#পূর্ণতা_নাকি_শূন্যতা,পর্ব_১২
#রেজওয়ানা_রমা
আমি সোজা ঈশার রুমে চলে এলাম। কিন্তু রুমে এসে দেখি রুমের কোথাও ঈশা নেই।কিন্তু নোভা বলল ঈশা ঘরেই আছে। তাহলে ঈশা কোথায় গেল । হঠাৎই ঈশা ওয়াসরুম থেকে বের হয় সাওয়ার নিয়ে। মাথার চুল থেকে পানি পড়ছে, পরনে গেঞ্জি আর প্লাজু। খুবই কিউট লাগছে। মুখে ফোটা ফোটা পানি লেগে আছে। আমার চোখের পলক পড়েছে না। ঈশাও বেশ অবাক হয় আমাকে দেখে। আমার ধ্যান ভাঙে ঈশার ঝাড়ি খেয়ে,
-নির্লজ্জের মত তাকিয়ে আছো কেন?
– বউ কে দেখছি ( ঘোরের বসে বললাম)
– একদম বউ বউ করবে না
– তাহলে কি করবো?
– জানি না। কেন এসেছো? আলগা পিরিত দেখাতে?
– হোপ
– ধমকাবে না। কাল যাওয়ার পর থেকে না একটা ফোন না একটা মেসেজ এখন প্রেম দেখাতে এসেছো?
-আরে বিজি ছিলাম ঈশা। অযথা রাগ করছিস
– এই তোমার সমস্যা কি হ্যাঁ তুই তুই করে কথা বলছো কেন? স্ত্রীর সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না? তুই করে ভাই বোন কথা বলে
ঈশার এমন কথায় আমি রিয়েকশন ভুলে গেছি। কি বলবো বুঝতে পারছি না। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। ঈশা বলছে স্ত্রীর কথা। নিজেকে আমার স্ত্রী বলে স্বীকার করছে। ওয়াও। দারুন তো। ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছি আর মুচকি মুচকি হাসছি। ঈশা আবারও বলে,
– হাসছো কেন? আমি কি জোকস বলেছি?
-না একদমই নয়
– তাহলে হাসছো কেন?
এবার ঈশার দিকে এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলাম। ঈশাও তাল মিলিয়ে পিছিয়ে গেলো। কিন্তু বেশি দূরত্ব হওয়ার আগেই হাত ধরে কাছে টেনে নিলাম।
– কি হয়েছে? কি জানি বলছিলে?
– আ-আমি?
– হুম মিসেস সিদ্ধাত চৌধুরী। কি যেন বলছিলে তুমি?
– কি-কিছু বলি নি।
সিদ্ধাত ভাইয়ার মুখে তুমি করে কথা টা এক অন্য রকম অনুভূতি সৃষ্টি করলো আমার মাঝে। খুব আপন লাগছে। যেন চির চেনা প্রিয়জন। যেন দীর্ঘদিন যাবত আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। সিদ্ধাত ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে কেমন করে যেন হাসছে। উফফ খুব অদ্ভুত লাগছে। সিদ্ধাত ভাইয়া কে এক ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম।
– ঈশা!
– কি হয়েছে?
আমার হাত ধরে হ্যাচকা টানে বিছানায় বসিয়ে দেয় রাক্ষস টা। আমি একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই। অতঃপর সিদ্ধাত ভাইয়া আমার কোলে মাথা রেখে বিছানায় শুয়ে পড়ে। আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই মিস্টার বলে,
– কোনো কথা বলবি না। সারা রাত ঘুমাই নি। এখন ঘুমাবো। একটা কথাও যেন না হয়
– কেন ঘুমাও নি? এটা কি তোমার ঘুমানোর জায়গা? তুমি কি ঘুমানোর জন্য এসেছো? এই তুমি ঘুমাবে তাহলে আমি এখানে কি করব?
– উফ ঈশা! এতো প্রশ্ন এক সাথে করলে উত্তর দেবো কিভাবে?
– একটা একটা করেই উত্তর দাও। সারা রাত কি করেছো কেন ঘুমাও নি?
