স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 31,32

0
852

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 31,32
ফাতেমা তুজ
31

ছাদে গিয়ে চমকে গেলাম।
আমি আর রিমি নিজেদের মুখ চাওয়া চাওয়ি করছি।
দুজন ই কিছুক্ষণ ভ্যাবলার মতো চেয়ে থেকে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলাম।

আসলে এরা বারবিকিও করার জন্য ছাদে এসে ছিল।
কিন্তু আগুন জ্বালাতে পারে নাই আর তাই আমাদের ডেকে আনলো।
ঠিক হয়েছে আমাদের রেখে খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না, এবার তো আমাদের ও দিতে হবে।
ফারহান ভাইয়া আমাদের দিকে বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে বললেন
– প্লিজ আপনারা দুজন হাসি থামিয়ে একটু আগুন টা জ্বালিয়ে দিন।

আমি আর রিমি মুখ চেপে হেসে আগুন জ্বালাতে গেলাম।
কিছুক্ষন চেষ্টা করে আগুন জ্বালাতে সক্ষম হলাম।
ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া দুজন মিলে বারবিকিও করছে আর আমি আর রিমি দোলনায় বসে দোল খাচ্ছি।
বেশ কিছুক্ষণ পর বারবিকিও কমপ্লিট হয়ে গেলে , সবাই মিলে খেয়ে ঘুমাতে চলে গেলাম।
তখন বোধহয় চারটা বেজে গেছে।
তাই রিমি আর আমি হালকা ফ্রেস হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
_________________________

সকাল বেলা রোমা আন্টি এসে জাগিয়ে দিলেন।
তারপর ফ্রেস হয়ে নাস্তা কমপ্লিট করে আমাদের বাসায় চলে আসলাম।
আজকে সন্ধ্যা তে মনিকা আপুর ফ্যামিলি আর মনি আন্টির ফ্যামিলির সাথে আলোচনা করা হবে।
তাই আজকে ডিনার টা সবাই আমাদের বাসাতেই করবে।

বিকেলের দিকে রিমি আর আমি আশে পাশে ঘুরতে যাবো প্লেন করলাম।

তাই ফোন করে রাত্রি , শিলা আর বৈশাখি কে ডেকে নিলাম।
দুপুরে সবাই আমরা একসাথে লান্স করে তারপর ছাদে গিয়ে বসলাম।

ছাদে আসা মাত্র রিফাত ভাইয়া আর ফারহান ভাইয়া উপস্থিত হলেন।
এদের দিকে একবার ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে আবার আড্ডা তে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।

কিছুক্ষন পর ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া আমাদের ধমকে নিচে পাঠিয়ে দিলো।
রিফাত ভাইয়া বলল
– এই এখন এখান থেকে তোদের যেতে হবে।
আর সন্ধ্যার আগে আসবি না।

আমি ভাবলীলাস হীন ভাবে বললাম
– কেন কি হয়েছে। আমরা থাকলে সমস্যা টা কি ?

ফারহান ভাইয়া দাঁতে দাঁত চেপে বললেন
– সমস্যা কি ?
এখানে কেটারিং এর লোক আসবে আর তোমরা সবাই এখানে ধেই ধেই করে নাচতে থাকবে তাই না।
এখনি নিচে যাবি , অনুরোধ করছি না , অর্ডার করছি।

আমরা সবাই নিচে চলে আসলাম।
আসার সময় বেটা বজ্জাত হনুমান ফারহানের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করলাম।

আমার এমন কান্ডে রিমির সাথে সাথে সবাই হাসতে শুরু করলো।
রিমি একটু ইনোসেন্ট ফেস নিয়ে বলল

– আরে আমার ভাই টারে আর বকিস না।
বেচারা তো তোর বকা শুনলে ফিট হয়ে যাবে।
এই বলে সবাই আবার হাসা শুরু করলো।
আর আমি ওদের দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে নিজে ও হেসে দিলাম।

