#লাবণ্য_আলোয়
#পর্ব_১
মা’কে কিছুদিন আগে লাবণ্য’র কথা জানিয়েছিলাম। আমি লাবণ্যকে ভালোবাসি। মা’র সাথে আমার সম্পর্ক একদম বন্ধুর মতো, তাই মা’কে আমি অবলীলায় আমার সব কথা বলতে পারি। সত্যি বলতে, মা-ই আমার সবচেয়ে ভালো বন্ধু। তবে বাবার সাথে আমার সবসময়ই একটা দুরত্ব রয়ে গেছে। বাবা রাশভারি গোছের মানুষ। মা’র সঙ্গে আমরা দুই ভাইবোন যত সহজে ফ্রি হতে পারি, বাবার ক্ষেত্রে সেটা একদম বিপরীত।
লাবণ্যের কথা শুনে মা বলেছিলেন, ‘মেয়েটাকে একদিন বাসায় নিয়ে আয়। দেখি আমার ছেলের কেমন পছন্দ।’
‘মা, বাবা যদি কিছু বলে?’
‘তোর বাবা কিছু বলবে না। আর বললেও সেটা আমি বুঝব। তুই মেয়েটাকে নিয়ে আয়।’
এরপর একদিন লাবণ্যকে বাড়িতে নিয়ে এলাম। ওকে মা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বললাম, ‘মা, ও হচ্ছে লাবণ্য, সেদিন তোমাকে যার কথা বলেছিলাম।’
মা বললেন, ‘হুম, মনে আছে।’
মা লাবণ্যকে বললেন, ‘আচ্ছা তোমাকে কী আগে কোথাও দেখেছি? চেহারাটা খুব চেনা চেনা লাগছে।’
লাবণ্য এমনিতেই নার্ভাস ছিল। ও, মা’র সামনে আজ প্রথম এসেছে। তার ওপর মা’র এমন প্রশ্ন শুনে আরও ঘাবড়ে গেল।
আমি দুজনের মাঝখানে ঢুকে বললাম, ‘কোথাও দেখোনি মা। কোথায় আবার দেখবে! ও তো আজকেই প্রথম আমাদের বাসায় এসেছে।’
মা আনমনেই বললেন, ‘কিন্তু আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, ওকে আমি কোথাও দেখেছি।’
আমি আর লাবণ্য মুখ চাওয়াচাওয়ি করলাম। কী বলব বুঝতে পারছি না।
মা লাবণ্যকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘লাবণ্য, তোমার পুরো নাম কী?’
‘আন্টি আমার নাম লাবণ্য প্রিয়দর্শীনী হাসান।’
নামটা শুনে মা খুশি হলেন, নাকি বিরক্ত, ঠিক বুঝতে পারলাম না। আমার মা’র নামও লাবণ্য। অবশ্য লাবণ্য নামে মা’কে কেউ ডাকে না। সবাই ডাকে ফেরদৌসী। এত চমৎকার একটা নামে না ডেকে সবাই কেন ফেরদৌসী ডাকে, মা’কে জিজ্ঞেস করে এর উত্তর কখনও পাইনি। তবে একবার নানীর মুখে শুনেছিলাম, মা’র এই নামটা নানাজানের একেবারেই অপছন্দ। মা হাইস্কুলে ওঠার পর মা’র স্কুলের এক শিক্ষক নানাজানকে বলেছিলেন, লাবণ্য নামটা পালটে দিয়ে ভালো কোনো নাম রাখতে। এরপরই ফেরদৌসীর আগমন আর লাবণ্যর প্রস্থান! নানীর রাখা লাবণ্য নামটা তাদের বাড়িতে ডাকা নিষেধ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য আমি এখনও বুঝি না, আমার মা’র এত চমৎকার নামটার দোষটা কোথায়? কেউ ঐ নামে না ডাকার কারণে, মা’র লাবণ্য নামটা হারিয়েই গেল। অবশ্য আমার বাবা কালেভদ্রে মা’কে লাবণ্য নামে ডাকে।
লাবণ্যের পুরো নামটা শুনে মা আর বেশি কথা বললেন না। সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘তোমরা কথা বলো, আমি খাবার দিতে বলছি। দুপুরবেলা যখন এসেছ, না খেয়ে যাবে না।’
মা ভেতরে চলে গেলেন। যেতে যেতেই বললেন, ‘শুভ্র একবার শুনে যা তো।’
আমি লাবণ্য’র দিকে তাকালাম। বেচারী যে মন খারাপ করেছে, সেটা ওর চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে। লাবণ্যকে বসতে বলে মা’র পিছে পিছে ডাইনিং রুমে ঢুকে বললাম, ‘কিছু বলবে, মা?’
