স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 9,10

0
1280

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 9,10
ফাতেমা তুজ
09

আজকে আবার ফারহান স্যার পড়াতে আসছেন।
ধুর ভালো লাগে না।পুরোনো সব স্মৃতি তে এতটাই বিভোর ছিলাম যে ফারহান স্যার এর পড়া পড়ি নি।
এমনিতেই পড়ি না তার মাঝে ওনি রেগে ড্রাবল পড়া দিয়ে চলে গেলেন।এই মানুষটির কখন কি মতিভ্রম তা বোঝার উপায় নেই।মানুষ না ছাই , পারলে ওনি আমার জীবনের ইতি টেনে দিয়ে চলে যান।এতো পড়া আমার মাথা মন্ডু কিছুই বুঝি না। আর এই বেটা হনুমান নাকি আমার স্যার।
ঢাকাতে থাকতে তো ফারহান ভাইয়াই বলতাম ইনফেক্ট সিলেটে আসার পর এমনকি ওনি যখন আমাকে প্রথম দিন পড়ালেন সেই দিন ও ফারহান ভাইয়া ই বলতাম। কিন্তু তার পরের দিন এসেই কতো গুলো বুলি ঝেড়ে দিলেন। বললেন
– ফারাবি তুই এখন কোন ক্লাসে পড়ছিস বল তো।
আমি বললাম
– ক্লাস টেন ভাইয়া ।
উনি আমার দিকে না তাকিয়ে বললেন
– এখন কি তুই পিচ্ছি বাচ্চা?
আমি বললাম
– তা কেন হতে যাবো। আমার তো ষোলো বছর হতে চললো। আর এক মাস ও নেই। তাহলে বাচ্চা কেন থাকবো।
( আমি তো ওনার সামনে কথাই বলতে পারি না। আজকে কীভাবে এতো গুলো কথা বললাম কে জানে।
আসলে এই লোকটার মাথা গেছে। না হলে এমন আজগুবি প্রশ্ন কেউ করে? আজব প্রানী , যার কথার কোনো আগা মাথাই নেই! )
ফারহান ভাইয়ার কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো। ওনি আমার কাছে এসে আমার কোমর জড়িয়ে ধরে এক হাতে মাথার চুল ধরে বল
– আজকাল বেশ কথা বলসিছ। সাহস বেড়ে গেছে মনে হয়। আমাকে ভয় পাস না?
আমি তো ভয়ে শেষ। একে তো এই লোকটি আমার কোমর জড়িয়ে আছে। তার মধ্যে আবার বাজে ভাবে চুল ধরে আছেন।
যার ফলে হার্ট কাপছে আর মাথায় বেশ ব্যথা ও পাচ্ছি।
কথা বলতে পারছি ই না ।
ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে ক্ষানিকটা দূরে সরে গেলেন।আমি তো এখনো কাঁপছি। এমনিতেই এই লোকটাকে আমি জমের মতো ভয় পাই।তার মধ্যে ওনি এতো কাছে চলে এসেছিলেন।
কিছুক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো আমি মাথা নিচু করে আছি। ওনার আচারন প্রায় আমাকে বিব্রত করে। তবে পাত্তা দেই না তেমন। ফারহান ভাইয়া বললেন
– আমাকে স্যার বলবি। যখন কেউ থাকবে না আর কি।
সবার সামনে ভাইয়া ই বলবি। গট ইট?

এই বলেই ওনি তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলেন। আমি হা হয়ে আছি।কি আক্কেল, স্যার বলার কি আছে!

