? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 11,12
ফাতেমা তুজ
11
গাড়ি থেকে নামার আগে ফারহান ভাইয়া আমার চোখ বেধে দিলেন। রিফাত ভাইয়া বলল ফারহান ওকে নিয়ে তুই কমপ্লেক্স এ আগে ফিরে যাস আমরা একটু পরে যাবো। ফারহান ভাইয়া বলল
– ওকে।আজকে ফারাবির নন্দন এর সাধ মিটেই যাবে।
সবাই অট্টহাসি তে মেতে উঠলো তারপর রিফাত ভাইয়া বলল
– আচ্ছা দেখা যাক ফারাবির কি হয়।
আমি ভয়ে শেষ রিফাত ভাইয়া কে বললাম
– ভাইয়া আমি কিন্তু
বলেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কেঁদে দিলাম। সবাই আবার হাসা শুরু করলো। তারপর জামান ভাইয়া বলল
– ফারাবি ভয় পেয়ো না। যার সাথে আছো সে তোমাকে মেরে ফেললে ও অন্য কাউকে মারতে দিবে না।
আমি আগা মাথা কিছু ই বুজলাম না। এরা আমাকে কিছু করার আগে আমি ই ভয়ে মরে যাবো। রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে বলল
– আমরা তো শর্টস সিনেমা দেখব তাই না ফারহান?
– হুম তবু ও সব মিলিয়ে দুই ঘন্টা লেগে যাবে তদের।
– তার মানে এখন 7’15 হলে 9,30 আগে কমপ্লেক্স এ ব্যাক করতে পারবো না ।
ফারহান ভাইয়া বলল
– হুম 9’30 আগে সম্ভব না। আমরা 9’00 তেই চলে যাবো তোরা পরে আছিস সমস্যা নেই তো।
রিফাত ভাইয়া খুশি মুখে বলল
– ওকে। আচ্ছা ফারাবি কে দেখে রাখিস। আর খুব ভয় পেলে কিন্তু ও বাচ্চা দের মতো কাঁদে। যেমন টা একটু আগে করলো।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বলল
– এখন এই বাচ্চা কেই আমায় সামলাতে হবে ,যা তোরা নো প্রবলেম।
রিফাত ভাইয়ারা গাড়ি থেকে নেমে গেল। তারপর ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে নিয়ে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসালো। অর্থাৎ ফারহান ভাইয়ার পাশে। কারন ওনি নিজেই ড্রাইভ করতে পছন্দ করেন। তাই কখনোই সাথে ড্রাইভার আনেন না। আমার চোখ বাঁধা কোথায় যাচ্ছি আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার আর কি
আমাকে তো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করার জন্য আনা হয়েছে। কিন্তু এই হনুমান টা করবে টা কি?
গাড়ি কোথাও একটা এসে থেমে গেল। ওনি নেমে তারপর আমার হাত ধরে নামিয়ে নিয়ে আসলেন।
তারপর আমার হাত ধরেই কোথাও একটা নিয়ে যেতে লাগলেন।কিছুক্ষন পর আমার চোখের বাঁধন খুলে দিলেন।
আমি হা হয়ে আছি। মুখে বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। ফারহান ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন
– কেমন লাগছে ফারাবি।নন্দন যাওয়ার শখ ছিলো না।
তাই তোকে যমুনা তে নিয়ে আসলাম।দেখি তোর কতো সাহস যার জন্য তুই একা নন্দন যেতে চেয়েছিস।তা ও আবার এতো গুলো ছেলের মাঝে। নিজেকে সামলাতে পারিস তুই?আচ্ছা দেখি তুই কতোটা সাহসী!
আমি নির্বাক বাংলাদেশের সব থেকে ভয়ঙ্কর এই পার্ক।
বিভিন্ন রিভিউ দেখেই আমি কেঁদে দিয়েছি। আর যদি আমাকে কোনো রাইড এ উঠতে হয় আমি কি করবো?
