? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 21,22
ফাতেমা তুজ
21
গানের আসর শেষ করে সবাই আমাকে বিদায় জানিয়ে বাসায় চলে গেল। রিফাত ভাইয়া থাকতে চেয়েছিল কিন্তু ফারহান ভাইয়া বলল ” হসপিটালে থাকলে তুই ও অসুস্থ হয়ে যাবি। তোকে নিয়ে আর দৌড়াতে পারবো না। ” তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল ‘ একটা কে নিয়ে ই যে অবস্থা।’
আমি চুপসে গেলাম, এই লোকটা এখন আমায় খোটা দিচ্ছে!কেন রে ভাই তোকে কি আমি থাকতে বলেছি।
যত্তসব নিজেই ক্রেডিট নেওয়ার জন্য থাকবে আবার আমাকে দোষ ও দিবে!
রিফাত ভাইয়া হাসতে হাসতে বলল
– আচ্ছা, আচ্ছা। এর জন্য তো তোকে আবার ধন্যবাদ ও জানানো যাবে না। না হলে এক গাদা কথা শুনাবি।
আমি কি তোদের আপনজন নই ব্লা, ব্লা, ব্লা
ফারহান ভাইয়া ও হালকা হাসলেন। তারপর একে অপরকে জড়িয়ে ধরে পিঠ চাপরে দিলেন। রিফাত ভাইয়া আমাদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলো।
ফারহান ভাইয়া আমার পাশে এসে বসলেন। আমি গোমড়া মুখ করে আছি, ওনি আমাকে খোঁটা দিল।
ফারহান ভাইয়া খানিকক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করলো কি হয়েছে। তারপর ই জিজ্ঞাসা করল ” কি হয়েছে? ”
আমি ও এক গাদা কথা শুনাবো বলে তৈরি হলাম।
কিন্তু মুখ দিয়ে একটা শব্দ ও বের হচ্ছে না।অনেক চেষ্টা করে ও কিছু বলতে পারলাম না আমি। ফারহান ভাইয়া ধমক দিয়ে বললেন ” কি হয়েছে কি? ” এবার আমি একটু চমকে গেলাম।
তারপর নিজেকে সামলিয়ে কোনো মতে সাহস জুগিয়ে বললাম ” কিছু না তো। ”
ফারহান ভাইয়া সন্দিহান চোখে তাকালেন তারপর আবার বললেন “সত্যি টা জানতে চাই। ইউ হেব অনলি 5 সেকেন্ড। ”
নিজেকে শক্ত করে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম
” আপনি চলে যান।আমার কোনো সমস্যা হবে না, আর আপনাকে ও কষ্ট করতে হবে না। ”
আমার কথায় ফারহান ভাইয়া রেগে গেলেন।আমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে আমার কাছে মুখ নিয়ে বলল
“আমি তোকে বলেছি। আমার এই টুকু কষ্ট হচ্ছেতোকে কথা বলতে কে বলেছে?”
ওনার রাগে চোখ যেন রক্ত বর্ন ধারন করেছে। আমি ভয়ে আর হাত চেপে ধরায় ব্যথা পাচ্ছিলাম।চোখ থেকে না চাইতে ও পানি গড়িয়ে পড়ল। কয়েক মুহূর্ত পর ফারহান ভাইয়া আমার চোখে পানি দেখতে পেলেন।
ওনি আমার থেকে ছিটকে সরে গেলেন। তারপর পাশে থাকা ফ্লাওয়ার ভাস টা ছুঁড়ে মারলেন। সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাওয়ার ভাস ভেঙে গুড়িয়ে গেল। আমি আর ও চমকে উঠলাম।চোখ দিয়ে অনড়গল পানি ঝড়তে লাগল।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে হাঁটু গেড়ে বসে
আমার হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করলেন। বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে চুমু খেলেন।
ওনার উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে আমার শরীরের প্রতি টা নিউরন কেঁপে উঠলো। ফারহান ভাইয়া আমার কাছে আসতেই আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেললাম। উনি আমার চোখের পাতা তে চুমু দিলেন। আমার সমস্ত শরীর কেঁপে উঠলো।ফারহান ভাইয়া আমার কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে বললেন ” ফারাবি , এই ফারাবি , কষ্ট পেয়েছিস ? খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাই না?একটি বার তাকা না , বিশ্বাস কর আর কখনো কষ্ট দিবো না।
তোকে কষ্ট দিয়ে আমি ভালো নেই রে।আমার ও যে খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে।প্লিজ ফারাবি।”
ওনার প্রতিটা কথা আমার কানে বার বার বেজে চলছে। উনি আবার বললেন
“একটি বার তাকা , প্লিজ? ”
না চাইতে ও আমার চোখ জোড়া খুলে গেল। ওনার চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে।কিন্তু কেন?
