#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
(পর্ব-৬)
#ফাবিহা_নওশীন
??
“শুভ্রা আমি চলে যাচ্ছি আর ফিরবো না।”
হৃদ বড় একটা লাগেজ নিয়ে হেটে যাচ্ছে।শুভ্রা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।হটাৎ করেই হৃদ মিলিয়ে গেলো।
শুভ্রার তখন মনে হচ্ছে সবকিছু হারিয়ে ফেলছে।ওর স্বপ্ন ওর ভালোবাসা সব হারিয়ে যাচ্ছে,হৃদ হারিয়ে যাচ্ছে।
শুভ্রা চিতকার করে বলছে,
“হৃদ ভাইয়া যেওনা,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।”
কিন্তু হৃদ আর ফিরে আসেনি।
শুভ্রা শুয়া থেকে ধপ করে উঠে বসে।পুরো শরীর ঘেমে গেছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।গলা কেমন শুকিয়ে গেছে।শুভ্রা বেড থেকে নেমে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে খেয়ে নিলো।তারপর হৃদের রুমের দিকে পা বাড়ালো।দরজায় হাত দিতেই দরজা খোলে গেলো।
শুভ্রা কোনো শব্দ না করে মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে বিছানার দিকে চোখ বুলালো।ডিম লাইট জ্বলছে।হৃদ বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে।মাথার উপর আরেকটা কুশন চেপে ধরে আছে।শুভ্রা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
তারপর দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে যেতে যেতে বললো,
“ব্যাটা তো এখানেই শুয়ে আছে তবে এই স্বপ্নের মানে কি।”
শুভ্রা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো কিন্তু ঘুম তার চোখে নেই।বারবার সারাদিনের ঘটনা মনে পড়ছে।ওর নিজের কাছে নিজের জীবনটা অদ্ভুত লাগছে।
আজীবন কি ভেবে এসেছে আর আজ কি দেখছে,কি শুনছে।তবে এটুকু ভেবে ভালো লাগছে অপাত্রে ভালোবাসা দান করে নি।যাকে ভালোবেসেছে সেও গোপনে ভালোবেসেছে।
~~~
শুভ্রা গার্ডেনে দৌড়াচ্ছে।তবে আজ এনার্জি পাচ্ছেনা।শুভ্রা কিছুক্ষণ দৌড় দিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল।তারপর বোতল নিয়ে পানি খাওয়ার জন্য উপরে মুখ করতেই হৃদের বারান্দায় চোখ গেলো।হৃদ দাঁড়িয়ে আছে।দুজনের চোখাচোখি হতেই হৃদ বারান্দা থেকে ভিতরে চলে গেলো।
শুভ্রা মুচকি হেসে পানি খেয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করলো।ওর মনের সাথে সাথে শরীরেও এনার্জি চলে এসেছে।
শুভ্রা রেডি হয়ে নাস্তা করার জন্য টেবিলে এসে বসে।ব্যাগ রেখে টেবিলের উপরে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,
—-নাস্তা দেও।
রাহাত মেয়ের কান্ড দেখে অবাক।
—-কি ব্যাপার আমার রাজকন্যা আজ ফোনে না ঢুকে টেবিলে ঢুকে গেছে কেন?
শুভ্রা ঘুমঘুম চোখে বললো,
—-ঘুম পাচ্ছে।
শাওরিন বললো,
—–নিশ্চয়ই সারারাত না ঘুমিয়ে ফোনের ভিতরে ঢুকে ছিলি।তোর এই ফোন নিয়ে যে কি করি।
শুভ্রা বললো,মাম্মা সব দোষ কি ফোনের।তুমি আমার ফোনকে একদম সহ্য করতে পারোনা।এতো হিংসুক কেন তুমি?
