স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 7,08

0
1294

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 7,08
ফাতেমা তুজ
07

শিলাকে বিদায় জানিয়ে আপাদমস্তক চিন্তা করতে করতে বেশ খানিকটা চলে আসলাম।ওমন সময় চোখে পড়ে দুটো ছোট্ট বাচ্চা রাস্তার পাশে খেলছ।ওদের দেখে মনটা ভরে উঠলো। সমস্ত ধ্যান ধারনা উবে গিয়ে ওদের দিকে চোখ আটকে গেল।সবথেকে মজার বিষয় হচ্ছে বাচ্চা দুটো খেলছে ঠিকই কিন্তু আমার কাছে ওদের কেমন যেন বর বউ মনে হচ্ছে।মেয়ে টার বয়স পাঁচ কি ছয় আর ছেলেটার আট নয় হবে।ওদের দেখে সমস্ত চিন্তা ভুলে গেলাম।ওদের খেলা দেখার জন্য পাশের বেঞ্চ এ বসলাম।ব্যাগ টা কাঁধ থেকে ছাড়িয়ে বেঞ্চের পাশে রাখলাম।তারপর ব্যাগ থেকে কিটক্যাট টা বের করে ও কিছু একটা ভেবে রেখে দিলাম আর পাশে রাখা চকোচকো বের করলাম। চকোচকো মুখে দিয়ে বসে আছি আর ওদের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি।
বাচ্চা দুটো খেলছে পিচ্ছি মেয়ে টা মিথ্যে মিথ্যে রান্না করছে আর ছেলেটা তার পাশেই বসে আছে। মেয়ে টা বেশ অনেকক্ষণ ধরে বিভিন্নভাবে রান্না করলো।
তারপর ছোট প্লাস্টিকের চুলা থেকে হাঁড়ি টা নামালো।
নামানোর সময় আবার কি সুন্দর মিথ্যে মিথ্যে ছ্যাঁকা খেলো।
ছেলেটা ওকে বলল
– তুমি ব্যাথা পেয়েছো।

মেয়ে টা কাঁদো কাঁদো ভাব নিয়ে বলল
– হুম।
ছেলেটা আবার বলল
– আমি তো বললাম সাবধানে রান্না করো। কিন্তু তুমি শুনলেই না।দেখি দেখি কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।

আমি ওদের এহেম কান্ডে অবাক না হয়ে পারলাম না।
এই টুকুনি দুটো বাচ্চা কি সুন্দর অভিনয় করছে!
বাববাহ আমি তো পুরো ফিদা। আরো বেশি আগ্রহ নিয়ে ওদের দিকে মনোযোগ দিলাম।ছেলেটা মেয়ে টার হাত ধরে ফু দিয়ে দিচ্ছে। মেয়ে টা আবার কিছুক্ষন পর বলছে আস্তে ফু দাও দেখো নি কতোটা পুরে গেছে।
ছেলেটা টা মেয়ে টার মাথায় গাট্টা মেরে হেসে হেসে বলল
– হয়েছে অনেক ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দাও।
মেয়ে টা বলল
– না আমি পারব না।
ছেলেটা বলল
– তাহলে কিন্তু বড় হয়ে তোমায় বিয়ে করবো না।
মেয়ে টা এবার রেগে গেল আর বলল
– তোমাকে আমি ও বিয়ে করবো না যাও।

এই বলে উঠতে লাগলো তখনি ছেলেটা মেয়ে টার হাত ধরে বলল
– আচ্ছা রাগ করো না।আমি আর বলব না এমন এই যে কান ধরছি।

মেয়ে টা মানল না রেগে ফুলে অন্য দিকে মুখ করে বসে রইল এবার ছেলেটা মেয়ে টার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে মেয়ে টার হাত ধরে বলল
– বললাম তো আর হবে না।

