পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,০৬,০৭

0
308

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,০৬,০৭
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৬

নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু পারছি না। ব্যর্থ হয়ে অবশেষে করুন সুরে বললাম,

– আহ! লাগছে সিদ্ধাত ভাইয়া

– এতো জেদ কেন তোর? কি হয়েছে কেন খাবি না?

– কেন খাবো না তার কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে?

– হ্যাঁ দিতে হবে। আলবাত দিতে হবে

– কে তুমি?

– তোর স্বামী

ভাইয়ার কথাটায় নিজের মধ্যে কেমন জানি একটা অনুভূতি তৈরী হলো। কি বলল আমার স্বামী। আসলেই তো সিদ্ধাত ভাইয়া তো আমার স্বামী। আমি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা বন্ধ করে দিয়েছি। তাকিয়ে আছি নিরব হয়ে সিদ্ধানর ভাইয়ার দিকে। আমার নিরবতা ভেঙে সিদ্ধাত ভাইয়া আবারও বলে,

– তুই না খেয়ে ঘুমাতে পারবি না। যদি ঘুমাতে চাস তাহলে খেয়ে নিতে হবে। এখন দেখ তুই কি করবি

– এভাবে ধরে রাখলে কিভাবে খাবো? ( আদুরেস্বরে)

সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিলো। আমি হাফ ছেড়ে বাচলাম। উঠে হাত দুটো দেখছি আবারও রক্ত জমেছে কিনা। তখন রাক্ষস টা বলে,

– তুই এমনিতে অনেক কালো। এর মধ্যে দাগ হলেও খুজে পাবি না।

– কি বললে? (রেগে)

– না না কিছু বলি নি চল,

– যাবো না। খাবোও না। যাও তু…..

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সিদ্ধান্ত ভাইয়া আমাকে কোলে তুলে নিয়েছে। আমি হাত পা ছোড়াছুড়ি করছি আর বলছি,

– এই কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? নামিয়ে দাও। যাবো না তোমার সাথে। দাও বলছি দাও।

আমার সব বাচ্চামি বন্ধ করে সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,

– জেদ একটু কমা ঈশু। সারাজীবন কি আমি থাকবো? যখন আমি থাকবো না তখন কাকে জেদ দেখাবি

সিদ্ধাত ভাইয়ার এমন কথায় আমি যেন কথা বলার ভাষা হারিয়েছি। পুরো পৃথিবী এলোমেলো লাগছে। কি বলল এটা। কেন বলল। জিজ্ঞাসা করলাম,

– তুমি কোথায় যাবে সিদ্ধাত ভাইয়া?

-অনেক দূরে

-আমিও যাবো। আমাকে রেখে কেন যাবে? আমাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে?

-যেভাবে এতো গুলো বছর ছিলাম

-মানে?

– কিছু না।

কথা বলতে বলতে সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে নিচে নিয়ে এলো। চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে খাবার বেড়ে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো। আমি লক্ষী মেয়ের মত খেয়ে নিলাম। একটুও দুষ্টুমি করলাম না। আসলে সত্যি কথা বলতে কি আমার খুব ক্ষুধাও লেগেছিলো। তার ওপর রাক্ষস টা নিজের হাতের খাইয়ে দিচ্ছে। আর কি লাগে হিহিহি। খাওয়া শেষ করে মহাশয় নিজেই আবার কোলে করে রুমে নিয়ে যাচ্ছে। রাত দুপুরে কেয়ার দেখাচ্ছে। আর সারাদিনব্যাপী রাক্ষসী চেহারা হুহ। অনেকক্ষন আমিও কথা বলি নি,ভাইয়াও কোনো কথা বলছে না। তাই আমি বললাম,

– সিদ্ধাত ভাইয়া

– হুম

– আমাকে কোলে নিয়ে যাচ্ছো কেন? আমি কি হাটতে পারি না

– পারিস। কিন্তু প্রতিবন্ধিদের মত।

-কি! তুমি আবারও তাই বললা? আজকে তো তুমি শেষ।

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়ার চুল দুই হাত দিয়ে মুষ্টি করে ধরে দিলাম জোরে টান।

– আউউউ। ঈশাআআ লাগছে কিন্তু

– লাগুক। আমি প্রতিবন্ধিদের মত হাটি?

– না। তুই ভালো করে হাটিস। ছাড় এবার। নয়তো ফেলে দেবো কিন্তু।

– কি ফেলে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছো?