বিকেলে সবাই আশে পাশে ঘুরতে লাগলাম।
আহা কতো দিন পর নিজের এলাকায় ।
বেশ মজা করলাম সবাই, সাথে হালকা খাওয়া দাওয়া ও করলাম।
__________________

সন্ধ্যা বেলা হালকা ডিজাইনের একটা গ্রাউন পড়লাম সাথে একটা জিন্স এর শর্ট কোর্ট ।
হালকা সাজে সজ্জিত হয়ে সবার সাথে ছবি তুলে নিলাম।
সন্ধ্যা বেলা সবাই চলে আসলো।
বড় রা সবাই আলোচনা করে সব কিছু ঠিক করলো।

ঠিক হলো মনি আন্টির মেহেন্দির দিন মনিকা আপুর আর রিফাত ভাইয়ার এনগেন্সমেন হবে।
আর 3 বছর পর এদের বিয়ে হবে।

মানে তিন দিন বাদেই মেহেন্দির অনুষ্ঠান ।
বাহহহ এক সাথে দুটো খুশি।
এই কয়েকটা দিন তো ব্যস্ত টার মধ্যে ই কেটে যাবে।

রাতে সবাই এক সাথে ডিনার করে আড্ডা দিতে চলে আসলাম বাগানে ।
কারন ছাদে এখন ও যাওয়া যাবে না।
শিলা , বৈশাখি, রাত্রি , আমি আর রিমি একসাথেই থাকবো।
বাগানে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা মজা করে , রুমে এসে সবাই একসাথে গুটিশুটি মেরে শুয়ে পরলাম।
এভাবেই কেটে গেল আরো একটি দিন।
_____________________

সকলের ব্যস্ততার মধ্যে ঠিক হলো একে একে যে যার সময় মতো শপিং করে নিবে।
যেহেতু আমি আর রিমি এক ড্রেস কালেকশন করবো তাই ফারহান ভাইয়া কে আমাদের সাথে পাঠানো হলো সাথে মনিকা আপু আর রিফাত ভাইয়া তো আছেই।
শপিংকমপ্লেক্স এ গিয়ে সবাই যে যার মতো কেনাকাটা করলো।
কিন্তু বিয়ের দিনের জন্য পোশাক ,আমার কিছুতেই পছন্দ হচ্ছে না।
রিমি আর আমি একটা পছন্দ করেছি কিন্তু সেটা আমার সাইজে স্টোক নেই।
তাই রিমি ও নিবে না বলে দিলো ।
আমি রিমি কে জোড় করে নেওয়ালাম।
কিন্তু আমার কিছু পছন্দ ই হচ্ছে না , পরে কিনব বলে ঠিক করলাম।
মোটামুটি সবাই সব কমপ্লিট করে বাসায় চলে আসলাম।
বাসায় গিয়ে ফ্রেস হয়েই ঘুম।
____________________

যেহেতু রাত 9 টা তেই ঘুমিয়ে ছিলাম তাই বেশ সকাল বেলাতেই ঘুম ভেঙে গেল।
আরমোরা ভেঙে সাইট টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখলাম একটা শপিং ব্যাগ, আর তার পাশে একটা কার্ড।
প্রথমে কার্ডটা হাতে নিতেই চোখ পড়ল বড় বড় করে লেখা
– ফারাবি এটা বিয়ের অনুষ্ঠানে পড়বি।
আর সেইদিনের আগে এটি ওপেন করবি না।