‘তুই আমাকে এই মেয়ের কথা বলেছিলি?’
‘হ্যাঁ। ও-ই তো লাবণ্য। কেন মা, কী হয়েছে?’
‘দুনিয়ায় এত মেয়ে থাকতে, তুই এই মেয়েকে পেয়েছিস কোথায়?’
মা’র কথা শুনে আঁতকে উঠলাম আমি।
‘মা, তুমি কী বলো এইসব! ও শুনতে পাবে তো। কাল যখন আমি বললাম, আজ লাবণ্য আসবে, তখন তো তুমি খুব খুশি হয়েছিলে। এখান তাহলে এভাবে কথা বলছ কেন? আর তুমি ওকে এই কথাটা কেন বললে?’
‘কোন কথা বললাম?’
ঐ যে বললে, ‘দুপুরবেলা যখন এসেছ… এটা কেমন কথা, মা? তুমি তো জানতেই, আজ দুপুরে লাবণ্য আমাদের বাসায় আসবে, খাবে।’
মা আমার কথার উত্তর না দিয়ে নিজের কাজ করতে লাগলেন।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘মা, আমি কী লাবণ্যকে চলে যেতে বলব?’
মা বললেন, ‘চলে যাবে কেন? তার জন্যেও তো রান্না করা হয়েছে। খেয়ে যাক৷’
টেবিল ম্যাটগুলো জায়গায় রেখে মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ওর বাপের নাম কী?’
‘ওর বাবা’র নাম ফাইরুজ হাসান।’
মা’র চমকে ওঠা আমার চোখ এড়াল না! মা’র হয়েছে কী আজকে, মা এমন অদ্ভুত আচরণ করছেন কেন! আমার নিজেরও হঠাৎ বিরক্ত লাগল। ভীষণ মন খারাপ হচ্ছে।
মা’কে বললাম, ‘ঠিক আছে তোমার বিরক্ত লাগলে ও আর কখনও আমাদের বাসায় আসবে না।’
‘হুম।’
মা, কী কারণে ‘হুম’ বললেন, বুঝলাম না। প্রথম দেখাতেই যে মা এমন অদ্ভুত আচরণ করবেন, এটা আমি বুঝতেই পারিনি। আজ কী এমন হলো যে লাবনণ্যকে দেখা মাত্রই মা এত ক্ষেপে গেলেন? আমি আর কথা বাড়াইনি। কথা বাড়িয়ে আসলে লাভ নেই। মা’কে আমি চিনি। মা একবার না করলে, সেটা হ্যাঁ হওয়া প্রায় অসম্ভব।
মা আর কোনো কথা না বলে নিজের রুমে ঢুকে দরজায় খিল দিলেন। আমি বোকার মতো কিছুক্ষণ ডাইনিং স্পেসে দাঁড়িয়ে থেকে লিভিং রুমে এসে লাবণ্যর মুখোমুখি বসলাম। লাবণ্য আমার মুখ দেখে কী বুঝল কে জানে, উঠে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আমি যাই শুভ্র।’
আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, ‘চলো তোমাকে পৌঁছে দিয়ে আসি।’
লাবণ্য উঠে দাঁড়াল। সে হয়ত বুঝতে পেরেছে, মা কোনো কারণে বিরক্ত হয়ে আছে। লাবণ্য বুদ্ধিমতি মেয়ে। তাকে আমার আর কিছু বলতে হল না।
সেই যে চলে গেল, আমি লাবণ্যকে আর বাসায় নিয়ে আসিনি ।
এদিকে মা উঠেপড়ে লাগলেন আমার বিয়ে দেয়ার জন্যে। যখন-তখন বিভিন্ন মেয়ের ছবি আর বায়োডেটা নিয়ে রুমে এসে সেই সব পাত্রীর যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত নিয়ে কথা বলতে শুরু করলেন! আমি যতই বলি, “মা তুমি কেন এমন করছ, তুমি কী জানো না, আমি যে লাবণ্যকে ভালোবাসি?”