কিন্তু মেয়ে টা মানতে নারাজ এবার ছেলেটা উঠে দাড়িয়ে মেয়ে টার কপালে চুমু এঁকে দিলো। এবার দুজনেই ফিক করে হেসে দিলো আর হাত ধরে চলে গেল।আমি শেষের দুটো কান্ডতে শিউরে উঠলাম সাথে কিছু টা লজ্জা ও পেলাম সেইদিনের কথা ভেবে। কারন সেইদিন আমি কান্না করায় ফারহান ভাইয়া ও হাঁটু গেড়ে বসে আমার কপালে চুমু এঁকে দিয়েছিলো।
এই সব ভাবতে ভাবতে আবার হাঁটা লাগালাম।
আজকে যেন পা চলছেই না। ভেতর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো ।
_______________

আবার কিছু টা পথ চললাম পাশের দোকানে ফারহান ভাইয়া কে দেখতে পেলাম।ফারহান ভাইয়া দুজোন গরিব ব্যক্তি কে কিছু কিনে দিচ্ছেন।
লোক দুটো ফারহান ভাইয়ার হাত ধরে আবার কিসব যেন বলছে। ফারহান ভাইয়া ও ওনাদের হালকা হেসে হেসে উওর দিচ্ছেন ।মনের ভেতর এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করলাম।ফারহান ভাইয়া সত্যিই অসাধারণ মানুষ।সবাইকে কেমন সাহায্য করে।যখন হানিফ কাকা ও কাকি ছেলেদের অবহেলার কারনে বাড়ি ঘর ছেড়ে এখানে চলে আসে তখন ফারহান ভাইয়া ওনাদের অনেক সাহায্য করেছিলেন।
তখন ফারহান ভাইয়া নবম কি দশম শ্রেণীর ছাএ।
হানিফ কাকার থাকা খাওয়া দোকান সব কিছু তো ফারহান ভাইয়াই ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।
কাকা তো ফারহান ভাইয়া কে বাবা ছাড়া কথাই বলেন
না।আর ফারহান ভাইয়া ও সবসময় কাকার খোঁজ খবর রাখবে।কেমন আছে কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাকি বা কোনো কিছুর প্রয়োজন আছে নাকি সব।
কাকি তো ফারহান ভাইয়া কে প্রায় সময় ই নিজেদের সাধ্য মতো রেঁধে খাওয়াবেন।
ফারহান ভাইয়া ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন।ওনারা দরিদ্র বলে কখনো অবহেলা করে না।
বরং এক সাথে বসে খায় আর কাকিকে পা ধরে সালাম করে সবসময়।
এইটুকু বয়সেই দরিদ্র মানুষের প্রতি এতো ভালোবাসা ভাবা যায়!
আসলেই মানুষ টা খুবই ভালো।
এই সব ভাবতে ভাবতে বেশ আবার কিছু টা পথ চলে আসলাম।

হানিফ কাকার চায়ের দোকান পাশ দিয়ে যাচ্ছি এমন সময় হানিফ চাচা ডাক দিলেন। ওনাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিলাম আর জিজ্ঞাসা করলাম
– কেমন আছেন কাকা?

[ হানিফ কাকা অসম্ভব ভালো মানুষ। কিন্তু কথায় আছে না ভালো মানুষের কপালে বেশির ভাগ সময় সুখ থাকে না ঠিক তেমনি। তাই তো তিন ছেলে থাকা সত্যে ও আজ কাকা কে চা বিক্রি করতে হয়। যদি ও এতে কাকার কোনো অভিযোগ বা অভিমান নেই। দিব্বি আছেন তিনি তার সহধর্মিনী কে নিয়ে ।
কাকার বয়স হবে ৫২ কি ৫৫ তিন ছেলে কে বিয়ে দিয়ে ছেন ভালো চাকরি ও করেন তারা কিন্তু মধ্যবয়সী বাবা মায়ের আশ্রয় নেই তাদের কুটিরে।

কাকা এখানে আছেন চার বছর ধরে। অসম্ভব সুন্দর করে কথা বলেন। আমাকে দেখলেই বলবে মামুনি কেমন আছো। আমার হাতে চা খেয়ে যাও। বাসার সবাই কেমন আছেন সব। অনেক ভালো লাগে ওনার সাথে কথা বলতে। ]

আজ ও তার ব্যতিক্রম হলো না কাকা আমাকে বলল ‘বসো মামুনি।তোমার জন্য স্পেশাল চা বানিয়ে দেই।’