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। এই লোকটি কে বোঝা বড্ড দায়। এখনি ভালো এখনি খারাপ।
ফারহান ভাইয়া বললেন
” আম সরি।আমি তোকে কষ্ট দিতে চাই নি। ”
আমি কিছু বলতে পারলাম না। শুধু বোঝার চেষ্টা করলাম কি হয়ে গেল।কিন্তু আমার এই মস্তিষ্ক আমাকে বোঝাতে সক্ষম হলো না।
ফারহান ভাইয়া আমায় ছেড়ে উঠে পড়লেন।
তারপর আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে ব্যস্ত পায়ে ছুটে চলে গেলেন। আমি ওনার যাওয়ার দিকে ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে তাকিয়ে রইলাম।বড্ড অস্থির লাগছে , মাথা ও প্রচুর পরিমাণে ব্যাথা করছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর একজন নার্স এসে দরজায় নক করলেন। “ম্যাম আর ইউ ওকে। ”
আমি নার্স এর কথা শুনতে পেয়ে চোখের পানি মুছে ফেললাম।নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম
– হ্যাঁ।
নার্স বলল
– মে আই কাম ইন ?
– হুম আসুন।
নার্স ভেতরে ঢুকে একজন কে ভাঙা ফ্লাওয়ার ভাসের টুকরো পরিষ্কার করতে বললেন। ভাঙা ফ্লাওয়ার ওয়াচ পরিষ্কার করে চলে গেলেন মহিলা টি।
নার্স আমার কাছে এসে বসলেন।একে একে সমস্ত কিছু চেইক করলেন। থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর টা ও মেপে নিলেন। নার্স বললেন
– ম্যাম ইটস 101৹ ।ইটস নট গুড , জ্বর টা আবার বেড়েছে।
আমি কিছু বললাম না। নার্স ই বললেন
– ম্যাম ফ্রেস হতে যাবেন?
আমি শুধু মাথা ঝাকালাম।নার্স আমাকে নিয়ে বাথরুমে পৌছে দিলেন।তারপর বেশ কিছুক্ষণ আমি মুখে পানির ছিটে দিলাম।ফ্রেস হয়ে বের হয়ে আসলাম।
নার্স আমাকে ধরে বেডের কাছে নিয়ে এলেন। বেডের কাছে নিয়ে গিয়ে সুন্দর করে হাত মুখ মুছে দিলেন।
তারপর মাথায় বিনুনি বেঁধে দিলেন। নার্স বিনুনি বেঁধে দেওয়ার সময় হঠাৎ বেশ কষ্ট হচ্ছিল। কারন ফারহান ভাইয়া দুটো দিন বিনুনি বেঁধে দিয়েছেন।কোনো ভাবে কি আমি ওনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ?
কিন্তু আমি তো ওভাবে বলতে চাই নি।উনি কি কষ্ট পেয়েছেন খুব?
এসব ভাবতে ভাবতে নার্স আমার জন্য হালকা স্যুপ নিয়ে আসলেন।আমাকে অনেক জোড়াজোড়ি করে ও সুপ খাওয়াতে পারলেন না। অগত্যা ওনি দ্য গ্রেট ওয়ান এন্ঢ অনলি ফারহান ভাইয়া কে ইনফর্ম করলেন।
প্রায় দশ মিনিট হয়ে গেল কিন্তু ফারহান ভাইয়া আসলেন না।ওনি আসতে এতো দেরি করেন না কখনো। কারন ওনি তো হসপিটালেই থাকেন।
বড্ড কষ্ট হচ্ছে, কেন ওনাকে হার্ট করলাম আমি?
