পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,১০,১১

0
287

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,১০,১১
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_১০

রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেই। মুহুর্তেই সব তছনছ করে দিতে ইচ্ছে করছিলো। এতো গুলো বছর অপেক্ষার পর যখন ঈশার মুখে অন্য ছেলের কথা শুনলাম নিজেকে আর সামলাতে পারছিলাম না। ঈশা সামনে ছিলো বলে চুপচাপ দাড়িয়ে শুনছিলাম। নয়তো আমি নিজেও জানি না সেদিন কি করতাম। এরপর ঈশা আবারও বলতে শুরু করে,

– আমি আমার মধ্যে নেই সিদ্ধাত ভাইয়া। আমি কেমন যেন হয়ে গিয়েছি। এই জীবন টা আমি চাই না। আমি আগের মত হতে চাই। আমি খুব বিরক্ত এই জীবনে। আবারও সবার সাথে মিশতে চাই। আবারও হাসতে চাই। আজ দেখো সিদ্ধাত ভাইয়া আমি সেজেছি। অনেক দিন পর সেজেছি। আমি চেষ্টা করছি এসব থেকে বের হওয়ার। আমার পাশে তুমি থাকবে তো?

– আমি সব সময় তোর পাশে আছি।

রাগ কন্ট্রোল করে ঈশার হাত ধরে বললাম কথা টা। সাথে সাথে ঈশা আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদে দেয়। ওই ফাস্ট ঈশা আমার এতো কাছে ছিলো। আমাদের প্রথম জড়িয়ে ধরা। আমি একটু অবাক হয়েছিলাম। ঈশা কে সামলে নেই কোনো ভাবে। সেদিন থেকে ঈশার প্রতি আমার অনুভূতি টা বেড়ে গিয়েছিলো। প্রিয় মানুষ কে কাছে পাওয়ার অনুভূতি সত্যি অন্য রকম। যতটা না রাগ হয়েছিলো ঈশার স্পর্শে যেন তা মিলিয়ে গেল।সেদিন থেকে আমি ঈশার সাথে ফ্রি হতে শুরু করি। একদম ফ্রেন্ডের মত মিশতাম। আস্তে আস্তে দেখলাম ঈশা বেশ হালকা হচ্ছে। এবং একটা সময় পর ঈশা পুরোপুরি ভাবে এসব থেকে বেরিয়ে আসে আর আমার প্রতি দুর্বল হতে থাকে। আমি বুঝতে পারতাম ঈশা হয়তো দুর্বল হচ্ছে। আর ঈশার বাচ্চামি গুলো বাড়তে থাকে। তবে সেটা সবার সাথে নয়। ওর কাছের মানুষের সাথে এমন আচরণ। বাকি সবার সাথে খুব চুপচাপ। তেমন কথাও বলে না।

সিফাত: কিন্তু মেঘের কাহিনী টা

– ওই শালা আর কি মেঘের কাহিনী শুনবি? বললাম না
– মানে এটুকুই?
– হ্যাঁ এটুকুই। মেঘ ঈশা কে ধোকা দেয়।
-হুম বুঝলাম
– আচ্ছা তুই এখানে জাস্ট দুই মিনিট ওয়েট কর আমি এই যাবো আর এই আসবো
– কোথায় যাবি?
– আসছি

সিফাত কে রুমে রেখে বেরিয়ে এলাম। উদ্দেশ্য ঈশার কাছে যাবো। চুপিচুপি পায়ে ঈশার ঘরে চলেও এলাম। আসার সময় লক্ষ্য করছিলাম কেউ আবার দেখে না নেয়। মায়াবীনী ঘুমাচ্ছে। আমি আস্তে আস্তে ঈশার পাশে বসলাম। ওকে দেখছি। কি সুন্দর লাগছে ঘুমন্ত অবস্থায়। মায়ায় পড়ে যাই বার বার। ঈশার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলাম। একটু কেপে উঠলো। আবারও ঘুমিয়ে গেলো। আমি আবারও ওর দুই গালে ঠোঁট ছোয়াতেই ঈশা উঠে পড়ে আর উঠেই আমার টি-শার্ট দুহাতে খামচি দিয়ে ধরে বলে,