লেখার ধরন দেখে বুঝতে বিন্দু মাত্র অসুবিধা হলো না যে এটা কে দিয়েছেন।
আমি ও ভদ্র মেয়ের মতো প্যাক টা কাবাডে রেখে দিলাম।
কারন আমি জানি লুকিয়ে দেখলে ও এই বেটা বজ্জাত হনুমান বুঝে যাবেন।
রিস্কস নিয়ে লাভ নেই , আর তা ছাড়া সবুর এর ফল মিষ্টি হয়।
হাসি খুনসুটি আড্ডা মজার মাঝে কেটে গেল দুটো দিন।
তবে এই বলে পড়াশুনা তে বিন্দু মাত্র ফাঁকি দিতে দিন নি ।
টাইম টো টাইম অনলাইন ক্লাস পড়াশুনা সব ঘাড় ধরে করিয়েছেন বজ্জাত হনুমান ফারহান ভাইয়া।

অবশ্য আমি ও বেশ মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।
মাঝে মাত্র দেড় মাস সময় পাবো।
তাই আর কোনো ফাঁকি বাজি করি নি।

অবশেষে আসলো রিফাত ভাইয়ার এনগেন্সমেন আর চাচ্চুর মেহেন্দির অনুষ্ঠান।
বেশ জাঁকজমক করেই অনুষ্ঠান দুটো সম্পূর্ণ হলো।
এই অনুষ্ঠানের 80% ই ইয়াং পিপল।
বিভিন্ন রকমের নাচ হলো।
এ বাড়ি ও বাড়ি আলাদা করে, বাজি রেখে সব ধরনের নাচ হলো।
কাপল ডান্স ও হলো, মনিকা আপু আর রিফাত ভাইয়া, চাচ্চু আর মনি আন্টি সাথে আরো অনেক কাপলরা ও যোগ দিলো।

মাঝে আমার বান্ধবীরা , আর ফারহান ভাইয়াদের বন্ধুরাই রয়ে গেল।
কারন আমরা সবাই সিঙেল।

কাঁপল ডান্স শেষ হলে ঠিক হলো সিঙেল দের ডান্স।
অথার্ৎ পজিশন চেন্স করে ঘুরে ঘুরে ডান্স।

আমি প্রথমে মানা করে দিয়েছি , তারপর ফারহান ভাইয়ার চোখ রাঙানি তে রাজি হলাম।
ব্যাপারটা বুঝলাম না, এমনি তে তো এই লোকটি আমার ভালো দেখতেই পারে না ।
আজ হঠাৎ এতো ভদ্রলোক হলেন কিভাবে।

যাই হোক সবার পজিশন সেট করে 15 জন ছেলে আর 15 জন মেয়ে যোগ হলো।

বিশাল বড় সার্কেল হয়ে গেল।
যেহেতু কমিউনিটি সেন্টার এ সব অনুষ্ঠান হচ্ছে তাই সব কিছু সেট করাই ছিল।

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 32
______________________________

সবাই কে পজিশন দেওয়া হচ্ছে । কোন গান এ ডান্স হাবে সেটা ও ঘোষনা করা হলো। সবাই সবার ফাস্ট কো পার্টনার ঠিক করে নিচ্ছে।
পরিবেশটাতে আলাদা আনন্দ বিরাজ করছে।
আমাকে ফারহান ভাইয়া কড়া নির্দেশনা দিয়ে দিল, আমি যেন জামান ভাইয়ার বরাবর ই দারাতে । কিন্তু কোথায় থেকে মনি আন্টির খালাতো ভাইয়ের ছেলে সামনে উপস্থিত হলো।
সে আমাকে কিছু প্রশ্ন জিঙেস করলো।
আমি মোটামুটি ভাবে উত্তর দিলাম , পাল্টা কোনো প্রশ্ন করলাম না।
উনি ই বললেন ওনার পরিচয় , ওনার নাম মিরন।
আমি খানিকটা বিরক্তি নিয়েই হেসে হেসে উত্তর দিলাম।
হাজার হোক গেস্ট এর সাথে বাজে আচারনে করা যাবে না।
মিরন ভাইয়া বললেন
– ফারাবি আমরা এক পজিশনে দারাই চলো।

