স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 37,38

0
803

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 37,38
ফাতেমা তুজ
37

আজ আমি নিজেই ঘুম থেকে উঠে পড়লাম।
কাল ঘুমানোর আগে এলাম দিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে বই নিয়ে পড়তে বসলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পর চোখের সামনে এক মগ কফি দেখতে পেলাম।
আমি উপরে না তাকিয়েই কফি টা হাতে নিতে নিতে বললাম
– ঠ্যাংস গো।
এটার ই দরকার ছিল ।

কফি কাপে একটি চুমুক দিয়ে শিউরে উঠলাম।
ভালো করে বোঝার জন্য আরেকটা চুমুক দিলাম।
তারপর ই উপরে চোখ তুললাম দেখি ফারহান ভাইয়া দাড়িয়ে আছেন।

আমি খানিকটা বিব্রত বোধ করে বললাম
– আপনি

ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– কাকে ভেবেছিলি?

আসলেই তো কাকে ভেবেছিলাম।
ধ্যাত
ওনার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বললাম
– আপনি কষ্ট করে কফি না বানালে ও হতো।

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বলল
– এইটুকু করাই যায় ।
আচ্ছা ভালো করে পড় , আমি তোর গাছের যত্ন নিয়ে আসি।
আমি মুচকি হেসে সম্মতি জানালাম।
ফারহান ভাইয়া ব্যালকনিতে চলে গেলেন।
আর আমি কফি কাপে চুমুক দিয়ে আবার পড়াতে ফোকাস করলাম।

এভাবেই হাসি মজা আর ব্যস্ততার মাঝে কেটে গেল বেশ কিছুদিন।
এর মাঝে দু বার স্কুলে ও যেতে হয়েছে।
আনিকা আমায় দেখে আর রাগে ফুঁসে কিন্তু মুখে কিছু বলে না।
এর মধ্যে টেস্ট এক্সাম ও হয়েছে, কিন্তু শর্ট করে 2 দিনে।
200 মার্ক এর মধ্যে, বেশ হার্ড হয়েছে প্রশ্ন।
তবু ও আলহামদুল্লিহ স্কুলে ফাস্ট হয়েছি।
যদি ও আমি আমার ক্লাসের ফাস্ট গাল না , আমি থ্রাট গাল।
সব বিষয়ে বেশি পেতাম শুধু ইংরেজির জন্য পিছিয়ে যেতাম।
আর এই কয়েকমাস এ ফারহান ভাইয়া বেশ ভালো করে ইংরেজি মাথাতে ঢুকিয়ে দিয়েছেন।
যার ফল স্বরূপ এই রেজাল্ট ।
__________________________

রাতে ডিনার শেষে পড়তে বসেছিলাম।
আম্মু এসে বলে গেল , কালকে স্কুলে গিয়ে এক্সাম ফর্ম এর ফাইনাল স্বাক্ষর দিতে হবে।
আমি ঠিক আছে বলে আবার পড়ায় মনোযোগ দিলাম।
ইদানিং পড়তে পড়তে বুকে বই নিয়েই ঘুমিয়ে পড়ি।
তাই সন্ধ্যা বেলা তেই এলাম দিয়ে রাখি।
সকাল বেলা এলামের শব্দে জেগে উঠলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে কিছুক্ষণ পড়লাম তারপর একটু রিফ্রেস হওয়ার জন্য ব্যালকনিতে গিয়ে ঘোরাঘুরি করলাম।
রেডি হয়ে নাস্তা করে গলায় স্কুল কার্ড ঝুলিয়ে বেরিয়ে পরলাম।
রিকশা করে স্কুলে চলে আসলাম।
স্যার রা বেশ কিছুক্ষণ আমাদের স্পিচ শুনালেন।
তারপর, পর পর স্বাক্ষর করালেন।
হেড স্যার আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– ওয়েল ডান মামুনি।
এভাবেই এগিয়ে যাও , আমার বিশ্বাস তুমি পারবে।
আমি স্যার কে ধন্যবাদ জানালাম।
স্যার আরো কিছুক্ষণ আমাকে বিভিন্ন ধারনা দিলেন।
তারপর স্যার কে বিদায় জানিয়ে স্কুল গ্রাউন্ড এ চলে আসলাম।
অডিটোরিয়াম ছাড়িয়ে যাচ্ছিলাম তখনি আনিকার কথায় থমকে গেলাম।
আনিকা আর ওর সাঙ পাঙ আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছিলো।
– আরে যানিস আজকাল কিছু মেয়ে স্মাট ছেলে দেখলেই হাত করে নেয়।
সব হলো জালিয়াতি, বেশি ভাব দেখায়।

আমি নিজের রাগ কে সংবরন করে ও করতে পারলাম না।
তাই ওদের কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম।
আমায় দেখে ব্রু কুঁচকে তাকালো ওরা ।
আমি এক তাৎছিল্যর হাসি দিয়ে বললাম।
আমি না হয় জালিয়াতি করে ফারহান ভাইয়া কে হাত করেছি।
আচ্ছা এই মুহূর্তে হাত করা ছেড়ে দিলাম।
দেখা যাক ঠিক কতোটুকু তুই তোর স্পেশাল ফরমালিটিস দিয়ে পাত্তা পাস।
আর হাত করে নিতে পারিস

আনিকা ব্রু কুঁচকে বলল
– এই কয়েকদিনের মধ্যেই একে বারে ফারহান ভাইয়া।
বাহহহ

আমি কিছু না বলে শুধু তাৎছিল্যর হাসি হাসলাম।

আমার ফোনে কোনো সিম নেই।
তাই আনিকা র হাত থেকে ওর ফোন টা নিয়ে সুন্দর করে ফারহান ভাইয়ার নাম্বার টা ডায়াল করে কল করে দিলাম।

যদিও বেশ সাহস দেখিয়ে কল করলাম , কিন্তু ভয় হচ্ছে।
এই লোকটা যখন তখন বকা দিতে পারেন।
বিশ্বাস নেই, হালকা ভয় নিয়েই কল পিক করার অপেক্ষা করলাম।
ফোনটা লাউড স্পিকার এ দিলাম।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া কল পিক করে বলল
– হ্যালো কে বলছেন।