নিজের মনে নিজেই ঢোক গিললাম।আমার পা অষাঢ় হয়ে আছে। পা যেন কেউ খিচে ধরেছে।আমি বাকশক্তি হীন হয়ে পড়েছি। ফারহান ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বলল
– কি যেন বলেছিস।আমি বজ্জাত হনুমান।আচ্ছা দেখি আজকে তুই বাঁচার জন্য এই বজ্জাত হনুমানের কাছে আসিছ নাকি।
এই বলেই ডেবিল মার্কা হাসি দিলেন।আমি ওনার দিকে ছলছল চোখে চেয়ে আছি।অনেক বলতে ইচ্ছে হচ্ছে আমাকে মাফ করুন আমি আর কখনো এমনটা করবো না।কিন্তু ভেতর থেকে যেন একটি শব্দ ও আসছে না।
ফারহান ভাইয়া আমার কোমর ছেড়ে হাত ধরে কাউন্টারে নিয়ে গেলেন।
কাউন্টারে ও আমার হাত এমন ভাবে ধরে রেখেছেন যেন ছেড়ে দিলেই আমি হারিয়ে যাবো।
কাউন্টারের লোক টা ফারহান ভাইয়া কে দেখেই উঠে দাঁড়ালো।দাঁড়াবে না কেন। ফারহান ভাইয়ার আব্বু তো বিশাল বিজনেসম্যান।কতো নাম তার আর ফারহান ভাইয়া নিজে ও বেশ কিছু সাহায্য সংগঠনে আছেন।
যার ফলে তাকে অনেকেই চেনেন। ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরেই লোকটার সাথে কুশল বিনিময় করলেন। তারপর বলল
– ইটস ওকে। আপনি এখানকার একজন সম্মানিত স্টাফ।আমাকে দাঁড়িয়ে কুশল বিনিময় করতে হবে না।
লোকটা হেসে বলল
– থ্যাংকস স্যার।স্যার চা কফি নাকি অন্য কিছু?
ফারহান ভাইয়া হেসে বলল
– আরে না এখন কিছু লাগবে না। অন্য একদিন এসে আড্ডা দিবো। জাস্ট একটা হেল্প লাগবে।
লোকটা বলল
– আচ্ছা স্যার আসবেন একদিন।আর বলুন এখন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।
ফারহান ভাইয়া পাঁচ টা রাইডস এর নাম বলল
( Tower challenger , 360 suffle, flying disco, tremendous challenger, and lastly Roller coaster )
Roller coaster এর নাম শুনেই আমার মাথা ঘুরে গেল।বিশ্বের সব থেকে ভয়ানক রাইডস এর একটি হচ্ছে এটি।আজকে আমি শেষ!
ফারহান ভাইয়া লোক টাকে বলল
– আমরা যখন এই রাইডস এ উঠবো তখন আদারস কাউ কে উঠাবেন না। আমি প্রতিটা সিট বুক করলাম।
আমি মনে মনে বললাম
– আজব তো ,শুধু শুধু টাকা নষ্ট করার কি দরকার।
আসলে ই বজ্জাত হনুমান।
লোকটা বলল
– ওকে স্যার ।
ফারহান ভাইয়া রাইডস গুলোর বিল পে করে দিলো।
তারপর আমাকে নিয়ে সরে এলো , এখনো শক্ত করে আমার হাত ধরে আছে। মনে হচ্ছে হাত টা আমার ছিলেই গেছে।
আমি তো উঠবো ই না ফারহান ভাইয়া আমাকে জোর করে কোনো রকমে উঠিয়েছেন কারন আমার নাকি অনেক সাহস।তাই তো শুধু ফ্রেন্ডদের সাথে নন্দন যেতে চেয়েছি।তাই এটা আমার সাহসের পরীক্ষা!
