#শিশিরের কহিনুর,২০,২১
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২০
আরে অনিল ভাইয়া এটা কেমন কথা আসতে না আসতে এমারজেন্সির ধান্দায় পড়ে গেলে,এদিকে খাওয়া দাওয়ার কোনো চিন্তা আছে তোমার,বাড়িতে এসেও বাইরের খাবার দিয়ে পেট পুরবে বুঝি।আমি নিজের হাতে খাবার বানিয়ে এসেছি খেয়ে নাও।
আরে তুই এতো কষ্ট করতে গেলি কেনো, আমার এমনিতেও খিদে নেই খাবো না।
খাবো না বললেই হলো,হা করো আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
তারপর ভোর গিয়ে ওকে জোর করে মুখে এক লোকমা খাবার গুজে দিলো, অনিল হাসলো ওর এমন অবস্থা দেখে,রোদেলা ওকে খাওয়াতে শুরু করলো অনিলও খাচ্ছে।এদিকে কেবিনের দরজার ফাঁক দিয়ে দৃশ্যটা চোখ এড়াচ্ছে না আকাশের,রাগে খনিকের মধ্যেই চোখটা রক্তিম বর্ণ ধারন করলো ওর।
রোদেলা অনিলকে খাইয়ে আকাশের কেবিনের পাশ দিয়েই যাচ্ছিলো তখনি আকাশ খপ করে রোদেলার হাত টান দিয়ে কেবিনের ভিতর ঢুকিয়ে ওকে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরলো
আহ কি করছো ভাইয়া ছাড়ো আমায়,আমার লাগছে।
লাগুক তোর,ওই অনিলের জন্য তোর এতো দরদ কেনো উপচে পড়ে শুনি,ও বাইরের খাবার খেলে তোর কি?আমিওতো আজকে বাইরের খাবার খাবো আমার জন্য তো এমন দরদ হচ্ছে না তোর।
আমার তোমার জন্য দরদ দেখানো তোমার পছন্দ না তাই আর ওটা আমি দেখাতে চাই না,তাছাড়া তোমার জন্য দরদ দেখানোর লোক হিসেবে তো রিয়া আপি আছেই।
তুই কথার মধ্যে রিয়াকে ঢুকিয়ে তোর আর অনিলের কথায় মাটি চাঁপা দিতে পারবি না রোদেলা।
আমি কোনো কথাই মাটি চাঁপা দিতে চাইছি না ভাইয়া,অনিল ভাইয়ার সাথে আমার এমন কোনো সম্পর্ক নেই যে আমি উনার আর আমার কথা মাটি চাঁপা দিবো,আর এমন সম্পর্ক থাকলেও তোমার আশ্চর্য হওয়া তো বড় কথা না ভাইয়া তোমার মতে তো আমি নষ্টা মেয়ে আর নষ্টা মেয়ে তো যেকোনো কিছুই করতে পারে,তাই না।
প্লিজ আমায় ছাড়েন,তোমার সাথে কথা বলার আমার কোনো ইন্টারেস্টও নেই।
কথাটা বলে রোদেলা আকাশের কাছ থেকে নিজেকে টান দিয়ে ছাড়িয়ে চলে গেলো ওখান থেকে হনহনিয়ে,আকাশ থ হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে রইলো রোদেলার যাওয়ার পানে,বিশ্বাস করতে পারছে না নিজের কান আর চোখজোড়াকে,যে মেয়েটা ওর পিছন পাগল হয়ে পড়ে থাকতো ওর কথার উপর কথাই বলতো না আজ ওই মেয়েটা ওকে এভাবে কথা শুনিয়ে চলে গেলো,আর যথারীতি ইগনোরও করছে,আকাশ কেনো যেনো তা মেনে নিতে পারছে না,মনের ভিতর কেমন যেনো একটা ঝড় বইতে শুরু হয়েছে ওর।