আনিকা কে ইশারা করে বললাম কথা বলতে।
আনিকার মুখে বাঁকা হাসি দেখতে পেলাম।

আনিকা কন্ঠস্বর পরিষ্কার করে বলল
– আমি আনিকা।

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়া বলল
– হুমম বলো।

আমি সামান্য ব্রু কুচকালাম।
ভেবেছিলাম এই বুঝি ওকে দিবে এক ঝারি।
আনিকা আমার দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বোঝালো।
দেখ কে পাত্তা পায় আর না পায়।

আনিকা বলল
– আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো।
এক্সচেলি নাম্বার টা ফারাবি নিজে এসেই আমাকে দিয়েছে।
ও নাকি আপনার পাত্তা পাওয়ার আশা করে না।
তাই আমি ই চলে আসলাম আপনার সাথে কথা বলতে।
আপনাকে আমার বেশ পছন্দ।
আপনি এতো সুন্দর, স্মাট পুরো হিরো।

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়া ঠান্ডা স্বরে বলল
– তাই বুঝি ।

আনিকা খুশিতে গদগদ হয়ে বলল
– একদম।

আনিকা আমার দিকে তাকাতেই আমি মুখ চেপে হাসছি।
কারন আমার কাছে মনে হচ্ছে এই মেয়ে পাগল হয়ে গেছে।
কারন ফারহান ভাইয়ার অলরেডি গার্লফেন্ড আছে।
আনিকা কথা বলাতে আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
ফারহান ভাইয়া বলল
– তো সুইট কিউট আনিকা ফারাবি হঠাৎ কেন তোমাকে নাম্বার টা দিলো।

আনিকা খুশিতে এতোই আত্মহারা হয়ে পড়েছে যে সমস্ত টাই বলে দিল।

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়া কিছু না বলাতে।
আনিকা বলা শুরু করলো
– তো ফাইনালি বুঝতে পেরেছেন এই বাজে মেয়ে আপনাকে এত কম গুরুত্ব দেয়।আর এই কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাকে স্যার না বলে ভাইয়া বলা শুরু করেছে।
কি আজবব

ওপাশ থেকে ফারহান ভাইয়ার হাসি শুনতে পেলাম।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ইউ নো আনিকা , তোমার মতো গাধা খুব কম আছে।

আমি জানতাম ফারাবি ই গাধা, এখন দেখি তুমি তার
থেকে হাজার গুন বেশি গাধা আর সবথেকে বড় বিষয় গাঁয়ে পড়া।

আনিকা র মুখ টা তখন দেখার মতো ছিলো।
আমি কিছু বললাম না আর।
ফারহান ভাইয়া আবার বলা শুরু করলো
– ওওও আমাকে আজ থেকে নয় আরো 15 বছর আগে থেকে ভাইয়া বলে।
ওকে কোলে নিয়ে কতো ঘুরেছি , আর ইউ নো তোমার মতো মেয়ে কে দেখলেই অসহ্য লাগে।
আর হ্যা ফারাবি কে জিজ্ঞাসা করো কিছুদিন আগে ও কোলে নিয়েছি।
ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে , আর ও তোমার মতো গায়ে পড়া না।
তারপর বেশ কিছু বুলি ঝেরে ফারহান ভাইয়া কল কেটে দিলেন।

আনিকা র ফেস ছিলো অমাবস্যার চাঁদের মতো।
আমি আনিকা কে বললাম
– শুনতে পেয়েছিস, ওনি আমার আব্বুর বন্ধুর ছেলে।
সেই ছোট থেকে আমরা সবাই কে চিনি।
সো কারো সম্পর্কে না জেনে কথা বলবি না।
আর আমি কাউ কে হাত করতে চাই না তোর মতো।
যত্তসব

এই বলে চলে আসলাম।
স্কুল থেকে বেরিয়ে একটা ড্রাক চকলেট কিনে রিকশা তে উঠে বাসায় চলে আসলাম।

বাসায় এসে সাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে আসলাম।
সাওয়ার শেষে ট্রাওয়াল দিয়ে চুল পেঁচিয়ে লান্স করে নিলাম।
লান্স শেষ করে বই হাতে ছাদে চলে আসলাম।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল কিন্তু ফারহান ভাইয়া আসছেন না।
আজকে কি অনলাইন ক্লাস নেই।
এসব ভাবনা ছেড়ে রুমে চলে আসলাম।
কিছুক্ষণ রেস্ট করে আবার বইয়ের পাতায় ডুবে গেলাম।
এভাবেই সন্ধ্যা হয়ে গেল।
সন্ধ্যার নাস্তা রুমে ই নিয়ে আসলাম।
এক টুকরো মুখে দিতেই কোথায় থেকে ফারহান ভাইয়া আর রিফাত ভাইয়া উদয় হলেন।
আমি মুখে খাবার চিবোতে চিবোতে বললাম
– কি হয়েছে?

রিফাত ভাইয়া একটা প্যাক দিয়ে বললেন রাত 10 টার সময় রেডি হতে।
আমি ব্রু কুঁচকে বললাম
– এতো রাতে ?

ফারহান ভাইয়া বললেন
– গাঁধা আজকে থার্টি ফাস্ট নাইট আর রাত 12 টার পর নিউ ইয়ার।
সো সবাই বের হবো।
আমি মাথা চুলকোতে চুলকোতে বললাম।
আসলে মনেই ছিলো না।