অবশ্য প্রথম চারটে রাইডস এ ফারহান ভাইয়া আমাকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।বেশ মজা লেগেছে আমার।
যদি ও একটু একটু ভয় পেয়ে ছিলাম তবু ও সেই লেগেছে।কিন্তু সর্বশেষ রাইডস অথার্ৎ roller coaster এর কথা ভাবতেই আমার কান্না পেল।আমি তো এবার উঠার আগেই হাফ কেঁদে দিয়েছি। ফারহান ভাইয়া আমাকে টেনে উঠালো , আমার কান্না দেখে ফারহান ভাইয়া বলল
– ফারাবি থাপ্পর দিবো কিন্তু।
আমি থাপ্পরের কথা শুনে চুপসে গেলাম। ফারহান ভাইয়া কাপলদের জন্য রাখা সিট এ আমাকে নিয়ে বসলেন।কিছুটা স্বস্তি পেলাম কিন্তু ভয় তো যাচ্ছেই না ।
যখন রাইড টা শুরু হলো তখন তো কিছুই হলো না কিন্তু যখন উপর থেকে নিচে আর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরছিলো তখন হলো বিপত্তি। আমি জোড়ে কেঁদে দিলাম।কিন্তু ফারহান ভাইয়া এবার আমাকে ধরলো না।
কারন ফারহান ভাইয়া উঠার আগেই বলেছে আমার সাহস নাকি বেশি হয়েছে। তো ওনি এবার আমাকে সামলাবে না। আমি নিজেকে সামলাতে না পেরে ফারহান ভাইয়া কে দু হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম। প্রচন্ড ভয় লাগছে আমার কান্নার বেগ যেন বেড়েই চলেছে।
আমি ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে কেঁদেই চলেছি।
ফারহান ভাইয়া এবার আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।আষ্টে পিষ্ঠে জড়িয়ে ধরায় আমার শরীরে শিহরন জাগল।কিন্তু এই মুহূর্তে আমার ভয় বেশি হচ্ছে।
আমার কান্না থামার নাম ই নিচ্ছে না।
শেষ মেষ রাইডস এর টাইম শেষ হলো।আমি ফারহান ভাইয়াকে জড়িয়ে ই ধরে আছি। আশে পাশে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে কিন্তু এতে যেন আমার কিছুই যায় আসে না। আমি ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে কেঁদে ই যাচ্ছি। ফারহান ভাইয়া আমাকে নিয়ে এসে একটা বেঞ্চে বসালেন। আমি এখনো ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে আছি তা ও চোখ বন্ধ করে। আমি যে প্রচন্ড ভয় পেয়েছি ফারহান ভাইয়া বুঝতেই পারছেন।উনি হঠাৎ হাসা শুরু করলেন। আমি তবু ও ওনাকে ছাড়ছিই না।
ফারহান ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– বলেছিলাম না।নিজেকে সামলাতে আমাকে লাগবেই তোর।আর তুই একা নন্দন যেতে চেয়েছিস।তখন কি অন্য ছেলেদের এভাবে জড়িয়ে ধরতি?অন্য ছেলেরা তোর গায়ের সাথে গা ঘেঁষে থাকতো?
এবার আমার শরীরের প্রতি টা নিউরন জানান দিলো আমি ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে আছি।আমার কান্না থেমে গেলে ও হিচকি থামলো না।কিছুটা লজ্জা পেয়ে ফারহান ভাইয়া কে ছেড়ে দিলাম ।কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমাকে আবার জড়িয়ে ধরলেন। তারপর বললেন
– খুব ভয় পেয়েছিস না?
আমার হিচকি তো থামার নাম ই নেই প্রতি উত্তরে মাথা দোলালাম।
ফারহান ভাইয়া আমাকে আবার কাছে টেনে নিয়ে
আলতো ভাবে চোখের পানি মুছে দিলেন ।
তারপর কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে বলল
– তোকে সব কিছু খুলে বুঝাতে হয় কেন বল তো?
তুই কি এখনো পিচ্ছি, হয়তো তুই এখনো পিচ্ছি।
কিন্তু এই জগত টা কে বুঝ তে হবে তো তাই না।
তুই একা নন্দন গেলে ছেলেরা তোকে ফ্লাট করার সুযোগ পেতো।এই রকম পরিস্থিতিতে সাহায্যের নাম করে শরীরে ছুঁয়ে দিতো।এটা কি তুই চাস?
আমি কিছু টা লজ্জা পেলাম।আমি আসলেই একটু বেশি ভীতু।ফারহান ভাইয়া ছিলো বলে আজকে প্রথম রাইড গুলো তে উপভোগ করেছি।কিন্তু শেষে ফারহান ভাইয়া ধরে রাখে নি বলে কতোটা ভয় পেয়েছি যার ফলে আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরার পর ও চোখ খুলতে পারি নি।লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলাম।ফারহান ভাইয়া আমাকে বলল’তো এবার বুঝেছিস কেন বকা দেই তোকে? তুই কেন যে পিচ্ছি হলি।’
এই বলেই আমার দিকে তাকালো তারপর বলল
– ফারাবি তোকে ভয় দেখানোর জন্য সরি।এই যে কান ধরছি।
আমি দেখলাম ওনি সত্যি ই কান ধরে আছেন।এবার আমি জোড়ে ই হেসে দিলাম। ফারহান ভাইয়া আমার দিকে নেশারত চোখ নিয়ে বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলেন।তারপর কিছু একটা ভেবে চোখ নামিয়ে নিলেন।ফারহান ভাইয়া আমাকে হাত ধরে বেঞ্চ থেকে উঠালেন তারপর বললেন
– আইসক্রিম খাবি?