আমি বললাম
– কিন্তু

আমাকে আর কিছু না বলতে দিয়েই আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল।
আমি অবলা প্রাণীর মতোই গেলাম।
আমি কি করবো, কিন্তু ফারহান ভাইয়া তো জামান ভাইয়া র পজিশনে দারাতে বলেছিলেন।
উনি কি আবার আমাকে ঠাপ্পর মারবেন নাকি ।
এই লোকটা সব সময় আমাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করে।
আজববব

( অন্য দিকে ফারহান সব টা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখেছে।
ফারাবি যখন মিরন এর সাথে হেসে হেসে কথা বলছিল।
তখন ই ফারহানের রাগ হচ্ছিল ।
পরক্ষণেই নিজেকে সামলে নিয়ে ভাবল যে একটা অনুষ্ঠানে কারো সাথে হেসে কথা বলাটা অন্যায় নয়।
ফারাবি র এতে সম্পূর্ণ অধিকার আছে।
কিন্তু ওর বিষন রাগ হচ্ছিল, নিজের রাগ কে বার বার সংবরণ করতে লাগল।
কিন্তু ফারহান মনোযোগ দিয়েই ওদের দেখছিলো।
যখন মিরন ফারাবি র হাত ধরে তখন ওর খুব রাগ হচ্ছিল।
বলতে গেলে ও জেলাস ফিল করছিলো।
তাও নিজেকে সামলে নিয়েছিল কিন্তু যখন ডান্স করার জন্য পজিশন নিয়ে দারায় তখন ওর জেলাসি ফিল প্রচন্ড রাগে পরিনত হলো।
জামান কে কিছু একটা বলে ফারহান ও পজিশন নিয়ে দাড়ালো।)

মিরন ভাইয়ার বরাবর পজিশন নিয়েছি তার পাশে ছিল জামান ভাইয়া আর তার পাশে ছিল ফারহান ভাইয়া।
আশে পাশের সবাই ক্লেপ আর সিটি বাজাতে শুরু
করলো।
10, 9 , 8 , 7 , 6 ,5 , 4, 3, 2 , 1
বলে গান প্লে করা হলো