সেইদিনের পর থেকে কেউ আমাকে আর হয়রান করে নি।আর আকাশ ভাইয়া রা সব ভালো হয়ে গেছেন।
ওনাদের এমন পরিবর্তনে সবাই খুশি।ইনফেক্ট আকাশ ভাইয়ার আম্মু তো ফারহান ভাইয়ার হাত ধরে কেঁদেই দিলেন।
আকাশ ভাইয়া আগে যথেষ্ট মিষ্টি ভাষী নম্র ছেলে ছিলেন। অষ্টম শ্রেণীর গন্ডী পেরিয়ে নবম শ্রেণীতে উঠা মাএই বাজে ছেলেদের পাল্লায় পড়ে হয়ে উঠলেন বখাটেদের লিডার। তখন ফারহান ভাইয়া এস এস সি পরীক্ষার্থী।দিন দশেক ফারহান ভাইয়া আকাশ ভাইয়ার এমন পরিবর্তন দেখেছেন। যে ছেলাটা ফারহান ভাইয়া কে এতো সম্মান করতো তার মধ্যে এতো বাজে পরিবর্তন ফারহান ভাইয়ার বোধগম্য হয় নি। তারপর একদিন ফারহান ভাইয়া আকাশ ভাইয়া কে ডেকে সব কিছু বুঝিয়েছে।মাস দুয়েক আকাশ ভাইয়া ভালো হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ফারহান ভাইয়ার পরীক্ষার পর আবার চাটে পড়ে গেল। ফারহান ভাইয়া ও স্কুল পেরিয়ে কলেজ এ গেলেন আর আকাশ ভাইয়া কে ঠিক করার তেমন সময় সুযোগ কিছু ই পেল না।
আকাশ ভাইয়া পরবর্তীতে ফারহান ভাইয়া কে এড়িয়ে চলতো। তাই লোকমুখে আকাশ ভাইয়ার নামে বাজে কথা শুনলে ও কখনো সেভাবে চোখে পড়ে নি।ফারহান ভাইয়ার কোনো ধারনাই ছিল না আকাশ ভাইয়া এতো টা বখে গেছেন। কথায় আছে না সঙ্গ দোষে লোহা ও ভাসে।সেই অবস্থাই বিরাজ করছে এখন।

সেইদিন ফারহান ভাইয়া ওদের কে মেরে সকাল বেলা বেস্ট ডক্টর দিয়ে ট্রিটমেন্ট করিয়েছেন।দুই দিন হসপিটালে এডমিট ছিলো ওরা। তারপরে ফারহান ভাইয়া ওদের দুজোন কে অনেক বোঝায়।আর নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ না করতে পেরে ওদের ঐ ভাবে মেরেছে তার জন্য ক্ষমা ও চায়।যদি ও ফারহান ভাইয়ার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ছিলো না। তবু ও তিনি ক্ষমা চাইতে ইতস্তত বোধ করেনি।অবশেষে ফারহান ভাইয়া ওদের বোঝাতে সক্ষম হয় আর ওরা ফারহান ভাইয়ার পা ধরে ক্ষমা চায়।ফারহান ভাইয়া ওদের ক্ষমা করে দিয়ে বুকে টেনে নেয়। আকাশ ভাইয়া নিজের ভুল বুঝতে পেরে সেদিন আমার পা ধরে মাফ চেয়ে ছিলো। আকাশ ভাইয়ারা দশম শ্রেণীর গন্ডি টপকিয়ে কলেজে ভর্তি হয় নি আর তাই ফারহান ভাইয়া ওনাদের কলেজ এ ভর্তি করিয়ে দেয় আর ওনাদের পড়াশুনার সমস্ত দায়িত্ব নেয়। অবশেষে আকাশ ভাইয়ারা আগের মতো সেই নম্র ছেলে হয়ে উঠেন। এভাবেই পেরিয়ে যায় বেশ কয়েকটি মাস। ফারহান ভাইয়ার সাথে আমার প্রায় ই দেখা হয় কিন্তু কথা হয় না। এভাবেই কেটে যায় দিন আমি ও সপ্তম শ্রেনির গন্ডি পেরিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে নাম লেখাই।