আমি আইসক্রিমের নাম শুনেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে বললাম
– হুম খাবো। তবে অবশ্যই আমার ফেবরেট লেমন ফ্লেবার।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বলল
– আচ্ছা তাই হবে।
আমি ও তোর ফ্রেবরেট লেমন ফ্লেবার ই খাবো।
তারপর দুজোন ই আইসক্রিম সেন্টার থেকে লেমন ফ্লেবার নিলাম।ফারহান ভাইয়া আইসক্রিম খুলেই আমার মুখের সামনে নিলেন। আমি বললাম
– আমার ও তো আছে ।
ফারহান ভাইয়া বলল
– উঁহু। তোকে বলেছি না নিতে, তো নিবি বুঝেছিস। তোকে ভয় দেখানোর জন্য গিফ্ট।
আমি ফারহান ভাইয়ার আইসক্রিম থেকে একটা বাইট নিলাম। উফফফ কি ভালো তা বলার বাইরে।ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসলেন তারপর বলল
– কেমন খেতে?
আমি বললাম ‘অসাধারণ।’
ফারহান ভাইয়া বলল
– আচ্ছা তো খাওয়া যাক।
আমি বললাম
– হুম।
তারপর আমার আইসক্রিম টা খুলে ফারহান ভাইয়া কে বললাম নিন।
ফারহান ভাইয়া বলল
– আমার তো আছে।
আমি বললাম ‘আমার ও ছিল। কিন্তু আপনি আমাকে খাইয়েছেন।আমার ও তো উচিত আপনাকে খাওয়ানো।’
ফারহান ভাইয়া ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি এনে বললেন
– আগে তুই একটা বাইট দে। তারপর আমি দেব।
আমি বললাম
– আচ্ছা ঠিক আছে।
পরক্ষণেই একটা বাইট দিলাম ।
উফফফ অসাধারণ খেতে। তারপর ফারহান কে বললাম ‘এই যে নিন এবার’
ফারহান ভাইয়া একটা বাইট নিয়ে বলল
– হুম এবার পারফেক্ট আছে।এখন 100% টেস্টি হয়েছে।
ওনার এ কথার মানে আমি বুঝলাম না। আমার বুঝে ও কোনো কাজ নেই।আমি আমার মতো আইসক্রিম খেতে লাগলাম। আইসক্রিম খাওয়া শেষ এ কমপ্লেক্স এর উদ্দেশ্যে রওনা হবো তখন ফারহান ভাইয়া বলল
‘ওয়েট ‘
তারপর কিছু একটা ভেবে বলল ‘না তুই আমার সাথেই আয়। তোকে একা রেখে যেতে চাই না।’
আবার আমার হাত ধরে একটা শপে ঢুকলেন।তারপর শপ থেকে এক বক্স কিটক্যাট কিনে নিয়ে আমাকে বললেন
– হ্যাপি?
আমার চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠলো উফফফ আমার দূর্বলতা।আমি চকলেট বক্স টা নিয়ে বললাম
– খুববব বেশি হ্যাপি।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে আমার গাল টেনে বললেন
– পিচ্ছি টা।
আমি হেসে বললাম
– উমম। মোটে ও না।
ফারহান ভাইয়া আমার ওড়না টা ভালো করে জড়িয়ে দিয়ে বললেন
– তা তো বুঝতেই পারছি।ওড়না সামলাতে ও আমাকে লাগছে।
আমি কিছুটা লজ্জা পেলাম। ফারহান ভাইয়া আমাকে গাড়িতে নিয়ে বসালেন। তারপর গাড়ি চলা শুরু করলো আপন গতিতে।
চলবে
ফাতেমা তুজ
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 12
________________________
কমপ্লেক্সের সামনে ফারহান ভাইয়া গাড়ি থামলেন।
তারপর আমার হাত ধরে নামিয়ে রিফাত ভাইয়া কে কল দিলেন
– রিফাত কতোদূর আছিস?