Har lamha MERI aakhein

Tujhe dekhna hi chahein

Har raasta mera

Teri Taraf Hl jayya

Bepanan pyaar tujhse

Tu Kyun jaane Na

Hua ikraar tujhse

Tu Kyun maane Na

Bepanan pyaar tujhse

Tu Kyun jaane Na

Hua ikraar tujhse

Tu Kyun maane Na

Bepanan pyaar tujhse

Tu Kyun jaane Na

Hua ikraar tujhse

Tu Kyun maane Na

Bepanan pyaar tujhse

Tu Kyun jaane Na

Hua ikraar tujhse

Tu Kyun maane Na

Tere kareeb hote hi

Mujhme Jaan si aa jaaye

Tere door jaate hi MERI

Ye saanse bhi tham jaaye

Dil besabar hai mera

Haan sunne ko tera

Kayi Dino SE hi

Nahi hai soya

Har lamha MERI aakhein

Tujhe dekhna hi chahein

Har raasta mera

Teri Taraf Hl jayya

Bepanan pyaar tujhse

Tu Kyun jaane Na

Hua ikraar tujhse

Tu Kyun maane Na

Bepanan pyaar tujhse

Tu Kyun jaane Na

Hua ikraar tujhse

Tu Kyun maane Na

গানের প্রথম চার লাইন এ আমি মিরন ভাইয়ার সাথে নাচ করছিলাম।
চার লাইন পরে যখন পজিশন চেন্স করে ঘুরলাম জামান ভাইয়া র সাথে ডান্স করতে , কিন্তু মাঝে জামান ভাইয়া আর ফারহান ভাইয়া পজিশন চেন্স করে নিলো। যার কারন আমি বুঝতে পারলাম না।
কিন্তু শুধু মেয়েরা পজিশন চেন্স করে ডান্স করবে , তাহলে এটা কি হলো।
পজিশন চেন্স করার সময় পরলাম একে বারে ফারহান ভাইয়ার বুকে।
ফারহান ভাইয়া শুধু আমার দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে ডান্স করতে লাগলো।
আমাকে বেশ জুড়ে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ডান্স করছিলো।
আমি তো পরেই যাচ্ছিলাম , কিন্তু ফারহান ভাইয়া জড়িয়ে আবার ধরে ফেলল।
আবার চার লাইন পরে পজিশন চেন্স করলাম কিন্তু এবার রানা ভাইয়া আর জামান ভাইয়া দুজন পজিশন চেন্স করে নিলো।
যার ফলে আবার ফারহান ভাইয়ার সাথে পরলাম।
কিছুতেই কিছু হলো না, প্রতি বার ই পজিশন চেন্স করে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ফারহান ভাইয়ার কাছেই ফিরে আসলাম।
গোলক
ধাঁধার মতো, ফারহান ভাইয়া বেশ জুড়ে আমাকে চেপে ধরে ডান্স করছিলো।

একদম শেষে ফারহান ভাইয়া কোমর জড়িয়ে ধরে আমার দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে ডান্স করছিলো।
অন্য কোথাও কোনো ধ্যান ই নেই।
ডান্স শেষ হলে সবাই ক্লেপ দিতে থাকলো। সবাই হৈ হৈ করছে।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমাকে ছাড়ছেন ই না।
আমি হাজারো ধাক্কা দিয়ে ও ছাড়াতে পারছি না।
যেহেতু মাঝে চলে এসেছি তাই হয়তো আমাদের সেই ভাবে কেউ খেয়াল করে নি।

জামান ভাইয়া ফারহান ভাইয়া কে হালকা ধাক্কা দিলেন , আর তারপর ফারহান ভাইয়া আমাকে ছাড়লো।

আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম, জামান ভাইয়া যদি অন্য কিছু ভেবে থাকেন।

ইসসসসস

বুঝি না এই ব্যাটা বজ্জাত হনুমান আমার পেছনে কেন পড়ে থাকে।।
____________________________

ডান্সের অনুষ্ঠান শেষে সবাই মেহেদী লাগাতে ব্যস্ত।
হাতে মেহেদী লাগিয়ে পুরো সেন্টার ঘুরে বেড়াচ্ছি।
এই দিকে ডিনার এর সময় ও হয়ে গেছে।
কিন্তু দু হাতে যে মেহেদী, আমি আর রিমি দুজোন ই মন খারাপ করে আছি।

কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়ার আম্মু অথার্ৎ রোমা আন্টি আসলেন এক প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে।

আমি আর রিমি হা হয়ে আছি।
আন্টি হালকা হেসে বললেন
– তোরা দুজোন না খেয়ে আছিস ।
আমাকে বলবি না , ফারহান না বললে জানতাম কি করে।

রিমি আর আমি কিছু বললাম না। শুধু মেকি হাসি দিলাম ।
আন্টি আমাদের দুজোন কে খাইয়ে দিলেন।

খাওয়া হয়ে গেলে হাতের মেহেদী উঠাতে গেলাম ।
মেহেদী উঠিয়ে আসা মাত্র সবাই একে বারে আমায় ঘিরে নিয়েছে।

আমি ভ্যবলার মতোই সবার দিকে তাকিয়ে আছি।
আমি কি বাঘ না ভাল্লুক, আজব।

আমি রিমির দিকে তাকাতেই রিমি আমাকে হাতের দিকে তাকাতে ইশারা করলো।
আমি হাতের দিকে তাকিয়ে নিজে ও অবাক হয়ে গেছি।