কাকার হাতের চা উফফফ মিস করা যাবে না।
বসে আছি কাকা চা দিলেন আমি চায়ের কাপে চুমুক দিতে না দিতে কাকা জিজ্ঞাসা করলেন ‘তা মামুনি চা টা কেমন হয়েছে।’

আমি আরেক বার চুমুক দিয়ে বললাম,
– উফফফ কাকা কি যে বলব অসাধারণ।
কাকা হেসে উঠলো পরক্ষণেই বলল ,
– মামুনি আজ ঐ বখাটেরা তোমাকে হয়রান করে নি তো?
মুখ টা মলিন হয়ে গেলো আমার বললাম
– না কাকা ওরা তো আজকে আমার পা ধরে ক্ষমা চেয়েছে।কিন্তু কাকা

আমার কথা শেষ হওয়ার পূর্বেই কাকা হেসে উঠলেন।
আমি ওনার হঠাৎ অপ্রত্যাশিত অট্টহাসি তে কিছুটা বেকুব বনে গেলাম। পরক্ষণেই কাকা যা যা বললেন আমি তো আকাশ থেকে পরলাম।
– তা মামুনি ওদের ঘাড়ে কয় টা মাথা যে ওরা আবার হয়রান করবে।সেইদিন কি মার টাই না খেয়েছে।

আমি হতবাক হয়ে গেলাম সম্পূর্ণ ঘটনা বুঝার জন্য নিজেকে সিরিয়াস করে নিলাম তারপর কাকা আমাকে যা যা বললেন তা শুনে আমি নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম ।
কতো ক্ষন থম মেরে বসে রইলাম ।

[ সেই দিনের ঘটনা যখন আমি ফারহান ভাইয়া কে রিফাত ভাইয়া ভেবে জড়িয়ে ধরে ছিলাম। যখন দেখলাম আমি রিফাত ভাইয়া কে না ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে আছি তখন আর তাঁর দিকে দ্বিতীয় বার তাকাতে পারলাম না। লজ্জার সাথে সাথে খানিকটা ভয় ও কাজ করছে।ফারহান ভাইয়া হলো বড্ড রাগি কিন্তু বড়দের যথেষ্ট সম্মান করে। সবার মুখে মুখে ওনার প্রশংসা শোনা যায়। ওনার সাথে তো আমার তেমন কোনো দিন কথাই হয় নি।কারন আমি ওনাকে প্রচন্ড পরিমানে ভয় পাই। ওনার দিকে তাকালেই মনে হয় ওনি রেগে আছেন। সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হলে ও সত্যি যে আমি ওনাকে কখনো কাঁদতে আর অট্টহাসি তে দেখিনি। হাসি বলতে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি।কিন্তু এই মানুষটির মৃদু হাসি টা চোখ ধাঁধানোর মতো সুন্দর।প্রান খোলা স্বচ্ছল হাসিটা কতই না সুন্দর হবে।বরাবরই ওনার থেকে আমি দূরে থাকি। ওনার দিকে তাকাতেই পারছিলাম না।ওনি শান্ত স্বরে বললেন
– ফারাবি কি হয়েছে, বল আমায়।

আমি কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। আমাকে এভাবে চুপ থাকতে দেখে ওনি এবার আমাকে ধমক দিলেন।
– ফারাবিইই।

ওনার ধমকে আমি চমকে গেলাম আর সাথে সাথে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলাম। ওনি যেন বোকা বনে গেলেন।
আমাকে আলতে ভাবে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে দিলেন।
তারপর আমাকে ছাদে রাখা আরটিফিশিয়াল ফুল দিয়ে সাজানো মিষ্টি দোলনাটা তে বসালেন।আর ওনি হাঁটু গেড়ে আমার সামনে বসলেন।কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো।
তারপর আমার হাত টি ধরে আদুরে ভাবে চুমু খেয়ে বললেন ‘আমাকে ভয় পাচ্ছিস?’

আমি কোনো রকম ইতস্তত না করে মাথা দোলালাম।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– আচ্ছা আমি বকা দিব না তোকে, কিন্তু যদি তুই আমাকে সত্যি টা বলিস তো।আমি মাথা দোলালাম।
তারপর আবার বলা শুরু করলেন ‘এবার বল তুই ঐ ভাবে কাঁদছিলি কেন?’