একটু আগে মেসেঞ্জারে একটা গ্রুপে আমায় এড করা হলো,গ্রুপটার নাম গার্লফ্রেন্ডস ওফ এসআরকে।গ্রুপটাতে ১৬০ জন মেয়ে আর সবাই নাকি উনার গার্লফ্রেন্ড, মেয়েগুলো ওদের সাথে উনার যতোগুলো ছবি ছিলো প্রায় সবই এই গ্রুপের মাধ্যমে আমাকে দেখিয়েছি,এমনকি ওদের উনার সাথে চেটের স্ক্রিনসর্টও,সব দেখে বুঝতে পারলাম সবগুলোই আমার পুরাতন সতীন,রাগে বম হয়ে গেছি আমি,জানি না কেনো,ছিলাম আমি লজ্জা ফর্মে,ভেবেছিলাম উনি আসার আগেই নাক মুখ ঢেকে কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়বো কিন্তু তা আর কই হলো,এবার রাগি মুডে বসে আছি,আমার ভিতরে আজকাল চলা আজগুবি ফিলিংসের নাম আমার জানা নেই,তবে হ্যাঁ এখন এই মুহুর্তে আমার মধ্যে রাগি ফিলিংসটা কাজ করছে,এতো রাগ আসার কারনও আমি জানি না তবে শুধু এটা জানি আমার অনেক রাগ আসছে আর এই রাগে আমি যা তা করবো,নিজের ব্যাগট্যাগ আমি সেই কবে প্যাক করেছি,আমার বাড়ি যাবার কোনো প্লেন নেই,আমি জানি বজ্জাত যেতেও দিবে না,কিন্তু আমার এখন রাগের মুডে শয়তানটার সাথে স্বামী স্ত্রীর ঝগড়া সিন ক্রিয়েট করতে ইচ্ছে হচ্ছে যেমনটা বউয়েরা স্বামীর পুরাতন রিলেশনের বিষয়ে জানলে করে তেমন,যেমনি দেখলাম উনি দরজা দিয়ে প্রবেশ করছেন তেমনি আমি ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার ঢং করলাম।
আরে আরে আমার ময়নাপাখিটা কোথায় যাচ্ছে ব্যাগপ্যাক করে।
ময়নাপাখি নিজের বাসায় যাচ্ছে।
সাহস কি করে হলো তোমার বাসায় যাওয়ার কথা বলতে,আমি বলি নি তুমি কোথায় যাবে না,তুমি সবসময় আমার সাথেই থাকবে,তোমার পরিবারের কথা মনে পরলে সমস্যা নেই আমি তোমার পরিবারের সবাইকে এনে দিবো তোমার পাশে।
হয়েছে আর ঢং করতে হবে না,দেখলে তো মনে হয় না ভাজা মাছ উল্টিয়ে খেতে পারেন,আমি কি জানতাম আমার কপালে প্লে বয় জুটবে,লজ্জা করে না ১৬০ টা মেয়ের সাথে রিলেশন করতে,শুনেছি আরও নাকি ছিলো,আর এর পরও নাকি আমি এখানে থাকবো।
তারমানে ওই মাহি তোমায় এসব বলেছে,আজ ওকে আর ওর ১৬০ জনকে আমি ধুলোয় যদি মিশিয়ে না দিয়েছি তবে আমার নামও এসআরকে না।
হ্যাঁ চলে যান সবার ঠ্যাং ভাঙতে, পাওয়ার দেখানো ছাড়া কি করতে জানেন আপনি,নিজে ১৬০ টার সাথে প্রেম করে ভেড়িয়েছে আর এখন ধরা খেয়ে মানুষ মারতে ছুটছে।
বিশ্বাস করো লক্ষিটি আমি শুধু তোমায় ভালোবাসি, আরে আমার ১৬০ জনের সাথে রিলেশন ছিলো আমি মানছি কিন্তু ওদের কাউকেই তো বিয়ে করিনি আমি,বা বিয়ের আশাও দেই নি,আমি বিয়ে তোমায় করেছি কারন তোমাকে ভালোবাসি আমি।
ভালোবাসি,কে শিখায় আপনাকে এসব ফাজলামো ভাষা,বিশ্বাস করি না আপনার ওই ফালতু ভালোবাসার কথায়,চলে যাবো আমি আপনাকে ছেড়ে।
কহিনুররররররর,আরেকবার যদি চলে যাবার কথা বলেছো তবে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না।
হ্যাঁ এবার ধমক দেন আমায়, মারেন আমায়,আমি তো বেচারি মেয়ে কিছুই করতে পারবো না,যতো ইচ্ছা জোর চালান আমার উপর,মারেন আমায়, ধমক দেন আর নিজের দোষ চাঁপা দিয়ে দেন।