বলেই দিলাম আরও জোরে আরেক টান।

ভাইয়া রুমের ঢুকেই এবার আমাকে আলুর বস্তার মতো করে বিছানায় ফেলে দিলো। ভাইয়া চুল ধরে রাখায় সাথে সাথে ভাইয়া ও পড়লো আমার ওপর। আমি জোরে চিল্লিয়ে উঠলাম,

– আউউউ। গেলো রে গেলো কোমর টা আমার গেলো এবার। উহুহুহুউউউউ

– চুপ। চেচাচ্ছিস কেনো? বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে আছে। তোর চিল্লাচিল্লি শুনে তো এক্ষুনি সবাই উঠে পড়বে।

আমার মুখ চেপে ধরে বলল সিদ্ধাতের বাচ্চা। আমিও রাক্ষস টার হাত সরিয়ে দিয়ে বললাম,

– তোমার মতো একটা আস্ত হাতি আমার ওপর পড়লে আমার কি অবস্থা হয় বুঝো

– কিহ!! আমি হাতি?

– বুড়ো হাতি

– ঈশা

– সিদ্ধাত ভাইয়া

– (রাগী লুকে তাকিয়ে আছে)

– এভাবে না তাকিয়ে যাও তো। সরো। ঘুমাবো।

– আমিও তো ঘুমাবো

– তো যাও না নিজের ঘরে

– বিয়ে করেছি কি নিজের ঘরে থাকার জন্য?

– তার মানে কি? তুমি এখানে ঘুমাবে?

– অবশ্যই

– ঠিক আছে। তুমি ঘুমাও আমি যাচ্ছি নোভাদের ঘরে।

বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া কে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিলাম। বিছানা থেকে উঠতে যাবো তখনই আবারও রাক্ষস টা হাত ধরে টেনে ফেলে দিলো। সোজা পড়লাম পাজি রাক্ষসের বুকের ওপর। খপাত করে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলল,

– কোথাও যাওয়া হচ্ছে না। আমি ঘুমাবো। ঘুমাতে দে একটু

– তো ঘুমাও না। তোমাকে আমি না করেছি ঘুমাতে। আমি অন্য রুমে যাচ্ছি তুমি ঘুমাও

– আমি কোল বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না।

– ওই যে আছে তো।

– তুই থাকতে কোলবালিশ কেন নিবো?

-?

– চুপ করে থাকবি কোনো কথা বলবি না।

– আমি ঘুমাবো না?

– ঘুমা। যেভাবে আছিস এভাবেই।

– তোমার সাথে ঘুমাবো আমি? ( রেগে)

– বরের সাথে ঘুমাবি তাতেও সমস্যা?

আমি আর কিছু বললাম না। সিদ্ধাত ভাইয়া চোখ বন্ধ করে নিলো। আমি আনি সিদ্ধাত ভাইয়ার বুকের ওপর। খুব কাছ থেকে আজকে সিদ্ধাত ভাইয়াকে দেখছি। আসলেই সিদ্ধাত ভাইয়া অনেক সুন্দর। আমি উনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম। ঘুমিয়ে পড়েছে। আর আমি প্রান ভরে দেখছি উনাকে। এভাবে কখনও উনাকে দেখি নি। সত্যি বলতে উনার দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকা কখনো হয়ে উঠেনি। আজ দেখছি ঘুমন্ত অবস্থায়। উনাকে দেখতে দেখতে আমিও যে কখন ঘুমিয়ে গেলাম জানি না।

আমার ঘুম ভাঙে ভোরে। ঘুম ভাঙতেই নিজেকে আবিষ্কার করলাম সিদ্ধাত ভাইয়ার বুকে। ভাইয়া এখনো আমাকে সেই ভাবেই জড়িয়ে আছে। ভাইয়ার বুকে মুখ গুজে ঘুমিয়ে ছিলাম এতোক্ষন। ভাবতে মুখে আচমকা হাসি ফুটে উঠলো। ইসস। কেমন লজ্জা লাগছে। এই প্রথম বার কোনো পুরুষের বুকে এইভাবে ঘুমিয়েছি। কিন্তু এখনো একটা কথা মাথায় ঢুকছে না রাক্ষস টা এভাবে কেন বিয়ে করলো। ধ্যাত এই রাক্ষসের মতি গতি কিছুই বুঝি না। যাই ফজরের নামাজ টা পড়ে নেই। ফোনে দেখলাম ৫ টা ৫৫ বাজে। সিদ্ধাত ভাইয়ার কপালে একটা আদর দিয়ে আস্তে আস্তে উনার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। বিছানা থেকে নামবো তখনই শাড়ির আচল ধরে ফেলল। ঘুম জড়ানো কন্ঠে রাক্ষসের বানী ছিলো,

– একটু শান্তি তে ঘুমোতে দিবি না?

