স্বপ্নের প্রেয়সী ? Part – 39

0
806

? স্বপ্নের প্রেয়সী ?
Part – 39
______________________________

চারিদিকে নিরবতা বিরাজ করছে।
সবাই আগ্রহ নিয়ে ওনাদের দিকে তাকিয়ে আছে।
অবশেষে নিরবতা ভেঙে ফরহাদ চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন।
এই দীর্ঘশ্বাস যে এতো টা কঠিন হবে তা কারো ভাবনাতেই ছিলো না।
ফরহাদ চৌধুরী ফারহান কে বললেন
– ফারহান তুমি কি চাও ফারাবি র ভালো ?

ফরহাদ চৌধুরী র এই কথাতে সবাই অবাক হয়ে যায়।
যেই ছেলে ফারাবির জন্য জান দিতে দু বার ভাববে না, তার কাছে প্রশ্ন করা হচ্ছে সে তার ভালো চায় না কি।
ব্যাপারটা অত্যন্ত হাস্যকর হলে ও এই কঠিন মূহুর্তে কারো মুখে হাসি দেখা গেল না,শুধু মাত্র ফারহানের ছাড়া।
ফারহান কিঞ্চিত তাৎছিল্যর হাসি হাসলো।
যার অর্থ সবার বুঝতে কোনো অসুবিধা হলো না।
ফরহাদ চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন
– তুমি আমার ছেলে হলে ও ফারাবি আমার মেয়ের থেকে কিছু কম নয়।
তাই এই মূহুর্তে শুধু তোমার কথা আমি ভাবতে পারছি না।

সবাই ফরহাদ চৌধুরীর এমন কথাতে অবাকের চরম শীর্ষে। কি বলতে চাচ্ছেন ওনি?
কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ কোনো কথা বলছে না।
সবাই মনোযোগ দিয়ে বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করছে।

ফারহান কিঞ্চিত ব্রু কুচকালো।

ফারাবির বাবা ফারহানের কাঁধে হাত রেখে বললেন
– দেখ ফারহান আমি জানি তোর কাছে আমার মেয়ে কে দিলে , ও কতোটা নিরাপদ আর ভালো থাকবে।
কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই, সব সময় আবেগের বশে কাজ করলে চলে না।

ফারহান ফারাবি র বাবার হাত ধরে বলল
– চাচ্চু তোমার কথা আমি বুঝতে পারছি না।

এই মুহূর্তে ফারাবি র বাবা ও পাল্টা জবাব দিতে পারছেন না।
সে নিজে ও সংকটে ভুগছেন।

রিফাতের বাবা ফারহানের কাছে এসে বলল
– তুই তো জানিস আমরা ফারাবি কে কতোটা ভালো বাসি?
ওর ওপর কোনো কিছু চাপিয়ে দিতে আমরা পারব না।

ফারহান কিছু টা সময় স্তব্ধ হয়ে থেকে বলল
– কিন্তু বড় চাচ্চু এখানে চাপিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন আসছে কোথায় থেকে ?

রিফাতের বাবা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল
– দেখ বাবা আমার মেয়েটা বড্ড ছোট্ট।
এই বয়সে ও কি সিদ্ধান্ত নিবে তা ও নিজে ও জানি না ।
আমরা বললে ও তোকে বিয়ে ও করে নিবে , কিন্তু এই টা নিয়ে পড়ে আফসোস না করে।
আমাদের পরিবার থেকে কখনোই কাউকে ভালোবাসতে বারন করা হয় নি।
ফারাবির কিশোরী বয়স, এই বয়সে ও কোনো সিদ্ধান্তে স্থির থাকতে পারবে না।
আর ও কখনো তোকে ভাইয়া ছাড়া অন্য চোখে দেখে ও নি। এই মুহূর্তে,,,,,,,,,,,,