দিলাম কান্না জুড়ে,ব্যাঙটা একদম আমার কাবুতে চলে এসেছে,আমি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কান্নার ভান করছি আর ব্যাঙটা এটা ওটা বলে আমার কান্না থামানোর চেষ্টা করছে,নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করছে,আমাকে থামাতে না পেরে নিজের সাজা হিসেবে উঠবসও করছে,আমি হাতের ফাঁক দিয়ে এসব দেখছি আর মনে মনে মজা লুটছি,ভাবা যায় এই মাফিয়া কিংটাও আমার কাছে জব্দ, এতো রাগি লোকটাও যে কারো কাছে এভাবে জব্দ হতে পারে আমার জানা ছিলো না।আমার কেনো যেনো এটা বিশ্বাস আছে যে উনার জীবনে আগে অনেক মেয়ে থাকলেও এখন আর কেউ আসবে না,আর উনার এই তিক্ত অতীতও আমি মেনে নিয়েছি, উনার অতীতে অনেক মেয়ে ছিলো কথাটা ভাবলে অনেক খারাপ লাগে আমার,কিন্তু এটা ভেবে ভালোলাগা কাজ করে যে উনার বর্তমান আর ভবিষ্যতে শুধু আমি আছি,জানিনা এসব অনুভুতি কেনো হচ্ছে আমার কিন্তু অনুভুতিটা অনুভব করে ভালোই লাগছে আমার,কিন্তু তারপরও শুধু শুধু উনার সাথে একটি দুষ্টামি করার ইচ্ছে হলো তাই এমন করলাম আমি,এখনও আমার নাটক জারি আছে,একবারও তাকাইনি ব্যাঙটার দিকে বিছানায় একধার হয়ে শুয়ে আছি,ব্যাঙটা এখনও আমার রাগ ভাঙানোর চেষ্টা করছে এটা ওটা বলে,এই লোকটা আর যাই হোক রাগ ভাঙানোর ক্ষেত্রে একদম কাঁচা,হয়তো শুধু রাগ দেখানোই শিখেছে জীবনে।
পরদিন সকালে, ঘুম থেকে উঠেই দেখি আমি কারো কোলে শুয়ে লোকটা আর কেউ নয় শয়ং আমার স্বামী মশাই,উনি একটা স্টেজের বড়ো চেয়ারে বসে আছেন আর আমি উনার কোলে,সামনে তাকাতেই দেখি একটা খুব বড়সড় মাঠ আর মাঠের মাঝে অসংখ্য মেয়ে,সবগুলোই অসম্ভব সুন্দরী, এদের কাছে নিজেকে অনেক ফিকে লাগলো আমার,সবার হাতে বড় বড় চকলেট,আর চকলেটের সাথে চিরকুটও একেকটা,কিন্তু কারো মুখে হাসি নেই।
আমি উনার কোল থেকে নেমে সেই কবে উনার পাশের চেয়ারে বসেছি,উনি বলেছেন বসতে তাই,মেয়েগুলো একেক করে আমার কাছে এসে চকলেটগুলো দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে আর বলছে আজ থেকে এসআরকে ওদের ভাই হয়,সব চিরকুটেই লিখা হেপি চকলেট ডে ভাবি,আমি কিছুই বুঝতে পারছি না,অবশেষে সবার দেওয়া শেষ হলে উনি আমায় বলতে লাগলেন।
আসলে এসব রোজ ডে,চকলেট ডে,ভ্যালেন্টাইনডে আমি মানি না ময়না,আমি তো তোমাকে সারা বছরই সমান ভালোবাসবো তবে এক দিন আলাদা করে কেনো পালন করবো,কিন্তু ভাবলাম তোমার মনে আমাকে নিয়ে থাকা সব ডাউট ক্লিয়ার করে দিই,আর যেহেতু আজকে চকলেট ডে সেহেতু ভাবলাম চকলেট দিয়েই জীবনের অসুন্দরতাকে পিছনে ফেলে সুন্দরতাকে স্বাগতম জানায়,ওই যে মেয়েগুলো দেখছো ওগুলো সব আমার এক্স,দেখো সবাইকে হাতে কলমে আমি আমার বোন আর তোমার ননদ বানিয়ে দিলাম,এবার তুমি খুশি তো।
সব মেয়েরা জোরে বলে উঠলো।
প্লিজ আপি তুমি বলো তুমি অনেক খুশি।