রিফাত ভাইয়া
-………….
ফারহান ভাইয়া বলল
– ওও আচ্ছা। তাহলে তো কাছেই আমরা কমপ্লেক্স এর বাইরেই অপেক্ষা করছি।একসাথেই কমপ্লেক্স এ যাবো।
আয় তোরা
রিফাত ভাইয়ার কথা শুনতে না পারলে ও ফারহান ভাইয়ার কথায় বুঝতে পেরেছি রিফাত ভাইয়ারা খুব কাছেই আছে।তাই আমাদের এখানে দাড়িয়ে থাকতে হবে।
পাঁচ মিনিটের মাথায় রিফাত ভাইয়ারা এলো রিফাত ভাইয়া এসেই আমার মাথায় গাট্টা মেরে বলল
– কিরে ফারাবি তুই দেখি একদম ঠিক আছিস।হ্যাঁ রে ফারহান,ফারাবি এতো সাহসী হলো কীভাবে?
আমার এখন লজ্জায় মাটিতে মিসে যেতে ইচ্ছে করছে।
যদি ফারহান ভাইয়া সব বলে দেয় তার ওপর আমি ওনাকে জড়িয়ে ধরেছিলাম।
ছি ছি ই কি লজ্জা! আমি চুপচাপ দাড়িয়ে আছি।
কি বলব আমি, তখন ই রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া একসাথে বলে উঠলো
– ফারহান থাকলে ফারাবিকে ভয় পেতে হবে নাকি।
ফারহান ই বাকি সবাইকে ভয় পাইয়ে দিবে! আর তাছাড়া আমাদের ফারাবি বেশ সাহসী।ও কিছুতেই ভয় পায় নি।তাই না ফারাবি?
আমি কি বলব সত্যি বললে মান সম্মানের ফালুদা হয়ে যাবে।
তাই আমি শুধু হালকা মাথা নাড়িয়ে বললাম
– হুম।
তারপরই দেখলাম ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিলেন। এর অর্থ আমি যে কতো সাহসী তা ফারহান ভাইয়া খুব ভালো করেই জানে। যা বাকিরা জানে না।
তারপর সবাই কথা বলতে বলতে কমপ্লেক্স এর ভেতরে ঢুকলাম। লিফ্ট দিয়ে এই কমপ্লেক্স এর সর্বোচ্চ তলা, আঠারো তলা তে উঠলাম।
কিন্তু এই পার্টি টা কিসের জন্য তা এখনো আমি জানি
না। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকলাম তারপর ই সবাই কে ডিনার এর জন্য ডাকা হলো এবং বলা হলো ডিনারের পর সব কিছু ঘোষনা করা হবে। কিন্তু কিসের ঘোষনা আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।সব কিছুই আমার ধরা ছোঁয়ার বাইরে হচ্ছে। আজকের সব কিছু ই এলো মেলো ধ্যাত!
ডিনারের জন্য রুফটপে ( ছাদে ) নেওয়া হলো।আমি হা হয়ে আছি, আমি অনেক গুলো রুফটপ রেস্টুরেন্টে। কিন্তু এই রুফটপ রেস্টুরেন্ট টা সম্পূর্ণ আলাদা।
সব আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে এতে ,সাথে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ও কিছু কম নেই।
ডেকোরেশন টা অসম্ভব সুন্দর। ঝড় বৃষ্টি রোদে যাতে রেস্টুরেন্টে আশা প্লাবিক এর কারোই কোনো সমস্যা না হয় তার জন্য রয়েছে আরটিফিশিয়াল ছাদ।যখন তখন খুলে দেওয়া হয় আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়। অথার্ৎ পবিত্র কাবা শরিফ এ যেমন আরটিফিশিয়াল ছাদ দেওয়া আছে যাতে ঝড় বৃষ্টি রোদ তাদের কাবু
করতে না পারে খানিকটা তেমনি। আধুনিক ব্যবস্থার পাশাপাশি রয়েছে পৃথিবীর সুন্দর সুন্দর ফুলের মেলা সাথে বিরল প্রজাতির গাছ। রাতের লাইটিং এ অসাধারণ লাগছে সব কিছু। আর রুফটপ থেকে পুরো শহরকে দেখা যাচ্ছে। কতো সুন্দর সমস্ত কিছু যা ধারনার বাইরে।
বড় মা আর আম্মু আমাকে ডিনারের জন্য ডাকলেন।
তখনি মনিকা আপু এসে বললো
– আন্টি ফারাবি আমাদের সাথে ডিনার করে নিবে।
চিন্তা করো না।
বড় আম্মু আর আম্মু ঠিক আছে বলে চলে গেলেন।
মনিকা আপু আমার হাত ধরে বললো
– ফারাবি আমরা সবাই এক সাথে আড্ডা দিবো আর ডিনার করবো চলো।
আমি বললাম
– আচ্ছা ঠিক আছে,চলো।
ডিনারের জন্য টেবিলে বসলাম। সবাই আছে এখানে, শুধু ফারহান ভাইয়া নেই। আমার কি তাতে আমি আমার মতো বসে রইলাম।
হঠাৎ ফারহান ভাইয়ার আগমন ঘটল ফারহান ভাইয়া আমাকে একটি প্লেট দিয়ে বললেন
– নে তোর ডিনার।
আমি অবাক হয়ে আছি।কারন বাকি সবাই তো অন্য কিছু খাচ্ছে তাহলে আমার জন্য অন্য কিছু কেন?