রিফাত ভাইয়া হেসে বলল
– গাঁধা।
আমি আর কিছু বললাম না।

রাতে রিফাত ভাইয়াদের কথা মতো প্যাক খুলে ড্রেস বের করে নিলাম।
একটা স্কাই ব্লু কালারের লং গ্রাউন একদম সিম্পল, তেমন কোনো ডিজাইন নেই।
কিন্তু বেশ ইউনিক লাগছে।
চুলে সুন্দর ডিজাইন করে খোপা করে নিলাম।
তারপর ফুল দিয়ে তৈরি ব্যান পড়ে নিলাম আর সাথে হালকা করে সেজে নিলাম।
আমাদের বাসা থেকে একটু দূরে স্টেডিয়ামের মাঠে বিশাল বড় অনুষ্ঠান হবে।
তাই বাসার সবাই যেখানে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হলাম।
ওখান থেকে হালকা নাস্তা করলাম।
স্টেডিয়াম টা অপূর্ব ভাবে সাজানো হয়েছে।
বিভিন্ন নাচ গানের মাধ্যমে থার্টি ফাস্ট নাইট সেলিব্রেশন চললো।
বেশ মজা লাগছে, সবাই মিলে হৈ হুল্লর করলাম।
কিছুক্ষণ পর বলা হলো নিউ ইয়ার এর আর দুই মিনিট বাকি।
সবাই হাতে ফানুস নিয়ে দাঁড়ালাম তারপর একযোগে কাউন্ট করা শুরু করলাম।
10
9
8
7
6
5
4
3
2
1
আর সাথে সাথে চারদিক থেকে বাজি উঠে গেল।
আকাশে বিভিন্ন ধরনের আকৃতি হচ্ছে আর আমরা সবাই এক যোগে ফানুস উড়ানে শুরু করলাম।
সবাই হৈ হুল্লর করতে করতে হ্যাপি নিউ ইয়ার সেলিব্রেশন করলাম।
এভাবেই হাজারো খুনসুটি আর ব্যস্ততাতে কেটে গেল একটি মাস।
অবশেষে সেই কাঙ্ক্ষিত দিন ও এসে পড়লো।
এস এস সি এক্সাম, পিপারেশন যথেষ্ট ভালো হলে ও টেনশনের কমতি নেই।
পরীক্ষা চলাকালীন বেশ পরিশ্রম করেছি।
কারন আমার প্রমিস আমাকে রাখতেই হবে।

চলবে
ফাতেমা তুজ

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 38
______________________________

আজকে আমার সর্বশেষ পরীক্ষা।
মনে উত্তেজনা কাজ করছে, সব গুলো পরীক্ষা আলহামদুল্লিহ বেশ ভালো দিয়েছি, আজকের এক্সাম টা ভালোই হলেই সমস্ত পরিশ্রম সার্থক।
তারপর আল্লাহ্ ভাগ্যে যা রেখেছেন তাই হবে।
নিজের মন কে বলতে তো পারবো ,আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলাম।
পরীক্ষার হলে গিয়ে নিজের সিটে বসলাম।

প্রথমেই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলাম।
তারপর নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করলাম।
পরীক্ষার বেল বাজিয়ে দেওয়া হলো।
প্রশ্ন হাতে নিয়েই একবার সমস্তটা পড়ে নিলাম।
কমন পড়েছে সব , কিন্তু উত্তেজনা বাড়তে দিলাম না।
উত্তেজনা বেড়ে গেলে, শেষ মেষ পাড়া জিনিস ও ভুল করে ফেলব।
নিজের মস্তিষ্ক কে যথাসম্ভব ঠান্ডা রেখে পরীক্ষা দেওয়া শুরু করলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল।
সর্বশেষ লাইন টা লিখার সময় আমার হাত পা কাঁপছিল।
কতোক্ষন যে লাগল আমার শেষের লাইন টা লিখতে আমি নিজে ও জানি না।
অবশেষে একটি শব্দের মাধ্যম পরীক্ষার ইতি টানলাম।
খাতা জমা দিয়ে হল থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে বের হয়ে গেলাম।
আমার খুশি দেখে আশে পাশের সবাই তাকিয়ে আছেন।
বের হয়ে বাইরে যেতেই আম্মু , বড় মা , বড় আব্বু, আব্বু, চাচ্চু, কাকিমা ,
মনিকা আপু , রিফাত ভাইয়া সবাই কে দেখতে পেলাম।
সবাই কে দেখে, বেশ অবাক হলাম । কারন আমার জানা ছিলো না আজকে সবাই আসবে।
সবাই আমার খুশি দেখে আনন্দিত হলো।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করলাম।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া কে দেখতে পেলাম না এক মুহূর্তের জন্য মন টা খারাপ হয়ে গেলো।
হঠাৎ কিছু একটা মনে করে পেছনে তাকাতেই আমার উপর অজ্রস ফুলের পাপরি এসে পড়ল।
ফারহান ভাইয়া বড় একটা টেডিবিয়ার হাতে নিয়ে এগিয়ে এসে বলল।
কনগ্রেচুলেশন , তুই তোর বেস্ট দিয়ে চেষ্টা করেছিস , আর তার জন্য এই ছোট্ট উপহার।
আমি ফারহান ভাইয়ার হাত থেকে টেডিবিয়ার নিয়ে বললাম
– ঠ্যাংস।
আশে পাশের সবাই আমাদের দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছেন।
আসলেই একটা পরিবার কতো টা ভালোবাসে এভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারে।
সত্যি আমি অনেক বেশি লাকি। মহান আল্লাহর কাছে লাখো লাখো শুকরিয়া ।
তারপর সবাই মিলে একসাথে আড্ডা দিলাম।
আর একসাথে খাওয়া দাওয়া ও করলাম।
যেহেতু আমার পরীক্ষা শেষ আর আব্বুর কাজ আরো দুই মাস আগে এ কমপ্লিট হয়ে গেছে তাই এখন সিলেটে থাকার মানেই হয় না।
সবাই আলোচনা করে ঠিক করলো এই সপ্তাহে অথার্ৎ তিন দিন বাদেই আমরা ঢাকা বেক করছি।
আমি মহা খুশি হয়ে গেলাম।
আসলেই নিজের জন্মস্থান এর উপর আলাদা মায়া থাকে।
সবাই আমাকে বেশ কিছু গিফট কিনে দিলো।
তারপর সবাই মিলে হৈ হুল্লর করতে করতে বাসাতে ফিরে এলাম।
_________________________

তিন দিন সবার প্রচুর ব্যস্ততার মাঝে কাটলো।
সবাই যে যার মতো গুজগাছ করতে ব্যস্ত, আর আমি সব লন্ডভন্ড করতে।
আসলে একটা বাজে অভ্যাস আছে আমার, গুজগাছ একদম ই পারি নি।
কি ঝামেলা রে বাবা, একটা গোছাতে গেলে দুটো নষ্ট করে দেই।
আম্মু আর বড় মা কোনো মতে আমার জিনিসপত্র গুছিয়ে দিলো।
আমি হা হয়ে দেখলাম, কতো সুন্দর করে গুছিয়ে ফেলল।
আর আমি দুটো দিন চেষ্টা করে ও পারলাম না।
পুরাই অক্ষম, আল্লাহ্ ই জানেন আমার জামাই এর কি হবে।
বেটা তো আমারে সামলাতে গিয়ে হিমসিম খাবে।
এই সব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ হেসে উঠলাম।
আম্মু আর বড় মা ব্রু কুচকালেন।
আমি মেকি হাসি দিয়ে বললাম
– আসলে একটা ফানি বিষয় মনে পড়ে গেল তাই হাসলাম।