ফারহান কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল
– এর সাথে আমার আর ফারাবি র বিয়ে না হওয়ার কি যোগসূত্র।
ও যেখানে জানেই না আমি ওকে ভালোবাসি, সেখানে ও কি করে সিদ্ধান্ত নিবে।
আর আমি তো এখন ই বিয়ে করতে বলছি না।

রিফাতের বাবা ফারহানের কাঁধে হাত রেখে বললেন
– দেখ তুই জানিস যে , ফারাবি কে মজার ছলে জিজ্ঞাসা করলে ও সব সময় উওর দিতো।
ওর এমন বর চাই যে নিজে কর্মঠ।

ফারহান বলল
– হ্যাঁ ।
আমি তো পড়াশুনা কমপ্লিট করে কাজ করবো তাই না।
এতে সমস্যা কি,

সবাই শুধু শুনেই যাচ্ছে, কেউ কিছু বলার মতো অবস্থায় নেই।

ফরহাদ চৌধুরী নিজের আবেগ সামলিয়ে এবার কঠোর গলায় বলে
– দেখো ফারহান তুমি যেই হারে ফারাবি র জন্য ডেসপারেট, এতে করে তুমি না চাইলে ও কোনো ভাবে ফারাবির ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
তুমি যেভাবে কালকে রিক কে মেরেছো, ওর কতো দিন হসপিটালে এডমিট থাকতে হবে তা জানি না।
কালকে যদি ঠিক সময়ে ওকে হসপিটালে এডমিট না করানো হতো তাহলে ওর লাইফ রিস্ক হয়ে যেতো।
তুমি তো জানো, যে রিক এর বাবা কতো বড় বিজনেসম্যান ।
ছেলের অন্যায় এর জন্য আমাদের সাথে সরাসরি না আসলে ও আড়ালে ক্ষতি করার চেষ্টা করতেই পারে।
তুমি ফারাবির বিষয় এ যে হারে ডেসপারেট হয়ে যাও এতে করে ফারাবি র সাথে সাথে নিজের ও ক্ষতি করে ফেলো।
এই মুহূর্তে আমরা তোমাদের দুজনের কথাই ভেবেছি ।
ফারাবি যথেষ্ট ছোট, এই বন্ধ দরজার আড়ালে ও ওর পুরো পৃথিবী আছে ।
আমরা কখনোই ওর মতামতের উপর চাপ দিতে পারি না।
তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, তুমি আজকেই অস্ট্রেলিয়া তে চলে যাবে, আর ওখান থেকেই পড়াশুনা কমপ্লিট করবে।
এই মুহূর্তে বিয়ে নিয়ে আমরা কিছু ভাবছি না।
সমস্ত টাই সময় আর ফারাবি র সিদ্ধান্ত ।

সবাই ফরহাদ চৌধুরীর এমন নিষ্ঠুর আচরণে স্তব্ধ হয়ে গেছে ।
এই মুহূর্তে সবাই এটা ও জানে যে শুধু মাত্র ফারাবির জন্য ই ফারহান সিলেটে চলে গিয়েছিলো।
যেখানে সাতটা দিন ও ফারাবি কে না দেখে থাকতে পারে নি ।
যেখানে কয়েক বছর কিভাবে থাকবে ফারহান।
এ কেমন নিষ্ঠুর শাস্তি, এর থেকে তো ফারাবির দিকে দৃষ্টি রেখে মৃত্যু হওয়া ও ভালো ।

ফারহান স্তব্ধ হয়ে আছে।
কি করে থাকবে ও , ফারাবি যে ওর নিশ্বাস ।
মেয়েটাকে যে বড্ড বেশি ভালোবাসে ও।
জীবন এ কোন খেলায় মেতে উঠলো ।
দমকা হাওয়ায় কি সব শেষ হয়ে যাবে।
ফারহান নিজে কে স্থির রাখতে পারছে না।
ফারাবি কে ছাড়া ফারহানের পুরো পৃথিবী যে শূন্য ।
দমকা হাওয়া বুঝি এমন ই হয়, হঠাৎ এসে সবাই শেষ করে দেয়।