নাস্তা দেও।
শুভ্রা আবার চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো।রোজ গ্লাস থেকে পানি নিয়ে ওর মুখে ছিটিয়ে মারলো।শুভ্রা উঠে রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-তোর কি আমার আরাম,সুখ সহ্য হয়না।
রোজ বললো,
—–না হয়না,একদম হয়না।রাতভর না ঘুমিয়ে খাবার টেবিলে ঘুমাচ্ছো কেন?নাস্তা গিলে ভার্সিটি যাও।
—-ওরে আমার মা রে।বাচ্চা মেয়ে আমাকে অর্ডার করিস।
—-আ’ম নট বাচ্চা।আ’ম 18।আগামী সপ্তাহে থেকে আমার ভার্সিটি ক্লাস শুরু।
—-ওহ তাহলে তো বড় হয়ে গেছিস।তোকে বিয়ে দিয়ে দেবো।দাড়া আসার সময় একটা রিক্সাওয়ালা ধরে নিয়ে আসবো তোর জন্য।
সবাই মনোযোগ দিয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে।রোজ বললো,
—-পাপায়ায়ায়ায়া।
রোদ বললো,
—-হ্যা প্রিন্সেস।ওর কথা বাদ দেও।
তোমার জন্য প্রিন্স নিয়ে আসবো,আমার প্রিন্সসের জন্য সুন্দর একটা প্রিন্স আসবে।শুভ্রাকে ভ্যানচালকের কাছে বিয়ে দিয়ে দেবো।
রোজ মুখ বাকিয়ে বললো,
বেশ হবে।
শুভ্রা মুখ ভেংচি কেটে বললো,
—-দিস ইজ শুভ্রতা শুভ্রা খান।
উফফ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রোজ বললো,অভিশাপ দিলাম।আজ তোমাকে ফার্স্ট ক্লাসেই কানে ধরে দাড় করিয়ে রাখবে।
—–শুভ্রাকে কানে ধরে দাড় করিয়ে রাখার ক্ষমতা কারো নেই।আ’ম দ্যা বেস্ট স্টুডেন্ট ইন দ্যা ক্লাস।বাট আজকে যেই হারে ঘুম আসছে তোর অভিশাপ লেগেও যেতে পারে।ক্লাসে গিয়ে না ঘুমিয়ে পড়ি।
ফুল বললো,তাহলে আজকে অফ দে।বাড়িতে রেস্ট নে।
শুভ্রা কিছু বলতে যাবে তখনই রোজ বললো,
—-ওয়েট ওয়েট আমি বলছি তুমি কি বলবা।আ’ম দ্যা গ্রেট শুভ্রতা শুভ্রা খান।চাদ,সূর্য উঠতে ভুলে যাবে,কিন্তু আমি ভার্সিটি যেতে ভুলবোনা।ইম্পসিবল।
হৃদের নাস্তা শেষ।উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো,
—–মাম্মা আমি একটু বের হচ্ছি।
হৃদ গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ির বাইরে যেতেই শুভ্রা উঠে গেলো।
—-বায় এভ্রিওয়ান।
হৃদ গাড়ির ডোর ওপেন করতেই শুভ্রা পেছনে থেকে বলে উঠলো,
—–শুনুন আমার একটু কথা আছে।
হৃদ না ঘুরেই বললো,
—-উল্টো জামা পড়ে ভার্সিটি যাওয়া ঠিক না।
শুভ্রা হৃদের কথা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক।তাড়াতাড়ি রেডি হতে গিয়ে এই অবস্থা।নির্ঘাত আজকে ক্লাস মিস হবে।ভিতরে যে এত বড় বড় কথা বলে এলো তার কি হবে।
শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-ওহহ নো।
তারপর দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো।
হৃদ মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
শুভ্রা হৃদকে যা বলতে চাইলো এই উল্টো জামার জন্য পারলো না।শুভ্রাকে আবার ভিতরে যেতে দেখে সবাই বললো,
—-কিরে ফেরত আসলি কেন?
শুভ্রা ঠোঁট বাকিয়ে বললো,উল্টো জামা পড়েছি।সব রোজের দোষ।ওর অভিশাপ লেগে যাচ্ছে।
সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো শুভ্রার অবস্থা দেখে।শুভ্রা কাদো কাদো হয়ে বললো,
“কেউ আমাকে ভালোবাসে না।হুহ।”
.
.
শুভ্রা রাতে কানে হেডফোন লাগিয়ে অল্প সাউন্ডে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছে।
তখনই কিছু একটা শব্দ পেয়ে পেছনে তাকাচ্ছে।কেউ চিলেকোঠার ছাদ থেকে নামছে।শুভ্রা ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো এটা হৃদ।শুভ্রা আবার ঘুরে গেলো।অন্ধকারে হৃদের মনে হলো কেউ দাড়িয়ে আছে।
হৃদ পেছনে থেকে বুঝতে পারছেনা কে ওখানে।ওর মনে হলো রোজ দাড়িয়ে আছে।
হৃদ এগিয়ে গিয়ে বললো,কে ওখানে?রোজ?
শুভ্রা হৃদের দিকে ঘুরে হেডফোন খোলে বললো,
—–আমি শুভ্রা নট রোজ।
হৃদ আর কিছু না বলে ঘুরে চলে যেতে নিলে বলে,
—-আ’ম সরি।
হৃদ থমকে যায় ওর সরি শুনে তারপর ঘুরে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলে,
—–ফর হোয়াট?
শুভ্রা দুহাত ভাজ করে বললো,
—-কারো সাথে কোনো অন্যায় করলে কিংবা কাউকে হার্ট করলে সরি বলতে হয় এটা আমি শিখেছি।আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হার্ট করেছি,তাই সরি।
—–আমাকে হার্ট করা এত সহজ না।
—–হ্যা তাই তো।ভিনগ্রহের এলিয়েন কিনা।যাইহোক আমি ক্যারেক্টার জঘন্য দিয়ে অন্য কিছু মিন করিনি।একচুয়ালি আপনি বুঝতে পারেননি।বুঝবেন কিভাবে,সেই ক্ষমতা এখানো অর্জন করেন নি।যাইহোক সরি।
আর হ্যা একজনের উপর রাগ করে পুরো ফ্যামিলিকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না।
—-মানে?