বড় মা আর আম্মু সমস্ত টা গুছিয়ে চলে গেলো।
আর আমি পায়ের উপর পা তুলে বেডে বসে গেইম খেলতে লাগলাম।
সমস্ত কিছু গুছিয়ে আগেই ট্রাক ভর্তি করে ঢাকা পাঠিয়ে দিলো।
আমি হা হয়ে রইলাম এগুলো কোথায় রাখবে, ঢাকা তো একটু ও স্পেস নেই।
পরক্ষণেই অবাক করে দিলো , কারন সব কিছুই রেখে যাচ্ছে ।
শুধু দরকারি কিছু জিনিস ই নেওয়া হচ্ছে।
তাহলে কি আমি চোখে ভুল দেখলাম, ভাই খুশিতে কি মাথা নষ্ট হয়ে গেল নাকি।
অবশেষে সিলেট এর বাসা টি তে কেয়ার টেকার রেখে আমরা চললাম আমাদের গন্তব্যে।
এয়ারপোর্টে পৌছে গেলাম সন্ধ্যা তেই, এয়ারপোর্টে কিছু ফরেনার দেখে আমি লাফালাফি শুরু করলাম ।
আমি ওদের সাথে কথা বলবই।
অবশেষে ফারহান ভাইয়া, রিফাত ভাইয়া মনিকা আপু আর আমি ওদের সাথে কথা বলতে গেলাম।
বিদেশীরা এতো মিশুকে হয় তা আমার মোটে ও ধারনা ছিলো না।
ওদের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম, ওরা স্টুডেন্ট ।
ওরা বাংলাদেশে টুরে এসেছে , বেশ কিছুক্ষণ ওদের সাথে গল্প করে ছবি তুলে নিলাম।
তারপর ওদের বিদায় জানিয়ে চলে গেলাম ফ্লাইট এর উদ্দেশ্যে।
রাত 10 টায় বাসায় এসে পৌছালাম।
আহহহ শান্তি নিজের বাসায়।
অসাধারণ লাগছিল, শরীর টা ভিষন দুর্বল হলে ও এক অদ্ভুত শান্তি অনুভব করছিলাম।
ফ্রেস হয়ে এসে ডিনার সেরে নিলাম তারপর ঘুমে ডুবে গেলাম।
___________________________

এভাবেই কেটে গেল 2 মাস।
কিছু সমস্যার কারনে রেজাল্ট দেওয়ার ডেট পিছিয়ে 9 মে করা হলো।
আমরা এখানে এসে সবাই মিলে হৈ হুল্লর করতে করতে দু বার পিকনিক ও করলাম । সবাই একসাথে হাসি মজা, আর আনন্দ নিয়ে দেখতে দেখতে চোখের পলকে
এভাবেই 9 দিন পেরিয়ে আসল 9 মে।
আজকের দিনটিতে ফারহান ভাইয়ার বড় ভাইয়া রাফাজ ভাইয়া ডক্টরেট কমপ্লিট করে বাংলাদেশে আসছেন।
তাই আজকে বিশাল বড় পার্টির আয়োজন করা হয়েছে।
কিন্তু সকাল থেকেই আমি টেনশনে মরে যাচ্ছি।
যদি ফারহান ভাইয়া কে দেওয়া কথা রাখতে না পারি।
টেনশনে কেঁদেই দিলাম, সবাই আমাকে বার বার বোঝাচ্ছেন।
কিন্তু মন তো বুঝতে চাচ্ছে না।
অবশেষে সমস্ত চিন্তার ছন্দপতন ঘটিয়ে রিফাত ভাইয়া আর ফারহান ভাইয়া খবর দিলেন যে আমি পুরো সিলেটের মধ্যে প্রথম হয়েছি।
ঐ মুহূর্তে আমি কোথায় আছি , আমি বলতে পারব না।
আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
সবাই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল।
রিমি ও খুব ভালো রেজাল্ট করেছে।
তাহলে তো এবার ডাবল না একে বারে হেডট্রিক খুশি হয়ে গেলো সবার মাঝে ।
রিমি আমাকে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো।
আমি ও জড়িয়ে ধরলাম।
ফারহান ভাইয়ার মুখের এক কোনে আমি মৃদু হাসি দেখতে পেলাম।
এই মানুষটার জন্য ই আমার এই রেজাল্ট।
সব তো ওনার জন্য ই হলো।
মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে ওনি আমাকে বকে বকে পার করে দিলেন।
আজ আমরা সবাই মহা খুশি ।

_____________________________

বিকেল এ রাফাজ ভাইয়া এসে পরলেন।
সবার সাথে কুশল বিনিময় করলেন।
আমাকে কংগ্রেস জানালেন, আমি ধন্যবাদ বললাম।
ভাইয়া আমাকে আর রিমি কে সেইম ডিজাইনের ওয়াচ সেট দিলেন।
অসাধারণ ওয়াচ সেট টা, 12 টা ওয়াচ একসাথে আর প্রতি টাই ভিন্ন ভিন্ন ব্যান্ড ।
আজ কে সন্ধ্যা তে রাফাজ ভাইয়ার জন্য বিশাল পার্টি হবে তাই সবাই রেডি হচ্ছি।
আজকে একটা নরম কাপড়ের লং গ্রাউন পড়লাম , সাথে হালকা মেকআপ করে নিলাম।
পার্টি টা ফারহান ভাইয়া দের বাসাতেই করা হচ্ছে।
দেশের অনেক বড় বড় লোকেরা এই পার্টি তে এসেছেন।
বিভিন্ন ভাবে এই পার্টি কে আলোকিত করা হচ্ছে।
নাচ গানের সাথে ম্যাজিক ও হচ্ছে ।
রিমি আর আমি বেশ কিছুক্ষণ হাতে জুস নিয়ে পার্টি ইনজয় করলাম।

কিছুক্ষন পর একসাথে ম্যাজিক দেখছিলাম , আর তখনি একটা আপুর গায়ে জুস পড়ে গিয়েছিলো।
রিমি কে ডেকে বলল একটু ওয়াসরুম টা দেখিয়ে দিতে।
রিমি চলে গেলে আর আমি একাই ম্যাজিক দেখতে লাগলাম।
ম্যাজিক শেষ হলে বাগান থেকে একে একে সবাই চলে যেতে লাগল ডিনারের জন্য আমি ও যেতে লাগলাম।
কিন্তু পেছন থেকে একজন আমার মুখ চেপে টান মেরে খানিকটা দূরে সরিয়ে নিয়ে গেল।
আমার মুখ ছাড়তেই পেছনে ঘুরে দেখলাম যে একটা ছেলে দাড়িয়ে আছেন।
বয়স ফারহান ভাইয়া দের থেকে দু কি এক বছরের বড় হবে।
আমি বিরক্তি নিয়ে বললাম
– এই রকম অসভ্যতার মানে কি ?