আমি পিছনে তাকিয়ে বললাম,

– উফফ। তুমি উঠে পড়লে?

– হুম।

– আচল ছাড়ো

-না

বলেই আবারও টেনে নিলো বুকের ওপর।

– উফফ সিদ্ধাত ভাইয়া প্লিজ এবার ছাড়ো না।

– চুপ।

– কি হয়েছে তোমার? তুমি এমন করছো কেন?

– হুম

– নামাজ পড়বো তো

– হুম

– তো ছাড়ো

-হুম

– কি হুম হুম করছো। ছাড়তে বলছি

– ইসস। এতো বক বক করিস না তুই!!

– রাক্ষসের বাচ্চা ছাড়বি?? ( চুল ধরে টেনে)

– আউউউচ

আমার কথায় আর এমন কাজে ঝটপট উঠে বসলো সিদ্ধাত ভাইয়া।

– কি বললি?

-যা শুনেছো তাই বলেছি। সকাল হয়ে গেছে। কেউ যদি তোমাকে আমার রুমে এভাবে দেখে কি হবে বলো তো।

– কি হবে? বিয়ে করা বউ তুই আমার।

– সেটা কি তুমি আর আমি ছাড়া আর কেউ জানে?

– জানার দরকার নাই।

বলেই হন হন করে ওয়াসরুমে চলে গেলো উনি। আমি হা করে বসে আছি। একটু পরে বের হলো। এবার আমি ওয়াসরুমে গেলাম। ওজু করে বের হয়ে দেখি মহাশয় রুমে নাই। চলে গেছে। আমি নামাজে দাড়িয়ে পড়লাম।

☆☆ ঈশার রুম থেকে নিজের রুমে আসলাম। ঈশা কে ছাড়া কিছুই ভালো লাগছে না। রাগ হচ্ছে প্রচন্ড। বাড়ি তে এখনো মনে হয় তেমন কেউ উঠে নি। আর উঠলেও হয়তো নিজের রুমে। আমি যে রাতে ঈশার সাথে ছিলাম এটা ঠিক হয়েছে কিনা জানি না। তবে ভুলের কিছু দেখি না। কারন আমরা বিবাহিত। মনে হচ্ছে সারাক্ষণ যদি ঈশার সাথে থাকতে পারতাম তাহলে হয়তো শান্তি পেতাম। উফফ একটা মুহূর্ত ও ঈশা কে ছাড়া থাকতে পারছি না। এবার এক মাসের ছুটি তে এসেছি। উদ্দেশ্য বিয়ে, হানিমুন সব সেরে ঈশা কে নিজের সাথে নিয়ে যাওয়ার। দূরে থাকতে পারছি না ঈশার কাছ থেকে। পুশআপ দিলাম ৫০ টার মত। গোসল দিয়ে সিফাতের রুমে গিয়ে দেখি বেটা মরার মত ঘুমাচ্ছে। ডেকে তুললাম।

– ওই উঠ শালা। এখনো পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছিস। কত কাজ আছে।

– কি কাজ আছে তোর আবার

– আছে উঠ।

সিফাত উঠে ফ্রেস হয়ে আসে। সিফাত কে নিয়ে নিচে গেলাম। এতোক্ষনে সবাই উঠে পড়েছে। আবারও বিয়ের আয়োজন শুরু হয়ে গেছে। প্যান্ডেলের লোক ও চলে এসেছে। প্যান্ডেলের লোকদের কাজ সঠিক ভাবে হচ্ছে কিনা ঘুরে ঘুরে দেখলাম। আমরা বাড়ির বাহিরে। কি জানে ওদিকে ঈশা কি করছে। ভাবছি আজকে বিয়ের শপিং টা করে ফেলবো।

নামাজ পড়ে নোভা আর ইতির ঘরে যাই। শয়তান দুইটা ঘুম থেকে উঠে পড়েছে। তাই ওদের কে নিয়ে ছাদে চলে গেলাম। সকল বেলার বাতাস টা অনেক সুন্দর হয়। একদম শীতল। ভীষন প্রিয় আমার। কিছুক্ষন পর সূর্য্যি মামা উকি দিলো। প্যান্ডেলের লোক ও চলে এলো। আমার বর মহাশয় আর সিফাত ভাইয়া প্যান্ডের লোকের পিছে পিছে ঘুরছে। আমি ছাদ থেকে সিদ্ধাত ভাইয়া কে দেখছি। আর এদিক ইতি নোভা বক বক করছিল।

ইতি: কি তাই না ঈশা বল?