—–মানে মামনি বলছিলো আপনি লন্ডন চলে যাচ্ছেন।মামনি অনেক মন খারাপ করছিলো।অনেক কষ্ট পাচ্ছিলো তাই বললাম যদিও আমার বলার কিংবা আমার কথার মূল্য এবাড়িতে কেউ কোনোদিন দেয়নি।
যাইহোক এটুকুই বলার ছিলো।
হৃদ ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–আমি কারো তুচ্ছ ভাবনার জন্য আমার ফ্যামিলিকে আর হার্ট করবোনা।অনেক হার্ট করেছি তার বিনিময়ে কিছুই পাইনি।সো এখন থেকে শুধু আমার ফ্যামিলির কথা ভাববো।
হৃদ নিচে নেমে গেলো।শুভ্রাও ঘুরে গেলো।
কানে হেডফোন গুঁজে বললো,
—–আমাকে ভাব দেখাস।তোকেও দেখাবো ভাব কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ।আমি তো ছোট একটা ভুল কথা বলেছি তবুও সরি বলে দিয়েছি।কিন্তু তোর ব্যাটা এত দেমাগ আমার সাথে এতকিছু করার পরেও সরি বলিস নি।
আমাকে সরি না বলা পর্যন্ত আমিও তোকে ক্ষমা করবো না আর না তোর কাছে নিজেকে সমর্পণ করবো।না মানে না।নয়তো নিজের নাম পাল্টে দেবো।
হৃদ নামতে নামতে ভাবছে,
—–ভেবেছিলাম তুই সবকিছু মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলবি কিন্তু না সরি বলতে ডেকেছিস।সরি দিয়ে আমি কি করবো?ভর্তা বানিয়ে খাবো?সরিতে কি আমার মন ভরবে?আমি তো তোর মন ছুতে চাই।
আজ হৃদ অফিসে জয়েন করবে।সব দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে।মাম্মাকে সব কাজ থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে।এখন নিজেই সব দেখবে,বুঝবে।
ফর্মাল ড্রেসে হৃদকে ড্যাশিং লাগছে।শুভ্রা একবার আড়চোখে দেখে মনে মনে কয়েকবার ক্রাশ খেয়ে নাস্তা খাওয়াতে মন দিলো।যেনো কাউকে দেখেনি,কিংবা তার কিছু আসে-যায় না।
হৃদ নাস্তা শেষে দিদা,নানা ভাই,নানুমনি,পাপা,মাম্মা,কাকাই,ছোট মা একে একে সবার কাছে থেকে দোয়া নিলো।
রোজ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
—–আমি বাকি আছি,আমাকে কি কারো চোখে পড়েনা।
হৃদ ভ্রু কুচকে রোজের দিকে তাকালো।
—–অফিস থেকে আসার সময় অণুবীক্ষণ যন্ত্র কিনে নিয়ে আসবো।তোর মতো ছোট ভাইরাস খালি চোখে দেখা যায়না।
—–ভাইয়া!!
হৃদ কানে হাত দিয়ে বললো,
—-আস্তে!আস্তে!কানের বারোটা বাজাবি?আজকে অফিসের প্রথম দিন বয়রা হয়ে উল্টো পাল্টা শুনবো।মানইজ্জত কিছু থাকবে না তোদের জ্বালায়।
ঠিক আছে বলছি বুড়ি দাদি আজকে আমার অফিসের প্রথমদিন দোয়া করবেন।
রোজ দুষ্ট হাসি হেসে বললো,
—-শুভ্রাপু কি দোষ করলো?আপুকে বলে যাও।
শুভ্রা ঠাস করে উঠে দাড়িয়ে রোজকে বললো,
—-তোর ভাইকে তুই মন ভরে দোয়া কর।কম পড়লে রাস্তায় থেকে লোক ডেকে আন।
শুভ্রা ব্যাগ নিয়ে হাটা ধরলো।
রাহাত হৃদের কাধে হাত রেখে বললো,
—-ওর কথায় কিছু মনে করিস না।ওকে তো জানিস।
হৃদ মনে মনে বলছে,এই শুভ্রাকে আমি জানি না।
হৃদ জোরপূর্বক হেসে বললো,
—-নো কাকাই,,আমি বাচ্চা মেয়েদের কথায় কিছু মনে করিনা।
শুভ্রা হৃদের কথা শুনলেও রিয়েক্ট করে নি।
.
হৃদের অফিসের আজ ৫ম দিন।হৃদ অফিসে যেতেই কেবিনের পাশে কেমন চেচামেচি শুনতে পাচ্ছে।হৃদ সেদিকে গিয়ে দাড়ালো।একটা মেয়েকে ম্যানেজার বকছে।মেয়েটা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
হৃদ গিয়ে দাড়াতেই ম্যানেজার চুপ করে গেলো।
—-হোয়াট হ্যাপেন্ড হেয়ার?