উনি আমার মুখ দেখে বুঝে গেলেন যে আমি কি ভাবছি।তখনি বললেন ‘এতো ভাব লিলাসহীন হওয়া লাগবে না।তোর মাসরুমে এলার্জি আর আমার ও
আর আজকের বেশ কয়েকটি আইটেমে মাসরুম
আছে।তাই রিস্ক নিলাম না। যার জন্য এই খাবার গুলো র ব্যবস্থা করতে গিয়েছালাম।
আমি বললাম
– ওও হ্যাঁ তাই তো।
আসলে আমার মাসরুম খেলে সবসময় প্রবলেম হয়
না। কিন্তু মাঝে মাঝে হয়ে যায়।
ফারহান ভাইয়ার খাবার আর আমার খাবার টা
সেম। শুধু ওনি ম্যাস পটেটো নেন নি।এটা খেলে নাকি ওনি মোটু হয়ে যাবেন।আর আমার ম্যাস পটেটো বেশ ভালো লাগে। আমি মোটু হলে হবো নো প্রবলেম।তবে আমার ফেবরেট ফুড তো ছাড়ব না।
প্লেট টা ওপেন করতেই আমি চমকে গেলাম। কারন এখানে সব আমার ফেবরেট ফুড।আহা সাসলিক , বুটি কাবাব, সরমা , ফিস ফ্রাই , বিফ কালা ভুনা আর বাটার নানের সাথে কিছু স্পেশাল সস। সাথে আছে জুস , বাদামের কাপ কেক, আইসক্রিম তাও লেমন ফ্লেবার আর সাহি টুকরা।
আহা সব আমার ফেবরেট, আমি আয়েস করে নিয়ে খেতে লাগলাম। ফারহান ভাইয়া আমার পাশে বসে আছে আমার যেন তাতে কোন ধ্যান ই নেই।
আমাদের খাওয়া শেষ হতে হতে দশটা বিশ বেজে গেল।এখন আমরা রুফটপ থেকে নেমে সেন্টারে চলে গেলাম।কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়ার আব্বুর সাথে আর ও কিছু বিজনেসম্যান কে দেখতে পেলাম। তারা তাদের বক্তব্য রাখলেন। যার ফলে আমি সব বুঝতে পারলাম।
এই কমপ্লেক্স টার গ্রান্ড ওপেনিং ছিলো আজ।
ফারহান ভাইয়ার বাবা 50% এর ওনার।আর পাঁচ টা কোম্পানি 10% করে শেয়ারে আছেন।এই কমপ্লেক্স টা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সনামধন্য দিজাইনার দের দিয়ে করা।
বাহহ বেশ ভালো উদ্যোগ ছিলো এটা।এতে আমাদের দেশের মানুষ বিদেশী সাধ নিতে পারবেন।
পার্টি শেষের দিকে তখনি আম্মু এসে বলল
– দেখেছিস ফারহানের বেশ পছন্দ আছে কিন্তু।
আমি সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বললাম
– কোন ব্যাপারে?