যেখানে এই মেহেদীর রঙ তেমন হয় না।
সেখানে আমার হাতে লাল টুকটুকে হয়ে আছে।
সবাই নিজেদের হাতে একবার তাকাচ্ছে একবার আমার হাতে।
সবাই খোঁচা মারতে ভুলে নি।
সবাই এক কথা বলে যাচ্ছে।
বাহহহ ফারাবি তোর বর তো তোকে বেশ ভালোবাসবে দেখছি।
তোর কপাল টাই ভালো, তা জিজু কে দেখবো কবে।

আমি একটু বিরক্তি নিয়ে বললাম
– আজব। আমি জানব কিভাবে কে আমার এই ফাটা কপাল এ আছে।

সবাই হো হো করে হেসে দিলো।
আচ্ছা ওরা না হয় ঠিক আছে , বড় রা ও ছাড়ছে না আমায়।
সবাই থুতনিতে হাত ঠেকিয়ে বলে যাচ্ছে।
জামাই এর আদর পেয়ে লাল টুকটুকে হয়ে যাবি।

আমি তো এদের কথাতেই লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গেছি।

হঠাৎ বৈশাখি বলল
– আরে ফারাবি সব তো ঠিক আছে।
কিন্তু তোর হাতের এফ লেটার টা দেখ।
আমি একটু মনোযোগ দিয়ে তাকালাম, আসলেই তো এই এফ লেটার টা তো খয়েরি রঙ হয়ে গেছে।
এটা তো মেহেদী ওঠানোর কয়েক মিনিট আগে দেওয়া হয়েছে।

আসলে মেহেদী দিয়ে হাতের মাঝে লাভ একে মাঝে টা ফাকা রেখেছিলাম।
কিন্তু খাওয়া শেষে যখন উঠে দাঁড়ালাম তখন পেছন থেকে ফারহান ভাইয়া টান মেরে ব্যালকনিতে নিয়ে গেলেন।
কোনো কথা ছাড়াই লাভ এর মাঝে এফ লেটার টা মেহেদী দিয়ে লিখে দিলেন।

আমি ও কিছুই বললাম না।
কারন লেটার টা দেওয়ার পর আর ও সুন্দর লাগছে ডিজাইন টা।
মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে এসেছিলাম।

রিমি ডাক দিতেই ঘোর কাটল।

আমি সামনের দিকে তাকাতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া তাকিয়ে আছেন।
আমি চোখ নামিয়ে আবার তাকালাম আর ওনি এবার ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি রাখলেন।

হঠাৎ আমার মন কেমন যেন করে উঠল।
কিন্তু কেন , কেমন অনুভূতি তার কিছুই বুঝতে পারছি না।

এভাবেই উল্লাসে মেহেন্দির আর এনগেন্সমেন উৎসব কমপ্লিট হয়ে গেল।

___________________________

কালকে হলুদ সন্ধ্যা হওয়ায় রাত জেগেই ছিলাম।
ভোরের দিকে ঘুমিয়ে ছি তার দরুন একদম দুপুরের দিকে ঘুম থেকে উঠেছি।
আজকে আর নাস্তা করিনি।
সোজা গোসল করে লান্স করে নিয়েছি।

বিকেল এ তোরজর শুরু হলো পার্লার এ যাওয়ার জন্য।
রেডি হয়েছি পার্লার এ যাবো তখনি ফারহান ভাইয়া এসে আমাকে আর রিমি কে আটকে দিলো।

উনি সাফ করে বলে দিলেন, বিউটিশিয়ান আসবে একটু পর।
পার্লার এ যাওয়া যাবে না , আমি আর রিমি দুজোন ই মন খারাপ করে বসে রইলাম।
কোথায় ভাবলাম সবাই মিলে আনন্দ করে সাজবো তা না ।
এই লোকটা এতো বাজে কেন, ধ্যাত।