মেয়েটি ভয় পেয়ে গেলো হৃদকে দেখে।
ম্যানেজার আমতা আমতা করে বললো,
—–স্যার একচুয়ালি মিস.অনু একটা ভুল করেছে।
—–ভুল করেছে এভাবে চেচাচ্ছেন কেন?
ম্যানেজার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বললো,
—–স্যার নিউ জয়েন করেছে।উনার জন্য একটা ডিজাইন নষ্ট হয়ে গেছে।
হৃদ ম্যানেজারকে বললো,
—–তো!!যেহেতু নতুন জয়েন করেছে তাই আপনাদের উচিত ছিলো কেয়ার ফুল হওয়া।ভালো ভাবে বুঝানো।নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে অধীনস্থ কর্মচারীদের উপর চিতকার চেচামেচি করা কোনো কাজের কথা না।আর ভুল যেমনই হোক এভাবে বকাবকি করা কোনো ভদ্রতার মধ্যে পড়েনা।মাম্মার আন্ডারে থেকে এটুকু শিখেন নি।এমন আচরণ আমি মোটেও বরদাস্ত করবো না।
কাজে যান দুজনেই।অনু হৃদকে দেখে অবাক হলো ভেবেছিলো ওকে আজ ফায়ার করে দেবে।অনু কৃতজ্ঞতা নিয়ে হৃদের দিকে তাকিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো।
রোজ পুরো রুম জুড়ে পাইচারি করছে।কিছুই বলছেনা।শুভ্রা গালে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে রোজের দিকে চেয়ে আছে। শুভ্রার বিরক্তির ভাব পুরো মুখ জুড়ে ফুটে উঠেছে।
শুভ্রা নাচের একটা তাল ঠিক করছিলো।রোজ শুভ্রার নাচের রুমে ঢুকে শুভ্রাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসেছে।এখন কিছু না বলে রুম জুড়ে পাইচারি করছে।
—–রোজের বাচ্চা।তুই কি কথা বলবি?আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো আর তুই কতকাল পাইচারি করবি?
রোজ এবার থেমে গেলো।তারপর শুভ্রার দিকে তাকালো যেনো শুভ্রার এ কথাটুকু শোনার অপেক্ষায় ছিলো।
রোজ আগ্রহ নিয়ে শুভ্রার পাশে বসলো।চেহারার এক্সপ্রেশন এমন করলো যেনো কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে।
—-শুভ্রাপু!!
শুভ্রা বিরক্ত নিয়ে বললো,
—-বল শুনে ধন্য হই।
রোজ শুভ্রার আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,
—–ভাইয়ার অফিসে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে জয়েন করেছে,দেখতে যেমন তেমনই আচার আচরণ।ভাইয়ার সাথে কি সে ভাব।ম্যানেজার মেয়েটাকে বকছিলো ভাইয়া হিরোর মতো এন্ট্রি করে ম্যানেজারকে ইচ্ছে মতো বকে দিলো।সবাই অবাক।আমিও।
শুভ্রা আচমকা বললো,
—–কিহ!!!!
তারপর নিজেকে সামলে বললো,
তো!!
—-তো বুঝতে পারছোনা?তোমার সাথে তো সব কাটঝাট।ভাইয়া বলেছে শুভ্রা যখন চায়না,ওকে আমি বিয়ে করবোনা।এখন যদি অনু…
শুভ্রা আগ্রহ নিয়ে বললো,অনু কে?
—–ওই মেয়েটার নাম অনু।
—–তার পর থেকে বল।
—–এখন যদি অনুর সাথে ভাইয়ার প্রেম ট্রেম হয়ে যায়।অনু যদি আমার ভাবি হয়ে যায়।হলেও খারাপ না মেয়েটা সুন্দরী অনেক।আমার সুন্দরী একটা ভাবী হবে।
শুভ্রা চিতকার করে বললো,
—-রোজ!!
তোর ওই অনু ভাবীকে আমি পরমাণু বানিয়ে দিবে।
শুভ্রা হনহন করে রোজের রুম ত্যাগ করলো আর বিরবির করে বলছে,
অনুর সাথে ভাব জমানো হচ্ছে।তোর বিয়ে হবে হৃদের বাচ্চা।
শুভ্রা যেতেই রোজ উরকি ধুরকি ড্রান্স দিলো।আর বলছে,
—-বাল্লে বাল্লে,আগ লাগ গাইয়ি।
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে,পরাণ যায় জ্বলিয়া রে।
চলবে….
৳#হৃদয়ের_শুভ্রতা??
(পর্ব-৬)
#ফাবিহা_নওশীন
??