মা আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করেন না। মা লাবণ্যের বিষয়ে কোনো কথাই শুনতে চান না। তাঁর এক কথা, ঐ মেয়ে ছাড়া অন্য যে কোনো মেয়ে, ঐ মেয়ের সাথে কিছুতেই বিয়ে হতে পারবে না।
আমি ছোটো খালাকে লাবণ্য’র বিষয়টা জানালাম। ছোটো খালা বললেন, ‘বাসায় নিয়ে আয় একদিন। দেখি তোর মা এত রাগ কেন?’
লাবণ্য’র ক্লাস শেষে একদিন বিকেলে গেলাম খালার বাসায়। ছোটো মামাও তখন ছিল ওখানে। লাবণ্য খুব সহজেই মামা আর খালার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলল। লাবণ্য এমনিতে সবার সাথে খুব সহজে মিশতে পারে। শুধু আমার মা’র সাথেই যে কী হলো! আমি এখনও বুঝতে পারলাম না।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে লাবণ্য যেন আমাদের ঘরের মানুষ হয়ে গেল। খালা খুব পছন্দ করল ওকে। চলে আসার সময় আমাকে বলল, ‘শুভ্র, তুই একদম টেনশন করিস না। তোর মা’কে আমি ম্যানেজ করব। কী মিষ্টি আর শান্ত একটা মেয়ে। একে ভালো না বেসে পারা যায়! আপাটা যে কখন কী করে, একদম বুঝি না।’
পরদিন ছোটো খালা আমাদের বাসায় এল। ছোটো খালা মা’র সাথে লাবণ্যের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে, মা সোজা জানিয়ে দিলেন, তার পছন্দের মেয়ের সাথেই আমার বিয়ে দেবেন। খালা-মামা দুজনেই বলল, ‘এত তাড়া কিসের আপা? তুমি এমন করছ কেন? আর এই মেয়ের দোষটা কোথায় সেটা তো বলবে।’
মা বললেন, ‘আমি মেয়ে পছন্দ করে ফেলেছি। আমার বান্ধবী কাজরীর মেয়ে ডিম্পল। দেখতে যেমন সুন্দর তেমন ভালো মেয়ে। হাতছাড়া হয়ে গেলে এমন মেয়ে আর পাওয়া যাবে না।’
ছোটো খালা বলল, ‘আপা শুভ্রর কথা একবার ভেবে দেখো। একটাই মাত্র ছেলে তোমার। তুমি ওর আনন্দটা দেখবে না, আপা?’
মা বললেন, ‘আমি শুভ্রর ভালো চাই বলেই চাচ্ছি, এই বিয়েটা যেন না হয়।’
ছোটো খালা বলল, ‘কেন এমন করছ, আপা?’
মা বললেন, ‘সব কথা তোকে বলতে হবে নাকি?’
আমি সামনে থাকায় ছোটো খালা একটু অপমানিত বোধ করল বোধহয়। ছোটো খালা, মা’র কাছ থেকে এমন উত্তর আশা করেনি। খালা লাবণ্যের বিষয়ে আর কথা না বলে, অন্য প্রসঙ্গে চলে গেল।
আমি যতক্ষণ বাসায় থাকি, মা সারাক্ষণ কানের কাছে একই কথা, ডিম্পলকে একবার দেখ না বাবা। দেখে যদি তোর পছন্দ না হয়, তাহলে আমি কিছু বলব না। আমি জানি তোর পছন্দ হবেই।
আমি ভীষণ অসহায় বোধ করি। মা’কে বুঝানোর চেষ্টা করে বলি, ‘মা তুমি কী একবার ঠান্ডা মাথায় আমাদের বিষয়টা ভাববে? আমি লাবণ্যকে ভালোবাসি মা। আমি ওর জায়গায় অন্য কোনো মেয়েকে ভাবতেই পারি না।’
মা বললেন, ‘এইসব সাময়িক প্রেম-ভালোবাসা দুইদিন পরেই ভুলে যাবি। তুই আমার কথাটা শোন বাবা….’
‘মা, তুমি যদি এইভাবে আমাকে অত্যাচার করতে থাকো তাহলে কিন্তু আমি বাসা ছেড়ে চলে যাব। আমি কখনোই তোমার ঐ ডিম্পলকে বিয়ে করব না।’
মা বড়ো বড়ো চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। বোধহয় বুঝতে পারছেন না, কী বলবেন। আমি বললাম, ‘মা একটা কথা বলো তো, লাবণ্য’র ওপর তোমার এত রাগ কেন?’