– ওই রাক্ষস আমি ঠিক জানতাম তুই আসবি।
– মানে কি? বরের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে? ছাড় বলছি ছাড়
– কেন এসেছো?
– ঘুমাবো
-এটা কি ঘুমানোর জায়গা?
– তো?
– নিজের রুমে যাও
-ওখানে সিফাত ঘুমাচ্ছে
– তাহলে তুমি সিফাত ভাইয়ার রুমে যাও
– না। এখানে ঘুমাবো
– আমি নোভার রুমে যাই?
– সারাদিন নোভা নোভা না করে সিদ্ধাত সিদ্ধাত তো করতে পারিস
– ?
-আমি জানি তুইও চাস আমি এখানে ঘুমাই
– কচু জানো
– তাই না? তাহলে আজ কেন বলেছিলি ওই কথা টা
– কি বলেছি? কখন বলেছি? আমি কিছু বলি নি। তুমি ভুল শুনেছো
– ভুল শুনেছি? দাড়া দেখাচ্ছি মজা

কথা বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া আমায় জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে পড়লো। প্রতি বারের মতো এবার ও ছটফট করছি। আমার ছটফটানি বন্ধ করতে সিদ্ধাত ভাইয়া আমার ওপর উঠে শক্ত করে চেপে ধরলো

-উফফ। মেরে ফেলবা নাকি
– হ্যাঁ মেরেই ফেলবো আমার কাছ থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করলে
– যাচ্ছি নাকি?
– তাহলে এমন লাফালাফি করছিস কেন
– আমি তো আমাকে ছাড়ানো চেষ্টা করছিলাম ( ঠোঁট উল্টিয়ে)
– আমি বলছি নিজেকে ছাড়িয়ে নে
– তুমি বলবা তাই? আমার একটা দায়িত্ব আছে না?
– চুপ। আর একটা কথাও বলবি তো
– তো কি?
– বলেই দেখ।

আমি চুপ হয়ে গেলাম। কারন এখন বেশি কথা বলা আমার জন্য একদম ভালো হবে না। কিছুক্ষনের মধ্যেই সিদ্ধাত ভাইয়া ওভাবেই ঘুমিয়ে গেলো। আমি আজও সিদ্ধাত ভাইয়া কে দেখছি। একটু পর নিজেও পাড়ি দিলাম ঘুমের রাজ্যে।

☆☆ সকালে ঘুম ভেঙে দেখি মায়াবীনী আমার বুকের ওপর পরম সুখে ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ওকে বিছানায় শুইয়ে দিলাম। কপালে আবারও একটা গভীর চুমু দিয়ে চলে এলাম নিজের রুমে। রুমে প্রবেশ করতেই দেখি সিফাত সত্যি সত্যি আমার ঘরে ঘুমিয়ে গেছে। মনে হয় দুই মিনিট শেষ হওয়ার অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে গেছে।ওকে দেখে খুব হাসি পেলো। আমি ফ্রেস হয়ে বের হতেই সিফাত উঠে আমাকে চড় লাথি ঘুসি সবই দিয়ে যাচ্ছে।

– আরে আরে কি করছিস? মারছিস কেন?
– শালা লম্পট। কই ছিলি তুই? তোর দুই মিনিট শেষ হলো এখন?
– তাই বলে মারবি?
– মারবো না? কোথায় ছিলি? নিশ্চয় ঈশার ঘরে? তাই না?
– হুম
– লম্পট আর দুটো দিন তর সয়ছে না? এখন বুঝলাম আগে আগে কেন বিয়ে করলি
– আরে এমন কিছু না। জাস্ট দেখতে গিয়েছিলাম পরে ঘুমিয়ে গিয়েছি
– আমাকে বোকা পেয়েছিস? বউ এর ঘরে রাত দুপুরে যাবি আর তুই ঘুমাবি? এটা বিশ্বাস করতে হবে?
– আরে সত্যি ঘুমিয়েছি
– চুপ শালা
– আরে ভাই বিশ্বাস কর সত্যি ঘুমিয়েছি।কসম ঘুমিয়েছি।
– রাখ তোর সত্যি। তুই একটা লম্পট। বাসর করে আসলি আর এখন সাধু সাজা হচ্ছে
– আরে ভাই রে বিশ্বাস কর এমন কিচ্ছু না। কসম করে কি মিথ্যা বলবো নাকি
– ঠিক আছে যা বিশ্বাস করলাম
-উফফ। খালি খালি মারলি। এখন সর। টায়ার্ড লাগছে
– হ্যাঁ তা তো লাগবেই
– ?
-হাহাহা
– কিছুই হয় নাই
– আমি কি কিছু বলেছি?
– তুই তো অন্য কিছু ইঙ্গিত করছিস
– তুই আমার কথায় অন্য কিছু ভাবছিস। সত্যি করে বল তো তোর টায়ার্ড কেন লাগছে?
-সিফাআআআত! তুই কি যাবি নাকি লাথি খাবি?
– বুঝি বুঝি
– বুঝেই থাক। আর সর এখন না হলে দিলাম কিন্তু