“শুভ্রা আমি চলে যাচ্ছি আর ফিরবো না।”
হৃদ বড় একটা লাগেজ নিয়ে হেটে যাচ্ছে।শুভ্রা ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।হটাৎ করেই হৃদ মিলিয়ে গেলো।
শুভ্রার তখন মনে হচ্ছে সবকিছু হারিয়ে ফেলছে।ওর স্বপ্ন ওর ভালোবাসা সব হারিয়ে যাচ্ছে,হৃদ হারিয়ে যাচ্ছে।
শুভ্রা চিতকার করে বলছে,
“হৃদ ভাইয়া যেওনা,আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা।”
কিন্তু হৃদ আর ফিরে আসেনি।
শুভ্রা শুয়া থেকে ধপ করে উঠে বসে।পুরো শরীর ঘেমে গেছে।জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।গলা কেমন শুকিয়ে গেছে।শুভ্রা বেড থেকে নেমে এক গ্লাস পানি ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে খেয়ে নিলো।তারপর হৃদের রুমের দিকে পা বাড়ালো।দরজায় হাত দিতেই দরজা খোলে গেলো।
শুভ্রা কোনো শব্দ না করে মাথা ভিতরে ঢুকিয়ে বিছানার দিকে চোখ বুলালো।ডিম লাইট জ্বলছে।হৃদ বালিশে মুখ গুজে শুয়ে আছে।মাথার উপর আরেকটা কুশন চেপে ধরে আছে।শুভ্রা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।
তারপর দরজা বন্ধ করে নিজের রুমে যেতে যেতে বললো,
“ব্যাটা তো এখানেই শুয়ে আছে তবে এই স্বপ্নের মানে কি।”
শুভ্রা নিজের রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো কিন্তু ঘুম তার চোখে নেই।বারবার সারাদিনের ঘটনা মনে পড়ছে।ওর নিজের কাছে নিজের জীবনটা অদ্ভুত লাগছে।
আজীবন কি ভেবে এসেছে আর আজ কি দেখছে,কি শুনছে।তবে এটুকু ভেবে ভালো লাগছে অপাত্রে ভালোবাসা দান করে নি।যাকে ভালোবেসেছে সেও গোপনে ভালোবেসেছে।
~~~
শুভ্রা গার্ডেনে দৌড়াচ্ছে।তবে আজ এনার্জি পাচ্ছেনা।শুভ্রা কিছুক্ষণ দৌড় দিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ল।তারপর বোতল নিয়ে পানি খাওয়ার জন্য উপরে মুখ করতেই হৃদের বারান্দায় চোখ গেলো।হৃদ দাঁড়িয়ে আছে।দুজনের চোখাচোখি হতেই হৃদ বারান্দা থেকে ভিতরে চলে গেলো।
শুভ্রা মুচকি হেসে পানি খেয়ে আবার দৌড়াতে শুরু করলো।ওর মনের সাথে সাথে শরীরেও এনার্জি চলে এসেছে।
শুভ্রা রেডি হয়ে নাস্তা করার জন্য টেবিলে এসে বসে।ব্যাগ রেখে টেবিলের উপরে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,
—-নাস্তা দেও।
রাহাত মেয়ের কান্ড দেখে অবাক।
—-কি ব্যাপার আমার রাজকন্যা আজ ফোনে না ঢুকে টেবিলে ঢুকে গেছে কেন?
শুভ্রা ঘুমঘুম চোখে বললো,
—-ঘুম পাচ্ছে।
শাওরিন বললো,
—–নিশ্চয়ই সারারাত না ঘুমিয়ে ফোনের ভিতরে ঢুকে ছিলি।তোর এই ফোন নিয়ে যে কি করি।
শুভ্রা বললো,মাম্মা সব দোষ কি ফোনের।তুমি আমার ফোনকে একদম সহ্য করতে পারোনা।এতো হিংসুক কেন তুমি?
নাস্তা দেও।
শুভ্রা আবার চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলো।রোজ গ্লাস থেকে পানি নিয়ে ওর মুখে ছিটিয়ে মারলো।শুভ্রা উঠে রোজের দিকে তাকিয়ে বললো,
—-তোর কি আমার আরাম,সুখ সহ্য হয়না।
রোজ বললো,
—–না হয়না,একদম হয়না।রাতভর না ঘুমিয়ে খাবার টেবিলে ঘুমাচ্ছো কেন?নাস্তা গিলে ভার্সিটি যাও।
—-ওরে আমার মা রে।বাচ্চা মেয়ে আমাকে অর্ডার করিস।
—-আ’ম নট বাচ্চা।আ’ম 18।আগামী সপ্তাহে থেকে আমার ভার্সিটি ক্লাস শুরু।
—-ওহ তাহলে তো বড় হয়ে গেছিস।তোকে বিয়ে দিয়ে দেবো।দাড়া আসার সময় একটা রিক্সাওয়ালা ধরে নিয়ে আসবো তোর জন্য।
সবাই মনোযোগ দিয়ে ওদের ঝগড়া দেখছে।রোজ বললো,
—-পাপায়ায়ায়ায়া।