লোকটা আমাকে পা থেকে মাথা অব্দি দেখতে লাগল।
যার কারনে আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল, কারন লোক টার চাউনি ছিল বিকৃতি মস্তিষ্কের।
আমি লোকটাকে সুবিধা না বুঝে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে গেলে লোকটা আমায় ধরে ফেলে।
আমি টানা হেচরা করতে করতে বললাম
– ছাড়ুন , কি ধরনের অসভ্য তা এইগুলা।
ছাড়ুন ,
লোকটার থেকে নিজেকে কিছু তেই ছাড়াতে পাড়ছিলাম না।
লোকটা আমার হাত ধরে রেখেই বলল
– হোয়াই বেবি।
যেখানে আমার কাছে আসার জন্য মেয়েরা লাইন ধরে থাকে সেখানে তুমি চলে যেতে চাচ্ছো।
দিস ইস নট ফেয়ার বলেই লোকটা আমার ঘাড়ে স্পর্শ করতে গেলে কেউ একজন লোকটার হাত ধরে ফেলে।
চোখে পানি নিয়ে তাকাতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া।
ফারহান ভাইয়া কে দেখে শরীরের শক্তি অনুভব করলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে এক নজর তাকিয়ে নিজেকে সামলে যথাসম্ভব ধীর কন্ঠে বললেন
– একটা মেয়ে যখন নিজে কে ছাড়াতে চায় তখন তাকে ছেড়ে দেওয়া উচিত রিক।

রিক ভাইয়া একটা হাসি দিয়ে বললেন
– আরে ফারহান।
সি ইজ টু মাস হট ইয়ার । একে ছাড়ি কি করে, আর মেয়েদের ঝাঁঝ না থাকলে মজা কিসের ।

এই বলেই অদ্ভুত ভাবে হাসলেন।

ফারহান ভাইয়া চোখ বুজে নিলেন।
ওনার দিকে তাকাতেই বুঝলাম ওনি খুব রেগে যাচ্ছেন।
আমি ফারহান ভাইয়া র কোর্ট এর হাতে ধরে বললাম
– প্লিজ এখান থেকে চলুন।

ফারহান ভাইয়া আমাকে এক হাতে জড়িয়ে বললেন
– ফারাবি এখান থেকে এখন যা।
আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বললাম
– নাহহ আপনি আমার সাথে চলুন।

ফারহান ভাইয়া আমাকে জোরে ধমক দিলেন।
যার কারনে আমি ভয়ে কেঁপে উঠলাম।
চোখ দিয়ে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ছিলো।
কিন্তু তার আগেই ফারহান ভাইয়া আমায় জড়িয়ে ধরে চোখে পানি মুছে দিলেন।
তারপর দু গালে হাত রেখে বললেন
– একদম কাঁদবি না।
আমি যাচ্ছি , চল

ফারহান ভাইয়া আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই পেছন থেকে রিক ভাইয়া বললেন
– হে তোমাকে এক রাতের জন্য হলে ও আমার চাই।
যতো টাকা লাগবে দিবো।

ফারহান ভাইয়া হাতের মুষ্টি বন্ধ করে নিলেন।
চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে, রাগে কপালে কিঞ্চিত ভাঁজ পড়ে গেছে।
আমি ফারহান ভাইয়া র হাত চেপে ধরলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে হাত টা ছাড়িয়ে গিয়ে সোজা রিক ভাইয়া কে ঘুষি মেরে দিলেন।
তারপর পর পর এক ধারে মারতে লাগলেন।

ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
আমি বার বার বলছিলাম
– ওনাকে ছেড়ে দিন।

কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমার কোনো কথাই শুনছেন না।

বাগানের দিক টা তে এখন মানুষ জন নেই সবাই ডিনার করতে চলে গেছেন।
না হলে তো পুরো হৈ হুল্লর হয়ে যেত।

আমি ওনাকে কিছু তেই থামাতে পারছি না।
ওনার দিকে এগোতে ও সাহস পাচ্ছি না।
ভয়ে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে কাঁপছিল।
মাথা টা ঘুরছিলো , তারপর কি হলো আমার আর মনে নেই।

____________________________

ঘুম ভাঙলে মাথা টা চেপে ধরে উঠে বসলাম।
এখনো মাথা টা বেশ ব্যাথা করছে ।
আশে পাশে তাকিয়ে দেখি আমার বাসার সবাই আর ফারহান ভাইয়ার বাসার সবাই বসে আছে।
আমাকে উঠতে দেখে রোমা আন্টি বলল
– এখন ঠিক লাগছে মা ?

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে মলিন হাসি দিয়ে বললাম
– হুমম।

আম্মু আর বড় মা আমাকে বলল
– এখন কোনো সমস্যা হচ্ছে নাকি ?