বুঝতে পারলাম মেয়েগুলো অনেক নারাজ হয়ে আমাকে খুশি হওয়ার কথা বলছে,না জানি ব্যাঙটা এদের কি ডোজ দিয়েছে,এটা আমি নিশ্চিত অবশ্য ভালোভাবে মেয়েগুলো এর কথায় আসে নি।
আমি অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করলাম,মানে মাথা নাড়িয়ে বুঝালাম আমি খুশি,এটা না করলে হয়তো বেচারিদের কপালে কষ্ট ছিলো।
যাক তারপর উনি সেখান থেকে আমাকে কোলে করে উঠিয়ে নিয়ে আসতে লাগলেন সবার সামনে,সব মেয়েরা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আমার পানে,একটু হলেও কষ্ট হলো বেচারিদের জন্য,কিন্তু আমার আর কি করার আছে,উনি তো আর সবার হতে পারবেন না,আর আমিও চাই না উনি সবার হন,সবার কি উনি কারোই হন এটা আমি এই মুহুর্তে চাই না।হয়তো কখনোই চাইবো না।
মাহেরা আর ওর মা-বাবা ব্যাগ প্যাক করে নিয়েছে,ওদের এহেন কান্ডে রুশানা খান হতবাক।
এসব কি করছো তোমরা ব্যাগ প্যাক করে কোথায় যাচ্ছো?উনার জবাব দিলেন মাহেরার বাবা।
আমরা চলে যাচ্ছি খালাজান,আপনি আমাদের এনেছিলেন শিশিরের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিবেন বলে কিন্তু এখানে আমার মেয়ে অপমান ছাড়া আর কি পাচ্ছে,তাছাড়া শিশির ওই ছোটলোক মেয়ের ধান্দা ছাড়বে বলে আমার মনে হয় না। এবার মাহেরা বললো।
হ্যাঁ দাদিজান আর না,এবার আমার চলে যাওয়াই বেটার।
এভাবে হার মানলে হবে না মাহেরা,আমি বেঁচে থাকতো কখনোই ওই রাস্তার সস্তা মেয়ে জিততে পারবে না,তোমরা কোথাও যাবে না,শিশিরের বিয়ে মাহেরার সাথেই হবে,এমন কিছু করতে হবে যাতে সাপও মরে আর লাঠিও ভাঙে না।
কথাটা বলে দাদিজান ঠোঁটের কোনে শয়তানি হাসি টাঙালেন।
অনেক ভোরে বাড়ি ফিরেছে অনিল,নিজের রুমের বেলকনিতে দাঁড়িয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছিলো তখনি অনুভব করলো পাশে কারো উপস্থিতি, তাকিয়ে দেখলো ভোর,আবারও চোখ সরিয়ে স্বাভাবিকভাবে সামনের দৃশ্যতে মনোনিবেশ করলো আকাশ ।ভোর নরম কন্ঠে বললো।
এবার জীবনটা গুছিয়ে নে অনিল,আর কতো এভাবে নিজেকে কষ্ট দিবি।অনিল স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলো।
তুই তো নিজের জীবন ভালোই গুছিয়ে নিয়েছিস এটাই বড়,আমারটা না ভাবলেও হবে তোর,তা শুনেছি তুই নাকি মা হতে চলেছিস,ভালোই লাগলো বিষয়টা শুনে,ভাবছি বাকি জীবনটা তোর বাচ্চাদের সাথে খেলা করেই কাটিয়ে দিবো।
এমনভাবে কেনো বলছিস অনিল,এভাবে নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কি মানে হতে পারে,জীবনটা একবার চাইলেও স্বাভাবিক ভাবে শুরু করে দিতেই পারবি,চেষ্টা করে দেখ।
নিজেই অস্বাভাবিক হয়ে আছি আর জীবন স্বাভাবিক করে কি লাভ বল,আমার কাজ আছে আমি এবার চলি কেমন।
কথাটা বলে অনিল আর সেখানে দাঁড়ালো না চলে গেলো বেড়িয়ে, ভোর অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর যাওয়ার পানে।
চলবে……….