এখন ফারহান ভাইয়া অনেক বেশি কঠোর হয়ে গেছেন।
যদি ও ওনি আগে থেকেই কম কথা বলতেই পছন্দ করেন কিন্তু এখন আমাকে প্রায় বকা দেন।আমি ও বড় হচ্ছি আমার মধ্যে ও পরিবর্তন আসে।কম বেশি অনেক কিছু ই বুঝতে শিখেছি ।তাই ওনার সাথে আমার তুমুল বিতর্ক বাঁধে ।কিন্তু সেটা প্রকাশ্যে নয় মনে মনে।আমার ঘাড়ে সত্যি ই দুই টা মাথা নেই যে ওনার সাথে সরাসরি ঝগড়া করবো।
তাই মনে মনে হাজারো গালি দেই প্রতিদিন। অষ্টম শ্রেণীতে উঠার পর থেকে এই ফারহান ভাইয়া আমার জীবন টারে নরক করে দিয়েছে। আমার সেই ভালো ফারহান ভাই যেন আজকাল জম। কেমন যেন তার ব্যবহার। বুঝতে পারি না একদম ই। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে গেলে ও দেখি কোথায় থেকে যেন হাজির হয়ে যায়।বন্ধুদের সঙ্গে হাসাহাসি করার সময় দেখি ওনি আমার পেছনেই দাড়িয়ে কি ঝামেলা রে বাবা!
এই আপদ টাকে মন চায় উগান্ডা তে পাঠিয়ে দেই।
কিন্তু সে সাহস যে আমার নেই।
আমি ওনার সামনে গেলেই বুকের ভেতর পানি শূন্যতা
অনুভব করি। মনে হয় সারা শরীর অষাঢ় হয়ে আছে।
কি করবো ওনি তো আমাকে কথায় কথায় ধমক দেন ।

অষ্টম শ্রেণীর অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার আগে বন্ধুরা মিলে সবাই আড্ডা দিচ্ছিলাম। ফুচকার আড্ডা ফুচকা নিয়ে বটতলায় সব বন্ধু বান্ধবীরা হাসি ঠাট্টা করছিলাম আর খাচ্ছিলাম। পাশে সিনিয়র ভাইয়ারা আর আপুরা ও ছিলো।
ওমন সময় কেউ একজন আমাকে তার দিকে ঘুড়িয়ে জোরছে একটা থাপ্পড় দিলো। আমার চোখের কোনে পানি টলমল করছিলো।এতো গুলো স্টুডেন্ট এর সামনে এভাবে অপমান!
আমার দোষ কী এতে? সবাই তো আড্ডা দিচ্ছে আমি দিলেই দোষ!
চোখের কোনে টলমলে পানি নিয়ে সোজা বাসার দিকে রওনা দিলাম।সবাই আমার যাওয়ার পানে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন।আমি বাসায় গিয়ে সোজা সাওয়ার নেওয়ার জন্য বাথরুমে ঢুকলাম।
ঝড়না ছেড়ে কতোক্ষন কাঁদলাম ওনি আমার সাথে সবসময় কেন এমন করেন।কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছি সেদিন আর দুপুরে আমার খাওয়া হলো না।
বিকেলে বারান্দাতে বসে আছি ওমন সময় বড় মা হাতে একটা ইয়া বড় শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বলল তাড়াতাড়ি রেডি হ। শপিং ব্যাগ দেখেই বোঝা যাচ্ছে বেশ বড় কোনো শপিং কমপ্লেক্স থেকে আনা।আমি বড় মা কে কিছু জিজ্ঞাসা করার আগেই বেড়িয়ে গেল।
এই বাসায় ও কেউ আমাকে ভালোবাসে না। সবাই ফারহান বলতে অজ্ঞান। সেইদিনের কথা আমাদের স্কুল থেকে শিক্ষাসফরে নেওয়া হবে সাভার নন্দন পার্কে।
ষষ্ঠ আর সপ্তম শ্রেণীর স্টুডেন্ট দের শিক্ষা সফরে নেওয়া হয় না। তাই গত দুবছরে কোনো সুযোগ ই ছিল না।এ বছর যেতে পারবো ভেবেই মহা আনন্দে বাসায় চলে আসলাম।
যেই না বাসার সবাইকে বলব শিক্ষা সফরের কথা দেখি বেটা বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়া বসে আছে।বাসার সবাই ওনাকে জামাই আদর করছেন। উপ ঢং দেখলে আর বাঁচি না। যাই হোক আমার তাতে কি? আমি আমার যাওয়ার দিকে মনোযোগ দিই।
উফ ভাবতেই কেমন ডান্স দিতে ইচ্ছে হচ্ছে।বাসার সবাইকে বলার জন্য সোজা হয়ে দাড়িয়েছি যখন ফারহান ভাইয়ার উক্তি
– কিরে ফারাবি। দরজার কাছে দাড়িয়ে আছিস
কেন?