কেন?
চোখের কোনে পানি জমে গেল। পনের মিনিটের মাথায় ফারহান ভাইয়া আসলেন।হাতে ফ্লয়েম পেপারে মুরানো স্যুপের বাটি।
ওনি আসলেই নার্স অভিযোগ করে বলল
– স্যার অনেক জোড়াজোড়ি করে ও খাওয়াতে পারি নি।
ফারহান ভাইয়া তেমন কিছু বললেন না। শুধু বললেন
– ওকে। আপনি যান।
– স্যার স্যুপ তো ঠান্ডা হয়ে গেছে।নিয়ে যাবো ?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– হুম নিয়ে যান। দরকার হলে ইনফর্ম করবো।
– ওকে স্যার।
তারপর নার্স চলে গেলেন।
ফারহান ভাইয়া আমার বেডের পাশে রাখা সাইট টেবিলে স্যুপের বাটি টা রেখে বললেন
– খাস নি কেন?
আমি নিচের দিকে তাকিয়ে আছি।কি বলব আমি।বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে দিছি ওনাকে।
চুপ করে আছি দেখে ফারহান ভাইয়া আর কিছু বললেন না।এতে আমার আর ও খারাপ লাগছে।
ওনি কষ্ট পেয়েছেন তাই আমায় বকা ও দিচ্ছেন না। না হলে এতোক্ষন না খাওয়ার জন্য অনেক বকা দিতেন।
বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো।
ফারহান ভাইয়া সুপ
টা এগিয়ে দিয়ে বলল
– ফাস্ট খেয়ে নে।
আমি এবার ও কিছু বললাম না।
ওনি রাগ না করলে আমাকে খাইয়ে দিতেন।
জোড় করে খাইয়ে দিতেন ওনি।
মনের ভেতর ক্ষত টা আর ও গভীর হলো ।
চোখের পানি টলমল করছে।
আমি নিচু স্বরে বললাম
– শরীরে শক্তি নেই ।
ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না।
ফারহান ভাইয়া এক চামচ সুপ নিয়ে মুখের সামনে দিলেন।
ওনার দিকে তাকালাম ওনি অন্য দিকে তাকিয়ে আছেন।
চোখ থেকে না চাইতে ও এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো।
মাথা নিচু করে ফেললাম ।
নিচু হতেই ওনার বা হাতে চোখ গেল।
বড় করে ব্যান্ডেজ করা , আমার বুঝতে একটু ও অসুবিধা হলো না কি হয়েছে।
( ফারাবি কে রেখে ফারহান বের হয়ে যায়।
হসপিটালে নিজের রুমে গিয়ে দেয়ালে শক্ত করে ঘুষি মারে।
হাতে প্রচন্ড ব্যথা পায় , কিন্তু মনের ব্যথা যে বড্ড বেশি।
এই হাত দিয়ে ফারাবি কে চেপে ধরে ছিল।
বড্ড রাগ হচ্ছে ওর , আশে পাশে কাঁচের জিনিস গুলো হাত দিয়ে ঘুষি মেরে ভাঙতে থাকে।
বিক্ষিপ্ত ভাবে হাত টা কেটে যায়।
কিন্তু একটু ও কষ্ট হচ্ছে না ওর।
মন টা যে পুরছে , বড্ড বেশি ভালোবাসে যে।
রক্তাক্ত হাত নিয়ে বসে থাকে ফ্লোরে।
রক্ত ঝড়তে থাকে কিন্তু এতে ফারহানের কোনো ধ্যান নেই।
হঠাৎ নার্স এর কল আসে।
আর তখন ই হাত ব্যান্ডেজ করে সুপ নিয়ে আসে যার জন্য এতো দেরি হয় আসতে।)
আমি কিছু না ভেবেই ফারহান ভাইয়ার হাত ধরলাম।
কেঁদে উঠলাম , বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
ওনি আমার উপর রাগ থেকে নিজেকে কষ্ট দিয়েছেন।
এই কথা টা মানতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