আমি মাথা টা হালকা চেপে বললাম
– হুমম। মাথা ব্যাথা করছে।

ফরহাদ চাচ্চু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– ঠিক হয়ে যাবে রেস্ট নে।

তারপর রাফাজ ভাইয়া আমার পাশে বসে বললেন
– তো ফারাবি বুড়ি একটু চেকআপ করে নিই।

আমি হালকা হেসে মাথা ঝাঁকিয়ে সম্মতি জানালাম।
রাফাজ ভাইয়া আমাকে দেখে বললেন
– হুমম এখন অলরাইট।
একটা টেবিলেট খেয়ে নিলেই মাথা ব্যথা সেরে যাবে।

বড় আম্মু আমাকে একটা টেবলেট খাইয়ে দিলো।
আস্তে আস্তে সবাই আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।
রিমি আমার পাশে বসে রইলো ।
রিমির দিকে তাকাতেই রিমি আলতো হেসে বললো।
রেস্ট নে একদম চিন্তা করবি না।
তখনো জানতাম না আমার জন্য কি চমক অপেক্ষা করছে।
রিমি বলল
– তোর জন্য নাস্তা নিয়ে আসছি।
আমি মাথা ঝাকালাম, রিমি চলে যেতেই কিছুক্ষণ ওর যাওয়ার দিকে চেয়ে রইলাম।
তারপর হঠাৎ খেয়াল হলো কোথাও তো ফারহান ভাইয়া কে দেখতে পেলাম না ।
উনি ঠিক আছেন তো।
আর কালকে কি হয়েছিল।
আবার মাথা ব্যাথা টা বাড়ছে।
মাথা চেপে ধরতেই রিমি খাবার নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল
– মাথা তে একদম প্রেসার দিবি না।
তুই এতো চিন্তা করিস না , সব ঠিক হয়ে যাবে।

রিমির দিকে আমি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে চেয়ে রইলাম।
রিমি আমার পাশে বসে বলল
– ভাইয়া আসছে আমি যাই।
আমি কিছু বলার আগেই রিমি চলে গেল।

কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আসলেন।
ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনার বা হাতে ব্যান্ডেজ করা।
বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো।
আমার জন্য ওনি কষ্ট পেলেন।

ফারহান ভাইয়া আমার পাশে বসলেন।
আমি বললাম
– আপনি ব্যথা পেয়েছেন।

ফারহান ভাইয়া আমার ঠোঁটে আঙুল ছুঁইয়ে বললেন
– একদম চুপ।
তোকে এতো ভাবতে হবে না।

ঠোঁটে ওনার আঙুলের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলাম।
কিন্তু হঠাৎ বড্ড কষ্ট হচ্ছে।
মনে হচ্ছে কিছু হতে চলেছে।
কেমন যেন লাগছে, বড্ড বাজে অনুভূতি।

ফারহান ভাইয়া সাইট টেবিল থেকে খাবার নিয়ে এক টুকরো খাবার আমার দিকে এগিয়ে দিলেন।

আমি কিছুক্ষণ ওনার বা হাতের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।ইসসস কতো টা ব্যাথা পেয়েছেন ওনি।
তারপর বললাম
– আপনি খেয়েছেন?

ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে বললেন
– তোকে খাইয়ে খেয়ে নিবো।
আমি মাথা নাড়ালাম তারপর ফারহান ভাইয়ার হাতেই খেয়ে নিলাম।
খাওয়া শেষ হয়ে গেলে ফারহান ভাইয়া আমায় শুইয়ে দিয়ে চলে গেলেন।
উনি যখন যাচ্ছিলেন তখন আমার বড্ড কষ্ট হচ্ছিলো।মনে হচ্ছিল কিছু একটা আমার থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।
কিন্তু কেন এমন লাগছে ?
_____________________________

বিকেল পেরিয়ে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই এখন শরীর টা ঠিক লাগছে ।
তাই বেড থেকে উঠে গিয়ে ফারহান ভাইয়াদের বিশাল ছাদে চলে গেলাম।
ছাদের এক পাশে পুরোটাই ফুলের সমাহার ।
কিছুক্ষণ ফুল গুলো র সাথে খেলা করলাম।
মনটা তে একটু ও শান্তি লাগছে না।
মাথার উপর রক্তিম আকাশের লাল আলো বুঝিয়ে দিচ্ছে সূর্য্যি মামা অস্ত যাচ্ছেন।
ছাদের এক কোনে গিয়ে রক্তিম আকাশের দিকে তাকিয়ে সূর্যের অস্ত যাওয়ার সময় গুনছিলাম।
ঠিক সেই সময়ে ই হঠাৎ করে পেছন থেকে ফারহান ভাইয়ার ডাক অনুভব করলাম।
পেছনে তাকাতেই দেখলাম,
ফারহান ভাইয়া আমার থেকে বেশ খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে আছেন।
আমি ওনাকে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে বেশ অবাক ই হলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে ই কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে খানিকটা এগিয়ে এলেন।
উনি এভাবে কাপছেন কেন ?
ওনি আমার এক হাত দূরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছেন ।
কিছুক্ষণ ঐ ভাবেই দাড়িয়ে রইলেন।
তারপর মাথা নিচু করে ই বললেন
– ফারাবি আমি তোকে একটি বার জড়িয়ে ধরতে পারি ?

আমি ওনার এমন প্রশ্নের কারন বুঝতে পারলাম না।
এর আগে ও ওনি বহু বার আমায় জড়িয়ে ধরেছেন।
তাহলে আজ কেন অনুমতি নিচ্ছেন?
ফারহান ভাইয়া আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলেন।
আমি অবাক হলাম না,কিন্তু এক ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম।
এ ভাবেই বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমাকে ঐ ভাবে ই জড়িয়ে আছেন।
কিছুক্ষণ পর কাঁধে উষ্ণ পানির স্পর্শ পেলাম।
তার মানে উনি কি কাঁদছেন ?
কিন্তু কেন কাঁদছেন?
আমি তো আমার জীবনকালে ওনাকে কখনো কাঁদতে দেখি নি ।
উনি তো কখনো কাঁদেন না তাহলে হঠাৎ আজ কেন কাঁদছেন।
এভাবে আরো কিছুক্ষণ কেটে গেল কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমাকে ছাড়লেন না।
রক্তিম আকাশ ঘন কালো আঁধারে ছেয়ে গেছে, জানান দিচ্ছে যে সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের দিকে পর্দাপন করছে।
এতো সময় পার হয়ে যাওয়ার পর ও ফারহান ভাইয়া আমাকে ঐ ভাবেই জড়িয়ে ধরে আছেন।
আমি কিছু বলতে পারছি না, মনে যেন কেউ যেন আমার বাকশক্তি বন্ধ করে নিয়েছে।
বেশ কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া আমায় ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ালেন।
বুঝতে পারলাম চোখের পানি আড়াল করছেন।
তারপর ফারহান ভাইয়া আমার দিকে ফিরে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি রেখে কাঁপা কাঁপা দু হাত দিয়ে আমার দু গাল স্পর্শ করলেন।
ওনার স্পর্শ পেতেই আমার শরীরের প্রতি টা নিউরন সজাগ হলো।
ধীরে ধীরে ফারহান ভাইয়া আমার কপালের সাথে ওনার কপাল ঠেকিয়ে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রইলেন।
হঠাৎ করেই ওনি ওনার উষ্ণ ঠোঁট আমার কপালে ছুঁইয়ে দিলেন।
কপালে ওনার উষ্ণ ঠোঁটের কোমল স্পর্শ পেয়ে আমি শিউরে উঠলাম।
বেশ কিছুক্ষন সময় নিয়ে ওনি আমার কপালে চুমু খেলেন।
তারপর আমার হাতের দিকে তাকিয়ে রইলেন ।আমার দু হাত ওনার দু হাত দিয়ে আবদ্ধ করে নিলেন। ওনার হাত এখনো কাঁপছে ।
কিন্তু কেন?
তারপর মৃদু হেসে নরম সুরে বললেন
– ফারাবি তোকে বড় হতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি তোকে বড় হতে হবে।
এসে যেন ছোট না দেখি, প্লিজ বড় হয়ে যাস।
প্লিজ