সবাই ফারহানের দিকে দৃষ্টি রেখে চেয়ে আছে।
ফারহান যেন অনুভূতি হীন হয়ে আছে।

হঠাৎ করে যা ঘটলো এতে সবাই স্থির থাকতে পারলো না।

ফারহান সোজা তার বাবার পা জড়িয়ে ধরলো।
ফারহানের এমন কান্ডে সবাই অবাক।
ফারহান ফরহাদ চৌধুরীর পা জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
ফরহাদ চৌধুরী সহ সবার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো।
যে ছেলের চোখ থেকে এক ফোঁটা পানি ও পড়ে না।
সেই ছেলে এভাবে হাউ মাউ করে কাঁদছে।
এ কি হলো ফারহানের, এটাই কি ভালোবাসার জ্বালা।

ফারহান চিৎকার করে বলতে লাগল
– আব্বু প্লিজ এমন শাস্তি আমায় দিয়ো না , আমি শেষ হয়ে যাবো।
ফারাবি কে ছাড়া এক মুহূর্ত বেঁচে থাকা বড্ড কঠিন।
এতো কঠিন শাস্তি আমায় দিয়ো না।
আমি একটু একটু করে শেষ হয়ে যাবো।
আব্বু প্লিজ

ফারহানের এমন কান্নায় আশে পাশের সবাই কেঁদে উঠলো ।
রোমা চৌধুরী কাঁদতে কাঁদতে বলল
– আমার ছেলেটা শেষ হয়ে যাবে।
এমন করো না তোমরা, এতো কঠিন হইয়ো না ।

ফরহাদ চৌধুরীর বুকটা ফেটে যাচ্ছে।
ছেলে মেয়েদের কখনো চোখের কোনে পানি আসতে দেন নি।
আর আজ এই অঝর অশ্রু
বর্ষনের কারন ওনি নিজেই।
কিন্তু এই মুহূর্তে ওনাকে নরম হলে চলবে না।
সকলের ভালোর জন্য ই আজ ওনাকে পৃথিবীর নিষ্ঠুর তম মানুষ এর একজন হতে হবে।

ফরহাদ চৌধুরী নিজেকে সামলে বলল
– আজ রাতে তোমার ফ্লাইট, আশা করি এ নিয়ে কোনো ঝামেলা করবে না।

সবার চোখে পানি, আশে পাশের সবাই কাঁদছে।
এতো ভালোবেসে ও কি তবে পাওয়া হবে না।
এতো নিষ্ঠুর কেন হচ্ছে এই পৃথিবী।

একে একে সবাই চলে যেতে লাগল ।
কারন এখানে থাকলে কেউ ই নিজেকে সামলাত পারবে না।

রিফাত এক কোনায় দাড়িয়ে আছে রিমি স্তব্ধ হয়ে মেঝে তে বসে আছে।
আর রাফাজ বুকে হাত গুঁজে ভাবছে।
সবাই চলে গেলেও ওরা গেলো না।
ফারহানের কান্না কারো ই সহ্য হয় নি।
কিন্তু ফরহাদ চৌধুরীর কথা ও ঠিক।
ফারাবির মতামতের ও গুরুত্ব আছে , সব মিলিয়ে ফেলে দেওয়ার মতো না।
কিন্তু এতো বড় শাস্তি না হলে ও পারতো।

ফারহান ঐ ভাবেই বসে আছে, সে ভাবতে তো পারছে না , তার প্রেয়সী কে ছাড়া থাকতে হবে।
কি করে সইবে ও