#শিশিরের কহিনুর
#লেখিকাঃআরোহী নুর
#পর্বঃ২১
রোদেলা ছাঁদের এক কোনে দাঁড়িয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিলো আর ডান্স করছিলো,তখনি ছাঁদে আসলো আকাশ হয়তো রোদেলারই খোঁজে,এসে দেখলো ও ডান্স করছে আপন মনে,আকাশের চোখ আটকে গেলো রোদেলার উপর,হালকা বাতাস বইছিলো তখন সে বাতাসে দুলছিলো রোদেলার সিল্কি চুলগুলো,মুখে একফাঁলি হাসি,হেসে হেসেই ডান্স করছে রোদেলা,ওকে দেখে আকাশ একপ্রকার ঘোরেই চলে গেছে,চোখ ফিরাতেই পারছে না, হঠাৎ রোদেলার চোখ গেলো আকাশের উপর,ও সাথে সাথে ডান্স বন্ধ করে নিলো,আকাশ এখনও অপলকে তাকিয়ে আছে ওর দিকে,রোদেলা এবার ওর দিকে তেড়ে এসে ওর সামনে তুড়ি বাজালো যার ফলে আকাশের ধ্যান ভাঙলো।
কি হয়েছে ভাইয়া,তুমি এখানে কি করছো?
তোকে খুঁজছিলাম,ওই আসলে আজকে আমি ছুটি নিয়েছি তাই ভাবছিলাম তোকে নিয়ে কোথাও বাইরে যাই,যাবি তুই?
সরি ভাইয়া বাট আমি তোমার সাথে বাইরে কোথাও যেতে ইচ্ছুক নয়,দেখি সরো আমার আরও অনেক কাজ আছে।
কথাটা বলে রোদেলা চলে যেতে নিলে আকাশ বলে উঠে।
রিয়ার সাথে আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই রোদেলা ও আমার জাস্ট ফ্রেন্ড।
কথাটা শুনে রোদেলা থমকে দাঁড়ায় তারপর পিছন মোড়ে আকাশের পানে তাকিয়ে স্বাভাবিক স্বরেই বলে।
রিয়ার সাথে তোমার কি সম্পর্ক আছে বা কোনো সম্পর্কই নেই এটা জেনে আমার কি লাভ ভাইয়া,তোমার লাইফ তুমি যা ইচ্ছা করতে পারো তাতে আমার কি।
কথাটা বলে চলে গেলো রোদেলা আকাশের মনটা খচ করে উঠলো।এদিকে রোদেলা নিজেকে শক্ত করে চলে আসলো রুমে,রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে চোখের অবাদ্য জলগুলো বইতে দিলো।একটু কেঁদে চোখের জল মুছে নিজেকে আবারও গুটিয়ে নিতে লাগলো।
নো রোদেলা,তুই দুর্বল হয়ে পড়লে চলবে না,আকাশ ভাইয়া যখন তোকে ভালোই বাসে না তুইও উনার প্রতি আর দুর্বল হয়ে থাকতে পারবি না,উনি যেমন নিজের জীবনে খুশি তোকেও নিজের জীবনে খুশি থাকতে হবে।উনার মিছে কথার ছলে তোর আসা ঠিক হবে না রোদেলা, কখনোই না।
___________
নুর বাগানের এক কোনে দাঁড়িয়ে ছিলো তখনি অনুভব করতে পারলো কেউ একজন ওকে খারাপভাবে স্পর্শ করার চেষ্টায় আছে তখনি পিছন মোড়ে থাপ্পড় বসিয়ে দিবে লোকটার গালে তার আগেই লোকটা নুরের হাত ধরে নেয়।লোকটা আর কেউ নয় ভোরের স্বামী অভ্র।
দেখেন ছাঁড়েন আমার হাত নয়তো ভালো হবে না।
কি, লক্ষিটি? আমি পাশে আসলেই এমন করো কেনো?ওই শিশির তো জোর করে তোমায় বউ বানিয়ে রেখেছে রোজ রাতে তোমার পাশে আসে,কতো মজাই না করে তোমায় নিয়ে,ওকে তো আটকাও না আর আমি পাশে আসলেই সমস্যা,একদিন আমাকেও পাশে টানলে পারো।