সব টা মনে পড়ে যাওয়ায় আমি আবার কেঁদে দিলাম।
ফারহান ভাইয়া আমাকে বললেন ‘এবার কিন্তু বকা
দিবো।উঁহু আর কাঁদবি না।’

চোখের পানি আবার মুছে দিলেন আর বললেন ‘সবসময় কাঁদলে তোকে ভালো লাগে না।যেমনটা এখন তোকে কান্না তে মানাচ্ছে না।এখন আর কাঁদবি না।’

তারপর বললেন ‘ বল আমায় কি হয়েছে?’
আমি ওনাকে অনড়গল সব বলে দিলাম।ওনি আমাকে কাছে টেনে নিয়ে হালকা ভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন কিছু হয় নি ফারাবি এই টুকুতে কেউ এভাবে কাঁদে বোকা?শোন বাসায় কাউকে কিচ্ছু বলবি না ঠিক আছে আর এখন সুন্দর করে ফ্রেস হয়ে খেয়ে একটা ঘুম দিবি।
আমি প্রতিউওরে মাথাদোলালাম।ওনি আমাকে দোলনা থেকে উঠিয়ে কপালে চুমু এঁকে দিলেন আর বললেন ‘লক্ষ্মী মেয়ে।ফাস্ট , ফাস্ট যা না হলে কিন্তু বকা দিবো।’

আমি তাড়াতাড়ি নিচে গিয়ে ওনার কথা মতো খেয়ে ঘুম দিলাম। বরাবর ই আদুরে মেয়ে আমি। সবাই এতো আদর করে যে সেটা নিয়ে বলার ভাষা নেই। আজ ফারহান ভাইয়ার থেকে এমন আদর পেয়ে আমি সত্যিই হতবাক।মানুষ টা খারাপ নয়।
_____________

সেইদিন রাতের বেলা আকাশ ভাইয়া রা মদ খাচ্ছিলো আর ক্যারাম খেলছিলো সাথে সেইদিনের ঘটনা পুনরাবৃত্তি করছিলেন।
আকাশ ভাইয়া বললেন কালকে আবার মেয়ে টাকে পাবো বলেই পৈশাচিক হাসি দিলেন। হঠাৎ কারো ঘুসি খেয়ে আকাশ ভাইয়া নিচে পড়ে গেলেন।
এমন হঠাৎ আক্রমণে কিছুটা রেগে গিয়ে উঠে দাড়িয়ে এক অসব্র গালি দেওয়ার জন্য সামনে থাকা মানুষটার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে আকাশ ভাইয়া বাকশক্তি হারিয়ে ফেললেন। চোখ গুলো অসম্ভব লাল, মনে হচ্ছে এখনি ফেটে রক্ত পরবে। আকাশ ভাইয়ার মনের ভেতর ছ্যাত করে উঠলো। ভয়ে ওনার পা অনড়গল কাঁপছে তারপর তুতলিয়ে বললেন
– ফাফাররহান ভাই।

কিছু বলার পূর্বে ই আবার এক ঘুসি পড়লো আকাশ ভাইয়ার মুখে।ঠোঁট ফেটে রক্ত বের হতে লাগলো।কিছু বোঝার পূর্বেই ফারহান ভাইয়া, আকাশ ভাইয়া আর সিহাব ভাইয়া কে উদোম মারতে লাগলেন।পাশে থাকা কোনো মানুষের সাহস নেই এগিয়ে গিয়ে ফারহান ভাইয়া কে আটকানোর। আকাশ ভাইয়ার হাত টা পা দিয়ে পিষে বললেন এই হাত দিয়ে ফারাবি কে স্পর্শ করেছিস।
তোর এই হাত আমি ভেঙে গুড়িয়ে দিবো। আর সিহাব ভাইয়ার কলার চেপে ধরে বললেন তোর এই মুখ দিয়ে তুই ফারাবিকে কটূক্তি করেছিস , তোর এই চোখ দিয়ে বাজে ইঙ্গিত করেছিস তোকে তো আমি বলেই অঝোরে মারতে লাগলেন।
তোর জ্বিভ আমি ছিড়ে ফেলবো হারা*** বা** ।
পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া। দুজোন ফারহান ভাইয়া কে থামাতে গেলো। কারন যে ভাবে মারছে তাতে বেশি ক্ষন এভাবে মার খেলে মৃত্যু হওয়া তেমন আশ্চর্যের বিষয় না।ফারহান ভাইয়া কে আটকানো যাচ্ছে না।ওদের দুজোনের পক্ষে সামাল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। জীম করা বডি স্কুল কলেজ বক্সিং চ্যাম্পিয়ন কে সহজে আটকানো যাবে না এটা স্বাভাবিক।রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া আশে পাশের মানুষের সাহায্য নিয়ে কোনো মতে ফারহান ভাইয়া কে দূরে সরিয়ে আনলো।
রানা ভাইয়া বললেন ‘ ফারহান ক্ল্যাম ডাউন কি করছিলি কি মরে যেতো তো।’