আমি: এ‍্যাহ! কি?

নোভা: ও শোনেই নাই।

আমি : না মানে

ইতি: কি দেখছিস তুই ওদিকে?

ইতি নিচে উকি দিয়ে দেখে নিচে কেউ নেই। সিদ্ধাত ভাইয়া ততক্ষণে চলে যায় ওখান থেকে।

ইতি: কই কেউ তো নেই

আমি: রাক্ষস টা ছিল চলে গেছে মনে হয়

ইতি: আমরা এখানে কথা বলছি আর উনি ওদিকে উনার জামাই দেখতে ব্যস্ত বুঝিলি নোভা

নোভা: আর কয়েকদিন পর তো জামাই কেই দেখবি সারাক্ষণ। এখন একটু আমাদের কে দেখ

আমি: আসলে….

এর মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে ডাকতে ডাকতে ছাদে চলে আসে।

নোভা: চলে এসেছে তোমার জানেমান।

আমি নোভার দিকে রাগি লুকে তাকাই। সিদ্ধাত ভাইয়া তখন আমাদের এদিকে এসে বলে,

– তুই এখানে আর তোকে খুজছি সারাবাড়ি। শোন শপিং এ যাবো রেডি থাকিস। নিচে বাচ্চা কাচ্চা সবাই কে বলে দিয়েছি। তোরা তিন জনই রেডি থাকিস

নোভা: বাচ্চা কাচ্চা কোথায় এবাড়ি তে?

সিদ্ধাত ভাইয়া: ওই যে মিতু, লামু, তৌহিদ, তৌফিক আরও কে কে আছে না

ইতি: ওরা বাচ্চা? সিরিয়াসলি? ভাইয়া সবাই এসএসসি দিয়ে ফেলেছে ওরা।

আমি: আরে বুঝিস না সিদ্ধাত ভাইয়ার তুলনায় তো ওরা সবাই বাচ্চা আর আমরা মধ্য বয়স্কা। বয়স টা কি কম নাকি আমাদের সিদ্ধাত ভাইয়ার?

আমার কথায় নোভা ইতি মুখ চেপে হাসছে। আর রাক্ষস টা তেড়ে এলো আমার দিকে।
আমি দুপা পিছিয়ে গেলাম।

আমি: আচ্ছা বুড়া দাদু আমরা সবাই রেডি থাকবো। আপনি একদম চিন্তা করবেন না

সিদ্ধাত:?

রাক্ষস টা রাগী চেহারা দেখিয়ে চলে গেলো।
আমরাও নিচে এসে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে নিলাম। আমি সাদা সালোয়ার কামিজ পরেছি। হাতে ঘড়ি, এক হাতে চুড়ি, চুল বেনী করা ব্যাস আমি রেডি। কিন্তু আমি লেট। সবাই গাড়ি তে অপেক্ষা করছে। হরিণের মত লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামছি। দৌড়ে বাইরে গিয়ে দেখি সবাই চলেও গিয়েছে। এবার আমি কি করবো।
.
.
#চলবে_কি?

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_০৭

কান্না পাচ্ছে খুব। বাড়ির সবাই শপিং এ চলে গিয়েছে আমাকে রেখে। রাক্ষস রাজাও চলে গেলো?