লাথি উচু করতেই দৌড়ে পালিয়ে যায় সিফাত। সিফাত চলে যাওয়ার পর আমি কয়েক টা পুশআপ দিলাম। আসলে ছুটি তে থাকলে শরীরে অলসতা বাসা বাধে। এমনি তে তো প্রচুর কষ্ট করতে হয়। তবে শরীর টা তখন বেশ চাঙ্গা থাকে। আর এখন ঘুম থেকে উঠেই টায়ার্ড লাগছে। পুশআপ দেওয়ায় শরীরে বেশ এনার্জি পাচ্ছি। ভালো লাগছে। ভাবছি সকালের নাস্তা করেই বেরিয়ে পড়বো। আমাদের বাড়িতে এখনো অনেক কাজ আছে। তো যেই ভাবনা সেই কাজ। নাস্তা করে বেরিয়ে পড়লাম। কিন্তু ঈশা কে ছেড়ে যেতে খুব কষ্ট হচ্ছে। ঈশা কে না দেখে কিভাবে থাকবো। ঈশা কে ছাড়া তো আমার একটা মুহুর্ত ও চলে না। কিছুই করার নেই, আমাকে আবার আসতেই হবে আমার ঈশার কাছে। আসার সময় পাগলী টা জড়িয়ে ধরে কাদছিলো খুব। কে জানে এখনো কাদছে কি না। বোকা মেয়ে। কি যে করছে

এদিকে আমাকে রেখে রাক্ষস রাজা চলে গেল। কিভাবে থাকবো এখন। উনি কি জানে না তাকে ছাড়া থাকতে পারি না। এ বাড়ি থেকে বিয়ে হলে কি হতো। এতো দিন থাকা গেল আর কয়েক টা দিন থাকা গেল না। কথাই বলবো না আর।বেলকানি তে বসে বসে চোখের জল ফেলছি আর একলা মনে সিদ্ধাত ভাইয়ার কথা ভাবছি। তখনই আমার খোঁজে আসে ইতি আর নোভা।