রোদ বললো,
—-হ্যা প্রিন্সেস।ওর কথা বাদ দেও।
তোমার জন্য প্রিন্স নিয়ে আসবো,আমার প্রিন্সসের জন্য সুন্দর একটা প্রিন্স আসবে।শুভ্রাকে ভ্যানচালকের কাছে বিয়ে দিয়ে দেবো।
রোজ মুখ বাকিয়ে বললো,
বেশ হবে।
শুভ্রা মুখ ভেংচি কেটে বললো,
—-দিস ইজ শুভ্রতা শুভ্রা খান।
উফফ আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
রোজ বললো,অভিশাপ দিলাম।আজ তোমাকে ফার্স্ট ক্লাসেই কানে ধরে দাড় করিয়ে রাখবে।
—–শুভ্রাকে কানে ধরে দাড় করিয়ে রাখার ক্ষমতা কারো নেই।আ’ম দ্যা বেস্ট স্টুডেন্ট ইন দ্যা ক্লাস।বাট আজকে যেই হারে ঘুম আসছে তোর অভিশাপ লেগেও যেতে পারে।ক্লাসে গিয়ে না ঘুমিয়ে পড়ি।
ফুল বললো,তাহলে আজকে অফ দে।বাড়িতে রেস্ট নে।
শুভ্রা কিছু বলতে যাবে তখনই রোজ বললো,
—-ওয়েট ওয়েট আমি বলছি তুমি কি বলবা।আ’ম দ্যা গ্রেট শুভ্রতা শুভ্রা খান।চাদ,সূর্য উঠতে ভুলে যাবে,কিন্তু আমি ভার্সিটি যেতে ভুলবোনা।ইম্পসিবল।
হৃদের নাস্তা শেষ।উঠে দাড়াতে দাড়াতে বললো,
—–মাম্মা আমি একটু বের হচ্ছি।
হৃদ গাড়ির চাবি নিয়ে বাড়ির বাইরে যেতেই শুভ্রা উঠে গেলো।
—-বায় এভ্রিওয়ান।
হৃদ গাড়ির ডোর ওপেন করতেই শুভ্রা পেছনে থেকে বলে উঠলো,
—–শুনুন আমার একটু কথা আছে।
হৃদ না ঘুরেই বললো,
—-উল্টো জামা পড়ে ভার্সিটি যাওয়া ঠিক না।
শুভ্রা হৃদের কথা শুনে নিজের দিকে তাকিয়ে অবাক।তাড়াতাড়ি রেডি হতে গিয়ে এই অবস্থা।নির্ঘাত আজকে ক্লাস মিস হবে।ভিতরে যে এত বড় বড় কথা বলে এলো তার কি হবে।
শুভ্রা বিরক্তি নিয়ে বললো,
—-ওহহ নো।
তারপর দৌড়ে ভিতরে চলে গেলো।
হৃদ মুচকি হেসে গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়।
শুভ্রা হৃদকে যা বলতে চাইলো এই উল্টো জামার জন্য পারলো না।শুভ্রাকে আবার ভিতরে যেতে দেখে সবাই বললো,
—-কিরে ফেরত আসলি কেন?
শুভ্রা ঠোঁট বাকিয়ে বললো,উল্টো জামা পড়েছি।সব রোজের দোষ।ওর অভিশাপ লেগে যাচ্ছে।
সবাই হাসাহাসি শুরু করে দিলো শুভ্রার অবস্থা দেখে।শুভ্রা কাদো কাদো হয়ে বললো,
“কেউ আমাকে ভালোবাসে না।হুহ।”
.
.
শুভ্রা রাতে কানে হেডফোন লাগিয়ে অল্প সাউন্ডে ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গান শুনছে।
তখনই কিছু একটা শব্দ পেয়ে পেছনে তাকাচ্ছে।কেউ চিলেকোঠার ছাদ থেকে নামছে।শুভ্রা ভালো করে দেখে বুঝতে পারলো এটা হৃদ।শুভ্রা আবার ঘুরে গেলো।অন্ধকারে হৃদের মনে হলো কেউ দাড়িয়ে আছে।
হৃদ পেছনে থেকে বুঝতে পারছেনা কে ওখানে।ওর মনে হলো রোজ দাড়িয়ে আছে।
হৃদ এগিয়ে গিয়ে বললো,কে ওখানে?রোজ?
শুভ্রা হৃদের দিকে ঘুরে হেডফোন খোলে বললো,
—–আমি শুভ্রা নট রোজ।
হৃদ আর কিছু না বলে ঘুরে চলে যেতে নিলে বলে,
—-আ’ম সরি।
হৃদ থমকে যায় ওর সরি শুনে তারপর ঘুরে শুভ্রার দিকে তাকিয়ে বলে,
—–ফর হোয়াট?
শুভ্রা দুহাত ভাজ করে বললো,
—-কারো সাথে কোনো অন্যায় করলে কিংবা কাউকে হার্ট করলে সরি বলতে হয় এটা আমি শিখেছি।আমার মনে হচ্ছে আমি আপনাকে হার্ট করেছি,তাই সরি।
—–আমাকে হার্ট করা এত সহজ না।
—–হ্যা তাই তো।ভিনগ্রহের এলিয়েন কিনা।যাইহোক আমি ক্যারেক্টার জঘন্য দিয়ে অন্য কিছু মিন করিনি।একচুয়ালি আপনি বুঝতে পারেননি।বুঝবেন কিভাবে,সেই ক্ষমতা এখানো অর্জন করেন নি।যাইহোক সরি।
আর হ্যা একজনের উপর রাগ করে পুরো ফ্যামিলিকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না।
—-মানে?