– না রাক্ষস রাজা যায় নি। রাক্ষস রাজা তার রাক্ষসী রানী কে নেওয়ার জন্য থেকে গেলো

পেছনে তাকিয়ে দেখি রাক্ষস টা। দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।

– ভয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। উফফ কলিজায় পানি এলো যেন।

-কলিজার পানি চলে গিয়েছিলো নাকি

– শুকিয়ে গিয়েছিলো আর কি

-ওহ। কলিজার পানি শুকিয়েও যায় আবার ফিরেও আসে। জানা ছিলো না

– উফফ। তোমাকে জানতে হবে না

– আচ্ছা ঠিক আছে এখন যাবি নাকি

– আরে যাবো না মানে। চলো চলো।

সিদ্ধাত ভাইয়া এবার নিজের গাড়িটা বের করলো।আসলে বাড়ির দুটো গাড়িই নিয়ে গিয়েছে। একটা গাড়ি তে কখনই এতো মানুষের জায়গা হতো না। কিন্তু আমাদের দুজনকেই রেখে গেলো? নিজে নিজে বিড়বিড় করতে করতে গাড়ি উঠে পড়লাম। ভাইয়া ড্রাইভ করছে। আমি পাশে বসে আছি। জিজ্ঞাসা করলাম,

– সবাই আমাদেরকে রেখে গেল কেন?

– রেখে যায় নি। আমি চলে যেতে বলেছি

– কেন!!!

– যেন তুই আর আমি আলাদা যেতে পারি

– ধ্যাত। ওখানে সবাই মজা করতে করতে যাচ্ছে আর আমি একা একা বোরিং ফিল করছি।

– আমার সাথে থাকতে তোর বোরিং লাগছে?

– তুমি তো একটা রাক্ষস।

– কিহ!

– না মানে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে

– ঈশা

– হুম

– পূর্ণতা পাবে?

– কি?

– ভালোবাসা

– হঠাৎ এ কথা কেন?

– এমনি

– বিয়ে তো হয়েই গেছে পূর্ণতা ও পেয়ে গেছে

– হুম। বাট….

– এই এই এই গাড়ি থামাও গাড়ি থামাও

আমার কথায় জোরে ব্রেক কষে সিদ্ধাত ভাইয়া।

– কি হয়েছে

– ওই দেখো ফুসকা

– ঈশা!!

– প্লিজ সিদ্ধাত ভাইয়া বকো না। আমি ফুসকা খাবো। প্লিজ

-বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে না

– প্লিজজজ। এনে দাও না প্লিজ

– না বলেছি কিন্তু

– মানুষ কখন বাচে মরে বলা যায় না। এই ধরো, আমি কাল মরে গেলাম তখন তোমার মনে হবে ঈশা আমার কাছে ফুসকা খেতে চেয়েছিলো। তখন তো…

আমার বাকি কথা শেষ হওয়ার আগেই আমার মুখ চেপে ধরে রাক্ষস টা বলে,

– চুপ একদম চুপ। মুখে যা আসছে তাই বলে যাচ্ছিস। এই সব কথা একদম বলবি না। নেক্সট টাইম যদি শুনি খবর করে দেবো।

বলেই গাড়ি থেকে নেমে ফুসকা আনতে চলে যায় রাক্ষস রাজা। হিহিহি আমার প্লান কাজে দিয়েছে। আমি জানতাম এভাবে বললে আমাকে ঠিক ফুসকা এনে দেবে হিহি। একটু পরে মহাশয় ফুসকা আর এক বোতল পানি নিয়ে হাজির।

– নিন মহারানি। খেয়ে আমাকে উদ্ধার করুন।

– এভাবে বলছো কেন? ফুসকা ই তো খেতে চেয়েছি তোমার মাথা টা তো আর চাই নি

– ফুসকার জন্য আমার মাথা টাও খেয়েছিস। এই সব খা আর অসুস্থ হ।

– ফুসকা খেতে চেয়েছি। বকা নয়। মুখ টা বন্ধ করো আর ফুসকা টা দাও

ফুসকা টা নিয়ে আমি খাওয়া শুরু করে দিলাম। উফফ কি মজা। সব টা একাই খেয়েছি। রাক্ষস টা কে অফার ও করি নি। খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে পাজি বাদর টা কে বললাম,

– চলো খাওয়া শেষ

রাক্ষস টা গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,

– তুই কি এভাবেই আমাকে জ্বালাবি?

– না তো! যখন আমি থাকবো না তখন তো তোমাকে কেউ জ্বালাবে না।

– কোথায় যাবি?

– অনেক দূরে হিহিহি

– ঈশা ( দাতে দাত চেপে)

– রাগছো কেন। তুমিও তো বলেছিলে।

– কিন্তু তুই বলবি না

– কেন বলবো না

– আমি বলেছি বলবি না সো আর বলবি না

– আচ্ছা ঠিক আছে যাও আর বলবো না

আমি আর কোনো কথা বললাম না। একটু পরে আমরা চলে আসলাম শপিংমলে। ভাইয়া গাড়ি পার্ক করে নিলো। এরপর আমরা দুইজন এক সাথে ভিতরে প্রবেশ করলাম। এতোক্ষনে মনে হয় সবার শপিং শেষের দিকে। সোজা দোতলায় চলে গেলাম। খুজে খুজে পেয়েও গেলাম সবাই কে। সবার ই কেনা কাটা হাফ হয়ে গেছে। বড় মা বলল,

– এতক্ষণে আসার সময় হলো?