ফারহান ভাইয়ার চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট ফুটে উঠছে।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ঐ জানো**** বা*** তো মেরেই ফেলতে
চেয়েছিলাম। ওর সাহস বেড়ে গেছে ।
জামান ভাইয়া বলল
– আচ্ছা ও করেছে কি যার জন্য ওর

জামান ভাইয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই ফারহান ভাইয়া বলল
– ও কি করেছে। বল ও কি করে নাই। ঐ জানো**** বা** আমার ফারাবির দিকে নজর দিয়েছে।

– ফারাবি মানে। রিফাতের বোন ওওওওওও

রানা ভাইয়া বলল
– তবে বুঝি আমাদের রাজনের মনে প্রেমের ফুল ফুটলো।

রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া একসাথে বলে উঠলো।
– হুমমমম বুঝে গেছি মামা।
এবার ফারহান ভাইয়া হেসে ওদের পীঠ চাপড়ে বললেন ‘বেশি বকসিছ তোরা।’

তারপর তিনজন একসাথে হাঁটতে হাঁটতে চলে গেলেন ]

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 8
________________________

কাকার মুখে শুনলাম যে সেইদিন নাকি ফারহান ভাইয়া ওদের মেরেছেন।এবার সবটা আমার কাছে খোলসা হলো ফারহান ভাইয়া কে সেদিন বলেছিলাম তাই ওনি ওদের শাস্তি দিয়েছেন,ঠিক হয়েছে একদম।কাকা কে বিদায় জানিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এই গলিটা পেরোতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া আসছেন।
আজকে আর তেমন ভয় হচ্ছে না।
আমাকে ওনি কতো সাহায্য করলেন আমার ও তো উচিত ওনাকে কিছু দেওয়া কিন্তু কি দিবো।পরক্ষণেই মনে পড়ল আরে আমার কিটক্যাট আছে তো।ইয়া হু ওনি নিশ্চয়ই এটা পেয়ে খুশি হবেন কিছু না ভেবেই কিটক্যাট বের করে নিলাম। ফারহান ভাইয়ার সামনে গেলাম।
গিয়ে বললাম ‘থ্যাংকস ভাইয়া।’
ওনি চোখ নাড়ালান অর্থাৎ কেন?
আমি বুজতে পেরে বললাম ‘ ঐ পাজি বখাটেদের শাস্তি দেওয়ার জন্য।’
ওনি হালকা নিচু হয়ে বললেন ‘তোকে কে বলল আমি যে ওদের শাস্তি দিয়েছি।’
আমি বললাম
– হানিফ কাকা বলল। আপনি ওদের কিভাবে রাম ধোলাই দিয়েছেন।