আমি মনে মনে কয়েকটা গালি দিয়ে বললাম তাতে তোর কি।আমি যেখানে ইচ্ছে সেখানে দাড়াবো।কিন্তু তা প্রকাশ করলাম না।এর সামনে কিছু বলবই না যাহ!
উওর না দিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে লাগলাম
তখনি ফারহান ভাইয়া নিজের উক্তি ঝেড়ে দিলেন
– কাকি এবার না ফারাবির স্কুল থেকে সাভার নেওয়া হচ্ছে তাও একটা পার্কে। আর ঐ পার্কের রাইডস গুলো অনেক রিস্কি বাচ্চারা প্রায় অসুস্থ হয়ে পড়ে।

বাহ ফারহানের বাচ্চা বাহহ আমার সুখ তোর সহ্য হয় না, তাই না। সুন্দর ভাবে আমার যাওয়া কেন্সেল হয়ে গেলো। তাহলেই বলুন এই ভিন গ্রহের প্রানী আমার জীবনে কতোটা বাজিয়ে দিচ্ছে।ভাবনার ছেদ কেটে বড় মার দেওয়া শপিং ব্যাগ টা খুললাম। ও মাই গড এতো সুন্দর গ্রাউন!জাম রঙের মধ্যে হালকা ক্রিম কালারের কম্বিনেশনে অসাধারণ একটা গ্রাউন। সাথে মেসিং জুয়েলারি আর জুতো।উফফফ মনটা পুরো ভরে গেল।
দুপুরের সমস্ত ঘটনা মন থেকে ঝেড়ে ফেলে রেডি হতে চলে গেলাম।

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 10
______________________

রেডি হয়ে বসে আছি। আমি ই মনে হয় সবার আগে রেডি হয়ে আছি।উফফফ বুঝি না আমাকে সবাই কী পাগল ভাবে?
আমাকে রেডি হতে বলে সবাই পরে রেডি হচ্ছে।
অবশেষে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করার পর সবাই রেডি হয়ে বের হলেন।সবাই বেশ ফরমাল লুকে বাহ সবাই কে বেশ লাগছে তো দেখতে।কিন্তু এখনো জানি না আমি, আমরা কোথায় যাচ্ছি।কাউকে জিজ্ঞাসা করবো?না থাক কারো সাথে কথা বলবো না, সবাই ফারহান ভাইয়া কেই ভালোবাসেন।
চুপচাপ বসে রইলাম , রিফাত ভাইয়া এসে আমাকে বলল ‘ কিরে এভাবে বসে আছিস কেন?যাওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি?’

আমি কিছু বললাম না।এখন কারো সাথে কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না।দুপুরে এতো গুলো স্টুডেন্ট এর সামনে ফারহান ভাইয়া আমাকে থাপ্পর দিলো।আমি কি এমন করেছি হ্যাঁ যার জন্য থাপ্পর দেওয়া লাগলো।

অবশেষে আমরা বের হলাম।কিন্তু এখনো আমরা কোথায় যাচ্ছি আমি জানি না। ভালো লাগছে না আমার। আমাদের গাড়ি থামলো বিশাল বড় এক কমপ্লেক্স এর সামনে , আমি হা হয়ে আছি।
অসাধারণ এই কমপ্লেক্স টা , লাইটিং আরটিফিশিয়াল ফ্লাওয়ার সব কিছু চোখ ধাঁধানো সুন্দর। আমি একটা জায়গায় আসার পর ও জানি না আমরা এখানে কেন এসেছি। কিন্তু এখন আমার মনে আর কোনো অস্বস্তি নেই।
এতো সুন্দর সব কিছু অস্বস্তির কোনো প্রশ্নই নেই।
আমরা ধীরে ধীরে হেঁটে চলছি , আমি চারিদিকে চোখ বুলালাম। অসম্ভব ভালো লাগছে। ভেতরে প্রবেশ করা মাত্রই দেখলাম অনেক মানুষের ভীর।আমরা নিজ তলা থেকে লিফ্টে করে আঠারো তলাতে উঠলাম।
এই কমপ্লেক্স টা সম্পূর্ণ নতুন। মনে হচ্ছে কোনো গ্রান্ড সেলিব্রেশন চলছে।