ওনার খুব কষ্ট হচ্ছে না।
আমার হঠাৎ কান্না দেখে ফারহান ভাইয়া চমকে গেলেন।
আমি চিৎকার করে কেঁদে উঠলাম।
ফারহান ভাইয়া এখনো কিছু বুঝে উঠতে পারছে না।
আমার হাতের কাছে তাকাতেই দেখলো আমি ওনার হাত ধরে কেঁদে চলেছি।
ফারহান ভাইয়ার বুঝতে অসুবিধা হলো না কেন কাঁদছি।
ফারহান ভাইয়া আমাকে বুকের মধ্যে মিশিয়ে নিলেন।
আমি চিৎকার করে কেঁদেই চলেছি।
ফারহান ভাইয়া আমাকে কিছুতেই থামাতে পারছে না।
বার বার বলছেন
– ফারাবি ক্ল্যাম ডাউন।
এভাবে কাঁদে না , ফারাবি।
কিন্তু আমার কান্না থামছেই না ।
বুকের ভেতর বড্ড কষ্ট হচ্ছে ।
কেন কষ্ট হচ্ছে আমার জানা নেই।
কিন্তু খুব কষ্ট হচ্ছে যে।
ফারহান ভাইয়া হাজার বলে ও কান্না থামাতে পারলেন না ।
আমি ওনার হাতটা জড়িয়ে বললাম
– আমি আপনাকে কষ্ট দিয়েছি।
আমি কষ্ট দিয়েছি , আপনার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না।
খুব বেশি কষ্ট হচ্ছে ।
ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষন অপলক দৃষ্টি তে চেয়ে থাকলেন।
তারপর আমার চুলের ভেতর একহাত দিয়ে আর অন্য হাত দিয়ে কোমর জড়িয়ে ধরলেন।
ওনার হাতে ব্যান্ডেজ থাকা সত্যে ও ঐ দিকে ওনার কোনো খেয়াল নেই।
ফারহান ভাইয়া আমার মুখের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– ফারাবি ।
আমি এখনো কেঁদে চলেছি।
উনি বললেন
– হুসসসসসস
তারপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই আলতো করে ফু দিলেন।
আবেশে চোখ বন্ধ হয়ে গেল আমার।
আমি এক ঘোরের মাঝে চলে গেলাম।
আমি নিজে ও বুঝলাম না কি হলো এটা।
ওনার ঠোট আলতো করে আমার চোখের পাতা তে ছোঁয়ালেন।
উনি অনেকক্ষণ সময় নিয়ে আমার চোখের পাতা তে চুমু খেলেন।
ওনার ঠোঁটের ছোঁয়া আমার শরীরে শিহরন জাগিয়ে দিলো।
ওনার ঠোঁটের প্রতিটা স্পর্শ জানান দিচ্ছে যে ওনি কতোটা যত্নে চুমু খেলেন।
আমার কান্না একদম থেমে গেল।
খানিকটা লজ্জা ও পেলাম যার দরুন ওনার দিকে তাকাতে পারছি না।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হাসলেন তারপর বললেন
– এই লজ্জা মুখ টাই ভালো লাগে।
একদম কাঁদবি না বুঝেছিস।
আর নিজেকে কষ্ট দেওয়ার কথা তো ভাববি ও না।
ফারহান ভাইয়া কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল
– আর এভাবে কাঁদলে ঠোঁটের ভারজিনিটি নষ্ট করে দিবো।
ওনার এই কথায় আমি লজ্জায় কুকরে গেলাম।
উনি আলতো হাতে বুকের মধ্যে আমাকে আবদ্ধ করে নিলেন আমায় ।
চলবে
ফাতেমা তুজ
? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 22
_________________________
সকাল বেলা ঘুম ভাঙল সূর্যের কোমল রশ্মির ছোঁয়া তে।
চোখ পিট পিট করে তাকালাম তারপর আরমোরা ভাঙার জন্য হাত টা নাড়াতেই টান অনুভব করলাম।