—–মানে মামনি বলছিলো আপনি লন্ডন চলে যাচ্ছেন।মামনি অনেক মন খারাপ করছিলো।অনেক কষ্ট পাচ্ছিলো তাই বললাম যদিও আমার বলার কিংবা আমার কথার মূল্য এবাড়িতে কেউ কোনোদিন দেয়নি।
যাইহোক এটুকুই বলার ছিলো।
হৃদ ঠোঁটের কোনে রহস্যময় হাসি ফুটিয়ে বললো,
—–আমি কারো তুচ্ছ ভাবনার জন্য আমার ফ্যামিলিকে আর হার্ট করবোনা।অনেক হার্ট করেছি তার বিনিময়ে কিছুই পাইনি।সো এখন থেকে শুধু আমার ফ্যামিলির কথা ভাববো।
হৃদ নিচে নেমে গেলো।শুভ্রাও ঘুরে গেলো।
কানে হেডফোন গুঁজে বললো,
—–আমাকে ভাব দেখাস।তোকেও দেখাবো ভাব কত প্রকার ও কি কি উদাহরণসহ।আমি তো ছোট একটা ভুল কথা বলেছি তবুও সরি বলে দিয়েছি।কিন্তু তোর ব্যাটা এত দেমাগ আমার সাথে এতকিছু করার পরেও সরি বলিস নি।
আমাকে সরি না বলা পর্যন্ত আমিও তোকে ক্ষমা করবো না আর না তোর কাছে নিজেকে সমর্পণ করবো।না মানে না।নয়তো নিজের নাম পাল্টে দেবো।
হৃদ নামতে নামতে ভাবছে,
—–ভেবেছিলাম তুই সবকিছু মিটিয়ে নেওয়ার জন্য বলবি কিন্তু না সরি বলতে ডেকেছিস।সরি দিয়ে আমি কি করবো?ভর্তা বানিয়ে খাবো?সরিতে কি আমার মন ভরবে?আমি তো তোর মন ছুতে চাই।
আজ হৃদ অফিসে জয়েন করবে।সব দায়িত্ব বুঝে নিয়েছে।মাম্মাকে সব কাজ থেকে ছুটি দিয়ে দিয়েছে।এখন নিজেই সব দেখবে,বুঝবে।
ফর্মাল ড্রেসে হৃদকে ড্যাশিং লাগছে।শুভ্রা একবার আড়চোখে দেখে মনে মনে কয়েকবার ক্রাশ খেয়ে নাস্তা খাওয়াতে মন দিলো।যেনো কাউকে দেখেনি,কিংবা তার কিছু আসে-যায় না।
হৃদ নাস্তা শেষে দিদা,নানা ভাই,নানুমনি,পাপা,মাম্মা,কাকাই,ছোট মা একে একে সবার কাছে থেকে দোয়া নিলো।
রোজ কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
—–আমি বাকি আছি,আমাকে কি কারো চোখে পড়েনা।
হৃদ ভ্রু কুচকে রোজের দিকে তাকালো।
—–অফিস থেকে আসার সময় অণুবীক্ষণ যন্ত্র কিনে নিয়ে আসবো।তোর মতো ছোট ভাইরাস খালি চোখে দেখা যায়না।
—–ভাইয়া!!
হৃদ কানে হাত দিয়ে বললো,
—-আস্তে!আস্তে!কানের বারোটা বাজাবি?আজকে অফিসের প্রথম দিন বয়রা হয়ে উল্টো পাল্টা শুনবো।মানইজ্জত কিছু থাকবে না তোদের জ্বালায়।
ঠিক আছে বলছি বুড়ি দাদি আজকে আমার অফিসের প্রথমদিন দোয়া করবেন।
রোজ দুষ্ট হাসি হেসে বললো,
—-শুভ্রাপু কি দোষ করলো?আপুকে বলে যাও।
শুভ্রা ঠাস করে উঠে দাড়িয়ে রোজকে বললো,
—-তোর ভাইকে তুই মন ভরে দোয়া কর।কম পড়লে রাস্তায় থেকে লোক ডেকে আন।
শুভ্রা ব্যাগ নিয়ে হাটা ধরলো।
রাহাত হৃদের কাধে হাত রেখে বললো,
—-ওর কথায় কিছু মনে করিস না।ওকে তো জানিস।
হৃদ মনে মনে বলছে,এই শুভ্রাকে আমি জানি না।
হৃদ জোরপূর্বক হেসে বললো,
—-নো কাকাই,,আমি বাচ্চা মেয়েদের কথায় কিছু মনে করিনা।
শুভ্রা হৃদের কথা শুনলেও রিয়েক্ট করে নি।
.