আঠারো তলা তে উঠা মাত্র এখানে আমাদের অনেক পরিচিত দের দেখতে পেলাম। আমার মনে প্রশ্ন জাগালো যে আজকের এই পার্টি টা কার অনারে হচ্ছে।
ধুর যার অনারে হোক আমার কি তাতে আমি আমার মতো আনন্দ করবো। সবাইকে ওয়েলকাম ড্রিঙ্ক দেওয়া হলো।সবাই যে যার মতো পার্টি টা উপভোগ করছে।
আমি ও আমার মতো আনন্দ করতে লাগলাম।
একপাশে আমি কিছু ডল দেখতে পেলাম। ওয়াও কি সুন্দর ডল গুলো বিশাল আকারের ডল গুলো। আমি ডল গুলোর কাছে গেলাম। ডল গুলো কে হাত দিয়ে ছুঁয়ে দিলাম।ডল গুলো বেশ তুলতুলে , আমি বাচ্চা দের মতো খেলতে লাগলাম। আহা কি মজা।
হঠাৎ কেউ পেছন থেকে বলল ‘ পিচ্ছি ই রয়ে গেলি,
বড় আর হলি না।’

চির চেনা সেই ভয়েস চিনতে আমার একটু ও অসুবিধা হলো না।হুম ফারহান ভাইয়াই , আমার তো ইচ্ছে করছে এই লোক টাকে ধরে কাঁচা চিবিয়ে খাই। অসহ্য লাগছে!
কিন্তু ওনার সামনে আমি যে ভিজে বেড়াল। কোনো রকম পেছন ফেরলাম কিন্তু ওনার দিকে তাকানোর সাহস আমার নেই। মাথা নিচু করে আছি হঠাৎ ফারহান ভাইয়া টান মেরে সাইডে নিয়ে আসলো। আমি ভয়ে কাঁপছি এই লোকটা কি আমাকে আবার থাপ্পর মারবে?
ফারহান ভাইয়া আমার কাঁধে হাত রেখে বললেন
‘খুব শখ না তোর নন্দন এ যাওয়ার? আজকে তোকে নন্দন এর বাপ ঘুরিয়ে আনবো।’

আমি কাঁচুমাচু হয়ে বললাম
– মানে?
ফারহান ভাইয়া বলল
– মানে টা বুঝাবো একটু পর ই। জাস্ট ওয়েট এন সি।

আমাকে হাত ধরে বাইরে নিয়ে আসলেন। তারপর ই ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়া কে ডাকলেন। রিফাত ভাইয়া এসে বলল
– হুম ফারহান বল।
– রিফাত ফারাবির তো খুব শখ ছিলো নন্দন এ যাওয়ার ওর শখ টা মিটিয়ে দিলে কেমন হয়।
– একদম ঠিক বলেছিস।আজকে ফারাবির নন্দন এ যাওয়ার সাধ মিটিয়ে দিবো।

আমি বললাম
– মানে টা কি!
রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে চোখ মেরে বলল
– গেলেই বুঝবি।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ওকে যা সবাইকে বলে আয়।
রিফাত ভাইয়া বলল
– ওকে ব্রো। যাবো আর আসবো।

রিফাত ভাইয়া চললো আর আমি রিফাত ভাইয়ার যাওয়ার পানে চেয়ে আছি। কি হচ্ছে এসব আমার তো কিছু ই মাথায় ঢুকছে না। এরা কি আমার হাত পা ভাঙার প্লেন করছেন নাকি? ভেবেই ঢোক গিললাম।
আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ো।