বলেই ফিক করে হেসে দিলাম।ওনি আমার দিকে শান্ত দৃষ্টি তে চেয়ে রইলেন। পরক্ষণেই সেদিনের ওড়নাটা ওনার হাতে দেখতে পেলাম ওনি বললেন ‘এই যে তোর ওড়না টা।’
আমি হাতে নিয়ে কিছু না ভেবেই বললাম ‘এটা বরং আপনি ই রেখে দিন। আমি নিয়ে কি করব আর।
আমি আরেকটা ওড়না কিনে নিয়েছি।’
ওনি আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো
– উমম এটা ভালো না তাই আমাকে দিচ্ছিস।
আমি বললাম
– কে বলেছে হুম। এটা অবশ্যই ভালো ।
ফারহান ভাইয়া বললো
– না এটা আমার পছন্দ নয়।
– আচ্ছা তাহলে কোনটা পছন্দ ।
ওনি আমার গলার দিকে দেখিয়ে বললেন
– এটা পছন্দ আমার,দিবি আমায় ।
আমি বললাম
– আচ্ছা নিন এটা।
ওনার চোখে শান্তি অনুভব করলাম। পরক্ষণেই পেছন ঘোরে ওড়না টা দিয়ে দিলাম। আর ফারহান ভাইয়ার হাতে থাকা ওড়না টা ভালো করে গলায় জড়িয়ে নিলাম।
পরক্ষণেই একটি মিষ্টি হাসি দিয়ে বললাম
– হ্যাপি?
ওনি ওড়না টা হাতে ভালো করে জড়িয়ে নিয়ে বলল
– হুম হ্যাপি।
আমি কিছু একটা ভেবে নিজের মাথায় নিজেই থাপ্পড় দিয়ে বললাম
– আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম।
ফারহান ভাইয়া সন্দিহান চোখে তাকালেন আমি বললাম
– এই যে আপনাকে চকলেট দিতে।
চকলেট দিয়ে বললাম ‘আমাকে সাহায্য করার জন্য আমার সব থেকে প্রিয় চকলেট টা দিলাম।’

ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন। আমি বিদায় নিয়ে চলে আসলাম।খানিকটা যাওয়ার পরই ফারহান ভাইয়া কিছু একটা ভেবে আমাকে থামিয়ে দিলেন। আমি দাঁড়ালাম ওনি আমার কাছে এসে বললেন কিছু ভুলে যাচ্ছিস না তো। আমি ভেবে বললাম না তো।
ফারহান ভাইয়া বললেন কাউকে কোনো কিছু উপহার দিলে জানিস না সেটা নিজ হাতে করে দিতে হয়।আমি ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– কীভাবে?
ওনি বললেন এই যে তুই আমাকে চকলেট দিলি এটা তোর উচিত আমাকে খাইয়ে দেওয়া।
আমি বললাম
– ও আচ্ছা এখনি দিচ্ছি।

ফারহান ভাইয়ার থেকে চকলেট টা নিয়ে ফারহান ভাইয়াকে একটা বাইট দিতে বললাম।ফারহান ভাইয়া একটা বাইট দিলেন।তারপর আমাকে সেই চকলেই টা থেকেই একটা বাইট দিতে বললো।
আমার চোখ চকচকে হয়ে উঠলো কারন কিটক্যাট আমার দুর্বলতা। আমি তাড়াতাড়ি একটা বাইট দিলাম ।
ফারহান ভাইয়া জোড়ে হেসে উঠলেন। আমি ওনাকে হাসতে দেখে বললাম
– কি হয়েছে হাসছেন কেন?
ওনি আমাকে বললেন ‘ওয়ান সেকেন্ড দাঁড়া।’
ওনি ওনার পকেট থেকে রুমাল বের করে আমার ঠোঁটের উপর লেগে থাকা চকলেট টা মুছে দিলেন।এবার আমি নিজেই হেসে দিলাম। আমি এমনই চকলেট খেলে মুখ ভরিয়ে ফেলি। পরক্ষণেই আমি বললাম ‘ থ্যাংক ইউ।’
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন ‘ফারাবি কোন ক্লাসে যেন পড়ছিস।’
আমি বললাম ‘ক্লাস সেভেন ভাইয়া।’
ফারহান ভাইয়া কিছু চিন্তা করে মৃদু হাসলেন বললেন ‘পিচ্ছি টা।’
আচ্ছা তাহলে এখন যা। সাবধানে যাবি ঠিকাছে? ]
আমার মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
হঠাৎ নিরাজ আর নেহার ডাকে আমার হুস ফিরল।