কথাটা শুনার পরপরই টান দিয়ে নিজের হাত ছাঁড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে একটা থাপ্পড় বসিয়ে দিলো নুর অভ্রের গালে।
আর একবার যদি ওই মুখে আমায় নিয়ে নোংরা কথা বের করেছিস তবে আমি ভুলে যাবো তুই ভোর আপির স্বামী, ইউ রাবিশ।
আগেও একবার থাপ্পড় দিয়েছিলি তার পরিনাম আমি ভালো করি নি, আজও মারলি এর পরিনামও কিন্তু ভালো হবে না।
যা করার তা করে নিস,এই আরোহী কখনো তোকে ভয় পায় নি আর পাবেও না।
কথাটা বলে নুর হনহন করে জায়গা ত্যাগ করলো,অভ্র অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নুরের যাওয়ার পানে।
এদিকে শায়েলা খান মনে মনে অনেক বড় ফন্দি এটে নিয়েছেন,আজকে সবাই বাড়িতে আছে আর আজকেই খেলা জমবে ভালো এটা ভেবে ঠোঁটের কোনে একটা শয়তানি হাসি টাঙালো বুড়িটা।
____________
রাত বাজে শবে ১০ টা,বজ্জাত অভ্রটার হুমকি মনে পড়ছে বারে বারে না জানি কি করবে,ওর সামনে সাহস দেখালে ভয়টা আমার বরাবরই করছে,এদিকে আজকে উনার অনেক কাজ উনি ফোন করে বলেছেন উনি নাকি রাত ১২ টার দিকে ফিরবেন,সারাদিনই একটু পর পর ব্যাঙটা ফোন দেয়,আমার আজকাল কি হয়েছে কে জানে,ফোনটা হাত থেকেই রাখি না কখন জানি উনি ফোন দিয়ে বসেন,কেনো যেনো উনার সাথে কথা বলতে ভালোই লাগে।হাজার কাজ থাকলেও আধঘন্টার মাথায় একবার করে হলেও ফোন করে,এই একটু আগেই কথা হয়েছে,কেনো যেনো উনাকে মিস করছি কে জানে,এখন প্রায়ই উনাকে মিস করি যখনি উনি বাড়ি থাকেন না,একটু আগেই খেয়ে এলাম কিন্তু খাওয়ার পর থেকেই কেমন জানি ঘুমঘুম করছে আমার অনেক,এমনটা অন্যদিন করে না,রাত ১২ টার আগে কখনো আমার ঘুম আসেই না তবে আজ কেনো আসছে কে জানে,ঘুমের অলসতায় বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দিলাম,খনিকে চোখের পাতায় ঘুম ধরা দিলো।
শিশির অনেক হাসিমুখে আসছিলো রুমের পানে,কহিনুরের জন্য আজকে বেলিফুল আর কানের দুল এনেছিলো,রুমের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকতেই যে দৃশ্যটা ওর চোখে পড়লো তারপর ওর মাথা আর ঠিক থাকলো না,চোখে খনিকে জমা হলো হিংস্রতা,কি করে মেনেই বা নিবে শিশির,ওর প্রিয়তমা,ওর কহিনুরের ঠিক পাশে শুয়ে আছে একজন অঘ্যাত যুবক,টান দিয়ে বের করলো রিভালভার আর লোকটির একদম প্যাট বরাবর স্যুট করলো,গুলির আওয়াজে নুর হকচকিয়ে উঠে বসলো ঘুম থেকে,সমস্ত বাড়ির লোক এক হলো মুহুর্তেই,শিশির এগিয়ে গিয়ে আরো দুটি গুলি করলো লোকটাকে হাত আর পা বরাবর,তারপর লোকটিকে মারতে লাগলো,লোকটি এতোসময়ে কাঁতরাতে কাঁতরাতে অচেতন হয়ে গেছে,শিশির তাও ওই অচেতন লোকটিকে মারছে আর বলছে।
তোর সাহস কি করে হলো আমার কহিনুরের পাশে আসার,কে তোকে এই সাহস দিয়েছে বল?কে তোকে সাহস দিয়েছে?