বেশ কিছুক্ষন পর রিফাত ভাইয়া আসলো। বলল
‘ ফারহান ডান।’

তারপর ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া হাই ফাইপ দিল। মাঝখানে আমি ই হলাম নীরব দর্শক। চুপচাপ দেখেই যাচ্ছি , কি হচ্ছে তা বোঝার উপক্রম নেই।
ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়া কে বলল ‘সবাই এসে পড়লে আমাকে কল করে জানাস। ‘

এই বলে পকেটে হাত দিয়ে কোথায় একটা চলে গেল।
বেটা বজ্জাত হনুমান কি প্লেন কষতে গেল কে জানে।
আর এরা তো কেউ আমাকে কিছু বলছে না। আর আমাদের সাথে আর কে কে যাবে। আমার মাথা হ্যাং হয়ে গেল। ধুর আর কিছু বলবই না।

পাঁচ মিনিট পর দেখলাম মনিকা আপু , রিমা আপু আর সুমি আপু আসছে।এই দিকে আমার ভাই টা তো মনিকা আপুর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়েই আছে। আমি না চাইতে ও হেসে দিলাম। আমার হাসির শব্দে রিফাত ভাইয়ার ধ্যান কাটলো। মনিকা আপু , রিমা আপু , আর সুমি আপু হলো তিন বান্ধবী প্লাস কাজিন। ওরা এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ারে পড়ে। অর্থাৎ রিফাত ভাইয়া আর ফারহান ভাইয়ার দুই ব্যাচ জুনিয়র।রিমা আপু আর সুমি আপু ও যথাক্রমে রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়ার প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছে ।

[এদের সবার প্রেম হয়েছিল ঝগড়া করতে করতে।
পুরো সিনেমা , প্রথমে ঝগড়া পড়ে প্রেম , হাহা। তখন রিফাত ভাইয়ারা দশম শ্রেণীর পরীক্ষার্থী আর মনিকা আপুরা নবম শ্রেণীতে এডমিশন নিয়েছে মাত্র। মনিকা আপুরা স্কুলে নতুন ছিলো, তাই কিছুই জানতে না , ভাইয়া রা তখন আড্ডা দিচ্ছিলো কিছু দিন পর ই তো পরীক্ষা। তাই তিন জন স্কুল ক্যাম্পাসে আড্ডা দিচ্ছিলো আর ফারহান ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলো।তখনই মনিকা আপুদের স্কুলে এন্ট্রি হলো। আর যেহেতু মনিকা আপুরা অনলাইনে এডমিশন নিয়েছে তাই ওরা ওদের ক্লাস রুম কোনটা জানতো না। আর রিফাত ভাইয়াদের দেখে জিজ্ঞাসা করেছে যে
– আমরা নতুন এডমিশন নিয়েছি ,একটু নবম শ্রেণীর ক্লাস রুম কোনটা বলে দিবেন।

ওনারা ও ভদ্রলোকের মতো বলে দিলেন। মনিকা আপুরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চলে গেলেন। তার কিছুক্ষণ পর ই মনিকা আপুরা এসে ওদের বালি ছুড়ে মারল। কারন ওরা মিথ্যে বলেছে যার কারনে সিনিয়র দের ক্লাসে ঢুকে পড়ে ওদের কাছে ওরা লজ্জা পেয়েছে।
রিফাত ভাইয়ারা ও কম না, এদের ঝগড়া দেখে কে।
ফারহান ভাইয়া হঠাৎ এসে পুরো হুমড়ি খেয়ে পড়ে।
তারপর আগে ওদের ঝগড়া থামিয়ে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে। তখন মনিকা আপু রা সব বলে ফারহান ভাইয়া ওদের তিন জনকে মনিকা আপুদের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে। তারপর আর কি ওরা ক্ষমা চায় আর ফারহান ভাইয়া ওদের ক্লাস দেখিয়ে দেয়।এর পরপর ই একে বারে তিন জনের সাথে তিন জনের ভাব জমে যায়।
শুরু হয় এদের প্রেম কাহিনী ।)

__________________________

মনিকা আপু এসেই রিফাত ভাইয়ার পেটে গুঁতো মেরে বলে।
‘লজ্জা নেই নাকি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন।’
রিফাত ভাইয়া বলল
– তো তাকাবো না নাকি?