[ বিকালে ব্যলকনি তে বসে ছিলাম ।ব্যলকনিতে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎ চোখ পড়ল আমার কাবাটে কিছু একটা আটকে রয়েছে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে কাবাটের দিকে আগালাম।কাবাট খুলেই দেখতে পেলাম সেই ওড়না টা।
যেটা ফারহান ভাইয়া কে আমার গলা থেকে ওড়না গিফট দিয়ে নিয়ে এসেছিলাম। এটা আর ব্যবহার করা হয় নি। কেমন যেন মায়া লাগতো। তবে খুব যত্নে রেখেছিলাম।কেন রেখেছি জানি না।
হয়তো আম্মু কাবাট গোছাতে গিয়ে এটা ভুলে বের করে রেখে দিয়েছিল। ওড়না টা হাতে নিয়ে ব্যলকনিতে চলে আসলাম। ব্যলকনিতে ছোট টবে রাখা কালো গোলাপ গাছ টার দিকে তাকালাম। এই সেই গাছ যেটা ফারহান ভাইয়া আমাকে জন্মদিনে দিয়ে ছিল। আর এটা থেকে চারা নিয়ে অনেক কষ্ট করে বেশ কয়েকটা গাছ উৎপন্ন করি। যার কয়েকটা ছাদে , বাগানে আর বাসার সামনে গেটের কাছে রেখেছি। কিন্তু এই গাছ টা কে সব সময় আমার আশে পাশে রাখি।কারন ফারহান ভাইয়া বলেছিল এই গাছ টার কিছু হলে আমাকে বেঁধে রেখে দিবে।গাছটার দিকে তাকাতেই দেখলাম একটু শুকিয়ে গেছে তাই পাশে রাখা স্পেশাল ফ্লাওয়ার স্প্রে দিয়ে ভালো করে স্প্রে করলাম। বাহ কিছু ক্ষনের মাঝেই গাছটাকে কেমন সতেজ দেখাচ্ছে। গাছের দিকে তাকিয়েই আর ওড়নাটাকে জড়িয়ে পুরনো সেই স্মৃতি তে ডুব দিয়েছিলাম।
যার রেশ কাটলো পিচ্ছি দুটোর ডাকে।

পিচ্ছি দুটো বড্ড বেশি দুষ্টু তবে ফারাবি আপি বলতেই অজ্ঞান।
বয়স হবে আট। দুটিতে যমজ হলে ও দেখে বোঝার উপায় নেই এরা যমজ।দুজনের ঝগড়া লেগে থাকে সারাক্ষণ। একটু ও বনি বনান নেই। নীরাজ আর নেহা হলো আমার ছোট ফুপির ছেলে মেয়ে।আমার আব্বু রা তিন ভাই দুই বোন।
প্রথমে বড় আব্বু তারপর আব্বু, তারপর বড় ফুপি আর তারপর ছোট ফুপি আর সর্বশেষ বাড়ির ছোট ছেলে ছোট চাচ্চু।

বড় ফুপির এক ছেলে এক মেয়ে।
বড় আলয় ভাইয়া তারপর তানহা আপি।
আলয় ভাইয়া এমবিবিএস পড়ছেন দ্বিতীয় বর্ষ আর তাহনা আপি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন।
বড় ফুপির বাসা ও ঢাকাতেই।
আর ছোট ফুপির এই দুই মেয়ে আর এক ছেলে ।