– আমার একটা গার্লফ্রেন্ড আছে তো সারা রাত তার সাথেই কথা বলছি।
– তো বেশ তো এখন যাও না গার্লফ্রেন্ডের কাছে। ওখানে গিয়ে ঘুমাও।এখানে এসেছো কেন?
বলেই সিদ্ধাত ভাইয়া কে সরিয়ে দিলাম উঠতে যাবো তখন আবার আমার কোমর জড়িয়ে ধরে। শক্ত হাতের চাপ পড়ে আমার পেটে। মূহুর্তেই শরীরের লোম দাঁড়িয়ে যায়। এই অনুভূতি প্রকাশের ভাষা জানা নেই আমার। নিশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে। তখন সিদ্ধার ভাইয়া আবারও কাছে টেনে নিয়ে বলে,
– ছেলেদের চার টা বিয়ে ফরজ। সুতরাং একটা নয় আমি চার টা বিয়ে করতেই পারি।
– ফরজ নয় যায়েজ
– ওইতো একই হলো
– একই হলো না ভুল হলো
-জ্ঞান দিস না তো। ঘুমাতে দে
– ?
– আর হ্যাঁ ডাকবি না। একটা লম্বা ঘুম দেবো। বিকেলে উঠবো। আজকে সন্ধ্যায় মেদেন্দি অনুষ্ঠান হবে। রেডি থাকো জান।
– আজকে? কিন্তু মেহেন্দির আয়োজন করা হয় নি তো।
– সব হয়ে গিয়েছে। আংকেল আন্টি কে বলেই এসেছি।
-ওও
সিদ্ধাত ভাইয়া আমার কোলে মুখ গুজে কোমর জড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলো। আমি আর কোনো কথা বললাম না। সিদ্ধাত ভাইয়ার ফোনে গেমস খেলছি। বিয়ে বাড়িতে সবাই ব্যস্ত। এমন কি নোভা ইতি ও কাজ করছে। সবাই খুব খুব আনন্দ করে করছে। সারাদিন হইচই করেই কাটছে দিন।শুধু আমার ই কোনো কাজ নেই। সারাদিন ঘুরে ঘুরে দেখা ছাড়া। সিদ্ধাত ভাইয়া আমার রুমে আছে তাই এখন আর কেউ আমাদের রুমে আসবেও না।আমাদের বিয়ে নিয়ে সবার অনেক স্বপ্ন। সবাই খুব মজা করছে বিয়ে তে। বিয়ে টা নিয়ে সবাই এক্সাইটেড। আর অনেক এক্সাইটেড আমিও। আমাদের আগামী দিন গুলো খুব সুন্দর ভাবে কাটানোর স্বপ্ন দেখছি। অনেক গুলো রঙিন স্বপ্ন লুকোচুরি খেলছে দুচোখে। সিদ্ধান্ত ভাইয়ার সাথে প্রতিটা দিন আনন্দময় হয়ে উঠবে। এখন সিদ্ধাত ভাইয়া গভীর ঘুমে মগ্ন। তাই আমিও আস্তে আস্তে বর মহাশয় কে বালিশে শুইয়ে দিলাম।
অতঃপর এক দৌড়। উদ্দেশ্য নিচে যাবো। সবাই কি করছে দেখব। উফফ বাবা এতোক্ষন এক জায়গায় কি বসে থাকা যায়। লাফিয়ে লাফিয়ে নিচে নামছি হঠাৎই ইতির সাথে মুখোমুখি একটা সংঘর্ষন মানে একটা সজোরে ধাক্কা। ইতি বেচার তাল সামলাতে না পেরে পড়েও গেলো। আর পড়া মাত্রই চিৎকার করে উঠেছে।
ইতি: ওমা গোওও….