দেখার জন্য হাতের দিকে তাকাতেই দেখলাম, ফারহান ভাইয়া হাত ধরে শুয়ে আছেন।
লোকটা সত্যি ই খুব ভালো।
এই দুটো দিন আমার অনেক খেয়াল রেখেছে।
কালকের কথা মনে পড়তেই খানিকটা লজ্জা পেলাম।
কালকে ওনি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিলেন।
নিজেকে শান্ত করে যখন বুঝতে পারলাম বিষয় টা তখন বেশ লজ্জা লাগছিল।
কিছু ক্ষন পর ফারহান ভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিয়ে সম্পূর্ণ সুপ টা খাইয়ে দিলেন।
তারপর ওনি আমার বিনুনি টা খুলে দিলেন।
আমি অবাক হয়ে আছি কারন একটু আগেই নার্স বিনুনি বেঁধে দিয়ে গেলেন।
তাহলে এটা ওনি কি করলেন।
ওনি আমার ভাবনাকে বাড়তে না দিয়ে আবার বিনুনি করে দিলেন।
আমি বললাম
– এটা কি হলো।
ওনি উত্তরে শুধু হাসলেন তারপর বললেন
– সব কিছু যদি বুঝতে পারতি তো এতো কষ্ট করতে হতো না।
অবশ্য এতে আমার কোনো অভিযোগ নেই।
আমি হা হয়ে ই রইলাম এই লোকটাকে বুঝা আমার কর্ম নয় ।
তারপর ফারহান ভাইয়া সুন্দর করে আমাকে শুইয়ে দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন।
কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম কে জানে।
আর সকাল বেলা ঘুম ভাঙতেই দেখলাম ওনি পাশেই আছেন।
6,30 বাজতে না বাজতে ওনার ফোনে এলাম বেজে উঠলো।
আরামের শব্দ টা হলো এমন
– ফারহান ওয়েক আপ।
ফাস্ট
এই রকম এলাম ও হয় না চাইতে ও ফিক করে হেসে দিলাম।
আর ফারহান ভাইয়া আমার দিকে পিটপিট চোখ করে তাকিয়ে আছেন।
ওনি আরমোরা ভেঙে বললেন।
আম লেট এক্সচেলি কাল অনেক রাতে ঘুমিয়ে ছি তাই।
আমি এখনো হাসছি, আমার হাসি দেখে ফারহান ভাইয়া মুখে খানিকটা বিরক্তি টেনে বললেন
– হোয়াট হ্যাপেন?
আমি এবার একটু চুপ হয়ে বললাম
– আপনার এলাম।
ফারহান ভাইয়া বিরক্তি নিয়ে ই বললেন
– সো হোয়াট ।
আমি এবার একটু মন খারাপ করেই বললাম
– আপনার এলাম টা এমন আজব তাই হাসছিলাম।
ফারহান ভাইয়া ব্রু কুঁচকে বললেন
– স্টুপিট।
তারপর ই রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ।
আমি হা হয়ে ওনার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম।যাক বাবা এটা কি হলো।
আজব তো, স্টুপিট এর কি দেখলেন ওনি।
আর কালকে কতো সুন্দর করে কথা বললেন আর আজকে।
ধ্যাত এই লোকটি একটা হনুমান।
কখন কি করে কিছুই বুঝি না।
যত্তসব ফালতু মার্কা ফারহান ।
_______________________
আজ দুপুরেই আমাকে হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়া হবে।
আমি 70 % সুস্থ হয়ে গেছি।
সুস্থ না হয়ে কি উপায় আছে , ফারহান ভাইয়ার যে ফরমালিটিস বাববাহ।
এই ভাবে না ঐ ভাবে , এটা করা যাবে না ঐ টা করতে হবে।
কেউ না চাইলে ও সে সুস্থ হতে বাধ্য ।
যাই হোক হসপিটাল থেকে রিলিজ দেওয়াতে বেশ খুশি লাগছে।