তামান্না বড় আর তার পর এই পুঁচকে দুটিতে নীরাজ নেহার ছয় মিনিটের বড় ভাবা যায় হাহাহা।
তামান্না নবম শ্রেণীতে পড়ে আর নীল নেহা ক্লাস টু।
ছোট ফুপি কানাডা তে সেটেল। তবে প্রতি বছরে দুবার আসেন।আর আমার ছোট চাচ্চু তার কথা বলতে গেলে আমার নিজের ই কান্না পায়।ছোট চাচ্চু আমার আর রিফাত ভাইয়ার বন্ধু ই বটে। জীবনের সমস্ত কিছু আমাদের জানিয়ে দেয়।চাচ্চুর নাম আরিফ হোসেন।
বয়স ২৯ হলে ও এখনো বিয়ে টা করে উঠতে পারে নি।
কারনটা হলো জীবনের প্রথম প্রেমে ছ্যাঁকা প্রাপ্ত আসামি ওনি।ওনার জীবনের প্রথম প্রেম হয়েছিল নবম শ্রেণীতে।
সমবয়সী প্রেম যাকে বলে এক বছরের মাথায় প্রেম এ ছ্যাঁকা খেয়ে বাকা হয়ে গেলেন।
ছোট থেকেই পড়াশুনাতে ডাব্বা মারতেন ওনি।
হাজারো চেষ্টা করে ও ওনাকে কেউ ঠিক করতে পারে
নি।
এক প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে কি উন্নতি রে বাবা।ছ্যাঁকা খেয়ে পড়াশুনাতে এতো মন দিয়ে ছে যে একদম ক্লাস টপার ভাবা যায়!
দশম শ্রেণীর প্রথম দিকে চাচ্চুর প্রেমের ছন্দপতন ঘটে ।
তিন মাস নাকি ডিপ্রেশন এ ভুগেছেন।হাজার হোক প্রথম প্রেম বলে কথা।
তিন মাস পর পড়াশুনার গতিতে চমকে যায় সবাই।
সবাই ভেবেছে যে ভালো করবে কিন্তু ক্লাস টপার হবে এটা কেউ ঘুনাকখুরে ও ভাবতে পারে নি। তখন কার ক্লাস টপার ছিলো আমাদের পাশের বাসার রাজিব চাচ্চু।ছোট চাচ্চু ক্লাস টপার হবে ওনি এটা ভুলে ও স্বপ্ন দেখবেন না। কিন্তু ওনার সমস্ত ধ্যান ধারনা ভুল প্রমান করে আরিফ চাচ্চু হয়ে গেলেন ক্লাস টপার। আর কি তার জন্য রাজিব চাচ্চুর সে কি কান্না।
কান্নার কারনে স্কুল থেকে নাকি স্যার রা এসে সান্ত্বনার বানী ঝেড়ে গেছেন।কিন্তু কাজ হয় নি। কয়েক দিনের মাথায় রাজিব চাচ্চু ঠিক হোন কিন্তু এক প্রতিজ্ঞা করেন যে আরিফ চাচ্চু কে কাঁদিয়ে ছাড়বেন।যার ফল স্বরূপ আমার চাচ্চু অবিবাহিত আছেন।
কেন তাই তো , আরে আর বলবেন না প্রেমে ছ্যাঁকা খেয়ে পড়াশুনাতে উন্নতি করার পর পাঁচ বছর সিঙ্গেল হয়ে কাঁটিয়ে দেয় আরিফ চাচ্চু। কিন্তু বিপত্তি ঘটে পাঁচ বছরের মাথায় যখন অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে ফাইনাল পরীক্ষা দিবে তখন। আবার প্রেমে পড়ে যায় এবার প্রেমে পরে রাজিব চাচ্চুর ছোট বোন মনি আন্টির।
মনি আন্টি ছোট থেকেই ওনার নানা বাড়ি থাকেন।
মাঝে মাঝে ঢাকা আসতেন।
ওনার নানার ইচ্ছে ছিলো মনি আন্টিকে ওনাদের বাসায় রেখে স্কুল টা অন্তত পড়াবেন। এসএসসি পরীক্ষার পর ওনি ঢাকায় চলে আসেন আর এদিকে ফেঁসে যায় আমার চাচ্চুর ছোট্ট মন টা।
সাত বছর পার হয়ে গেল ওদের প্রেমের। এতদিনে ও বিয়ে হলো না শুধু মাএ রাজিব চাচ্চুর জন্য ওনি তো প্রথমে মেনে নিতেই চায় নি।কিন্তু বোনের দিকে তাকিয়ে মেনে নিয়েছেন।কিন্তু একটি শর্ত গিফট করেছেন। মনি আন্টির পড়াশুনা কমপ্লিট হওয়ার পর ই বিয়ে। আহহ সেই শর্তের জন্যই আমার চাচ্চু ২৯ বছরে এসে ও বিয়ে করতে পারে নি। অথচ রাজিব চাচ্চু বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে বসে আছেন।
ছোট চাচ্চু এমন কোনো দিন যায় না যে ওনার এক্স কে বকা দেন না।
কারন প্রেম না হলে ছ্যাঁকা খেতো না আর না ক্লাস টপার হতো।এতো দিনে ওনি বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে থাকতেন।অথচ ওনার কপাল টাই খারাপ!

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here