ইতির চিৎকার দেখে বাড়ির সবাই ছুটে আসবে তার আগেই আমিও ধরাম করে ইতির পাশে বসে পড়লাম। তারপর আমিও চিৎকার শুরু করলাম
আমি: ও বাবা গোওওও….. কোমর টা গেলো গো। দু দিন পরে বিয়ে আর আজকে আমি কোমর ভেঙে বসে আছি গো। ও আল্লাহ গো আমার কি হবে গো
আমার ভিলেন আম্মু আর ফুপি ছুটে আসে। এসে আম্মু ইতি কে তুলতে তুলতে উত্তেজিত কন্ঠ বলে,
আম্মু: ইতি মা খুব জোর লেগেছে? কোথায় লেগেছে মা?
ইতি: না না আন্টি। তেমন লাগে নি। জাস্ট পায়ে একটু চোট লেগেছে।
আমি: এই ভিলেন আম্মু! আমাকে কি তোমার চোখে পড়ে না?
ফুপি: ঈশা মা! উঠ উঠ মা। কি করে পড়লি?( আমাকে উঠাতে উঠাতে)
আম্মু: আপা ওকে ছেড়ে দাও। ওর কিচ্ছু হয় নি। ন্যাকামি করছে
ফুপি : কোমরে লেগেছে বলল তো
আম্মু: ওর ওই কোমরেই লাগে। মাথায় ব্যাথা পেলেও কোমরে লাগে,হাতে ব্যাথা পেলেও কোমরে লাগে, পায়ে ব্যাথা পেলেও কোমরেই লাগে, ওর কোমর ছাড়া আর কোথাও লাগে না।
আমি: ( এই রে ভিলেন আম্মু ধরে ফেলেছে। কি করি? আবার চিৎকার করি) উহু্ও বাবা গো, মা গো, আল্লাহ গো, কি ব্যাথা
ফুপি: আরে না লাগলে কি আর চিৎকার করছে? তুই উঠ তো মা ( হাত ধরে তুলতে তুলতে)
ইতি: ফুপি ওর লাগে নাই। ও ইচ্ছা করে বসে পড়েছে আমি দেখেছি
আমি : এই বদজ্জাত ইতি। তোর একাই লেগেছে আমার লাগে নাই? তোর জন্যই আমি পড়ে গিয়েছি।
ইতি: আমার জন্য? তুই না ধাক্কা দিলি
আম্মু: সেটা সবাই জানে কে কাকে ধাক্কা দিয়েছে। আমার মেয়ে টা এতো সয়তান হয়েছে বলার মত না। যেই দেখলো ইতি ব্যাথা পেয়েছে ওমনেই ও নাটক শুরু করে দিলো। যেন ওকে কেউ বকতে না পারে
ইতি: আন্টি ও সব সময় এমন করে। খুব বাদর হয়েছে
আমি: এই ইতি এই তুই কি খুব সাধু? হ্যাঁ? তুই দেখছিস আমি আসছি তাহলে রাস্তার মাঝে বট গাছের মত দাড়িয়ে ছিলি কেন? ( কোমরে হাত দিয়ে)
ইতি: আমি বট গাছের মত দাড়িয়ে ছিলাম?
আম্মু: আজকে আমার মেয়ে টা মার খাবেই। তৌহিদ লাঠি টা দে তো
আমি: এই রে ঈশা ভাআআগগগ…..
বলেই উল্টো ঘুরে আবারও দৌড়াতে যাবো নোভার সাথে ধাক্কা খেয়ে এবার সত্যি সত্যি পড়ে গেলাম। বেশ জোর ব্যাথাও পেলাম
আমি: ও আল্লাহ গো এই বার সত্যি সত্যি কোমর গেলো গো
আম্মু: বেশ হয়েছে। এবার পড়েছে। আপা যাও এবার তোলো। এটা আর নাটক নয়
ফুপি এসে তুলে নিলো। আর নোভা, ইতি দুজনই হাসছে সাথে আমার ভিলেন আম্মুও। রাগে সোজা রুমে চলে এলাম। আমার কপাল টাই খারাপ। এর চেয়ে ভালো ছিল গেমস খেলছিলাম। চুপচাপ গিয়ে সিদ্ধাত ভাইয়ার পাশে বসে পড়লাম। আমার উপস্থিতি বুঝতে পারে সিদ্ধাত ভাইয়া। বুজতে পেরে আবারও আমার কোলে মাথা রেখে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলে,
– কোথায় গিয়েছিলে?