এখন প্রায় 1 টা বাজে।
আমার পাশে আব্বু, ছোট চাচ্চু, রাজিব চাচ্চু আর মনি আন্টি বসে আছে।
ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া সব কিছুর ব্যবস্থা করছে।
সবাই বেশ খুশি, বড্ড বেশি ভালো বাসে যে আমায় ।
আর আমি এদের সবাই কে কষ্ট দিচ্ছি।
সবার সাথে গল্প করছি এমন সময় ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া আসলেন।
রিফাত ভাইয়া এসেই বলল
– যা যা খাটিয়ে শেষ করে দিলি আমাদের ।
আমি মুখ গোমড়া করে বললাম
– তুমি খাটবে না তো কে খাটবে।
রিফাত ভাইয়া চোখ নাচিয়ে বলল
– তোর বর কে বল না।
ফারহান ভাইয়া ফোন স্কল করতে ব্যস্ত ।
অথচ কাল অব্দি কতো কেয়ার করেছে আমার।
আর এখন আমার দিকে তাকাচ্ছে ও না।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলাম
– ওনি ওনার দায়িত্ব পালন করেছেন।
এখন ওনি আর কি করবেন।
রিফাত ভাইয়া আমার বরের কথা বলাতে ফারহান ভাইয়া আলতো হাসলেন।
যার অর্থ আমি বুঝতে পারলাম না।
আব্বু ফারহান ভাইয়াদের বলল
– সব কমপ্লিট ?
ফারহান ভাইয়া ফোনে স্কল করতে করতেই বললেন
– হুম অলমোস্ট।
জাস্ট ডক্টর এসে চেকআপ করে যাবেন।
কিছুক্ষণ পর ই ডক্টর চলে আসলেন।
ফারহান ভাইয়ার আর রিফাত ভাইয়ার সাথে হ্যান্ডশেক করে কিছু কথা বললেন।
কি কথা হলো তা আমি শুনতে পেলাম না।
কারন ওনারা দরজার কাছে ছিলো।
ডক্টর এসে আমাকে চেকআপ করে গেলেন।
তারপর বললেন 7 দিন হাফ রেস্ট নিতে।
কিছু ঔষধ লিখে দিলেন ।
তারপর বিদায় জানিয়ে চলে গেলেন ।
রিফাত ভাইয়া আমার সাথে কিছু কথা বললো।
আর ফারহান ভাইয়া আমার দিকে একটি বার তাকালেন ও না।
ওনি ওনার ফোন নিয়ে ই ব্যস্ত।
নিশ্চয়ই গার্লফ্রেন্ড , হয়তো আমার খেয়াল রাখার জন্য এই দুদিন কথা বলতে পারে নি।
আর তাই আজ চ্যাটিং করছেন ।
ফারহান ভাইয়া রিফাত ভাইয়া কে রিসিপশন এ পাঠালেন।
তারপর আবার ফোন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
হঠাৎ একটা ম্যাসেজ এর শব্দ এলো।
সাউন্ড অন করা ছিল তাই খুব সুন্দর করে আমার কানে পৌছালো।
আমি সন্দিহান চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে আছি।
কিন্তু ওনি ওনার ফোন নিয়ে ব্যস্ত।
তারপর পর পর আর পাঁচ টা ম্যাসেজ আসলো।
এবার ওনার মুখে বিরক্তি প্রকাশ পেল।
আমি ওনার দিকে তাকিয়ে আছি এতোক্ষন পর ওনার খেয়াল হলো ।
ওনি আমার দিকে তাকাতেই চোখাচোখি হয়ে গেল।
একটু ইতস্তত বোধ করে চোখ নামিয়ে নিলাম।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া এখনো আমার দিকে তাকিয়ে আছেন বুঝতে পেরে হালকা করে তাকালাম।
ফারহান ভাইয়া সোফায় বসে বসেই বলল
– ওয়াননা সি দ্যা ম্যাসেজ?
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– নাহহহ।
ওনি আমার কাছে এসে বলল
– হোয়াই ?