‘এমনি। ওকে আমার পছন্দ না।’
‘কিন্তু কেন? ওর দোষটা কোথায়? আমরা দুজন দুজনকে পছন্দ করি মা। তুমি কেন বুঝতে চাচ্ছ না বিষয়টা।’
‘আমি এতসব বুঝি না। তোর যদি ডিম্পলকে পছন্দ না হয় তো অন্য মেয়ে দেখ। তোর যদি কালো মেয়েই বিয়ে করতে হয় তো কর; কিন্তু এই মেয়েকে তুই বিয়ে করিস না।’
কালো মেয়ে! এবার আবার কেমনধারা কথা? মা’র মুখে তো জীবনে কখনোই এমন বর্ণবাদী কথা শুনিনি। তাছাড়া লাবণ্য তো কালো না।
লাবণ্য’র গায়ের রঙটা, সবাই বলে শ্যামলা। কী জানি! আমার তো মনেহয় দিনের শেষে সন্ধ্যে নামার ঠিক আগে কেমন একটা মনমরা ধূসর সোনালী ছায়া নেমে আসে চারপাশে, তেমনটাই ওর গায়ের রঙ। আমার কিন্তু খুব ভালো লাগে এই রঙটা। আমার সবসময়ই মনে হয়, লাবণ্যের মতো দেখতে মেয়েরা অসম্ভব মায়াবতী হয়। বুঝলাম মা আমার সাথে মিথ্যা বলছে। গায়ের রঙ একটা বাহানা মাত্র। মা’র দুই হাত ধরে বললাম, ‘তুমি আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা করো মা।’
মা উলটো বললেন, ‘তুই আমাকে একটু বুঝতে চেষ্টা কর শুভ্র।’
আমি দীর্ঘশ্বাস গোপন করে উঠে দাঁড়ালাম। মা’কে বুঝিয়ে আর লাভ হবে না, তাই হাল ছেড়ে দিলাম ।
লাবণ্যকে নিয়ে নিরব হোটেলে এসেছি। ওর অনেকদিনের শখ নিরব হোটেলে খাওয়ার। দু’জন পাশাপাশি বসে আছি, সামনে রাজ্যের ভর্তা, ভাজি সাজানো; কিন্তু কেউই খাচ্ছি না। লাবণ্যর হাত ধরে বললাম, ‘কী হলো, খাওয়া শুরু করো। তুমি সেই কবে থেকে আসতে চেয়েছ অথচ আজ যখন আসলাম, তুমি এমন গম্ভীর হয়ে আছ কেন?’
‘ভালো লাগছে না। মনটা কেমন যেন অস্থির হয়ে আছে।’
‘কী হলো আবার? একটু আগেও তো ঠিক ছিলে।’
‘আমি ঠিক আছি শুভ্র।’
‘তাহলে খাচ্ছ না কেন?’
লাবণ্য আমার হাতটা ছেড়ে বলল, ‘আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি তোমাকে হারিয়ে ফেলব।’
আমি হেসে বললাম, ‘আমি কী টাকাপয়সা, নাকি কোনো জিনিস যে হারিয়ে যাব?’
লাবণ্য হাসলো না, ওর চোখ টলমল করছে। লাবণ্যর টলমলে চোখ দেখলে আমি অস্থির হয়ে পড়ি। ওর মন খারাপ আমি একদম সহ্য করতে পারি না।
লাবণ্যর হাতটা শক্ত করে ধরে বললাম, ‘তুমি যদি ইচ্ছে করেও হারিয়ে ফেলতে চাও, তাহলে হারাতে পারবে না। আমি কোথাও হারাব না, তোমাকেও হারাতে দেবো না। আমরা একসঙ্গে থাকব সারাজীবন।’
‘আর আন্টি….’
‘আন্টির চিন্তা পরে করব। এখন খাও আর আমাকেও খেতে দাও।’
আমাদের খাওয়ার মাঝখানে ম্যাসেঞ্জারে টুংটাং ঘন্টা বাজতে লাগল। খাওয়া শেষ করে ম্যাসেঞ্জারে ঢুকে দেখি ছোটো বোন ছোঁয়া নক করেছে। সে কতগুলো ছবি পাঠিয়েছে, সাথে ছোট্টো একটা ম্যাসেজ, “ভাইয়া দেখ তোর বিয়ের শপিং। এই দেখ ডিম্পল আপুর ডায়মন্ড রিং।”
ম্যাসেজটা পড়ে আড়চোখে লাবণ্যর দিকে তাকালাম। লাবণ্য আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। আমি বোকার মতো হাসতেই লাবণ্য বলল, ‘কী হয়েছে, কার ম্যাসেজ?’