– কোমর ভাঙতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি বুঝে গেছো আমি এখানে ছিলাম না
– হুম। ঘুম ভেঙে গিয়েছিল। কোমর ভাঙা হয়েছে?
– হ্যাঁ হয়েছে। এখন আবার ঘুমাও
-ওকে
সত্যি সত্যি সিদ্ধাত ভাইয়া আবারও ঘুমিয়ে যায়। আরে অদ্ভুত এই লোক টা। আবারও ঘুমিয়ে গেলো। আমি আর কিছু না ভেবে আবারও গেমস খেলছি এমন সময় একটা নাম্বার থেকে বার বার ফোন আসছে। ভূমি নামে সেভ করা। একটা মেয়ে এতো ফোন করছে? কিন্তু কেন? মনের মধ্যে এক অজানা ভয় বাসা বাধলো। না যা ভাবছি সব ভুল। ফ্রেন্ড হবে হয়তো। সিদ্ধাত ভাইয়া ডাকতে না করেছে তাই ডাকতেও পারছি না। বার বার কল আসছে। রিসিভ করবো কি না ভাবছি। তখনই একটা মেসেজ আসে,
ki holo call received korcho na. biyer jonno ki busy acho???
আমি মেসেজ টা দেখে কৌতুহল বসত ওপরের মেসেজ গুলো ও দেখলাম। আমি জাস্ট শকড তাদের কনভারসেশন পড়ে। এমন কিছু দেখতে হবে কখনও কল্পণাও করি নি। আমার ভাবনা টাই সত্যি হলো। সেই অজানা ভয় টা এভাবে বিশাল আকার ধারন করবে বুঝতে পারি নি।তাদের কনভারসেশন থেকে এটা স্পট যে তারা একটা রিলেশনশিপে আছে। সারা রাত এই মেয়ে টার সাথে কথা বলেছে। মজার ছলে গার্লফ্রেন্ডের কথা বলছে বাট সেটা মজা নয় সত্যি।সিদ্ধাত ভাইয়া ও বিশ্বাস নষ্ট করলো। তাদের মেসেজ গুলো পড়ে চোখ দিয়ে অটোমেটিক পানি পড়ছে। নিজেকে সামলাতে পারছি না। ফোন টা রেখে দিলাম। সিদ্ধাত ভাইয়া ঘুমিয়ে আছে বিধায় আমি উঠতেও পারছি না। আমাকে বিয়ে করার কারন কি তাহলে। কেন বিয়ে করলো আমাকে। কেন এতো আয়োজন হচ্ছে আবার আমাদের বিয়ে নিয়ে। উনি তো অন্য কাউ কে ভালোবাসে তাহলে এই বিয়ে কেন হচ্ছে। কি করবো বুঝতে পারছি না। অঝোরে কেদেই যাচ্ছি। আমার নিরব কান্নাও সিদ্ধাত ভাইয়ার ঘুম ভাঙাতে সক্ষম। ঘুম ভাঙতেই দেখে আমি নিরবে কাদছি। তাড়াহুড়ো করে,
– কি-কি হয়েছে ঈশু। কাদছিস কেন?
মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলান কিছু হয় নি। সিদ্ধাত ভাইয়া এবার উঠে বসলেন। আর ওমনেই আমি দৌড়ে ওয়াসরুমে চলে গেলাম। ট্যাব ছেড়ে জোরে জোরে কাদছি। সিদ্ধাত ভাইয়া দরজা ধাক্কাচ্ছে।
– ঈশা কি হয়েছে? বলবি তো। ঈশা! বাইরে আয় প্লিজ। কি হয়ে বল আমায়। ঈশাআআ! কাদছিস কেন? কি হয়েছে? কিছু না বললে কি ভাবে বুঝবো ঈশা
বেশ কিছুক্ষন পর ফ্রেস হয়ে বাইরে এলাম। সিদ্ধাত ভাইয়া তখনও ওয়াসরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে। আমি বের হওয়া মাত্রই বলে,
.
.
.
#চলবে_কি?