ইতি: কি রে একা একা কি করছিস এখানে
আমি: কিছু না
নোভা: এর মধ্যেই কেদে চোখ মুখ ফুলিয়েছিস?
আমি: ভালো করেছি এখন যা এখান থেকে
ইতি: আরে বাবা ভাইয়া তো আবার আসবে আর এবার তো তোকেই নিতে আসবে।
নোভা: আর বর তো বিয়ের দিন ই আসে। আগে আসে নাকি
আমি: কিছু ভালো লাগছে না রে। সিদ্ধাত ভাইয়া কেমন জানি খুব আপন হয়ে উঠেছে। একটা মুহুর্ত ও থাকতে পারছি না।
নোভা: বুঝেছি বুঝেছি ম্যাডাম আপনি প্রেমে পড়েছেন হিহি
আমি: সত্যি কি আমি সিদ্ধাত ভাইয়া কে ভালোবাসি? মেঘ ছাড়া আমার জীবনে অন্য কেউ। আমি মেঘের জায়গায় অন্য কাউ কে ভালোবাসি?
ইতি: উফফ ওই প্লে বয় মেঘের কথা আর বলিস না তো। বিরক্ত লাগে। অসহ্য একটা ছেলে।
আমি: ইতি! ( ধমক দিয়ে)
ইতি: দেখ ঈশা শুধু শুধু ধমকাস না। তুই কি অস্বীকার করিস এগুলো? মেঘ কি ভালো ছেলে?
আমি: জানি না। মেঘ যেমন ই হোক ওর জন্য একটা ফিলিংস আমার মনে থাকবেই।
নোভা: তাহলে সিদ্ধাত ভাইয়া কে বিয়ে করছিস কেন?
আমি: কারণ আমি সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে থাকতে চাই। আমি ভালো থাকি উনার সাথে। আমি ভালোবাসি কি না জানি না তবে উনি আমাকে খুব ভালোবাসে। আর আমিও অনেক ভালো থাকি সিদ্ধাত ভাইয়ার সাথে। আমি সব সময় উনাকে আমার কাছাকাছি চাই। চাই না উনি দূরে থাকুক।
ইতি: আমার আর কিছুই বলার নেই
নোভা: আমারও না
আমি: জানিস আমি যখন খুব অসহায় হয়ে গিয়েছিলাম তখন সিদ্ধাত ভাইয়া আমার সাথে ছিলো। আমাকে ভালো রাখার চেষ্টা করতো। আমাকে নিয়ে ঘুরতে যেতো, আমার পছন্দের আইসক্রিম, চকলেট আমি যা যা পছন্দ করি সব এনে দিতো। অনেক অনেক চেষ্টা করেছে উনি আমাকে ভালো রাখার। আমি তখনই বুঝেছিলাম সিদ্ধাত ভাইয়া আমাকে কতটা ভালোবাসে। সব সময় হাসি খুশি রাখতো আমাকে। একটু একটু করে সিদ্ধাত ভাইয়ার প্রতি আমার একটা মায়া আসে। উনার কথা বলার স্টাইল, উনার অ‍্যাটিটিউড, উনার পারসোনালিটি সব কিছু আকৃষ্ট করছিলো আমাকে। তার পর আমি উনাকে ভালো করে খেয়াল করি। উনার চোখ গুলোতে একটা মায়া আছে। চোখের দিকে তাকালেই কোথায় যেন হারিয়ে যাই। আর উনার হাসি টা ভীষন সুন্দর। সব দিক দিয়ে একদম পারফেক্ট।
নোভা: ইতি রে একটা চিমটি দে তো। এটা কি আদৌ ঈশা? ঈশার মুখে এইভাবে কোনো ছেলের বর্ণনা এই প্রথম বার।
ইতি: আমি যা শুনলাম তুইও কি তাই শুনলি নোভা?
আমি : ?
নোভা: ও সত্যি প্রেমে পড়েছে
ইতি: আমারও তাই মনে হয়
আমি: তোদের মনে হওয়াচ্ছি দাড়া
নোভা: ভুল কি বললাম?
ইতি: যে প্রেম করছে তাতে সমস্যা নেই আর আমরা বললেই দোষ।
আমি: আমি প্রেম করছি না
নোভা: থাক আর বলতে হবে না
আমি: তোরা বেশি বুঝিস।
ইতি: প্রেম করলে একটু কম বুঝতাম
আমি: আজকে তোরা শেষ।

বলেই দুটো কে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছি পুরো বাড়ি। আজকে ধরতে পারলে ওদের একদিন কি আমার এক দিন। আমাকে নিয়ে মজা করছে। কত্ত বড় সাহস। খুব বাড় বেড়েছে দুটো।
.
.
.
#চলবে_কি?