‘ছোঁয়া।’
‘ছোঁয়া কী বলছে? ও কোথায় আছে, ক্লাসে?’
‘না। শপিংয়ে।’
‘ছোঁয়া শপিংয়ে, এগুলো কীসের ছবি পাঠিয়েছে, দেখি?’
আমি কিছু বলার আগে লাবণ্য আমার হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে নিল। ছবি দেখে আর ম্যাসেজ পড়া শেষ করে মোবাইল ফেরত দিয়ে বলল, ‘তাহলে তো হয়েই গেল।’
‘কী হয়ে গেল?’
‘আন্টি যা চাচ্ছেন, তাই হয়ে গেল।’
‘কক্ষণো না।’
‘তোমার বিয়ের কেনাকাটা চলছে আর তুমি বলছ, কক্ষোণা না!’
‘লাবণ্য, তুমি কী আমার ওপর ভরসা রাখতে পারছ না?’
‘শুভ্র, তুমি যত সহজ ভাবছ, বিষয়টা ততটাও সহজ না। আন্টি সব আয়োজন শেষ করে তোমাকে যখন ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবেন, তোমার তখন কিচ্ছু করার থাকবে না। করার মতো সময়ই তুমি পাবে না।’
এই প্রথম আমার একটু দুশ্চিন্তা হচ্ছে। মা সত্যি ভীষণ রকমের বাড়াবাড়ি করে ফেলছেন। আমি ভাবলেশহীন চোখে লাবণ্যর দিকে তাকিয়ে আছি দেখে সে জিজ্ঞেস করল, ‘তুমি কী চাও শুভ্র?’
আমি পড়া মুখস্থের মতো বললাম, ‘আমি শুধু তোমার সাথে থাকতে চাই, আর কিছু না।’
হঠাৎ লাবণ্য খুব ব্যস্ত হয়ে উঠল। আমাদের দুইজনের তিনজন মিউচুয়াল ফ্রেন্ডকে ফোন দিয়ে টিএসসির মোড়ে চলে আসতে বলল।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘ওদের ডাকছ কেন? ওরা এসে কী করবে?’
‘বিয়ের সাক্ষী হবে।’
ভ্যাবাচেকা খেয়ে বললাম, ‘বিয়ে! কার বিয়ে, কিসের সাক্ষী?’
লাবণ্য নির্লিপ্ত কণ্ঠে বলল, ‘আমার সাথে তোমার বিয়ে।’
‘তুমি মজা করছ লাবণ্য?’
‘শুভ্র তোমার কী মনে হচ্ছে, এটা মজা করার সময়?’
‘লাবণ্য একবার মাথা ঠান্ডা করে সবকিছু চিন্তা করলে হয় না?’
‘শুভ্র, আর কোনো অপশন আছে তোমার হাতে?’
‘কিন্তু বিয়ের পর আমরা কোথায় যাব?’
‘তোমাদের বাসায়।’
লাবণ্যর কথা শুনে আমার রীতিমতো হাত-পা কাঁপতে শুরু করল। অনুনয়ের সুরে বললাম, ‘আরেকবার কী ভাববে বিষয়টা?’
‘আমার ভাবাভাবি শেষ। তুমি বিয়েতে রাজি আছ কি না, সরাসরি বলো। তুমি যদি না বলো, তাতেও কোনো সমস্যা নাই। আমি একটুও বিরক্ত করব না তোমাকে। এখনই চলে যাব এখান থেকে, তোমার জীবন থেকে।’
মনে মনে দোয়া-দরুদ পড়া শুরু করলাম । বুঝে গেছি, লাবণ্যকে এখন আর থামানো যাবে না। মা’কে কীভাবে সামলাবো সেটা ভাবতে ভাবতে রিজভীকে ফোন দিয়ে বললাম, ‘টাকাপয়সা যা আছে নিয়ে মহাখালী কাজী অফিস চলে আয়।’
চলবে
#ফারজানা ইসলাম