সিদ্ধাত ভাইয়া: ম্যাডাম ফুসকা খাওয়ার বায়না ধরেছিলেন

আমি: তো কি হইছে। কোনো ইচ্ছা অপূর্ণ রাখতে নেই।

সিদ্ধাত ভাইয়া : হুম তাই না?

আম্মু: আর কথা না বাড়িয়ে যাও কি কি পছন্দ হয় নাও। গায়ে হলুদ, বিয়ে, রিসিপশন, মেহেন্দি, সংগীত কোথায় কি পরবে নিজেই পছন্দ করে নাও। সিদ্ধাত বাবা তুমিও যাও।

সিদ্ধাত : জ্বী আন্টি

আবারও চলে এলাম ড্রেস চুজ করতে। কি নিবো। কোন টা নিবো এইসব ই ভাবছি। আমার সাথে রাক্ষস মহাশয় চলে আসছে। এসে একটা বানী শুনিয়ে দিলো। তাহার বানী হলো,

– আমার বউ এর জিনিস আমি চুজ করবো। তুই একটা কথাও বলবি না

আমি আর কি। হয়ে গেলাম বোবা। মিস্টার আমার জন্য দুটো লেহেঙ্গা চুজ করেছেন। একটা মেরুন কালার আর একটা গোল্ডেন ও রেডের মিশ্রণ। রেড কম। বেশ সুন্দর দুটিই। আমার পছন্দ হয়েছে তাই আর কোনো কথা বললাম না। সাথে কয়েকটা শাড়ি। শাড়ি গুলো এতো সুন্দর কি বলবো। হঠাৎই আমার চোখ যায় একটা ব্রাইডাল গাউনের ওপর। জাস্ট ওয়াও দেখতে। আমি গাউন টার কাছে গিয়ে ভালো ভাবে দেখছি। তখন মিস্টার বাদর জিজ্ঞাসা করে,

– পছন্দ?

আমি টর্ণেডোর বেগে মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দিলাম।

– ঠিক আছে। এটাও নে।

আরে আমি তো খুশী হয়ে গেলাম। গায়ে হলুদের একটা শাড়ি নিলাম এটাও রাক্ষসের পছন্দের। এর পর মহাশয় নিজের জন্য কি কি যেন কিনলেন। আমাকে বলেছিলো চুজ করতে কিন্তু ছেলেদের জিনিসের কোনো ধারনা আমার নেই। তাই কিছুই পছন্দ করতে পারি নাই। ফলস্বরুপ উনি সিফাত ভাইয়া কে নিয়ে নিজের শপিং শেষ করলেন।

এবার জুয়েলারির জন্য গেলাম বড় মা, আম্মু, আমি, আর রাক্ষস রাজা। বাকি সবার শপিং শেষ। সবাই ক্লান্ত তাই বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছে। আমার গহনা পছন্দ করছে সবাই মিলে। আমাকে সং এর মতো দাঁড়িয়ে রেখে একবার এটা তো একবার ওটা সব গুলো পরিয়ে পরিয়ে দেখছে। আমি একরাস বিরক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। অবশেষে কতগুলো গলার হাতের কানে আরও কি কি নিয়েছে আমি নিজেও জানি না। সেগুলি নেওয়া হয়েছে যেগুলো সিদ্ধান্ত ভাইয়া সিলেক্ট করেছেন। আমাদের সবার সব শপিং শেষ। বেলা ৩ টা নাগাত বাড়ি ফিরবো। তখন সিদ্ধাত ভাইয়া বলেন,

– তোমরা যাও আমি আর ঈশা পরে আসছি

সিদ্ধাত ভাইয়ার একথায় বড় মা বললেন,

বড় মা: কেনাকাটা তো শেষ তাহলে পরে আসবি কেন?