রাফাজ , ভাইয়ের কাছে এসে বসে পড়ল।
কি ভাবে সান্ত্বনা দিবে তা রাফাজের জানা নেই।
পিঠোপিঠি ভাই ওরা, অনেক ভালোবাসা খুনসুটি ওদের মাঝে।
রাফাজ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল
– তুই তো চাস ফারাবি
ভালো থাকুক।
এই ছোট্ট মেয়েটার জীবন এলোমেলো হয়ে যাবে।
তুই এখানে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারবি না।
আর এতে ফারাবির উপর ও এফেক্ট পরবে।
কিশোরী মন কতো দিকে মোর ঘোরে জানিস তো।
আমি জানি তুই ফারাবির ভালোটাই করবি।

এই বলে রাফাজ ফারহানের পিঠে হাত বুলিয়ে উঠে চলে গেল।

এই মুহূর্তে সে এখানে দাড়িয়ে থাকতে পারবে না।
ডাক্তার রা অনেক কঠোর হয় , কিন্তু ভেতর টা যে সাধারন মানুষের মতোই অনুভূতি সম্পূর্ণ।
রাফাজ চলে যাওয়ার পর ফারহান বেশ কিছুক্ষণ ঐ ভাবেই বসে থাকে।
তারপর উঠে দাঁড়াতেই রিফাত কাছে এসে জড়িয়ে ধরে ।
নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড কে জড়িয়ে ফারহান আর কান্না চেপে রাখতে পারলো না।
ফারহান ডুকরে কেঁদে উঠলো, রিফাতের চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে।
বা হাত দিয়ে চোখের পানি আড়াল করে ফারহানের পিঠ চাপরে বলল
– দেখ ভাই এভাবে মেয়ে দের মতো ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁদবি না।
ফারহান রিফাত কে আরো
শক্ত করে জড়িয়ে বলল
– কি করবো আমি। তোর বোন আমায় এই কোন মায়াতে বেঁধে দিলো, ওকে ছাড়া প্রতি মুহূর্ত বিষাক্ত লাগে রে।

রিফাত চোখের পানি আর আড়াল করতে পারলো না।
রিফাত ও ডুকরে কেঁদে উঠলো।
তারপর বলল
– আম সরি রে। আমি তোকে তোর ভালোবাসা কে এনে দিতে পারছি না।
ফারাবির কথা আমাকে ও ভাবতে হচ্ছে।
আম সরি রে ভাই, আজ বন্ধুত্ব আর ভাইয়ের দায়িত্বের টানা পোড়া তে স্বাথপরের মতো ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে।

আমায় মাপ করে দিস ভাই।
এই বলেই চোখের পানি আড়াল করতে করতে বের হয়ে গেল।

রিমি পাশে বসে ডুকরে কাঁদছে।
রিমি উঠে গিয়ে ভাই কে জড়িয়ে ধরে বলল
– ভাইয়া এভাবে কেঁদো না।
আমার খুব কষ্ট হচ্ছে ভাইয়া,
ফারহান বোনের মাথায় হাত রেখে বলল
– আর কাদবো না রে।
আমার একটা কথা রাখবি তুই ?

কেবিনক্রিও ডাকতে লাগলো
– স্যার আপনার কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেছে।
চেন্সজ করে দিবো?

ফারহানের ধ্যান কাটলো, চোখের কোনে পানি জমে গেছে।
কোনো মতে নিজেকে সামলে , বলল
– ইয়াহ

কফি টা দিলে কেবিনক্রিও সেটা চেন্সজ করে দেয়।
ফারহান কফি কাপে চুমুক দিয়ে কফি টা শেষ করে।
ককপিটের সিটে হেলান দেয়।
প্লেন ল্যান্ড করলে সব ফরমালিটিস কমপ্লিট করে সোজা এয়ারপোর্ট থেকে অস্ট্রেলিয়াতে তার ফুফুর বাসায় যায়।
যেহেতু ফারহান দের সবার ইন্টারনেশনাল সিটিজেন শিপ আছে তাই একদিনের মধ্যে আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি।
সমস্ত টাই কমপ্লিট হলো, শুধু প্রেয়সী কে ভালোবাসার কথা জানানোই হলো না।
একবার তার প্রেয়সী কে প্রেয়সী বলে ঢাকাই হলো না ।
_______________________