#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা
#রেজওয়ানা_রমা
#পর্ব_১১

সন্ধ্যায় নোভাদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। সাথে লামু, মিতু, তৌহিদ, তৌফিক সবাই আছে। আর ওদিকে বড় মা, বড় বাবা, আম্মু,আব্বু, ফুপি, মামিমা সহ বাড়ির সবাই কাজে ব্যস্ত। বিয়ে বাড়ি বলে কথা কাজ কি কম। রান্নার মসলাগুলো বাটা, শুকনো মসলা গুড়া করা, খাবারের মেনু তৈরী করা, আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করা সহ আরো কত কাজ। তবে আমাদের বাড়ি টা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। পুরো বাড়ি টা আলো আর আলো। এমন কি বাগানেও লাইটিং করেছে। একদম অন্য রকম লাগছে। বিয়ে বিয়ে একটা আমেজ এসেছে যেন। আমার বিয়ে এভাবে এতো টা বড় করে হবে ভাবতে পারি নি। সব কিছুই সুন্দর ভাবে হচ্ছে। কিন্তু এতো সুখ আমার সইবে তো? আড্ডায় সবাই ব্যস্ত থাকলেও আমার মন সিদ্ধাত ভাইয়া কে মিস করছে। এতো হইচই এর মাঝেও সিদ্ধাত ভাইয়ার শূন্যতা অনুভব করছি। সবার মাঝখান থেকে উঠে এলাম নিজের ঘরে। বেলকানি তে গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছি। আর সিদ্ধাত ভাইয়ার কথা ভাবছি। তখনই তৌহিদের প্রবেশে ভাবনার জগত থেকে বেরিয়ে আসি।

– ঈশা আপুই
-হুম বলো মাই ডিয়ার লিটিল বয়ফ্রেন্ড
– আপুই তুমি চলে যাবা তাই তোমার মন খারাপ?
– কই না তো। মন খারাপ হবে কেন
-তাহলে তুমি এখানে একা একা কি করছো?
– কিছু না। এই তো এমনি ছিলাম আর কি
– ঈশা আপুই তুমি কি বিয়ের পর আমাদের ভুলে যাবা না তো?
– ধুর পাগল ভুলবো কেন?
– তুমি কি আমাদের সবাই কে মিস করবা?
– হুম করবো তো। তুই,আম্মু, আব্বু, ফুপি, মামিমা, লামু, মিতু, তৌফিক তোদের সবাই কে খুব মিস করবো রে
– আমিও তোমাকে খুব মিস করবো ঈশা আপুই। আমরা এখন যেমন আছি এমন আর হবে না তাই না ঈশা আপুই। তুমি বিয়ের পর এবাড়ি তে আর তেমন আসবেও না। আমাদের কে আগের মত সময় ও দেবে না তাই না?
– কে বলেছে পাগল ছেলে। আমি সব সময় আসবো। আর আগের মত তোদের সময়ও দেবো।

তৌহিদ এবার আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি একটু বেশিই অবাক হয়েছি। কারণ ও কাদছে। তৌহিদ আর তৌফিক দু’ভাই সারাক্ষণ আমার পিছে লাগে। সব সময় চাইছে আমার বিয়ে হয়ে যাক। আমার বিয়ে নিয়ে ওরা অনেক বেশি খুশি ছিল। কিন্তু হঠাৎ কি হলো? ও কাদছে কেন। কিছু বুঝতে না পেরে ওকে স্বান্তনা দিলাম

– কি হয়েছে কাদছিস কেন? আরে বোকা আমি কি সারাজীবনের জন্য যাচ্ছি নাকি। আমি তো আবারও আসবো। আর বড় মা, বড় বাবা কি আমাদের পরিবারের বাইরে নাকি। আমি তো আমাদের পরিবারের মধ্যেই থাকবো। আমার কথা শোন উঠ কান্না বন্ধ কর। এই তুই না ছেলে মানুষ। তো ছেলেরা কি এমন ভ্যা ভ্যা করে কাদে?
– কিহ! আমি ভ্যা ভ্যা করে কাদছি? ( আমাকে ছেড়ে চোখ মুছতে মুছতে)
– তা নয় তো কি? রাম ছাগলের মত ভ্যা ভ্যা করে কাদছিস
– ঈশা আপুই ভালো হবে না কিন্তু
– ভ্যা ভ্যা
– ঈশা আপুই
– আজকের ব্রেকিং নিউজ তৌহিদ ভ্যা ভ্যা করে কাদে ( জোরে চিল্লিয়ে বললাম)
– ঈশার বাচ্চা। আজকে তোমার খবর আছে

বলেই তৌহিদ আমাকে তাড়া করলো। আমিও ছুটে বাইরে এলাম। তৌহিদ আমার পিছে পিছে দৌড়াচ্ছে। আর আমাকে ধরতে পার কি কি করবে সেগুলোই বলছে। আপনারাই শুনে নিন ওর মুখে