আমি বললাম
– নাহহ না আপনার ম্যাসেজ আমি কেন দেখতে যাবো।
ফারহান ভাইয়া এইবার খানিকটা বিরক্তি নিয়ে ই বললেন
– আমি বললাম তাই ।
আমাকে কিছু বলতে না দিয়েই ওনি ওনার ফোন টা আমার হাতে দিয়ে বললেন
– দেখতে ই হবে।
আমি মাথা নাড়ালাম।
ওনার ম্যাসেজ টা এসেছে কোনো এক মেয়ের আইডি থেকে।
নিশ্চয়ই গার্লেফ্রন্ড, হবেই তো ওনাকে দেখে মেয়েরা ক্রাশ খেতে খেতে পেট ভরিয়ে ফেলে।
আর এমন একজনের গার্লফেন্ড তো থাকবেই।
গিয়ে যা দেখলাম তাতে আমার মাথা ঘুরে গেল।
মেয়েটা এর আগে ও অনেক অনেক ম্যাসেজ দিয়েছে ।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া সিন করে একটার ও উত্তর দেন নি।
আজকে দুটো পিক পাঠিয়েছে।
পিক টা যথেষ্ট বাজে যা দেখে আমার ই চোখ কপালে উঠে গেছে।
মেয়েটা লিখেছে
– ফারহান আই লাভ ইউ।
তোমাকে দেখেই আমার অবস্থা খারাপ।
তুমি এতো হট , ও মাই গড।
প্লিজ একসেপ্ট করো প্লিজ।
কি অসভ্য মেয়ে এগুলো কি ধরনের ম্যাসেজ রে বাবা।
আবার একটা ভিডিও ও দেখতে পেলাম।
ফারহান ভাইয়া দূরে বসে আছেন।
তারপর বললেন
– ভিডিওটি প্লে কর।
আমি তেমন কিছু না ভেবে ভিডিও অন করলাম।
যা দেখলাম এতে আমার লজ্জার পাশাপাশি রাগ ও হলো।
একটা মেয়ে হয়ে এতো নিচু মন মানসিকতা ছি।
ভিডিও টা তে মেয়েটা বাজে ড্রেস পড়ে আছে।
সাথে আবার কিছু বাজে প্রস্তাব দিচ্ছে।
ও নাকি রুম ডেট করতে চায় ফারহান ভাইয়ার সাথে।
ছিইইই
ভিডিও টা অফ করে এখন লজ্জায় ফারহান ভাইয়া দিকে তাকাতে ও পারছি না।
ফারহান ভাইয়া বলল
– কি করা উচিত ?
রুম ডেট করা ?
ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।
আমাকে কি ধরনের প্রশ্ন করছেন ওনি। ওনার যা ইচ্ছে করুক না।
ফারহান ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
– ব্লক না করে এভাবে বসে আছিস কেন ?
আমি কি রুমডেটে যাবো এখন ?
ওনার কথায় আমি চমকে উঠলাম ।
তাড়াতাড়ি ব্লক করে দিলাম।
ওনার দিকে তাকাতে পারছি নি আমি।
লজ্জায় মাথা নিচু করেই ওনাকে ওনার ফোন দিলাম ।
কিছুক্ষণ পর ই রিফাত ভাইয়া এসে বলল
– কমপ্লিট ।
ফারাবি কে এখন বাসায় নিতে পারব।
___________________
গাড়িতে বসে আছি ।
গাড়ি চলছে তার আপন মনে।
বেশ ভালো লাগছে, হসপিটালের উগ্র গন্ধ থেকে মুক্তি পেয়ে মনে হচ্ছে যেন আমি কতো জনম পর বাইরের জগত টাকে দেখছি।
কতো সুন্দর এ পৃথিবী ।
এ সমস্ত কিছু ভাবতে ভাবতে গাড়ি থেমে গেল।
হঠাৎ গাড়ি কেন থেমে গেল তা দেখার জন্য বাইরে তাকাতেই দেখলাম আমরা বাসায় পৌছে গেছি।
বাহহহ এতো তাড়াতাড়ি পৌছে ও গেলাম।
ফারহান ভাইয়া আগে নেমে একটু পেছনে দাড়িয়ে আছেন ।
রিফাত ভাইয়া আমাকে নামিয়ে দিলো।
হাঁটতে অসুবিধা নেই বলে একাই হেঁটে ভেতরে যাচ্ছি।
হঠাৎ কোনো কিছুর সাথে লেগে পড়ে যেতে যাচ্ছিলাম।
কিন্তু তার আগেই ফারহান ভাইয়া আমাকে আকরে নিলেন।
ব্যস্ত হয়ে বললেন
– ব্যথা পেয়েছিস ?
আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ওনি আমার পা ধরে নাড়াতে ব্যস্ত হয়ে গেলেন।
আমি তাড়াতাড়ি একটু দূরে সরে গিয়ে বললাম
– কি করছেন কি ?
ফারহান উঠে ব্রু কুঁচকে দাঁড়ালেন ।
তারপর আমার দিকে আগাতে লাগলেন।
আমার কাছে এসে কানের কাছে মুখ নিয়ে মৃদু সুরে বললেন
– আচ্ছা ।
পা ধরেছি বলে সমস্যা হচ্ছে, তাহলে একটা কাছ করে যাক কি বলিস?
আমি সন্দিহান চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– কি কাজ ?
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে ডেবিল হাসি দিয়ে বললেন
– তোকে জড়িয়ে ধরা যাক।
আমি কিছু বলার আগেই রিফাত ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে ডাক দিলেন।
ফারহান ভাইয়া গটগট করে চলে গেলেন আর আমি হয়ে গেলাম আহাম্মক ।
________________________
বাড়ির গেট দিয়ে ঢোকার সময় কালো গোলাপ গাছ দুটো দেখতে পেলাম।
দুটো গাছে পাঁচ টা ফুল ফুটেছে।
বেশ কিছু কলি ও দেখতে পেলাম।
বড় ই সুন্দর এ গাছ।
কালো গোলাপ কে আজ এতো ভালো লাগছে কেন বুঝি না।
আসলে প্রতি টা রঙ ই সুন্দর তা প্রয়োজন অনুসারে
ধরুন অন্ধকার যদি কখনো শেষ না হয় তাহলে আপনি কি বাঁচতে পারবেন?
যদি ও পারেন সেটা অত্যন্ত কষ্টকর।
ঠিক তেমনি ভাবে যদি দিনের পরে রাত না আসে তাহলে আপনার বেঁচে থাকা হুমকি স্বরূপ হয়ে যাবে।
তাই প্রতিটি জিনিস ই প্রয়োজনীয় সঠিক সময় আনুসারে।
আল্লাহ্ র সৃষ্টির সব কিছুই প্রয়োজনীয়।
এসব ভাবতে ভাবতে বাড়ির মেন ডোরে পৌছে গেলাম।
পৌঁছাতে না পৌঁছাতে উপর থেকে ফুলের বৃষ্টি হলো।
অসাধারণ লাগলো বিষয় টা ।
দেখলাম সবাই দাড়িয়ে আছে , সাথে ছোট্ট একখানা কেক। যার মধ্যে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে হাতে আছে একটা বোর্ড ।
যার মধ্যে লেখা আছে
ওয়েলকাম বেক টু হোম।
সবার মুখে অদ্ভুত প্রশান্তি দেখতে পেলাম।
কেক টা কেটে সবার সাথে হালকা কথা বলে সোজা আমার রুমে চলে গেলাম।
যদি ও এখনো আমার হাঁটতে অসুবিধা হয়।
কিন্তু ধীরে ধীরে হাঁটতে পারি আমি।
রুমে ঢুকেই মন ভরে গেল।
নিজের রুম টাকে দেখতে পেয়ে যেন আত্মায় পানি ফিরে এলো।
কথা না বলে চলে গেলাম বাথরুমে।
লম্বা একটা সাওয়ার নিয়ে ফিরে এলাম।
ফিরে এসে দেখলাম ফারহান ভাইয়া আমার বই গুলো নাড়াচাড়া করছেন।
বইয়ের দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে কাঠ।
চলবে