রিমি যখন সব কিছু বলল তখন আমি একটা কথা ও বলি নি শুধু স্তব্ধ হয়ে সব শুনছিলাম।
রিমি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
– একটু একা থাক ভালো লাগবে।
আমি শুধু মাথা দোলালাম।
রিমি মলিন হেসে রুম থেকে চলে গেল।
রিমি কি বলে গেল, সব যেন আমার মাথা কে গুলিয়ে দিচ্ছে।
ফারহান ভাইয়া আমায় ভালোবাসেন?
আমায় ভালোবাসেন?
কিন্তু কখনো তো বলেন নি, কেন বলেন নি ওনি?
সেই দিন ট্রুথ নিয়ে সবাই কে আমার কথাই বলেছিলেন ওনি।

উফফ আমার মাথায় কিছুই যাচ্ছে না , আবার মাথা টা ব্যথা করছে।
প্রচন্ড অস্বস্তি লাগছে , আমি মাথায় হাত চেপে বসে রইলাম।
রিমি বাইরে থেকে আমায় এভাবে দেখে ছুটে আসলো আমার কাছে।
আমি কিছু বলতে পারছিলাম না, রিমি আমায় শান্ত করার চেষ্টা করলো।
তারপর কিছু ঔষুধ খাইয়ে দিলো কিছুক্ষণ পর আমি ঘুমের দেশে হারিয়ে গেলাম।
_____________________

আম্মু, বড় মাহহহ মেহেন্দির জন্য যে জামা টা রেখেছিলাম সেটা কোথায় গেল।

বড় মা ছুটে এসে বলল
– উফফফ কিচ্ছু গুছিয়ে রাখতে জানিস না ।
কোথায় রেখেছিলি ?

আমি মাথা নিচু করে কাবাড দেখিয়ে বললাম
– ঐ যে ওখানেই রেখেছিলাম।

বড় মা বিরক্তি নিয়ে কাবাড খুলল তারপর দু একটা কাপড় উল্টিয়েই মেহেন্দির জামা টা বের করে দিলো।

আমি আহাম্মক হয়ে গেলাম, আমি এতোক্ষন ধরে খুঁজে ও পেলাম না।
আজকাল কি চোখ টা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
কি আজববব এখনো আমার বিয়ে হলো না, বাচ্চা নাতি নাতনি হলো না এখনি ই চোখ নষ্ট হয়ে গেল।

বড় মা মাথায় গাট্টা মেরে বলল
– দুদিন বাদে মেয়ে কে শশুর বাড়ি পাঠাবো আর এখনো জামা কাপড় গুছিয়ে রাখতে পারে না।

আমি ভ্যাবলার মতো হাসি দিয়ে বললাম
– আসলে খেয়াল করি নি।

বড় মা হাসতে হাসতে রুম থেকে বের হয়ে গেল।

আর আমি ঐ ভাবেই আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে রইলাম।

______________________

আজকে ট্রিপল খুশির অনুষ্ঠান।
কারন আজ যথাক্রমে তিন বন্ধুর সাথে 3 কাজিনের বিয়ে।
হাহা
ব্যাপার টা সত্যিই হাস্যকর।
কিন্তু কি আর করার এরা তিন জন তো একে অপর কে ছাড়া বিয়েই করবে না।
হুমমম আজ রিফাত ভাইয়া, জামান ভাইয়া আর রানা ভাইয়ার বিয়ে।
যথাক্রমে তাদের মিষ্টি বউ হলো মনিকা আপু, সুমি আপু আর রিমা আপু।
অবশেষে এদের প্রেম কাহিনী একসাথে বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছে।
মনিকা আপুদের গ্রামের বাসা কুমিল্লা।
আর বিয়ে টা সম্পূর্ণ কুমিল্লা তেই হতে চলেছে।
আর যার জন্য আমরা সবাই কুমিল্লা চলে এসেছি।
কারন টা হলো মনিকা আপু দের দাদুভাই ।
তার ইচ্ছে ছিলো তার নাতনিদের বিয়ে সম্পূর্ণ তার বাসাতেই হবে।
গ্রামে তার যথেষ্ট সম্মান, পুরো গ্রাম কে নিয়ে অনুষ্ঠান করবেন।
প্রথমে আমাদের পরিবার বারন করলে ও পরে এই সব কিছু শুনে রাজি হয়ে যান।
হাজার হোক বৃদ্ধ মানুষের ইচ্ছে, ওনি মনে কষ্ট পাবেন।