উনি কোথায় যাবেন, সব কিছুই যেন আমার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
কিচ্ছু বুঝতে পারছি না আমি।
সবকিছু চেনা হয়ে ও কেন অচেনা লাগছে।

আমি কিছু ই বলতে পারলাম না।
ফারহান ভাইয়া আমায় রেখেই চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়লেন।
কিছু একটা ভেবে আবার পিছু ফিরে তাকালেন, একটা শুষ্ক হাসি দিয়ে নিচে চলে গেলেন।
আমি ওনার যাওয়ার দিকে ঐ ভাবেই দাড়িয়ে ঠায় তাকিয়ে রইলাম।
বেশ কিছুক্ষণ পার হয়ে গেল।
হঠাৎ করে আমি দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।
নিচে এসে দেখলাম সবাই বাসার মেইন ডোরের কাছে দাড়িয়ে আছেন।
আমি কাঁপা কাঁপা শরীর নিয়ে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলাম।
মেইন ডোরের কাছে গিয়ে দেখলাম একটা ব্লু গাড়ি চলে যাচ্ছে।
এটা তো ফারহান ভাইয়ার গাড়ি, ফারহান ভাইয়া কোথায় যাচ্ছেন ?
সব কেন গুলিয়ে যাচ্ছে আমার ।
মাথা টা কেমন ঝিম ধরে যাচ্ছে।
বাসার সরু রাস্তা দিয়ে গাড়ি টা এগিয়ে যেতে লাগলো।
সবাই এক ধ্যানে গাড়িটার দিকে চেয়ে রইলো।
গাড়িটা বাসার সরু রাস্তা পেরিয়ে চক্ষু দৃষ্টি র আড়াল হওয়া অব্দি সবাই তাকিয়ে ই রইলো।
গাড়ি চক্ষু দৃষ্টি র আড়াল হলে ই সবাই পেছন ফিরে তাকালো।
হঠাৎ করে আমায় এভাবে পেছনে দেখে সবাই বেশ চমকে গেলো ।
আমি সবার দিকে জিজ্ঞাসা দৃষ্টি তে চেয়ে আছি।
ফরহাদ চাচ্চু আমার দিকে এগিয়ে এসে মলিন হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন
– এখন ঠিক আছিস মা?

আমি মাথা নাড়ালাম তারপর আব্বু এসে বললেন
– উপরে গিয়ে রেস্ট নে।
ভালো লাগবে

আমি এবার ও মাথা ঝাকালাম।
রিফাত ভাইয়া এসে বলল
– চল।

আমাকে এক পা ও এগোতে না দেখে রিফাত ভাইয়া হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো।
কোনো মতে এক পা এগিয়ে গিয়ে আরেক পা বাড়ানোর আগেই রিফাত ভাইয়ার কোলে জ্ঞান হাড়ালাম।

___________________________

রাত 10 টার দিকে আমার জ্ঞান ফিরলো।
এখন খানিকটা ভালো লাগছে, রিমি আমার পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলো।
আমার জ্ঞান ফিরতে দেখে আমায় উঠে বসতে সাহায্য করলো।
আমি আধসোয়া হয়ে বসলাম।
রিমি মুচকি হেসে বলল
– ফ্রেস হয়ে নিবি আয়, তারপর ডিনার করবি।

আমি রিমির হাত ধরে বললাম
– একটা কথা বলবি আমায়?

রিমি আমার হাতে হাত রেখে বলল
– হ্যা বল না ।

আমি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি তে তাকিয়ে বললাম
– সেই দিন রিক ভাইয়া কে ফারহান ভাইয়া মারছিলেন তারপর কি হয়েছিল ।

রিমি মলিন হেসে বলল
– বলব তার আগে ফ্রেস হয়ে নে, তারপর ।
আমি আর কিছু বললাম না।
রিমি আমাকে ফ্রেস হতে সাহায্য করলো, তারপর ডিনার করিয়ে দিলো।

আধসোয়া করে, তারপর সেইদিনের ঘটনা বলা শুরু করলো।
______________________

অন্য দিকে ফারহান ককপিট এ বসে মাথা নিচু করে বসে আছে।
একজন কেবিনক্রিও এসে বলল
– স্যার কিছু লাগবে ?
ফারহান কেবিনক্রিও কথায় একপলক তাকিয়ে বলল
– নাহহ।
কেবিনক্রিও চলে যেতে নিলে, ফারহান আবার থামিয়ে দিলো।
কেবিনক্রিও বলল
– ইয়েস স্যার ।
ফারহান মাথা টা উঁচু করে বলল
– একটা কফি দিয়ে যাবেন।
আর হ্যা ব্ল্যাক কফি , উইদাউট সুগার।

কেবিনক্রিও ওকে স্যার বলে চলে গেল।
ফারহান ককপিট এ করে অস্ট্রেলিয়া তে যাচ্ছে।
সেখানে তার দুই ফুফু থাকেন, আর ফারহান সেখানেই যাচ্ছে।
ফারহানের দুই ফুফুর বিয়ে এক বাড়িতেই হয়েছে।
বিয়ের পর দু ভাই বউকে নিয়ে অস্ট্রেলিয়া তে সেটেল হয়ে গেছে।
আজ 25 বছর ধরে অস্ট্রেলিয়া তে ওদের বাস।