নুর কিছুই বুঝতে পারছে না,ও চোখ খুলে ভালো করে এখনও তাকাতেও পারছে না এতো ঘুম পাচ্ছে ওর তাও স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে,এদিকে শায়েলা খানের ইশারাতে শিশিরের কথার আলকে মাহেরা বলে উঠে।
একে কে আর সাহস দিবে শিশির,তোর ওই বউই দিয়েছে,ছি আমি কখনো ভাবিও নি যে নুর এমনটা করবে,তর মতো এতো ভালো স্বামী পেয়েও পরপুরুষের সাথে রাত রঙিন করতে যাবে কে জানতো,রাস্তার মেয়েরা রাস্তায়ই মানায় ভালো,এদের মাথায় উঠাতে নেই,দেখলি তো দেখিয়ে দিলো ফকিন্নিটা নিজের আসল রুপ।
মাহেরা আপির কথায় আমার অনেক খারাপ লাগলো,চোখ বেয়ে জল বইতে শুরু হলো আমার,আমি যে এসবের কিছুই জানি না,এদিকে আপি কথাটা বলতে দেড়ি হলো উনার হাতের শক্ত থাপ্পড় খেতে দেড়ি হলো না মাহেরা আপির,তারপর রিভালভার দিয়ে মাহেরা আপির পা বরাবর একটা গুলি করলেন উনি, আপি ফ্লোরে পড়ে কাঁতরাতে লাগলো তারপর উনি মাহেরা আপির পায়ের গুলির সেই ক্ষতস্থানে নিজের পায়ে চেঁপে ধরলেন,আপি ব্যাথায় জোড়ে জোড়ে চিৎকার করতে লাগলো আর উনি গর্জে উঠে বলতে লাগলেন।
কি মনে করেছিস তুই,তোরা এসব প্লেন করবি আর আমি আমার কহিনুরকে অবিশ্বাস করবো,আরে আমি ভালোবাসি ওকে আর যতোটা ভালোবাসি ততোটাই বিশ্বাস করি,আমার ভালোবাসা ঠুনকো নয় যে একটু বাতাসে উড়ে যাবে,বিশ্বাস করি আমি ওকে,শুনেছিস বিশ্বাস করি,আমার কহিনুর কেমন তা আমি ভালো করেই জানি,আমার চোখে কেউ ধুলো দিয়ে আমার ভালোবাসা আর বিশ্বাস নষ্ট করে দিবে তা আমি কখনোই হতে দিবো না,আমি জানি আমার কহিনুর কখনোই আমাকে ধোকা দিবে না,আর যদি দেয়ও আই ডোন্ট কেয়ার,বলেছি না কহিনুর শুধুই আমার,এখন ও নিজের ইচ্ছেতে থাকুক আর নয়তো অনিচ্ছাতেই,ও যদি অন্য কারো হয়ে যেতে চায়ও তবেও আমি তা হতে দিবো না,কহিনুর শুধুই আমার,এখন এ যে অবস্থাতেই থাকুক আমার হয়েই থাকবে।
তাই বলে তুই ওই মেয়ের নষ্টামি অদেখা করবি দাদুভাই।
কথাটা বলতেই শিশির রিভালভার শায়েলা খানের দিকে করে ওটা চালিয়েই দিবে এর আগেই রুশানা খান গিয়ে ওর হাত উপরে উঠিয়ে দেন আর গুলিটা উপরের দিকে যায়,শিশির সাথে সাথে রুশানা খানকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবে তখনি নুর উনাকে পড়া থেকে আটকায়,শিশির পুরো রিভালভারটাই শায়েলা খানের দিকে ছুঁড়ে মারে,শায়েলা খান প্রাণ বাঁচাতে সরে যান আর রিভালভারটা উনার পিছনের দেয়ালে গিয়ে আঁচড়ে পড়ে,শায়েলা খানসহ ওখানের সবাই তখন ভিতু পর্যায়ের চরম সীমায় পৌঁছে গেছে,শিশির গর্জে গর্জে বলছে।
তোর সাহস কি করে হলো দাদি,কি করে হলো আমার কহিনুরকে এসব বলার,তোদের আমি বলি নি আমার কহিনুরকে কখনো কিছু না বলতে,বলি নি?বুঝেছি তোরা সবাই আমার কহিনুরকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিতে চাস,তাই না?এটাই তো?এজন্যই এসব ঘটনা সাজিয়েছিস তোরা বল যাতে আমি আমার কহিনুরকে ঘৃণা করি তাই না?তবে শুনে রাখ সবে,কহিনুর এই বুকের মধ্যে থাকে,আর একে ঘৃণা আর অবিশ্বাস করতে হলে আমাকে এই বুক ছিঁড়ে ফেলতে হবে,ক্ষতবিক্ষত করে দিতে হবে নিজেকে কারন একে ভালোবাসি আমি,ও শুধুই আমার,আর তোরা আমার কহিনুরকে আমার থেকে দূর করার চেষ্টা করেছিস আমি কাউকেই বাঁচিয়ে রাখবো না,কাউকেই না,সবাইকে মেরে ফেলবো আমি সবাইকে।
কথাটা বলে শিশির রিভালভারটা………..
চলবে.……..