তাই সবাই মিলে কুমিল্লা তে মনিকা আপুদের বাসায় চলে আসলাম ।
গ্রামে ওনাদের নাম ডাক বেশ।
মনিকা আপুদের বাড়ি টা ও বিশাল।
এই বাড়িটা নাকি ওনার দাদুর বাবা করেছেন।
সাধারণত গ্রামীন পরিবেশে এমন সুন্দর বাড়ি দেখা যায় না ।
গ্রাম টা বেশ সুন্দর, আর মানুষ গুলো ও বেশ ভালো।

ঘড়িতে দেখলাম 1 টা বেজে গেছে।
উফবব সাওয়ার নিতে হবে তো।
সাওয়ার নেওয়ার জন্য বাথরুমের দিকে পা বাড়াতে থেমে গেলাম ম্যাসেজ এর টুং আওয়াজে।
উফফফ এই অসময়ে কোন হাদারাম ম্যাসেজ দিলো।
বাথরুমে ট্রাওয়াল টা রেখে রুমে এসে ফোন টা অন করতেই সুন্দর করে ফোন টা অফ হয়ে গেল।
মেজাজ চা চরে গেল , কোন হারামীতে ম্যাসেজ দিলো, যার জন্য ফোনের চার্জ ই শেষ হয়ে গেল।
ধ্যাত মেজাজ টাই গরম হয়ে গেল।
ফোনটা বেডে রেখে চার্জ না দিয়েই চললাম সাওয়ার নিতে।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফিরে এলাম।
মাথা থেকে ভেজা ট্রাওয়াল টা সরিয়ে চুল গুলো খুলে মেলে দিলাম।
এখন বেশ ফুরফুরে লাগছে।
বেডের দিকে তাকাতেই দেখলাম ফোন টাই চার্জ দেওয়া হয় নি।
ফোনটা চার্জ দিয়ে ওপেন করতেই দেখলাম আরেক টা ম্যাসেজ আসলো।
কে ম্যাসেজ দিলো তা দেখার জন্য মেসেন্জারে ঢুকতেই দেখি বড় বড় করে লেখা
ফারহান চৌধুরী খান ।

ভয়ে ঢোক গিললাম, এই লোকটা আমার আইডির নাম জানালো কি করে।
আমার সাথে তো ওনার এড নেই, আর না কেউ জানে।
আমি তো ওনাকে ফেক আইডি দিয়ে ম্যাসেজ দিতাম।
উফফফফ
ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে, যার কারনে ম্যাসেজ টাই চেক করতে ভুলে গেলাম।
আর ডুবে গেলাম স্মৃতির পাতায়।

আজ থেকে তিন বছর আগে, ফারহান ভাইয়া চলে গেলেন অস্ট্রেলিয়া তে।
রিমির মুখে সবটা
শুনেছিলাম।
কিন্তু এই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তী তে কেউ আমায় কোন কথা বলে নি।
এক প্রকার ফারহান ভাইয়ার নাম ও কেউ নেয় নি।
ফারহান ভাইয়া যাওয়ার পর কেটে যায় বেশ কয়েকটা দিন।
আমি পুরোপুরি সুস্থ হতেই রিমি আমাকে একটা জিনিস দেয়।

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here