– আজকে খালি ধরতে পারি তোমায় দেখো কেমনে ছাদে নিয়ে কাকতাড়ুয়া বানাই, খালি একবার ধরি দেখো রহিম চাচার পুকুরের পচা পানিতে কেমনে গোসল করাই, তোমার চুলে চুইংগাম লাগিয়ে দেবো।

ওর এমন সব কথায় আমি সহ সবাই হাসছে। অবশেষে আমাকে ধরতে না পেরে বলে,

-ওই যে রাস্তার পাশে ঝান্ডুর দোকানের বাসি বিস্কুট দিয়ে নাস্তা দেবো কাল তোমায়।

এর এই কথায় আমি ফিক করে হেসে দিলাম। পাগল ছেলে। যাক তাও ভালো অবশেষে মন টা তো ভালো করতে পেরেছি। আর তৌহিদ ক্লাস ফাইভে। ভাই বোন দের মধ্যে ও সবার ছোট। লামু আর মিতু একটা ইন্টার ফাস্ট ইয়ার আর একজন সেকেন্ড ইয়ার। আমরা সবাই ই প্রায় সমবয়সী এই জন্য কাজিনদের আড্ডা টা জমে খুব। বিয়ে উপলক্ষ্যে সবাই এক হয়েছি নয়তো এতো মজা খুবই কম হয়। রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।সিদ্ধাত ভাইয়ার কথা এবার খুব মনে পড়ছে। আজকে একাই ঘুমাতে হবে। সিদ্ধাত ভাইয়ার কথা ভেবে লাভ নেই।

☆☆ দিন পেরিয়ে রাত এলো। বাড়িতে প্রচুর কাজ। সারাদিন বাড়ির কাজের চাপে ঈশার সাথে কথা বলার সময় টুকু পাই নি। কে জানি রেগে ফুলে বসে আসে কিনা। এতো রাতে ঈশা হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। ফোনেও পাবো না। তাই বাধ্য হয়ে ওর একটা ছবি বের করে দেখছি। আমার মায়াবিনী টা আসলেই অনেক সুন্দর। চোখ গুলো টানা টানা। কাজল দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। একদম হরিণী চোখ। মুখে একটা মায়া রয়েছে। এই মায়ায় যে পড়েছে সে আর কখনো উঠতে পারে নি। আসলে যদি বলি ও সুন্দর বলে ওকে ভালোবাসি তাহলে ভুল বলা হবে। ভালোবাসি শুধু সেই ছোট থেকে। তখন ও একদম ছোট্ট। তখন এই সৌন্দর্য ছিলো না। তবুও ওর প্রতি একটা মায়া আমার ছিলই। আর এখন বড় হয়েছে এখানো সেই মায়া টা রয়ে গিয়েছে। আর এখন বেশ সুন্দর ও হয়েছে। ঈশা শুধু সুন্দরী নয়, বেশ গুনোবতীও বটে। অনেক কিছু পারে ও। বাচ্চা বাচ্চা স্বভাব হলে কি হবে গুন আছে। ওর গানের কণ্ঠ অনেক বেশি সুন্দর। স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি সব খানেই ওর গানের জন্য নাম আছে। আর দুই দিন পর ঈশা আমার। আমার অপেক্ষার শেষ হবে। ঈশা কে নিজের করে পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। নিজের ভালোবাসার মানুষ কে বিয়ে করতে পারা টা অনেক বেশি আনন্দের। কাল সন্ধ্যায় মেহেন্দি আর সংগীত অনুষ্ঠান করতে বলবো। পরশু গায়ে হলুদ, তার পর বিয়ে। এতো এতো নিয়ম মেনে এতো অনুষ্ঠান করার দরকার নেই। ঈশা কে ছাড়া থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ছে। ভাবছি কালকের মধ্যেই পুরো বাড়ি সাজিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজন আরো বেশি লোক কাজ করবে তাও কালকের মধ্যেই সব শেষ করতে হবে। আজকে প্যান্ডেলের লোকও এসেছিল। ঈশাদের মত আমাদের ও বাইরে প্যান্ডেল করা হয়েছে। তবে প্যান্ডেলের কিছু কাজ এখনো বাকি। কাল থেকে ভালো ভাবে কাজ শুরু হবে। আজ রাতে আর আমার ঘুম হলো না। ভোর চার টা বাজে। একটু পরে আজান দেবে। তার পর প্যান্ডের লোক আসবে, বাড়িতে কাজের ধুম পড়ে যাবে। চারিদিকে হইচই হবে। উফফ আর জাস্ট দু’টো দিন পর ঈশা চিরকালের জন্য আমার হবে। আমার ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। আমি প্রাণ খুলে নিশ্বাস নেবো। আমার পৃথিবী রঙিন হয়ে উঠবে ঈশার ভালোবাসায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম। এ দীর্ঘশ্বাসের সাথে যেন অনেক টা ক্লান্তিভার অপেক্ষার প্রহর চলে গেলো। আজান দিলো। পুরো রাত টা ঈশা কে ভেবেই কাটিয়ে দিলাম। শুধু একটা রাত নয় কয়েক হাজার দিন রাত কাটিয়ে দেওয়া যাবে শুধু ওকে ভেবে। যত ভাবি তত ভালো লাগে। না আসে কোনো বিরক্তি , না আসে কোনো ক্লান্তি, ঈশা কে ভেবে সময় কাটাতে গেলেও সময় দ্রুত চলে যায় ওকে নিয়ে আমার ভাবনা শেষ হয় না। কি যে আছে ওর মধ্যে। ভোর হয়ে এলো। দেখতে দেখতে সূর্য ও উঠে পড়লো। আমি পুরো রাত টা নির্ঘুম কাটিয়ে দিলাম। প্রতিদিনের মত পুশআপ দিয়ে গোসল সেরে নিচে এলাম। আমার নিচে আসতে দেরি কিন্তু বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড়ে দেরি নেই।