কিন্তু এই মন খারাপ বেশিক্ষন রইলো না।
কারন বিউটিশিয়ান আপু এতো সুন্দর করে সাজিয়েছেন আমাদের তা বলার বাইরে।
খুব ভারী মেকআপ না , হালকা মেকআপ যদি ও কিন্তু লাগছে অসাধারণ।
আর মনে হচ্ছে একদম ই ন্যাচারাল গ্লো , অসাধারণ।

সব মেয়েরা নীল শাড়ি আর ছেলেরা নীল পাঞ্জাবি পড়েছে।

রুম থেকে বের হতেই ফারহান ভাইয়ার মুখোমুখি হয়ে গেলাম। ওনার দিকে তাকাতেই কেমন লজ্জা লাগছিলো।

আর চোখে ওনার লুক টা ও দেখে নিলাম।

নীল পাঞ্জাবি, কালো প্যান্ট এর সাথে কালো সু।
হাতা টা ভাজ করা, বুকে সানগ্লাস ঝোলানো আর হাতে স্টিল এর ওয়াচ।
চুল গুলো স্পাইক করা, আর সাথে মাতাল করা সেই পারফিউম।

বেশকিছু ক্ষন ঐ ভাবেই কেটে গেল।
রিমি রুম থেকে বেরিয়ে আমাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বলল
– এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেন।
আমি চোখ দিয়ে সামনের দিকে ইশারা করতেই বেচারা নিজে ও হালকা ভয় পেয়ে গেল।
পরক্ষণেই দুজোন নিজেদের সামলিয়ে পাশ কাটিয়ে যেতে নিলেই ফারহান ভাইয়ার গর্জন শোনা গেল।

একদম বাড়াবাড়ি করবি না , আড্ডা ফাজলামির লিমিট যেন ক্রস না হয়।
আমি আর রিমি মাথা ঝাঁকিয়ে চলে আসলাম।
________________________

গাড়ি যখন মনি আন্টিদের কমিউনিটি সেন্টারের সামনে থামলো তখন সবাই গাড়ি থেকেই ডান্স শুরু করলো।
আমরা গানের তালে ডান্স করতে করতে ভেতরে গেলাম।
বেশ কিছুক্ষণ এভাবে চলার পর সবাই যে যার মতো হলুদ লাগাতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
রিমি আর আমি একটু আলাদা হতে না হতেই মিরন ভাইয়া আমার সামনে এসে হাজির।
আমার মেজাজ টা খানিকটা খারাপ হয়ে গেল।
কিন্তু কিছু বললাম না।

মিরন ভাইয়া বলল
– ফারাবি ইউ লুক সো কিউট।
আমি সৌজন্য মূলক হাসি দিয়ে বললাম
– ধন্যবাদ।

কিছুক্ষণের মাঝেই ফারহান ভাইয়া আমার সামনে উপস্থিত হলো।
দেখেই বুঝতে পারলাম রেগে আছেন।
কিন্তু আমার ভাবনাকে ভুল প্রমান করে ওনি হাসি মুখে মিরন ভাইয়ার সাথে হাত মেলালেন ।
আর আমি নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করলাম।কিছুক্ষণ ওনারা কথা বললেন তারপর ফারহান ভাইয়া আমার দিকে হালকা রাগি চোখে তাকিয়ে বললেন
– ফারাবি লেটস ডান্স।
মেয়ে পক্ষ কে হারাতে হবে না ।

আমি ও একটা ভ্যবলা হাসি দিয়ে বললাম
– হুমম।

ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে ওখান থেকে নিয়ে এলেন।
আর পেছন ফিরে বললেন
– হে মিরন চলো বাজি হয়ে যাক।

রিমন ভাইয়া ও হাসি দিয়ে বললেন
– ওকে ব্রো।

তারপর শুরু হলো ছেলে পক্ষ আর মেয়ে পক্ষের বাজি ধরা ডান্স।
এর মাজে ফারহান ভাইয়া একটি বারের জন্য ও আমার হাত ছাড়ে নি।
বাজি শেষ হয়ে গেলে ও সৌজন্য রক্ষার্থে দু পক্ষ কেই যুগ্ন বিজয়ী ঘোষনা করা হলো।

