো রাগ আসার পরিবর্তে,আপনি আসতো বজ্জাত বলে উনাকে আলতো ধাক্কা দিয়ে ওখান থেকে ছুঁটে আসতে নিলে উনি পিছন থেকে আমার হাত ধরে নিলেন,আমি ভয় পেয়ে গেলাম,উনি আমার ভয়ে এক বালতি জল ঢেলে বললেন।
কিছুক্ষন বসো আমার পাশে প্রমিজ করছি কোনো প্রকার বজ্জাতি করবো না।
কথাটা বলে উনি গিয়ে দোলনায় বসলেন, আমিও বসলাম পাশে,উনি নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে আছেন চাঁদের পানে,পিন পিন নিরবতা কাজ করছে এই মুহুর্তে আমাদের মাঝে,নিরবতা ভেঙে আমি বললাম।
আপনার মা কোথায় মি.খান?উনি কেনো থাকেন না আমাদের সাথে?কেনো চলে গেলেন উনি?
আমার প্রশ্নগুলো শুনে উনি হতবাক দৃষ্টিতে তাকালেন আমার দিকে আর আমাকেই জিজ্ঞেস করলেন।
তুমি সত্যিই জানতে চাও কহিনুর?
হ্যাঁ আপনি জানালে কেনো জানতে চাইবো না।আপনি বলতে চাইলে বলতে পারেন।
তারপর উনি নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে চাঁদের পানে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলেন।
আমার বয়স তখন ৮ বছর,ভোর আপুর বয়স তখন ১০, মা বাবা আমাদের অনেক ভালোবাসতো,আমাদের সুখের একটা সংসার ছিলো,ছুটোবেলা থেকেই মায়ের সাথে সখ্যতা আমার আলাদাই ছিলো,মাকেই আমি বেশি ভালোবাসতাম,মা ছাড়া কিছুই বুঝতাম না,সেদিন আমি আর আপি ড্রয়িংরুমে খেলা করছিলাম তখনি সদর দরজা দিয়ে কোলে প্রায় তিন থেকে চারমাসের বাচ্চা নিয়ে প্রবেশ করেন রুশানা আজম,বর্তমান মিসেস রুশানা খান,আমার মায়ের আপন ছোট বোন।দাদিজান উনাকে দেখতেই একজন চাকরকে বলেন আমাদের নিয়ে আমাদের রুমে যেতে, সেই চাকর আমাদের নিয়ে রুমে গেলেও আমি লুকিয়ে চলে আসি সে ক্ষনের ঘটনা জানার লোভে,সে বয়সে যে যেকোনো বিষয় জানার অনেক কৌতুহল কাজ করতো আমার ভিতর,আমি ড্রয়িংরুমের দরজার পাশে লুকিয়ে ছিলাম,সে লুকন্ত অবস্থায় আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম আমার মা বলছেন রুশানা আজমের কোলে যে বাচ্ছা ওটা আমার বাবা আর রুশানা আজমের অবৈধ সন্তান,উনার সন্তানদের মানে আমার আর আপুর সৎ বোন,তখন এতোটা ছোট ছিলাম যে এই অবৈধ আর সৎ শব্দের মানেও বুঝতাম না আমি কিন্তু তখনি এই শব্দগুলো আর ওই মানুষগুলোর প্রতি অসীম ঘৃণা সৃষ্টি হয়েছিলো আমার মনে,কারন এই শব্দগুলো আর ওই মানুষগুলোর জন্যই আমার মা আজ আমার কাছে নেই,সেদিন আমার মা ঘর ছাড়ার ডিসিশন নেন,আবার বাবা একবারও আমার মাকে আটকায় নি বরং উনাকে চরিত্রহীন উপাধি দিয়ে ঘর ছেড়ে যেতে বাধ্য করলেন,মা বিনা বাক্যে ঘর ছেড়ে চলে যেতে নিলো,আমি মা মা বলে পিছন ছুঁটতে লাগলাম,মা একটিবারের জন্যও আমার দিকে ফিরে তাকায় নি,আমাকে পিছন দিকে আটকে নেন দাদিজান,আমি হাত পা ছুঁটতে থাকি আমার মাকে আটকানোর লোভে কিন্তু পারি নি,মা চলে গেলো আমাকে ছেঁড়ে অনেক দূরে, আর আসলো না ফিরে,আমি আর কোথাও খুঁজে পেলাম না আমার মাকে,রোজ রাতে চিৎকার করে উঠতাম মা মা বলে,সারাদিন সদর দরজার দিকে তাকিয়ে থাকতাম এই বুঝি আমার মা চলে আসবে,কিন্তু আমার মা আর এলো না,মা চলে যাবার পরদিনই বাবা রুশানা আজমকে বিয়ে করেছিলেন,আমি বরাবরই অনেক দুষ্টু ছিলাম,কিন্তু মায়ের সাথে আমার সুন্দর শৈশবটাও চলে গেলো,একঘেয়ে হতে থাকলাম আমি,কারো সাথেই কথা বলতাম না,কথায় কথায় রাগ করতে লাগলাম,অঘটন ঘটাতে শুরু করলাম,নিজেকে একা গুটিয়ে নিতে লাগলাম,আর একাই হয়ে গেলাম,নিজেকে একাই গড়ে তুললাম কিন্তু মনের মাঝে থাকা মায়ের শুন্যতাকে কাটিয়ে উঠতে পারলাম না,আর হয়তো কখনো পারবোও না।
কথাটাগুলো বলে হুট করে উনি সেখান থেকে উঠে রুমে চলে গেলেন,হয়তো নিজের চোখের অবাধ্য জল লোকাতে চাইছেন আমার কাছ থেকে তাই,আমিও গেলাম উনার পিছন গিয়ে দেখি উনি বেডে উপুর হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে রয়েছেন আমিও কি না কি ভেবে বেডের অপর পাশ দিয়ে গিয়ে উনার পাশে বসে উনার মাথায় হাত বুলালাম,তৎক্ষনাৎ উনি চট করে আমার কোলে চলে আসলেন আর আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কান্না করতে শুরু করলেন।
চলবে……….