সিদ্ধাত ভাইয়া: দরকার আছে।

বড় মা: এখন এভাবে ঘুরাঘুরি করা ভালো দেখায় না। চলো বাড়ি চলো

সিদ্ধাত ভাইয়া এবার আমার হাত টা শক্ত করে ধরে বললেন,

– এই দিন টার জন্য আমাকে অনেক টা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। কে ভালো ভাবে দেখলো আর কে দেখলো না তাতে আমার কিছু যায় আসে না।

বড় মা কিছু বলতে যাবেন কিন্তু তার আর সুযোগ না দিয়েই সিদ্ধাত ভাইয়া আমার হাত ধরে হাটা শুরু করলো। আমি পিছনে তাকিয়ে বেখেয়ালে হেটে চলেছি। আর মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরছে। কত প্রশ্ন মনের মধ্যে। কোনো উত্তর পাচ্ছি না। আমার প্রশ্ন গুলোর উত্তর সিদ্ধাত ভাইয়া যে কবে দেবে। আমার ভাবনার সমাপ্তি ঘটিয়ে সিদ্ধাত ভাইয়া বলেন,

– তুই এখানে দাড়া। আমি গাড়ি নিয়ে আসছি

আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। একটু পর সিদ্ধাত ভাইয়া চলে এলো। আমি গাড়িতে উঠে পড়লাম। গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আমি কোনো কথা বলছি না। চুপচাপ বাইরে তাকিয়ে আছি। আর ভাবছি এই শহরের কোলাহল পরিবেশ ছেড়ে যদি একটু বাইরে যাতে পারতাম। যেখানে পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ, নদীর স্রোতের শব্দ, মৃদু বাতাস। আর সেখানে সিদ্ধাত ভাইয়া আর আমি আর কেউ থাকবে না। শুধু মাত্র আমরা। উফফ খুব মজা হবে। এমন টা ভাবতেই আমার মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। হঠাৎ সিদ্ধাত ভাইয়া বলে,

– তুই কি নিরব থাকার পণ করেছিস?

ভাইয়ার এমন কথায় আমি ভাবনার জগত থেকে বাইরে এলাম। মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলাম,

– না

– কি হয়েছে ঈশু

– কই

– চুপচাপ কেন

– এমনি

– ঈশা এমনি এমনি চুপচাপ এটা কি মানা যায়?

– কেন? তুমি তো চাও আমি চুপ থাকি। তাহলে

– তোর চুপ হয়ে যাওয়া টা আমি মেনে নিতে পারি না

– ধং। নিজেই একটু পরে বকবে কথা বলার জন্য। আমি জানি তুমি কেন কথা বলার জন্য বলছো। আমি কথা বলি, আর তুমি বকার অজুহাত পাও। আমি যে চুপ করে আছি তুমি তো বকতে পারছো না। তাই না।

– এতো বেশি কথা বলিস কেন

– এই যে দেখলে তো। শুরু হলো না তোমার বকা ঝকা। চুপ করে ছিলাম তোমার ভালো লাগছিলো না। কথা বললাম তোমার সেটাও ভালো লাগছে না।

– এক লাইন বেশি বুঝিস

– হ্যাঁ তুমি তো কম বোঝো তাই না

হটাৎ করেই গাড়ি থামিয়ে বলে,

– নাম

– মানে?

– নামতে বলেছি

– আমি আর কথা বলবো না। চুপ করে থাকবো। আমি এখানে কিছু চিনি না কিভাবে বাড়ি যাবো বলো। আর দুষ্টুমি করবো না। একদম লক্ষী মেয়ে হয়ে থাকবো। চুপ থাকবো। না না এক বারেই চুপ থাকবো না। একটু একটু কথা বলবো। এক দম ই বেশি কথা বলবো না। প্লিজ সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে রেখে যেও না। প্লিজ

– ঈশা!!! তুই আসলেই একটু বেশিই কথা বলিস। নাহ একটু না অনেক বেশি কথা বলিস। আমরা এখানেই নামবো তাই তোকে নামতে বলেছি তোকে রেখে যাওয়ার জন্য নয়

সিদ্ধাত ভাইয়া নেমে পড়লো। আমি বোকার মতো বসে আছি। একটু পরে আমিও নেমে আস্তে আস্তে সিদ্ধাত ভাইয়ার কাছে গিয়ে ফিক করে হেসে দিলাম। আমার হাসি দেখে সিদ্ধাত ভাইয়াও মুচকি হেসে বলল,

– চলেন এবার

আমি ভাইয়ার হাত জড়িয়ে ধরে হেঁটে চলেছি,
.
.
.
#চলবে_কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here