আমার চাচ্চু, বড় ফুপা, ছোট ফুপা, বড় মামা, ছোট মামা, সবাই বিয়ের আয়োজনে ব্যস্ত। কি কি কিনতে হবে, কি কেনা হয়েছে, বাড়ি কিভাবে সাজাবে, এখনো কাদের কে নিমন্ত্রণপত্র দেওয়া বাকি এসবই আলোচনা করছে। আর অন্য দিকে আম্মু, বড় ফুপি, ছোট ফুপি, মামনি, বেলী আপু, কনা আপু ওনাদের ছেলে মেয়ে সবাই এক সাথে কাজ করছে। কেউ কিচেনে খাবার তৈরী তে ব্যস্ত, তো কেউ বিয়ের মসলা পাতি নিয়ে। বাড়ির সার্ভেন্ট গুলো ও দৌড়ের ওপর। বেলি আপু আমার বড় ফুপির মেয়ে। আর কনা আপু ছোট ফুপি মেয়ে। বেলি আপু, কনা আপু দুইজনি আমার বয়সে অনেক বড়। দুইজনই বিবাহিত। বেলি আপুর ছেলে আয়ান, আর কনা আপুর মেয়ে আলিশা। আমরা কাজিনরা এই তিন জনই। যাই হোক, এখন সিফাতকে বাড়ির দিক দেখা শোনা করতে দিয়ে আমাকে ঈশার কাছে যেতে হবে। কিন্তু যাওয়ার আগে কিছু কাজ সেরে যেতে হবে। আগে গেলাম আব্বুর কাছে ।