সব থেকে মজার বিষয় ঘটলো যখন আরিফ চাচ্চু এখানে উপস্থিত হলেন।

সবার হাসির ট্রোল পড়ে গেল। হলুদ সন্ধ্যা তেই জামাই এসে হাজির ।
বউকে দেখার জন্য একদম পাগল হয়ে গেছে ।

আর মনি আন্টি লজ্জায় লাল নীল হচ্ছে।

অনেক আনন্দে সময় টা পার হয়ে গেল।
গাড়িতে উঠে বসা মাত্র ই ঘুমে পড়ে যাচ্ছি ।
রিমির ও চোখে হালকা ঘুম , তাই আমি রিমির কাঁধে মাথা রাখতে ও পারবো না।
ব্যাপার টা বুঝতে পেরে ফারহান ভাইয়া আমাদের মাঝে এসে বসলেন।
আর নরম সুরে বললেন
– ঘুম আসলে ঘুমাতে পারিস।

আমি কিছু বলতে পারলাম না ।
তার আগেই ফারহান ভাইয়া কাঁধে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে হাড়িয়ে গেলাম।
_______________________________

বাসায় এসে চেন্স করে সবার সাথে আড্ডা দিতে দিতে রাত 3 টা পার হয়ে গেল।
বিয়ে বাড়িতে ঘুমিয়ে থাকা সত্যি খুব কষ্টের।
সবার সব কাজ কমপ্লিট হলে 3’40 এর দিকে ঘুমাতে চলে গেলাম।
কিন্তু হঠাৎ মনে পড়ল কালকে সন্ধ্যা তে যে গোলাপ গাছটা কে দেখেছিলাম আর তো দেখি নি।
লাফ দিয়ে উঠে ব্যালকনিতে চলে আসলাম।
ইসসস গাছটাকে স্প্রে ও করি নি।
বড্ড বাজে আমি, আহারে আমার জান টা কেমন শুকিয়ে গেছে ।
গাছটা কে স্প্রে করে কিছুক্ষণ কথা বললাম।
আজকের সমস্ত ঘটনা বললাম , অবশ্য এতো গুলো অভিযোগ করেছি ফারহান ভাইয়ার নামে।
ওনাকে কেন যে বুঝি না আমি, ওনি এমন কেন।
এই ভালো তো এই খারাপ, গাছটার সাথে আর একটু গল্প করে রুমে এসে বেডে শুতেই রাজ্যের সমস্ত চিন্তা ছাড়িয়ে ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেলাম।
________________________________

সকাল ছয় টা বাজতে না বাজতে আম্মু ডাকতে ডাকতে কান ঝালা পালা করে ফেলল।
উফফফ শান্তি মতো কি ঘুমাতে ও পারবো না।
মাত্র ই তো ঘুমালাম, এখনি উঠতে হবে।
আম্মুর ডাকা ডাকি তে কোনো রকমে উঠে দাঁড়ালাম।
দেখি আম্মু একা না পেছনে ফারহান ভাইয়া ও আছেন।

আম্মু বলল
– উঠেছেন ওনি।

ফারহান ভাইয়া রুমে চলে আসতেই আম্মু চলে গেল।

ফারহান ভাইয়া কোমরে হাত গুঁজে বললেন।
ফাস্ট ফ্রেস হয়ে আয় পড়তে বসবি।
আমি আর কি বলব, চুপচাপ ফ্রেস হয়ে এসে বই নিয়ে বসে পড়লাম।
ফারহান ভাইয়া 3 ঘন্টা পড়িয়ে তারপর ছাড়লেন।
কোনো মতে বই গুছিয়ে নাস্তা করতে চলে আসলাম।

বি :দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

? হ্যাপি রিডিং ?

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here