আম্মু বলল
– এই যে আমাদের ড্রেস গুলো দিয়েছে সব ই তো অনেক সুন্দর।
আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম। তার মানে এই হনুমানের দেওয়া ড্রেস পড়েছি আমরা। তাই তো বলি এতো মিলিয়ে সবার জামা কাপড় কেন।
তবে বলতে হবে বজ্জাতের চয়েজ অনেক ভালো।
একটু পরে ফারহান ভাইয়ার আম্মু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– মাশআল্লাহ আমাদের ফারাবি কে তো রাজকুমারীর মতো লাগছে।
আমি বললাম
– আন্টি তোমাকে আমার থেকে ও অনেক বেশি সুন্দর লাগছে ।
আন্টি আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন। তারপর বললেন
– লক্ষি মেয়ে।
আন্টি আমাকে অনেক ভালোবাসে সেই ছোট থেকেই।
নিজের মেয়ের থেকে কম কিছু নই ওনার কাছে ।
আন্টি কে ও আমার বেশ ভালো লাগে।তাই তো আমাদের মাঝে বেশ ভাব।
অবশেষে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটল।আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম
_______________________
তখনি ফারহান ভাইয়ার ডাকে আমার ঘুম ভাঙ্গলো
আমি ঘুমু ঘুমু চোখে বললাম
– আমি যাবো না কোথাও আর। নন্দনে যাওয়ার কথা আর মুখে ও আনব না। প্লিজ ফারহান ভাইয়া আমাকে ফেলে দিবেন না।
আমার এমন কথায় ফারহান ভাইয়া ভরকে গেলেন।
কিসের মধ্যে আমি কি বলছি।ফারহান ভাইয়া আমার রুমে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছেন।
তারপর আমার মুখে এক গ্লাস পানি ছুড়ে দিলেন ।
আমি ধুরমুরিয়ে উঠলাম , তারপর দেখতে পেলাম ফারহান ভাইয়া দরজার মাঝে পিঠ থেকিয়ে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি সবটা বুঝার চেষ্টা করলাম। কিছু একটা খেয়াল করেই সাথে সাথে ওড়না জড়িয়ে নিলাম।
উফফফ আমার মাথা টা এখনো জিম ধরে আছে।
দুপুরে খেয়ে পড়তে বসেছিলাম কারন ফারহান ভাইয়া বিকেলে পড়াতে আসবেন। আর আমি সেই পুরনো স্মৃতি তে ডুবে গিয়েছিলাম আর সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।এখন কি হবে আমি যে পড়া কমপ্লিট করি নি।আমি কি করবো এখন ওনি কি আমায় আবার বকা দিবেন ।
সব কিছু ভেবে চুপসে গেলাম।কি করার আছে আমার আর? আমি সব সময়ের মতো নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলাম।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন
– ঘুম হয়েছে ফারাবি?
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– হুম হয়েছে।
মাথা নিচু করে আবার বললাম
– আম সরি স্যার।
ফারহান ভাইয়া ইষৎ নিচু হয়ে বললেন
– কেন?
আমি মাথা নিচু করেই বললাম
– আমি পড়া কমপ্লিট করতে পারি নি।
ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না।আর আমি মাথা নিচু করেই আছি।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া বললেন
– আচ্ছা সমস্যা নেই।
আমি চুপ করেই আছি। উনি আমাকে বকা দিলেন না যে ,নাকি এটা ও একটা স্বপ্ন।
ফারহান ভাইয়া জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললেন
– ফারাবি তুই যমুনাতে যাওয়ার কথা ভাবছিলি।খুব ভয় পেয়েছিলি না রে। কিন্তু সেই দিন গুলো অনেক সুন্দর ছিলো।সব কিছুই সাজানো গল্পের মতো।কিন্তু এখন সব পানসে হয়ে গেছে ।
আমি ওনার কথা কিছু ই বুজলাম না। ওনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে আমাকে বললেন
– আচ্ছা শোন আর মাত্র দুই মাস পর পরীক্ষা।
পড়াশোনা কমপ্লিট করতে হবে তো তাই না।এভাবে করলে চলবে না।
সুন্দর করে সব কমপ্লিট করবি ঠিক আছে।আমি হা হয়ে আছি। আজকে ওনি আমাকে অনেক ঠান্ডা মেজাজে পড়া বোঝালেন।তারপর কিছু পড়া দিয়ে চলে গেলেন। আমি ও ভেবে নিয়েছি আজ থেকে মন দিয়ে পড়াশুনা করবো।
চলবে