সিদ্ধাত: আব্বু
আব্বু: আরে সিদ্ধাত এসো এসো।
আমি: আব্বু একটা কথা ছিল
আব্বু: হ্যাঁ বলো না
সিদ্ধাত: বিয়ে তো তোমরা আগামি শুক্রবার ঠিক করেছো। তাই না
আব্বু: হ্যাঁ বাবা। কেন কোনো সমস্যা?
আমি: বিয়ে টা এগিয়ে আনলে হয় না?
বড় ফুপা: কি হয়েছে? শুক্রবার বার বিয়ে হলে কি আপত্তি আছে?
আমি: হ্যাঁ ফুপা। আমি চাই আজকেই মেহেন্দি আর সংগীত হয়ে যাক। কাল গায়ে হলুদ পরশু বিয়ে
ছোট মামা: এতো তাড়া কেন? আস্তে ধীরেই সব হচ্ছে হোক
আব্বু: হ্যাঁ সেটাই তো। বাড়িতে এখনো কত কাজ। কিছুই গুছিয়ে উঠা হয় নি।
আমি: আমি যা বলেছি সেটাই হবে। এটাই আমার শেষ কথা। আর কিছু শুনতে চাই না ( বলেই উঠে এলাম)
আব্বু: বললেই হয়ে যায়? এই ছেলে টা এমন হয়েছে কি বলবো। এতো তাড়াহুড়ো করে কি শুভ কাজ হয়। কি যে করি না
ছোট মামা: দুলাভাই আপনি চিন্তা করবেন না। সব হয়ে যাবে। আমি যাই দেখি প্যান্ডেলের লোকজনের সাথে কথা বলে আসি কত দূর কি হলো।
বড় মামা: আমিও যাই তাহলে বাজার থেকে জিনিস গুলো নিয়ে আসি
আব্বু: হ্যাঁ যাও যাও।
বড় ফুপা: তাহলে আমরা নিমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেই বাকিদের কে।
আব্বু: হ্যাঁ দিন।

সবাই আরও বেশি ব্যস্ত হয়ে গেল এবার। সিফাত কে লাত্তি দিয়ে ঘুম থেকে তুললাম। ঘুমের মধ্যে লাথি খেয়ে তারাতারি উঠে বসে,

– কি কি কি হয়েছে? মারছিস কেন?
– নেশা করে ঘুমাচ্ছিস নাকি? কয়টা বাজে?
– কয়টা বাজে?
– সকাল ১০ টা
– ঘুমিয়েছি তো একটু আগে
– সারারাত কি করেছিস?
– কথা বলেছি
– সারা রাত?
– হুম ( ঘুমে টলতে টলতে )
– আর এখন ঘুমাচ্ছিস? ( রেগে)
– এখন তো ভোর
– হ্যাঁ ভোর। তোর কাছে। এখন এই ভোরে যদি তুই না উঠিস তো
– তো কি
– তোর বউ নিয়ে ভেগে যাবো। ( ফোন টা নিয়ে)
– আরে ফোন টা দে
– না। উঠে ফ্রেস হয়ে আয়। তোর অনেক কাজ আছে।
– ধ্যাত বা*ল
– যাবি?
– যাইতেছি

সিফাত বাধ্য হয়ে ওয়াসরুমে চলে গেল। বের হলে ওকে নিয়ে বাড়ির সব কাজ বুঝিয়ে দিলাম।

– ঠিক আছে এদিক টা এখন তুই দেখ। আমি আমার দিক টা দেখে আসি
– ফোন টা দিয়ে যা
– সারা রাত প্রেম করেছিস। আর সারাদিন কাজ করবি।
– করবো বাট ফোন টা দে
-ফোন দিয়ে গেলে এদিকের কাজ কিছুই হবে না তাই নিয়ে গেলাম। বাইইইই
– ধ্যাত শালা ভাল্লাগে না ভাবলাম একটু গুড মরনিং জানাবো। ধুরু কিছুই হলো না।

আমি গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম ঈশার কাছে। বাড়িতে ঢুকে দেখি বাড়ির মানুষ সবাই ব্যস্ত। আমাদের বাড়ির মত। সবাই ছোটাছুটি করছে। সিড়িতে নোভার সাথে দেখা,

নোভা: আরে ভাইয়া আপনি? একটা দিন বউ কে না দেখে কি থাকা যায় না?
আমি: একটা দিন তো অনেক। একটা মুহূর্ত ও থাকা যায় না। এখন বলো কোথায় তিনি?
নোভা: ইসস কি ভালোবাসা গো। আপনার তিনি তার রুমেই আছে।
আমি: ওকে

আমি সোজা ঈশার রুমে চলে এলাম। কিন্তু রুমে এসে দেখি রুমের কোথাও ঈশা নেই…….
.
.
.
#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here