কেবিনক্রিও এসে বলল
– স্যার ইউর কফি।
ফারহান মৃদু হেসে বলল
– ঠ্যাংস।
কেবিনক্রিও ইটস মাই প্লেজার স্যার বলে পা বাড়ালেন।
ফারহান কফি কাপে চুমুক দিয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে নিলো।

সেইদিনের ঘটনা

ফারহান যখন রিক কে মারছিল তখন ফারাবি অনেকবার বলে ছেড়ে দিতে কিন্তু ফারহানের কানে কোনো শব্দ ই পৌছায় নি।
রিক কে একা ধারে মারতে থাকে।
আর এই সব ঘটনা প্রথম থেকেই দেখছিলো বাসার কাজের লোক রহিম।
যখন দেখলো ফারহান রিক কে মারছে , তখন রহিম দৌড়ে গিয়ে সবাই কে খবর দিলো।
রহিমের খবর পেয়ে সবাই ছুটে চলে আসে।
কিন্তু আসা মাত্র ই দেখে ফারাবি মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যাচ্ছে।
রাফাজ সবার থেকে একটু আগে থাকায় , ফারাবি কে ধরে নেয়।
তারপর রিমির কাছে দিয়ে রাফাজ আর রিফাত ফারহান কে আটকাতে যায়।
দুজন বলিষ্ঠ দেহের মানুষ মিলে ও ফারহান কে ছাড়াতে অক্ষম হচ্ছিল, তখন রানা আর জামান এসে যোগ দেয়।
বহু কষ্টে রিক কে ফারহানের হাত থেকে আলাদা করে।
ফারহান বলতে থাকে
– ছাড় আমায় , আজকে ঐ জানো***** কে শেষ করে দিবো।
ওর সাহস কতো বড় ,

রাফাজ ফারহান কে জড়িয়ে ধরে বলে
– ভাই থাম , ও কি করেছে কি?
যার জন্য ওকে এভাবে মারছিস ?

ফারহান নিজের উত্তেজনা আর রাগ সামলাতে না পেরে বলা শুরু করে
– কি করেছে , বল কি করে নি।
ও আমার ফারাবির হাত স্পর্শ করেছে, তা ঔ কিছু বলি নি।
কিন্তু তারপর বলে যে, একটি রাতের জন্য হলে ও ফারাবি কে ওর চাই ।
যতো টাকা লাগবে দিবে।

ঐ জানো**** সাহস কতো বড় ও আমার ফারাবি কে টাকা দিয়ে তুলনা করছে।
সবাই ফারহানের দিকে তাকিয়ে আছে।
কি বলল কি ফারহান , ওর ফারাবি।
এর মানে তো সেটাই দাঁড়ায়।
এক পর্যায়ে ফারহানের চোখ যায় রিমির দিকে।
রিমির কোলে জ্ঞান শূন্য হয়ে আছে ফারাবি।
ফারহানের বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠে।
সবাই কে ছাড়িয়ে কোনো মতে ছুটে যায় ফারাবি র কাছে।
ফারাবি র কাছে পৌছে ফারাবি র গালে আলতো করে ঠাপ্পর দিতে থাকে আর বলতে থাকে
– এই ফারাবি, ফারাবি তুই ঠিক আছিস তো।

ফারাবি র জ্ঞান না ফেরার কারনে ফারহান কে পাগল পাগল লাগছিলো।
সবাই ফারহানের কান্ডে হতবুদ্ধি হাড়িয়ে ফেলে।
ফারহান রাফাজ কে বলতে থাকে
– এই ভাইয়া , দেখ ওর কি হয়েছে।
ও কথা বলছে না কেন ?

রাফাজ ফারহানের কাঁধে হাত রেখে বলে
– শান্ত হ ।
আগে ওকে রুমে নিয়ে যেতে হবে।

ফারহান আর কিছু না বলে সোজা ফারাবি কে কোলে তুলে রিমির রুমে নিয়ে আসে।
সবাই কিছুক্ষণ ফারহানের যাওয়ার দিকে চেয়ে থাকে তারপর ওর পিছু পিছু যেতে থাকে।
ফারহান ফারাবি কে বেডে শুইয়ে দিলেই রাফাজ এসে চেইক করে।
আসলে কয়েক মাস আগে বড় রকমের অসুস্থতা কাটিয়ে তুলেছে তারপর পড়াশুনা তে অনেক পরিশ্রম করেছে।
আর আজকের ঘটনায় ওর ব্রেনে বেশ চাপ পড়ে যার কারনে ও জ্ঞান হাড়িয়ে ফেলে ।
কিন্তু এখন ওর রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন তাই রাফাজ ফারাবি কে একটা সুই পুস করে দেয়।
সারা রাত ফারাবি জ্ঞান শূন্য হয়ে ছিলো।
ফারহান ফারাবি র হাত আকরে ধরে বসে ছিলো।
এক মূহুর্তের জন্য কোথাও যায় নি।
সকালের দিকে সবার জোড়াজোড়ি তে ফ্রেস হতে যায় । আর তখনি ফারাবির জ্ঞান ফিরে।
_______________________

দুপুরে যখন ফারাবি ঘুমোচ্ছিলেন তখন সবাই ফারহান কে জিজ্ঞাসা করে ফারাবি র প্রতি তার অনুভূতি ।
ফারহান কোনো রকম সংকোচ না করে বলে দেয় ও ফারাবি কে ভালোবাসে আর বিয়ে করতে চায়।
ফারাবির সাথেই জীবনের শেষ সময় অব্দি কাটাতে চায়।
এতে কারো আপত্তি থাকার কথা নয় কিন্তু ফারহানের বাবা, ফারাবির বাবা আর ফারাবির বড় আব্বু আলাদা ভাবে আলোচনাতে বসেন।
বন্ধ ঘরের ভেতর তারা বেশ কিছুক্ষণ আলোচনা করেন।
বাকি সবাই বাইরে দাড়িয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে।
সবার মুখে চিন্তার ছাঁপ ফুটে উঠছিলো।
শুধু ফারহানের মুখে কোনো চিন্তা দেখা যাচ্ছিল না।
সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ওনারা বের হয়ে আসেন।
ফারহান কিছু বলে না, শুধু ওনাদের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ নামিয়ে ফেলে।
ততক্ষণে ও কেউ ভাবতে পারে নি সমস্ত টা এভাবে এলো মেলো হবে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here