হৃদের অফিসের আজ ৫ম দিন।হৃদ অফিসে যেতেই কেবিনের পাশে কেমন চেচামেচি শুনতে পাচ্ছে।হৃদ সেদিকে গিয়ে দাড়ালো।একটা মেয়েকে ম্যানেজার বকছে।মেয়েটা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।
হৃদ গিয়ে দাড়াতেই ম্যানেজার চুপ করে গেলো।
—-হোয়াট হ্যাপেন্ড হেয়ার?
মেয়েটি ভয় পেয়ে গেলো হৃদকে দেখে।
ম্যানেজার আমতা আমতা করে বললো,
—–স্যার একচুয়ালি মিস.অনু একটা ভুল করেছে।
—–ভুল করেছে এভাবে চেচাচ্ছেন কেন?
ম্যানেজার মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মুখ শক্ত করে বললো,
—–স্যার নিউ জয়েন করেছে।উনার জন্য একটা ডিজাইন নষ্ট হয়ে গেছে।
হৃদ ম্যানেজারকে বললো,
—–তো!!যেহেতু নতুন জয়েন করেছে তাই আপনাদের উচিত ছিলো কেয়ার ফুল হওয়া।ভালো ভাবে বুঝানো।নিজেদের দায়িত্ব পালন না করে অধীনস্থ কর্মচারীদের উপর চিতকার চেচামেচি করা কোনো কাজের কথা না।আর ভুল যেমনই হোক এভাবে বকাবকি করা কোনো ভদ্রতার মধ্যে পড়েনা।মাম্মার আন্ডারে থেকে এটুকু শিখেন নি।এমন আচরণ আমি মোটেও বরদাস্ত করবো না।
কাজে যান দুজনেই।অনু হৃদকে দেখে অবাক হলো ভেবেছিলো ওকে আজ ফায়ার করে দেবে।অনু কৃতজ্ঞতা নিয়ে হৃদের দিকে তাকিয়ে নিজের কেবিনে চলে গেলো।
রোজ পুরো রুম জুড়ে পাইচারি করছে।কিছুই বলছেনা।শুভ্রা গালে হাত দিয়ে বিরক্তি নিয়ে রোজের দিকে চেয়ে আছে। শুভ্রার বিরক্তির ভাব পুরো মুখ জুড়ে ফুটে উঠেছে।
শুভ্রা নাচের একটা তাল ঠিক করছিলো।রোজ শুভ্রার নাচের রুমে ঢুকে শুভ্রাকে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসেছে।এখন কিছু না বলে রুম জুড়ে পাইচারি করছে।
—–রোজের বাচ্চা।তুই কি কথা বলবি?আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো আর তুই কতকাল পাইচারি করবি?
রোজ এবার থেমে গেলো।তারপর শুভ্রার দিকে তাকালো যেনো শুভ্রার এ কথাটুকু শোনার অপেক্ষায় ছিলো।
রোজ আগ্রহ নিয়ে শুভ্রার পাশে বসলো।চেহারার এক্সপ্রেশন এমন করলো যেনো কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলবে।
—-শুভ্রাপু!!
শুভ্রা বিরক্ত নিয়ে বললো,
—-বল শুনে ধন্য হই।
রোজ শুভ্রার আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,
—–ভাইয়ার অফিসে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে জয়েন করেছে,দেখতে যেমন তেমনই আচার আচরণ।ভাইয়ার সাথে কি সে ভাব।ম্যানেজার মেয়েটাকে বকছিলো ভাইয়া হিরোর মতো এন্ট্রি করে ম্যানেজারকে ইচ্ছে মতো বকে দিলো।সবাই অবাক।আমিও।
শুভ্রা আচমকা বললো,
—–কিহ!!!!
তারপর নিজেকে সামলে বললো,
তো!!
—-তো বুঝতে পারছোনা?তোমার সাথে তো সব কাটঝাট।ভাইয়া বলেছে শুভ্রা যখন চায়না,ওকে আমি বিয়ে করবোনা।এখন যদি অনু…
শুভ্রা আগ্রহ নিয়ে বললো,অনু কে?
—–ওই মেয়েটার নাম অনু।
—–তার পর থেকে বল।
—–এখন যদি অনুর সাথে ভাইয়ার প্রেম ট্রেম হয়ে যায়।অনু যদি আমার ভাবি হয়ে যায়।হলেও খারাপ না মেয়েটা সুন্দরী অনেক।আমার সুন্দরী একটা ভাবী হবে।
শুভ্রা চিতকার করে বললো,
—-রোজ!!
তোর ওই অনু ভাবীকে আমি পরমাণু বানিয়ে দিবে।
শুভ্রা হনহন করে রোজের রুম ত্যাগ করলো আর বিরবির করে বলছে,
অনুর সাথে ভাব জমানো হচ্ছে।তোর বিয়ে হবেনা হৃদের বাচ্চা।
শুভ্রা যেতেই রোজ উরকি ধুরকি ড্রান্স দিলো।আর বলছে,
—-বাল্লে বাল্লে,আগ লাগ গাইয়ি।
পরাণ যায় জ্বলিয়া রে,পরাণ যায় জ্বলিয়া রে।
চলবে….