মনিকা আপু আবার রিফাত ভাইয়া কে হাত দিয়ে গুঁতো মারে। আমার সাথে সবার কুশল বিনিময় হয়।
তারপরই রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে ফোন দিয়ে আসতে বলে। ফারহান ভাইয়া রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া কে নিয়ে আসেন।ওমা এরা তো দেখি সব কাপল হয়ে গেল। তাহলে আমি ই কাবাব মে হাড্ডিয়া।
পরক্ষণেই ভাবলাম ধুর আমি একা কেন হতে যাবো
এই হনুমান ও তো কাবাব মে হাড্ডিয়া। ফারহান ভাইয়ারা এসে মনিকা আপুদের সাথে কুশল বিনিময় করলো।সবাই কিছুক্ষণ গল্প করলো তারপর ই ফারহান ভাইয়া ঘড়ি দেখে বলল ইটস 7 ও ক্লক তো যাওয়া যাক?
আমি বিরক্তি নিয়ে ওনার দিকে তাকালাম। ওমা আমি এতক্ষণ খেয়াল ই করি নি ফারহান ভাইয়া কে তো পুরো জোস লাগছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম কিছু মেয়েরা চোখ দিয়ে ওনাকে গিলে খাচ্ছে।আমি মনে মনে বললাম ‘ আরে চোখ দিয়ে না গিলে এটাকে নিয়ে যা না। তাহলে আমার প্রান টা জুরোয়।এক মুহূর্ত শান্তি নেই।’

কিন্তু সব থেকে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে ফারহান ভাইয়া জাম কালারের সুট পড়েছে। এমা আমার সাথে মেচ হয়ে গেল যে! আমি কি এখন আমার জামা কাপড়ের বিষয়ে ও শান্তি পাবো না। উফফফ এই লোকটাকে তো পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া উচিত।ফারহান ভাইয়া আমাকে বলল
– কিরে যাওয়ার ইচ্ছে নেই নাকি?কি আপাদমস্তক চিন্তা করছিস?এখন কি তুলে নিয়ে যাবো তোকে?

আমি বললাম
– না আমি একাই যেতে পারবো।কিন্তু

আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই ফারহান ভাইয়া বলল
– এতো ভেবে তোর কাজ নেই। তোকে নন্দনের সাধ মিটিয়ে দিবো আজকে।
রিফাত ভাইয়া বলল
– তো ফারহান যাওয়া যাক।
– হুম চল।
রিফাত ভাইয়া আবার বলল
– ফারহান আজকে তুই ই ফারাবি কে নন্দনের সাধ মিটিয়ে দিস। আমি গেলে কেঁদেই দিবে।

ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে বলল
– অবশ্যই।আমার জন্য নাকি নন্দন যাওয়া হলো না বন্ধুদের কাছে বলে বেড়াচ্ছে।তো আমার ও তো একটা দায়িত্ব বোধ আছে তাই না।

আমি শুকনো ঢোক গিললাম। তার মানে? আমি যখন পলি দের বলছিলাম। তখন ফারহান ভাইয়া সব শুনে নিয়েছেন। হায় হায় আমি যে ওনাকে বজ্জাত হনুমান ও বলেছি। এখন তো আমার কান্না পাচ্ছে কি হবে এখন ফারহান ভাইয়া কি আমাকে ছাদ থেকে ফেলে দিবে নাকি?আমার হাত পা ভেঙে যাবে তো!

আমার হাত ধরে ফারহান ভাইয়া নিচে নামিয়ে নিয়ে আসলো।ফারহান ভাইয়া কি সত্যি আমাকে ফেলে দিবে। আল্লাহ্ গো আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ো।আমরা সবাই নিচে নেমে আসলাম। তারপর সবাই কোথাও একটা যাওয়ার জন্য রওনা হলাম। আমি আল্লাহ্ কে ডেকে চলছি, কি যে হয় কে জানে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here